#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৮
#লেখিকা_লক্ষী_দেব
তোহা আয়নার সামনে এসে চুল আঁচড়াচ্ছে। তখনই দরজার টোকা পড়ল। তোহার আম্মু বাহির থেকে বলে উঠল,
“তোহা তোর হয়েছে? তাড়াতাড়ি আয়। তোর আব্বু তোর জন্য ওয়েট করছে।
তোহা চুল বাঁধতে বাঁধতে জবাব দিল,
“এই তো আম্মু আসছি। পাঁচ মিনিট লাগবে। তুমি যাও আমি চলে আসছি।
বাহির থেকে তোহার মায়ের কন্ঠ আর পাওয়া গেল না। হয়তো চলে গেছেন। তোহা চুল বাঁধা শেষ করে ফোনটা হাতে নিল। অরিনকে একটা কল দেওয়া দরকার। তোহা কল দিল। রিং হওয়ার কয়েক সেকেন্ড পরই অরিন কল রিসিভ করল। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
“কল দিয়ে বি’রক্ত করছিস কেন? আমার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘাটালে হয় না? কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।
“তুই তোর ঘুম নিয়ে পড়ে থাক। এইদিকে আমি পাত্রের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
অরিন আবারো ঘুম ঘুম ক’ন্ঠে বলল ‘আচ্ছা’। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পর কথাটা বোধগম্য হতেই অরিনের চোখের ঘুম হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ধরফরিয়ে উঠে বসল। অবাক হয়ে শুধাল,
“এই কি বলছিস তুই? পাত্র? কিসের পাত্র? কার পাত্র? তুই কেন পাত্রের সাথে দেখা করতে যাবি?
অরিনের পরপর করা এতো গুলো প্রশ্নে তোহা হতাশ হলো। ঘুম থেকে উঠে মেয়েটা সব ভুলে গেছে। এই বিকেল পর্যন্ত কেউ ঘুমায়? তোহা মিহি স্বরে বলল,
“আব্বুর বন্ধুর ছেলের কথা ভুলে গেছিস?
অরিনের তখনই মনে হলো তাদের এইচএসসি পরীক্ষার আগেই তোহার আব্বুর বন্ধু তোহাকে তার পুত্রবধূ করে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু তোহা সাফ জানিয়ে দিয়েছিল পরীক্ষার আগে সে বিয়ে করবে না। অরিন বি’ষন্ন গলায় বলল,
“ওই ছেলের জন্য কি দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ে নেই? তোকেই কেন বিয়ে করতে হবে?
তোহা ঠোঁট উল্টে বলল,
“কি জানি? আমি তো ভেবেছিলাম এতদিনে হয়তো বিয়ে করে বিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ কালকে আব্বু এসে বলল ছেলে আমার সাথে কথা বলতে চায়।
অরিন আবারো বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বলল,
“শোন তুই ছেলেটার সাথে কথা বলে এসে আংকেলকে বলবি দীর্ঘ নয় মাসে ছেলেটার বেশ বয়স বেড়ে গেছে। তুই এই বৃদ্ধ ছেলেকে বিয়ে করবি না।
অরিনের বাচ্চামো কথায় তোহা জোরে জোরে হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে বলল,
“নয় মাসে কোনো যুবক ছেলে বৃদ্ধ হয়ে যায়? কি বলছিস তুই?
অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ওহ! হয়না বুঝি? না হলে নেই। আমি কিছু জানিনা। তুই এই বিয়েটা করবি না। তুই বিয়ে করে চলে গেলে আমি ভার্সিটিতে যাব কার সাথে? আমার মনের কথাগুলো কাকে বলবো?
তোহা জবাব দিতে গেলে আবারো দরজায় টোকা পড়ে। তোহার মা বলে,
“রেডি হতে কতক্ষন লাগবে তোহা? তোর আব্বু অপেক্ষা করছে তো।
তোহা অরিনকে ছোট করে বলল,
“আম্মু ডাকছে। এখন রাখছি।
তোহা দরজা খুলে বের হলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
“এই তো আম্মু হয়ে গেছে।
তোহা তার আব্বুর সাথে গাড়িতে গিয়ে বসল। এখন তাদের গন্তব্য রেস্টুরেন্টে। গাড়ি চালাতে চালাতে তোহা আব্বু তারেকুল বলে উঠল,
“শোনো মামনি। সুমন তোমার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করেছে। তোমাকে ওর পছন্দ হয়েছে বলেই এতোদিন অপেক্ষা করেছে। তোমাকে আমরা আগেই বলেছি তোমার কাউকে পছন্দ আছে কি-না। আমি চাই না আমার সম্মানহানি হোক। তাই আবারো বলছি, তোমার কোনো পছন্দের মানুষ আছে?
তোহা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে তারেকুলের দিকে তাকাল। মিষ্টি হেসে বলল,
“তোমার আত্মসম্মান কতোখানি প্রখর আমি জানি আব্বু। আমি কখনো আমার কারনে তোমার সম্মানহানি হতে দেব না। আমার পছন্দের কেউ নেই।
তোহার কথায় তারেকুল সন্তু’ষ্ট হলো খুশি হলো। চোখে খুশির ঝিলিক দেখা গেল। তোহা বাবার খুশি মুখটা খানিকটা গর্ব বোধ করল। তারেকুল তার মেয়েকে নিয়ে খুব প্রস’ন্ন। মেয়েটা বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান কি-না।
রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামল তারেকুল। তোহা গাড়ি থেকে নেমে আব্বুর দিকে তাকাল। তারেকুল গাড়ির ভেতর থেকে বলল,
“আমি যাই মামনি।
তোহা মাথা নাড়ালো। তারেকুল গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল। তোহা হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাল। বিকেল পাঁচটা বেজে পনেরো মিনিট। সুমন বলেছিল পাঁচটায় আসবে। ইশ! পনেরো মিনিট দেরি হয়ে গেল। তোহা বি’ব্রত বোধ করে রেস্টুরেন্টের ভেতরে গেল।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দুইটা টেবিল পড়েই সুমনকে দেখতে পেল। আগে দেখা হয়েছে বিধায় চিনতে অসুবিধা হলো না। তোহা টেবিলের সামনে গেল। সুমনের দৃষ্টি মোবাইলের দিকে। তোহা সুমনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গলা খাঁকারি দিল। সুমন চোখ তুলে তাকাল। তোহাকে ডেকে হেসে বলল,
“দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।
তোহা বসল। প্রচুর অস্ব’স্তি লাগছে। সুমন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“পাক্কা আঠারো মিনিট দেরি। অপেক্ষা করাতে ভালো লাগে বুঝি?
তোহা ল’জ্জিত বোধ করল। খানিকটা হেসে বলল,
“না, না। অপেক্ষা করাতে ভালো কেন লাগবে? আসলে অরিনের সাথে কথা বলতে বলতে দেরী হয়ে গিয়েছে।
সুমন ভ্রুঁ কুঁচকালো। কয়েক সেকেন্ড পরই ভ্রুঁ সোজা করে বলল,
“ওহ আচ্ছা। তোমার ফ্রেন্ড অরিন?
তোহা মাথা নাড়ল। হুট করেই দরজার দিকে নজর গেল। নাহিদ রেস্টুরেন্টে ঢুকছে। তোহা চমকে গেল। একটু তাকিয়ে থাকতেই অবাক হলো সে। নাহিদের পেছনে রিয়া আসছে। তার মানে কি নাহিদ আর রিয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?
তোহার হুট করে মনে হলো এখানে সুমন আছে। সুমনের সামনে নাহিদ যদি তাকে বউ বলে ডাকে তাহলে কি হবে? সুমন তো ভুল বুঝবে। তোহা মুখটা নিচু করে ফেলল। হাত দুটো মুখের সামনে এনে মুখ আড়ালের প্রচেষ্টা করতে লাগলো। তোহাকে এমন করতে দেখে সুমন বলল,
“কি হলো? মুখের সামনে হাত দিয়ে রেখেছো কেন?
তোহা একটা আঙ্গুল ফাঁক করে ডান চোখটা মেলে দেখল নাহিদ তাদের টেবিলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। নাহিদের পিছু রিয়া। নাহিদ তোহার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। তোহা নাহিদ চলে গেছে ভেবে হাত নামিয়ে মেকি হেসে বলল,
“কিছু না। এমনি হাত দিয়েছিলাম।
তোহার ক’ন্ঠ পেয়ে চমকে গেল। পেছন ঘুরে একটা ছেলেকে দেখতে পেল। ছেলেটার মুখোমুখি একটা মেয়ে বসে আছে। নাহিদ মেয়েটার পেছন দেখতে পাচ্ছে। মেয়েটা তোহা কি-না নিশ্চিত হতে সামনে গেল। তোহাকে দেখে অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“বউ তুমি?
তোহা চমকে উঠল। শেষ রক্ষা হলো না। নাহিদ তোহাকে দেখেই নিল। তোহার বুকের ঢিপঢিপ শব্দটা বেড়েই চলেছে। এখানে কোনো ঝামেলা না হলেই হয়। তোহাকে নাহিদকে সাবধান করতে মুখ খুলতে নিল। তখনই সুমন তোহাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ছেলেটা তোমাকে বউ বলল?
সুমনের প্র’শ্নে তোহা শুকনো ঢোক গিলল। নাহিদ এবার উল্টা পাল্টা কিছু না বললেই হয়। তোহা শীতল ক’ন্ঠে বলল,
“আমি কেন উনা…..!
তোহার কথাটা নাহিদ সম্পন্ন করতে দিল না। তোহাকে মাঝ পথে থামিয়ে বলল,
“বউ কেন হবে? আপনি জানেন না ওর বিয়ে হয়নি? আমি যেহেতু বউ বলছি তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে।
নাহিদ মনে করল সুমন তোহার বয়ফ্রেন্ড। তাই দুজনের মাঝে একটু ফাটল ধরাতে তোহাকে উদ্দেশ্য করে মিছিমিছি ভনিতা করে বলল,
“বউ তুমি আমাকে না জানিয়ে অন্য আরেকজনের সাথে দেখা করতে এসেছো? তাও একটা ছেলের সাথে? তুমি এটা কীভাবে করলে?
নাহিদের কথা বলার স্টাইল দেখে সুমন বুঝে গেল ওদের মাঝে কোনো রিলেশন আছে। কয়েক মুহূর্ত হত’ভম্ব হয়ে বসে রইল। তোহা নাহিদের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,
“আপনি কিন্তু স’হ্যের সী….
তোহা তার কথাটা শেষ করতে পারল না। তার আগেই সুমন তোহাকে বলল,
“হয়েছে। তোমাকে আর নতুন করে নাটক করতে হবে না। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে। নাহলে আমরা যখন বলেছিলাম বিয়ের পরও তোমাকে পড়ালেখা করাবো তখন কেন তুমি রাজি হলে না? তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে বলেই। অথচ দেখো আমি বোকার মতো তোমার জন্য অপেক্ষা করে গেলাম। আমায় একবার বলতে পারতে তোমার যে বয়ফ্রেন্ড আছে। তাহলে আমি এতদিন বৃথা অপেক্ষা করতাম না।
তোহাকে কিছু বলতে না দিয়ে সুমন হনহন করে চলে গেল। তোহা হতবাক হয়ে বসে রইল। নাহিদ এতক্ষণে বুঝতে পারল সুমন তোহার বয়ফ্রেন্ড না। ওদের পারিবারিক ভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই তোহার দিকে তাকিয়ে নিচু স্ব’রে বলল,
“সরি।
তোহা ঘৃ’না ভরা দৃষ্টিতে নাহিদের দিকে তাকাল। ভার্সিটিতে নাহিদের প্রতি যতটা সম্মান জন্মেছিল সবটা ধূলোয় মিশে গেল। তোহা নাহিদকে উদ্দেশ্য করে ঘৃ’ণিত স্বরে বলল,
“আপনি এমনটা না করলেও পারতেন, ছি’হ।
তোহা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল। সুমন সবটা না জেনেই আব্বুকে যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলে দেয়? তোহার চোখে পানি চিকচিক করে উঠল। তখন বড় মুখ করে আব্বুকে যে বলেছিল ‘ আমি কখনো আমার কারনে তোমার সম্মানহানি হতে দেব না’। সেই কথার কি হবে?
#চলবে