অপূর্ণতা পর্ব-৫৪

0
922

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৪

নির্দিষ্ট ডেটে কোর্টে উপস্থিত হয় অদ্রিতা তার সাথে নিলয় আর তার বাবাও গিয়েছে। অদ্রিতা কোর্টে ঢুকেই দেখে আরিয়ান আর রাইশা আগেই কোর্টে বসে আছে।
জর্জ আসলেই ডিভোর্সের কাজ শুরু করা হয়।দুইজনের সম্মতিতে ডিভোর্সটা হয়ে যায়,,,,,

ডিভোর্সের সব ফর্মালিটি শেষ করে কোর্ট থেকে বের হতেই আমার পা চলা থেমে গেলো। না চাওয়া সত্ত্বেও চোখে পানি চলে এলো।যতোই সবার সামনে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করি না কেন ভিতরে ভিতরে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমিও তো মানুষ আমারও তো অনুভূতি আছে। এতদিন যাকে নিজের বলে ভেবেছি, যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসেছি, যাকে পাশে নিয়ে সারা জীবন কাটানোর চিন্তা করেছি এত তাড়াতাড়ি সব কিছু কি করে ভুলে যাই।বিয়ের এই কয়েক মাসে যে মানুষ আমার সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলেনি হাতে হাত ধরে হাতা তো অনেক দূরের কথা। সে এখন অন্য একজনের হাতে হাত রেখে গল্প করতে করতে যাচ্ছে। আমি নিজের চোখে এটা দেখে কি করে নিজেকে স্থির রাখবো, কি করে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য একজনের সাথে দেখে মেনে নিবো?কি করে সহ্য করবো এইসব কিছু। না চাইতেও চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। মাত্রই তো ডিভোর্সটা হয়েছে আর সাথে সাথেই অন্য মেয়ের সাথে ঘুরছে তবুও আমার সামনে একটু সময়ের জন্য তো ওয়েট করতে পারতেন।ওনী তাও পারলেন না।ভালোই হলো ডিভোর্সটা হয়ে এখন আপনি আপনার মতো থাকবেন আর আমি আমার মতোন।আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে বিয়ে করে সুখী হন।আর আমিও এখন থেকে সুখে থাকবো কারো জন্য আর চোখের পানি ফেলবো না।

আরিয়ান একবার পিছুনে তাকিয়ে দেখে অদ্রিতা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কেন জানি এখন তার নিজের মাঝে অনুশোচনা কাজ করছে? সে সাথে সাথে রাইশার হাত ছেড়ে দেয়।আরিয়ান হাত ছাড়তেই রাইশা আবার তার হাত ধরে বলে,কি হলো?হাত ছাড়লে যে?

আরিয়ান ইসস্তত করে বলে,” এমনি, কিছু হয় নি।”

রাইশা উৎফুল্ল চিত্ত বলে,” হুমম,এখন চলো আমরা বিয়েটা করে ফেলি।”

আরিয়ান কিছুটা ইসস্তত করে বলে,” এখন, এইভাবে বিয়ে করা কি ঠিক হবে? এত তাড়াতাড়ি কি করে সম্ভব? ”

রাইশা কন্ঠে দূঢ়তা রেখে বলে,” হুমম,ঠিক হবে।আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি আর এখন থেকে যা হবে সব ঠিক হবে।বিয়ের সব কিছু আমি আগে থেকে রেডি করে রেখেছি। কাজি অফিসে যেয়ে এখন শুধু রেজিষ্টি পেপারে সই করে বিয়ে করে নিবো।এখন চলো তাড়াতাড়ি কাজি অফিসে যাই।”

আরিয়ান বিষন্ন কন্ঠে বলে,” হুমম,চলো।” আর কিছু না বলে তারা কাজি অফিসে চলে যায়। সেখানে আরও দুই তিন জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে আরিয়ান ও রাইশার বিয়েটা হয়ে যায়।যদিও সাক্ষী হিসেবে যারা ছিল তাদের কাউকেই আরিয়ান চিনে না তারা সবাই রাইশার ফ্রেন্ড।

রাইশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,” I am so happy now.অবশেষ এত কিছুর পরে আমাদের বিয়েটা হলো। আমার এতদিনের অপেক্ষা সার্থক হলো। এতটা খুশি আমি জীবনে আর কখনো হয়নি” আর কিছু না বলে সে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।

আমার এতদিনের ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেলো। অবশেষে রাইশাকে আমি নিজের করে পেলাম। রাইশা তো এখন আমার সাথেই আছে তবুও কেন জানি আমার খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এমন মনে হচ্ছে আমার সবচেয়ে মূল্যবান কিছু আমি হারিয়ে ফেলেছি। মনের ভিতরে একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। রাইশাকে বিয়ে করেও আমি মন থেকে খুশি হতে পারছি না কিন্তু কেন? এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না, এখন তো আমার সবচেয়ে খুশি হওয়ার কথা।কেন বার বার অদ্রিতার অশ্রুমাখা মুখটা আমার সামনে ভেসে উঠছে। মা-বাবার বলা কথাগুলো আমার কানে ভাজছে। সত্যিই কি আমি রাইশাকে পেতে গিয়ে সবকিছু হারিয়ে ফেললাম? এতদিনে আমার মনের আশা পূরণ হলো। অদ্রিতাকে আমি বাধ্য করেছি আমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। ফাইনালি আজ যখন আমি তার থেকে মুক্ত হয়ে নিজের মনের মতো অন্য একজনকে বিয়ে করে নিয়েছি তবে এখন তার চলে যাওয়াতে আমার খারাপ কেন লাগছে?নিজের মনেই কথাগুলো ভেবে চলেছে আরিয়ান, হঠাৎই রাইশার কথায় ভাবনা থেকে বের হয়।

তোমার কি হয়েছে।এত অন্যমনস্ক হয়ে কি এমন ভাবছো?

আরিয়ান বিষন্নতা ভরা কন্ঠে বলে,” মা-বাবা এই সবকিছু কোনভাবেই মেনে নিবে না। ভাবছি এখন কোথায় যাবো?”

তোমাকে এত টেনশন করতে হবে না আমরা আজ রাতের ফ্লাইটেই নিউইয়র্ক চলে যাবো।আমি সব ডকুমেন্টস আগেই কমপ্লিট করে রেখেছি। তোমার মা-বাবার কথা ভেবে আর মন খারাপ করো না, দেখবে ওনারাও একদিন সবকিছু মেনে নিবেন।নিজের একমাত্র ছেলেকে আর কয় দিনই বা নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন বলো?আমরা নিউইয়র্ক গিয়ে সবকিছু ঠিক করে তোমার মা-বাবাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো।এবার খুশি তো,পরে তারা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,

নিলয় শান্ত কন্ঠে বলে,” তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? বাড়িতে যাবে না?”

অদ্রিতা পিছনে ফিরলেই নিলয় তার চোখে পানি দেখে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে,” তুমি কাঁদছো কেন?”

অদ্রিতার নিজের চোখের পানি মুছে বলে কই কাঁদছি না তো, চোখে হয়তো ময়লা গিয়েছিল তাই পানি পরছে।

নিলয় ভরশা দিয়ে বলে,”এখন থেকে তোমার কান্না করার দিন শেষ। আর পিছনে ফিরে তাকাবে না।অতীত ভেবে আর কখনো নিজে কষ্ট পাবে না।এখন থেকে নিজের জন্য বাঁচতে শিখো।নিজের মনকে শক্ত করে সামনে এগিয়ে যাও। তোমার স্বপ্ন পূরণ করো। যা আগে মাঝ পথে এসে ছেড়ে দিয়েছো আবারও তা নতুন করে শুরু করো। আমি তোমার সাথে আছি।”

অদ্রিতা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে, “আমি কি পারবো তা আবার নতুন করে শুরু করতে।আমি তো তা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি, কি করে আবার নতুন করে তা শুরু করবো?আমি পারবো না।”

নিলয় কন্ঠে দূঢ়তা এনে বলে,”তোমাকে পারতেই হবে। তোমার নিজের জন্য না হলেও তোমার সন্তানের জন্য। একজন বড়ো ডিজাইনার হওয়া তোমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল। তুমি অনেক ভালো ডিজাইন করো আর আমার বিশ্বাস তুমি পারবেই।শুধু মনে সাহস আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজটা শুরু করো ইনশাআল্লাহ একদিন তুমি সফল হবে।আল্লাহর উপর ভরসা করে এগিয়ে যাও।”

নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে মনে অনেকটা ভরসা পেলাম।অনেক তো হলো অন্যকে ভালো রাখার চেষ্টা করা, এখন থেকে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করবো।আমার স্বপ্ন আমি পূরণ করবো। একজন বড় ডিজাইনার হওয়ার আমার ছোটবেলার স্বপ্ন আর তা আমি পূরণ করবোই।আমাকে তো পারতেই হবে।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ইন নিউইয়র্ক,,,,,,,,,,

কেটেগেছে এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে পাল্টে গেছে অনেক কিছু।এই এক সপ্তাহ রাইশার সাথে আরিয়ান অনেক ভালো ছিল।রাইশাকে নিজের করে পেয়ে বাকি সব কিছু সে ভুলে গেছে।নিউইয়র্কে এখন প্রায় মাঝ রাত।আরিয়ান রাইশার জন্য অপেক্ষা করছে। তার এখন রাইশার জন্য টেনশন হচ্ছে। এই এক সপ্তাহে রাইশা কখনো এতটা রাত করে বাড়িতে ফিরেনি। কলিংবেলের শব্দ শুনে সে স্বত্বি পেল। সাথে সাথেই সে দরজা খোলে দিল।কিন্তু দরজা খোলে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।তা দেখে রাগে তার চোখ-মুখ পুরো লাল হয়ে গেলো।কিছু না ভেবেই সে জোরে রাইশার গালে একটা চর বসালো।

কি থেকে কি হয়ে গেলো রাইশা এখনো বুঝতে পারছে না।কয়েক সেকেন্ড সে ওইভাবে দাঁড়িয়ে রইলো,পরে সে যা করলো তা আরিয়ান কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি।সে কোন দিন ভাবতেই পারেনি রাইশা তার সাথে এমনটা করবে,,,,,,,,,,
.
..

চলবে,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে