#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫২
অদ্রিতার মা আবারও বলে,” তুই যা বলছিস্ তা সব কিছুই ঠিক বলছিস্। তোর কোন কথায় কোন ভুল নেই।তোর জায়গায় যদি অন্য কোন মেয়ে থাকতো তবে সেও হয়তো ঠিক এই কথাই বলতো।কিন্তু আমার কথাটাও আর একবার ভেবে দেখ।তোর মা হয়ে কি আমি তোর খারাপ চাইতে পারি বল্।এখন যদি ডিভোর্সটা হয় তবে ভেবে দেখেছিস্ কি হবে।সমাজ তোর সন্তানকে ভালো চোখে দেখবে না।তাকে নানা কথা শুনাবে আর তোকেও তো অনেক অপমানিত হতে হবে।সমাজ কখনো ডিভোর্সী মেয়েকে ভালো চোখে দেখে না।তখন তোর পথ চলা কতটা কঠিন হয়ে পরবে তা তুই এখন বুঝতে পারছিস না।একা একটা মেয়ে হয়ে তখন কিছুতেই তুই তোর সন্তানকে মানুষ করতে পারবি না।তখন বুঝবি এই সমাজে একা থাকাটা কতটা কঠিন।তাছাড়া তোর একটা ছোট বোন আছে, একবার তার কথাটা ভেবে দেখ।বড় বোন যদি ডিভোর্সী হয় তবে কি ছোট বোনের জন্য ভালো বিয়ের ঘর আসবে?আর একটা সম্পর্ক গড়তে হলে একজনকে না একজনকে একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।একটু সহ্য করতে হয়।তুই না হয় আর একটু সহ্য করলি আর আরিয়ান যদি জানে ও বাবা হতে চলেছে তবে নিশ্চয়ই ও তোকে মেনে নিবে।তুই কি তোর সম্পর্কটা রক্ষা করতে এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারবি না।নিজের সন্তানের কথা ভেবে আমার কথাটা আরেকবার একটু ভালো করে ভেবে দেখ।”
অদ্রিতা মায়ের কথা শুনে হতম্ভব হয়।কাঠিন্যতা ছেপে যায় সারা মুখশ্রীতে, কন্ঠে গম্ভীর্যতা এনে বলে,”মা আমি অনেক ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আর আমি কিছুতেই আমার সিদ্ধান্ত থেকে পিছপা হবো না।আমি এখন হয়তো তোমাদের গাড়ের বোঝা হয়ে উঠেছি,তবে তা বেশি সময়ের জন্য নয়। আমি কালই এখান থেকে চলে যাবো।সমাজ আমাকে যা বলবে তা আমি সহ্য করে নিবো কিন্তু আমি চাই না আমার জন্য তোমরা আরও কষ্ট পাও বা আমার জন্য আমার বোনের কোন পবলেম হউক।তাই আমাকে নিয়ে তোমাদের আর চিন্তা করতে হবে না।এখন আমি আমার নিজের জন্য বাঁচবো, নিজের সন্তানের ভালোর জন্য যা করার দরকার তা আমি একাই করতে পারবো।আমি একাই ওকে মানুষের মতোন মানুষ করে তুলবো।ও যাতে মানুষকে মানুষ বলে মূল্যায়ন করতে পারে তাকে আমি সেই শিক্ষা দিবো,ওইভাবেই তাকে আমি গড়ে তুলবো।আমি ওকে কখনো কারো অবহেলার পাত্র হতে দিবো না।অনেক অন্যের কথা ভেবেছি কিন্তু এখন আমি শুধু নিজের কথা ভাববো।আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল এখানে আসা আমার ঠিক হবে না।সবাই তোমাদের নানা কথা বলবে।কিন্তু তোমরা আর জাস্ট একটা রাত এইসব সহ্য করো, কাল ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথেই আমি এখান থেকে চলে যাবো।”
“এ তুই কি বলছিস্, আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলছিলাম।আর তুই কি আরিয়ানকে এই সন্তানের বিষয়ে কিছু জানাবি না।”অদ্রিতার মা করুন স্বরে বলে কথাগুলো।
অদ্রিতার তার মার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,”যার কাছে আমারই কোন মূল্য নেই তার কাছে এই সন্তানের কি কোন মূল্য আছে,হয়তো নেই!তবে তাকে কেন জানাবো,ও শুধু আমার একার সন্তান। এই সন্তানের উপর শুধু আমার একার অধিকার থাকবে অন্য কারো নয়।পরে যদি অন্য কোথাও থেকে জেনে যায় তবে কিছু করার নেই কিন্তু আমি কখনোই এই সন্তানের বিষয়ে তাকে কিছু জানাবো না। আর না তোমরা কিছু জানাবে।আশা করি আমার এই কথাটা তোমরা রাখবে।”
অদ্রিতার মা করুন স্বরে বলে,”এটা কি ঠিক হবে? বাবার কাছে তার সান্তানের আসার খবর গোপন করা তো ঠিক না।তুই তাকে একবার জানাতে পারিস্। আমি তো খারাপ কিছু বলছি না।”
তিনি আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে অদ্রিতার মাথায় হাত দিয়ে বলে,”এইসব তুই কি বলছিস্ মা।তোর বাবা কি মরে গেছে নাকি যে তুই এখান থেকে চলি যাবি।আমি যতদিন বেঁচে আছি তুই এই বাড়িতেই থাকবি। তুই আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান। আর নিজের সন্তান কি কখনো মা-বাবার মাথায় বোঝা হয় বল্?”
অদ্রিতা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমি চাই না আমার জন্য তোমরা সমাজের মানুষের কাছে কথা শুনো,তাদের সামনে আমার জন্য তোমাদের মাথা নত হউক, তা আমি চাই না তার থেকে এখান থেকে চলে যাওয়াই আমার জন্য ঠিক হবে হবে।”
আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”তুই আর একটা কথাও বলবি না।তুই যতদিন না পর্যন্ত নিজের পায়ে দাঁড়াবি তার আগে একবারের জন্যও এই বাড়ি থেকে যাওয়ার নাম নিবি না তোকে আল্লাহ কসম।আর যদি যাস তবে সেদিন আমার শেষ দিন হবে।”
অদ্রিতা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় আর বলে,”তুমি কখনো মুখে আর এই কথা বলবে না তবে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
তিনিও অদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরেন আর কিছুক্ষন পর তাকে ছেড়ে দিয়ে তার মার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলেন,”আমার মেয়েকে তুমি আর এই নিয়ে কিছু বলবে না।ও আরিয়ানকে কিছু জানাবে কি না তা একান্ত তার সিদ্ধান্ত হবে।ও না চাইলে আরিয়ানকে কেউ এই সন্তানের কথা বলবে না।এখন অদ্রিতা যা বলবে তাই হবে। ও যদি চায় তবে আরিয়ানের সাথে থাকবে আর যদি না চায় তবে থাকবে না।তুমি তাকে আরিয়ানের সাথে থাকার কথা আর দ্বিতীয়বার বলবে না।আমি চাই না আমার মেয়েটা আর কষ্ট পাক।ও যখন চাইছে আরিয়ানকে ডিভোর্স দিয়ে নিজের মতো থাকতে তবে তাই হবে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরিয়ানের সাথে আমি তার ডিভোর্সটা করিয়ে দিবো।যার কাছে আমার মেয়ের কোন মূল্য নেই তার কাছে আমি কখনোই আবার আমার মেয়েকে ফেরত পাঠাবো না।আমার মেয়েকে কেউ বিন্দু পরিমাণ অপমান, অবহেলা,অত্যাচার করবে আমি বেঁচে থাকতে তা কখনোই মেনে নিবো না।আর এমন কারো কাছে আমার মেয়েকে আমি পাঁঠাবো তা তুমি ভাবলে কি করে?”
অদ্রিতার মা করুন স্বরে বলে,” তুমিও আমাকে ভুল বুঝলে।আমি তো শুধু ওর ভালোর জন্য বলছিলাম।সমাজের মানুষের কথাগুলো কাঁটার মতো বিঁধবে তখন কি করে ও এই সব সহ্য করে নিজের সন্তানকে বড় করবে তা কি একবারও ভেবে দেখেছো?”
অদ্রিতার বাবা কন্ঠে গম্ভীর্যতা রেখে বলে,”আমি আছি আমার মেয়ের পাশে ও একা নয়। আর তোমাকে সমাজ নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না,মানুষ দুই-এক দিন কথা শুনাবে পরে তা ভুলে যাবে কিন্তু তার জন্য আমি কখনোই আমার মেয়েকে নরকের মধ্যে যেতে দিতে পারি না।আমি চাই না সারা জীবন আমার মেয়ে একই কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকুক।তার থেকে এর থেকে বেরিয়ে আসাই তার জন্য ঠিক হবে।আর এখন তুমি এই রুম থেকে বেরিয়ে যাও আমার মেয়েকে একটু রেস্ট নিতে দাও।” একটু রেগে কথাগুলো বলে তিনি বেরিয়ে যান তার মাও ওনার পিছে পিছে বেরিয়ে যান।
রোহিত অদ্রিতা স্বান্তনা দিয়ে বলে,” আপু তুমি কোন টেনশন করো না আমি তোমার পাশে আছি। এখন তুমি রেস্ট নেও আমি আসছি, এই বলে সে চলে যায়।”
অদ্রিতা শান্ত স্বরে বলে,” মাহিরা তুই গিয়ে নিলয় ভাইয়ার জন্য নাস্তা নিয়ে আয়।”
নিলয় স্বাভাবিক ভাবে বলে,আমার কিছু লাগবে না।আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে। এই বলে সে মাহিরার দিকে তাকায়,মাহিরার দিকে তাকাতেই সে বলে,আপু আমি এখন আসছি।তোমরা কথা বলো আর কিছু না বলে সে চলে যায়। মাহিরা চলে যেতেই নিলয় রেগে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি এমন কেন করলে?আমার সাথে ওই দিন মিথ্যা কথা কেন বললে,কি করে তুমি আমাকে এতটা মিথ্যা কথা বলতে পারলে?আমি তো তোমাকে সব কিছু খোলে বলেছিলাম।সব সত্যিটা জানার পরেও তুমি কি করে পারলে আমাকে মিথ্যা কথা বলতে।কোনো তুমি এতদিন মুখ বুঝে সব কিছু সহ্য করেছো, কেন?”নিলয়ের কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান প্রকাশ পেয়েছে যা অদ্রিতার বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি।
অদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান্ত স্বরে বলে,” তাছাড়া তখন আমার হাতে অন্য কোন উপায় ছিল না।আমি কি করে নিজের স্বামীকে অন্যের কাছে ছোট করতাম বলেন।তাছাড়া আমার পবলেমের কথা বলে অযথা আপনাকে বলে কেন বিরক্ত করবো বলেন।আমার ভাগ্যে যা লিখা ছিল তাই হয়েছে, এতে তো আর কারো কোন হাত নেই।আপনি আমাকে দেখতে এসেছেন এই অনেক।এখন আপনি চলে যান, আপনার হয়তো অনেক জরুরি কাজ পরে আছে।আমি চাই না আমার জন্য আপনার লাইফে কোন পবলেম হউক।আপনি আপনার জীবনে এগিয়ে যান।ভালো কোন মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিন আর নিজের লাইফে সুখী হন আর ভালো থাকেন।”
অদ্রিতার কথা শুনে নিলয় রাগে ভ্রু কুঁচকে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কি করে পারলে আমাকে এই কথাগুলো বলতে?তুমি আমাকে এতটা স্বার্থপর কি করে ভাবতে পারলে।তুমি কি করে ভাবলে তোমার এমন একটা বিপদের দিনে আমি তোমাকে একা ফেলে চলে যাবো।আমি নিজের কথা ভাববো,,,,,,,
.
..
…
চলবে,,,,,,,,