অবিবাহিত বউ পর্ব-০২

0
867

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ২
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তোহা চমকে পেছনে তাকাল। তোহার সাথে সাথে অরিন ও পেছনে ফিরল। একটা গাছের নিচে দুটো চেনা মুখ দেখেই বি’রক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে এলো তোহার।

ভার্সিটিতে একটা গাছের নিচে বাইকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল নাহিদ। নাহিদের পাশেই ফাহিম দাঁড়িয়ে ছিল। তখনই গেইটের দিকে তাকিয়ে ফাহিমের চোখ আটকে গেল। ফাহিম গেইটের দিকে চোখ রেখেই উ’দ্বিগ্ন কন্ঠে নাহিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“নাহিদ দেখ রেস্টুরেন্টের মেয়ে দুইটা না?

নাহিদ চোখ তুলে তাকাল। মুহূর্তের মধ্যেই মুখে বি’রক্তির ভাঁজ পড়ল। কিন্তু পরক্ষনেই মুখে ফুটে উঠল দুষ্টুমির রেখা। নাহিদ চেঁচিয়ে ডেকে উঠল,
“এই বউ দাঁড়াও।

তোহা পেছন ফিরে তাকাতেই নাহিদ চোখ টিপ মারল। বি’স্ময়ে হত’ভম্ব হয়ে তোহার মুখ হা হয়ে গেল। অরিন চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“তোর বর দেখছি মারা’ত্মক লেভেলের অস’ভ্য। সকলের সামনে চেঁচিয়ে বউ বলছে তার উপর আবার চোখ টিপ মারছে।

অরিনের কথাটা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করল। তোহার থিতিয়ে থাকা রাগটা আরেক ধাপ বেড়ে গেল। একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সকলে উৎসুক চোখে চেয়ে আছে। তোহা সেই দিকে পাত্তা না দিয়ে অরিনের মাথায় গা’ট্টা মেরে বলল,
“ওই ব্যা’টাকে আরেক বার আমার বর বললে লাথি মেরে ভার্সিটি থেকে বের করে দেব। বেয়াদব মহিলা।

অরিন মুখ ভেং’চি দিল। তোহার মতো করে তোহার মাথায় গা’ট্টা মেরে বলল,
“যত দোষ নন্দ ঘোষ। তুই যখন অচেনা ছেলেটাকে বর বললি, আবার ছেলেটা যে এখন তোকে বউ বলল তাতে কিছু না। আমি বললেই সব দোষ আমার। হুহ।

অরিনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তোহা কিছু বলার মতো পেল না। চোখ ঘুরিয়ে নাহিদের দিকে তাকাল। নাহিদ আর ফাহিম ইতিমধ্যে ওদের কাছাকাছি চলে এসেছে। তোহা বুকে দুহাত ভাঁজ করে কড়া গলায় বলল,
“সমস্যা কি আপনার? বউ বউ করে চেঁচাচ্ছেন কেন? আমি আপনার কোন জ’ন্মের বউ?

নাহিদ ফাহিমের কাঁধে হাত রাখল। ভ্রুঁ কুটি করে আফসোসের স্বরে বলল,
“সেকি বউ। এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? কালকেই তো সম্পর্ক হলো। আমরা দুজন বর-বউ। ইশ। আমি তো জানতাম না আমার বউটা এতো মনভোলা। শেষমেষ নিজের বরকেই ভুলে গেল।

তোহা নাহিদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। চোখ মুখে ফুটে উঠেছে তী’ব্র ক্ষো’ভ। নাহিদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“একটু বেশি নাটক করে ফেলছেন না মিস্টার? আপনি জানেন আমি ইচ্ছে করে আপনাকে বর বলিনি। তাও আমার পেছনে লাগছেন। কেন?

নাহিদ তার মুখটা এগিয়ে আনলো। তোহার মুখের দিকে ঝুঁকে বলল,
“আমাকে কথাটা মুখে বললেই তো হয়ে যেত। কিন্তু না তুমি তো আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছো। আমি এতো সহজেই ভুলে যাব? বউউউ…!

বউ কথাটা নাহিদ সুর টেনে বলল। তোহা গরম চোখে তাকিয়ে তর্জনী আঙুলটা উঠিয়ে বলল,
“দেখুন মিস্টার আ…..

তোহা কথাটা শেষ করার আগেই নাহিদ আরেকটু এগিয়ে আসল। তোহার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির ছলে বলল,
“কী দেখাবে বউ? তুমি যা দেখাতে চাও দেখাও। আমি মন, প্রান, জান দিয়ে দেখব।

নাহিদের কথা বলার ধরন দেখে ফাহিম, অরিন হেসে ফেলল। ওদের সাথে নাহিদ ও তাল মেলালো। অরিনকে হাসতে দেখে তোহা কড়া দৃষ্টিতে তাকাল। অরিন সাথে সাথে হাসি থামিয়ে দিল। তোহা নাহিদের দিকে তাকাতেই মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো। বি’রক্ততে মুখ থেকে একটা শব্দ বের হলো তোহার,
“অস’ভ্য।

নাহিদ ফাহিমের দিকে তাকাল। অবুঝ শিশুর মতো মুখ ভ’ঙ্গি করে বলল,
“বন্ধু আমায় অস’ভ্য বলছে। আমার বউ আমায় অস’ভ্য বলছে। কোনো অস’ভ্যতা না করতেই অস’ভ্য বলছে।

ফাহিম নাহিদের সাথে তাল মেলালো। ভারী প্রতিবাদী সুরে বলে উঠল,
“এটা ঘোর অন্যা’য় বন্ধু। আমি এটা মেনে নেব না। আমার ইনো’সেন্ট বন্ধুকে অস’ভ্য বলা। অস’ভ্যতা না করতেই যখন তোকে অস’ভ্য বলছে তখন তুই অস’ভ্যতা করিয়ে দেখিয়ে দে বন্ধু।

ফাহিমের কথায় নাহিদ চোখ বড় বড় করে তাকাল। ফাহিমকে একটা থা’প্পড় দিয়ে বলল,
“শা’লা তুই নিজেই একটা অস’ভ্য।

ফাহিম ভ্রুঁ কুটি করে বলল,
“এই জন্যই কারো উপকার করতে নেই। উপকারের বদলে মানুষ থা’প্পড় আর গালি দেয়।

রনি তিনটা কোকের বোতল হাতে নিয়ে এলো। তোহা আর অরিনের মুখ তার চোখে পড়ল না। নাহিদ আর ফাহিমের উদ্দেশ্যে বলল,
“কীরে তোরা এই খানে কি কান্ড করছিস? সকলে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সার্কাস দেখাচ্ছিস নাকি?

রনি কথাগুলো বলতে বলতে নাহিদ আর ফাহিমের হাতে একটা একটা কোকের বোতল দিল। ফাহিম কোকের বোতলটা হাতে নিয়ে রনিকে বলল,
“ভার্সিটিতে দাঁড়িয়ে বউ বউ করে চেঁচালে সকলে তাকিয়ে থাকবে না?

ফাহিমের কথাটা রনির ঠিক বোধগম্য হলো না। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে এলো। ফাহিমকে প্রশ্ন করল,
“বউ? কার বউ? এখানে আবার বউ বউ করে চেঁচালো কে?

ফাহিম কোকের বোতলের ছিপিটা খুলল। চোখ দিয়ে তোহা আর অরিনকে ইশারায় দেখিয়ে কোকের বোতলের কোক মুখে ঢেলে দিল। ফাহিমের ইশারায় রনি ঘাড় ঘুরিয়ে তোহা আর অরিনকে দেখে চমকে উঠল। নাহিদকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
“আরে বাস মামা। রেস্টুরেন্ট থেকে অচেনা বউকে ভার্সিটি পর্যন্ত টেনে এনেছিস। এতো ভালোবাসা কোথায় রাখিস?

“আমি না রে মামা। আমার বউ আমাকে এতো ভালবাসে। তাইতো আমার টানে টানে ভার্সিটি পর্যন্ত চলে এসেছে। আমার বউটা আমায় অনেক ভালোবাসে। তাই না বউ?

অরিন এবার মুখ খুলল। তোহার পক্ষ নিয়ে বলল,
“ভাইয়া আপনারা বেশি বেশি করছেন। তোহা এবার অনেকটা রেগে যাচ্ছে। আপনাদের এবার থামা উচিত। এতোটা মজা করা উচিত নয়।

ফাহিম এবার বলে উঠল,
“সেকি বেয়াইন সাহেবা। সবে তো মজা করা শুরু। এখনই থামিয়ে দিতে বলছেন? এখন থামিয়ে দিলে কীভাবে হবে?

অরিন বুঝে গেল ওদের বলে লাভ হবে না। তাই চুপ করে রইল। তোহা দুচোখ বন্ধ করে শ্বা’স নিল। নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
“দেখুন অনেক হয়েছে। আমি যেমন আপনাকে বর বলে পরিচয় দিয়েছিলাম, আপনিও ভার্সিটিতে প্রথম দিনেই আমাকে সকলের সামনে চেঁচিয়ে বউ বলে ডেকেছেন। হিসাব বরাবর। এবার থেকে আপনি, আমি দুজন দুপথে।

তোহার কথাটা নাহিদ পাত্তাই দিল না। উল্টো বলে উঠল,
“এতো সহজে তো তোমায় ছেড়ে দিব না বউ। এই ভার্সিটিতে যখন এসেই পড়েছ তখন তো আমার জ্বা’লা স’হ্য করতেই হবে।

তোহার রাগটা বেড়ে গেল। প্রচন্ড বি’রক্তি নিয়ে বলে উঠল,
“অ’সহ্য!

তোহার কথা বলার ভ’ঙ্গি দেখে নাহিদ, ফাহিম, রনি হেসে উঠল। তোহা ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অরিনের হাত ধরে বলল,
“চল।

তোহা অরিন দুজনই ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল। ওরা ক্লাসের সামনে আসা মাত্রই একটা মেয়ে এসে ওদের সামনে দাঁড়াল। ফর্সা গোলগাল দেখতে মেয়েটা। চোখে চশমা দেওয়া। হাত দুটো বুকে ভাঁজ করা। চেহারায় রাগী রাগী ভাব। মেয়েটা এভাবে ওদের সামনে দাঁড়ানোর মাহাত্ম্য কেউই বুঝতে পারল না। একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। তোহা ভ্রুঁ নাচিয়ে ইশারায় অরিনকে বলল,
“কী ব্যাপার?

অরিন মাথা নাড়ালো। যার অর্থ সে কিছুই বুঝতে পারছে না। তখনই মেয়েটা ভারী গলায় বলে উঠল,
“তুমি কি নাহিদের গার্লফ্রেন্ড?

মেয়েটার কথা তোহা বুঝতে পারল না। ভ্রুঁ কুঁচকে জিঙ্গেস করল,
“নাহিদ কে?

তোহার কথায় মেয়েটা হু হা করে হেসে উঠল। তোহা অরিন অবাক চোখে চেয়ে রইল। মেয়েটার হাসার কারন তাদের কাছে অ’স্পষ্ট। মেয়েটা এবার বি’দ্রুপ করে বলল,
“ওমা চিনতে পারছো না বুঝি? একটু আগেই তো তোমাকে বউ বউ বলে চেঁচিয়ে ডাকল। নাকি ইতিমধ্যে জেনে গেছো যে আমি নাহিদকে পছন্দ করি। তাই ভয়ে চিনে ও না চেনার ভান করছো।

মেয়েটার কথায় তোহা হেসে উঠল। মেয়েটা চোখ ছোট ছোট করে চাইল। তোহা বলল,
“ওই ফালতু ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড হবো আমি? মেয়েদের মতো ঝগড়া করা যার স্বভাব তার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।

তোহার কথায় মেয়েটা কিছুটা স্ব’স্তি পেল। কিন্তু নাহিদের ব্যাপারে বলা কথাগুলো তাকে রাগিয়ে দিল। তোহাকে কঠিন গলায় বলল,
“তুমি কিন্তু নাহিদকে অপমান করছো।

“ওপস সরি। আমার তো জানা ছিল না উনাকে কিছু বললে তোমার গায়ে লাগবে। কিন্তু কি করব বল? আমি আবার মুখের উপর সত্যি কথা না বলে থাকতে পারি না। তাই তোমার গায়ে লাগলে ও আমার কিছু করার নেই।

মেয়েটাকে পাশ কাটিয়ে তোহা আর অরিন চলে গেল। মেয়েটা অ’গ্নি দৃষ্টিতে তোহার যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। প্রথম আলাপেই যেন শুরু হয়ে গেল শ’ত্রুতা।

তোহা ক্লাসের ভিতরে যাওয়ার পর ও আরো কয়েকজনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সবার একই প্রশ্ন। তোহা নাহিদের গার্লফ্রেন্ড কিনা। ভার্সিটির প্রথম দিনটা যতটা আনন্দদায়ক হবে ভেবেছিল তার চেয়ে বেশি দুর্বি’ষহ ঢেকল তোহার কাছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে