#অবুঝ_দিনের_গল্প
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট_৯
হৃদি: কালকের ছেলেগুলো আজকে হাসপাতালে!
কথাটা শুনে অরিন চমকে উঠলো।
অরিন: কি?
বিথী: কে বা কারা জানি মে’রে হসপিটাল এর সামনে ফেলে গেছে।
অরিন: একদম ঠিক হয়েছে!
হৃদি: কিরে অগ্নি! কি ভাবছিস?
অগ্নি: ভাবছি!রাগী মেয়েদের দিয়ে বেশী বেশী কাপড় ধোয়ানো উচিৎ!
বিথী: কেন?
অগ্নি: কারণ তাদের রাগ যত বাড়বে কাপড় চোপড় তত বেশী আচড়াবে এতে তারাতারি কাপড় পরিষ্কার হবে!
বলেই বত্রিশ দাত বের করে হাসলো।
হৃদি ওর মাথায় চা’টি দিয়ে বললো ,”তুই আর তোর ভাবনা।”
অরিন আর বিথী হাসলো।
অরিন: চল ক্লাসে..
হৃদি: আমি আজকে পড়ি নাই রে!
অগ্নি: আমিও!
অরিন: ক্লাস মিস গেলে আরো কিছু পারবি না,চল..
দুইজনেই গেলো।সবাই গিয়ে দেখলো স্যার অলরেডি এসে গেছে।
বিথী: স্যার আসবো?
স্যার হাতে থাকা ঘড়ি দেখে বললেন,” আমি এসেছি পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে!”
অগ্নি: কিন্তু স্যার ক্লাস শুরুর আরো দশ মিনিট বাকি!
হৃদি: জি স্যার!
স্যার: তোমরা আমাকে টাইমিং শিখাও?
ধমকে বললো
অরিন: সরি স্যার আর হবে না..
স্যার: ওকে কাম ইন..
অগ্নি: বুইড়া মেবি বউ এর সাথে ঝগড়া করে আসছে..
সিটে বসতে বসতে অগ্নি বললো,তাই শুনে হৃদি ফিক করে হেসে দিল।
স্যার: হেই ইউ স্ট্যান্ড আপ!
হৃদি দাড়ালো।
স্যার: হাসছিলে কেনো?
পাশ থেকে অরিন ফিস ফিস করে বললো,”আপনার ভুঁড়ি দেখে!”
হৃদি তা শুনে স্যার এর পেটে তাকালো। ভুঁড়ি দেখে আবারও হেসে দিল।
স্যার: বেয়া’দব! তাও হাসছে!এই পড়া পারো?
হৃদি: ইয়ে মানে স্যার!
স্যার: বল তো, আইনস্টাইন কীভাবে আলোর বেগ পরিমাপ করলেন?
অগ্নি: এমন প্রশ্ন বইয়ে আছে স্যার?
স্যার: ফা’জিল,বই খুলে দেখেছিস?এই তুই বল জলদি!
হৃদি একটু ভাবলো,
হৃদি : স্যার, আমার যা মনে হয় আলো যেহেতু অনেক বড় জিনিস, মানে বিশাল জিনিস, সেহেতু আইনস্টাইন প্রথমে একটা দুইশ’ গজ ফিতা নিয়েছিলেন, তারপর …
মাঝখান থেকে অগ্নি ফোড়ন কেঁটে বললো,
অগ্নি : হয়নি স্যার। হৃদি কী ধরনের গা’ধা চিন্তা করেন! আরে আলো কি জামা-কাপড় নাকি যে ফিতা দিয়ে মাপবো!
স্যার: বাহ!তুই তাহলে ভালো স্টুডেন্ট।এবার তুই বল!শুধুই ভাবলাম তুই অকর্মা।এবার বল!
অগ্নি একটু ভাব নিয়ে বললো,
অগ্নি: জি স্যার! আসলে আলো হইল আলুর মতো ভারী। তাছাড়া তখন গজফিতা আবিষ্কারই হয়নি। তাই তখন মাপামাপির কাজে দাঁড়িপাল্লা ছাড়া উপায় ছিল না।
স্যার হতভম্ব..
স্যার: হোয়াট?
অগ্নি: জি স্যার?দাঁড়িপাল্লা ছাড়া উপায় ছিল কি আর কোনো? বলেন স্যার, আপনিই বলেন?
স্যার একটু থামলেন।
তারপর বলতে লাগলেন..
স্যার: আহা! তোদের কী প্রতিভা! তোরা তো একসময় আইনস্টাইনকেও ছাড়িয়ে যাবি। বাহ্!
ক্লাসের সবাই মুখ চেপে হাসলো..
অগ্নি আরো ভাব নিয়ে বললো ,
অগ্নি: জী স্যার!আমরাই ভবিষ্যৎ!
স্যার: তোরা ঢেঁড়স!বের হয় দুইটা আমার ক্লাস থেকে!
হৃদি: কিন্তু স্যার!
স্যার: জলদি..
হৃদি আর অগ্নি বাইরে এসে দাড়ালো।
অরিন: বেচারারা!
স্যার: খুব আফসোস হচ্ছে বুঝি?
অরিন ভরকে গেল!আনমনে জোরেই বলে ফেলেছে!
অরিন মেকি হেসে বললো ,
অরিন: ইয়ে মানে স্যার ,বন্ধু তো..একটু আফসোস করবো না?
স্যার: ওহ আচ্ছা বন্ধু?তাইলে মামনি যাও কষ্ট টাও ভাগ করে নেও!
অরিন চোখ বড় বড় করে তাকালো।
অরিন: আমি কি করলাম?
স্যার: আরে বন্ধু তো, যাও!
অরিন: স্যার এটা ঠিক না!
স্যার: গো!
অরিন মুখ ফুলিয়ে উঠে দাড়ালো।বাইরে বের হয়ে গেলো!আবার ফিরে আসলো।
স্যার : কি হলো?
অরিন: একটা কথা বলবো স্যার?
স্যার: বলো!
অরিন: কালকে এস চ্যানেল এ একটা এডি দেখেছি ভুঁড়ি কমানোর।ওই ওষুধ টা কিনে খাবেন।দেখবেন আপনার ভুঁড়ি একদম গায়েব!
স্যার হতভম্ব। নিঃশ্বাস আটকে পেট লুকানোর চেষ্টা করলো.
অরিন: এতে কোনো লাভ হবে না স্যার!
স্যার ধমকে বললো,”গেট আউট!”.
অরিন এক দৌড় দিলো!বিথী হাসফাঁস করছে..স্যার নিঃশ্বাস নিয়ে বিথীর দিকে তাকালো..
স্যার: তুমিও কি যেতে চাও?
বিথী বত্রিশ পাটি দাঁত কেলালো।
স্যার: আউট!
বিথী অপেক্ষা না করে উঠে গেলো।
স্যার: এক একটা অকর্মা!
বিথী: স্যার..
স্যার এবার অসহায়ভাবে তাকালো..
বিথী: ভুঁড়ির সাথে টাক মাথার সমস্যাও দূর করে ঐটা!
বলেই দৌড়..
স্যার কপাল এ হাত রেখে বলল,”আজকে কার মুখ দেখে উঠছিলাম!খোদা!”
হৃদি আর অগ্নি মাঠে এসেছে।
হৃদি: বুইড়া ব্যাটা,বউ এর সাথে ঝগড়া করে আমাদের সাথে লাগে!
অগ্নি: একছের!
হৃদি: কি গরম!গাছের নিচেও বাতাস নেই!
অগ্নি: আচ্ছা?তোর গরম লাগলে তুই কী করিস?
হৃদি : কী আবার করব! এসির পাশে গিয়ে বসে পড়ি।
অগ্নি : তাতেও যদি তোর গরম না কমে?
হৃদি : তখন এসি অন করি।
অগ্নি: ধুর ফাজিল মেয়ে!
অরিন: তোরা আর তোদের কথা!
বলেই দুম করে বসে পড়লো।
অগ্নি: তুই এনে কেন?
অরিন: আর বলিস না,ওই বুইড়া আমাকেও বের করে দিছে!
হৃদি: ওয়াও!
অরিন: ওয়া ওয়া করিস না!
হৃদি: আচ্ছা!একটা প্রশ্নের উত্তর দে!
অরিন: বল!
হৃদি: ধর, একটা দ্রুতগামী ট্রেন আসছে। হঠাৎ দেখলি লাইন ভাঙা।তখন কি করবি?
অরিন: ট্রেন থামাতে লাল নিশান ওড়াব।
হৃদি: যদি রাত হয়?
অরিন: লাল আলো দেখাব।
হৃদি: লাল আলো যদি না থাকে?
অরিন: তা হলে আর কি আমার বোনকে ডাকব।
অগ্নি: বোনকে! কেন?
অরিন হেসে বললো,” ওর অনেক দিনের শখ একটা ট্রেন অ্যা’ক্সিডেন্ট দেখবে!”
বিথী ওর মাথায় থা’প্পড় দিলো।
বিথী: ভালো আর হলি না তোরা!
তিনজন একসাথে,”তোকেও বের করে দিছে?”
বিথী উপর নিচ মাথা নাড়লো!
চারজনই ফিক করে হেসে দিল।
আদ্রিয়ান: অরিন!
আড্ডায় আদ্রিয়ান কে দেখে তিনজনই ভরকে গেল!অগ্নি আদ্রিয়ানকে চিনে না!অগ্নি অরিন এর কানে কানে ফিস ফিস করে বললো ,”এটা কে রে?”
অরিন: ইংরেজ বাবু!
অগ্নি: কিহহহ?
অরিন: কিছু বলবেন?
আদ্রিয়ান: তোমার ক্লাস চলছে!আর তুমি এখানে কেনো?
অরিন আমতা আমতা করে বলল,”আসলে..”
আদ্রিয়ান: বাইরে আসো!
বলেই গেটের দিকে গেলো।
বিথী: ভাইয়া কি খেপে আছে?
অরিন: কে জানে?আমি যাই!
অগ্নি: বাই!
অরিন: আল্লাহ্ হাফেজ!
বলেই অরিন চলে আসলো।
অরিন বাইরে এসে দেখলো আদ্রিয়ান গাড়িতে বসে আছে!
অরিন: আমি কি ক্লাস করবো না?
আদ্রিয়ান: উঠো!
অরিন: কিন্তু..
আদ্রিয়ান: উঠো!!
বেশ জোরেই বললো..
অরিন উঠলো।আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিল।
আদ্রিয়ান: ছেলেটা কে?
অরিন: কোন ছেলে?
আদ্রিয়ান: যার সাথে কথা বলছিলে!
অরিন এর মনে হলো কথা টা খোটা দিয়ে বললো।
অরিন: আমার নিউ ফ্রেন্ড!ওর নাম অগ্নি!
আদ্রিয়ান: ক্লাস টাইমে বাইরে কি?
অরিন নিচু স্বরে বলল,”স্যার বের করে দিছে?”
আদ্রিয়ান: কেনো?
অরিন: আরে ওই বুইড়া ,বউ এর সাথে লেগে আমাদের চারজনকে বের করে দিয়েছে।
পরে সব বললো।
আদ্রিয়ান: ছেলেদের সাথে বেশি যেনো মিশতে না দেখি!
অরিন ভ্রু কুঁচকে বললো,”অগ্নির সাথেও না?”
আদ্রিয়ান গম্ভীর হয়ে বললো,”না!”
অরিন: বাট ও তো ফ্রেন্ড!
আদ্রিয়ান: যথাসম্ভব কম মিশবে, ফ্রেন্ডশিপ ভাঙতে বলি নাই।
অরিন: আচ্ছা
কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
অরিন: একটা কথা বলবো?
আদ্রিয়ান: কি ?
অরিন: আর ইউ জেলাস?
আদ্রিয়ান ভরকে গেলো।ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে!অরিন ফিক করে হেসে দিল!
অরিন: আরে মজা করছি!
আদ্রিয়ান মাথা চুলকালো।অন্য কারোর সাথে অরিন কে দেখে মানতে পারে নাই ও! কলেজের দিকে এসেছিল অরিন কে নিয়ে যেতে।ওর মা বাবা আজ একটু আরেক আত্মীয়র বাসায় যাবে।আরিফা বাসায় একা।তাই যেতে বলেছে।
হুট করে কেও সামনে আসায় ব্রেক কষলো আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ান: আব্বে ইয়ার,এখনই তো কিছু একটা হয়ে যেতো!
সৌরভ: সরি সরি!দুপুর টাইম ,রাস্তায় গাড়ি নেই।তোর গাড়ি দেখে এক্সাইটমেন্ট এ হয়ে গেছে।আমাকে একটু ড্রপ করে দে।প্লিজ!তোরা তো বাসার দিকে যাচ্ছিস?আমাকে মোর টায় নামিয়ে দে!
আদ্রিয়ান অজ্ঞতা রাজি হলো!
সৌরভ: তা অরিন কি খবর?
অরিন: জি ভাইয়া ভালো!আপনার?
সৌরভ: ভালো..তো তোমার বোনরা কি চলে গেছে?
অরিন: হুম,বেশ কয়েকদিন হলো!
সৌরভ: তারপর নতুন কলেজ কেমন লাগলো?
অরিন: দারুন!
সৌরভ: দেখো আমি আবার ফ্রী মাইন্ডেড মানুষ,তাই ফ্রেন্ডলী কথা বলি!তুমি মাইন্ড করবে না তো?
অরিন: না না,আমারও এত ফর্মালিটি ভালো লাগে না।
সৌরভ: তাহলে তো হলোই!আচ্ছা?কলেজে ছেলেদের মধ্যে কাউকে ভালো লাগে নাই?
সৌরভ মজা করে বললেও আদ্রিয়ান এর মাথায় রাগ উঠে গেলো।
অরিন: ছেলেগুলো বেশ কিউট!
গাড়ি জোড়ে ব্রেক করলো।এতে দুইজনই ঝুঁকে পড়ল।
সৌরভ: কি হলো?
আদ্রিয়ান: তোর স্টেশন!
অরিন: স্টেশন?
আদ্রিয়ান কট মট করে তাকিয়ে বললো,”এখানে ওকে নামতে হবে?”
সৌরভ: ওহ,আচ্ছা অরিন!বাই! নাইস টু মিট ইউ!আবার দেখা হবে!!
বলে হ্যান্ডশেক করতে চাইলো। অরিনও করতে নিবে তার আগেই আদ্রিয়ান হাত মিলালো!
আদ্রিয়ান: হ্যাঁ হ্যাঁ,আবার দেখা হবে!নাম জলদি!
সৌরভ আর অরিন একে অপরের দিকে তাকালো।সৌরভ নেমে গেলো।আর আদ্রিয়ান সাথে সাথে গাড়ি টান দিল।অরিন ভ্রু কুঁচকে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে!
আদ্রিয়ান: কি?
অরিন নিশ্চুপ!
আদ্রিয়ান: এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
অরিন তাও কিছু বললো না..
আদ্রিয়ান গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিল।
অরিন অন্যদিকে ফিরে মুচকি হাসলো…
আরিফা: এতক্ষণ লাগে আসতে?
আদ্রিয়ান: তোর মত আজাইরা নাকি।কাজ থাকে!
আরিফা: খোটা দিস?
আদ্রিয়ান: বক বক কম কর!সর!
আরিফা: দেখলে আপু কি ফা’জিল?
অরিন হাসলো।তনয়া,সোহা আর লামিয়ার সাথেও এমন করতো।মিস করে সবাইকে।
ফ্রেশ হয়ে আদ্রিয়ান নিচে নামলো।অরিন আগেই ফ্রেশ হয়ে এসেছে।অরিন গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।আরিফা টিটকারী মে’রে বললো ,”এমনে দেখো না,প্রেমে পড়লে বিপদ”
আরিফার কথা বুঝলো না।বিপদ কেনো?
আদ্রিয়ান: গ্রীষ্মের ছুটি কবে তোর?
আরিফা: চলছে..
অরিন: আমারও সামনে পড়বে!
আদ্রিয়ান বির বির করে বললো,”যত জলদি হয়!”
অরিন: কিছু বললেন?
আদ্রিয়ান: না!
তখন ওর ফোন বেজে উঠলো!
রিখি: শপিং করতে বলেছে বাবা!
আদ্রিয়ান: তো কর!
রিখি: তোকে নিতে বলছে!আর বেশি দিন নেই তো!
আদ্রিয়ান আর খেতে পারলো না।অরিনের দিকে তাকালো। ও মনের সুখে আরিফার সাথে গল্প করতে করতে খাচ্ছে!
আদ্রিয়ান: পড়ে কথা হবে রাখছি!
রেখে দিল।
অরিন: কি হয়েছে?
আদ্রিয়ান: কিছু না।
উঠে চলে গেলো।বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান।
“জানি না কি করছি।কেন করছি!গোলক ধাঁধায় বেশ ভালো ভাবে ফেঁসে গেছি আমি।কেন এলে অরিন?আমার জীবনে?কেন আলাপ হলো তোমার সাথে?ভুল হয়ে গেছে!অনেক বড় ভুল!নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে পা বাড়িয়েছি আমি।নিষিদ্ধ!”
#চলবে…