#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৯_৪০
অারিয়ান দেখে অদ্রিতা সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। একচুলও নড়ছে না।তা দেখে তার রাগটা আরও বেড়ে যায়।তাই চিল্লিয়েই বলে,” আমি তো তোমাকে কিছু বলেছি।তাই মূর্তির মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে সরে দাঁড়াও। আমার লেট হচ্ছে, ইডিয়ট।”
অদ্রিতা আর কোন কথা বলে না।সে আরিয়ানের সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।আরিয়ান নিচে নেমে তার মা-বাবাকে মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান যাওয়ায় সাথে সাথে অদ্রিতা নিচে নেমে আসে।সে সুফায় এসে বসে থাকে, আরিয়ানের ব্যবহার তাকে ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। এখন তার খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু তাও করতে পারছে না।জীবনটা অাসলেই অনেক অদ্ভুত। এখানে ভালোবাসা, বিশ্বাসের কোন মূল্য নেই। মূল্য নেই ভালো মানুষের, এইসব ভাবছে আর মন খারাপ করে সুফায় চুপচাপ বসে আছে।তার শ্বাশুড়ি এসে দেখে অদ্রিতা সুফায় চুপচাপ বসে আছে, দেখে মনে হচ্ছে তার মন ভালো নেই।তাই তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,,,,
কি হয়েছে মন খারাপ করে বসে আছো কেন?
অদ্রিতা ছোট করে বলে,” এমনি,,”
অদ্রিতার শ্বাশুড়ি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,” সব কিছু ঠিক আছে তো।আরিয়ান কি তোকে কিছু বলেছে?”
না,মা।ওনী কিছু বলেননি,,,,,
তবে মন খারাপ কেন?বাড়ির কথা মনে পরছে বুঝি।
অদ্রিতা করুন স্বরে বলে,”হুমম,,,”
আমাকে কি তোর মা বলে মনে হয় না।বাড়ির কথা মনে পরলে আমার কাছে চলে আসবি।আমি তো তোর মা- ই।আচ্ছা আরিয়ান আজ বাড়ি ফিরুক বলবো তোকে নিয়ে একবার ওই বাড়িতে ঘুরে আসতে।
অদ্রিতা মুচকি হেসে বলে,”তুমি আর বাবা সত্যিই অনেক ভালো, বলে তার শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে।”
পাগলি মেয়ে আমার,বলে হেসে দেন।
অন্যদিকে আরিয়ান রাইশার হোটেলের সামনে গিয়ে রাইশা কল দিয়ে বলে নিচে আসতে।রাইশা ৫ মিনিটের মধ্যে নিচে চলে আসে।আরিয়ান রাইশাকে গাড়িতে উঠতে বলে আর রাইশাও গাড়িতে উঠে পরে।পরে আরিয়ান তাকে জিজ্ঞেস করে,”আজ কোথায় যাবে?”
রাইশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,” তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।”
ওহ তাই!তবে চলো আজ সিলেটে ঘুরে আসি?
রাইশা অবাক হয়ে বলে,” তা তো এখান থেকে অনেক দূরে।আসতে আসতে তো অনেক রাত হয়ে যাবে।তোমার বউ আবার কিছু বলবে নাতো?ও তো আমার তোমাকে ভুল বুঝতে পারে।
আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,”সে কি বলবে,আর সে ভুল বুঝক বা না বুঝক তাতে আমার কিছু না।ওকে আমার একদম পছন্দ না।আমি যাস্ট ওকে সহ্য করতে পারি না।”
রাইশা মজা করে বলে,” তবে কি এখনো আমাকে পছন্দ করো নাকি?”
আরিয়ান মজা করে বলে,” উহু,,,,,তোমাকে কেন পছন্দ করতে যাবো?”
রাইশা মন খারাপ করে বলে,” কি!তবে আমাকে নিয়ে ঘুরতে কেন আসলে?থাক আমাকে নিয়ে তোমার ঘুরতে যেতে হবে না।”
আরিয়ান হেসে বলে,” আরে বাবা মজা করছিলাম। আমি তো তোমাকেই পছন্দ করতাম আর তোমাকেই নিজের স্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছি,কিন্তু,,,, ”
তুমি চাইলে এখনো হয়তো তা সম্ভব বলে রাইসা রহস্যময় হাসে।
আরিয়ান রাইসার কথার মানে বুঝতে না পেরে বলে,”মানে,কি বলছো তুমি এসব?আমি এখন বিবাহিত। এখন তা কি করে সম্ভব?”
তা পরে জানতে পারবে,এখন যাওয়া যাক।
আরিয়ান ছোট করে বলে,” আচ্ছা,,,,, ”
পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে।বাহিরের অপরুপ দৃশ্য,সারি সারি গাছ।সব কিছু সবুজে ঘেরা,এইসব কিছু দেখতে দেখতে কখন যে জাফলং চলে এসেছি তার খেয়ালই হলো না।জাফলং পৌঁছেই আমি গাড়ি থামালাম।
আমরা জাফলং চলে এসেছি,এখন নামো।
রাইশা অবাক হয়ে বলে,” এত তাড়াতাড়ি, আর এইটা কোন রাস্তা?মানে আমি আগেও এখানে এসেছি,তখন তো মনে হয় অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছি।”
এখন আমরা গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং জিরো পয়েন্টে এসেছি।এ রাস্তা অধিক জনপ্রিয় আর এখান দিয়ে আসতে সময়ও অনেক কম লাগে, তাই এখান দিয়ে এলাম।
ওহ আচ্ছা, জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর।পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে সাদা স্বচ্ছ পানি গড়িয়ে নিচে পড়ছে।ঝড়নার দিকে তাকাতেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।সবুজ লতাপাতা ঘেরা পাহাড় থেকে স্বচ্ছ পানি নিচে পাথরে পরছে।বিভিন্ন রঙের সুন্দর সুন্দর পাথর,সে গিয়ে যেখানে পানি পরে তার থেকে একটু দূরে দাঁড়ালো। স্বচ্ছ পানিতে তার পা ভিজে যাচ্ছে। সে আরও একটু বেশি পানিতে নেমে আরিয়ানকে পানি ছিটিয়ে দিলো।তুমি উপরে কি করছো নিচে নেমে এসো,ভালো লাগবে।
আরিয়ানও নিচে নেমে এসে স্বচ্ছ পানিতে দাঁড়ালো। কিছু এখানে ঘুরাঘুরি করে তারা উপরে উঠে গেল।পরে চা বাগানে গিয়ে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করি,রাইশা অবশ্য কিছু ছবিও তোলে।পরে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।আজ যদি অদ্রিতার জায়গায় রাইশা আমার স্ত্রী হতো তবে সত্যিই অনেক ভালো হতো।কত ইচ্ছে ছিল নিজের বউয়ের হাতে হাত রেখে ঝড়না দেখবো।একসাথে ঝড়নার পানিতে ভিজবো,এই পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথে তার হাতে হাত রেখে গল্প করবো।কিন্তু তা আর হলো কই।
এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সন্ধ্যার পরিবেশটা আরও অনেক সুন্দর লাগছে।গাছের জন্য এখনই চারিদিকে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেছে।তবুও অদ্ভুত এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করছে।সে আর কিছু না ভেবে গাড়ি স্টার্ট দিলো চলে আসার জন্য। প্রায় সাড়ে ১১ টার দিকে সে রাইশাকে তার হোটেলের সামনে নামিয়ে দেয়।
রাইশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, “আজ আমি অনেক খুশি। ভাবতেই পারিনি তুমি আমার সাথে আজ সারাটা দিন থাকবে,জাফলং এ গিয়ে অনেক ভালো লাগলো। আজ অনেক ইনজয় করলাম আর সব তোমার জন্য। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।আর কিছু না বলে আরিয়ানের গালে একটা কিস করে সে চলে যায়।”
রাইশা এমন একটি কাজ করবে তা আরিয়ান একদমই ভাবেনি।সে অবাক হয়ে কিছুক্ষন ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে পরে হেসে সেখান থেকে চলে যায়।
অন্যদিকে অদ্রিতা আরিয়ানের জন্য টেনশন করছে।প্রায় ১২ টা বাজে তবুও ওনী আসছেন না। ওনী তো কখনোই এত রাত করেন না,তবে এখনো কেন আসছে না?কেন জানি তার মন কু ডাকছে,মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ঘটবে।
কিন্তু আরিয়ানকে যে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে সে কোথায় আছে তার সাহস সে পাচ্ছে না।সকালেই তার সাথে ওইভাবে কথা বলেছে।তাকে না করে গেছে তার কোন ব্যাপারে কথা না বলতে।এখন যদি আবার ওনাকে কল দেই তবে নিশ্চয়ই আবার রাগ করবেন,কিন্তু আমার যে অনেক টেনশন হচ্ছে ওনাকে নিয়ে।এখন আমি কি করি?মা- বাবাও তো ঘুমিয়ে গেছেন এত রাতে তাদের ডাকা ঠিক হবে না।
আচ্ছা একবার কল দিয়েই দেখি।আমার সাথে তো খারাপ ব্যবহারই করবে পবলেম নাই,আমার এইসব কিছুই সহ্য হয়ে গেছে,আর কিছু না ভেবে সে আরিয়ানকে কল দেয়।
.
..
…
চলবে,,,,,,,,,
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪০
আচ্ছা একবার কল দিয়েই দেখি।আমার সাথে তো খারাপ ব্যবহারই করবে পবলেম নাই,আমার এইসব কিছুই সহ্য হয়ে গেছে, আর কিছু না ভেবে সে আরিয়ানকে কল দেয়।২-৩ বার কল দেওয়া পরে আরিয়ান ফোন রিসিভ করে।
আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,”ফোন কেন করেছো?”
অনেক রাত হয়েছে তো,তাই টেনশন হচ্ছিল।আপনি ঠিক আছেন তো,কখন আসবেন?
আমি ঠিক আছি,আর আসছি।এই বলে আরিয়ান ফোন কেটে দেয়।আর মনে মনে ভাবতে থাকে,আমি যা করছি তা করা কি আমার ঠিক হচ্ছে? আমার বউটা কালো হলে কি হবে সে আমাকে অনেক ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে।আমার কি ঠিক হচ্ছে তার ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে খেলা।তাকে ঠকাচ্ছি না তো আমি,কিন্তু আমি-ই বা কি করবো?আমি যে কিছুতেই তাকে মেনে নিতে পারছি না।পারছি না তাকে স্ত্রীর অধিকার দিতে।রাইশাকে যত দেখি ততোই আমি তার প্রতি আসক্ত হয়ে যাই।সত্যিই কি আমি রাইশাকে ভালোবাসি, না তার প্রতি আমার যা আছে তার সব কিছুই মোহ।এইসব ভাবছে আর গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ সে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে বড় একটা ট্রাক আসছে,অনেক কষ্টে শেষ মুহূর্তে ব্রেক করে যার ফলে ট্রাক থেকে বেঁচে যায় কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি কারণ গাড়ি গিয়ে সামনের একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়। তার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে সাথে সাথেই সে অজ্ঞান হারায়।মূহুর্তেই সেখানে লোক জমে যায়।কয়েকজন মিলে তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।একজন আরিয়ানের ফোন পায়।ফোনে নিশ্চয়ই তার বাড়ির নাম্বার আছে,এই ভেবে ফোন অন করে লাস্টের নাম্বারে কল দেয়।
কল দিতেই অদ্রিতা সাথে সাথে কল রিসিভ করে,
অপরিচিত -হ্যালো,আপনি কে বলছেন?এই ফোনটা যার ওনী এখন হসপিটালে আছেন।ওনার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।আপনারা তাড়াতাড়ি এই…….. হাসপাতালে চলে আসেন।
আরিয়ানের এ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনে অদ্রিতা হুশ হারিয়ে ফেলে। এখন সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।তার হাত থেকে ফোন পরে যায়,কয়েক সেকেন্ড ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পরে তার হুশ আসে।সে কান্না করতে করতে তার শ্বশুর- শ্বাশুড়ির রুমের সামনে যায়। তার হাত-পা প্রচন্ড কাঁপছে।মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।অনেক কষ্ট করে সে তার শ্বাশুড়িকে ডাক দেয়।৩-৪ বার ডাক দেওয়ার পরে ওনী দরজা খোলে।
ওনী ঘুম ঘুম চোখে অদ্রিতার দিকে তাকায়, তাকিয়েই দেখে সে কান্না করছে।তিনি ব্যস্ত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে তোর,এত রাতে কান্না করছিস্ কেন?আরিয়ান কি তোকে কিছু বলেছে?”
অদ্রিতা কান্না করতে করতে বলে,”ওনার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।ওনী এখন এই…..হাসপাতালে আছেন।তাড়াতাড়ি চলুন আর কিছু বলতে পারছে না।কেঁদেই চলেছে।মাও কয়েক মুহূর্ত ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন।অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমার অবস্থা দেখে আর কিছু বললেন না।ভিতরে গিয়ে বাবাকে নিয়ে এলেন।মাও আমার মতো কান্না করতে লাগলো।আমরা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম,গাড়িতেই বাবা আমার বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়ে দিলেন।আমার তো সেই দিকে কোন খেয়ালই ছিল না।গাড়ি অনেক দ্রুতই চলছে তবুও মনে হচ্ছে রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না।অবশেষে হসপিটালে পৌঁছালাম।”
হসপিটালে ঢুকেই বাবা দৌড়ে রিসিপশনে গেলেন। ওইখানে একটি মেয়ে বসেছিল তাকে জিজ্ঞেস করলেন,”আমার ছেলে,আরিয়ান চৌধুরী কোন কেবিনে আছে?”
,,,,কে আরিয়ান চৌধুরী ( মেয়েটি বললো)
বাবা ব্যস্ত হয়ে বললেন,”একটু আগে যার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে,আর এখন এই হসপিটালে ভর্তি আছে।”
ওহ,আচ্ছা। ওনী তো এখন আই.সি.ও তে আছেন।মেয়েটি স্বাভাবিক স্বরে বললো।
মেয়েটির কথা শুনে দৌড়ে আই.সি.ও সামনে চলে এলাম।আই.সি.ও এর সামনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার বের হয়ে আসার অপেক্ষা করছি।ডক্টর বের হতেই দৌড়ে তার কাছে গেলাম। ডক্টর ওনী এখন কেমন আছেন?
ডাক্তার স্বভাবিক কন্ঠে বললেন,”রোগীর অবস্থা তেমন ভালো নয়,২৪ ঘন্টা না কিছুই বলা যাবে না।ওনার অনেক ব্লাড লস্ট হয়েছে,আমরা রক্ত দিয়েছি।কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি জ্ঞান ফিরে না আসে তবে আমাদের হাতে আর কিছু নেই।সৃষ্টিকর্তাকে ডাকেন,এই বলে ডক্টর চলে গেলেন।”
ডক্টর চলে যেতেই আমি ফ্লোরে বসে পরলাম।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছি না।ডাক্তারের কথা শুনেই আমার শ্বাশুড়ি অজ্ঞান হয়ে গেছে।ওনাকে একটি কেবিনে রাখা হয়েছে।স্যালাইন দিচ্ছে,বাবা মার কেবিনে সামনে বসে আছেন।ফ্লোরে বসেই আমি কান্না শুরু করছি,কিছুতেই কান্না থামাতে পারছি না।মনে মনে নিজেকে দোষ দিচ্ছি,আমার জন্যই হয়তো এমন হয়েছে। আমার জন্যই তো এত রাতে বাহিরে থাকেন।এইসব ভাবছি আর কান্না করছি,কিছুক্ষন পরেই আমার বাড়ির সবাই চলে আসলেন।মা আমাকে সান্তনা দিতে লাগলে,বাবা গিয়ে আমার শ্বশুরের পাশে দাঁড়ালেন।আমার ভাই- বোন বলতে লাগলো,আপু কেঁদো না।দুলাভাই খুব তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে যাবে।তুমি যদি ভেঙে পরো তবে অন্যদের কি করে সামলাবে।দুলাভাইয়ের দেখাশুনা কে করবে।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ সেখান থেকে উঠে গেলাম।ওজু করে তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়ালাম।মোনাজাতে অনেকক্ষন কেঁদেছি।আল্লাহ তোমার কাছে আমি আর কিছু চাই না শুধু আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও।আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে,নিজেকে কোন মতে সামলাতে পারছি না।আবার দৌড়ে আই.সি.ওর সামনে এলাম।মা আমাকে ধরে সিটে বসালেন।মার কোলে মাথা রেখেই কান্না করছি।মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি তার খেয়াল নেই।সকালে ফজরে আজান দিলে মা আমাকে ডাক দেয়।কখন যে সকাল হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারিনি,আমি উঠে নামাজ পরে নেই।নামাজ শেষ করে মোনাজাতে একটি দোয়া করি ওনী যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান।
নামাজ পড়া শেষ হলেই আই.সি.ওর সামনে গিয়ে দাড়াই।এখন ভিতরে কোন ডক্তর নেই,একজন নার্স দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভিতরে গেলাম।ওনার মাথায় ব্যান্ডেজ করা,হাতের ও পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা,মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরানো,সাথে স্যালাইন আর রক্ত চলছে।ওনাকে এভাবে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারছি না।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরতে লাগলো।আমার কান্নার আওয়াজ শুনে নার্স পিছনে তাকালেন।
নার্স ব্যস্ত হয়ে বললেন,”কি করছেন তা কি,আপনি এখন বাহিরে যান।ডাক্তার যদি দেখে আপনি ভিতরে এসেছেন,তবে আজ আর আমার চাকরি থাকবে না।আপনি প্লিজ বাহিরে যান।”
আমি বাহিরে চলে এলাম।সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি,আমার একপাশে মা বসে আছে।হসপিটালে এত মানুষ থাকতে দেয় না তাই রাতেই বাবা আর ভাই- বোন চলে গিয়েছে একটু পরে আবার হয়তো আসবে।আমার শ্বাশুড়ি মার জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু ওনার শরীর এখনো দুর্বল তাই এখনো কেবিনে শুয়ে আছে আর স্যালাইন চলছে।
আরিয়ানঃ সকালেই আমার জ্ঞান ফিরলো।মাথায় পচন্ড ব্যাথা করছে।গত রাতের সব কথা মনে পরে গেলো।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা, হাতে স্যালাইন দেওয়া।চারপাশে তাকিয়েই বুঝতে পারি এইটা একটি হসপিটাল।আমার না এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল, তবে আমি হসপিটালে কি করে এলাম?আমাকে এখানে কে আনলো?উফফ,,,কিছু ভাবতে পারছি না।মাথাটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে।অক্সিজেন মাস্ক খোলে উঠে বসলাম।
নার্স অবাক হয়ে বলে,”ও মাই গড।আপনার এত তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে এসেছে।আপনি এ কি করছেন?আপনি শুয়ে থাকুন,আমি ডক্টর ডেকে আনি।”
এই বলে নার্স দ্রুত যায় ডক্টরের কাছে।ডাক্তার নার্সকে দেখে প্রশ্ন করে,” কি হয়েছে,আপনি এখানে কেন?”
রোগির জ্ঞান ফিরেছে।ওনী উঠে বসে আছেন,অক্সিজেন মাস্ক খোলে ফেলেছেন।
ডাক্তার ব্যস্ত হয়ে বলে,”ওহ,তাড়াতাড়ি চলুন।”
ডক্টর গিয়ে দেখে আরিয়ান উঠে বেডে বসে আছে।
আপনি উঠে বসে আছেন কেন?আপনি সুয়ে রেস্ট নিন,আপনি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হননি।নার্স আরিয়ানকে শুয়িয়ে দেয়।
ডাক্তার নার্সকে বলে,” আপনি ওনার সাথে থাকুন। যদি রোগীর কোন পবলেম হয় তবে আমাকে ডাক দিয়েন।এই বলে ডক্টর বাহিরে বের হয়ে আসে।”
.
..
…
চলবে,,,,,,