#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৩
অদ্রিতার কথা শুনে নিলয় রাগে ভ্রু কুচকে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কি করে পারলে আমাকে এই কথাগুলো বলতে। তুমি আমাকে এতটা স্বার্থপর কি করে ভাবতে পারলে?তুমি কি করে ভাবলে তোমার এমন একটা বিপদের দিনে আমি তোমাকে একা ফেলে চলে যাবো। নিজের কথা ভাববো।নিজের লাইফে স্যাটেল হওয়ার কথা চিন্তা করবো।এত দিনে তুমি আমাকে এই চিনলে।আমাকে কি এখনো একটুও বিশ্বাস করা যায় না।আমি কি এতোটাই খারাপ যে আমাকে তুমি নিজের বন্ধুও ভাবতে পারছো না।”আরিয়ান কথায় অদ্রিতার প্রতি রাগের থেকে অভিমান বেশি প্রকাশ পেয়েছে।
নিলয়ের কথা শুনে অদ্রিতা চুপ করে থাকে। নিলয়ের কোন প্রশ্নেরই উত্তর তার কাছে নেই।সে এখন এমন এক জায়গায় আটকে পরেছে যার থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় তা তার জানা নেই।কিছুক্ষন চুপ থেকে সে আনমনেই বলে উঠলো, “আমার জীবনটা একটা কালো রাতের মতো যেখানে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোথাও ভোরের আলো ফোঁটার বিন্দু পরিমাণ আভাশ নেই।চারিদিকে শুধু নিস্তব্দতা৷ আমার কোন চাওয়াই পূর্ণতা পায় না। আমার পুরো জীবনই কেন #অপূর্ণতা দিয়ে ঘেরা বলতে পারবেন?আমি তো জীবন থেকে কখনো বেশি কিছু চাইনি তবে আমার এই ছোট ছোট চাওয়াগুলোও কেন পূর্ণ হয় না?”
নিলয় ভরসার কন্ঠে বলে,”যে কোন পরিস্থিতিতে হাল ছাড়তে নেই।অন্ধকার যত গভীর হয় ভোরের আলো ফোঁটার সময় ততোই এগিয়ে আসে।এক সময় সেই অন্ধকার ভেদ করে পূর্ব আকাশে সূর্য উঁকি দেয় আর চারিদিক থেকে অন্ধকার সরে গিয়ে নতুনভাবে সবকিছু আলোকিত হয়।সবাইকে জীবনে কোন না কোন সময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।তাই বলে কখনো সেই পরিস্থিতির কাছে হার মানতে নেই।তুমি এখন অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য আছো আর হয়তো ভাবছো কোনভাবেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।কিন্তু এটা ভুল ভাবনা।এখন তোমার উচিত এই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রেখে নিজের উপর বিশ্বাস আর ভরশা নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করা।জানি বলা যতটা সহজ করা ততোটা সহজ না। কিন্তু তাই বলে সব কিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলেও চলে না।নিজেকেও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে হয়।নিজেকে সব পরিস্থিতিতে কি করে শক্ত রাখতে হয় তা শিখতে হয়।কখনো কোন কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে দুর্বল হলে চলবে না।এখন যদি তুমি দুর্বল হয়ে পরো তবে কোনভাবেই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।জীবন কখনো কোন একজনের জন্য থেমে থাকে না।সে তার আপন গতিতে চলতে থাকে। এখন তোমার উচিত যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। জানি কোন কিছু ভুলা এত সহজ নয় কিন্তু সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেক সময় এই কঠিন কাজটা করতে হয়।আমার বিশ্বাস একদিন তুমিও এই কঠিন পরিস্থিতির থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।আর আমি তোমাকে সাহায্য করবো এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে। তুমি যেকোন পরিস্থিতিতে সবসময় আমাকে তোমার পাশে পাবে।”
মনোযোগ দিয়ে নিলয় ভাইয়ার কথা শুনেছি।এখন ওনার মুখের দিকে তাকালাম।ওনার বলা প্রতিটি কথা ঠিক।ওনার কোন কথায় কোন ভুল নেই।সত্যিই তো যা হয়েগেছে তা কোন ভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে যা হবে তা হয়তো পরিবর্তন করা সম্ভব। আমি যদি এখন চাই তবে হয়তো আমার সামনের দিনগুলো ভালো করে কাটাতে পারবো।আমার নিজের জন্য না হলেও আমার সন্তানের জন্য আমাকে এই সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।নিজেকে শক্ত করতে হবে।নিজেকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে সবাই আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। তখন কেউ যেন আমার গায়ের রঙের জন্য আমাকে কথা শুনাতে না পারে।
নিলয় শান্ত স্বরে বলে,” কি এতো ভাবছো তুমি?এখন এইসব কিছু বাদ দাও আর ডয়িং রুমে চলো খাবে এখন।”
আমি এখন খাবো না,আপনি খেয়ে নিন?
নিলয় গম্ভীর স্বরে বলে,” তুমি আজ সারাদিন খাওনি আর এখন যদি আর একবার খাবো না বলেছো তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।দ্রুত ফ্রেস হয়ে আসো। তোমাকে মাত্র ৫ মিনিট টাইম দিলাম এর মধ্যে তুমি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে আসবে,আমি অন্য কোন কথা শুনতে চাই না।”
নিলয় ভাইয়ার মুখের দিকে তাকাতেই দেখি রাগে ওনার চোখদুটো একদম লাল হয়ে গেছে। এইটুকু বিষয়ে এত রাগ করার কি আছে বুঝি না।ওনার দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না দ্রুত ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে টেবিলে চলে এলাম।মা রান্নাঘরেই ছিল আমি মাকে ডাক দিতেই মা বাহিরে বেরিয়ে আসে। আমি আর নিলয় ভাইয়া চেয়ারে বসে আছি, মা ব্যস্ত হয়ে আমাদের খাবার বেড়ে দিল।এভাবে নিলয় ভাইয়ার সামনে খেতে কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে তবুও ওনার রাগ দেখে আর কিছু বলার সাহস পায়নি।চুপচাপ যা প্লেটে ছিল খেয়ে নিয়েছি।আমার খাওয়া শেষ হতেই নিলয় ভাইয়া বাড়ির সবাই বলে চলে গেলেন আর যাওয়ার আগে আমাকে বারবার করে বলে গেছেন নিজের যত্ন নিতে আমি শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানিয়েছি।
অন্যদিকে আরিয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা রাইশার হোটেলে চলে যায়।রাইশার রুমে সামনে গিয়ে দুই- তিন বার কলিং বেল বাজাতেই রাইশা রুমের দরজা খোলে আরিয়ানকে দেখতে পায়।আরিয়ানকে দেখে সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,”এত রাতে তুমি এখানে কি করছো,বাড়িতে যাওনি?”
আরিয়ান বিষন্ন স্বরে বলে,” আগে তো রুমে আসতে দিবে নাকি এখান থেকে চলে যাবো।”
হুমম,ভিতরে আসো।এত রাগার কি আছে?
আরিয়ান ভিতরে ঢুকতেই রাইশা দরজা অফ করে আরিয়ানকে জিজ্ঞেস করে,”এখন বলো কি হয়েছে,চোখ-মুখের এই অবস্থা কেন?”
আরিয়ান রাইশাকে সব কিছু খোলে বলে।আরিয়ানের কথা শুনে রাইশা মনে মনে হাসে কিন্তু মুখে তাকে সান্তনা দিতে দিতে বলে,”চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।মা-বাবার অবাধ্য হলে তারা একটু রাগ করেই কিন্তু যখন তারা দেখবে তুমি কোন ভুল করো নি। তুমি অনেক ভালো আছো তবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।একদিন তারা আবার তোমাকে কাছে টেনে নিবে শুধু তাদের একটু সময় দাও।”
আরিয়ান আর কিছু বলে না,শুধু রাইশাকে একবার জরিয়ে ধরে পরে সুফায় ঘুমিয়ে পরে।
~~~পরেরদিন সকালে,,,,,,,
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা গিয়ে দরজা খোলে দেন।দরজা খোলে যাদের দেখলেন তাদের দেখার জন্য মা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।ওনাদের দেখে মুহূর্তের মার মুখের রং পালতে যায়।মুখ গম্ভীর করে বলে আপনারা এখানে কোন সাহসে এসেছেন? আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে আপনাদের শান্তি হয়নি, এখন কি চান আমার মেয়ে মরে যাক?
আপনার রাগ করাটা স্বাভাবিক । আপনার জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে হয়তো এটাই বলতো কিন্তু আমাদের কথাও তো একবার শুনুন।কথা দিচ্ছি একবার অদ্রিতার সাথে দেখা করেই আমরা চলে যাবো আর সে যদি না চায় তবে আর কোন দিন তার সাথে আর দেখা করবো না।একবার তার কাছে আমাদের ক্ষমা চাইতে দিন।
আপনাদের কোন ক্ষমা চাইতে হবে না এখন আসতে পারেন।আমার মেয়েকে তার অবস্থায়ই ছেড়ে দিন।
রুমের ভিতর থেকেই বাইরে থেকে কথা বলার শব্দ শুনতে পেলাম।গলার আওয়াজ শুনে মনে হলো ওনারা আমার চেনা তাই বাহিরে বেরিয়ে আসলাম।
ওনাদের দেখেই আমার মুখে হাসি ফোঁটে উঠলো। দৌঁড়ে ওনাদের কাছে গেলাম,মা-বাবা আপনারা এত সকালে এখানে সবকিছু ঠিক আছে তো।মা আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন আমার সামনে হাত জোড় করে মা বলতে লাগলেন, “আমাকে ক্ষমা করে দিস মা। আমার ছেলেটা দিনের পর দিন তোর উপর অত্যাচার করেছে। তোকে অবহেলা করেছে আর একবাড়িতে থেকেও আমরা কিছু জানতে পারিনি।আজ তোর এই অবস্থার জন্য হয়তো আমরা দায়ি।আরিয়ানের সাথে তোর বিয়েটা দিয়ে আমরা ঠিক করিনি। আজ যদি আমরা আরিয়ানকে জোর করে বিয়েটে রাজি না করাতাম তবে তোকে এত কিছু সহ্য করতে হতো না।”
মা- বাবা আপনাদের কোন দোষ নেই আমার ভাগ্যে যা ছিল তা হয়েছে।তাই এর জন্য কখনো নিজেদেরকে দোষারুপ করবেনা।মা-বাবা সবসময় সন্তানের কল্যানের জন্য দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। তাদের হাত কখনো সন্তানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য জড়ো হয় না।আপনার এখানে আমাকে দেখতে এসেছেন তাতেই আমি অনেক খুশি।আর কখনো যা হয়েছে তা ভেবে নিজেরা কষ্ট পাবেন না।
আরিয়ানের বাবা শান্ত স্বরে বলে,”আমার ছেলেটা সত্যিই অনেক অভাগা।না হলে কি তোর মতো এমন একজন মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েও বুঝলো না।কিন্তু একদিন সে ঠিকই বুঝবে সে কি হারিয়েছে। তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।তুমি ভালো থেকো মা আমরা এখন আসছি।”
আপনারা এখন কোথাও যাচ্ছেন না। আপনাদের দেখেই মনে হচ্ছে কাল থেকে কিছু খাননি। এখন সকালের নাস্তা খেয়ে পরে যাবেন।মা তুমি ওনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করো।অদ্রিতার মা আর কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে যায়।অদ্রিতা তার শ্বশুর -শ্বাশুড়িকে নিয়ে নিজের রুমে যায়।পরে ওনারা ফ্রেস হয়ে আসলে ডয়িং রুমে সবাই একসাথে খেয়ে নেয়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
নির্দিষ্ট ডেটে কোর্টে উপস্থিত হয় অদ্রিতা।তার সাথে নিলয় আর তার বাবাও গিয়েছে। অদ্রিতা কোর্টে ঢুকেই দেখে আরিয়ান আর রাইশা আগেই কোর্টে বসে আছে।
জর্জ আসলেই ডিভোর্সের কাজ শুরু করা হয়।দুইজনের সম্মতিতে ডিভোর্সটা হয়ে যায়,,,,,,,,,
.
…
….
চলবে,,,,,,,,,,