অপূর্নতার সংসার পর্ব-১২

0
2505

#পর্ব১২
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু

–“সকালবেলাই মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়ার পর থেকেই রওশন এর সাথে রোজার কথা কাটাকাটি হচ্ছে রওশন বারবার বলছে রোজাকে হাসপাতালে যাওয়ার কথা কিন্তু রোজা যাবে না সেই নিয়েই দু’জনের তর্কাতর্কি চলছে”।

রোজাঃ আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না রওশন ডাক্তার রা ওরম বলেই থাকে। তা বলে আমাকে সত্যি সত্যি হাসপাতালে যেতে হবে এমনতো নয় বলুন। আপনি আর আমাকে জোর করবেন না।

রওশনঃ কিছু না হলেও ডাক্তার যখন আপনাকে বলেছে যেতে হবে তো যেতেই হবে। দেখুন আপনি বুঝতে কেনো পারছেন না আপনার কিছু হলে বাচ্চাদের কি হবে? তাই বলছি অন্ততো মেয়েদের জন্যই চলুন।

–“রওশন এর কথার পৃষ্ঠে আর কথা না বাড়িয়ে রোজা চলে গেলো হাসপাতালে। সব পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করার পর ডাক্তার বললেন”।

ডাক্তারঃ দেখুন রওশন ওনার পেটে একটা ছোট্ট টিউমার আছে। যেটা অপারেশন করালেই ঠিক হয়ে যাবে। আপনি এই সপ্তাহের মধ্যেই অপারেশনটা করিয়ে ফেলুন।

রওশনঃ অপারেশন করালেই ঠিক হয়ে যাবে তো। তাহলে আমি কয়েকদিনের ভিতরেই রোজার অপারেশন টা করিয়ে ফেলবো। ধন্যবাদ আসছি।

–“অপারেশন এর কথা শুনে রোজার মাথায় যেনো বাজ পড়লো! রওশন তো বলে দিলো অপারেশন হয়ে যাবে। কিন্তু এখন এই টাকা কোথা থেকে আনবে রোজা! ওর কাছেতো অপারেশন করানোর মতন আর কোনো টাকা পয়সা নেই”।

–“রোজার চিন্তিত মুখ দেখে রওশন সবটা বুঝতে পারলো যে রোজা অপারেশন এর টাকা নিয়েই চিন্তা করছে। তাই সে বলে ওঠলো রোজাকে টাকা পয়সা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাবেন ওখানেই আব্বু আপনার অপারেশন করিয়ে দিবে। আর বিল এর ব্যবস্থা সেটা না হয় আব্বুই ম্যানেজ করে নিবে” । রোজা আর মানা করতে পারলো না কারন তার কাছে আর কোনো উপ্য় নেই আপাততো এটা মেনে নেওয়া ছাড়া”!

রওশনঃ আচ্ছা আমি তো আজকে ফ্রি আছি। যদি কিছু মনে না করতেন আমি আজকে বাচ্চাদের বাসায় নিয়ে যাই। বেশি সময়তো নেই ওদের ছুটি হতে এই কিছুক্ষণের ভিতরেই ছুটি হয়ে যাবে।

“আচ্ছা ঠিকআছে তাহলে অপেক্ষা করুন। মেয়েরা এক্ষুনি চলে আসবে স্কুল ছুটি হলে”।
স্কুল ছুটি হওয়ার পর……….

–“বাচ্চাগুলো যখনি দেখলো তার আম্মু এবং আংকেল দাড়িয়ে রয়েছে তখনি খুশিতে দু’জনে তাদের জরিয়ে ধরলো”।

মিষ্টিঃ আমি তো ভাবতেই পারছি না তোমরা এসেছো! কি মজা! চলোনা আজকে আমরা আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়িতে যাই।

“রোজা বাধ সাধলো এতে। সে স্পষ্ট মানা করে দিল। কিন্তু রওশন মেয়েদের কথা শুনে দোকান থেকে সঙ্গে সঙ্গেই চারটে আইসক্রিম নিয়ে এলো। তারপর তারা সবাই মিলে আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়িতে যাচ্ছে”।
_________________________

রিনিঃ আদিল মেয়েটা তো এখনো এলো না বলো। কতো বেলা হয়ে গেছে আমি খাবার অর্ডার করে দিয়েছি।

আদিলঃ দাড়াও চলে আসবে হয়তো কিছুক্ষণের ভিতরে ই।

পারুলঃ আমি চইলা আইছি সাহেব। একটু আইতে দেরি হইছে কিন্তু পরের বার আর এমন হইবো না। এবার আমারে রসুইঘর খান কো জায়গায় একটু কইয়া দেন আমু সব ব্যবস্থা কইরা দিতাছি।

–“পারুল রান্না হতে সব কিছু করতে লাগলো একে একে । এরই মধ্যে রিনির পার্সেল চলে এসেছে। সে এবার ও মহানন্দে খেতে বসেছে। কিন্তু পাশে যে আদিল দাড়িয়ে রয়েছে সেটা হয়তো তার খেয়ালই হয়নি”।

“রিনির এরকম ব্যবহার যেনো আদিল মেনে নিতে পারছে না। তার খুব কষ্ট হচ্ছে। রিনি একবারো জিগেস করার প্রয়োজন বোধ করলো না যে আদিল খেয়েছে কিনা! অথচ আদিল রিনির জন্য কতো রকম ব্যবস্থা করছে”।
_____________________
–“বাচ্চাদের নিয়ে বাড়িতে ফেরার পর। ফ্রেশ হয়ে সবাই খেতে বসতে লাগলো। খাবার মুখে দিয়ে তো করিম সাহেব, রওশন সবাই খাওয়াই অফ করে দিয়েছে। এতে রোজার ভয় হতে লাগলো যে সে আবার উল্টোপাল্টা কিছু করলো না তো”!

করিম সাহেবঃ রোজা এসব রান্না তুই করেছিস? এতো ভালো খাওয়ার আমি কোনোদিনও খাইনি বিশ্বাস কর! খুবই দারুন হয়েছে। এরপর থেকে রান্না টা তুইই করিস বাকি কাজকর্ম না হয় রহিমা করবে।

রওশনঃ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো তুমি। রোজা আপনার হাতের রান্নার কোনো জবাব নেই। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে রোজার হাতের রান্না যখন এতো ভালো। আমার রেস্টুরেন্টের কয়েকটা আইটেম কি রোজা রান্না করে দিলে তো আমার ব্যবসা টা একটু বড়ো হতো বলো?

করিম সাহেবঃ কি বলছিস তুই? এতে তো রোজার শরীর খারাপ হতে পারে। আমরা নিজেদের জন্য ওকে অসুবিধায় ফেলতে পারি না।

সঙ্গে সঙ্গে রোজা বলে ওঠলো,

“আপনি বেশি বলছেন আংকেল! রান্নাই তো করবো আর তো কিছু না বলুন? এতে আমার কোনো শরীর খারাপ হবে না। এমনি বসে বসে আর কতো সাহায্য নিবো বলুনতো আপনার থেকে? এর চেয়ে বরং আমি যদি রওশন এর রেস্টুরেন্টের কাজে একটু সাহায্য করতে পারি তাহলে আমিই খুশি হবো। আর বাচ্চারা তো অর্ধেক সময়ই স্কুলে থাকে। তখন আমি এমনিই অবসর থাকি। এই সময়টুকু কাজ লাগিয়ে যদি একটু রান্না করি তাহলে তো কিছুই হবে না। আর এমনিতেও কাজের মধ্যে থাকলে পুরনো অতীত ভুলা যাবে সহজে”।

–“রোজার এরকম ভাবে বলার ধরন দেখে আর করিম সাহেব মানা করলো না রোজাকে। সত্যি এটাই যে ওদের থেকে সাহায্য নিতে রোজার ও হয়তো খারাপ লাগে। তাই ও যদি রওশনের রেস্টুরেন্টে যদি একটু সাহায্য করে তাহলে ওর খারাপ লাগাটা কমবে। সব দিক দিয়ে বিবেচনা করে করিম সাহেব রোজাকে অনুমতি দিলেন”।

করিম সাহেবঃ তবে সবটাই তোমার অপারেশন হয়ে যাবার পর করবে তুমি। এর আগে কিছুতেই নয় ।
______________________

রওশনঃ দেখুন রোজা আপনি আমার কথাটি মন দিয়ে শুনুন। আমি বুঝতে পারছি আপনার এ বাড়িতে থাকা, বাচ্চাদের দেখাশোনা করা সবকিছুই মেনে নিতে আপনার অসুবিধা হচ্ছে। এতো অসুবিধা রাখবেন না মনের ভিতরে। আমাকে আপনার বন্ধু মনে করতে পারেন তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে হয়তো সবটা সকজ হয়ে যাবে আপনার জন্য।

রোজাঃ হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক বলেছেন আপনি। তবে বন্ধু হতে কোনো অসুবিধা নেই।
_____________

–“শোনো রিনির মা, তোমার মেয়ে একটু বেশিই করছে আমার মনে হয় প্রথমে সে আমাদের ঠিক করা ছেলের সাথে বিয়ে না করে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে নাকি পালিয়ে গেলো। গেলোতো গেলোই সে বিয়েও টিকলো না তার! বছরের মাথায়ই আবার এ বাড়িতে ফিরে এলো কারন তার স্বামী নাকি ভালো না তাই! বলি এখন কোন স্বামী অসুবিধা করেছে তাকে হ্যাঁ?তারপরেও কতো উল্টাপাল্টা ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করেছে। সেখান থেকে সরিয়ে এনেছি! ক্ষমা করে দিয়েছিলাম তো। তাকে এ বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলাম। যতোই হউক আমার মেয়ে সেজন্য। কিন্তু আজ প্রায় দু’বছর হতে চললো এখন কোথায় সে? আবার আগের মতন কাউকে কিছু না জানিয়ে সে বাড়ি থেকে চলে গেলো! এবার যদি আবার এ বাড়িতে আসে না দেখো কি অবস্থা করি ওর আমি। একবার ক্ষমা করেছি কিন্তু বারবার নয়”।

আছমা বেগমঃ কি বলি বলোতো? ও যে আমার নিজের পেটের সন্তান। ওর জন্য লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না বাইরে। প্রথমবার না হয় না বুঝে করেছে। কিন্তু এবারো একই কাজ করলো! এর আগে তো কতো ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করেছে ছিহঃ!

“আছমা বেগম আর রফিক মিয়া তার মেয়ে সম্পর্কে এসব বলছিলেন। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না এবার তার মেয়ে একটি মেয়ের সংসার ভেঙে নিজে সেখানে রাজত্ব করে বসেছে”!

বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে