অবাধ্য অনুভূতি পর্ব- ০৫ | Bangla Heart touching sad story

0
2250

@অবাধ্য অনুভূতি
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_আমিশা_নূর

“ভূমি,সব ঠিক আছে?”
“ভূমিকা না।সমুদ্র!সমুদ্র হক।”
“স..সমুদ্র?”

সূচনা’র কপালে বিন্দু ঘাম দেখা দিলো।সমুদ্রের সাথে এখন কোন মুখে কথা বলবে?আর সমুদ্র ভূমিকা’র নাম্বার থেকে কল করছে কেনো?সূচনা কল কেটে দিতে যাবে তখন সমুদ্র বললো,”খবরদার কল কাটবে না।সূচনা তুমি আমার রাগ সম্পর্কে ভালোই জানো।”

এ কথায় সূচনা আর কল কাটার সাহস পেলো না।সমুদ্র ভূমিকা’র দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখলো ভূমিকা মুখ গোমড়া করে মাথা নিচু করে আছে।সমুদ্র মোবাইল নিয়ে বেলকোনিতে চলে গেলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

“তুমি আমাকে ঠকালে কেনো?ভূমিকা’র সাথে আমার বিয়ে কেনো দিলে?কোন অধিকারে?”
“ভূমিকা’র সাথে তোমার বিয়ে হওয়ার কথা প্রথম থেকেই ছিলো।তোমার পরিবারের সবাই ভূমিকা’কে দেখেছে।”
“একদম আমার পরিবারের দোষ দিবে না।উনাদের তুমি ভূমিকা’কে দেখিয়েছো তাই ভূমিকা’কে পছন্দ করেছে।”

নিজের চালাকি ধরা পড়ায় সূচনা চুপ হয়ে গেলো।তখন সমুদ্র বললো,”এমনটা কেনো করলে তুমি?”
“যা হবার হয়ে গেছে।এখন তোমার ওয়াইফ ভূমি।আমি তোমার শালিকা হয় শুধু।”
“জাস্ট শাট আপ।একদম আমাকে জ্ঞান দিবেনা।তুমি শুধু আমার না ভূমিকা’র লাইফও নষ্ট করেছো।”
“মোটেও না।ভূমিকা তোমাকে ভালোবাসে আর তোমাকে….”
“ওয়েট ওয়েট।কী বলছো তুমি?”
“যা বলছি ঠিকই বলছি।আর তুমিও ভূমিকাকে ভালোবাসো আমাকে না।”
“হুয়াট?আর ইউ গন মেড?তোমার সাথে রিলেশন ছিলো আমার।”
“যার সাথে রিলেশন থাকে তাকেই যে ভালোবাসতে হবে এমন কোনো কথা না।বাই”
“হ্যালো হ্যালো…”

সূচনা কল কেটে দিলো।রেগে গিয়ে সমুদ্র মোবাইল ফোন ভেঙ্গে ফেললো।ততক্ষণে ভূমিকা এসে দেখে তার ফোন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে আছে।

ভূমিকা ভয় পেয়ে মুখে হাত দিলো।সমুদ্রের দৃষ্টি ভূমিকা’র দিকে গেলো।সে বিদ্যুৎ-এর গতিতে দৌড়ে এসে ভূমিকা’কে দেয়ালের সাথে আটকে ফেললো।কর্কশ স্বরে বললো,”সূচনা এমন কেনো করছে?জাস্ট টেল মি।টেল মি ডেম ইট।”

ভূমিকা’র মুখ থেকে টু শব্দও বের হচ্ছে না।সমুদ্র রাগের মাঝে খেয়াল করলো ভূমিকা ভয়ের ছুটে কাঁপছে।তখন তার রাগ কমে এলো।সমুদ্র কে সবাই ভয় পেলেও ভূমিকা’র মতো করে কেউ ভয় পায় না।এক পলক ভূমিকা’র দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চোখ-মুখ বন্ধ করে কাঁপছে।সমুদ্র ভূমিকা’র সামনে থেকে সরে গেলো।
.
কনকনে শীতের মধ্যে হাত-পা গুটিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে ভূমিকা।সমুদ্র তাকে বিছানায় জায়গা দেইনি যার জন্য তাকে নিচে শুতে হলো।আর না তাকে জড়ানোর জন্য কম্বল দিলো।ভূমিকা চোখ বন্ধ করতে আবাশ পেলো বাল্ব বন্ধ করা হয়েছে।ওমনি ভূমিকা লাফিয়ে বললো,”না না,প্লিজ প্লিজ লা..লাইট অফ করবেন না।”

মৃদুস্বরে চিৎকার শুনে সমুদ্র লাইট জ্বালালো।সমুদ্র জানে ভূমিকা অন্ধকারে ভয় পাই।শুধু ভয় পায় না যথেষ্ট ভয় পায়।পুরা একটা রাত ভূমিকা-সমুদ্র বন্ধ রুমে আটকা পড়েছিলো।না ছিলো সেই রুমে কোনো বিদ্যুৎ না বেরোনোর রাস্তা।

সমুদ্র ফ্যাশন’র কিছু কাজের জন্য ভূমিকা’র কলেজ’এ যেতে হয়েছিলো তার বাবা’র সাথে।সমুদ্র তাদের কলেজ ঘুরতে ঘুরতে একসময় স্টোর রুমে ঢুকে পরে।সে স্টোর রুমে ঢুকার ক্ষানিকের মধ্যে দরজা বন্ধ হয়ে যায়।তখন সমুদ্র রুমের আশপাশ খেয়াল করে দেখে একটি মেয়ে পুরাতন জিনিসের মধ্যে কিছু একটা খুঁজছে।তাকে দেখে সমুদ্র বলে উঠে,”এই মেয়ে,তুমি স্টোর রুমে কী খুঁজছো?”

হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে ভূমিকা ভয় পেয়ে যায়।পেছন ফিরে দেখে প্রায় ৬ফিটের মতো লম্বা একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।ভূমিকা তাকে দেখে চিৎকার করতে যাবে তখন মূর্তিটি তার মুখ চেপে ধরে ধমক দিয়ে বললো,

“স্ট্রেঞ্জ,চিৎকার করছো কেনো?এখানে কী করছো?”
“ওও,একচুয়ালি কলেজের বড় ভাই বললো স্টোর রুমে নাকি তাদের গিটার আছে।আমাকে বললো ওটা খোঁজে তাদের কাছে নিয়ে যেতে।তাই…”
“আর অমনি তুমি তাদের কথা মেনে নিলে?অদ্ভুত তো,এই এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড,তুমি মিস.বকবক না?সেদিন আমার শার্ট নষ্ট করলে?তোমার সাথে তো এমনটা হওয়ারই ছিলো।ভালো হয়েছে।এখন স্টোর রুমে পড়ে থাকো।”

সমুদ্রের কথা শুনে ভূমিকা ভড়কে গেলো।তার সাথে তো আজই দেখা হলো মানুষটার।তাহলে সে কখন বকবক করলো?বকবক শব্দটা শুনতে সূচনার নাম মাথায় এলো।

ভূমিকা বুঝতে পারলো সমুদ্র সূচনার কথা বলছে।যখন সে সমুদ্রকে সবটা বুঝাতে যাবে তখন সমুদ্র তার তিল চিহ্ন’টা উঠানোর চেষ্টা করলো।তাতে ভূমিকা অনেকটা ব্যাথা পেলো।ব্যাথার ছুটে তার চোখে জল চলে এলো।

অনেক চেষ্টার পরও যখন ভূমিকা’র তিল চিহ্ন উঠাতে পারলো না তখন সমুদ্র বুঝলো এইটা তার আসল তীল।তাহলে গতদিনে দেখা মেয়েটি কে?সমুদ্র আমতা আমতা করে বললো,”ও আসলে একটা মেয়ে গতদিন আমার….”
“ও আমার বোন ছিলো সূচনা,আমি ভূমিকা।ও একটু ফাজিল..”
“শুধু একটু না বড্ড ফাজিল।”

সমুদ্রের বলার স্টাইল দেখে ভূমিকা ফিক করে হেসে দিলো।ভূমিকা’র হাসিতে সমুদ্রও মুচকি হাসলো।সেদিন শত চেষ্টা করেও তারা স্টোর রুমের দরজা খুলতে পারেনি।রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে অন্ধকারও বাড়তে লাগলো।সেই সাথে ভূমিকা’র ভয়ও।

তখন সমুদ্র তার পকেটে থাকা লাইটার জ্বালিয়ে রেখেছিলে।তাতে ভূমিকা’র ভয় একটুখানি কমে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।কিন্তু সমুদ্র সারারাত জেগে ভূমিকা’র পাশে ছিলো।তার যত্ন নিয়েছিলো।মূলত সেদিনই ভূমিকা সমুদ্রের প্রেমে পড়েছিলো।

অতীতের পাতা থেকে বেরিয়ে ভূমিকা বললো,”প্লিজ লাইট’টা অন করা থাক।আপনি তো জানেন আমি অন্ধকারে কতোটা ভয় পায়।”

ভূমিকা’র করুণাময় কথা শুনে সমুদ্রের মায়া হলো।সে বাল্বটা অন রেখে বিছানায় ঘুমাতে আসলো।চোখের পাতা লেগে আসতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো সূচনার চেহেরা।সমুদ্র ভাবতে লাগলো সূচনার সাথে তার প্রেমটা কীভাবে শুরু হয়েছিলো।

সেদিন সমুদ্রের তার বাবা-চাচা’র অফিসের প্রথম দিন।সম্পূর্ণ ফর্মাল ড্রেসে সে বেরিয়েছে।সমুদ্র নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে আসছিলো।তখন মাঝপথে এক তরুণী’র দেখা পেলো।সেই তরুণী তাকে গাড়ি থামাতে বলে বললো,”সামনে আমার কলেজ মামা,যাওয়া যাক।”

সমুদ্রের উত্তরের অপেক্ষা না করে মেয়েটি গাড়িতে উঠে পরলো।এমন কান্ডে সমুদ্রের রাগ হলো।কিন্তু অপরিচিত কার সামনে সে রাগ দেখায় কম।তাই চুপচাপ বিষয়টা হজম করলো।কিন্তু হজম করা মনে হয় মেয়েটার সহ্য হলো না।মেয়েটি সমুদ্রের উদ্দেশ্য বললো,”আচ্ছা মামা, আপনি এতো হ্যান্ডসাম হওয়া সত্ত্বেও গাড়ি চালাচ্ছেন কেনো?”

সমুদ্র প্রতিত্তোরে বলতে যাবে তখন মেয়েটা নিজে নিজে বললো,”ওহ হো,হ্যান্ডসাম ড্রাইভার দেখলে মেয়েরা গাড়িতে উঠবে বেশি।তাই না?আপনি তো কম ছ্যাঁচড়া নন মামা।”

সমুদ্র এবারে যথেষ্ট রেগে গেলো।কোন দিক দিয়ে মনে হচ্ছে তাকে ড্রাইভার?মেয়েটা কী জোক্স করছে?আর না জেনে শুনে ছ্যাচড়া বলছে?

সমুদ্রের রাগে বললো,”লিসেন ইউ…”
“উফ!এক সেকেন্ড আমি কলটা রিসিভ করি।”

সমুদ্রের কিছু বলার আগেই মেয়েটার মোবাইলে কল এলো।মেয়েটি কল রিসিভ করতে লাফিয়ে উঠলো।তারপর উচ্চস্বরে বললো,”ওয়াও গ্রেট!কংগ্রাচুলেশনস ইয়ার।আমি খালামনি হলাম,ইশ!আমার যে কী খুশি লাগছে।আজকে যদি আমার টেস্ট না থাকতো না তাহলে দৌড়ে তোর কাছে চলে যেতাম।”

মেয়েটির কথা বলা বন্ধ হলো।তখন ও পাশের ব্যাক্তি কথা বলছে।মেয়েটি আবারো বললো,”গাড়িতে ইয়ার,পেঁচা মুখ মার্কা একটা ড্রাইভার সাথে আছে।উহু,দেখতে সুন্দর না।”

সমুদ্র ভীষণ রেগে গেলো।তাকে পেঁচা বলা হচ্ছে?সামনে জ্যাম না থাকা সত্ত্বেও সমুদ্র বারবার হর্ণ দিতে লাগলো।বিরক্ত হয়ে মেয়েটি কল কেটে দিয়ে শাসিয়ে বললো,”দেখছেন না কথা বলছি?সামান্য সেন্স কী আপনার মধ্যে আছে মিস্টার খাম্বা ম্যান?”
“হুয়াট?খাম্বা?”
“খাম্বা নয়তো কী?বিরক্তিকর পার্সন..”
“নিজে কী হ্যা? মিস.বকবক?”
“ইউ,…কথা বলায় বেকার.”

ব্যাগ থেকে কলম বের করে মেয়েটি নাড়াতে লাগলো।সাথে বিড়বিড় করছে।তখন ভুলক্রমে কলমের কালি সবটা বের হয়ে সমুদ্রের সাদা শার্টে আর মুখে হয়ে যায়।রাগের সীমা ছাড়িয়ে সমুদ্র বলে,”জাস্ট গেট আউট!”

সূচনা বিদ্যুৎের গতিতে দৌড়ে পালালো।

বর্তমানে সমুদ্র হতাস আছে।পুরাতন স্মৃতি মনে পড়তে মনটা কেমন যেনো হয়ে যায়।সমুদ্র পরে সূচনার থেকে জানতে পেরেছিলো এটা একটা ডেয়ার ছিলো।আর কিছুদিন পর সূচনা সরিও বলে।

সমুদ্র তো ভালোবাসতো সেদিনের ছন্দ পাঠানো মেয়েটাকে।আর সে জানতেও পারে মেয়েটা সূচনা ছিলো।সূচানাই বলেছিলো তাকে।তাহলে ভূমিকা মাঝখানে কখন আসলো?ভূমিকা’কে কখন ভালোবাসলো?হাজারে প্রশ্ন মাথায় নিয়ে সমুদ্র ঘুমের রাজ্য পাড়ি জমালো।


ভূমিকা অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে প্রেম নামের ছোট বাচ্চাটা তার দিকে চেয়ে আছে।ভূমিকা তখন বাচ্চাটার কাছে গিয়ে বললো,”কেমন আছো পিচ্চু?”
“আমি পিত্তু না।পেম!”
“কী পেম?”
“না পেম।”
“পেম?”
“দেত,তুমি পত্তা,কিত্তু দানো না।”

প্রেমের কথা শুনে ভূমিকা হেসে ফেললো।সকাল থেকে তাদের বাড়িটা সাজানো হচ্ছে।তাই বাড়ির সবাই ব্যাস্ত।সকালে সূচনা আর তার মাকে জানানো হয়েছে বৌভাতের কথা।ভূমিকা মূলত তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।আর সাথে প্রেমের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।

[চলবে]

ভূলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে