অবুঝ দিনের গল্প পর্ব-১০+১১

0
1390

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_১০

আরিফা: আপু রেডী হও জলদি,শপিং এ যাবো!

বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো।

অরিন: এখন শপিং?

আরিফা: হুম,এনগেজমেন্ট রিং কিনতে হবে।সাথে দুইজনের জন্য ড্রেস ও।

অরিন: কার এনগেজমেন্ট?

আরিফা: এমা,আমি তোমাকে বলতেই ভুলে গেছি! রিখি দি আর ভাইয়ার এনগেজমেন্ট এক সপ্তাহ পর।

মুহূর্তেই অরিনের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। হাসার চেষ্টা করে বললো,”কি?”

আরিফা: হুম,তার কয়েক মাস পরেই বিয়ে।আর জানো মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট হলো ওরা ছোটকালের বন্ধু ,সেই সাথে বাবারাও।তাই তো ছোট থেকে ফ্যামিলি ডিসিশন নিয়েছে ওদের বিয়ে দিবে।এই জন্য ভাইয়া বা রিখিদি কখনো রিলেশনে যায় নী।এটা মাথায় রেখেই।

অরিন: ওহ!উম..আমার না ভালো লাগছে না,তোমরা যাও!

আরিফা: এটা বললে কি করে হবে?

আদ্রিয়ান: তোমরা রেডী?

আরিফা: ভাইয়া,দেখ!আপু বলছে ভালো লাগছে না তাই যাবে না!

আদ্রিয়ান: কেনো?শরীর খারাপ নাকি?
বলেই ওর কপালে হাত রাখলো।

অরিন ওর স্পর্শে কেঁপে উঠলো।তাও নিজেকে সামলে বললো,”তেমন কিছু না!আসলে মাত্র কলেজ থেকে আসলাম!টায়ার্ড লাগছে!”

আদ্রিয়ান: তাহলে কালকে যাবো!

অরিন: কালও আমার ক্লাস আছে!

আদ্রিয়ান: ওকে তাহলে আমরা তুমি যেদিন ফ্রি হবে ওদিন যাবো।

অরিন: আরে,দরকার কি?আপনারা যান!আমি বাড়িতে থাকি।

আদ্রিয়ান: বাসায় একা রেখে যাওয়ার মতো দায়িত্বহীন কাজ আমি করি না।আর রেশমি খালাও নেই।হয় যেতে হবে ,নয় পরে!

অরিন: একটু ওয়েট করুন ,আমি আসছি রেডী হয়ে।

আদ্রিয়ান: সিউর?

অরিন হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো!

অরিন একটা ড্রেস নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।আরিফা আর আদ্রিয়ান নিচে গেল।
বেসিনের আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো অরিন।কৈশোরের প্রথম প্রেম,প্রথম অনুভূতিটাই ঠুনকো হয়ে গেলো।কিন্তু ওর কেনো কষ্ট হচ্ছে?অনুভূতি তো কেবল দুই দিনের?চোখে পানি ঝাপটা দিয়ে রেডী হয়ে বেরিয়ে গেলো।পুরো রাস্তায় কারোর সাথে কথা বলেনি।শপিং মলে ঢুকতেই দেখলো একটা ছেলের সাথে দাড়িয়ে।

রিখি: ওইতো ওরা!

আরিফা: কেমন আছো রিখিদী!

রিখি: ভালো!

পাশের ছেলেটি বলে উঠলো,”রিখিদি কি? ভাবি বলতে শিখো!”

আরিফা ভেংচি কেটে বললো,”আপনার অপিনিয়ন কেউ চায়নি!”

রিখি: আহ, সাদ! লাগছিস কেনো?

সাদ: লাগলাম কই আপু?

রিখি : দেখতেই পাচ্ছি।

আদ্রিয়ান: তোদের কথা রাখ,কি কি কিনবি কিনে নে!

সবাই পছন্দ করতে লাগলো অরিন বাদে।সে শুধু রিখিকে দেখছে।কি মিষ্টি!দুইজনকে কত কিউট লাগবে,ভাবতেই মুচকি হাসলো।পরক্ষণেই আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে হাসিটা বিলীন হয়ে গেলো।দুদিনের অনুভূতি ই বুঝি এত কষ্টের?
রিখি: তুমি কিছু নিবে না অরিন?

অরিন: না আপু!

আরিফা: সেকি,কেনো?

অরিন: বাড়িতে আছে আমার ড্রেস।কিনে রেখেছি।ওগুলো পড়া হয় না,কোথাও যাই না বলে। ওগুলোই চলবে।

আরিফা আর রিখি জোর করলো না।আদ্রিয়ান ও কিছু বললো না!তবে সাদ অনেক জোর করছিল।ব্যাপারটা আদ্রিয়ান এর মোটেও ভালো লাগেনি। সাদ আর অরিন সমবয়সী!শপিং করে বাসায় ফিরলো ওরা!
রাতে অরিন বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলো।তখন আদ্রিয়ান এলো।

আদ্রিয়ান: অরি!

অরিন তাকালো..আদ্রিয়ান ওকে অরি বলেই ডাকে এখন। আদ্রিয়ান এর হাতে একটা প্যাকেট!সেটা অরিনের হাতে দিল।

অরিন হাতে নিয়ে দেখলো ড্রেস আর ম্যাচিং অর্নামেন্টস!

অরিন: আমার তো এগুলো লাগবে না ইংরেজ বাবু!

আদ্রিয়ান: এটা আমার তরফ থেকে উপহার!আমাকে এত সুন্দর অনুভূতি গুলোর সাথে পরিচয় করিয়েছো তার প্রতিদানে এই সামান্য জিনিস!প্লিজ!নাহলে রাগ করবো!

অরিন হাসলো আদ্রিয়ান এর বাচ্চামো কথা দেখে।আদ্রিয়ান ও স্বস্তি পেল।অরিন কে আজ কেমন মন ম’রা লেগেছে সারাটা দিন ওর!!

কেটে গেলো দুই দিন…
অফিসে কাজ করছে অনিক,সাগর,রোজ,সৌরভ আর জয়..

সৌরভ: ইয়ার আর ভালো লাগে না,পার্ট টাইম জব।তাও কাজ এমন ,যে নরমাল জব এর থেকেও কম না..

জয়: দোস্ত, কত দিন ধরে ছুটি পাই না। কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি। কিন্তু বস তো কিছুতেই ছুটি দেবেন না।ওদিকে আদ্রিয়ান আর রিখি এনগেজমেন্টের এক সপ্তাহ আগে ছুটি পেয়ে গেলো ।

অনিক: হুমম। আমিও হাঁপিয়ে উঠেছি। কিন্তু আমি বসের কাছ থেকে ছুটি নিতে পারব, দেখবি?

রোজ: কিভাবে?

অনিক: ওয়েট!
বলেই অনিক টেবিলের ওপর উঠে দাঁড়াল এবং ছাদ থেকে বেরিয়ে আসা একটা রড ধরে ঝুলতে শুরু করল।ব্যাপারটায় হতভম্ব হয়ে রইলো উপস্থিত সবাই!

সাগর: করিস কি?
অনিক উত্তর দিলো না।
কিছুক্ষণ পর বস এলেন।
বস: এ কী অনিক! তুমি ঝুলে আছো কেন?

অনিক খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, “স্যার আমি লাইট, তাই ঝুলে আছি।”
বস ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন।লাইট?
কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, ‘অতিরিক্ত কাজের চাপে তোমার মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দিচ্ছে। তুমি বরং এক সপ্তাহের ছুটি নাও।’
অনিক ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বিদায় নিল। বাকিরা চেয়ে চেয়ে দেখল। অনিক বেরিয়ে যেতেই ওরাও পিছু নিলো।

তখনই বস আটকে দিয়ে বললো

বস: সে কী! ছুটি তো ওকে দিয়েছি! তোমরা কোথায় যাচ্ছ?

জয়: স্যার আপনার এই বদ্ধ অফিসে অন্ধকার এ কাজ করবো কিভাবে?

বস: কী আশ্চর্য! অন্ধকার কই?

রোজ: স্যার,লাইট কে তো ছুটি দিলেন।এখন তো অন্ধকার।

সৌরভ: আর আমরা লাইট ছাড়া কাজ করব কী করে?

বস নির্লিপ্ত!

বস: তোমাদের মাথাও গেছে।বাসায় গিয়ে রেস্ট নেও।

বস সাগরের দিকে তাকালেন।রোজ শটান করে ওকে টান দিল।

রোজ: দেখিস না লাইট নেই?কাজ কিভাবে করবি?চল চল!

বলেই ওকে কিছু বলতে না দিয়ে টেনে নিয়ে গেল।
বস দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাকিদের দিকে তাকালো।ওরা এতক্ষণ এই ড্রামাই দেখছিল।বস ধমকে বললো,”কাজ করো”

সাগর: এটা কি ঠিক?

রোজ: সারাদিন এত কাজ কাজ করবি না তো!

সবাই বেরিয়ে হাই ফাইভ করলো।

বিথী: সে যে কেনো এলো না ,কিছু ভালো লাগে না..
গুন গুনিয়ে গান গাইতে গাইতে রেডী হচ্ছে বিথী।হৃদিকে নিয়ে বাইরে যাবে। যাবার পথে অরিন কেও নিয়ে নিবে।

বিথী: কি ব্যাপার?হোস্টেল থেকে বের হওয়ার পরই দেখছি তুই মুচকি হাসছিস!

হৃদি: তুই আর অরিন সারপ্রাইজ পাবি!

বিথী: কি সারপ্রাইজ?

হৃদি: আমি কেন বলবো?

তখনই দেখলো অরিন আর আদ্রিয়ান আসছে।আদ্রিয়ান অরিনকে একা ছাড়ার রিক্স নিতে চায় না।

বিথী আর হৃদি আদ্রিয়ান এর সাথে কুশল বিনিময় করলো!অরিন দেখলো ওদের থেকেই দূরে দাড়িয়ে এক ছেলে ওকে চোখ টিপি দিচ্ছে।মুখে মাস্ক!অরিনের বিরক্ত লাগলো!এরপর দেখলো লোকটা ওকে মাথায় সিং দেখাচ্ছে!মুহূর্তেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো ও।লোকটি এবার মাস্ক খুলে ওকে ভেঙ্গালো!আর তারপর আবার মাস্ক পরে নিল।অরিন চমকে গেলো।কিছুক্ষণ তব্দা মে’রে দাড়িয়ে রইলো।তারপর এক ছুটে লোকটিকে ঝাপটে ধরলো।এদিকে অরিনের এমন কাণ্ড দেখে বিথী অবাক।আদ্রিয়ান রাগে বো’ম,কিন্তু হৃদি মিট মিট করে হাসছে!

বিথী: এটা কে?

লোকটির চেহারা দেখতে পাচ্ছে না ওরা।অরিন আবার ওকে ছেড়ে হাত পা ছুড়ে মারতে লাগলো!লোকটিও সুযোগ বুঝে ওকে মা’রছে…অরিন এবার হাতাহাতির এক পর্যায়ে ওর মাস্ক খুলে ফেললো।

বিথী চমকে বললো,”আকাশ!”

আদ্রিয়ান বুঝলো এটা ওর চাচাতো ভাই।শুনেছে ওর কথা।দুইজন ভাই বোনের মতোই,ভেবে শান্ত হলো!

আকাশ: এভাবে মা’রিস কেন?

অরিন: তুই খোঁজ নেস ও না দিস ও না।তোকে মা’রাই উচিত!

আকাশ: আমার হেয়ার স্টাইল টাই নষ্ট করে দিলো!

অরিন: ঢং!

বিথিকে টেনে হৃদি ওদের কাছে আনলো।আদ্রিয়ান ও এসে কুশল বিনিময় করলো।বিথী এখনও বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তখনই এন্ট্রি হলো অনিকের সঙ্গপাঙ্গ!

অনিক: আরে তোরা এখানে?

হৃদি: এই ব্যাটা এনে কেন রে অরিন?

অরিন ওর হাত চেপে শান্ত থাকতে বললো।বিথী হাসফাঁস করছে।কতদিন পর দেখা।কই একটু সময় কাটাবে।কিন্তু এত লোক।কিভাবে কি?অরিন বুঝে সবাইকে নিয়ে অন্যদিকে গেলো।আকাশ আর বিথী রইলো!

আকাশ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে

বিথী: কি?

আকাশ: আগের থেকে মোটা হয়ে গেছো!

বিথী নিজেকে পরখ করলো!কই মোটা? ও তো উল্টে আরো স্লিম হলো!

বিথী: আপনার চোখ আছে?

আকাশ: কেন এই দুইটা জিনিস দেখো না?

চোখের দিকে ইশারা করে।

বিথী: তাহলে উদ্ভট কথা কেন বলেন!!

আকাশ: ঠিকই বলছি!

হৃদি লেকের ধারে বসে পানি নিয়ে খেলছে।

অনিক: ইস রে..

হৃদি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।

অনিক: পানিটাও মেবী এই মেয়ের কারণে অতিষ্ঠ!

হৃদি হাত ঝেড়ে উঠে দাড়ালো!

হৃদি: আপনি আমার পিছে কেন পড়েন সব সময়?

অনিক: অন্ধ নাকি?দেখো না আমি তোমার সামনে?

হৃদি: আপনার সাথে কথা বলাই বেকার!
বলেই অন্যদিকে গেলো। অনিকও পিছে পিছে গেলো।মেয়েটাকে রাগাতে,বিরক্ত করতে ভালো লাগে ওর।

রোজ: তুই কি সারাদিন এই কাজ নিয়েই পড়ে থাকবি?মনে হচ্ছে অনেক বড় একটা জব করিস!

সাগর: ছোট বড় ব্যাপার না।কাজ এর অভিজ্ঞতা থাকলেই বড় কিছু হতে পারবি!

বলেই আবারও ফোনে কাজ করতে লাগলো।রোজ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।কখনো কি ও বুঝবে না ?রোজ কি চায়?

অরিন: আপনি বলেননি যে আপনার বিয়ে ঠিক?

আদ্রিয়ান: এটা এমন বলে বেড়ানোর কি আছে?বিয়ে বিয়েই তো।

বলেই লেকের দিকে তাকিয়ে রইলো!

অরিন আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ালো,”যদি বলতেন,হয়তো ছোট্ট মন এত বড় ভুল করে বসতো না,ইংরেজ বাবু!হৃদয়ের কোথাও যে বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে!অনেক!!”

আদ্রিয়ান: অরি!

অরিন: হুমম!

আদ্রিয়ান: আই উইশ কোনো ম্যাজিক করে পুরনো দিনে ফিরে যেতে পারতাম!

অরিন: কেনো?

আদ্রিয়ান: তাহলে নিজের জন্য নিষিদ্ধ জিনিসকে অনিষিদ্ধ বানিয়ে নিতাম…

অরিন তাকিয়ে রইলো,আদ্রিয়ান কি বুঝালো ওর ধারণা নেই!!

#চলবে…

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_১১

কেঁটে গেছে আরও কিছু কিছুদিন।পরশুদিন আদ্রিয়ান এর এনগেজমেন্ট!উদাস মনে ছাদে উঠলো অরিন!এক কোণে কাউকে সিগারেট টানতে দেখলো।

অরিন: আপনি সিগারেট খান ইংরেজ বাবু?

অরিন কে দেখে আদ্রিয়ান সিগারেট ফেলে দিল।

আদ্রিয়ান: না!

অরিন: মাত্রই তো খাচ্ছিলেন!

আদ্রিয়ান: সব সময় না, হুট হাট।

কিছুক্ষণ নিরবতা!

আদ্রিয়ান: অরি!

অরিন: হুমম?

আদ্রিয়ান: ধরো এমন এক জিনিস যেটা আমার জন্য নিষিদ্ধ জানা সত্বেও ভালোবেসে ফেলেছি,তখন করণীয় কি?

অরিন: নিষিদ্ধ জিনিসটা কি?

আদ্রিয়ান: আছে কিছু…যেটা আমি চাই।কিন্তু ভাগ্য অন্য!

অরিন: মনের উপর কারোর জোর নেই।সে আপন নিয়মে চলে।জিনিসটা যদি খুব বেশি পছন্দের আর ভালোবাসার হয় তাহলে সেটাকে নিজের জন্য নিষিদ্ধহীন করে ফেলুন।আর যদি বুঝেন জিনিসটি আপনার নয় ,তাহলে বলবো নিষিদ্ধ বস্তুটি নিষিদ্ধই শ্রেয়!

আদ্রিয়ান হুট করেই অরিনকে জড়িয়ে ধরলো।অরিন অবাক সাথে ভরকেও গেলো।শরীর কাঁপছে ওর!কথা বের হচ্ছে না! কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,”ইংরেজ বাবু!”

আদ্রিয়ান ছেড়ে দিলো,

আদ্রিয়ান: আসলে আপসেট ছিলাম।কাউকে প্রয়োজন ছিলো।সরি!

অরিন: ইটস ওকে।

আদ্রিয়ান নেমে গেলো।অরিন যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবলো,”প্রয়োজন শুধু?”

এক মুহুর্ত দাড়ালো না ও।নিজের রুমে দৌড়ে গেলো।চোখের পানি বাঁধ মানছে না।তখনই আরিফা এলো।

আরিফা: আপু আমি আজকে এখানে তোমার সাথে ঘুমাই?

অরিন চোখের পানি আড়াল করলো। ও একা থাকতে চাচ্ছে।

অরিন: আরু!দেখো কাল না আমার লাস্ট ক্লাস!তারপর ছুটি গ্রীষ্মের আর ঈদ মিলিয়ে।এখন কালকের পড়া ভালো মত না পারলে স্যার বাসায় অনেক পড়া দিবে।তাই আমি রাত জেগে পড়বো।

আরিফা: আচ্ছা,তাহলে অন্য কোনোদিন!তুমি পড়!

বলেই চলে গেলো!অরিন দরজা আটকে ঠেস দিয়ে বসে পড়লো।মনে মনে আওরালো,”কেন মাত্র দু দিনের আবেগ এত পোড়াচ্ছে আমায়?কেনো ইংরেজ বাবু আজ সেই আবেগ কে বাড়িয়ে দিলেন আরো?প্রতিনিয়ত পুড়ছি!কেনো এলেন আপনি আমার জীবনে?কেনো,অবুঝ মন টা আপনায় নিয়ে ভাবলো?কেনো ভালোবাসতে চাইলো?আচ্ছা এটা কি আদো ভালোবাসা না আবেগ ইংরেজ বাবু?”

ভাবতে পারছে না ও।মনটা কেঁদে উঠছে বার বার।নিজের অজান্তেই দুটি হৃদয় কষ্ট পাচ্ছে!

আজ এনগেজমেন্ট!আদ্রিয়ান এর দেওয়া ড্রেস পড়েছে অরিন।পুরো বাড়িটা কি সুন্দর সাজানো হচ্ছে। রিখিয়ারাও চলে এসেছে!আংটি পড়ার আজ মুহূর্তেই অরিন চলে গেছিলো … ও পারবে না সামলাতে..আদ্রিয়ান পুরোটা সময় ব্যাস্ত ভঙ্গিতে আশে পাশে ওকে খুঁজেছিল।পুরোটাই খেয়াল করলো রিখিয়া।কিন্তু কিছু বললো না।এনগেজমেন্ট সম্পূর্ণ হলো ভালোভাবেই!বিথী,হৃদি অরিন কে খুঁজতে খুঁজতে বাইরে এসেছে।বাগানের এক কোনায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ও।

বিথী: কিরে?তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমাদের দিন যায়!আর তুই এখানে?

হৃদি ওর মাথায় ধাক্কা দিয়ে বললো ,”ওই কথা বলিস না কেন?”

কিছু না বলেই হৃদিকে জড়িয়ে ধরলো অরিন। ঘাড়ে পানির স্পর্শ পেতেই হৃদি বুঝলো অরিন কাঁদছে!

হৃদি: এই এই,তুই কি ব্যাথা পেয়েছিস?সরি বুঝতে পারিনি।সরি সরি বান্ধবী!

বিথী অরিনকে টেনে ওর সামনে দাড় করালো।চোখ মুখ ফুলে আছে ওর।নিরবে কাঁদছে!কিছু একটা মাথায় নাড়া দিতেই ওকে জড়িয়ে নিলো।মিহি কণ্ঠে বললো,”আদ্রিয়ান ভাইয়াকে ভালবাসিস?”

হৃদি অবাক হয়ে তাকালো।

হৃদি: কি বলিস?

বিথী: চুপ!অরিন!

অরিন উপর নিচ মাথা নাড়ল!

বিথী আর হৃদি কি বলবে বুঝতে পারছে না।

বিথী: ভাইয়া জানে?

অরিন না বোধক মাথা নাড়লো!

বিথী: চল ভাইয়াকে বলবি তুই!

বলেই নিয়ে যেতে চাইলে অরিন আটকে দিল।
অরিন: পাগল তুই?উনার এনগেজমেন্ট আজ!

বিথী: বিয়ে তো আর না!

অরিন: তো?তাদের বিয়ে ছোট থেকেই ঠিক,আর আমি আমার দুদিনের অনুভূতি নিয়ে তার কাছে যাবো?

বিথী: দুইদিনের?

অরিন: হুমম!

হৃদি হাসলো!

হৃদি: ভালোবাসা দু দিনের অনুভূতিতে হয় না। তিলে তিলে গড়ে হাজার হাজার অনুভূতি নিয়ে। যার মাঝে ভালো লাগা খারাপ লাগাও মিশে আছে।

অরিন তাকালো!

অরিন: ইংরেজ বাবু তো আমায় চায় না!
নিরবতা!!

অরিন: কাউকে কিছু বলার দরকার নেই!

বিথী: কিন্তু..

অরিন: প্লিজ!

আর কেও কিছু বললো না।সবাই ভিতরে গেলো।জানতে পারলো আদ্রিয়ান এর এক্সাম শেষ আর জব ও করছে তাই দেরি না করে এই সপ্তাহেই বিয়ে সম্পন্ন হবে।

অরিন কিছু না বলে ছাদে চলে গেলো।মনটা বড্ড অবুঝ।এত বুঝ দিচ্ছে তাও মানছেই না।পাশে কারোর উপস্থিতে পেয়ে ঘুরে তাকালো।আদ্রিয়ান আকাশের পানে তাকিয়ে রয়েছে।

অরিন: আপনি?

আদ্রিয়ান: হুমম..মন খারাপ?

অরিন: নাতো!

আদ্রিয়ান: মন খারাপ হলেই এভাবে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকে!

অরিন: আপনার মন খারাপ?

আদ্রিয়ান নিরুত্তর!অরিন উত্তরের আশায় অনেকক্ষণ ছিল কিন্তু উত্তর না পেয়ে সামনে তাকালো।বেশ অনেক্ষণ পর আদ্রিয়ান উত্তর দিলো,তবে তা শুনে অরিন স্তব্ধ!

অরিন: কিহহ?

আদ্রিয়ান আকাশ পানেই তাকিয়ে বললো,”আই লাভ ইউ!”

অরিন: এরকম মজা করবেন না আমার সাথে!

আদ্রিয়ান অরিনের দিকে তাকালো।মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কথাটা ও সিরিয়াসলি নেয়নি। হুট অরিনকে কাছে টেনে ওর অধরযুগল দখল করে নিলো!ব্যাপারটা এতই জলদি ঘটলো অরিন কিছুই বুঝল না।যতক্ষণে বুঝলো ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে।অরিন কি বলবে বুঝছে না!

আদ্রিয়ান: আশা করবো আর কোনো প্রশ্ন নেই!

অরিন উঠে চলে গেলো।আদ্রিয়ান ডাকতে গিয়েও ডাকলো না।চুল আঁকড়ে ধরলো।ওর মাথা কাজ করছে না।কি করতে কি করছে!
অরিন ঘরে গিয়ে দরজা আটকাতেই দেখলো রিখিয়া।

রিখি: ওহ অরিন এসে গেছো?আজকে তোমার সাথেই থাকবো আমি!

অরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,”কিছু হয়েছে?”

অরিন হাসার চেষ্টা করে বললো,” তেমন কিছু না আপু!”
রিখি: আসো।

অরিন গেলো ..

রিখি: জানো,তোমাকে না আমার খুব ভালো লাগে।

অরিন হাসলো!

রিখি: কাউকে ভালোবেসোছো কখনো?

অরিন: হটাৎ এই প্রশ্ন?

রিখি মুচকি হাসলো..

রিখি: এমনি!আদ্রিয়ান মানুষ হিসেবে কেমন অরিন?

অরিন: ছোট থেকে তো একে অপরকে চিনো আপু!তাহলে?

রিখি: আমি চিনি ফ্রেন্ড হিসেবে।কয়েকদিন পর যে আমার লাইফ পার্টনার হবে তার ব্যাপারে কিছু তো জানা উচিত!

অরিন হাসলো।

অরিন: ইংরেজ বাবু মানুষটা বড্ড ভালো। দায়িত্ববান,কেয়ারিং আর স্বচ্ছ প্রকৃতির মানুষ!কখনো কষ্ট পাবে না তুমি।

রিখি আনমনে বললো,”ভালোবাসা বেদনার অরিন!একজন মানুষের সাথে থাকবো তার মনে কি চলে কেও তা জানতে চায় না।ছোট থেকেই সব ঠিক রাখায় আমরা দুইজনই বেশ সংযত থাকতাম কিন্তু আমরা ফ্রেন্ড হিসেবে বেস্ট ছিলাম।সাগর, জয়,সৌরভ ,রোজ ,অনিক, ও, আমি সবাই একটা টিম।কখন কিভাবে যে ভালোবেসেছি জানি না।তাকে চাই আমি!এই চাওয়া টা কি আদো পূর্ণ হবে?”

অরিন: তার সাথেই তো বিয়ে তোমার আপু!চিন্তা করছো কেনো?

রিখি আমতা আমতা করে বলল,”ইয়ে মানে,আচ্ছা ঘুমাও।টায়ার্ড আমি!”
বলেই শুয়ে পড়লো।অরিন ভাবলো লজ্জা পেয়েছে হয়তো!

অরিন রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।এই নিষ্পাপ মিষ্টি মানুষটাকে কষ্ট দিতে পারবে না ।মুহূর্তেই এক সিদ্ধান্ত নিলো।বিথী হৃদি কাল গ্রামে যাবে।এখানে তেমন কিছু আনার সুযোগ পায়নি তাই।অরিন ওদের বললো এই বাড়ি হয়ে যেতে।

সকালের হট্টগোলে আদ্রিয়ান নিচে নেমে এলো।সাথে রিখিয়াও!

মামী: দেখ না তোরা! ও এখন যেতে যাচ্ছে গ্রামে!

অরিন: মামী! যাই না,ছুটি পেয়েছি।বাবা মা তো আবার আসবে বিয়েতে,তখন ওদের সাথে আসবো!প্লিজ!

মামী: না না,ওরা আসলেই দেখা করিস।

অরিন এবার ছল ছল করে তাকালো,

অরিন: খুব মনে পড়ছে সবাইকে,প্লিজ!

এবার মামীর মায়া হলো।আসলেই!মেয়েটা তো কখনো মা বাবা ছাড়া এত লম্বা সময় থাকে নী!

মামী: আচ্ছা,কিন্তু জলদি আসবি!

অরিন মামীকে জড়িয়ে ধরলো।

আদ্রিয়ান উপরে চলে গেলো।

অরিন: ব্যাগ রেডী,আমি নিয়ে আসি তোরা দাড়া!

ব্যাগ নিয়ে বের হবে তখনই কেউ ওর গাল চেপে ধরলো,

আদ্রিয়ান: সমস্যা কি তোমার?কেন যাচ্ছো?

অরিন ওর থেকে ছাড়িয়ে বললো,
অরিন: আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই!

আদ্রিয়ান ওকে দেয়ালে চেপে ধরলো!

আদ্রিয়ান: তুমি কোথাও যাবে না অরিন!

অরিন: আপনার প্রবলেম কোথায়?

আদ্রিয়ান: কেনো বুঝছো না, আই লাভ ইউ,ভালোবাসি তোমায়!

অরিন শান্ত হয়ে গেল।ভালোলাগার শিহরন বয়ে গেলো।চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ান এর কথাকে অনুভব করলো।কিন্তু রিখির মুখ ভেসে উঠতে সজোরে ধাক্কা দিলো তাকে!

অরিন: আপনার বিয়ে এক সপ্তাহ পর!

আদ্রিয়ান: মানি না আমি!

অরিন: আপনি পাগল?এত বছরের একটা সম্পর্ক আপনার এই ছোট্ট ভুলে নষ্ট হবে মিস্টার আদ্রিয়ান!

আদ্রিয়ান: মিস্টার আদ্রিয়ান?

অরিন এর দম বন্ধ লাগছে।তবুও নিজেকে শক্ত করলো।আদ্রিয়ান কে আরো কড়া কথা শুনাতে হবে!

অরিন: হুমম!দেখুন আদ্রিয়ান,যদি এমন হতো বিয়েটা কয়েকদিনের ঠিক তাও হয়তো আপনার কথায় ভেবে দেখতাম।কিন্তু এটা আরো আগের।যেটা আপনিও জানতেন শুরু থেকে..আর আপনার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে..রিখি আপুর কথা ভাবুন!আপনার এক সিদ্ধান্তে তার উপর কত লোক আঙ্গুল তুলবে।ফ্যামিলির রেপুটেশন কোথায় যাবে?এটা একটা মানুষ না,অনেক মানুষের প্রশ্ন।সবাই জড়িত মিস্টার আদ্রিয়ান!

আদ্রিয়ান: কে মিস্টার আদ্রিয়ান?আমি ইংরেজ বাবু!তোমার ইংরেজ বাবু!

অরিন: সরি!ভুল…আপনি আমার না রিখিয়া আপুর।আপনার মাকে দেখেছেন কতটা খুশি! রিখিয়া আপুর মা কে দেখেছেন? এভাবে ওদের মন ভাঙবেন না।আমি থাকলে আপনি আরো উতলা হবেন।তাই আমি ই দূরে যাচ্ছি!

আদ্রিয়ান ছেড়ে দিল ওকে।

অরিন বেরিয়ে যাওয়ার আগে,

আদ্রিয়ান: তো ভুলে যেতে বলছো?

অরিন বুক ভার হয়ে এলো।কষ্ট হচ্ছে ওর।তাও বহু কষ্টে বললো,”হুমম!”

আদ্রিয়ান মলিন হাসলো।

আদ্রিয়ান: বেশ ভালো থেকো!

অরিন: আপনিও!নতুন জীবনের শুভ কামনা!!

আর এক মুহূর্ত ও না দাড়িয়ে চলে গেলো ও।আদ্রিয়ান ওখানেই মাথা চেপে বসলো।

মামী: এসব কি ছিল আদ্রিয়ান?

চমকে তাকালো ও।মা কি সব শুনে ফেললো?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে