অবেলায় তোমার ডাকে পর্ব-০২

0
1881

#অবেলায়_তোমার_ডাকে
#জুবাইদা_মেহেরুন
#পর্ব_০২

আপনি এভাবে আমাকে নিয়ে আসলেন কেন? কি হয়েছে?

কাল সারারাত আমি ঘুমোতে পারি নি মায়াবিনী! শুধু তোমার কথাই ভেবেছি।

দেখতে পেলাম তার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। তার মানে সে কি সত্যিই ঘুমোয় নি?

কি হলো কথা বলছো না যে?

ঘুমান নি কেন?

তোমার ছবিই চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় মায়াবিনী! তুমি যে আমায় পাগল করে দিলে,,

আমি তার দিকে অবাক নয়নে চেয়ে রইলাম। এছাড়া আর কি করতে পারি আমি?

একটু আগে আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি শুভ্র দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে ইশারায় নিচে যেতে বললেন। আমি নিচে নেমে তার কাছে গেলাম। ব্যাপারটা সবাই লক্ষ্য করলেও কিছু বললেন না। আমি তার কাছে যেতেই সে আমাকে টেনে গাড়িতে তুলে নিলেন। এরপর এই পার্কে নিয়ে আসলেন আমাকে।

কি হয়েছে কথা বলছো না কেন?

কি বলবো? এতো পাগলামি করেছেন কেন?

তোমার জন্যই তো পাগল হয়ে গেলাম।

আমি মুচকি হাসলাম। তার সাথে অনেক কথা হলো। তার প্রতিটি কথাই মন জুড়ানো। তার কথায় এক অজানা অনুভূতি জাগ্রত হয় মনে। এতোটা ভালোবেসে কথা বলে পারে কেউ? আমি মুগ্ধ নয়নে তার দিকে চেয়ে আছি।
সে তা দেখে মিটিমিটি হাসছে।

——————————————————

এভাবে কেটে গেল একটা সপ্তাহ!

এখন প্রতিদিন তার সাথে কথা বলা, ঘুরতে যাওয়া, দেখা করা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই একবার না একবার দেখা করতে হবেই তার সাথে, নাহলে বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় সে। আর আমাকে তুলে নিয়ে যায়। আমাদের সম্পর্কটা বেশ ভালোই চলছে। আমিও ধীরে ধীরে তার মায়ায় আবদ্ধ হয়ে পড়ছি! তার কথার মায়াজালে আটকে যাচ্ছি! এক অজানা অনুভূতি আঁকড়ে ধরেছে আমায়!

আজ আমাদের বাড়িতে বেশ রমরমা আয়োজন চলছে। বুঝতে পারলাম না কি হয়েছে, তাই মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “মা কি হয়েছে? এতো আয়োজন কেন? কেউ কি আসবে?”

“হ্যাঁ, কাল অরিদ্র এসেছে। আজ তোর আপা আর দুলাভাইয়ের সাথে আমাদের বাড়িতে আসবে।”

অরিদ্র মানে? সেই অরিদ্র?

হুম।

আদ্রিন আনাফ অরিদ্র! আমার বড় বোনের একমাত্র দেবর। তাকে আমি কখনো দেখি নি। শুনেছি সে নাকি সেই ছোট্ট থেকেই লন্ডনে বড় হয়েছে, সেখানেই পড়াশোনা করেছে। এই পর্যন্ত একবারও দেশে ফিরে নি। এমনকি আপুর বিয়ের সময়ও আসে নি। দীর্ঘ ২০ বছর পর দেশে ফিরছে সে! ছয় বছর বয়সে লন্ডন গিয়েছিল, সে হিসেবে তার বয়স ২৬!

আমার ভাবনার মাঝে ছেদ ফুটিয়ে ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। হ্যাঁ, সেই ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে তার সাথে কথা বললাম। প্রায় দুঘন্টা যাবৎ কথা বললাম! যেখানে আমি দুই মিনিটও কারো সাথে কথা বলতে পারি না সেখানে একটা ছেলের সাথে দুঘন্টা কথা বললাম?

বিকেলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক দিয়েছি এই মুহূর্তে একটা গাড়ি আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করলো। বুঝতে পারলাম আপু এসেছে! দৌড়ে নিচে গেলাম, আপু ভাইয়া এসেছে! তাদের সাথে একটা যুবক সাফিনকে (আমার ভাগ্নে) কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খেয়াল করলাম সে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমিও একটু দেখলাম। এক সুদর্শন যুবক! লম্বায় প্রায় ছয় ফিট হবে, ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে আছে। বোধহয় ঘুমায় নি। লাল রঙের শার্টটা ঘামে ভিজে আছে। গোলাপি ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে হেসে হেসে সবার সাথে মত বিনিময় করছে। আমি ততটা পাত্তা দিলাম না। আপু আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।

অরিদ্র ছবিতে ওই যে আমার পিচ্চি বোনটাকে দেখেছিলে না, এই তো সে।

অরিদ্র আমাকে বললো, ” তাই নাকি ভাবি? এতো আর পুঁচকে মেয়েটা নেই, বড় হয়ে গেছে।”

আমি বুঝতে পারলাম না কি বলছে। সে আমাকে বললো,
“কেমন আছো পিচ্চি?”

এই তো ভালো, আপনি?

ভালো,,,

এর মাঝেই আমার ফোনটা বেজে উঠলো আমি ফোনটা নিয়ে রুমে চলে গেলাম। অরিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে, হয় তো সে বুঝতে পারলো না কি হয়েছে।

এটা কি হলো ভাবি?

ওর হবু বর ফোন দিয়েছে, তাই চলে গেছে।

কি!! হবু বর? মানে কি?

ওহ! তোমাকে বলতে তো ভুলেই গেছি। ইশারার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগেই ছেলেপক্ষ আংটি পড়িয়ে গেছে। ছয় মাস পর বিয়ে।

অরিদ্রের কানে কিছুই আসছে না। সে যেন পাথর হয়ে যাচ্ছে। কি হলো এটা? কি করে হলো? সে একটা বারও জানতে পারলো না? যার জন্য এতো দূর আসা আজ শুনলো তার নাকি বিয়ে? সে তো এক বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়েছিলো। তার বাচ্চামো কান্ডগুলোকে ভালোবেসে ছিল। হ্যাঁ, সে তার ইশুবতীকে ভালোবেসে ছিল। পাগলের মতো ভালোবেসে ছিল। তার ভালো লাগার কারণই ছিল ইশুবতী। কিন্তু আজ শুনলো এই ইশুবতী নাকি অন্য কারো! তার চোখের সামনে ইশুবতী অন্যকারো হয়ে যাবে? কিভাবে? সে কি এটা মানতে পারবে?

অরিদ্র দেখলো ইশারা রেডি হয়ে নিচে নেমেছে।

মা আমি একটু বের হচ্ছি। উনি,,,

মা মুচকি হেসে বললেন, যা।

বাড়ি থেকে বের হয়ে রিক্সা করে একটা পার্কে চলে এলাম। শুভ্র সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আমায় দেখে আমার কাছে আসলো। তাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। অনেক কথা বললাম তার সাথে। বুঝতে পারলাম না অন্য এক জোড়া আঁখি আমায় ফলো করছে।

দূর থেকে দুটো চোখ তাদের দেখছে আর অঝোরে চোখের জল ফেলছে।
ইশুবতী ওই ছেলেটির সাথে থাকতে চায়? তার অনুভূতিগুলো ওই ছেলেটির জন্য? আমি পারলাম না সেই জায়গা নিতে? আমার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারলাম না আমি? বলতে পারলাম না ভালোবাসি?

ইশারা আর শুভ্র একে অপরের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। অরিদ্রের বুকে বিঁধছে তা।

এক নজর ইশুবতীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
থাক না আমার সুপ্ত ভালোবাসা সবার চোখের আড়ালে। থাক না আমার অনুভূতিগুলো আমার কাছেই! ভালো থেকো তুমি ইশুবতী, আমি যে তোমার ভালোবাসা চাই না চাই তুমি ভালো থাকো। যাকে চাও তার সাথে সুখে থেকো তুমি! ফিরে আসবো না হয় কোন এক #অবেলায়_তোমার_ডাকে। পাশে থাকবো না হয় কোন এক #অবেলায়_তোমার_ডাকে।

অরিদ্র সেখান থেকে চলে আসে। সে যে তার ইশুবতীকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবে না।

সেখান থেকে সোজা বাড়ি ফিরে যায় সে। একদিন আগে মাত্র দেশে এলো। জিনিসপত্র গুলো যেভাবে এনেছিল সেভাবেই আছে। সেগুলো নিয়ে সিহাকে একটা ম্যাসেজ দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে সে। আবার চলে যাবে সে, এখানে থাকা তার পক্ষে অসম্ভব!

চলবে,,,,,,,

[অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে