#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-12
বৃষ্টিকে কোলে নিয়ে মেঘ বাড়ির ভেতরে ঢোকে। তারপর সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ে নতুন বউকে নিয়ে। আর একটুর জন্যও কাছে পায়না মেঘ বৃষ্টিকে। বউ দেখার পর্ব শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। তারপর বৃষ্টিকে মেঘলা রাতের ডিনার করিয়ে দেয় আর তারপর ফুল দিয়ে সাজানো মেঘের রুমে বসিয়ে দিয়ে ঘোমটা টেনে দেয়। ছোটো বড়ো অনেকেই বৃষ্টির সাথে বিভিন্ন খুনসুটিতে মেতে থাকে। তারপর এক এক করে সবাই বেড়িয়ে যায় রূম থেকে।
সবাই চলে যাওয়ার পর বৃষ্টির ভীষণ নার্ভাস ফিল হয়। কেমন এক অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করে ওর মধ্যে। ভয়, নাকি ভালবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ, নাকি নার্ভাস, সবকিছুর এক মিশ্র অনুভূতি গ্রাস করে বৃষ্টিকে।
রাত এগারোটা বেজে গেছে এখনও মেঘ আসেনি। এসব ভাবতে ভাবতে খট করে দরজা লাগানোর আওয়াজ হয়। দরজার আওয়াজ শুনে বৃষ্টি বুঝতে পারে মেঘ এসেছে। এবার যেনো আরো বেশি অস্থির হয়ে পড়ে। বেডের চাদর খামচে ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বৃষ্টি। ততক্ষনে মেঘ বৃষ্টির সামনে বেডে এসে বসে। বৃষ্টির জোরে জোরে নেওয়া নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনে মুচকি হাসে মেঘ। তারপর আস্তে করে বৃষ্টির ঘোমটাটা উঠিয়ে একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে তার প্রিয়তমাকে। যেনো কতো বছর পর দেখছে। আর এদিকে বৃষ্টির বেহাল অবস্থা। লজ্জা, ভয় সবকিছু মিলিয়ে ভিশন বেসামাল অবস্থা। বৃষ্টির অবস্থা বুঝতে পেরে মেঘ বৃষ্টির কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে বলে,”এখনই এই অবস্থা হলে আদর করার সময় তোমার কি হবে সেটাই ভাবছি আমি। জ্ঞ্যান হারিয়োনা যেনো তাহলে পরের দিন পেপার এর হেডলাইন হবে বিশিষ্ট সার্জেন ডক্টর আহাদ হোসেন মেঘের চরম আদরে অজ্ঞান হলেন মিসেস আহাদ।” বলেই হাহা করে হাসতে লাগলো মেঘ। এদিকে মেঘের এমন কথায় লজ্জায় যেনো কান থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে বৃষ্টির।
কোনরকমে নীজের হাসি কন্ট্রোল করে বৃষ্টির হাত ধরে বেড থেকে নামিয়ে দাড় করে মেঘ। তারপর আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে পিছনে থেকে বৃষ্টির ঘাড়ে নিজের মাথা রেখে বলে, এতদিন এটা আমার রুম থাকলেও আজ থেকে এটা আমাদের রুম।
এতক্ষন খেয়াল না করলেও এখন বৃষ্টি ভালো করে দেখে রুমটা। বৃষ্টি সবকিছু দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি দেখলো বেডের ওপর দেয়াল জুড়ে মেঘ আর বৃষ্টির একটা ছবি বিশাল বড়ো করে লাগিয়ে রাখা হয়েছে । পুরো বেড টাকে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এসব দেখে বৃষ্টি আরো লজ্জায় নুইয়ে পড়লো। আজ থেকে এই বেডেই ওরা একসাথে থাকবে। এখানেই মেঘের বুকের উপর মাথা রেখে ওরা সুখের সাগরে পাড়ি দেবে। কথাগুলো ভেবে বৃষ্টির বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। হার্টবিট অনেক দ্রুত গতিতে চলছে। লজ্জায় মেঘের দিকে তাকাতেই পারছে না।
মেঘ বৃষ্টিকে নিয়ে বেডের ওপর বসিয়ে দিল। বৃষ্টি মাথা নুইয়ে বসে রইলো। মেঘ বৃষ্টির পাশে বসে এক হাত বৃষ্টির গালে রেখে বললো, এতো ভারী গহনা পড়ে নিশ্চয় টায়ার্ড হয়ে গেছ? এগুলো খুলে রাখ, তারপর ওয়াশরুম থেকে অযু করে এসো। আমরা একসাথে নফল নামাজ পড়ে নেই। বৃষ্টি মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
বৃষ্টি বেড থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে গহনা খুলতে লাগলো। মেঘ বেডের ওপর বসে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে রইলো বৃষ্টির দিকে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পাশে গিয়ে দাড়ালো। পেছন থেকে বৃষ্টির গহনা গুলো খুলতে সাহায্য করলো। মেঘ কাছে আসায় বৃষ্টির কাপাকাপি শুরু হয়ে গেলো। আজ যেন একটু বেশিই লজ্জা লাগছে বৃষ্টির।হয়তো মেঘ ওর স্বামী হয়ে গেছে এইজন্য।
গহনা খোলা হয়ে গেলে বৃষ্টি গিয়ে ওয়াশরুম থেকে অযু করে আসলো। মেঘও ওযু করে আসলো, তারপর দুজন নফল নামাজ আদায় করে নিল।
নামাজ শেষ করে মেঘ কাবার্ড থেকে একটা প্যাকেট বের করে এনে বৃষ্টির হাতে দিয়ে বললো, যাও চেঞ্জ করে এই শাড়িটা পরে এসো। তারপর কিছু একটা ভেবে বললো আচ্ছা তুমি শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোটটা পড়ে এসো। আজ আমি নিজের হাতে আমার বউকে শাড়ী পরিয়ে দেবো। বৃষ্টিও বাধ্য মেয়ের মতো ওয়াশরুমে চলে গেলো। তবে এইভাবে বাইরে মেঘের সামনে যেতে ভীষন লজ্জা পাচ্ছে। কোনোভাবেই বাইরে যাওয়ার সাহস যোগাতে পারছেনা। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ায় মেঘ ওয়াশরুমের দরজা নক করে জিজ্ঞাসা করে হয়েছে কিনা? কিন্তু বৃষ্টি কোনো উত্তর করেনা। মেঘের কয়েক সেকেন্ড লাগে ব্যাপারটা বুঝতে। তারপর বলে, দেখো বৃষ্টি তুমি যদি দরজা খুলে না বের হও তাহলে কিন্তু আমি ভিতরে এসে যাবো।
কিছুক্ষনের মধ্যেই খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হয়। সামনে তাকাতেই মেঘ একটা শুকনো ঢোক গেলে। বৃষ্টি ব্লাউজ আর পেটিকোটের উপরে একটা ওড়না জড়িয়ে আছে। তবে জর্জেটের ওড়না হওয়ায় প্রায় সবটাই দৃশ্যমান। মেঘ অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে বৃষ্টিকে শাড়ি পরতে শুরু করে। মেঘের ছোঁয়ায় বৃষ্টির মাঝে আলাদা এক শিহরণ কাজ করে। বারবার কেপে কেপে ওঠে। শাড়ীর কুচিগুলো হাতে ধরে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নেয় মেঘ নিজের মাঝে। এমনিতেই লাল পেটিকোট আর ব্লাউজে ভীষণ আবেদনময়ী লাগছিলো বৃষ্টিকে। তার উপর এতক্ষন ধরে অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে শাড়ি পড়াচ্ছিলো মেঘ। কিন্তু শাড়ির কুচিটা গোঁজার সাহস আর পাচ্ছেনা মেঘ। নিজের মাঝে জোরে একটা শ্বাস টেনে শাড়ির কুচিটা গুঁজে দেয়। এদিকে বৃষ্টি সিউরে ওঠে মেঘের কাজে।
বৃষ্টিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়নার সামনে নিয়ে যায় মেঘ। তারপর পিঠে পড়ে থাকা চুলগুলো এক সাইডে করে, ব্লাউজের ফিতে বেঁধে দেওয়ার জন্য। মেঘের ছোঁয়ায় বৃষ্টি কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিল।
এদিকে বৃষ্টির পিঠের দিকে তাকাতেই মেঘের অবস্থা বেহাল। ব্লাউজের পিঠের সাইডের গলা বড়ো হওয়ায়, বৃষ্টির পিঠের অনেকখাণি অংশ বেড়িয়ে আছে। বৃষ্টির ধবধবে ফর্সা মোলায়েম পিঠ দেখে মেঘের গলা শুকিয়ে আসছে। চরম নেশা ধরে যাচ্ছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যেন ওর কাছে অসম্ভব হয়ে পরেছে। মেঘ হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পিঠের ফিতাটা আস্তে আস্তে বেঁধে দিল। তারপর বৃষ্টির মোলায়েম উন্মুক্ত পিঠে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।
বৃষ্টির এদিকে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। মেঘের ছোঁয়ায় বৃষ্টির পিঠ ভাজ হয়ে আসলো। দুই হাত দিয়ে শাড়ি শক্ত করে খামচে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।
মেঘ মুখ নামিয়ে বৃষ্টির পিঠে চুমু খেতে লাগলো। পিঠে চুমু খেতে খেতে উপরে ঘাড়ের দিকে উঠে এলো। ঘাড়েও গভীর ভাবে চুমু খেতে লাগলো। শিহরণে বৃষ্টির ঘাড়টা হালকা বাঁকা হয়ে গেলো। মেঘ ঘাড়ে চুমু খেতে খেতে কানের কাছে এসে কানের লতিতে আলতো করে একটা কামড় দিল। পেছন থেকে বৃষ্টির পেটে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে, কানে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে, লো ভয়েসে বলে উঠলো,
পাগল করে দিবে তুমি আমাকে বৃষ্টিরানী।
বৃষ্টি আর সহ্য করতে না পেরে এক ঝটকায় সামনে ঘুরে মেঘকে জড়িয়ে ধরে মেঘের বুকে মুখ গুঁজে জোরে জোরে হাপাতে থাকে। মেঘও পরম আবেশে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয় বৃষ্টিকে। অবশেষে খরায় দগ্ধ বুকটাতে বৃষ্টি নামে। জ্বলে পুড়ে ছারখার হওয়া ভূমিতে বৃষ্টির আগমণে অসীম শান্তি অনুভুত হয়।
মেঘ পকেট থেকে একটা পেন্ডেন্ট আর একজোড়া সোনার বালা বের করে বৃষ্টিকে পরিয়ে দেয়। তারপর কোমর জড়িয়ে ধরে আয়নার সামনে দেখতে থাকে বৃষ্টিকে। লাল রঙের শাড়িটাতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে বৃষ্টিকে। মেঘের ভাবতেই অবাক লাগছে আজ থেকে বৃষ্টি তার, শুধুই তার। মেঘ বুঝতে পারেনা এই মেয়েটা আশেপাশে থাকলে মেঘ নিজের পার্সোনালিটি ধরে রাখতে পারেনা কেনো? মোম যেমন আগুন পেলে পিগলে যায়, মেঘও তেমন পিগলে যায় বৃষ্টির সংস্পর্শে। পুরো দুনিয়ার কাছে যে মেঘ আইডিয়াল, রাগী, বেশী কথা বলা পছন্দ না করা একজন মানুষ। অথচ বৃষ্টির কাছে এক পাগল প্রেমিক।
বৃষ্টিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বৃষ্টির মুখ নিজের দুই দাতের মাঝে ধরে মেঘ বলে,
আমি তোমাকে কখনো আমাকে ভালবাসতে বলবনা। কারন আমার একার ভালোবাসা আমাদের দুজনের জন্য যথেষ্ট। পৃথিবীর সব সুখ আমি তোমার পায়ের কাছে এনে রেখে দেবো। শুধু একটাই চাওয়া তোমার কাছে, কখনও আমাকে ছেড়ে যেওনা প্রাণপাখি। তাহলে আমি মরে যাবো। পারবোনা এক মুহূর্তও তোমাকে ছাড়া থাকতে। বলেই বৃষ্টির কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
চলবে?