অবিবাহিত বউ পর্ব-১৫+১৬

0
727

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৫
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তোহা চট করে চোখ খুলে ফেলল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল নাহিদের নাম্বার থেকে কল আসছে। তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঠাস করে কলটা কেটে দিল। তবে ঘুমালো না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে শুয়ে রইল। মন বলছে নাহিদ আবারো কল দিবে। ঠিক তাই হলো। মিনিট দুয়েক পর মোবাইলটা আবারো বেজে উঠলো। তোহা ফোনটা কানে দিল। তখনই ওপাশ থেকে ভারী স্ব’রে নাহিদ বলে উঠল,
“আমার প্রচ’ন্ড ঘুম দরকার বউ।

তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। এ কেমন কথা? ঘুমে ধরলে ঘুমাবে তা না কল দিয়ে ফাজলামি শুরু করছে। তারপর আবারো বউ বউ করছে। তোহা বেশ অস’ন্তোষ্ট হয়ে বলল,
“আপনি আমাকে এতোবার বউ বলেন কেন? আপনি কি জানেন? কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে এতো বার বউ বলে না, যতবার আপনি আমাকে বউ বলেন। আপনি কি আমাকে বিয়ে করেছেন? কেন বউ ডাকেন আমায়?

ওপাশ থেকে নাহিদ কেবল মুচকি হাসল। মৃদু স্বরে বলল,
“আমাদের প্রথম দেখা হওয়া মাত্রই তুমি আমায় বর বলেছিলে। আমাদের বিয়ে হয়নি তাহলে কেন সেদিন আমাকে বর বলেছিলে?

তোহা আমতা – আমতা করে বলল,
“আমি তো শুধু একদিনই বলেছিলাম। তাও শুধু শুধু বলিনি, কোনো কারণ ছিল বিধায় বলেছিলাম। কিন্তু আপনি তো প্রতিনিয়ত অবলীলায় আমাকে বউ বলে যাচ্ছেন। এই ডাকটা আমার পছন্দ না।

নাহিদ আবারো মুচকি হেসে বলল,
“আমার এই ডাকটা যে ভীষণ পছন্দ। তোমার নামটা আমার মাথায় ছিল না। শুধু মাথায় ছিল বউ। বিয়ে না করলেও তুমি আমার অবিবাহিত বউ।

তোহা নাক-মুখ কুঁচকে বলল,
“কিসব অ’দ্ভুত কথা বলছেন? বউ তো বউই হয়। অবিবাহিত বউ আবার কি?

নাহিদ অকপটে বলল,
“এই যে আমি তোমায় বউ বলছি। কিন্তু আমাদের তো বিয়ে হয়নি। বিয়ে না হলেও আমার মনে-মস্তিষ্কে তুমি বউ বলে অভিহিত। যদিও আমার মনের থেকে ম’স্তিষ্ক আগে বুঝেছে যে তুমি আমার বউ । তবে এখন আমার মনও বুঝে গেছে।

তোহা মুখ ভেং’চি দিল। তবে সেটা নাহিদ বুঝতে পারল না। তোহা কিছুটা রাগী গলায় বলল,
“আপনি এই রাত-বিরাতে কল দিয়ে আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘাটাবেন না তো। আমি ঘুমাবো।

তোহা কল কেটে দিতে উদ্যত হলো। তবে নাহিদ কল কাটতে দিল না। ব্যতিব্যস্ত ক’ন্ঠে বলল,
“এই তোহা, শোনো।

তোহা কল কাটল না। ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কী?

“শোনো না।

“শুনছি তো বলুন।

“ভালোবাসি।

তোহার সর্বা’ঙ্গে শিহরণ বয়ে গেল। কিছুটা কেঁপে উঠল। অদ্ভুত এক ভালোলাগার অনুভূতি মনে বিরাজ করল। তোহা কলটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা বুকে চেপে ধরল।
_________________

ভার্সিটিতে যাওয়া মাত্রই এদিক-ওদিক তাকিয়ে নাহিদকে খুঁজছে। তবে এর বিশেষ কোনো কারণ নেই। শুধুমাত্র নাহিদকে দেখার জন্যই এদিক-ওদিক তাকানো। তোহার হঠাৎ মনে হলো, আ’শ্চর্য তো! আমি কেন উনাকে খুঁজছি? উনাকে দেখার কোনো কারণ নেই। তবে?

তোহার প্রশ্নের উত্তর মিলল না। তবে অ’স্থির চোখ জোড়া এখনো এদিক-ওদিক খুঁজে বেরাচ্ছে নাহিদকে। তোহাকে এমন তাকাতে দেখে অরিন ঠাট্টার ছলে বলল,
“আমার দুলাভাইকে খুঁজছিস বুঝি?

অরিনের কথাটা শুনে তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। এই কথার কারণ বুঝতে পারলো না। কারণ অরিনের কোনো বড় বোন নেই। তাইতো অবাক কন্ঠে বলল,
“তোর দুলা….

কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল তোহা। এতক্ষণে অরিনের কথার অর্থ সে ধরতে পেরেছে। অরিন নাহিদকে দুলাভাই বলে অভিহিত করেছে বলে রাগী গলায় বলল,
“মশকরা করছিস? একটা থাপ্পড় দিলে সব মশকরা বেরিয়ে যাবে।

অরিন মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“সত্যি কথা বললে এমনই হয়। তুই যে নাহিদ ভাইয়াকে খুঁজছিস তোর চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

তোহা অরিনের কথাটায় কিছুতেই সায় দিল না। নিজের মনের ভাবটা লুকাতে বলল,
“আরে আমি কেন উনাকে খুঁজতে যাব? এমনি এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলাম।

অরিন ব্য’ঙ্গ করে বলল,
“হুহ। বুঝি বুঝি। আমি সবই বুঝি।
_______________

ক্লাস শেষ হলে অরিন, তোহা ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। আ’শ্চর্যজনক ভাবে আজকে নাহিদ, রিয়া কারোরই দেখা পাওয়া গেল না। তবে ভার্সিটির গেইট পেরোতেই বাইকে করে নাহিদ এসে হাজির হলো তোহার সামনে। তোহার সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে বলল,
“তুমি আমার সাথে যাবে?

তোহার মুখে অবাকতা ফুটে উঠল। অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“যাব মানে? কোথায় যাব আমি? আপনার সাথেই বা কেন যাব?

নাহিদ দায়সারা ভাবে বলল,
“আমি বলেছি বলে যাবে। তোমাকে মেরে তো ফেলবো না। শুধু একটা জায়গায় নিয়ে যাব।

তোহা জেদ ধরে বলল,
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।

তোহার জেদ তাকে নাহিদ পাত্তাই দিল না। তোহার কথাটা শুনেনি ভাব করে অরিনকে বিনয়ী স্বরে বলল,
“তুমি আমাদের সাথে যাবে?

নাহিদের কথা শুনে তোহা অবাক হলো। ‘আমাদের সাথে’ মানে? উনি কি ধরেই নিয়েছেন আমি যাব? আমি যে না বললাম উনি শুনেন নি?

নাহিদের কথায় অরিন দ্বি’মত করে বলল,
“না ভাইয়া। আমি কোথাও যাবো না। আপনি বরং তোহাকে নিয়েই যান।

অরিনের কথায় তোহা চোখ বড়বড় করে তাকাল। অরিন যেতে বলছে? তাও এই ছেলেটার সাথে? বলবেই তো। এখন তো এই ছেলের পক্ষেই কথা বলবে। তোহার এই সব ভাবনার মাঝেই নাহিদ বলল,
“বাইকে উঠো।

তোহা মাথা নাড়ালো। নাহিদের কথাটা প্রত্যাখান করে বলল,
“উঠবো না। আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।

নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটা এতো নাছোড়’বান্দা কেন? নাহিদ তোহার হাত ধরে বাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। হাত ছেড়ে দিয়ে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিয়ে কড়া গলায় বলল,
“বাইকে উঠতে বলেছি।

নাহিদের কড়া গলার কথাটা তোহা তোয়া’ক্কা করল না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায়। নাহিদ বি’রক্ত হয়ে বলল,
“তুমি কি উঠবে নাকি কোলে করে উঠাতে হবে। তুমি চাইলে অবশ্য আমি বাইক রেখে তোমাকে কোলে করে রিকশায় বসিয়ে নিয়ে যেতে পারি। বাইকে উঠবে না আমি রিকশা ডাকব?

তোহা চোখ বড়বড় করে তাকাল। কি বলছে এসব? সত্যি সত্যি কোলে তুলে রিকশায় উঠাবে নাকি? না, না। হয়তো ভয় দেখাচ্ছে। নাহিদ ভয় দেখাচ্ছে ভেবে তোহা জোর গলায় বলল,
“আমি আপনার সাথে যাব না মানে যাব না।

নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“সোজাসাপ্টা বললেই পারো তোমার কোলে উঠার শখ হয়েছে। দেখো তুমি যদি চেঁচামেচি করো তাহলে আমি মানুষকে বলব ‘তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। আমার সাথে রাগ করেছো তাই কোলে নিয়েছি’। ভার্সিটির প্রায় সকলেই কিন্তু জানে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। তাই আমাকে কেউ কিছু বলবে না। তাহলে তোমার ইচ্ছে তাই পূর্ণ হোক।

তোহা আঁতকে উঠল। নাহিদ সত্যি সত্যি বাইক থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তোহা দ্রুত নাহিদকে বাঁধা দিয়ে বলল,
“এই না, না। আপনি নামবেন না। আমি বাইকে উঠছি।

নাহিদ হাসল। বাইক থেকে নামালো না। তোহা নাহিদের বাইকে উঠে বসল। বাইকে বসে নাহিদের কাঁধে হাত রাখল। নাহিদ মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিল।

প্রায় আধাঘণ্টার পথ পেরিয়ে একটা বাড়ির সামনে এসে বাইক দাঁড় করালো। তোহা বাইক থেকে নেমে নাহিদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। নাহিদ বাইক থেকে নেমে বলল,
“আমাদের বাসা। চলো।

নাহিদ আগে আগে গেল। তোহা নাহিদের পেছন পেছন গেল। বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই রিয়া দরজা খুলে দিল। তোহা রিয়াকে দেখে মনে মনে ভাবল,
“ও কি এখানেই থাকে নাকি?

রিয়া তোহাকে দেখে হাসি মুখে বলল,
“আরে তোহা তুমি? এসো এসো , ভেতরে এসো।

তোহা ভেতরে গেল। নাহিদ ভেতরে গিয়েই চেঁচাতে শুরু করল,
“আম্মু? কোথায় তুমি? দেখে যাও।

মিনিক খানেক পার হতেই মাঝবয়সী এক মহিলা বেরিয়ে এলেন। নাহিদ তার আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদ মাখানো ক’ন্ঠে তোহাকে দেখিয়ে বলল,
“আম্মু বল তো, এই মেয়েটাকে তোমার ছেলের বউ হিসেবে কেমন লাগবে?

নাহিদের এমন লাগামহীন কথায় তোহা বেশ ল’জ্জা পেল। বলছে কি ছেলেটা? একটু ও কি ল’জ্জা শরম নেই? আম্মুর কাছে কেউ এভাবে বলে? হুট করেই তোহার হিচকি উঠে গেল। তা দেখে নাহিদের আম্মু রিয়াকে বলল,
“রিয়া একটু পানি নিয়ে আয় তো মা।

রিয়া তৎক্ষণাৎ চলে গেল। দুই মিনিটের মধ্যেই রিয়া পানির গ্লাস হাতে নিয়ে এলো। তোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“পানিটা খেয়ে নাও।

তোহা রিয়ার হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে নিল। নাহিদের আম্মু তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। তোহাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,
“ছেলের বউ হিসেবে খুব একটা খারাপ লাগবে না।

#চলবে

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৬
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

নাহিদের আম্মুর কথায় তোহা হত’ভম্ব হয়ে গেল। বি’স্ময়, ল’জ্জা যেন দ্বিগুন হলো। তোহা ল’জ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল। তা দেখে নাহিদের আম্মু হেসে বলল,
“ওমা। মেয়ে তো দেখছি ল’জ্জা পাচ্ছে।

নাহিদের আম্মুর সরাসরি বলে ফেলায় তোহার অস্ব’স্তি লাগলো। তখনই নাহিদের আম্মু তোহার বাহুতে ধরে বিনয়ী স্বরে বলল,
“এখানে ল’জ্জা পাওয়ার কিছু নেই আম্মু। তুমি আমার সাথে বসো তো।

ভদ্রমহিলার কথায় তোহার যেন স্ব’স্তি মিলল। তোহাকে ধরে সোফায় নিয়ে বসালেন। নাহিদ তখন নিজের রুমে দিকে চলে গেল। নাহিদ চলে যেতেই তোহা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। নাহিদের আম্মু সরাসরিই প্রশ্ন করল,
“আমার ছেলেকে তোমার পছন্দ নয়?

তোহা কল্পনাও করতে পারেননি উনি এই প্রশ্ন করে বসবেন। কি উত্তর দিবে? এভাবে কেউ প্রশ্ন করে? তোহা এবার হাঁস’ফাঁস করতে লাগলো। কি করে প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়া যায় তারই পরিকল্পনা করতে লাগলো। তোহার মনোভাব হয়তো নাহিদের আম্মু আঁচ করতে পারলেন। মুচকি হেসে বলল,
“হুট করে একদিন নাহিদ এসে আমাকে আর রিয়াকে বলল রেস্টুরেন্টে কোন মেয়ে নাকি তাকে বর বলেছে। আচ্ছা, রিয়াকে চিনো তো? আমার দেবরের মেয়ে। ওর মা মারা গেছে আর দেবর প্রবাসী বিধায় আমাদের এইখানেই থাকে।

তোহা এক পলক রিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটার মা নেই? তোহার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

নাহিদের আম্মু আবারো বলতে শুরু করল,
“সেদিন নাহিদের চোখে-মুখে অচেনা মেয়েটার প্রতি সে-কি রাগ দেখলাম। রেস্টুরেন্টে নাকি ঝগড়া হয়েছিল। তারপর কয়েকদিন কেটে গেল। হুট করে আমার ছেলেটা এসে বলল ‘আম্মু আমি মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছি’। আমার ছেলের মুখে এমন অপ্রত্যা’শিত কথা শুনে আমার খুব ইচ্ছে হলো সেই মেয়েটাকে দেখার। ইচ্ছেটা পোষন করার কারণেই তুমি আজকে এখানে।

তোহা এতক্ষণে বুঝতে পারল তাকে কেন এখানে আনা হয়েছে। নাহিদের আম্মু আবারো বলল,
“আমার ছেলের পছন্দটা কিন্তু খারাপ না।

তোহা মুচকি হাসল। তখনই নাহিদ বেরিয়ে এলো। ভেজা ভেজা চুল। হয়তো সদ্য গোসল সেরে এসেছে। তোহা নাহিদের দিকে এক পলক তাকাতেই ল’জ্জা এসে ভর করল তার মুখশ্রীতে। অহেতুক এহেন ল’জ্জার কারণ ধরতে পারল না তোহা। একি ল’জ্জা কেন লাগছে?

তোহার ল’জ্জা মাখা মুখ নাহিদের চোখ এড়ালো না। নাহিদ তা দেখে অবাক হলো। মেয়েটা এমন ল’জ্জা পাচ্ছে কেন? ল’জ্জা পাওয়ার মতো কি বলল আম্মু? নাহিদ নিজ মনের প্রশ্নগুলো নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ রেখে বলল,
“আম্মু ক্ষু’ধা লেগেছে। খাবার দাও। ওকে ও আবার দিয়ে আসতে হবে।

নাহিদের আম্মু এবার তড়িগড়ি করে উঠে দাঁড়াল। সত্যি তো এবার খাবার খাওয়া দরকার। উঠি তড়িগড়ি করে উঠে দাঁড়ালেন। এক মুহুর্ত ব্যয় না করে রান্নাঘরে ছুটলেন।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকে গেলে তোহা অ’স্থির হয়ে গেল বাসায় যাওয়ার জন্য। নাহিদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“শুনোন, আমি বাসায় যাব।

নাহিদ চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,
“বাসায় তো যাবেই। তোমাকে তো এখানে সারা জীবনের জন্য রেখে দিব না। বাসায় দিয়েই আসব।

রিয়া সোফায় বসে থেকে নাহিদের মুখের দিকে তাকাল। নাহিদের চোখ, মুখ, কথা বলার ভ’ঙ্গি খুব গভীরভাবে দেখতে লাগলো। হঠাৎ করেই তোহার চোখ গেল রিয়ার দিকে। রিয়াকে নাহিদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে খানিকটা ভ্রুঁ কুঁচকালো। রিয়ার চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করল।

এতোটা বুঝতে স’ক্ষম না হলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারল। রিয়া কি তাহলে নাহিদকে সত্যি ভালোবাসে? রিয়া নাহিদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তোহার দিকে তাকাল। তোহাকে তার দিকে তাকাতে দেখেই চমকে গেল। অপ্র’স্তুত ভ’ঙ্গিতে হাসলো। মেয়েটা কখন তাকাল এই দিকে? কিছু বুঝে ফেলল না তো?

রিয়াকে হাসতে দেখে তোহাও সৌজন্যতা রক্ষার্থে হাসলো। তবে রিয়ার ওমন দৃষ্টির কারণ তাকে ভাবাচ্ছে।

নাহিদ উঠে দাঁড়াল। তোহাকে নিয়ে এখন বাসায় ফিরে যাওয়া দরকার। চোখের ইশারায় তোহাকে উঠতে বললে তোহা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। নাহিদের আম্মুর কাছে গিয়ে বলল,
“আসছি আন্টি।

নাহিদের আম্মু মুচকি হেসে বলল,
“আচ্ছা আম্মু। আবার এসো কেমন।

ওদের থেকে বিদায় নিয়ে তোহা নাহিদ বেরিয়ে পড়ল। তোহা নাহিদের বাইকে বসে নাহিদের কাঁধে হাত রাখতেই নাহিদ বলে উঠল,
“কাঁধে হাত না রেখে একটু জড়িয়ে ধরলে তো পারো।

তোহা শব্দ করে হাসল। হাসি থামিয়ে কটা’ক্ষের স্ব’রে বলল,
“আপনি আশা করছেন আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরবো? আমি কখনোই আপনাকে জড়িয়ে ধরবো না।

নাহিদ মাথায় হেলমেট পড়ে নিল। বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল,
“জড়িয়ে তো তুমি ধরবেই। তাও নিজ ইচ্ছাতে।

তোহা মুখ ভেং’চি দিল। নাহিদ বাইকের আয়নার তা স্প’ষ্ট দেখল। তোহার মুখ ভেং’চি দেওয়া দেখে মুচকি হাসল। মেয়েটার এই মুখ ভেং’চি দেওয়া ও ভালো লাগছে। ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই কি ভালো লাগে?

বাইকে করে নাহিদ ভার্সিটি পর্যন্ত এলো। কিন্তু এর পরের রাস্তা তো জানা নেই। তোহার বাসা কোথায় সে তো জানে না। তোহা সেটা বুঝতে পেরে রাস্তা বলে দিল। নাহিদ সেই অনুযায়ী গিয়ে তোহার বাসার সামনে বাইক থামাল।

তারেকুল বারান্দা থেকে তোহাকে একটা ছেলের বাইক থেকে নামতে দেখলেন। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে এলো উনার। কে হতে পারে এই ছেলেটা? তোহার বয়ফ্রেন্ড?

তোহা বাইক থেকে নেমে নাহিদের দিকে এক পলক তাকাল। কোনো কথা না বলেই বাসার ভিতরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। নাহিদ বাইকে ঠাঁই বসে রইল। তোহা যেই ভেতরে চলে গেল তখনই সে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।

তোহা বাসায় ফিরতেই তোহার সম্মুখীন হলো তারেকুল। তোহা আব্বুকে দেখে মুচকি হাসল। তারেকুল তোহাকে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করল,
“তুমি যেই ছেলেটার বাইকে করে এলে সেই ছেলেটা কে মামনি?

তারেকুলের প্রশ্নে তোহা শুকনো ঢোক গিলল। আব্বু কি নাহিদকে দেখে ফেলল? তোহা তারেকুলের প্রশ্নের উত্তরে কি জবাব দিবে বুঝতে পারল না। কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। বুঝ হওয়ার পর জীবনে প্রথম আজ আব্বুকে মি’থ্যে বলল,
“আমাদের ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে আব্বু। আমি আর ও অরিনের বাসায় গিয়েছিলাম। তাই আমাকে ও বাইকে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেল।

বরাবরের মতোই মেয়ের কথাটা তারেকুল বিশ্বাস করল। মেয়েটা যে তাকে কখনো মিথ্যে বলেনি। মুচকি হেসে বলল,
“ঠিক আছে মামনি। তুমি রুমে যাও।

তোহা বাধ্য মেয়ের মতো রুমে চলে গেল। আব্বুকে মি’থ্যে বলায় তার ভেতরটা জ্ব’লছে। কখনো তো মি’থ্যে বলার প্রয়োজন হয়নি।
__________________

ঘড়িতে যখন কাঁটায় কাঁটায় বারোটা বাজলো, গত দুই দিনের মতো আজকে ও নাহিদ কল করল। তবে তাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। তিনবার রিং হওয়ার মাঝেই তোহা কল রিসিভ করে কানে দিল। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, বলুন।

তোহার এমন শান্ত কথায় নাহিদ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সেই নিঃশব্দের হাসি তোহা বুঝতে পারল না। নাহিদ মশকরা করে বলল,
“জী? কে আপনি?

নাহিদের কথায় তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। কে আপনি মানে কি? উনি কি জানেন না আমি কে? কল দিয়ে এমন ভনিতা করার কি আছে? তোহা নাহিদকে বলল,
“আপনি চেনেন না আমায়? চিনেও ঢং করছেন কেন? ঢং তো মেয়েরা করে। আপনি কি করে মেয়েলি স্বভাব পেলেন?

তোহার এমন কথায় নাহিদ হত’ভম্ব হয়ে গেল। কি বলছে মেয়েটা? গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“আমি তো জানতে চেয়েছিলাম তোমার পরিচয়টা আর তুমি আমাকে মেয়েদের সাথে তুলনা করলে? এমনটা করতে পারলে?

নাহিদের কথার ধরন শুনে তোহা হেসে উঠল। ছেলেটাকে ভালোই জব্দ করা হয়েছে। তোহা হাসি থামিয়ে বলল,
“মেয়েদের সাথে তুলনা করলাম বুঝি? কই আমি তো বুঝতে পারিনি।

নাহিদ কোনো কথা বলল না। মিনিট দুয়েক দুজনই চুপ করে রইল। নিরবতা কাটিয়ে নাহিদ বলে উঠল,
“কে তুমি? আমার বউ?

তোহা আনমনেই বলে উঠল,
“হুম।

আক’স্মিক কথায় নাহিদ বি’স্মিত হলো। তারপরই বুঝতে পারল তোহা আনমনেই কথাটা বলে ফেলেছে। নাহিদ এবার মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে স্বীকার করছো তুমি আমার বউ?

তোহা এবার নিজের কথাটা বুঝতে পারল। মুহূর্তের মধ্যেই ল’জ্জায় লাল হয়ে গেল মুখশ্রী। তোহা ল’জ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“ধ্যাৎ।

নাহিদ এবার একটু জোরে হেসে উঠল। তাতে আরো লজ্জা পেল তোহা। মুখের উপর কলটা কেটে দিল। মোবাইলটা বুকে চেপে ধরে বলল,
“আমায় এতো ল’জ্জায় ফেলেন কেন আপনি?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে