গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (৪র্থ পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার
আমার বুকের ধুকধুক আরো বেড়ে উঠলো। আমি আমার কানকে বিশ্বাসই করাতে পারছিলাম না।
ইয়াজ আমাকে বিয়ে করতে চায় তার মানে কি?
তার বোনের এতো বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পরেও সে এতো স্বাভাবিক কি করে থাকতে পারে?
আমি তো ভেবেছি এক্ষুনি গিয়ে আমার ভাইয়ের মাথা ফাটাবে।
ইয়াজের বিয়ের প্রস্তাবের জবাবে আমার বাবা বললো,
___ আমি কিছু বুঝতে পারছি না, কাল সারারাত ঘুম হয়নি। নিজের ছেলেকে বকেছি, বাড়ি থেকে বের করার হুমকি দিয়েছি। কিন্তু সে মুখ খুলেনা। তার অন্য জায়গায় সম্পর্ক আছে সেটাও স্পষ্ট বলে না। এতো বড় ঘটনা হয়ে যাওয়ার পরে তোমার কথাটাকে কেমন যেন মনে হচ্ছে । তুমি কেন বিয়ে করতে চাও বিন্দিয়াকে?
ইয়াজ পেছনে একবার তাকিয়ে বললো,
___ বিন্দিয়াকে বহু আগে থেকেই আমি পছন্দ করি। আর বিন্দিয়াও পছন্দ করে। এটা অবিশ্বাস্য মনে হলে তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। যদি বিন্দিয়া রাজী থাকে আমি তাকে যেকোনো উপায়ে বিয়ে করবো। তবে আপনারা হ্যাঁ সিদ্ধান্ত নিলেই ভালো হবে। যদি মানা করেন বুঝে নিবো, আত্মীয়তা চিরতরে ছিন্ন করতেই এটা করছেন। আর আপনার ছেলের সাথে আপনারাও যুক্ত আছেন।
ইয়াজের কথা শুনে আমার বাবার মুখটা কালো হয়ে গেলো। ইয়াজের বাবা চুপ করে বসে আছে। উনার মুখে কোনো একটা কথাও নাই। আমার মা সেখান থেকে উঠে এসে আমার হাত ধরে বললো,
___ইয়াজ যা বলছে তা সত্যি? সত্যি তুই ওকে পছন্দ করিস? এইজন্যই কাল এতো কেঁদেছিলি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
___মা এটা সত্যি, কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি!
মা আর এই ব্যাপারে কোনো কথা না বলে আমাকে নাস্তা বানাতে বললো, আর ফ্রীজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে চার গ্লাস লেবুর জল নিয়ে আবার সেখানে গেলো।
আমি চায়ের পানি বসিয়ে আবার শুনতে গেলাম কি বলছে। মা সবার হাতে একটা করে গ্লাস দিয়ে বললো,
___আসলে বিন্দিয়াকে হুট করে এভাবে বিয়ে দিতে চাইনা। ওর পড়ালেখাটাও আরেকটু হোক।
ইয়াজ জোর দিয়ে বললো,
___মাঐ মানে এখন কি ডাকা উচিত জানিনা, শুনেন আমি কয়েকমাস আগে যেই চাকরিটা পেয়েছি সেটা বিন্দিয়াকে বিয়ে করতে যোগ্যতার দাবী রাখে। এরপরও আরো ভালো চাকরির চেষ্টা করবো। বিন্দিয়াকে পড়ালেখাও করাবো। এদিকে আমার ভালো চাকরি পাওয়ার বয়স আরো অনেক আছে। আর যদি আমাকে কোনো কারণে আপনাদের অযোগ্য কিংবা মন্দ বলে মনে হয় বলতে পারেন, শুধরে ফেলবো সেটা। তবুও আমি বিন্দিয়াকে বিয়ে করতে চাই।
আমার বাবা আস্তে আস্তে বললো,
___আমরা এই ব্যপারে ভাব্বো, এবং আমার ছেলে বাদল আর বিন্দিয়ার সাথে ভালো করে কথা বলবো। তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে জানাবো।
ভাইয়ার নাম শুনতেই ইয়াজের গালগুলো কেমন লাল হয়ে গেলো। আমি ওর হাতের দিকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম সে হাতটা শক্ত করে মুঠো করছে আর ছাড়ছে।
আমি এখান থেকে সরে পড়লাম। নাস্তা বানানোতে মনোযোগ দিলেও আমার সারাশরীর কাঁপছে। আমি আঁচ করতে পারছিলাম খারাপকিছু হতে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মা এসে খাবারগুলো নিয়ে গেলো।
আমি আর কিছু শুনলাম না, রুমে এসে বিছানায় বসে পড়লাম। কাল থেকে ইয়াজকে হারানোর ভয়ে বুকে যন্ত্রণা হচ্ছিলো, কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন আমাকে বিয়ে করবে শুনেও কেন সেই কম্পন থামছেনা? আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়েই যাচ্ছে। ঠিক তখনি আমার ফোন বেজে ওঠলো, ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম একটা অচেনা নাম্বার। আরো ৪ টা ফোন এসেছিলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই ইথিলা ভাবীর কান্নামিশ্রিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। অস্থিরতা আর অভিযোগের সাথে বললাম,
___ভাবী তুমি কেন এমন করলে? কেন একদিনে আমাদের পুরো সময়টাকে তুমি এলোমেলো করে দিলে? কেন তুমি আমার ভাইকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছো? আমার কথাও একটাবার ভাবতে, দেখো তোমার ভাই আর বাবা এখন আমার বিয়ের ব্যপারে এসেছে, আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
ভাবী গলা ঝেড়ে বললো,
___বিন্দিয়া তুমি প্লিজ কেঁদোনা আর মন দিয়ে শুনো আমার কথা। ইয়াজের বিয়ের প্রস্তাবে তুমি রাজী হইয়োনা প্লিজ, তোমাকে আমি এই এক বছরে ভীষণ ভালোবেসেছি, চোখের সামনে তোমার ক্ষতি আমি সইতে পারবোনা। আমি আমার ভাইকে চিনি, তুমিও তো জানো ওর সম্পর্কে। সে তোমার ভাইয়ের জন্য তোমাকেও ছাড়বেনা। ভীষণ ক্ষেপে আছে ইয়াজ।
তুমি যেভাবেই পারো ইয়াজকে ফিরিয়ে দাও। সে তার ভাবনা অনুযায়ী বিয়েটা করতে না পারলেও পরবর্তীতে আরো বেশি কিছু করতে পারে, কিন্তু আমি সেসব সামলে নেওয়ার চেষ্টা করবো। তুমি এই মূহুর্তে জাস্ট ওকে মানা করে দাও। আমার ফোন, আমার মা’র ফোন সে নিয়ে গেছে। এটা চাচির নাম্বার। তোমাকে এটা বলতেই ফোন দিয়েছি। এখন রাখছি আল্লাহ হাফেজ!
আমি ফোনটা হাত ছেড়ে দিলাম। সেটা ছিটকে বিছানার একপাশে গিয়ে পড়লো।
আমি পলক ফেলছিনা, কিন্তু চোখের সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। মিলাতে পারছিলাম না আমার ভাইয়ের অপরাধে আমি শাস্তি পাচ্ছি কেন?
ভাবীর কথামতো মানা করতে আমি ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি ততক্ষণে ওরা চলে গেছে। বাবা বললো তিনি ডিরেক্ট মানা করে দিয়েছেন। ভাইয়াও রুম থেকে বের হয়ে চেঁচামেচি করছে, বলতেছে,
___মা তুমি কি করে ভাবলে এমন পাগলের কাছে বিন্দিয়ার বিয়ে দিবো? হ্যাঁ ইয়াজ অনেক অনেক ভালো। সবদিকেই ভালো, ওর মতো ছেলে হয়না। কিন্তু এই মূহুর্তে সে ভালো নেই। সে আমাকে শাস্তি দিতে এটা করবে। তার বোন যেমন বিয়ের পরেও সংসার করতে পারেনি, সেও আমার বোনকেও বিয়ে করে সংসার করতে দিবেনা। এভাবে হঠাৎ সম্পর্ক ছিন্ন করে দিবে। সে বুঝেছে ভাইয়েরা বোনের এই দশা মানতে পারবেনা, তাই এমনটা আমাকেও…
ভাইয়া আর কিছু বলার আগেই বাবা ভাইয়ার গালে ঠাস ঠাস করে দুই-তিনটা থাপ্পড় একসাথে বসিয়ে দিলো। ভাইয়া একদম চুপ করে গেলো। বাবা একদম নেতিয়ে গেলো, আর ধিরে ধিরে বললো,
___যদি এটা ভাবতি তুই কখনোই বউটাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করতিনা। তুই চেয়েছিলি তোর বোনের উপরেও এমন হোক, তাই ইচ্ছে করে এমন করেছিস। কেন করেছিস বাদল? কেন আমার নিষ্পাপ বিন্দিয়াকে তার সাজা দিতে চাইছিস? ইথিলা কোনদিকে কম ছিল? কোথায় পাবি এমন একটা লক্ষী বউ? সকাল থেকে রাত মেয়েটা শুধু এই পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টাই করেছে। তুই যা করেছিস অন্য মেয়ে হলে বিয়ের পরেরদিন চলে যেতো, কিন্তু সে একটা বছর তোর মনে জায়গা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তুই এতো পাথর কেন রে? তোর মতো সন্তান আমার ঘরে কি করে জন্মালো?
ভাইয়া চোখে তাকিয়ে দেখলাম, পানিগুলো বাঁধ ভাঙতে প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু সেটাকে ভাইয়া সামলে রেখেছে। একটু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ভাইয়া চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো।
পরেরদিন সকালে বাবা আমাকে খাওয়ার জন্য ভীষণ জোরাজোরি করতে লাগলো।
মা বলেছে আমি প্রাণ রক্ষার্থে সারাদিনে এক মুঠ ভাত খেয়ে পড়ে আছি। বাবা রুটি নিয়ে আমার রুমে এসেছে।
বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে জোর করে খেলাম। খাওয়া শেষে বাবা বললো,
___ইয়াজকে শুধু পছন্দ করিস নাকি ভালোও বাসিস? জানি বাবা হয়ে এমন প্রশ্ন করা বিব্রতকর। কিন্তু আমিও তোর মাকে বহু সংগ্রামের পরে ভালোবেসেই বিয়ে করেছি,তাই জানি ভালোবাসা হারানোর আশঙ্কা সামনে আসলে কতো কষ্ট হয়।
আমার বিশ্বাস ইয়াজ অন্তত আমার ছেলের মতো নয়। আসল অপরাধী তো তোর ভাই, আর ইয়াজ তো শুধু তাকে শিক্ষা দিতে চায়। কিন্তু আমার বিশ্বাস তোর ভালোবাসা, সহনশীলতা আর একটু ধৈর্য্যধারণ ওকে স্বাভাবিক করে দিবে। সে তোর কোনো ক্ষতি করবে বলে হয়না, কারণ তুই তো কিছু করিস নি। তুই চাইলে আমি বিয়ের কথা বলতে পারি, কারণ এমনিতেও কষ্ট পাচ্ছিস আর সারাজীবন পাবি। তার চেয়ে বরং,
আমি বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
___ না বাবা ইয়াজকে যতটা স্বাভাবিক ভাবছো সে ততটা স্বাভাবিক না। ভীষণ জেদি সে আর এককথার মানুষ, তার বোনের উপরে কোনো অন্যায় মেনে নেয়নি আর কখনো মেনে নিবেনা। সে সেটার প্রতিফলন ঘটাবেই।
বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
___তুই যা ভালো ভাবিস তাই হোক।
বাবার কথাগুলো আমি গভীরভাবে ভাবছি,সত্যিই কি সে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হবে? এই তীব্র রাগ কখনোই হালকা হতে পারে?
সেদিন ভাবনা হিসেব, ভবিষ্যৎ ভেবেই সেদিন কেটে গেলো।
পরেরদিন সকালে আমার নাম্বারে ভাবীর সেই চাচীর নাম্বার থেকে ফোন আসলো, ফোন ধরেই শুনলাম ভাবীর অস্থির গলা, একনাগাড়ে বলছে,
___বিন্দিয়া ইয়াজ ভীষণ ক্ষেপে গেছে । সে বলেছে এই বিয়ে না হলে হয় সে নিজে মরবে নয়তো তোমার ভাইকে মারবে। আমি জানি সে তোমার ভাইয়ের ক্ষতি করবেই করবে। এটা শোনার পর থেকে আমার ভেতর শুকিয়ে গেছে,জানো ভয়ে আমার বুক এখনো কাঁপছে। মানুষটা আমাকে এতটা অবহেলা করার পরেও কেন তার ক্ষতির আশঙ্কা নিতে পারছিনা, আমি জানিনা। ইয়াজকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাও বোন। সে তোমাকে ভালোবাসে, কিন্তু তোমার ভাই তো আমাকে ভালোই বাসেনি। আমার মনে হচ্ছে ইয়াজ তোমার সাথে খারাপ করবেনা। কিন্তু বিয়ে না হলে সে তারচেয়েও খারাপ কিছু করবে।
আমি শুধু শুনেই যাচ্ছিলাম। কথা বলার শক্তি সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে বসেছি। এদিকে ভাবী এসব বলতে বলতে কাঁদতেছে। এই মানুষটার কান্না আমার বুকটা আরো ছিড়ে ফেলছিল। এতো কিছু হওয়ার পরেও আমার ভাইয়ের ক্ষতি হবে ভয়ে সে কান্না থামাতে পারছেনা, আমার কি অন্তত তার কান্নার মূল্যটা দেওয়া উচিত না?
ফোন রেখে তখনি বাবাকে বললাম আমি ইয়াজকে বিয়ে করতে রাজী।
আমার কথা শুনে মা হৈ-হল্লা করে কাঁদতে শুরু করলো, ভাইয়াও সাফ বললো ..
___নিজের দূর্ভাগ্য নিজে ডেকে আনছিস কিন্তু। ইয়াজ আমার ক্ষতি করলে করতো। কিন্তু তুই কেন আমার জন্য সাজা পাবি?
আমি কারো কথা শুনলাম না। মা তার একমাত্র ছেলের ক্ষতির ভয়েও চুপ করে গেলো। তারপর শুধু বাবার ভরসায় ইয়াজকে খবর দেওয়া হলো। কাবিন আর কাজী ডেকে পরেরদিনই বিয়ে সম্পন্ন। এতোটা স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করবো আশা করিনি।
নিজের সব কল্পনা জল্পনা, আশা আকাঙ্খারা কেমন যেন পূর্ণ হয়েও অপূর্ণ। এতোদিনের যাবতীয় অভিলাষ আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। শুধু ভেতরের অনূভুতিগুলো ভিন্ন, ভীষণ রকম ভিন্ন। শুধু প্রশ্ন জাগছে, মানুষটাও এক আমিও এক, স্বপ্নটাও ছিল এক! তাহলে এতো ভিন্নতা কেন? এটা আমার সাথে না হলে কি পারতোনা? আমার ভাই কেন এমন করলো? মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কি করে পারলো সব তছনছ করে দিতে?
যেই মেয়েটা বিয়ের সময় মেকাপে একাকার হয়ে নাচানাচি করে শ্বশুরবাড়ি যাবে ভেবে রেখেছিলো সেই মেয়েটা আজ মুখে সাধারণ ক্রিমের প্রলেপ না লাগিয়েই একটা বেনারসি কোনো রকম পেঁচিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়ে রওয়ানা দিয়েছে। মা মুখে আঁচল চাপড়ে যতক্ষণ গাড়ী দেখা দেখা যায় তাকিয়ে রইলো। সবাই আড়াল হওয়ার সাথে আমার যন্ত্রণারা যেন অগ্রসর হতে লাগলো। কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। হঠাৎ করেই গাড়ীর পেছনের লাইটটা অফ করে দিলো ইয়াজ।
আমি আর ইয়াজ এই গাড়ীতে, শুধু সামনে ড্রাইভার। অন্যরা যারা সাক্ষী হিসেবে ছিল তারা অন্যভাবে যাচ্ছে।
আমার কান্নার সাথে ইয়াজ হাসছে। তারপর হঠাৎ করেই আমার পাশে ঘেঁষে আস্তে আস্তে বললো,
___ এই বিন্দিয়া, কি লাভ আর কান্দিয়া?
ওর এমন কথা শুনে আমার ঠোঁট ভাঙা কান্না আরও তীব্রতর হলো। আমি তার থেকে দূরে যেতে চাইলেই আমার কাঁধে হাত জড়িয়ে একটানে মাথাটা তার বুকের সাথে লেপ্টে নিলো, আর কানের কাছে বললো,
___বিন্দিয়া কেন ভয় পাচ্ছো? আমার ভালোবাসায় সন্দেহ আছে তোমার? এখনো বুঝি বুঝতে পারোনি আমাকে? এই যে কান পেতে শুনো আমার বুকের মধ্যে আজ পূর্ণতার ডাক। সবটা জুড়ে শুধু তোমার আলোরণ।
আমি পুরো নিরব হয়ে গেলাম। আমার সব কান্নারা মূহুর্তেই উধাও। মাথা তুলে ইয়াজের মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি উঠাচ্ছিনা, তার বুকে মাথা রেখে যেন পৃথিবী প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি। তাহলে সত্যিই আমার ইচ্ছেরা পূর্ণ?
ইয়াজ আমার মাথাটা একটু উঁচু করে কপালে আলতো পরশ এঁকে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
___ জানো বিন্দিয়া, ইথিলা তোমার ভাইকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আমি ইচ্ছে করলেই তার বারোটা বাজাতে পারি কিন্তু সেটার ভয় দেখালেও কখনো করতাম না। কারণ আমার বোন তাতে একেবারে ভেঙে পড়বে, আর আমি এটা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারবোনা। সেদিন ইথিলাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করেছে তোমার ভাই। কিন্তু তুমি জানো মেয়েদের ডিভোর্স ইসলামে সমথর্ন করে না। তাছাড়া তোমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে থেকে এই বিচ্ছেদ আসেনি।
সেদিন থেকেই আমি চাইছি এমন কিছু করতে,যাতে তোমার ভাই আমার বোনের শূন্যতা হারে হারে বুঝে, কিন্তু সেটার কোনো উপায়ই ছিল না তুমি ছাড়া। তুমি আমার সাথে থাকলে, আর একটু মিথ্যে অভিনয় করলে তোমার ভাই বোনের কষ্ট থেকেও আমার বোনকে ভালোবাসবে। কিন্তু তোমাদের সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে সেটা কি করে সম্ভব? আর আমিও বা তোমাকে ছাড়া নিজেকে কি করে ভাবতে পারি বলো?
আমি মাথা তুলে ইয়াজের গালে একটা হাত রেখে খুশিতে এবার কেঁদে ফেললাম।
চলবে….