অবিবাহিত বউ পর্ব-০৭

0
759

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৭
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

ভার্সিটিতে আজ নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভার্সিটির সকলে রঙ বেরঙের সাজে সেজেছে। একেক জনের একেক রকম পোশাক।‌ মনে আনন্দ। নাহিদ বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একবার আশেপাশে তাকাচ্ছে তো আরেকবার গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। সম্ভবত কাউকে খুঁজছে। নাহিদকে এমন করতে দেখে রনি ঠেস মেরে বলল,
“কীরে মামা। বউকে খুঁজছিস বুঝি? তোর বউ এখনো আসেনি। আর অমনি ছটফটানি শুরু হয়ে গেল।

নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“কী করবো বল? বউয়ের সাথে ঝগড়া করাটা বড্ড মিস করছি। বউটা কতো সুন্দর করে ঝগড়া করতে পারে।

ফাহিম পাশ থেকে বলে উঠল,
“শা’লা এমন ভাবে বলছে যেন নিজের বিয়ে করা বউ। বিয়ে না করেই এসব বলছিস। বিয়ে করলে না জানি কি বলবি।

রনি ফাহিমের কথার জবাবে বি’দ্রুপ করে বলল,
“বিয়ে না করে সংক্ষেপে বলছে। যখন বিয়ে করবে তখন ইতিহাস বলবে।

রনি কথাটা বলে হাসতে লাগলো। রনির সাথে ফাহিমও তাল মিলিয়ে হাসলো। দুজনকে হাসতে দেখে নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। ক’ন্ঠে তীব্র প্রতিবাদ, বি’রক্তি নিয়ে বলল,
“শা’লা তোরা একটু বেশিই বুঝিস। বেশি বুঝে যা ইচ্ছে তা বলে দাঁত কেলিয়ে হাসছিস।

নাহিদ কথাটা বলে আবারো গেইটের দিকে তাকাল। তখনই নীল শাড়ি পড়া তোহাকে দেখতে পেল। চুলগুলো ছেড়ে রাখা। হেসে হেসে অরিনের সাথে কথা বলছে। নাহিদ ফট করে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ফাহিম, রনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোরা দাঁড়া আমি আসছি।

নাহিদ চলে গেল। তোহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলল,
“এই বউ। আজকে শাড়ি পড়েছো। শাড়িতে কিন্তু তোমাকে সত্যি সত্যি বউয়ের মতো লাগছে।

হুট করে নাহিদ সামনে চলে আসায় তোহা হচকচিয়ে গেল। নাহিদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কথা বলতে চাইল না। তাই মুখ ঘুরিয়ে পাশ কেটে চলে যেতে চাইল। তোহাকে চলে যেতে দেখলে নাহিদ আবারো সামনে এসে দাঁড়াল। আগের ন্যায় বলে উঠল,
“বউ বুঝি কথা বলবে না?

তোহা আবারো জবাব না দিয়ে চলে যেতে চাইল। তখনই মনে হলো তোহা চলে যেতে চাইলে নাহিদ আবারো সামনে এসে দাঁড়াবে। তোহা তাই বাধ্য হয়েই জবাব দিল,
“দেখুন আমি কোনো ঝামেলা চাইছি না। তাই আমাকে বি’রক্ত করবেন না।

তোহার বলা কথাটা নাহিদ মনে মনে মেনে নিল। আজ সেও ঝগড়া-ঝাটি করতে চাইছে না। কিন্তু তাও তোহার রাগী মুখটা দেখতে মিছিমিছি বলে উঠল,
“বি’রক্ত না করলে কীভাবে হবে? তোমায় বি’রক্ত না করলে যে আমার শান্তি লাগে না বউ।

তোহা রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। যেইনা মুখ খুলতে যাবে তখনই নাহিদ হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে হেসে বলল,
“আরে আমি এমনি মজা করছিলাম। রেগে রণ’চন্ডী রূপ ধারণ করার কোনো দরকার নেই।

তোহা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কথা বাড়ালো না। তার ইচ্ছে নাহিদ সরে গেলেই সে চলে যাবে। কিন্তু নাহিদ সরে গেল না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। তোহা বি’রক্ত হয়ে বলল,
“পথ ছাড়বেন তো নাকি?

নাহিদ সরে দাঁড়াল। তোহা, অরিন চলে যেতে পা বাড়াল। নাহিদ ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলেই একটা অশ্রা’ব্য ভাষা কানে এলো। কেউ একজন বলল,
“নীল শাড়ি পড়া মেয়েটাকে দেখেছিস? মা’লটা কিন্তু সেই।

নাহিদ দাঁড়িয়ে পড়ল। আবারো পিছু ফিরে দেখল দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনই নাহিদদের ক্লাসের বখা’টে ছেলে। নাহিদের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। একবার চোখ উঠিয়ে তোহার দিকে তাকাল। তোহার গায়ে জড়ানো নীল শাড়িটা দেখে রাগটা আরেকটু বেড়ে গেল। ছেলে দুটোর সামনে দাঁড়িয়ে একটু ফর্সা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সমস্যা কি রোহান? মেয়ে দেখলেই তোর গায়ে চুল’কানি উঠে? মেয়েদেরকে সম্মান করতে জানিস না?

নাহিদের কথা শুনে রোহান খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। নাহিদের কথা শুনে যেন বেশ মজা পেয়েছে। হাসি থামিয়ে বলল,
“কেন? তোর গার্লফ্রেন্ডকে বলেছি বলে গায়ে লাগলো বুঝি?

“গার্লফ্রেন্ড পড়ে। গার্লফ্রেন্ড হওয়ার আগে ও একটা মেয়েকে। যেকোনো মেয়েকেই এই কথাটা বললে আমি প্রতি’বাদ করতাম। সময় থাকতে শুধরে যা। নয়তো ফল ভালো হবে না।

নাহিদ কথাটা বলার সাথে সাথেই রোহান নাহিদের শার্টের কলার চেপে ধরল। তীব্র ক্ষো’ভ নিয়ে বলল,
“শুধরাবো না। কি করবি তুই? মারবি? শরীরে স্প’র্শ করে দেখা তো।‌

দূর থেকে নাহিদ আর রোহানের কাহিনী দেখে ফাহিম আর রনি ছুটে আসতে লাগল। নাহিদ নিজের শার্টের কলারের দিকে তাকিয়ে আবার রোহানের দিকে তাকাল। যথাসম্ভব নিজেকে সংযত রেখে বলল,
“শার্টের কলারটা ছেড়ে দে।

নাহিদ কথাটা বলায় রোহান শার্টের কলারটা আরেকটু জোরে চেপে ধরল। ফাহিম রনি নাহিদের পাশে এসে দাঁড়াল। রোহান বলল,
“ছাড়বো না কলার। কি করবি তুই?

ফাহিম নাহিদের হয়ে বলল,
“কি করবে মানে? তুই নাহিদের শার্টের কলার ধরেছিস কেন? ছেড়ে দে কলার।

ওদের এমন অবস্থা দেখে বেশ কয়েকজন ভীড় জমিয়ে ফেলেছে। কানাঘুষো শুরু হয়েছে। তোহা অরিন স্টেজের দিকে যেতে গিয়েও কানাঘুষো শুনে পেছন ফিরে তাকাল। নাহিদ আর রোহানের এই অবস্থা দেখে অরিন বলে উঠল,
“কিরে ওখানে আবার কি হলো? নাহিদ ভাইয়ার সাথে কী মারামারি করছে নাকি?

তোহা নির্বি’কার ভ’ঙ্গিতে বলল,
“তুই যেখানে আমিও সেখানে। আমি কি করে বলবো ওখানে কি হচ্ছে?

অরিন তোহার হাতটা ধরে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“চল তো দেখে আসি।

ফাহিমের কথার জবাবে রোহান বলল,
“নিজে সাধু সেজে আমাকে জ্ঞান দিতে এসেছে। তার সঙ্গে আবার হুমকি। ওর শার্টের কলার ধরবো না তো কি আদর করবো?

নাহিদ এবার রোহানের শার্টের কলারটা চেপে ধরল। রাগী গলায় বলল,
“তুই খুব বাড়া বেড়েছিস। কখন থেকে কলার ছাড়তে বলছি কিন্তু তুই কথা কানেই নিচ্ছিস না। আমি কোনো ঝামেলা করতে চাইছিলাম না। তুই তো আবার ভালো কথার মানুষ না। শেষ পর্যন্ত আমাকে রাগিয়েই দিলি।

রোহান আবারো হেসে উঠল। চোখে স্প’ষ্ট ক্ষো’ভ দেখা যাচ্ছে। তাচ্ছি’ল্য করে বলল,
“তোকে রাগিয়ে দিয়েছি? তো? কি হয়েছে? তুই রাগে গেলেই আমার কি আর শান্ত থাকলেই আমার কি? রেগে গেছিস বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস?

রোহানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রোহানের গালে পরপর দুইটা থা’প্পড় বসিয়ে দিল নাহিদ। রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমি রেগে গেলে কি হয় দেখেছিস? নাকি আরো দেখার ইচ্ছে আছে? তুই দেখতে চাইলে আমার দেখাতে আপত্তি নেই।

তোহা অরিন এসে নাহিদের কথাগুলো শুনল। তোহা মনে মনে বলে উঠল,
“উনি রেগে গেছে বলে কাউকে এভাবে মারবেন?

নাহিদের কথাগুলো শুনে রোহান হিং’স্র বাঘের ন্যায় ক্ষে’পে গেল। তীব্র ক্ষো’ভে ফেটে পড়ল। রাগ সংবরণ করতে না পেরে নাহিদের গালে দুইটা থা’প্পড় বসিয়ে দিল। তারপর নাহিদকে বলল,
“থা’প্পড় কি তুই একাই দিতে পারিস? আমি পারি না?

নাহিদ এবার রোহানের গালে আবারো থা’প্পড় মারতে হাত উঠালো। ফাহিম, রনির মাঝে নাহিদকে থামানোর কোনো উদ্যোগ নেই। অ’গত্যা তোহা এগিয়ে গিয়ে নাহিদের উঠিয়ে রাখা হাতটা ধরে ফেলল। কন্ঠে তীব্র ক্ষো’ভ নিয়ে বলল,
“আপনি কি শুরু করেছেন? ভার্সিটিতে কি গু’ন্ডামি করার জন্য এসেছেন?

তোহা নাহিদকে আটকিয়ে দিয়েছে দেখে নাহিদের রাগটা আরো বেড়ে গেল। তোহাকে উদ্দেশ্যে করে রাগী গলায় বলল,
“আমি গু’ন্ডা না যে ভার্সিটিতে এসে গু’ন্ডামি করবো। কেন এমন করছি জানো? এই রোহান তোমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে ‘মা’লটা কিন্তু সেই’। তুমি মা’ল?

নাহিদের কথা শুনে তোহা বিস্ম’য়ে হত’ভম্ব হয়ে গেল। উনি আমার জন্য ওই ছেলেটাকে মারছিল। অথচ আমি? বোকার মতো কোনো কিছু না জেনেই উনাকে গু’ন্ডা বলছি। ছি ছি।

তোহা মনে মনে নিজেকে ধি’ক্কার জানাল। তারপর নাহিদকে বলল,
“আমাকে এসব বলেছে উনি?

নাহিদ মাথা নাড়ালো। অমনি রাগে সপাটে রোহানের গালে থা’প্পড় বসিয়ে দিল তোহা। রোহানের দিকে অ’গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ল’জ্জা থাকলে আর কখনো কোনো মেয়েকে এসব কথা বলবেন না। এসব কথা বলার আগে অন্তত দশবার এই থা’প্পড়ের কথাটা মাথায় রাখবেন।

রোহান অবাক দৃষ্টিতে তোহার দিকে তাকিয়ে রইল। তার থেকে অন্তত তিন-চার বছরের ছোট একটা মেয়ে তার গালে থা’প্পড় বসালো? এর থেকে ল’জ্জার আর কি হতে পারে।

তোহা নাহিদের দিকে তাকাল। নাহিদ তোহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। তোহা নাহিদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মাথা নিচু করে বলল,
“সরি।

নাহিদ তোহাকে আড়চোখে দেখে বলল,
“কোনো কিছু না জেনে আগে আগে ফটরফটর করবে না।

তোহা মাথা নাড়ালো। নাহিদ ফাহিম রনি সেখান থেকে চলে গেল। নাহিদের প্রতি তোহার আলাদা একটা সম্মান কাজ করল।

#চলব

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে