#পর্ব১০(বোনাস পর্ব)
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
আলো আর মিষ্টি রওশন এর ঘরে রওশন এর সাথে খেলছিলো! রোজা যখন পুরো বাড়ি ওদের খুজে না পেয়ে রওশন এর ঘরে আসে তখন এ দৃশ্য দেখতে পেলো! তখনি রোজা মেয়েদের ডাক দিয়ে তার পাশে নিয়ে চলে আসে।
রওশনঃ একি আপনি বাচ্চা দের নিয়ে গেলেন কেনো? ওরা তো কি সুন্দরভাবে আমার সাথে খেলছিলো। ওদের এভাবে নিয়ে গেলেন কেনো?
রোজাঃ কারন আমি ভেবেছি ওরা হয়তো আপনাকে বিরক্ত করছে তাই ওদের ডাক দিয়েছি।
রওশনঃ না ওরা একদমই আমাকে বিরক্ত করছে না। বরং কতো সু্ন্দর করে খেলছিলো আমার সাথে। আপনিই এসে ব্যাগড়া দিলেন আমাদের খেলায়। যাই হোক তখনকার দূর্ঘটনা নিয়ে আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে এইতো আপনি বারান্দায় চলুন একটু। বাচ্চা গুলো এখানেই খেলুক।
রোজাঃ আচ্ছা ঠিকআছে চলুন।
রওশনঃ তো প্রথমে আপনার নামটা বলুন? কারন নামটাই তো জানি না আপনার। আর আপনি তখন ওভাবে দৌড়াচ্ছিলেন কেনো? যদি কোনো ভয়াবহ কিছু হয়ে যেতো তখন কি করতেন? আর বাচ্চা দের বাবা মানে আপনার হাজবেন্ড কই? প্রশ্নগুলো যদিও বেশি হয়েছে তাও আপনি একটু উওরগুলো দিয়ে দিন আমাকে।
তারপর রোজা একে একে রওশন কে সব বলতে লাগলো, আদিল এর দিত্বীয় বিয়ে, তাদের প্রতি খারাপ ব্যবহার, মেয়েদের গায়ে হাত তোলা, ডির্ভোস এর কথা, তারপর বাড়ি ছেড়ে চলে আসার কথা, এমনকি করিম সাহেব কে যে আগে থেকে চিনে, এ বাড়িতে থাকতে বলেছে সবকিছু বলেছে কোনো কিছুই বাদ রাখেনি রোজা।
রওশনঃ আমি মনে করি আপনি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আদিল এর মতন মানুষের সাথে আর যাই হোক আপনি কখনো সুখী হতেন না। আমি আদিলকে ছোটো বেলায় চিনতাম এখন কয়েক বছর ওর সাথে যোগাযোগ নেই বললেই চলে, ওর নাম্বার ও নেই আর আমি কখনো ওদের বাড়ি যাই নি । ওর বিয়েতেও যায়নি আমি। আপনি ওখানে থাকলে বাচ্চা গুলোও কষ্ট পেতো। এর চেয়ে বরং আপনি এখানেই থাকুন নিশ্চিন্তে সেটাই ভালো হবে। আমি আপনাকে বলছি কোনো অসুবিধা হবে না আপনার। আপনি নির্ভয়ে থাকুন।
রোজাঃ ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোটো করবো না। আপনি এবং আংকেলের প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।আর হ্যাঁ আপনি বা আংকেল কেউই আদিলকে বলবেন না আমরা আপনাদের এখানে আছি। আমি চাই না আদিল এর ছায়া টুকুনি আমাদের জিবনে পড়ুক। কিন্তু বাড়িতে আপনার বউ বা বাচ্চা কাউকেই তো দেখতে পেলাম না। তারা কোথায়?
রওশনঃ আদিলকে আমরা কেউই কিছু বলবো না আপনি সে ব্যাপারেও নিশ্চিত থাকুন। আর বিয়ের কথা বলছেন! আমি বিয়ে করেছিলাম তবে সেসব তিক্ত কথা আপনার না শোনাই ভালো হবে।
রোজাঃ আমি যখন আপনাকে আমার সব কথা বলেছি আপনিও বলতে পারেন। আমি কিচ্ছু মনে করবো না।
রওশনঃ বেশ আপনার যখন শোনার ইচ্ছে এতো তাহলে শুনুন…
–“আমার পড়াশোনা শেষ করার পর চেয়েছিলাম ডাক্তার হতে কিন্তু ভাগ্যক্রমে তা হয়ে ওঠেনি। তাই টুকটাক কাজ করতাম তখন। এরপরে আমার মিতুর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের তিন বছর খুব ভালোই কাটছিলো কিন্তু তারপরেই শুরু হলো আমার সঙ্গে নিতুর অশান্তি কারন সে বাচ্চা চাইছিলো। পাঁচ বছর এভাবে কাটার পর যখন সে জানলো আমি বাবা হতে অঝসক্ষম ঠিক তখনি তার আসল মুখোশ খসে পড়লো। তার আমার সাথে সারাজীবন থাকার সময় যেনো সেখানেই শেষ হলো। আমাকে ভালোবাসাও তার সমাপ্তি ঘটলো। সবশেষে সে চলে গেলো আমাকে ছেড়ে। আর আমি এই নিঃসঙ্গ জীবন নিয়ে একলা পড়ে রয়েছি। তাই তো নিজের বাচ্চা নেই বলে আপনার মেয়েদুটোকে আঁকড়ে ধরেছি ভালোবেসে। সময় মতন হলে আমারও মিষ্টির মতন মিষ্টি একটা বাচ্চা হতে পারতো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার দেওয়া সেই ক্ষমতা আমার নেই বলে আজ নিজেরও কোনো সন্তান নেই!
–“ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। আপনি বাচ্চার জন্য হা- হুতাশ করছেন আর সেই বাচ্চার জন্যই আদিল আর আমার সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটলো! সত্যি কখন কার সাথে কি ঘটে তা বলা যায় না । তবে আপনার যখন বাচ্চা এতোই পছন্দের আর আমরাও যেহেতু এখানেই রয়েছি আপনি আমার মেয়েদের কে নিজের মেয়ে মনে করতে পারেন”।
রওশনঃ- হুম বাচ্চা আমার অনেক পছন্দের। বিশেষ করে আপনার মেয়ে দুটোর মধ্যে যে মায়া রয়েছে তা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। এই দেখুন না কিছু সময়ের ভেতরেই আমার কেমন ওদের কে কতো আপন মনে হয়েছে। হ্যাঁ আমি ওদের নিজেরই মেয়ে করবো। মানুষ করবো ওদের নিজের মনের মতন।
“মানুষটি যখন আমার মেয়ে দু’টোকে নিয়ে সুখে বাঁচতে চাইছে তখন বাঁচুক। আমি আর বাধা দিবো না ওনাকে”।
রোজাঃ আচ্ছা বেশ তাইই হবে। তবে এখন ওনেক খেলা ধুলো হয়েছে এবার আলোর আর মিষ্টির তো পড়তে বসতে হবে তাই না? তাহলে বাচ্চারা আমার সাথে চলে এসো তাড়াতাড়ি পড়তে বসতে।
–“রোজার কথার সাথে সাথেই মেয়েগুলো চলে গেলো তার মায়ের সাথে। আর ওদিকে রওশন ও বেশ খুশি হয়েছে। যাই হোত অন্ততে তার নিঃসঙ্গ জীবনে যে মিষ্টি দুটো বাচ্চা এসেছে এতেই সে সুখী অনেক”।
ও বাড়িতে________________
আদিলঃ ভাত’তো রান্না হয়ে গেছে এবার শুধু চিকেন, পায়েস আর সব্জি রান্না করলেই হয়ে যাবে। যেই না আদিল সব্জি কুটতে গিয়েছে অমনি তার ছুড়িতে হাত লেগে কেটে গেছে! তৎক্ষনাৎ সে হাতে মেডিসিন লাগিয়ে বসে রয়েছে।
রিনিঃ আদিল তোমার রান্না কতো দুর হলো? আর এক ঘন্টার ভিতরেই সব রান্না শেষ করবে কিন্তু।
–“রিনির কথা শুনে আদিল কাটা হাত নিয়ে ইউটিউব দেখে দেখে সব্জি রান্না করা শিখে নিলো। তারপর পায়েস রান্না করতে গেলো । তখনি একটা ফোন আসে ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকে দুধ উতলিয়ে পড়ে যাচ্ছে সেটা তাড়াহুড়ো করে নামাতে যেয়েই আদিল এর হাতে গরম দুধ পড়ে অনেক খানি লাল হয়ে গেলো হাতের জায়গাটা”! কিন্তু সে কি করবে এখন? ওদিকে রিনিতো বসে রয়েছে খাবার জন্য। তাই সে কাটা আঙুল আর পোড়া হাত নিয়েই রান্না করতে গেলো! অবশেষে তার রান্না শেষ হয়েছে!
আদিলঃ রিনি তাড়াতাড়ি নিচে এসো রান্না হয়ে গেছে। খেতে এসো তাড়াতাড়ি তুমি।
রিনিঃ কই দেখি খাবার দাও তাড়াতাড়ি খুব ক্ষিদে পেয়েছে! খাবার মুখে নিতেই….
রোজাঃ এখানে রয়েছি অন্ততো আজকের দিনটা ভালোই কেটেছে। আদিল এর কথা মনে পড়েছে অনেক। যদি আদিল থাকতো তাহলে হয়তো আজকে আমাদের এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। কিন্তু হয়েছে তো তাই আদিলকে ভুলে যাওয়াই আমাদের পক্ষে মঙ্গল।
রহিমা খালাঃ কিগো মাইয়্যা তুমি এইহানে এই অসময় খারায় কানতাছো ক্যান? কাইন্দো না তুমি যার লাইগা কান্দো চাইয়া দেহো হেয় হয়তো সুখেই আছে তাই তুমি আর কাইন্দো না। যাইয়া দেহো তোমার মাইয়াগুলান বড়ো সাহেবের লগে কি শুরু করছে! আর বড়ো সাহেব ও তোমারে ডাকতাছে আমারে কইলো কি জরুরি কথা আছে তোমার লগে তুমি যাইয়া হুইনা আহো কি কয়।
করিম সাহেবঃ শোন রোজা আমি তোকে যা বলবো তুই মন দিয়ে শুনবি সবটা। কোনো দ্বিমত করবি না কোনো কথায়।
আচ্ছা ঠিকআছে আংকেল আপনি বলুন কি বলতে চান?
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।