আঁধার পর্ব-২৮

0
1318

আঁধার

২৮.

” আপনি কি এখন উঠানে যাবেন নাকি ঘুমাবেন? ”

” ঘুম ভেঙে গেছে। দুপুরে পূরণ করে দিব। ”

” আপনার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাই না? ”

” না, আমার উল্টো ভালো লাগছে। বিশেষ করে তোমার এই স্বভাবের দেখা পেয়ে তো আরো ভালো আছি। আমি তো ভাবতেই পারিনি চুপচাপ, পাগল ছাগল মেয়েটা এতো রহস্যময়ী হতে পারে। ”

” আমি নিজেই তো জানতাম না। আমার এই দিকটা এতদিন আড়ালে আবডালে ছিলো। যেই বুঝতে পারলাম আপনাকে ভালোবাসি। তখনই মনে হলো আড়াল থেকে বের হয়ে আসলো। ”

” এই প্রথম কাউকে ভালোবাসলে? ”

” হ্যাঁ, এখন আমি ঘুমাবো। রাতে আপনি যাও একটু ঘুমিয়েছেন৷ আমি এক ফোঁটাও ঘুমায়নি। ”

” তুমি তাহলে কী করেছ? ” আমি এখনো দাঁড়িয়ে মিলার দিকে তাকিয়ে আছি।

” আপনার ঘুমানো দেখেছি। আপনি ঘুমানোর সময় গরগর করে নাক ডাকেন। মাঝেমধ্যে একা একা কথাও বলেন। ”

” আমার উপর গোয়েন্দাগীরি করা হচ্ছে, তাই না? ”

” না, সেটা কেনো করবো? আপনার তো কোনো খারাপ গুণ নেই৷ আমার ইচ্ছা ছিলো আপনার ঘুম দেখা। তাই পূরণ করলাম। ”

আমি খুব খারাপ মিলা। আমার একটা বিবাহিত মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি তার গর্ভে আমার বাচ্চাও আছে। আর ওই মেয়েকে নিয়ে বাসায় ঝামেলা হওয়াতে। বাবা আজও আমার সাথে কথা বলেন না। বাবা আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দ তার বের হয়না। আমার কিশোর বয়সের প্রেম ছিলো সেই মেয়ে। ভালোবাসা ছিলো না। ভালোবাসা থাকলে তোমার প্রতি আমি আসক্ত হতাম না। সেই মেয়ে একসময় অন্যের ঘরের বউ হয়ে চলে যায়। আমি মানতে পারিনি সেই ঘটনা। বাসা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। যেন তার স্মৃতি আমাকে ধাওয়া না করে বেড়ায়। বাবার পা পর্যন্ত ধরেছিলাম। যেন তিনি খালুকে গিয়ে আমাদের বিয়েটা পাকাপাকি করে আসেন। কিন্তু বাবা তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। দুই মাস পরে পুলিশ আমাকে ধরে বাসায় দিয়ে যায়। কিন্তু বাবা আমার সাথে কথা বলেন নি আর। যে বাবার হাতে ভাত না খেলে আমার খাওয়া হতো না। যে বাবা ঘুমানোর সময় আমার মাথায় হাত না বুলিয়ে দিলে ঘুম আসতো না। সেই বাবা আমার মুখদর্শনকে দুঃস্বপ্ন ভাবেন। তার বিয়ের পরে আমি সরে এসেছিলাম। নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই মেয়ে আমার পিছু ছাড়েনি। সে আমার সাথে যোগাযোগ শুরু করলো। আমি চাইলাম দূরে যেতে। কিন্তু সে দ্বিগুণ হারে কাছে টানে। তারপর জড়িয়ে গেলাম আবার। আবার সেই পুরোনো কুৎসিত বিকৃত অতীতের রিপিট হলো। আগেও আমরা শারীরিক সম্পর্কে ছিলাম, তখনও তাই হলো। ওশান গর্ভে আসার পরেও আমি সরে যেতে চেয়েছি। কারণ এখন সে তার স্বামীর সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছে। এই সম্পর্ক ধরে রাখার অর্থ নিজেকে শেষ করা আর মা বাবাকেও কষ্ট দেয়া। কিন্তু সে আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখিয়ে জানালো, ” আমি তার সন্তানের বাবা। ” সন্তানের কারণে পারলাম না! আবারও আটকে গেলাম। এভাবে কখনো জীবন চলে? লুকোচুরি করে একটা অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া কতটা ভয়ংকর সেটা এখন বুঝি। আমি এখন একা নই যে, একা আমার জীবন নষ্ট হবে। আমার সাথে মিলা জড়িয়ে গেছে। মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা আমাকে রাকাও দিতে পারেনি। মিলার ভালোবাসা আমার মধ্যে বিশুদ্ধতা আছে। রাকা শারীরিক দিক থেকে সুখ দিলেও মনের দিক থেকে কখনো দেয়নি। রাকার ও আমার স্মৃতি উল্টে পালটে দেখলে বেশিরভাগই আমার যন্ত্রণা হয়। কিন্তু মিলা ভিন্ন! আর মিলা অনেক বার কষ্ট পেয়েছে জীবনে! এখন আমিও যদি ওকে কষ্ট দেই। তখন কী হবে ওর? ওশান ভালো আছে। রাকাও আছে।
আমি আর কতদিন এভাবে ঝুলে থাকবো? মিলা ঘুমিয়ে পড়েছে। ভালোই হয়েছে। রাকার সাথে আমার সবকিছু ফাইনাল করে ফেলতে হবে। কিন্তু এখানে করা যাবেনা৷ ফরিদপুরে গিয়েই ওর সাথে কথা বলে সবকিছু শেষ করে ফেলতে হবে। বাচ্চার শখ মিলাই পূরণ করতে পারবে। ওর সাথে গত কয়েকদিন ধরে ঘনিষ্ঠ হচ্ছি কোনো প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই। আল্লাহর রহমতে আমার মিলা একজন পূর্ণ নারী হয়ে যাবে দ্রুতই!

দুইদিন পরেই আমরা ফরিদপুরে ফিরলাম। এই ক’দিন রাকার সাথে নরমাল কথাবার্তা চালিয়েছি। যেন ও কোনো ঝামেলা করতে না পারে। মিলাকে কোনোমতে জানতে দেয়া যাবে না। মিলা বেশ হাসিখুশি আছে। নতুন বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে আমাদের। ফ্ল্যাটটা আসলেই সুন্দর আর আমাদের জন্য যথাযথ। চৌরঙ্গীর মোড়ে যে হোমিওপ্যাথি কলেজটা আছে তার পাশেই দশ তলা লাক্সারি শামসুদ্দিন টাওয়ার। সেটারই সাত তলায়! দোতলায় নাকি খালি ফ্ল্যাট ছিলো কিন্তু মিলা নেয়নি। আমি নাকি বলেছিলাম অনেক উচ্চতা থেকে শহর দেখার খুব ইচ্ছা। এই কারণে সে সাত তলা বেছে নিয়েছে। কিন্তু মিসেস বুঝেন নাই যে প্রতিদিন আমাকেই উঠানামা করতে হবে। এলিভেটর আছে কিন্তু সবসময় যে তা চালু থাকবে তা তো না। আআসবাবপত্র কেনার সময় আমি যেতে পারিনি৷ কারণ আমার নিবন্ধনের জন্য কোচিং করতে হচ্ছে। আমি রাজি হচ্ছিলাম না। মিলার বড় দুলাভাই ফোনে রসিকতার সাথে টাইটও দিলেন। কী আর করার!

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham

ফ্ল্যাটে উঠার পরে আমাদের সময় আরো ভালো কাটতে লাগল। পুরো বাসায় আমি আর সে একা! এদিকে রাকা আমাকে তাদের নিয়ে আসার জন্য প্রেশার দিচ্ছিল৷ কোচিং ক্লাস থেকে আগে বের হলাম। মিলা আজকে বাসায় তার বান্ধবীদের নিয়ে ব্যস্ত। আমার দেরি হওয়াটা সে খেয়াল করবে না। রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি শাখার মাঠে বসে রাকার নাম্বারে ফোন দিলাম। রাকা প্রথম বারেই ফোন রিসিভ করলো। রাকাই আগে কথা বলল,
” হ্যালো ”

” হ্যালো ” কী কী বলবো গুছিয়ে নিলাম। একটা কথাও বাদ দেয়া যাবে না।

” কেমন আছো? ” রাকার কণ্ঠ খুব স্বাভাবিক মনে হলো।

” আমি জরুরী কিছু বলার জন্য ফোন দিয়েছি। ”

” তুমি আজকাল তাছাড়া কি আর ফোন দাও? বউ নিয়ে খুব ভালো আছো। কিন্তু আমি তো নেই, রাসেল। ”

” তোমার ভালো রাখার জন্যই কথা বলতে চাচ্ছি। ”

” তার অর্থ তুমি আমাদের দ্রুত নিয়ে যাবে? ” রাকার কণ্ঠে উচ্ছাস।

” না, আমি চাচ্ছি সবকিছু শেষ করে দিতে। এইভাবে লুকিয়ে একটা অবৈধ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মানে হয়না। এর ফলাফল মোটেও ভালো না। ”

” আমিও তো সেটা বলছি। অবৈধ কে বৈধ করে নাও। তাহলে তো হয় রাসেল। আমার তোমার বেতনেই হয়ে যাবে। আমার কথা না ভাবো ওশানের কথা তো ভাবো। ”

” ওশান মাহমুদ ভাইকে বাবা জানে। ও এখন আমাকে বাবা মানতে চাইবে না। ওর ছোট্ট ব্রেইনে চাপ দেয়া হয়ে যাবে। ও নিতে পারবে না। তার উপর ও যে পরিবেশে বড় হয়েছে। আমি ওকে ওই পরিবেশ দিতে পারবো না। তাই আমাদের যোগাযোগ চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়াই বেটার। ”

” ও তোমার সন্তান৷ তুমি ওকে যেভাবে মানুষ করবে ও সেভাবে বড় হবে। ”

” না মোটেও না। এখন এই লজিক খাটে না। আর শুধু তুমি, আমি আর ওশান না৷ আমাদের দুজনের পরিবার আর মাহমুদ ভাইও জড়িয়ে আছে। মাহমুদ ভাই আমাদের এমনিতেই ছাড়বেন না। ”

” রাসেল আমরা এক থাকলে কিচ্ছু হবেনা। ”

” আমাদের মধ্যে কখনো ভালোবাসা ছিলো না রাকা। থাকলে আমরা এই বিশ্রী কাজগুলো করতাম না। ”

” রাসেল প্লিজ আমার কথা শুনো। ”

” সরি রাকা। তোমার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছুই হয়নি আমার। আমি এখন বিয়ে করেছি। আমার স্ত্রী আছে। আমি এখন এসব ঝামেলা থেকে দূরে যেতে চাই। আমার বাবা আমার সাথে কথা বলেন না। আমার মা আমার চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাই আমার পক্ষে আর সম্ভব না। ”

” রাসেল তুমি এভাবে শেষ করতে পারো না। ”

” অবশ্যই পারি৷ ভালো থেক। আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না৷ ”

ফোন কেটে দিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালাম। রাকা ফোন দিয়েই যাচ্ছে। ওর নাম্বারটা ব্লক লিস্টে দিয়ে রাখলাম।

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে