অবুঝ দিনের গল্প পর্ব-১৪+১৫

0
1314

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_১৪

দৌড়ে সব একটা ফাঁকা ক্লাসে ঢুকলো।অগ্নি আর অনিক বেঞ্চের উপর বসে পড়ল!হৃদি আর বিথী দেয়াল ধরে দাড়িয়ে ।অরিন কোমরে হাত দিয়ে হাপাচ্ছে!কিন্তু কু’কুর পিছু ছাড়লো না।ওখানে গিয়েও ডাকা শুরু করলো,এবার অরিনের রাগ হলো!

অরিন: আব্বে!তোর সমস্যা কি?আমরা কি তোর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে নিয়েছি? যা ভাগ!আর একবার আমাদের পিছু নিলে তোর গার্লফ্রেন্ড কে বিচার দিবো!বলবো তুই আমাদের হয়রানি করাচ্ছিস! যা!নাইলে তোর ব্রেক আপ করিয়ে দিবো!বলবো তুই সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস ওকে গিফট করিস!ভালো লাগবে?

কু’কুরটা কি বুঝলো জানে না,বাট মিন মিন পায়ে চলে গেলো!

হৃদি: বাঁচা গেলো!

অগ্নি: একটা স্কার্ফ এর জন্য এত দৌড়ানি!স্কার্ফ কি আর কিনতে পারতি না?

হৃদি নিচু স্বরে বলল,”এটা অরিন আর বিথীর দেয়া প্রথম উপহার!কিভাবে হারাই?”

অরিন: ইস! ঢং!

সবাই একে অপরের দিকে তাকালো! হুট করেই হেসে দিলো সবাই!

_______
আরিফা: হিলু,ভাবিপু!

অরিন: ভাবিপু?

আরিফা: আরে তোমায় আপু বলি আবার আমার হবু ভাবি তুমি!তো ভাবিপু!

আদ্রিয়ান ওর মাথায় চ’ড় মেরে বললো,

আদ্রিয়ান: ব্রেইন পড়া শোনায় লাগা!এই সব কাজে না!

আরিফা: মা দেখো তোমার ছেলে মা’রে…

আদ্রিয়ান: যা ফুট এখান থেকে!

আরিফা: বাবা!বউ হতে না হতেই এত দরদ!

আদ্রিয়ান: তুই যাবি?

আরিফা: যাচ্ছি!তোমরা রোম্যান্স করো!টাটা!

আদ্রিয়ান: তুই..

আরিফা দৌড়.. অরিন বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে!

আদ্রিয়ান: এভাবে কি দেখো?

অরিন: আপনি ইদানিং নির্লজ্জের মত আচরণ করছেন বলে মনে হয় না আপনার!

আদ্রিয়ান ওর দিকে ঝুঁকে বললো,

আদ্রিয়ান: আমার বউ,আমি যখন খুশি আসবো!কথা বলবো,মাঝে মাঝে রোম্যান্স করবো..এতে নির্লজ্জের কি?

অরিন: আমি আপনার বউ হইনি এখনও মিস্টার ইংরেজ বাবু!

আদ্রিয়ান: হতে কতক্ষন মিসেস ইংরেজ বাবু?

অরিন মুচকি হাসলো..
আদ্রিয়ান মিহি কণ্ঠে বললো,

আদ্রিয়ান: তোমার মুখে লেগে থাকা স্মিত হাসি, আর তার সাথে ও দুটি মায়াবী চোখ, তোমার কাছে আমায় বারবার এনেছে টেনে;ব্যাকুলতা সেই হৃদয়ে ,যা আমাকে বাধ্য করে ভালোবাসতে!তোমার হাসিটি অমূল্য; তা কখনোই… কোনোভাবে হারাতে দিও না,অরি পাখি!.চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে অলংকারের দরকার পড়ে না; নেই কোনো আভূষণের প্রয়োজনীয়তা … তোমার গোলাপ ঠোঁটের একটি নির্মল হাসিই যথেষ্ট !

নিচ থেকে আদ্রিয়ান এর আম্মুর ডাক শুনা গেলো..

অরিন: মামী ডাকে!

আদ্রিয়ান: হ্যাঁ হ্যাঁ,আমার রোম্যান্টিক মুমেন্টেই সবাই তোমাকে, যাও!!

অরিন মুচকি হেসে পাশ কেঁটে চলে যেতে লাগলো,দরজার কাছে গিয়ে হুট করে বলে উঠলো,

অরিন: ওয় ইংরেজ বাবু!জেগ এলস্কার ডিগ!

আদ্রিয়ান: হোয়াট?

অরিন: বুঝে নিয়েন!

বলেই চলে গেলো।আদ্রিয়ান ভাবতে বসলো…

গ্রামে…

সোহা: অরিন আপুকে মিস করি রে..

তনয়া: আমিও!

লামিয়া: কি আর করার!

তখনই লামিয়ার ফোন বেজে উঠলো!

তনু: কে গো আপু?

লামিয়া: জানি না, আননোন নাম্বার!

লামিয়া পিক করে সালাম দিলো!

লামিয়া: কে?

অপরপাশে: কেমন আছিস!

এক মুহূর্তের জন্য লামিয়া কথা বলতে ভুলে গেলো।ওই পাশের ধমক খেয়ে ঝটপট উত্তর দিলো।

লামিয়া: আদিব ভাইয়া আপনি?

আদিব: কাল বাড়িতে আসছি!মাকে বলে দিস!উনি ফোন ধরছে না!

লামিয়া: আচ্ছা!

বলেই কেঁটে দিলো!

তনয়া: ভাইয়া?

লামিয়া: হুমম!

তনয়া: বাহ,মাকে ফোন না দিয়ে তোমায়?

লামিয়া: তোর মা ধরছে না!

তনয়া: সত্যি?

লামিয়া: মাথা খাবি না উঠ!

_______

রোজ: সাগর!

সাগর: সমস্যা কি তোর?

রোজ: তুই এত কাজ কাজ করিস কেন?

সাগর: কাজ ইম্পর্ট্যান্ট ,তাই!

রোজ: আসলেই,তোর কাছে কাজ ইম্পর্ট্যান্ট!কারোর ফিলিংস না!

রোজ উঠে চলে এলো,সঙ্গে এলো হাজার হাজার অভিমান!এত নিষ্ঠুর কেন?ওর অনুভূতি গুলো কেনো বোঝে না?

বলতে বলতেই একটা চায়ের দোকানে!

চা ওয়ালা: চা দিমু আফা?

রোজ: দেন এক কাপ!

সাগর: আমাকেও এক কাপ!

রোজ আড় চোখে তাকালো!কিছু বললো না, ও উঠে ওপর বেঞ্চে বসতে গেলে সাগর টেনে বসিয়ে দিলো!

সাগর: সমস্যা কি তোর?

রোজ: আমার আবার কি সমস্যা?তোর কাজের ডিস্টার্ব হবে তাই উঠছি!

সাগর: বেশি কথা বলিস!বস!

রোজ অন্য দিকে তাকিয়ে বসলো!চা ওয়ালা চা দিয়ে গেলো!দুইজনই নিরব!

সাগর: পার্ট টাইম জব এর বেতন খুব বেশি না! ভার্সিটিও শেষ!সেটেল যদি জলদি না হই তোর কি হবে?এত বুড়ি মেয়েকে এখনও কি কেউ বাসায় রাখবে?বিয়ের প্রপোজাল আসবে..বিয়ের প্রেসার দিবে!আমি যদি একটা ভালো জব না পাই,তাহলে তোকে পাবো কিভাবে?তোকে পেতে হলে নিজেকে যোগ্য করতে হবে!তোর ভরণপোষণ করতে হবে!তোর মুখের হাসি রাখতে হবে!কষ্ট যেনো ছুঁতে না পারে এমন ছেলের সাথেই তো তোর বাবা বিয়ে দিবে,তাই না?এখন যদি আর পাঁচটা নতুন প্রেমিকের মতো তোকে নিয়ে ঘুরি,আবেগে আপ্লুত হতে থাকি,তাহলে না হবে সেটেল হওয়া,আর না হবে তোকে পাওয়া!একটা ভালো পজিশনের চাকরি পেতে ননস্টপ কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে!একবার সেটেল হই!তারপর নাহয় সব হবে!তখন নাহয় হুট তোলা রিকশায় ঘুরবো!হাত ধরে নাহয় মাঝে মাঝে শহরের অলি গলি ঘুরবো..শুধু সময় এর অপেক্ষা!

রোজ মুচকি হেসে চায়ে চুমুক দিলো!

সাগর: কিছু বললি না যে?

রোজ: তুই চরম ঘাড় ত্যাড়া!

সাগর: মানে?

রোজ: এত কিছু বললি তাও মূল কথাটাই বললি না!

সাগর মৃদু হাসলো,

সাগর: ঐটা সময় হোক তারপর বললো ।

রোজ মুচকি হাসলো!

সাগর: হাসিস কেন?

রোজ: তুই আসলে ব’লদ ব’লদ লাগলেও ব’লদ না!

সাগর: আমাকে ইনসাল্ট করিস?

রোজ: আমি তো ডাইরেক্টলি কিছু বলি নাই!

সাগর ভ্রু কুঁচকে তাকালো,তাই দেখে রোজ ফিক করে হেসে দিল!

________
হৃদি আর বিথী হাঁটতে বের হয়েছে..
হৃদি: লে অরিনের ও বিয়ে ফিক্সড, তোরও লাইন ফিক্সড..মাঝখানে আমি সিঙ্গেল..

বিথী টিটকারী দিয়ে বললো,”কেন তোর অনিক আছে না?”

হৃদি: ছি বিথী,আমার চয়েস এত বাজে না!

অনিক: বুঝাতে কি চাও?

রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলো অনিক।এখন দিয়েই যাচ্ছিল।মাঝে ওদের দেখে ভাবলো হৃদিকে ডিসটার্ব করা যাক ।এসে ওদের কথা শুনে প্রশ্নটা করলো!

হৃদি: ছি,লুকিয়ে মেয়েদের কথা শুনেন লজ্জা করে না?

অনিক: কথা শুনা লাগে না ।মাইকের মত গলা হলে চৌরাস্তার মোড়ের মসজিদ অব্দি এমনেই শোনা যায়!

হৃদি: দেখলি বিথী কিভাবে অপমান করছে?আর তুই একে নিয়ে ভাবিস?ওয়াক!

অনিক: ওয়াক,তোমার সাথে আমি ছি!

হৃদি: বিথী এরে কিছু বল!

বিথী: বাদাম বেঁচে খা দুইটা!

বলেই হাঁটা লাগালো।

হৃদি: আপনায় আমি পরে দেখবো!ওয়াক!

অনিক: আমার তোমাকে দেখার ইচ্ছে নেই।যাও সরো,ওয়াক!

হৃদি চোখ গরম করে চলে গেলো।ওরা যেতেই অনিক পেট ধরে হাসতে লাগলো।মেয়েটার সাথে ঝগড়া করতে ওর বেশ লাগে!

বিথী: বলুন!

আকাশ: এত রেগে আছেন যে মেডাম?

বিথী: আস্ত চু’ন্নি যে আমার সাথে তাই!

হৃদি ওর মাথায় ধাক্কা দিলো।বিথী ফোন আকাশের সাথে কথা বলছে!

হৃদি: আমি চুন্নি?

বিথী: তো কি?সারাদিন ঝগড়া করিস। ব’দ মাইয়া!

হৃদি: আকাশ ভাইয়া এই মেয়েরে বিয়ে করবে না,তোমার লাইফ নষ্ট!

বিথী: কু’ত্তি কি কইলি?ওই আকাশের বাচ্চা,ভুলেও ওর কথা কানে নিবে না!

আকাশ: আপনি যেই ব্যাক্তির সাথে কথা বলছে সে রাতে ফোন দিবে।টাটা!

বিথী: আরে..

তার আগেই আকাশ কল কেঁটে দিলো,বিথী রাগী চোখে বিথীর দিকে তাকাতেই হৃদি দৌড়!

বিথী: হৃদির বাচ্চা!

________

ড্রয়িং রুমে ল্যান্ড লাইন ফোন বেজে উঠতেই আরিফা ধরলো।

আরিফা সালাম দিয়ে বললো,”কে?”

সাদ: আরে না হওয়া বেয়াইন,কেমন আছেন?

আরিফা: এটা আবার কেমন নাম?

সাদ: ডিজিটাল!যাক গে,অরিন আছে?

আরিফা: অরিন আপুকে কি দরকার?

সাদ: সেটা তো তোমায় বলা যাবে না!ওকে দেও।নাহলে ওর নাম্বার দেও!

তখন আদ্রিয়ান ওখানেই আসছিল আর শুনতে পেলো আরিফা বলছে,”আগে অরিন আপুকে কেনো দরকার ওটা না বললে আমি অরিন আপুকে দিচ্ছি না!”

আদ্রিয়ান: কে রে আরু?

আরিফা: সাদ ভাইয়া,অরিন আপুকে চাচ্ছে!

আদ্রিয়ান এর রাগ হলো। সাদ ভালো ছেলে,কিন্তু অরিনের সাথে মিশা আদ্রিয়ান এর সহ্য হচ্ছে না!আদ্রিয়ান আরিফার থেকে ফোন নিলো!

আদ্রিয়ান: হ্যাল্লো?

সাদ সালাম দিল,আদ্রিয়ান ও উত্তর দিলো ।

সাদ: আসলে ভাইয়া একটু অরিনের সাথে কথা ছিল!

আদ্রিয়ান: কি কথা?

সাদ: যদিও আমাকে বলা হয়েছে অরিনকে বলতে বাট যাও তোমায় বলছি!আপু বলেছে কাল তোমাদের বাসায় আসবে!এখন অরিন ম্যানেজ করতে পারবে বাবা মাকে ওদের মানার জন্য,এমনিও অরিনকে ওরা অনেক পছন্দ করে তাই বলা!

আদ্রিয়ান: আমি বলে দিবো বাই!

বলেই কেঁটে দিলো!

আদ্রিয়ান বির বির করে বললো,”ইহ,শখ কত!আমার হবু বউ এর সাথে কথা বলবে!”

আরিফা: পরান যায় জ্ব’লিয়া রে..

আদ্রিয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”তোর আবার কি হলো?”

আরিফা: এখানে পোড়া পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে!

আদ্রিয়ান আরিফার কান মুচড়ে বললো,”বেশি পেঁকে গেছিস না?মাকে বলে তোর বিয়ে দিয়ে দিবো!দেখিস!”

আরিফা কান ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,”আগে নিজে কর।আমি আগে কয়েকদিন ননদের ভূমিকা পালন করি।তারপর শাহরুখ খান এর মত হ্যান্ডসাম দেখে বিয়ে করে নিবো!”

আদ্রিয়ান: তবে রে!

আরিফা: ভাবিপু!তোমার জামাই মা’রে..

বলেই এক ছুটে উপরে গেলো।

আদ্রিয়ান: তোকে শুধু একবার হাতের কাছে পাই আমি..কু’টনি মেয়ে!

আরিফা ওকে ভেঙালো!

______
সৌরভ: কবে যে আবার তোমার দেখা পাবো!ট্রেনের ওই মিষ্টি পিচ্ছি মেয়েটাকে কে এত টা ভালো লেগে যাবে কে জানতো?মনটা বেহায়া হচ্ছে তোমায় দেখার জন্য!খুব শীগ্রই আবারও দেখা হবে আমাদের প্রিয়!!

#চলবে….

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_১৫

সৌরভ: আরে অরিন না!কেমন আছো?

অরিন কলেজ শেষে গেটে দাঁড়িয়ে ছিল।শেষ বললে ভুল হবে..টিচার আসবে না বলে সবাই বেরিয়ে গেছে।

অরিন: জি ভাইয়া ভালো,আপনি?

সৌরভ: তো ক্লাস অফ নাকি?বাসায় যাচ্ছো ?

অরিন: জি!

সৌরভ: চলো তাহলে..আমিও ওদিকেই যাবো!

অরিন: না ভাইয়া ,আমি যেতে পারবো!

সৌরভ: আরে এই দুপুরে কোনো রিক্সা পাবে না! চলো!আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি!

অরিন মানা করলো না,আসলেও আশে পাশে কোনো রিকশা নেই!

সৌরভ: তো অরিন ,শুনলাম তোমার আর আদ্রিয়ান এর নাকি বিয়ে!

অরিন: জি ঐরকমই!

সৌরভ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”তোমাকে কিছু বলার ছিল!”

অরিন: কি?

সৌরভ: প্লিজ আমাকে খারাপ ভেবো না!কিন্তু না বলে শান্তি পাচ্ছি না…

অরিন: আচ্ছা বলুন..

_____

বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো সৌরভ।অরিন নেমে ভিতরে যেতে লাগলো!সৌরভ পিছু ডেকে অরিন কে জিজ্ঞেস করলো,”অরিন,কিছু বললে না যে?”

অরিন: আমি এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না ভাইয়া!

সৌরভ: কিন্তু!

অরিন: প্লিজ..

বলেই ভিতরে চলে আসলো!রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে দাড়ালো!সৌরভের বলা কথা ওর মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে।

আদ্রিয়ান: আজকের দিন খুব ভালো কাটলো তাই না?

অরিন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো ,”মানে?”

আদ্রিয়ান: মানে এই যে সৌরভ এর সাথে কলেজ বাদ দিয়ে ঘুরলে,ভালো কাটার কথা!

অরিন: আমরা কোথাও ঘুরিনি!ক্লাস অফ,তাই ভাবলাম বাড়ি চলে আসি।কিন্তু রিকশা পাচ্ছিলাম না,তখন উনার সাথে দেখা ।আর নিয়ে আসেন আমায়!

আদ্রিয়ান: আমাকেও তো ফোন করা যেতো তাই না?

অরিন: সামান্য একটা ব্যাপার কে এভাবে দেখছেন কেনো আপনি?

আদ্রিয়ান: কিভাবে দেখছি?

অরিন: আপনার সাথে কথা বলাই বেকার!

বলে রুমের দিকে পা বাড়ালো!

আদ্রিয়ান: ও কিসের কথা বলছিল অরিন, যা নিয়ে তুমি কথা বলতে চাচ্ছিলে না?

থমকে গেলো অরিনের পা!

অরিন: আপনি কি কোনো কারণে আমায় সন্দেহ করছেন?

আদ্রিয়ান: চো’রের মন পুলিশ পুলিশ!আমি একবারও সেটা বলিনি!আমি শুধু জানতে চেয়েছি!বাট রিয়েকশন হয়তো অন্য কিছু বলছে..

অরিন: আদ্রিয়ান!

আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো!অরিনের কাছে এসে বললো,”ইনজয় ইউর নিউলি লাভিং লাইফ!”

বলেই বেরিয়ে গেলো!অরিন ওখানেই দাড়িয়ে রইলো!আদ্রিয়ান ওকে ভুল বুঝলো!ভেবেই ওর কান্না পাচ্ছে! ও কি করবে?সৌরভের কথা কি বলবে ওকে?

_______
রোজ: কিরে আদ্রিয়ান,এরকম রেগে বুম হয়ে আছিস কেন?

সৌরভ: আজকাল তো তোর দেখাই পাওয়া যায় না.. আর এখন এত রেগে আছিস যে?কিরে?অরিন কে ছাড়া এখনই থাকতে পারিস না?নাকি অরিন চলে গেছে?

কথাটা টিটকারী মেরে বললেও আদ্রিয়ান এর শরীর জ্বলে উঠলো.
আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বললো,”তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই এটাই চাস!”

সবাই ভরকে গেলো।আদ্রিয়ান কে চিনে ওরা!কখন রেগে কথা বলে আর কখন সিরিয়াস আর কখন মজার ওরা সব বুঝে!

সাগর: আজ এত সিরিয়াস মুডে যে?

আদ্রিয়ান: কেও যখন পিঠ পিছে ছু’ড়ি মা’রতে চায় তখন কি করা উচিত?

আদ্রিয়ান কথাটা সৌরভ এর দিকে তাকিয়েই বললো,ব্যাপারটা সবাই লক্ষ্য করলো!

সৌরভ: কে মা’রলো আবার?

আদ্রিয়ান: অন্যের ফিয়ন্সির সাথে এত কিসের কথা তোর?

সৌরভ: আরে?আমার ওর সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছিল।ভাবলাম ওদিকে যাচ্ছি তো ড্রপ করে যাই!

আদ্রিয়ান: আমাকে বোকা ভাবিস না!ওদিকে যখন যাচ্ছিলি তাহলে গাড়ি ব্যাক করে এখানে আড্ডায় কেন এলি?

সৌরভ চুপ রইলো!
কেও ওদের কথা বুঝতে পারছে না!

সৌরভ: তুই এই সামান্য ব্যাপার এ কেন এত রিয়েক্ট করছিস!দিতেই পারি এমন কি হলো!

আদ্রিয়ান: ওকে কি বলেছিস তুই?

সৌরভ ঘাবড়ে গেলো,চুপ থেকে বললো,”আরে তুই এভাবে জেরা কেন করছিস?তুই কি সন্দেহ করছিস নাকি আমায়?”

আদ্রিয়ান হাসলো,দুইজনকেই এই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে পাল্টা এই প্রশ্নই করে..কিছু না বলে উঠে দাড়ালো ও!

আদ্রিয়ান: কিছু না,শুভ কামনা!

বলেই চলে আসলো।পিছন থেকে সবাই ডাকলো ওকে,কিন্তু পাত্তা দিল না।

বিকেলে ড্রয়িং রুমে বসে ছিল অরিন!তখন ল্যান্ড লাইনে ফোন এলে ও সালাম দিয়ে কে জিজ্ঞেস করে। অপরপাশে পরিচয় দিলে ও আওড়ায়,”সৌরভ ভাইয়া!” তখন আদ্রিয়ান বাড়িতে ঢুকছিল! ফোনে কথা বলতে দেখে আর নাম শুনেই বুঝে যায় কে ফোন করেছে!কিছু না বলেই উপরে চলে যায়।সৌরভ ওকে সব বললো আর জিজ্ঞেস করলো,”তুমি কি ওকে সব বলে দিয়েছো?”

অরিন: না আমি কিছুই বলিনি!

সৌরভ: হুট করে এমন কেন করলো?

অরিন: আপনি রাখুন!পরে কথা হবে!

বলেই রেখে দিল!

আদ্রিয়ান তখন সোফায় এসে বসলো,

আদ্রিয়ান: অরিন তোমায় একটা ফোন কিনে দিবো?না ল্যান্ডলাইন এ এভাবে আর কয়দিন কথা বলবে,ফোন থাকলে আর বলতে হবে না পরে কথা হবে..

অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারপর ফোঁস করে শ্বাস ফেলে আদ্রিয়ান এর পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো!

আদ্রিয়ান কিছু বললো না,কিন্তু অনেক্ষণ যাবার পরও অরিন যখন এক ভাবেই বসে রইলো তখন ও বললো,”এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?”

অরিন: আপনি এতটা জেলাস ফিল করেন কেন আমায় নিয়ে?

আদ্রিয়ান ভরকে গেলো,

আদ্রিয়ান: আমি মোটেও জেলাস না!

অরিন: আপনার বয়স কত?

আদ্রিয়ান আরেক দফা অবাক হলো,এই মেয়ে কি বলে?

আদ্রিয়ান: হোয়াট?

অরিন: বলুন না!

আদ্রিয়ান: পঁচিশ হবে!

অরিন: আপনার সাথে আমার এজ ডিফারেন্স আট বছরের!যদিও আপনায় দেখলে মনে হয় না!যাক গে.. আট বছরের বড় হয়ে বাচ্চাদের মত হিং’সা করেন!ছি ছি!

আদ্রিয়ান: কি বললে?

অরিন: যা শুনলেন।

অরিন আরেকটু ঘেঁষে বসে বললো,”ওই ইংরেজ বাবু!আপনি সত্যি ই জেলাস তাই না?”

আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকালো! দাত কেলিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় বসে আছে!

আদ্রিয়ান: দূরে সরে বসো!

অরিন: কেনো?

আদ্রিয়ান: আমি বলছি তাই!

অরিন আরো ঘেঁষে বসলো।সোফার কর্নারে বসায় আর চাপতে পারলো না আদ্রিয়ান!

অরিন: বসবো না!

আদ্রিয়ান: আমি যদি ধরি আগামী এক ঘন্টার মাঝেও উঠে যেতে পারবে না,বলে রাখলাম..

এবার কাজ হলো।অরিন সরে বসলো!

অরিন: বলেন না!!আপনি জেলাস তাই না?

আদ্রিয়ান: হ্যাঁ,আমি জেলাস তাতে তোমার কি?

অরিন দাত কেলিয়ে বললো,”আহা!কি কিউট”

ওর রিয়েকশন দেখে আদ্রিয়ান হেসে ফেললো!

আদ্রিয়ান: পাগলী একটা!

বলে উঠে যেতে লাগলো।

অরিন: ভরসা রাখতে পারেন!

আদ্রিয়ান তাকালো,কিছু বলবে তার আগেই আরিফা এসে অরিনের সাথে বসে পড়লো।আর কিছু বলল না ও…

____

নদীর পাড়ে বসে আছে তনয়া আর সোহা!তনয়া নিজের ফাটা গলায় গান গাচ্ছে!গান শেষে সোহাকে বললো,
তনয়া: আচ্ছা, আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি!আমি যখন গান করি তখন তুই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস না হয় উঠানে বসে থাকিস না হয় নদীর পারে এসে বসে থাকিস! কেন?
সোহা : আমি যে গান গাইছি না সেটা অন্যদের বোঝানোর জন্য।

তনয়া: কেন অন্যদের বোঝানো লাগবে কেন?এতে তো সবাই ভাববে আমাদের সোহামনিও কি সুন্দর গান গায়!

সোহা: এর থেকে কাকের কাকা ও সুন্দর!

তনয়া: কি বললি?

সোহা: যা শুনলি!

তনয়া সোহার চুল টান দিল, সোহাও দিল!

আদিব: তোরা আবার ঝগড়া করছিস?

তনয়া: ভাইয়া ও আমার গলাকে কাকের সাথে তুলনা করছে!

আদিব: গরুর বলে নাই এটাই শুকরিয়া কর!

তনয়া: তুমিও!যাও আরি!

আদিব ও সোহা: আহারে..

তনয়া: কেও ভালো না,অরিন আপু থাকলে আমায় বুঝতো..
লামিয়া পিছন থেকে বলে উঠলো,”ভূতের মুখে রাম রাম!”

আবিদ আর সোহা ফিক করে হেসে দিল!

তনয়া রেগে উঠে গেলো,

তনয়া: থাকবো না আমি! হুহ!

সোহাও পিছু পিছু গেলো।

আবিদ: লামিয়া চল!একটু গ্রাম ঘুরে দেখি!অনেকদিন পর আসলাম,দেখি সব কিছু!

লামিয়া: আচ্ছা ভাইয়া চলো!

আবিদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।কিন্তু কিছু বললো না।

রামু: ওরে লামু আফা..

লামিয়া: আরে রামু দা!কি ব্যাপার?

রামু: মুই না অহন বুঝছি মুই করে ভালাপাশি!

লামিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,”কাকে?”

রামু মুখ ঢেকে বললো,”তোয়ারে!”

সঙ্গে সঙ্গে মুখে এক থাপ্পর পরলো!

রামু: ও বাবা,ভূতে থাবর দিছে..

আদিবো: আরে না, মশা ছিল!

রামু: এ্যারলেই এমনে দিবা?

আদিব: ডেঙ্গু মশা কামড়ালে ম’রে যাবি তাই একটু..

বলেই বে’ক্কল মার্কা হাসি হাসলো!

আদিব: যা দাতের ডাক্তারের কাছে..নাইলে কেউ বিয়ে করবে না তোরে..

রামু গালে হাত দিয়ে চলে গেলো।

আদিব: শখ কত..

লামিয়া এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কি থেকে কি হচ্ছে বুঝতে পারলো না।

আদিব: হা করে কি দেখিস?চল!

আদিব এর ধমকে জলদি জলদি পা ফেলে হাঁটতে লাগলো।সেই সাথে বইতে লাগলো মিষ্টি অনুভূতি!ভালোবাসার!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে