অবুঝ দিনের গল্প পর্ব-০৬

0
1296

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_০৬

অরিন: ধন্যবাদ ইংরেজ বাবু! উফ! ভাবতেই ভালো লাগছে আমিও ট্রেনে উঠেছি।

ট্রেন ছেড়েছে আরো পাঁচ মিনিট আগে।আরিফা ,তনয়া আর সোহা জানালার ধারে বসে আছে।

আদ্রিয়ান: কোন কলেজে এডমিশন টেস্ট দিতে চাও?

অরিন: বিথী,হৃদিদের কলেজ!

আদ্রিয়ান: উম..তাহলে দেরি নেই।কয়েকদিন এর মধ্যেই এক্সাম। তাই বাসায় গিয়ে আজ রেস্ট নিবে কাল পড়বে।

আরিফা: তাহলে অরিন আপু কি ঘুরবে না আমাদের সাথে?

আদ্রিয়ান: ও এডমিশন টেস্ট দেওয়ার পর না হয় ঘুরবো আমরা।

সবাই সম্মতি জানালো কারণ অরিন ছাড়া ঘুরে কেও মজা পাবে না।

ওরা কোনো কেবিন নেই নি।ট্রেন কিছুক্ষণের জন্য আরেক স্টেশন এ থামলো।আর কয়েকটি স্টেশন ,এরপরই ওদের স্টেশন। পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হবে।আদ্রিয়ান নামলো কিছু খাবার আর পানি আনতে।পাশের সিট এতক্ষণ খালি ছিল।কিন্তু এই স্টেশনে লোক উঠেছে।কয়েকজন ছেলে আর কয়েকজন মেয়ে , সিট ঘিরে জড়ো হয়ে বসেছে।অরিনের বেশ লাগলো ব্যাপারটা। সবাই মিলে হাসি ঠাট্টা, গান গাচ্ছে।

তনয়া: এই আপু!

অরিন: হুমম?

তনয়া: ওদিকে তাকিও না।দেখো ওই কর্নারের ছেলে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন করে।

অরিন খেয়াল করলো ব্যাপারটা।কিন্তু বুঝলো না ঠিক কাকে দেখছে।কারণ এক সীটে ওরা তিন বোন বসে আছে।অরিন আর তাকালো না।জানালার দিকে অরিন আর আদ্রিয়ান বসেছে।তনয়া,সোহা আর আরিফা ওদের পাশে।বেশ অনেক্ষণ পর জানালায় দেখলো আদ্রিয়ান উঠছে।এদিকে আসতেই এক ছেলে বলে উঠলো,” আরে আদ্রিয়ান!”

আদ্রিয়ান চমকে গেলো ,তারপর ওদের দেখে হাসলো..

আদ্রিয়ান: আরে অনিক!তোরা এখানে?

অনিক: এই কালকে একটু ঘুরতে আসলাম এখানটায় সবাই আর আজকে ব্যাক করছি।তোর কি খবর?গ্রামে গিয়ে তো আর ফোন করলি না!

আদ্রিয়ান: ইয়ার,ওখানে নেটের যা অবস্থা তাতে ঠিকমত অনলাইন ই হতে পারি নি।

পাশে থেকে এক মেয়ে বলে উঠলো,”তোর সিট কোথায়?এখানে বস আমাদের সাথে।অনেকদিন পর ক্যাম্পাস আড্ডার ফিলিং পাবো।”

আদ্রিয়ান: আরে রোজ না?

অনিক: কেন ওকে চিনিস না?

আদ্রিয়ান: এরকম আটা ময়দা মাখলে কে চিনবে বল?

সবাই হেসে উঠলো।

রোজ: তুই ভালো যে কবে হবি।আর এই আরেক সাধু।মিস্টার সাগর।দেখ এইখানে বসেও অফিসের কাজ করছে।

সাগর এক পলক তাকালো।আবার কাজে মন দিল।

আদ্রিয়ান হাতে থাকা খাবার আরিফার হাতে দিলো।

“এটা তোর বোন না?” যেই ছেলে তাকিয়ে ছিল সে বলে উঠলো।

আদ্রিয়ান: হুমম ,আমার বোন!

রিখিয়া: এরা কারা?

আদ্রিয়ান: ও অরিন,তনয়া আর সোহা।অরিন আর তনয়া আমার ফুফাতো বোন আর সোহা ওদের কাকার মেয়ে।

আদ্রিয়ান একে একে সবাইকে ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।অরিনের বেশ লাগছে।যাত্রায় এরকম হট্টগোল না হলে মজা নেই।
যে ছেলেটি তাকিয়ে ছিল তার নাম সৌরভ।
ওরা সবাই আদ্রিয়ান এর সাথেই কাজ করে।ওদের কয়েকদিনের ছুটি ছিলো।সবার সাথে আড্ডা মজা এভাবেই চলছে।

অনিক: আদ্রিয়ান,একটা গান গা।তোর গান ছাড়া আড্ডা অসম্পূর্ণ।

আদ্রিয়ান এতক্ষণ অরিন কে দেখছিল।সবার সাথে আড্ডা দিতে কত আনন্দ পাচ্ছে তা ওর চোখ দেখেই বুঝা যায়।অনিকের কথায় ঘোর থেকে বের হলো।কিছু বললো না।কারণ জানে মানা করলেও এরা শুনবে না।তাই অনিকের থেকে গিটার হাতে নিলো।কি ভেবে চোখে সানগ্লাস পড়ে নিলো।ওর কাণ্ডে সবাই অবাক হলেও পাত্তা দেয় নী।
আদ্রিয়ান: ওনলি এক কলি..
ও শুরু করলো,
“অবুঝ মনে ঠিকানা,তুমি কি হবে?
মুগ্ধ আমার প্রেমে ,জড়িয়ে রবে?
মুখে বলো না, কে তোমার অনুভবে?
ও প্রিয়!”

অরিনের মনে হলো আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়েই গান গাচ্ছিলো।কেমন অস্থির অস্থির লাগছে ওর।জানালায় হেলান দিয়ে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো।এদিকে সবাই আরেক কলি গাইতে বলছে ওকে।অরিন হুট করেই মিলালো পরের কলি।
“আমার চোখের মাঝে ,তুমি যে কালো!
স্বপ্ন ভুবন জুড়ে,তোমারই আলো।
আমি তোমাকে বেসেছি কত ভালো !
ও প্রিয়!”
দুইজন মিলালো…
“তুমি আমার, তুমি আমার
এ সুখে হবে যে মরণ
বেঁচে আছি এই পৃথিবীতে
একটাই তুমি যে কারণ
তুমি আমার, তুমি আমার
এ সুখে হবে যে মরণ
বেঁচে আছি এই পৃথিবীতে
একটাই তুমি যে কারণ..”
ওদের গান শুনে সবাই মুগ্ধ।তনয়া আর সোহা অবাক ।এত বছরেও বোনকে গান গাইতে শুনে নাই।অরিনের এবার লজ্জা লাগছে।ওর কি হয়েছিল ও নিজেও জানে না।এরকম পাগলামি করলো ভাবতেই উঠে গেলো।

আদ্রিয়ান যেতে চেয়েছিল কিন্তু ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।
সবাই ভাবলো হয়তো বসে থেকে বোর হচ্ছে তাই গেছে।তনয়া ,সোহা আর আরিফাও আড্ডায় বেশ মিশে গেছে।ফোনের বাহানা দিয়ে আদ্রিয়ান উঠে অরিনের কাছে গেলো।

আদ্রিয়ান: কি হয়েছে?

অরিন কাঁদো ফেস করে বললো,”কে জানে?হুট করেই এই গানের পরের কলি গাইতে ইচ্ছে হলো,না জানি সবাই কি ভেবেছে!আর কাকের গলা শুনে নিশ্চই হাসছে।”

আদ্রিয়ান হাসলো।

আদ্রিয়ান: কেও কিছু ভাবছে না আর তুমি দারুন গাও।আগে কেন বলো নি গান গাইতে পারো?

অরিন: আমি কোনোদিন গান গেয়েছি নাকি..গান কেবল শুনতাম।গুন গুন করতাম।কিন্তু গাইতাম না।

আদ্রিয়ান: আচ্ছা চলো!এখানে বেশ বাতাস।ঠান্ডা লাগতে পারে।আর বিপদ আপদের কথা বলা যায় না।

অরিন: একটা কথা বলবো?

আদ্রিয়ান: হুমম?

অরিন: আপনি সানগ্লাস কেন পড়লেন গান গাওয়ার আগে?

আদ্রিয়ান আমতা আমতা করলো।কি বলবে ও?ওর কেন জানি ইচ্ছে হলো অরিন কে দেখে গান গাওয়ার।কিন্তু ব্যাপারটা কেও ভালো ভাবে নিবে না।তাই ওই পদক্ষেপ।

আদ্রিয়ান: আসলে তাহলে করো দিকে অত খেয়াল হবে না তাই।

অরিন: ওহ আচ্ছা।

অরিনরা পৌঁছে গেলো।সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়ীতে উঠলো।বাসায় পৌঁছাতেই সন্ধ্যা নেমে এলো।মামা মামিরা আরো এক ঘন্টা আগে পৌঁছেছে।
সবাই খেয়ে দেয়ে রেস্ট নিতে চলে গেলো।অরিন,সোহা গেস্ট রুমে আর তনয়া ,আরিফা আরিফার রুমে ঘুমাচ্ছে।

সোহা: আপু!

অরিন: হুম?

সোহা: আদ্রিয়ান ভাইয়া কি ভালো তাই না?আমরা তো ভেবেছিলাম ভাব থাকবে অনেক।আর দেখো কি সুন্দর মিশে গেছে।

অরিন: প্রত্যেক মানুষই মিশুক।কিন্তু অনেকেই সেটা প্রকাশ করতে চায় না আর অনেকে সেটাকে ভাবে,”লোক খারাপ বলবে।” উনিও তেমন!

সোহা: তোমার সাথে উনার বেশ জমে।

অরিন: হয়েছে ঘুমা!

সোহা আর অরিন ঘুমিয়ে গেলো।সকাল সাতটা বাজে।জার্নির কারণে আজ অরিন অভ্যাস এর থেকে বেশী ঘুমিয়েছে।এখনও কেউ উঠেনি।অরিন উঠে সারা বাড়ি ঘুরলো।এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে ছাদে উঠলো।কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নেমে গেলো।ল্যান্ডলাইন থেকে বাড়ির নাম্বারে কল করলো।কতক্ষন মায়ের সাথে কথা হয়নি।
দুবার রিং হতেই ধরলো ।

লামিয়া: কেমন আছিস?

অরিন: বুঝলে কিভাবে আমি?

লামিয়া: সকাল সকাল ও বাড়ি থেকে তুই ছাড়া কেও কল দিবে না।

অরিন: আচ্ছা ,মা কোথায়?

লামিয়া: উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছে।একটা খবর ছিল।

অরিন: কিসের?

লামিয়া: তেরা আশিক রামু তোর জন্য কালকে হাত পা ছড়িয়ে কেঁদেছে!

অরিন: ওর কথা বাদ দেও।কাকী,কাকা কেমন আছে?

লামিয়া: ভালো।

আরো কিছুক্ষন মায়ের সাথে কথা বলে রেখে দিল।

আটটা বাজে।অরিন রান্না ঘরে উকি দিলো। বুয়া কাজ করছে।

অরিন: টুকি!

বুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারপর অরিনকে দেখে সালাম দিলো। অরিনও ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

অরিন: টুকি!!

বুয়া: কিছু লাগবে ম্যাম?

অরিন: ম্যাম কেন বলো?আমি তো আপনার ছোট।নাম ধরে ডাকবে।আমার নাম অরিন!আর আপনার?

বুয়া হাসলো!

বুয়া: আমার নাম রেশমি।রেশমি খালা বলে ডাকে আদ্রিয়ান স্যার!

অরিন: রেশমি চুড়ি ডাকি তোমায়?

রেশমি হাসলো।

রেশমি: তোমার যেটা খুশি।

তারপর দুইজন খোশ গল্প করতে করতে মিলে মিশে কাজ করে শেষ করলো।সবাই উঠে গেছে ইতো মধ্যে!খাবার শেষে যে যার রুমে গেলো।

অরিন: ও ইংরেজ বাবু!

আদ্রিয়ান: তোমাকে না বলছি ইংরেজ বাবু ডাকবে না।

অরিন: আমি তো এটাই ডাকবো।

আদ্রিয়ান: বলো!

অরিন: বাইরে নিয়ে যাবেন?

আদ্রিয়ান: পড়া নেই?

অরিন: রাতে পড়বো প্লিজ!!

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ ভেবে বলল ওকে!!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে