অপ্রিয় প্রিয়জন পর্ব-১৪

0
517

#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-14

সকালের নাস্তা করে সবাই লেগে পড়লো রিসেপশনের অনুষ্ঠানের জন্য। আজকেও বৃষ্টিকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়ে এসেছে। দেখতে দেখতে সেই কাঙ্খিত সময় চলে এলো। হটাত করে সব লাইট অফ হয়ে গিয়ে একটা সেন্টার লাইট জ্বলে উঠলো, যেখানে মেঘের এক হাতের মাঝে বৃষ্টির হাত। আর দুজনে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে। দুজনকেই ভীষন সুন্দর লাগছে। যেনো একে অপরের পরিপূরক দুজনে। বৃষ্টি আজ লাল রংয়ের একটা লেহেঙ্গা পরেছে, সাথে ভারী গয়না, ভারী মেকাপ, চুলগুলো খোঁপা করে বেলি ফুলের মালা দেওয়া, হাত ভর্তি চুড়ি, আর সাথে ম্যাচিং ওড়নাটা মাথার উপর থেকে দেওয়া। মেঘ লাল শার্ট, সাথে ব্ল্যাক কোর্ট প্যান্ট, চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, ব্ল্যাক শু, সাথে মেয়েদেরকে ঘায়েল করা সেই অ্যাটিটিউড।

দুজনে আস্তে আস্তে নিচে নেমে এসে স্টেজে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় গিয়ে বসলো। একে একে সবাই এসে তাদেরকে গিফট দিয়ে যায়। সাথে নতুন জুটির সাথে ফটোসেশান তো চলতেই থাকে। এসবকিছু মাঝে হটাত করে মেঘ সবার চোখের আড়ালে পিছন থেকে বৃষ্টির কোমর জড়িয়ে ধরে আরো কাছে টেনে নিয়ে কানের কাছে মুখ এনে লো ভয়েসে বলে, আমি বিয়ের দিনের জন্য লাল রঙ পছন্দ না করে আজকের জন্য কেনো পছন্দ করেছি জানো?

বৃষ্টি মাথা তুলে চিন্তিত ভঙ্গিতে মেঘের দিকে তাকায়। যার অর্থ এসবের কিছুই সে জানেনা।

মেঘও বাঁকা হেসে আরও কাছে এসে লো ভয়েসে বললো, যাতে আগের রাতে দেওয়া আমার ভালবাসার চিহ্নগুলোর সাথে লাল রঙে একেবারে বউ বউ লাগো। আমার বউ। বলেই চোখ টিপ দিলো।

মেঘের এমন লাগামহীন কথায় বৃষ্টির লজ্জায় মাটির ভিতর ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। মেঘ যে এতো রোমান্টিক একটা মানুষ এটা বিয়ের আগে ভ্রুনাক্ষরেও টের পায়নি বৃষ্টি। এভাবেই দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটিতে অনুষ্ঠান শেষ হলো। বৃষ্টি আজ ভীষণ খুশি। কারন আজ নিজের বাড়িতে যাবে। মনে হচ্ছে কতোদিন পর যাচ্ছে নিজের বাড়িতে। মাত্র একদিনের ব্যাবধানে এমন হলে বাকি জীবন কি করে থাকবে ভাবতেই মন খারাপ হয় যায় বৃষ্টির।
_____________________

সৃজা আজ মেঘ আর বৃষ্টির রিসেপশনের অনুষ্ঠানে আস্তে পারেনি। কারন ফারহান ভীষণ অসুস্থ। আর ফাতেহা (ফারহান আর তন্নীর মেয়ে) কে কার কাছে রেখে যাবে, এসব ভেবে আর অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি। এদিকে রাত যত বাড়ছে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ফারহানের জ্বর। সৃজা ফতেহাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। মেয়েটাকে দেখলেই মনটা ভরে ওঠে সৃজার। কি নিষ্পাপ চাহনি, গোলগাল মুখ, এই কয়দিনই মেয়েটার প্রতি ভীষণ মায়া জন্মে গেছে। চাইলেও ছেড়ে যেতে পারবেনা ওকে। এদিকে এভাবে ফারহানের সাথে একসাথে থাকায় শৃজার হবু বর বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। তবে এটা নিয়ে খুব একটা আফসোস নেই শৃজার। কারন যে মানুষটা ওকে বিয়ের আগেই বিশ্বাস করেনা তার সাথে আর যায় হোক সংসার করা যায়না। একটা সম্পর্কের সবচেয়ে বড়ো জিনিষ হলো বিশ্বাস আর সম্মান। ভালোবাসা না থাকলেও দুটো মানুষের একে অপরের প্রতি বিশ্বাস আর সম্মান থাকলে বাকিটা জিবন কাটিয়ে দেওয়া যায় তার সঙ্গে।

ফারহানের গোঙানীর আওয়াজে ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটা পাতিলে পানি আর রুমাল নিয়ে এসে জলপট্টি দিতে থাকে। এভাবেই কখন যে সৃজা ওখানেই ঘুমিয়ে পরে খেয়াল নেই।

ভোরের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেংগে যায় ফারহানের। সৃজাকে এই অবস্থায় দেখে ভীষণ খারাপ লাগে ফারহানের। আজ ওর আর ফাতেহার জন্যই নিজের সবকিছু হারিয়েছে সৃজা। নিজের মধ্যে ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করে ফারহানের। এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে ফাতেহাকে কোলে নিয়ে অপেক্ষা করে সৃজার ঘুম ভাঙ্গার।

ফাতেহার কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেংগে যায় সৃজার। চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে ফারহান ফাটেহাকে নিয়ে পুরও ঘরে পায়চারি করছে। তবুও কিছুতেই কান্না থামাতে পারছেনা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়ের কান্না থামাতে থামাতে তার নাজেহাল অবস্থা। সৃজাআর চুপ করে না থেকে উঠে গিয়ে ফারহানের কোল থেকে ফাতেহাকে নিয়ে আলতো করে দুলিয়ে দুলিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা করে। কয়েকমিনিটের মধ্যেই ফাতেহা একদম চুপ হয়ে যায়। তারপর দুধ গুলে ফিটারে দিয়ে খাইয়ে দেয় ফতেহাকে।
_______________________

শশুর বাড়ীতে আজ প্রথম দিন মেঘের। এদিকে নিজের বাড়িতে এসে আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে বৃষ্টি। ওঠার কোনো নামই নেই। অবশ্য এতে মেঘ খুব একটা বিরক্ত হচ্ছেনা। কারন বৃষ্টি জেগে গেলে ওর এই মায়াবী চেহারা, কিউট ফোলা ফোলা গেল দুটো, মোটা নাকটা এসব এত কাছ থেকে দেখতে পারবেনা। উঠলেই খালি পালাই পালাই করে এ মেয়েটা। এই মোটা নাকে স্টোনের নাকফুল এত বেশী মানায় সেটা বৃষ্টিকে না দেখলে বুঝতেই পারতোনা মেঘ। এই প্ত সাধারণ মেয়েটাকে সবসময় অসাধারণ লাগে মেঘের কাছে। মেঘ আস্তে করে প্রথমে বৃষ্টির নাকে একটা চুমু দিলো, তারপর দুই কানে দুটো চুমু দিয়ে আস্তে করে ডাকলো বৃষ্টিকে। বৃষ্টি ঘুমের ঘোরে মেঘের গলা জড়িয়ে ধরে আবারো শুয়ে পড়ে। এটা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে মেঘ। তারপর আস্তে করে গলায় মুখ গুঁজে চুমুতে ভরিয়ে দেয়। আবারো একটু নড়াচড়া করে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায় বৃষ্টি। এবার মেঘ প্রথমে আলতো করে কয়েকবার ঠোঁটে চুমু দিয়ে অবশেষে বৃষ্টির ঠোঁট চেপে ধরে নিজের ঠোঁটের মাঝে। বেশ অনেকক্ষন গাঢ় চুম্বন দেওয়ার পর বৃষ্টির হটাত করে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ছটফট করে চোখ খুলে নিজেকে মেঘের মাঝে দেখে ভীষণ অবাক হয়। সাথে ধাক্কা দিয়ে সরাতে থাকে মেঘকে। বৃষ্টির ঘুম ভেঙেছে দেখে মেঘও ছেড়ে দিয়ে নিজের ঠোঁট লিক করে বলে ওঠে, সকাল সকাল এমন মিষ্টি পেলে তো আমি বাকি মিষ্টি খাওয়া ছেড়েই দেবো। উম্ম ইয়াম্মি।

মেঘের কথায় বৃষ্টি চোখ গরম করে জিজ্ঞাসা করে এটা কি ছিলো? মেঘও দুষ্টু হেসে বলে ওঠে, ওহ আচ্ছা কী ছিলো বোঝোনি বুঝি তুমি? আচ্ছা দাড়াও তোমাকে আবার বুঝিয়ে দিচ্ছি। বলেই বৃষ্টির দিকে এগোতে যাবে তার আগেই বৃষ্টি এক দৌড়ে ওয়াশরুমে। বৃষ্টির কান্ড দেখে হাসতে থাকে মেঘ।

ওয়াশরুমে ঢুকে বৃষ্টির মনে পড়ে তাড়াহুড়ো করে কি ভুল কাজটা করেছে, জামাকাপড় আনেনি। এখন কি পড়ে বাইরে যাবে? মেঘের কাছে চাইলে এখন নিশ্চই দুষ্টুমি শুরু করে দেবে। এসব ভাবতে ভাবতে একবার দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে রুমে কেউ নেই। বৃষ্টি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। মেঘ নীচে গেছে এটা ভেবে টাওয়াল জড়িয়ে আস্তে করে ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে বাইরে আসে। তারপর আলমারি থেকে জামা নেওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু তার আগেই দুটো হাত এসে পিছন থেকে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে। বৃষ্টির শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। ও তো ভেবেছিল মেঘ রুমে নেই, তাহলে কথা থেকে এলো মেঘ? এসব ভাবনার মাঝে মেঘ বৃষ্টির ভেজা চুলগুলো পিঠ ঠেকে সরিয়ে একসাইডে রাখে। তারপর নিজের নাক নিয়ে বৃষ্টির কাঁধে ঘষতে থাকে, আর জোরে জোরে শ্বাস টেনে নেয়। তারপর পিঠের খোলা অংশে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে আস্তে আস্তে গলার কাছে আসে। তারপর কানের কাছে এসে একটা কামড় দিয়ে লো ভয়েসে বলে, সকাল সকাল কি আমাকে মেরে দেওয়ার প্ল্যান করছো নাকি বৃষ্টিরাণী? এমনিতেই তোমাতে মাতাল আমি। তারউপর এমন আবেদনময়ী হয়ে সামনে এসে আমাকে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছ তো জনপাখি।

বৃষ্টি কথা বলতে চেয়েও মুখ দিয়ে কিছু বেরোচ্ছেনা। সবকথা যেনো গলাতে আটকে যাচ্ছে। তাও অনেক কষ্ট বলে, আ আ আসলে আ ম মি ওয়াশরুমে জামা নিয়ে যেতে ভুলে গেছিলাম।

মেঘ এবার বৃষ্টিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুই হাতে কোমর ধরে আরো কাছে টেনে নিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে, তো আমাকে তো ডাকতে পারতে? আমি দিয়ে আসতাম তোমার জামা। এখন আমার কি হবে? আই কান্ট কন্ট্রোল মাই সেলফ জানপাখি। বলেই ছোটো ছোটো চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে। তারপর গলায় একটা কামড় দিয়ে বৃষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে বলে, এটাই তোমার শাস্তি। আমাকে এত পোড়ানোর জন্য। এখন ছেড়ে দিলাম, রাতে কিন্তু পুষিয়ে নেবো। বলেই চোখ টিপ দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় মেঘ। এতক্ষনে বৃষ্টি যেনোহাফ ছেড়ে বাঁচে। জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টেনে নিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়। বেশ কিছুক্ষনের মধ্যে মেঘ ওয়াশরুম থেকে বেরোয়। পরনে শুধু একটা ট্রাউজার, তুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। বুকে ফোটা ফোটা পানি পড়ে থাকায় আরো আকর্ষণীয় লাগছে। ফর্সা শরীরে পানির ফোঁটাগুলো মুক্তোর মত চকচক করছে। বৃষ্টির ভীষণ ইচ্ছে করছে এখন ওই স্নিগ্ধ বুকে গিয়ে মাথা রাখতে। বৃষ্টিকে এভাবে চোরা চোখে নিজের দিকে তাকাতে দেখে মেঘ ঠোঁট কামড়ে হাঁসে। তারপর বৃষ্টির কাছে এসে বলে, এভাবে চোরা চোখে দেখার কি আছে? তোমারই হাজবেন্ড। দেখার ইচ্ছে হলে ভালো করে দেখো। মেঘের কথায় বৃষ্টি লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি নীচে চলে আসে। মেঘও বৃষ্টির সাথে নিচে আসে।তারপর সবার সাথে টুকটাক কথা বলে নাস্তা করে মেঘ আবারও রুমে চলে যায়। আর বৃষ্টিকে ইশারায় উপরে আসার জন্য বলে। বৃষ্টিও দেখেও না দেখার ভান করে কিচেনে চলে যায় দুপুরের রান্নার আয়োজন করতে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে