অপূর্ণতা পর্ব-৫৫

0
1164

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৫

কি থেকে কি হলো রাইশা এখনো বুঝতে পারছে না।কয়েক সেকেন্ড সে ওইভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো৷
পরে সে যা করলো তা আরিয়ান কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি।সে কোনদিন ভাবতেই পারেনি রাইশা তার সাথে এমনটা করবে।

সে আরিয়ানের গালে চর মেরে রাগে কর্কশ কন্ঠে বলে,” তোর সাহস তো কম না, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস্।আমাকে ভুলেও তোর ঐ টিপিকাল ওয়াইফ অদ্রিতার মতো ভাববি না।ভুলেও এটা ভাবতে যাবি না যে তুই যা বলবি আমি তাই মেনে নিবো।আজকের পর থেকে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করবি,গট ইট।”

আরিয়ান রাগে ভ্রু কুঁচকে বলে,”তুমি আমার সাহসের কি দেখেছো?সাহস তো তোমার বেশি হয়ে গেছে নইলে তো এই মাঝ রাতে পরপুরুষের কাঁধে হাত রেখে ডিংক করে বাড়িতে আসতে না।আর আমাকে চর মেরেছো কোন সাহসে? আজ প্রথমবার তাই কিছু বললাম না এরপর আর কোনদিন যদি এমন করেছো তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।এখন রুমে যাও তোমাকে কিছু বলা এখন বৃথা, কাল সকালে তোমার সাথে কথা বলবো।”পরে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে,”And hey you, just get lost from here.”

লোকটি আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”Who the hell are you to telling me this, demit.”

আরিয়ান কর্কশ স্বরে বলে,” I am her husband and now you just leave from here.”

লোকটি রাইশার দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে,”Baby you tell him something. you know that i love you so much.”

রাইশা রাগে চিল্লিয়ে লোকটিকে বলে,”Just go from here”

Baby,,,,,,,লোকটি আরও কিছু বলতে যাবে তার আগে রাইশা আবারও বলে, “I said just go.”

লোকটি কিছু না বলে রেগে সেখান থেকে চলে যায়।লোকটি চলে যেতেই রাইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলার তোমার কোন অধিকার নেই।আর নেক্সট টাইম আমার গায়ে হাত তোলার আগে হাজারবার ভাববে।ভুলে যেও না এখন তুমি আমার বাড়িতে আসো। আমি এখন তোমার সাথে যা খুশি করতে পারি শয়তানি হাসি দিয়ে।”

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,”কিসের পারসোনাল লাইফ? আমি তোমার স্বামী আর নিজের স্বামীর সামনে পরপুরুষের কাঁধে হাত রেখে আসতে তোমার লজ্জা করলো না।আজ থেকে রাতে তোমার পার্টি করা, বাহিরে ঘুরাঘুরি করা বন্ধ তোমার।”

রাইশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, “তুমি আমার স্বামী।
তোমার কোন যোগ্যতা আছে নাকি আমার মতো কারো স্বামী হওয়ার। নিজেকে দেখো কোথায় আমি আর তুমি কোথায়।তুমি তো আমার চাকর হওয়ারও যোগ্যতা রাখো না আবার এসেছো আমার স্বামী হতে,মাই ফুট।”

রাইশার কথা শুনে আরিয়ান আবারও রাইশার গালে চর দেওয়ার জন্য হাত উঠায় কিন্তু রাইশা সাথে সাথে হাত ধরে ফেলে বলে,” একদম আমার গায়ে হাত তুলতে আসবে না।আগেই বলেছি আমাকে অদ্রিতা ভাবার ভুল করবে না।এখন অনেক ভালো আছো পরে কিন্তু তাও থাকতে পারবে না।আর হে তুমি আমার স্বামী এই ভুল ধারণাটা নিজের মন থেকে মুছে ফেল।এই রাইশার স্বামী হওয়ার মতো কোন যোগ্যতাই তোমার নেই।আমাদের বিয়েটা নকল ছিলো।”

আরিয়ান বিস্মিত হয়ে বলে,” মানে কি বলছো এইসব?”

রাইশা কিছু না বলে রুমে চলে যায় কিছুক্ষন পরে রুম থেকে বের হয়ে কিছু কাগজ আরিয়ানের মুখে ছোড়ে মেরে বলে,”এই কাগজগুলো ভালো করে দেখো।এগুলো আসল রেজিস্টি পেপার না, এগুলো নকল।তবে তো আমাদের বিয়েটাও নকলই হয়,তাই না?তুমি এত শিক্ষিত তবুও এটা ধরতে পারলে না পেপার গুলো আসল ছিলো না,নকল ছিলো?How fool you are!বলে তাচ্ছিল্য হাসে।”

আরিয়ান রাগে কর্কশ স্বরে বলে,”তুমি আমার সাথে এমনটা কেন করলে?আমি তো শুধু তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম, তার প্রতিদান তুমি আমাকে এভাবে দিবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। আমি কালই এখান থেকে চলে যাবো। মা-বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো। অদ্রিতার পায়ে পরে থাকবো ও নিশ্চয়ই আমাকে মাফ করে দিবে।”

রাইশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,” তোমার পার্সপোর্ট,ভিসা সব আমার কাছে। তুমি আমার অনুমতি ছাড়া এই বাড়ি থেকেও বের হতে পারবে না,সেখানে দেশ থেকে চলে যাওয়ার কথা তো কল্পনাতেও এনো না।আর আমি এমন কেন করছি,তোমার মতো মানুষ এমনটারই যোগ্য। আর তুমি আমাকে ভালোবাসো কথাটা শুনে হাসি পেলো।তুমি আমাকে নয় আমার রুপকে ভালোবেসেছো তাই তো আমার রুপের মোহে পরে এইসব করেছো।তোমার মতো মানুষকে এভাবেই কন্ট্রোল করতে হয়।এখন হয়তো ভাবছো পুলিশের কাছে গিয়ে বলবে আমি তোমার পার্সপোর্ট, ভিসা সব ছিনিয়ে নিয়ে তোমাকে এখানে আটকে রেখেছি।ভুলেও এটা করতে যাবে না তবে এর পরিণতি আরও খারাপ হবে।”

আরিয়ান সামান্য হেসে বলে,” এর থেকে খারাপ আর কি হতে পারে?”

রাইশা জোড়ে হেসে বলে,” এটা তো কিছুই না, এর থেকে আরও অনেক খারাপ কিছু তোমার সাথে হবে যদি আমি এটা বলি তুমি আমাকে রেপ করেছো। তবে ভেবে দেখো পুলিশ তোমার কি অবস্থা করবে।যদি চাও এইসব কিছু তোমার সাথে না হউক তবে আজ থেকে আমি যেভাবে বলবো সেভাবে চলবে।আমার চাকর হয়ে এই বাড়িতে থাকবে।আমার কখন কি প্রয়োজন বলার আগেই তা যেন সামনে পাই।”আর কিছু না বলে রাইশা রুমের ভিতরে চলে গেল,,,,,

রাইশা চলে যেতেই আরিয়ান ফ্লোরে বসে পরে। এই প্রথম তার চোখ দিয়ে পানি পরছে।এখন বুঝতে পেরেছে সে কত বড় ভুল করেছে। সে এতদিন মিথ্যা রুপের মোহে পরে হিরা ছেড়ে কাঁচের পিছনে ছোঁটেছে।নিজের হাতেই ধ্বংস করেছে নিজের সাজানো সংসার।জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছে রাইশার মতো কারো জন্য অদ্রিতাকে ছেড়ে দিয়ে। আসলে আগে সে ভালোবাসার মর্ম বুঝেনি।ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা শত কষ্ট, শত সাধনা করেও পাওয়া যায় না আবার অনেকে বিনা কষ্টে সেই ভালোবাসা পেয়েও তার মর্ম বুঝে না। অদ্রিতার উপস্থিতি তার কাছে অসহ্য লাগলেও সে অদ্রিতাকে ভালোবেসে ফেলে ছিলো কিন্তু আগে সে তা বুঝতে পারেনি।রাইশা মোহে পরে সে সবকিছু ভুলে গেছিলো।এখন সে অদ্রিতার অনুপস্থিতিতে হারে হারে টের পাচ্ছে সে অদ্রিতাকে ভালোবাসে।যে মেয়েটা তার সামান্য একটু অসুবিধা হলে, সে সামান্য একটু অসুস্থ হলে সারারাত তার পাশে বসে তার সেবা করতো। তার করা এত অবহেলা, অপমান, অত্যাচার করার পরেও বিন্দু পরিমাণ অভিযোগ করেনি সব সময় শুধু তাকে ভালোবেসে গেছে,তার কথা ভেবেছে সে কি করে তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারে।কিন্তু আগে সেটা বুঝতে পারেনি।আমি তার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করেছি, তার গায়ে হাত তুলেছি এখন আমার নিজেকে মানুষ ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে। I am so inferior. I just hate myself,,,,,, মা-বাবা ঠিকই বলেছিল রাইশা আমার যোগ্য না। তার সাথে আমি জীবনে কখনো পূর্ণতা পাবো না।এখন বুঝতে পারছি তাদের কথা সম্পূর্ণ ঠিক ছিল। এখন বুঝতে পারছি নিঃসঙ্গতা কতটা বিষাদময় হয়।কটতা বিষাদময় হয় জীবনে #অপূর্ণতা নামক শব্দটি।এইগুলো ভেবে এখন তার অনুশোচনায় মরে যেতে মন চাইছে। সে যে শেষবারের মতো অদ্রিতার কাছে ক্ষমা চাইবে তারও কোন সুযোগ নেই,,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,ইন বাংলাদেশ,,,,

এই এক সপ্তাহে অদ্রিতা নিজেকে অনেকটা সামলিয়ে নিয়েছে। এখন সে আর আগের কথা ভেবে চোখের পানি ফেলে না। নিজেকে অনেক শক্ত করে ফেলেছে সে।সব কিছু ভুলে সে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য যা করার প্রয়োজন এখন সে তাই করছে। ডিজাইনের উপরে এখন সে ৬ মাসের কোর্স করছে।নিজের জীবনকে অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছে আর এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে শুধু নিলয়ের জন্য। নিলয় সবসময় অদ্রিতার পাশে ছিল। তাকে এইসব কিছু থেকে বের করে আনার জন্য তার যা যা করা প্রয়োজন তার সবকিছুই সে করেছে।এখন প্রায় ৭ টা বাজে, কলিং বেলের শব্দ শুনে অদ্রিতার মা দরজা খুলে দেন।নিলয়কে দেখে তিনি বিন্দু পরিমাণ অবাক হলেন না।এই কয়েক দিনে এটা রুটিন হয়ে গেছে দিনে কাজের জন্য নিলয় যদি নাও আসতে পারে তবুও রাতে হলেও একবার এসে অদ্রিতার খোঁজ নিয়ে যাবে।নিলয় ভিতরে ঢুকলে তার মা দরজা বন্ধ করে দেন পরে নিলয়কে ডেকে বলেন,”তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই কিন্তু কথা গুলো তোমাকে কি করে বলবো তা বুঝতে পারছি না?”

নিলয় প্রথমে একটু অবাক হয় পরে বলে,”আপনি আমার মায়ের মতোন।তাই আপনার যা বলার তা নিরদ্বিধায় বলতে পারেন।আমার থেকে অনুমতি নেওয়ার বা এত সংকোচ করার কোন দরকার
নাই।”
.
..

চলবে,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে