অবুঝ দিনের গল্প পর্ব-১২+১৩

0
1067

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_১২

অরিন বেরিয়ে গেলো মাত্রই!আদ্রিয়ান কে ঘিরে দাড়িয়ে আছে ওর পরিবার!

বাবা: তোমার মা কি বলছে আদ্রিয়ান?এসব কি সত্যি?

আদ্রিয়ান নিশ্চুপ!ওর বাবাও যা বুঝার বুঝে গেলেন।

বাবা: এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে!তার আগে যদি বলতে তাও ভেবে দেখা যেত!আর কয়েকদিন পর বিয়ে!এর মাঝে এমন করলে ভেবে দেখেছো কি হবে? রিখিয়ার ফ্যামিলি কে কি জবাব দিবো?দেখো এখন এসব নিয়ে ভাববে না। আশা করবো আমাদের মান রাখবে!

বলেই ওর মাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো

মা: এটা কি ঠিক হচ্ছে?

বাবা: দেখো!অরিন খুব লক্ষ্মী একটা মেয়ে!ওকে মানতে আমার অসুবিধা নেই!কিন্তু রিখিয়া? ও কি দোষ করেছে?মেয়েটার এই মুহূর্তে বিয়ে ভেঙ্গে গেলে কি হবে?সমাজ দিবে ওকে বাঁচতে?

মা আর কিছু বললেন না।

আরিফা ভাইয়ের পাশে বসলো!

আরিফা: ভাইয়া ,আমার মনে হয় অরিন আপুও তোকে ভালোবাসে!

আদ্রিয়ান কিছু বললো না।আরিফা উঠে চলে গেলো।

মধ্যরাত,প্রায় একটা নাগাদ বাজে।অরিনের চোখে ঘুম নেই।

লামিয়া: অরিন!

অরিন ভয় পেলো!এত রাতে লামিয়া ওকে জাগতে দেখে ফেললো।

অরিন: জি আপু!

লামিয়া: এত রাত!এখনও ঘুমাসনি কেনো?

অরিন আমতা আমতা করে বলল,”আসলে আপু শহরে দেরি করে ঘুমাতে ঘুমাতে অভ্যাস হয়ে গেছে”

লামিয়া অরিনের পাশে খাটে বসলো।

লামিয়া: আদিব ভাইয়াকে ভালোবাসি আজকে পাঁচ বছর ধরে,ভালোবাসা না অভ্যাস এটা বোঝার ক্ষমতা আছে!

অরিন চুপ করে রইলো।

লামিয়া: আপুকে বলবি না?

মুহূর্তেই অরিন জড়িয়ে ধরলো লামিয়া কে।লামিয়া বুঝতে পারলো অরিন কাঁদছে।

লামিয়া: লক্ষ্মী বোনটি আমার!কাঁদিস না..বল আমায়!

অরিন শুরু থেকে শেষ অব্দি বললো।

লামিয়া: ভুল দিকে কেন পা বাড়ালি?

অরিন: আমি জানতাম না আপু!কিন্তু কেবল দু দিনের অনুভূতি এত পোড়াচ্ছে কেনো?

লামিয়া মৃদু হাসলো?
লামিয়া: আদ্রিয়ান কে তুই শুরু থেকেই নিজের অজান্তে ভালবাসিস অরিন!

অরিন নির্লিপ্ত ভাবে তাকালো!
অরিন: মানে?

লামিয়া: ভালোবাসা কোনো দুইদিনের অনুভূতি না অরিন!সত্যি বল তো প্রথম ওই তোর ইংরেজ বাবু কে দেখে মনে অস্থিরতা কাজ করেনি?তার হুট হাট কাছে আসা তোর মনে শিহরণ বয়ে নিয়ে যায়নি?তার সাথে প্রতিটা মুহূর্ত তোর কাটাতে ইচ্ছে করেনি?

অরিন নিশ্চুপ!

লামিয়া: হয়তো অনেক দেরি এখন।ওদের এনগেজমেন্ট ও হয়ে গেছে। কয়েকদিন পর বিয়ে!এখন?

অরিন: ঘুম পাচ্ছে!

লামিয়া বুঝলো অরিন আর কথা বলতে চায় না!ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে এলো।অরিন ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো!
সকালে মা রান্না করছে।একপাশে তনয়া বসে হাতে মেহেদী দিচ্ছে,ওপর পাশে অরিন জানালার ওপারে তাকিয়ে আছে।

মা: দামড়া দামড়া মাইয়া,কোনো কাজ করেনা।কেন একটু সাহায্য করলে কি হয় তোদের?একজন শহর থেকে এসে নবাব হয়ে গেছে..

অরিন: কিছু করা লাগলে বলো,করে দিচ্ছি!অযথা প্লিজ চেঁচামেচি করো না।

বলেই উঠে মায়ের পাশে বসে পেয়াজ কাটতে লাগলো!অরিনের মা এক পলক তাকালেন ।অরিনের থেকে বটি নিয়ে পাশে রাখলেন!মেয়েকে নিজের মুখ করে বসালেন!

মা: কি হয়েছে রে অরিন তোর?

অরিন মৃদু হাসলো!

অরিন: কই কি হয়েছে?

মা: যেই মেয়েকে আগে হাজার কথা শুনালেও কাজে হাত দিত না,সে মাত্র দুটো কথা শুনতে পারলো না?এটা তো আমার মেয়ে না!বল না মা!শহর থেকে এসে কেমন মন ম’রা হয়ে আছিস!কেমন চুপচাপ!তুই তো এমন ছিলি না!বাড়িতে তুই থাকা সত্বেও কেমন শান্ত!

অরিন: তেমন না মা!আসলে সামনে পরীক্ষা!না জানি কিভাবে কি করবো!তাই একটু চিন্তিত!

মা: চিন্তা করিস না ,সব ঠিক হবে!এবার যা।পাকনামি করে কাজ করতে হবে না!আমি যতদিন পারবো ততদিন কাজ করবো!তোদের করা লাগবে না!

তনয়া: তুমি আসলেই দুই মুখো!একবার কাজ না করলে ব’কো আবার কাজ করলেও ব’কো…

অরিন পাশ থেকে একটা ছোট গাছের ডাল ওর পায়ের কাছে মা’রলো!

অরিন: তোর মুখ বন্ধ রাখ!আমার মা বেস্ট!

তনয়া: ও আচ্ছা,তোমার মা?আমার কিছু না!

অরিন: তোকে কুড়িয়ে আনছে!তুই জানিস না?তাই আমার মা ই!

তনয়া: বললেই হলো?

লামিয়া: তোরা চুপ থাক!এটা তো আমার কাকিমনি!

অরিন: আসছে আরেক ভাগীদার!

মা: তোরা কি শুরু করলি?

সোহা: এদের কারোর সহ্য হয় না,তুমি তো আমায় বেশি ভালোবাসো তাই না?

বলেই জড়িয়ে ধরলো!

অরিন: ওমনিই মাঝে হাড্ডি হয়ে ঢুকলি?

সোহা: হাড্ডি আমি না!হাড্ডি তোমরা ,কাবাব মে হাড্ডি!

লামিয়া: তবে রে,এরে ধর!

সোহা আগেই বাইরে দৌড় দিল!তার পিছু অরিন,লামিয়া আর তনয়া!

মা: পাগলীগুলা!

নদীর পাড়ে বসে আছে অরিন,লামিয়া,সোহা,তনয়া,বিথী আর হৃদি!

বিথী: আহ…কতদিন পর এভাবে আড্ডা দিচ্ছি।

হৃদি: হুমম.. কিরে তনু তুই বেজার কেনো?

তনয়া: কাল আমার নতুন জামাটাকে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়েছি। সে জন্য ছোট হয়ে গেছে। গায়ে লাগছে না। এখন কী করি বলো তো?

সোহা : তাহলে এক কাজ কর। আজকে তুই ডিটারজেন্ট দিয়ে গোসল করে ফেল।

সবাই হেসে উঠলো!

তনয়া: সোহা কি বাচ্চু!

সোহা: আমার এখনও আঠারো বছর হয় নাই!বিয়েও হয় নাই!তাই…

তনয়া: দেখছো আপু কি ফা’জিল হয়েছে!

রামু: অরিন আফা!

অরিন বাদে সবাই মুখ চেপে হাসলো!

অরিন: কি?

রামু: তুমি মোরে না কইয়া গেলা জি!মুই তো রাগ করছি!

বিথী: অলে,বাবু লাগ কলছে!

অরিন: আহ বিথী!

রামু: বিথী আফা আমনে মোরে পচাইবেন না ,কইয়া রাখলুম!

অরিন: রামু ভাই!তুমি যাকে ভালোবাসা বলো সেটা একটা ভাই বোনের মতো!ভালোবাসার অনুভূতি গুলো না অনেক সুন্দর।এটা কারোর কথায় অনুভূত হয় না!নিজের অজান্তেই হুট করে জানান দিবে!ভালোবাসি!

রামু শুধু শুনেই গেলো।অরিন উঠে গেলো!ওর সাথে বাকি সবাই!

তনয়া: ইদানিং তুমি অনেক কঠিন কঠিন কথা বলো আপু!

লামিয়া: বাস্তবতার কারণে!

কেও আর কিছু বললো না।

রাতে আনমনে উঠানে বসে আছে!ফোনের আওয়াজে আনমনেই রিসিভ করলো।

অরিন: হ্যাল্লো?

ওপাশে নিশ্চুপ!

অরিন: কে বলছেন?

তাও চুপ!

অরিনও চুপ রইলো।বুঝতে পেরেছে ওপর পাশে কে!

অরিন: কেমন আছেন আদ্রিয়ান?

আদ্রিয়ান চুপ..

অরিন: ইংরেজ বাবু?

আদ্রিয়ান: উল্টা পাল্টা নামে ডাকলে জবাব পাবা না,সঠিক নামে ডাকার জন্য উত্তর দিলাম!

অরিন: ইংরেজ বাবু সঠিক নাম?

আদ্রিয়ান: হুমম..

নিরবতা!!

অরিন: বললেন না তো কেমন আছেন?

আদ্রিয়ান: যেমন থাকার কথা!

আবারো নিরবতা!

অরিন: একটা কথা বলবো!

আদ্রিয়ান: হুমম!

অরিন: কিছু কিছু জিনিস না পাওয়াই ভালো,দূর থেকেই তা অনুভব করা যায়!মাঝে মাঝে কিছু জিনিস দূরে থাকাই ভালো।

আদ্রিয়ান চুপ থেকে বললো,”কালকে তো আসছো?আমার বিয়েতে!”

অরিন: হুমম.

আদ্রিয়ান: ভালোবাসি বলবে একবার অরি পাখি?

অরিন ফোন চেপে ধরলো!চুপ রইলো!

অরিন চুপ রইলো।কোনো উত্তর না পেয়ে আদ্রিয়ান বললো,”শুভ রাত্রি!রাত জেগো না!”

বলেই কেঁটে দিল!চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল!ফোন কানে রেখেই বললো,”ভালোবাসি আদ্রিয়ান”

_____

মা: কি বলিস অরিনের জ্বর?

লামিয়া: হুমম!তোমরা যাও!আমি থাকি ওর সাথে!

কাকী: এভাবে একা ফেলে আমরা কি করে যাই?

লামিয়া: মা আমি আছি তো!

হৃদি: তোমার লাগবে না,আমি আছি!

বিথী: তুই যাবি না?

হৃদি: না!

অনেক কথাবার্তার পর হৃদির সাথেই অরিন থাকবে বলে ডিসিশন হলো!

বিথী কে অরিন এক সাইডে নিলো!

অরিন: কোনো অঘটন ঘটাবি না!

বিথী: মানে?

অরিন: আমি জানি তুই বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতেই যাচ্ছিস!নাইলে আমায় এই অবস্থায় ফেলে যেতি না!দেখ বিথী!মোটেও এমন কিছু করবি না!দুই বাড়ির সম্মান এখানে!

বিথী সম্মতি জানালো।

ওরা বেরিয়ে গেলো।

সেদিন রাতে আবারও আদ্রিয়ান ফোন দিল!হৃদি পাশেই ছিল!

হৃদি: আদ্রিয়ান এর বিয়ে অরিন!ওর এভাবে তোকে ফোন দেয়া শোভা পায় না!

অরিন কিছু একটা ভেবে রিসিভ করলো!

আদ্রিয়ান: এলে না যে!

অরিন: শরীর ভালো না!

আদ্রিয়ান: সত্যি কি তাই?

অরিন কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উত্তর দিলো,”আর কখনো আমায় বিনা প্রয়োজনে ফোন করবেন না!”

আদ্রিয়ান মলিন কণ্ঠে বলল,”এটাও কেড়ে নিলে!”

বুক কেঁপে উঠলো অরিনের!কষ্ট তো ওর ও হচ্ছে।

আদ্রিয়ান: শুভ রাত্রি!

কেঁটে দিল ফোন!অবাধ্য নোনা জল আবারও গড়িয়ে পড়ল!

হৃদি: আর কত?

অরিন নিরুত্তর হয়ে শুয়ে পরলো!জ্বর বাড়ছে আবার!

বিথী আর রিখিয়া এক সাথে ঘুমাবে আজ!হলুদ অনুষ্ঠান একটু আগেই শেষ হলো!সারাদিনেও সুযোগ পায়নি অরিন আর আদ্রিয়ান এর কথা বলতে!

বিথী: আপু একটা কথা ছিল!

রিখিয়া: হুমম বলো!

বিথী রিখিয়ার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারছে না,এই মেয়ের মুখে অনেক বেশি ই মায়া!কোনো কঠোর ব্যাক্তিও চাইলে এর সামনে কঠোর হতে পারবে না!

বিথী: আপু,আসলে…

রিখিয়ার ফোন এ তখন মেসেজ এলো।হুট করেই লাফিয়ে উঠলো সে।প্রিয় মানুষের মেসেজ কে নাই বা পেতে চায়?

রিখিয়া: ফাইনালি কাল আমরা এক হব!আমরা এক!ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে!আমি খুব খুশি খুব!

বলতে বলতেই চোখে জল ভিড় করলো।বিথী আর বলতে পারলো না।কিভাবে ভাঙবে ওর স্বপ্ন?

আজ আদ্রিয়ান এর বিয়ে।রাত একটা!ঘরের এককোনে বসে চাঁদ দেখছে অরিন!

অরিন: ওদের বিয়ে হয়ে গেছে না রে হৃদি? ইস,জ্বরের জন্য বিয়ে খেতে পারলাম না।

বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো ও।

হৃদি উঠে ওকে টেনে দাঁড় করালো। সজোরে ওকে চ’ড় মা’রলো…

হৃদি: কেনো নিজেকে কঠোর প্রমাণ করতে চাচ্ছিস?কেনো?অন্তত এই চ’ড়ের জন্য হলেও কাঁদ!চিৎকার করে !আজকে সব কষ্ট বের কর অরিন!বাড়িতে কেউ নেই!প্লিজ,তোর ভালো লাগবে! কাঁদ না অরিন!এভাবে মনটাকে মা’রিস না!

অরিন বসে পড়লো ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো। আস্তে আস্তে চিৎকার বাড়তে লাগলো! হৃদি ওকে বাঁধা দিচ্ছে না।

এক পর্যায়ে হৃদি ওকে জড়িয়ে ধরলো!অরিন ওই অবস্থাতেই বললো,

অরিন: হৃদি! ও আমার দুদিনের অনুভূতি ছিল না রে!আমার অবুঝ দিনের অনুভূতি সে!বিদেশের গোমড়া মুখো ইংরেজ বাবুর হাসি দেখার লোভে আমি মনটা তার কাছে সেই খানেই দিয়েছি,যেখানে তার আমার প্রথম দেখা!গ্রাম ঘুরার নাম করে তার উপভোগরত হাসিটা দেখতে চেয়েছি নিজের মনে প্রশান্তি অনুভব এর জন্য।রাতের জোৎস্না বিলাসের তার কাছে আসার অস্বস্তির মাঝেও তাকে মনেরই অজান্তে ভালো বেসে গেছি!এটা দুদিনের অনুভূতি নয় হৃদি!মনের অজান্তে তার সাথে প্রত্যেক মুহূর্ত উপভোগ করতে চেয়েছি!তার জেলাসি,তার কেয়ারিং সব কিছুতেই তাকে ভালোবেসেছি!!আমি শুধু বুঝেছি দেরিতে।কিন্তু সে যে আমার অবুঝ দিনের ভালোবাসা ছিল!সে যে আমার অবুঝ দিনের গল্প হৃদি!আমার কষ্ট হচ্ছে হৃদি!ভালোবাসি আমি আমার ইংরেজ বাবুকে হৃদি!ভালোবাসি!প্রচুর ভালোবাসি!

হৃদি ওকে শক্ত করে ধরে আছে!মেয়েটা মন প্রাণ উজাড় করে কাঁদছে!হৃদি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কিছু দীর্ঘশ্বাস জমা হয়ে থাকবে বুকে, কিছু অশ্রু থেমে থাকবে চোখের নিকটে, ঝরাবে না শিশির ।ভালোবসার যে কষ্ট সেটি সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক। কাউকে ভেলোবেসে কষ্ট পেলে মানুষ সেটি সহজে সহ্য করতে পারে না। ভেঙে পড়ে ভেতর থেকে। মানষিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে থাকেযে স্মৃতিগুলো আমরা আনন্দের মনে করে গুছিয়ে রাখি,একসময় সেই ভালো স্মৃতিগুলোই আমাদের,সবচেয়ে বেশি মনে কষ্ট দিয়ে যায় !…অরিনের পরিণতি কি হবে?

“দুচোখে সাজানো ঘুম, কেড়ে তো নিয়েছ
রাতের মত করে, কাছেই রয়েছ
এ মনে রেখেছো হাত, কী যে মায়াতে
সুখের অনুভূতি ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে
তুমি শুধু যে, আমারই থেকো
ও প্রিয়”….

#চলবে…

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_১৩

সকালে নিজেকে আদ্রিয়ান দের বাড়িতে নিজেকে আবিষ্কার করলো অরিন! ধরফরিয়ে উঠে বসলো ও!

অরিন: এ কেমন স্বপ্ন?

হৃদি: ঘুম ভাঙলো তোর?

অরিন: তুই ও আমার সাথে স্বপ্নে এসেছিস?

হৃদি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

হৃদি: ক্লোরোফর্ম এর জন্য কি তোর মাথা গেছে?

অরিন: মানে?

বিথী: উঠে গেছিস?

অরিন এবার বুঝলো এটা স্বপ্ন না!

অরিন: আমি এখানে কিভাবে?

বিথী: গ্রামে গেছি!আদ্রিয়ান ভাইয়া তোকে অনেকক্ষণ ডেকেছিল।ইনফ্যাক্ট আমরাও!যখন দেখলাম তুই উঠছিস না ,তখন ভাবলাম ঘুমন্ত তুই কে একটু ঝটকা দেই।তাই নিয়ে আসলাম!গাড়িতে করে!মাঝে নড়েচড়ে উঠছিলি দেখলাম!তখন উঠে গেলে ঝটকা কম হতো।তাই ক্লোরোফর্ম দিয়েছিলাম!

বলেই দাত কেলালো!অরিন পাশ থেকে বালিশ নিয়ে ছুড়ে মারলো ওর দিকে !

অরিন: বিয়ে তো শেষ,তো আবার আমাকে আনার কি মানে?

বিথী আবারও দাত কেলিয়ে বললো,”কনেকে নিয়ে এসেছি!এখন বিয়ে হবে!”

অরিন: মানে!

হৃদি: আমি বলছি শুন!

ফ্ল্যাশব্যাক!

রিখিয়া: আমি জানি তুমি কি বলতে চাও!

বিথী: সত্যি?

রিখিয়া: অরিন আদ্রিয়ানকে ভালোবাসে এই তো?ওটা আমি আগে থেকেই জানি!এটাও জানি আদ্রিয়ানও ভালোবাসে!

বিথী: সব জেনেও বিয়ে করবে?

রিখিয়া: হুমম করবো তো ,কিন্তু আদ্রিয়ান কে না! জয় কে!

বিথী: কি?

রিখিয়া: জয় আর আমার গত চার বছর ধরে রিলেশন শিপে আছি!আসলে অনেকটা আচমকাই ব্যাপারটা ঘটলো!এখন বাবা মা কে বলেছিলাম ও,কিন্তু তারা মানে নাই! ইনফ্যাক্ট আরো জলদি এনগেজমেন্ট দিয়ে দিল!তাই ওদের শিক্ষা দিতে পালাবো!আদ্রিয়ান আর অরিন এর জন্য আরো সহজ হলো!কারণ এতে ওরা এক হতে পারবে আর আমিও গিল্টি ফিল করবো না।এক ঢিলে দুই পাখি!

বিথী: আপুনি.. তু সি গ্রেট হো! আলাবিউ!

বলেই জড়িয়ে ধরলো।বিয়ের দিন!

রিখিয়া: আমাকে জোস লাগছে না?

বিথী: এক্কেরে জোস!

রিখিয়া: এখন আমি দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে স্টাইলে পালাবো!

বিথী: সাথে আমিও আছি!

রিখিয়া: টাটা!

বিয়ে বাড়ীতে রটে গেছে বউ পালিয়েছে।ইতোমধ্যে সবাই চলে গেছে…আদ্রিয়ান নিজের ঘরে শেরওয়ানি পরে।নিচে দুই পরিবার বসে আছে।

বিথী তখন আদ্রিয়ান এর রুমে এলো…দাত কেলিয়ে বললো,”ভাইয়া!”

আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো!
টিশার্ট এর উপর গেঞ্জি আর জিন্স পড়ে বিথীকে নিয়ে নিচে নামলো।

আদ্রিয়ান এর বাবা: কোথায় যাচ্ছিস?

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,”বউ আনতে!”

সবাই বে’কুব হয়ে তাকিয়ে রইলো!

আদ্রিয়ান বিথীকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো!পালানোর আগে রিখিয়া মেসেজ দিয়েছিল,

“দোস্ত, জয় আর আমার রিলেশন আছে!বাবা মা কে বলার পরও ওরা মানেনি।আমি জানি ,তোর আর অরিনের ক্ষেত্রেও সেম!আরে চিল চিল!আমি জানি..তোদের হাব ভাব দেখেই বুঝেছি!তো ওদের একটু শিক্ষা দিলাম!পালিয়ে যাচ্ছি!আব তু ভি আপনি দুলহান কো লে আ…বাই বাই।কয়েকদিন মাঝেই ফিরে এসে তোর বাড়িতে দাওয়াত খাবো!”

মেসেজ দেখে কিছুক্ষণ দম মেরে বসে রইলো ও।তারপর হুট করেই চিল্লিয়ে বললো,”ইয়েস ইয়েস…!”

আরিফা: এমন বা’ন্দরের মত লাফাচ্ছিস কেন?অরিন আপুর শোকে পাগল হলি নাকি?

আদ্রিয়ান: কেয়া কারু হায়,কুচ কুচ হোতা হে!

আরিফা: আম্মু! তোমার ছেলের মাথা গেছে! ও পাগল হয়ে গেছে!পাবনার টিকেট কাটো !

আদ্রিয়ান: তু কেয়া সামঝি গি পাগাল!

আরিফা পাগল বলতে বলতে মায়ের কাছে গেলো।…

ফ্ল্যাশ ব্যাক এন্ড..

অরিন সব শুনে দম মেরে রইলো!

আদ্রিয়ান: এখন নিচে আসেন মিস!

তিনজন দরজার দিকে তাকালো!আদ্রিয়ান বুকে হাত দিয়ে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের লুক দেখে অরিন এক দফা ক্রাশ খেলো!আদ্রিয়ান ওকে চোখ মা’রলো…

অরিন: হায়!ক্রাশ!

বলেই বুকে হাত দিয়ে শুয়ে পড়লো,আদ্রিয়ান হাসলো!

আদ্রিয়ান: অরি নিয়ে আসো তোমরা!

হৃদি ও বিথী: ওকে জিজু!

বলেই দাত কেলালো!

আদ্রিয়ানের বাবা: দেখো অরিনের এখনও আঠারো হয় নী।তাই আঠারো হওয়া অবদি আমরা অপেক্ষা করবো সবাই!

সবাই সম্মতি দিলো!রাতে গোছ গাছ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল!

সকাল বেলায় অভ্যাস অনুযায়ী আবারও অরিন আগে উঠলো!উঠে ফ্রেশ হয়ে ছাদে গেলো! সকালের পরিবেশ উপভোগ করার মাঝেই আদ্রিয়ানও এলো!

আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বললো,”বাহ!মিস উড বি এর দেখা পেলাম সক্কাল সক্কাল!”

অরিন ভ্রু কুচকে তাকালো।

অরিন: মিস উড বি?

আদ্রিয়ান: ইয়েস!

অরিন কিছু বললো না,মুচকি হেসে উল্টো ফিরলো।

আদ্রিয়ান: এভাবে হেসো না গো!

অরিন: মনে হচ্ছে নতুন আদ্রিয়ান কে দেখছি! ক্যারেক্টার পাল্টে গেলো তো পুরাই!

আদ্রিয়ান: পাল্টে গেলো?

অরিন: একদম!

আদ্রিয়ান এক হাতে অরিনের কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো ওর!

আদ্রিয়ান: তাহলে আরেকটু পাল্টাই!

অরিনের গলায় আওয়াজ আসছে না…

অরিন: আদ্রিয়ান..

আদ্রিয়ান আরো শক্ত করে ধরলো..অরিনের যায় যায় অবস্থা..চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো!

অরিন: মিস্টার অভদ্র!

আদ্রিয়ান: ইয়েস,অভদ্র..অভদ্র হয়েছি আমি তোমারই প্রেমে!!

অরিন: ফা’জিল লোক!

বলেই ধাক্কা মেরে নিচে গেলো,আদ্রিয়ান ঠোঁট কামড়ে মুচকি হেসে মাথা চুলকালো!

এভাবেই দিন কাটতে লাগলো,অরিন আদ্রিয়ান এর দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটি ও…

হৃদি: ওই ক্যাচাল ওয়ালা!

অনিক: ক্যাচাল ওয়ালা কাকে বললে?

হৃদি: আমার সামনে যেই হনুমান দাড়িয়ে আছে তাকেই!

অনিক: ইউ!

হৃদি: ভি!কথা না বলে এদিকে আসুন!

অনিক: কি ব্যাপার হটাৎ ডাকছেন ,এত সুন্দর করে!

হৃদি: আসুন না,ভাইয়া!

অনিক: ভাইয়া?

হৃদি: জী,প্লিজ!

অনিক বির বির করে বললো,”যেখানে সব সাইয়া বানায়,সেখানে এ আমাকে ভাইয়া কয়!কপাল রে অনিক!কপাল তোর!”

হৃদি: কি বির বির করছেন?

অনিক: কিছু না , চলো!

হৃদি ওকে নিয়ে গেলো!

অনিক: বলো কি?

হৃদি সামনে ইশারা করলো!অনিক সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা কু’কুর তার সামনে হৃদির স্কার্ফ!অনিক হৃদির দিকে তাকিয়ে দেখলো হৃদি স্কার্ফ ছাড়া!যদিও কটি আছে তাই ওর সমস্যা না হলেও স্কার্ফ রাখাটাই ভদ্রতা!

অনিক: ওটা ওখানে কিভাবে?

হৃদি: উড়ে পড়েছে!এখন উঠাতে গেলেই কু’কুর ঘেউ ঘেউ করছে!

অনিক হেসে বলল,”আমার সামনে বাঘের মত আচরণ আর সামান্য কু’কুরকে ভয় পাও!”
বলেই উঠাতে গেলে কু’কুরটি এত হিং’স্র ভাবে চিল্লালো যে অনিকও ভয় পেলো!মনে হচ্ছে এটা ওর গার্লফ্রেন্ডের স্কার্ফ!

অনিক কু’কুরকে উদ্দেশ্য করে বলল,”কি ভাই?মেয়েদের স্কার্ফ নিয়ে কি করবে? গার্লফ্রেন্ড কে দিবা?বলি নতুন কিনে দিও!এটা তো পুরনো,তোমার গার্লফ্রেন্ড পরে রাগ করবে!ঠিক আছে?আমি এটা নিলাম!”

বলে আবারও নিতে গেলেই কু’কুর তেড়ে আসতে নিলো।তাই ও পিছিয়ে গেলো!

হৃদি: হাওয়া ফুস?

অনিক: স্কার্ফ নতুন কিনে নিও!এই ব্যাটা রে মনে হয় ওর জিএফ টর্চার করে।তাই ক্ষেপে আছে!

হৃদি: ওটা অরিনের দেয়া প্রথম গিফট!আমাদের ফ্রেন্ডশিপ এর চিহ্ন!

অনিক হৃদির মুখের দিকে তাকালো।মলিন চোখে তাকিয়ে আছে স্কার্ফ এর দিকে!

অনিক: দৌড়াতে পারো?

হৃদি: মানে?

অনিক: দৌড়াবো রেডী থাকো!

বলেই কু’কুরের সামনে থেকে স্কার্ফ নিয়ে হৃদির হাত ধরে দৌড় দিল কলেজের দিকে!

বিথী: এই অরিন!হৃদি আর অনিক কি পালাচ্ছে?

অরিন: মানে?

বিথী: সামনে দেখ?

অরিন সামনে তাকিয়ে দেখলো অনিক হৃদির হাত ধরে দৌড়ে এদিকে আসছে!মাঝে অগ্নি চিল্লিয়ে বললো,”অরিন ,বিথী দৌড়া!পাগলা কু’ত্তার খবলে পড়ছে ওরা!এদিকেই আসছে! দৌড়া!”

বলেই উঠে দৌড়!

অরিন বিথী কি করবে বুঝতে পারছে না!অগ্নি আবার ফিরে এসে দুটোকে টেনে উঠালো দুইজন..পুরো কলেজ গ্রাউন্ড কু’কুর
দৌড়ানি করাচ্ছে ওদের!!

অগ্নি: আব্বে ওই। হৃদি উল্টা দিকে যা না!

হৃদি: হা’রামী ,আমার বিপদে তোরা সাহায্য না করে দৌড়াচ্ছিস কেনো?

অরিন: আপনি বাঁচলে বাপের নাম!

বিথী: হুস হুস..

অনিক: এটা মাছি না!দৌড়াও!

অগ্নি: আম্মু!!

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে