#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৫
#লেখিকা_লক্ষী_দেব
সারা ঘরময় পায়চারী করছে তোহা। রাগে তার শরীর জ্বল’ছে। ডান গালটা এখনো কিছুটা লাল হয়ে আছে। ভার্সিটিতে গিয়ে তার জীবনটা নাহিদের যন্ত্র’নায় অ’তিষ্ট হয়ে উঠেছে। নাহিদকে একটা শিক্ষা না দিলে হচ্ছে না। কি ভেবেছে কি ও? তোহাকে হারানো এতোই সোজা? উহু! তোহা এতো সহজে হারবে না। কিন্তু করবে টা কি? তোহার মাথায় কিছু আসছে না।
তোহা কিছু ভাবতে না পেরে অরিনকে ফোন লাগালো। অরিন যদি কোনো আইডিয়া দিতে পারে। রিং হওয়ার সাথে সাথেই অরিন কল রিসিভ করল। হয়তো ফোনটা হাতেই ছিল। তোহা সাথে সাথে বলে উঠল,
“এই অরিন একটা আইডিয়া দে তো। ওই নাহিদকে কীভাবে শায়ে’স্তা করবো বল তো?
তোহার কথায় অরিন প্রচ’ন্ড বি’রক্ত হলো। শুরু করেছে কি মেয়েটা? একটু কি শান্তিতে থাকতে মন চায় না। একটা না একটা কিছু নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকছে। অরিন বি’রক্তি নিয়ে বলল,
“আবার কিসের শায়ে’স্তা করবি? তোর কি একটু শান্তিতে থাকতে মন চায় না?
অরিনের কথায় তোহা অবাক হলো, বি’স্মিত হলো। কিসের শায়ে’স্তা মানে? অরিন কি সব ভুলে গেছে? তোহা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
“শা’য়েস্তা করবো না? তুই দেখিস নি আমাকে কীভাবে রঙ লাগিয়ে দিয়েছে? সকলে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিল। ওই নাহিদকে এমনি এমনি ছেড়ে দেব? এতো সহজে?
অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তোহাকে বুঝানোর জন্য বলে উঠল,
“এখানে উনার দোষটা কোথায় তোহা? তুই তো আগে উনার বাইকে সেন্টার ফ্রুট লাগিয়ে দেয়েছিস। উনি সেটা বুঝতে পেরে তোকে রঙ লাগিয়ে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে ঝামেলা করার কি দরকার?
তোহার অবাকতা আরেক ধাপ বেড়ে গেল। অরিন আবারো ওই ছেলেটার পক্ষ নিয়ে কথা বলছে? তোহা ক্ষানিকটা রাগ নিয়ে বলল,
“তুই কি আমার ফ্রেন্ড নাকি ওই নাহিদের? আমার পক্ষে কথা না বলে তুই উনার পক্ষে কথা বলছিস।
অরিন বি’স্মিত হয়ে বলল,
“আরে এখানে পক্ষ-বিপক্ষের কি আছে? যেটা সত্যি আমি তো সেটাই বললাম। আমি কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলিনি।
অরিনের কথাটা মানতে তোহা নারাজ। অরিন ওই নাহিদের পক্ষেই কথা বলছে। তাইতো বলে উঠল,
“উনার পক্ষে কথা না বললে আমাকে একটা আইডিয়া দে। উনাকে কীভাবে শায়ে’স্তা করবো সেটা বল? নয়তো আমি মনে করবো তুই উনার পক্ষে কথা বলছিস।
“কি অ’দ্ভুত! আমি নাহিদ ভাইয়ার পক্ষে কথা বলছি না, এটা প্রমাণ করতে আমাকে আইডিয়া দিতে হবে? তাও আবার যেই সেই আইডিয়া না। পুরাই অসৎ আইডিয়া। আমি পারবো না দোস্ত। আমায় ক্ষমা কর। তোর এই সব আজগুবি কান্ড কারখানা তুই-ই কর। আমাকে এর মধ্যে জড়াচ্ছিস কেন?
তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“তোকে জড়াবো না তো কাকে জড়াবো? আমার কী আরো দশটা ফ্রেন্ড আছে যে ওদের কাছে আইডিয়া চাইব। আমার একটা মাত্র ফ্রেন্ড হচ্ছিস তুই। আমি তো তোকেই বলবো।
অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তোহাকে আশ্বা’স দিয়ে বলল,
“হুট করে আইডিয়া চাইলে কীভাবে দেব? আগে তো ভাবতে হবে কি করা যায়। তুই কল রাখ। আমি ভেবে দেখছি কি করা যায়। তুই ও ভাবতে থাক।
অরিনের কথা মতো তোহা কল কেটে দিল। ভাবতে লাগলো কি করা যায়। কিন্তু ভাবনা শেষে ফলাফল শূন্য। তোহা আর ভাবতে পারছে না। অরিন কিছু ভেবে পেলে পাবে, না পেলে কিছু করার দরকার নেই।
তোহার ভাবনার মাঝেই অরিন কল দিল। তোহা রিসিভ করে কানে দিলে অরিন বলল,
“শোন একটা আইডিয়া পেয়েছি। তবে কতটুকু কাজে দিবে বলতে পারছি না। কারন এটার জন্য যা লাগবে আমাদের কাছে তা নেই।
তোহা অবাক ক’ন্ঠে জিঙ্গেস করল,
“কি এমন লাগবে?
“নাহিদ ভাইয়ার ছবি। ভাইয়ার একটা ছবি কাগজে ছাপিয়ে দিয়ে ভার্সিটির দেয়ালে লাগিয়ে দিবি। সেই ছবির নিচে লিখা থাকবে। “নাহিদ আহমেদ প্রেম করার জন্য পাত্রী খুঁজছে , কিন্তু কোনো মেয়ে তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। কেউ যদি উনার সাথে প্রেম করতে আগ্রহী হোন তাহলে সরাসরি উনার সাথে যোগাযোগ করুন।
তোহা উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“সেই তো। উনার ছবি আনা কোনো ব্যাপার হলো। ওনার ফেসবুক আইডিতে নিশ্চয়ই আছে। আচ্ছা রাখ আমি খুঁজে দেখছি।
অরিন কল কেটে দিল। তোহা ফেসবুকে গিয়ে প্রথমে বাংলায় নাহিদ আহমেদ লিখে সার্চ দিলেন। অনেক গুলো আইডি এলো। কিন্তু তোহার কাঙ্ক্ষিত নাহিদের আইডি এলো না। তোহা আবারো ইংরেজিতে সার্চ দিল। এবার সবার প্রথমেই নাহিদের আইডি চলে এলো। আইডি পাবলিক করা। তোহার মুখে হাসি ফুটল। নাহিদের ছবির স্ক্রিন’শর্ট নিয়ে বলল,
“মিস্টার নাহিদ আগামীকালের জন্য রেডি থাকুন।
_______________
ভার্সিটিতে আসা মাত্র নাহিদ খেয়াল করল কিছু কিছু মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি অ’দ্ভুত তাদের মুখভঙ্গি। নাহিদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। এদের হাবভাব তার কাছে ভালো ঠেকছে না। এদিকে রনি, ফাহিম ও এখনো আসেনি। একটা মেয়ে নাহিদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। মেয়েটা সম্ভবত ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। নাহিদ মেয়েটাকে ডাক দিল। মেয়েটা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো। ল’জ্জায় মুখটা নুইয়ে রেখেছে। নাহিদ কড়া গলায় বলল,
“এই মেয়ে সমস্যা কী? আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে হাসছো কেন?
মেয়েটা আরেকটু ল’জ্জা পেল। ল’জ্জায় তার গাল দুটো খানিকটা লাল হয়ে গেল। গলার স্বর নিচে নামিয়ে বলল,
“আপনাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। অন্য কেউ আপনাকে পাত্তা না দিলেও আমি আপনাকে পাত্তা দেবে।
মেয়েটার কথার মানে নাহিদ বুঝতে পারল না। ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কি বলছো এই সব? তোমার মাথা ঠিক আছে? যত্ত’সব উ’দ্ভট কথাবার্তা।
মেয়েটা মুখটা কালো করে ফেলল। জবাব দেওয়ার আগেই সেখানে রনি, ফাহিম এসে হাজির হলো। নাহিদের সামনে মেয়েটাকে দেখে মেয়েটার উদ্দেশ্যে রনি বলল,
“আপু তুমি একটু যাও তো। আমরা নাহিদের সাথে একটু কথা বলবো।
মেয়েটা মাথা নেড়ে চলে গেল। চলে যাওয়ার সাথে সাথেই ফাহিম জোরে নাহিদের মাথায় গা’ট্টা মারল। নাহিদ মাথাটা ঢলে ফাহিমের দিকে ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। ফাহিম বলে উঠল,
“শা’লা এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? কেউ তোমায় পাত্তা দেয় না বলে? প্রেম করার এতো শখ?
নাহিদ ফাহিমের কথার মানে বুঝতে পারল না। তাই বলল,
“কিসের পাত্তা? কিসের প্রেম?
এবার ফাহিম উত্তর না দিয়ে রনি উত্তর দিল,
“তোর ছবি দেয়ালে লাগিয়ে নিচে লিখে রেখেছে ‘নাহিদ আহমেদ প্রেম করার জন্য পাত্রী খুঁজছে , কিন্তু কোনো মেয়ে তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। কেউ যদি উনার সাথে প্রেম করতে আগ্রহী হোন তাহলে সরাসরি উনার সাথে যোগাযোগ করুন।
নাহিদকে অবি’শ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহিম বলল,
“বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে চল আমার সাথে।
নাহিদ দ্বি’মত করল না। রনি আর ফাহিমের সাথে চলে গেল। গেইট পেরিয়ে দেয়ালের দিকে তাকাতেই তার চোখ দুটি বড় বড় হয়ে গেল। সত্যি তো। অনেক গুলো মেয়ে এখানে ভিড় জমিয়েছে। নাহিদকে দেখা মাত্রই কানাঘুষো শুরু করেছে। কেউ কেউ হাসছে। নাহিদ আজকে তাদের কাছে হাসির পাত্র।
রাগে নাহিদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। কাউকে কিছু না বলে বড় বড় পা ফেলে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল। তোহাদের ক্লাসের ভেতরে ঢুকে দেখল তোহা, অরিন কিছু একটা নিয়ে হাসছে। নাহিদের রাগটা আরেকটু বেড়ে গেল। তোহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তোহার হাতটা ধরে টান দিয়ে দাঁড় করালো। তোহার সাথে অরিনও দাঁড়ালো। তোহা প্রশ্ন করল,
“সমস্যা কি? আমার হাত ধরেছেন কেন? ছাড়েন আমার হাত।
নাহিদ কোনো জবাব দিল না। তোহার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। তোহা বারবার হাত ছাড়তে বলছে। কিন্তু নাহিদ শুনছেই না। তোহার পিছু পিছু অরিন ও গেল। নাহিদ তোহাকে ভার্সিটির বাহিরে নিয়ে গিয়ে হাত ছেড়ে দিল। ছবিটা দেখিয়ে বলল,
“এইটা কি?
তোহা কিছু জানে না ভাব করে বলল,
“ওমা তাইতো। কি এটা? আপনার বুঝি প্রেম করার এতো ইচ্ছে? শেষমেষ কারো পাত্তা না পেয়ে কাগজে ছাপিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে দিয়েছেন। আহারে বেচারা। প্রার্থনা করি এবার যদি প্রেমটা হয়।
নাহিদ বুঝতে পারল তোহা যে এই কাজটা করেছে সেটা কিছুতেই স্বীকার করবে না। তাই নিজের রাগটাকে সংবরন করে বলল,
“আমাকে এভাবে ভাইরাল করে দিলে এর জন্য তো তোমাকে ইয়া বড় একটা সারপ্রাইজ দিতে হবে বউ। যেই সারপ্রাইজ পেয়ে তুমি চমকে যাবে, থমকে যাবে।
তোহা হেসে উঠল। মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“কি করবেন দেখা যাবে?
#চলবে