#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১১
#লেখিকা_লক্ষী_দেব
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই তোহা সিদ্ধান্ত নিল আজকে আব্বুর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করবে। তাই তো ফ্রেশ হয়ে ছুটল রান্নাঘরে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল তোহার আম্মু সানজিদা বেগম নাস্তা তৈরি করছেন। তোহা পেছন থেকে সানজিদা বেগমকে জড়িয়ে ধরল। সানজিদা বেগম চমকে উঠলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে বললেন,
“কী ব্যাপার? কী চাই?
তোহা আম্মুর প্রশ্নে ঠোঁটের হাসিটা আরেকটু প্রসারিত করে। মুচকি হেসে বলে,
“আমার কিছু চাই না তো।
সানজিদা বেগম ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে রেখেই বললেন,
“তাহলে? এই সকাল বেলা রান্নাঘরে কী?
তোহা সানজিদা বেগমকে ছেড়ে দিল। সানজিদা বেগমকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আম্মু, আব্বু আমার সাথে রাগ করে আছে। আমি একটু আব্বুর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করি? আব্বু সকালে যে চা খায় সেই চা টা আমি বানিয়ে নিয়ে যাই?
সানজিদা বেগম তোহার কথায় খুশি হলেন। মেয়েটা তার আব্বুর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে। কথাটা ভাবলেই পুলকিত হচ্ছেন। তোহাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আচ্ছা।
তোহা খুশি মনে চা বানাতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো কি করে আব্বুর রাগ ভাঙানো যায়। আব্বু তার কথাগুলো শুনলেই হলো। কিন্তু শুনবে তো? নাকি ওই দিনের মতোই কথার মাঝপথে থামিয়ে দিবে?
চা বানানো শেষ হলে তোহা চায়ের কাপে চা নিয়ে পা বাড়ায় আব্বুর রুমে যাওয়ার জন্য। তোহা দুরুদুরু বুকে তারেকুলের রুমে প্রবেশ করল। রুম থেকেই বারান্দায় স্প’ষ্ট তারেকুলকে দেখা যাচ্ছে। চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। তোহা ধীর পায়ে এগিয়ে গেল।
তারেকুলের সামনে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,
“আব্বু তোমার চা।
তারেকুল তোহার দিকে এক পলক তাকিয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিল। মুখে কোনো জবাব দিল না। নিরব থেকেই বুঝিয়ে দিল মেয়ের প্রতি রাগটা তার কমেনি।
তোহা বারান্দায় থাকা মোড়াটা তারেকুলের চেয়ারের পাশে এনে বসে পড়ল। তারেকুল রইল নি’র্বিক। তোহা তারেকুলকে শুনিয়ে বলল,
“জানো আব্বু? রেস্টুরেন্টে অচেনা ছেলেটাকে বর বলে পরিচয় দিয়েছিলাম। অকারণে দেইনি। অবশ্যই কারণ ছিল। তাই বর বলেছিলাম। বরং বলেছিলাম বলে আমার সাথে ছেলেটা তুমুল ঝগড়া করল। ঝগড়ার সমাপ্তি টেনে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল। ভেবেছিলাম আর দেখা হবে না। কিন্তু ভাগ্য ক্রমে দেখা হয়ে গেল।
তোহা তারেকুলের দিকে তাকালো। তারেকুলের মাঝে কোনো কৌতুহল দেখা যাচ্ছে না। সে আগের মতোই নি’র্বিক রইল। তা দেখে তোহা হতাশ হলো। নিজ মনে ভাবল,
“আব্বু আমার কথা শুনছে তো?
তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হাল ছাড়লে হবে না। তাই নতুন উদ্যমে আবারো বলতে শুরু করল,
“ভার্সিটির প্রথম দিন আমাকে বউ বলে ডেকে উঠল। উনাকে বর বলে পরিচয় দিয়েছিলাম বলে। তারপর থেকে শুরু হলো ঝগড়া। কারনে-অকারনে ঝগড়া হতো। সেদিন যখন সুমনকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাই তখনও ছেলেটার সাথে দেখা হয়ে যায়। দেখা হওয়া মাত্রই সে আমায় বউ বলে সম্বোধন করে। সুমন ও আমায় ভুল বুঝে বেরিয়ে যায়।
তোহা এবার খেয়াল করে দেখল তারেকুল নড়েচড়ে বসেছেন। ক’ন্ঠে গম্ভীরতা রেখেই তোহাকে প্রশ্ন করলেন,
“তার মানে ছেলেটার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই?
তোহা দুদিকে মাথা নাড়ালো। শীতল স্বরে বলল,
“আমার কোনো ছেলের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। সেই দিন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।
তারেকুল উঠে দাঁড়ালো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো তোহার সেদিনের অভিমানী মুখশ্রী, ছলছল চোখ জোড়া। তারেকুলের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। মেয়েটাকে অকারণেই সেদিন ধ’মকে কথা বলছিলেন। তারেকুল তোহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তোহা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরল। তারেকুল তোহাকে জড়িয়ে ধরে স্বস্নেহে বলে উঠল,
“আব্বু সরি মামনি।
তোহার চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠল। শেষ পর্যন্ত আব্বুর রাগ ভেঙ্গেছে। তোহা মিষ্টি হেসে বলল,
“আমি তোমায় ভালোবাসি আব্বু।
__________________
তোহা খুশি মনে ভার্সিটিতে পা রাখলো। চোখ-মুখ দেখে যে কেউ নির্দ্বি’ধায় বলে দিতে পারবে আজকে তোহার মন ভালো। চোখ-মুখে যে খুশির ঝিলিক স্প’ষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অরিন তোহার এই খুশির কারণ ধরতে পারল না। কয়েকবার তোহার দিকে আড়চোখে তাকিয়েছে। এবার আর আড়চোখে তাকাল না। সরাসরি তোহার মুখের দিকে তাকাল। অরিনকে তাকাতে দেখে তোহা বলল,
“কিরে? কি দেখছিস?
অরিন তৎক্ষণাৎ তোহার প্রশ্নের উত্তর দিল না। ভ্রুঁ কুঁচকে তোহার এই খুশির কারণটা ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হলো না। অরিন ব্য’র্থ হয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
“তোকে যেন আজকে খুব খুশি খুশি লাগছে।
তোহা হেসে উঠল। হাসিটা যেন তার খুশিকে আরেকটু বাড়িয়ে দিল। তোহা হাসি মুখে বলল,
“আমি তো খুশিই। তাইতো আমাকে দেখে খুশি খুশি লাগছে।
“তোর এই খুশির কারণটা কি জানতে পারি?
তোহা মাথা উপর নিচ করল। যার মানে অরিন জানতে পারে। তোহা মুখে বলল,
“আব্বুকে সব বলে দিয়েছি। সবকিছু শুনে আব্বুর রাগ একদম পানি হয়ে গেছে।
অরিন ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
“তাই বলি, আজ তোকে এতো খুশি কেন লাগছে।
নাহিদ বাইকে বসে থেকে তোহা আর অরিনকে দেখল। তোহাকে দেখা মাত্রই রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল। নাহিদ চমকে তোহার দিকে তাকাল। স্বপ্নের মধ্যে তোহা লাল শাড়ি পড়ে থাকলেও আজকে তোহা লাল থ্রী পিস পড়েছে। নাহিদ দুচোখ ভরে দেখল। আচ্ছা? এখন যদি মেয়েটি লাল গোলাপ হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে স্বপ্নের মতো বলে ‘আমায় আপনার বউ বানাবেন ‘ তাহলে কেমন হবে?
নিজ মনে কথাটা ভেবেই নাহিদ চমকে উঠলো। নিজেই নিজেকে ধি’ক্কার জানিয়ে বলল,
“কি ভাবছি এই সব? আমার এই কি অবনতি হলো? না, না। এটা ঠিক না। যেখানে আমাদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক আমি কি-না সেখানে এইসব ভাবছি। ছিঃ ছিঃ।
নিজেকে এসব বলে ধি’ক্কার জানালেও অবাধ্য চোখ জোড়া তোহার মুখের গিয়ে স্থি’র হলো। নাহিদ চোখ সরালো না। চোখ সরানোর চেষ্টা ও করলো না। পলকহীন চোখে চেয়ে রইল তোহার দিকে।
হাঁটতে হাঁটতে তোহা খেয়াল করল তার অস্ব’স্তি হচ্ছে। কেউ যেন খুব গভীর ভাবে তাকে লক্ষ্য করছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তোহা হাঁসফাঁস করতে লাগলো। এমন লাগছে কেন? কেন মনে হচ্ছে কেউ তাকিয়ে আছে?
তোহা আশেপাশে তাকাল। তখনই চোখ গেল বাইকে বসে থাকা নাহিদের উপর। নাহিদের দৃষ্টি এইদিকেই স্থি’র। তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে নিজে নিজেকে বলল,
“অ’দ্ভুত! এইভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে?
তোহা এবার দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো। নাহিদের চোখের সামনে থাকতে ইচ্ছে করছে না। তাইতো দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো। ক্লাসে গিয়ে স্ব’স্তির শ্বাস নিল। যাক এখন শান্তি লাগছে।
বেঞ্চে গিয়ে বসতেই রিয়া তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। তখনই তোহার মনে পড়ল সেদিন রেস্টুরেন্টের কথা। সেদিন তো নাহিদের সাথে রিয়াই ছিল। তোহা দেখল রিয়া কেমন রাগী দৃষ্টিতে আছে। তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“দেখো ভাই তোমার নাহিদকে আমি নিয়ে যাব না। আমার দিকে এমন রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাভ নেই।
রিয়ার মাঝে কোনো পরিবর্তন হলো না। আগের মতোই তাকিয়ে রইল। কেমন যেন হেঁয়ালি করে বলল,
“কে বলল তুমি নিয়ে যাবে না? যদি নিয়ে চলে যাও? তাই তো আগে থেকে সাবধান করছি।
তোহা হেসে উঠলো। হাসবেই তো। রিয়ার কথাটা তার কাছে বড্ড বেশি হাস্য’কর মনে হলো। হাসি থামিয়ে বলে উঠল,
“আমার উপর না হয় বিশ্বাস নেই। কিন্তু তোমার ভালোবাসার মানুষের উপর বিশ্বাস নেই বুঝি? সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস না থাকলে সেই সম্পর্ক তো এমনি ভে’ঙ্গে যাবে।
রিয়ার মুখের রাগটা যেন মিলিয়ে গেল। কেমন ফ্যাকাশে দেখালো মুখশ্রী। তোহার কথায় পরিবর্তে কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেল। তোহা, অরিন অবাক হলো। অরিন অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“অদ্ভুত তো!
ভার্সিটি ছুটি হলে তোহা, অরিন বেরিয়ে এলো। মাঠের মাঝখানে আসতেই নাহিদ সামনে এসে দাঁড়াল। তোহা চমকে তাকালো। তারপর মুখ ঘুরিয়ে পাশ কেটে চলে গেল। নাহিদ স্ত’ম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েটা এভাবে এড়িয়ে চলে গেল? নাহিদ তোহাকে ডাকবে কি ডাকবে না ভাবতে লাগলো। আনমনেই ডেকে উঠল,
“তোহা।
তোহা দাঁড়িয়ে গেল। অরিনের দিকে তাকাল। অরিনও তোহার দিকে তাকিয়ে আছে। তোহা ভাবলো নাহিদকে আবারো কথা বলতে মানা করবে। তখনই আবারো মনে হলো ‘কি দরকার মানা করার? সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করলেই তো হয় ‘। তোহা তাই করল। নাহিদের দিকে ফিরেও তাকাল না। সোজা চলে যেতে লাগল নিজ গন্তব্যে।
পেছন থেকে নাহিদ করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা এতো অভিমানী কেন?
#চলবে
#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১২
#লেখিকা_লক্ষী_দেব
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নাহিদ। চোখ দুটো দিয়ে মহাকাশের চন্দ্র, নক্ষত্র দেখছে সে। নাহিদের রুমে দুই কাপ কফি হাতে প্রবেশ করল এক রমনী। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। নাহিদের রুমে প্রবেশ করেই ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। তারপরই মনে হলো নাহিদ বারান্দায় থাকতে পারে। সে বারান্দায় গেল। ডানহাতে থাকা কফির কাপটা নাহিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমার কফি।
নাহিদ ঘুরে দাঁড়ালো। রিয়ার বাড়িয়ে দেওয়া কফির কাপটা হাতে নিল। আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে কফির কাপে চুমুক দিল। রিয়া নাহিদকে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“তোমার বউয়ের কথা ভাবছো বুঝি?
নাহিদ আবারো রিয়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আক্ষে’পের সুরে বলল,
“আর বউ। সে তো আমাকে স’হ্যই করতে পারে না।
নাহিদের কথায় রিয়া হেসে উঠল। কিছুটা শব্দ করেই হেসে উঠে বলল,
“এই দিকে আমি তোহাকে সাবধান করছি। যাতে তোমার প্রেমে না পড়ে।
নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো। অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“কেনো? এমন কেন করেছিস?
রিয়া কফির কাপে চুমুক দিয়ে বেশ আয়েশ করে বলল,
“রেস্টুরেন্টের ঘটনাটা তো তুমি বলেছিলে। কিন্তু ভার্সিটিতে গিয়ে যখন তুমি কাউকে বউ বলে ডেকেছিলে সেই কথাটা পাঁচ কান হতেই আমি শুনতে পেলাম। তখনই বুঝে ফেললাম এইটাই সেই রেস্টুরেন্টের মেয়েটা। তাই একটু বাজিয়ে দেখলাম মেয়েটা কেমন।
নাহিদ ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
“তুই তো দেখছি আরেক কাহিনী করে রেখেছিস।
রিয়া মুচকি হেসে বলল,
“তোমার বউ কিন্তু জানে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড। তুমি পা’ক্কা মিঙ্গেল।
নাহিদ রিয়ার দিকে তাকালো। হায় হায় করে বলে উঠলো,
“এখন আমার কি হবে? তুই তো আমার কাজটা আরো কঠিন করে দিয়েছিস।
তোহার সামনে রাগী, গ’ম্ভীর মুখ করে রাখা রিয়া হেসে উঠল। প্রাণ খোলা সেই হাসি। হাসি থামিয়ে বলল,
“কঠিন হয়েছে তো কি হয়েছে? কঠিন বাঁধা পেরুতে পারলেই তো আসল জিত। যখন প্রেমটা হয়ে যাবে তখন দেখবে পৃথিবীর সমস্ত সুখ আছে প্রেমে।
নাহিদ রিয়ার চুলটা হালকা টান টান মেরে বলল,
“খুব পাকা হয়ে গেছিস তাই না? কারো প্রেম-ট্রেমে পড়েছিস নাকি?
নাহিদের প্রশ্নে রিয়া থম মেরে গেল। হুট করে যেন বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কিরে? বলতে সমস্যা হলে বলার দরকার নেই। তবে নির্ভয়ে বলতে পারিস।
রিয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। নিজ মনেই বলল,
“আল্লাহ যদি সবাইকে সবার মন বুঝার ক্ষমতা দিত তাহলে তুমি কতো সহজেই আমার মনের কথা গুলো বুঝে ফেলতে।
___________________
তোহা সকালের নাস্তা না করেই তড়িগড়ি করে ভার্সিটিতে চলে যেতে চাইল। তখনই তারেকুল বলে উঠল,
“সকালের নাস্তা করে যাও তোহা। একদম অনিয়ম করবে না। আমি অনিয়ম পছন্দ করি না।
তোহা ঠোঁট উল্টে আব্বুর দিকে তাকালো। ঘড়িতে সময় দেখে বলল,
“আজকে চলে যাই না আব্বু? রাস্তায় কিছু খেয়ে নেব। নয়তো দেরী হয়ে যাবে।
তারেকুল তার হাতে থাকা ঘড়িতে সময় দেখে নিল। তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“খুব একটা দেরী হবে বলে মনে হচ্ছে না। এদিকে এসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
তোহা আর আপত্তি করল না। আব্বুর হাতে খাওয়ার লোভে চেয়ারে বসে পড়ল। তারেকুল তোহাকে খাইয়ে দিল। খেতে খেতে তোহার চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল। আব্বু নামক মানুষটা এতো ভালোবাসে কেন? এতো যত্ন করে আগলে রাখে কেন?
তোহা খাওয়া শেষ হতেই তারেকুলকে প্রশ্ন করল,
“আচ্ছা আব্বু? সব আব্বুরা এতো ভালো হয় কেন?
তারেকুল হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে বলল,
“এই যে তোমার মতো এমন আদুরে একটা মা পেলে সব আব্বুরা তো ভালো হবেই।
তোহা হেসে উঠল। তারেকুলকে বিদায় জানিয়ে বলল,
“আমি যাচ্ছি আব্বু। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
_____________
নাহিদ তার ক্লাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরই ক্লাস শুরু হবে। তবে আজকে ভার্সিটিতে আসার পর একবার ও তোহা বা অরিনের দেখা পায়নি। মেয়েটা কি আজকে ভার্সিটিতে আসবে না? নাহিদের মনটা ছটফট করতে লাগলো। কেন আসবে না? প্রতিদিনই তো আসে। তবে আজকে কি হলো? কোনো অসুখ হলো না তো?
নাহিদ দুচোখ বন্ধ করল। এতোটা অ’স্থির কেন লাগছে? কেন এতো ছটফটানি শুরু হচ্ছে মেয়েটার জন্য? কয়েকদিন আগেই তো পরিচয় হলো। তবে কিসের এতো অস্থি’রতা?
নাহিদ চোখ খুলে ফেলল। তখনই ঘন্টা বাজলো। রনি নাহিদের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“কিরে? এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ক্লাসে চল।
নাহিদ রনির দিকে তাকাল। অ’দ্ভুত স্বরে বলে উঠল,
“আমি ফেঁসে যাচ্ছি মামা। খুব বাজে ভাবে ফেঁসে যাচ্ছি।
রনি তার পাশে থাকা ফাহিমের দিকে তাকাল। নাহিদের কথার অর্থ বুঝতে পারছে না। ফাহিম অবাক ক’ন্ঠে প্রশ্ন করল,
“ফেঁসে যাচ্ছিস? কীভাবে ফেঁসে যাচ্ছিস? আমরা বুঝতে পারছি না। একটু ক্লিয়ার করে বল তো?
নাহিদের চোখ গেল ভার্সিটির গেইটের দিকে। তোহা, অরিন এসেছে। দুজনই দ্রুত পায়ে হাঁটছে। নাহিদের মুখে হাসি ফুটল। তোহার দিকে আঙুল তাক করে বলল,
“এই মেয়েটার প্রেমে ফেঁসে যাচ্ছি।
ফাহিম, রনি একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। তারপর দুজনই একসাথে হেসে উঠল। রনি বলল,
“একটু বুঝিয়ে বলবি তো। আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে।
নাহিদ কোনো জবাব দিল না। তার চোখ জোড়া মাঠের মধ্যে স্থি’র। ফাহিম নাহিদকে উদ্দেশ্য বলল,
“প্রেমে ফেঁসে গেলে জানিয়ে দে। নয়তো দেখবি পাখি উড়ে গিয়ে অন্য ডালে বাসা বাঁধবে।
তোহাকে আর দেখা যাচ্ছে না। নাহিদ ফাহিমের দিকে ঘুরে বুকে দুহাত গুঁজে বলল,
“কি করবো বল? পাখিটা যে পোষ মানে না। বড্ড বেশি জেদী।
রনি মুচকি হেসে বলল,
“তবে যাই বলিস। তোহাকে কিন্তু তোর সাথে দারুণ মানাবে। দুজন যখন ঝগড়া করবি তুই একটা কথা বললে তোকে দশটা কথা শুনিয়ে দিবে।
নাহিদ মুচকি হাসল। মেয়েটা বেশ ঝগড়াটে। দশটা কথা না শুনিয়ে তো ছাড়বে না। কিন্তু এই ঝগড়াটে মেয়েটা কীভাবে শয়নে-স্বপনে জায়গা করে নিল? কি অ’দ্ভুত! আমি শেষমেষ প্রেমে পড়ে গেলাম।
নাহিদ একা একা হেসে উঠল। কেমন যেন সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে? প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়? নাহিদকে হাসতে দেখে ফাহিম বলে উঠল,
“প্রেমে পড়ে ছেলেটা পাগলই হয়ে গেল।
______________
ছুটির পর তোহা ক্লাস থেকে বেরুতেই নাহিদের দেখা পেল। নাহিদ সরাসরি তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। তোহা পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে নাহিদ আবারো সামনে এসে দাঁড়ায়। তোহা বি’রক্ত হয়ে বলে,
“সমস্যা কি আপনার?
নাহিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“আমার সমস্যা? কোথায়? আমার তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার সমস্যা কি? গতকাল যে ডাকলাম শুনতে পাওনি? নাকি ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাচ্ছো?
তোহা বুকে দুহাত ভাঁজ করে কড়া গলায় বলল,
“ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছি। আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই।
নাহিদ এবার হেসে উঠল। তোহার দিকে তাকিয়ে শীতল স্বরে বলল,
“এখন থেকে কথা তো তোমায় বলতেই হবে। আমার সাথে কথা বলা বাধ্যতামূলক।
তোহা ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
“বাধ্যতামূলক? আমি কথা বলবো না। কি করবেন আপনি?
নাহিদ আশেপাশে তাকাল। সকলেই চলে গেছে। কেবল তোহা, অরিন আর নাহিদই আছে। নাহিদ মুচকি হেসে তোহার দিকে এগিয়ে গেল। আচমকা নাহিদকে এগিয়ে আসতে দেখে তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। যখন দেখল নাহিদ খুব কাছে চলে আসছে তখন সে পিছোতে শুরু করল। পিছোতে পিছোতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল।
নাহিদ ডান হাতটা দেয়ালে ঠেকিয়ে তোহার মুখের উপর ঝুঁকে গেল। আচমকা নাহিদ এতোটা কাছে আসায় তোহার হৃদস্প’ন্দন বাড়তে লাগলো। তোহা বারবার শুকনো ঢোক গিলছে। গলা শুকিয়ে আসছে। নাহিদ তোহার চোখের দিকে তাকিয়ে নেশা’লো কন্ঠে বলল,
“কিছু করে দেখাবো?
তোহা কেঁপে উঠলো। কি করতে চাইছে ছেলেটা? তোহার হাত-পা কেমন অবশ হয়ে আসছে। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। ঠিক তখনই নাহিদ সরে গেল। জোরে হেসে উঠে বলল,
“এইটুকুতেই এই অবস্থা? কিছু করলে না জানি কি করতে। আমার সাথে কথা বলা কিন্তু বাধ্যতামূলক। নাহলে কি করতে পারি দেখলে তো।
নাহিদ আর দাঁড়াল না। শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। পেছন থেকে তোহা অবাক চোখে চেয়ে রইল। কি হয়ে গেল তার সাথে?
#চলবে