অপূর্ণতা পর্ব-১৪+১৫

0
1303

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৪_১৫

সকালের ফজরের আজান শুনে অদ্রিতার ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম থেকে উঠে নিজেকে খাটে দেখে অবাক হলো।
সে তো নিচে ওইভাবেই ঘুমিয়ে ছিল তবে খাটে কি করে এলো!পরে ভাবে হয়তো খাটে এসে ঘুমিয়ে ছিল মনে নেই।রাতের কথা ভাবতেই খারাপ লাগলো। আরিয়ানের ওই কথা গুলোই তার কানে ভাজতে লাগলো।সে কি করে তাকে এমন কথা বলতে পারলো। এই সব ভেবে তার চোখ দিয়ে আবারও পানি পরছে।কোনো ভাবে নিজেকে শান্ত করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে নামাজ পরে নেয়।নামাজ পড়া শেষ হলে কতক্ষন কোরআন শরিফ পড়ে সুজা নিচে চলে যায়।

নিচে গিয়ে দেখে কাজের বোয়া ডয়িং রুম ঝাড়ু দিচ্ছে। সে কিছু না বলে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না সেরে ফেলে।রুমে এসে দেখে এখনো আরিয়ান ঘুমাচ্ছে। সে তাকে ডাক দিতে চেয়েও দেয়নি।এখন সে আরিয়ানের উপর রাগ বা অভিমান করে আছে কিনা তা সে জানে না, কিন্তু রাতে আরিয়ানের বলা কথাগুলো সে ভুলতে পারছে না। যার জন্য সে তার থেকে দূরে থাকতে চাইছে।তাই সে নিজে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে, ফ্রেস হয়ে এসে দেখে আরিয়ান ঘুম থেকে উঠে গেছে।সে তার দিকে না তাকিয়ে আয়নার সামনে এসে চুল বাঁধতে থাকে। আরিয়ান কিছুটা অবাক হয়।আগের দিনতো এসে আমাকে ডাক দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। আজ কি হলো যে আমাকে দেখেও না দেখার অভিনয় করছে। ঘুম থেকে উঠতে এতো লেট হলো তবুও ডাক পর্যন্ত দিলো না।হয়তো কাল রাতের কথা শুনে এখনো রাগ করে আছে তাই এমন করছে। যা খুশি করোক গিয়ে আমার কি?আমি তো এইটাই চাই যে ও আমার থেকে দূরে থাকুক।

আরিয়ান ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।ফ্রেস হয়ে এসে দেখে অদ্রিতা রুমে নেয় সে আর কিছু না ভাবে কাপড় চেঞ্জ করে খাবার টেবিলে চলে যায়। গিয়ে দখে সেখানে সবাই তার জন্য ওয়েট করছে। টেবিলে বসতেই তার বাবা বললো এতো লেট করলি কেন তোর জন্য সেই কখন থেকে ওয়েট করছি?

একটু ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল তাই।

কাল থেকে যাতে আর না হয় আর বউমা ওর দেরি হলে তুমি ওকে দেকে উঠিয়ে দিবে।

জি,বাবা।

অদ্রিতা সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজেও টেবিলে বসে খাবার খেয়ে নেয়।খাওয়া শেষ হলে তার বাবা বলে,”আরিয়ান একটু পরে বউমাকে নিয়ে তার বাড়িতে যাবি তাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।”

আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে শান্ত স্বরে বলে, এখন যেয়ে কি করবে? গতকালই তো তার পরিবারের সবার সাথে কথা বলছে। তাদের সাথে দেখা করছে। তাই অন্য কোন দিন নিয়ে যাব।আজ পারবো না।

আরিয়ানের বাবা কিছুটা রেগে গম্ভীর স্বরে বলে, “আমি তোর মতামত জানতে চাইনি।আর পরে তো সময় পাবি না তোর ছুটি শেষ হয়ে যাবে। তাই আজই নিয়ে যাবি এইটা ফাইনাল। এই নিয়ে আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।আর যাওয়ার সময় কিছু নিয়ে যাস। খালি আবার চলে যাস না। ”

আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে ঠিক আছে কথাটা বলে রুমে চলে যায়।

অদ্রিতা কিছু বলে না,সে সব কিছু গুছিয়ে ঘরে এসে দেখে আরিয়ান রেডি হয়ে বসে আছে।অদ্রিতা রুমে ঢুকতে দেখে রাগী ভাবে বলে,” আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি। তুমি ৫ মিনিটে রেডি হয়ে আসবে।একদম বেশি সময় নিবে না।”

অদ্রিতা কিছু বলে না শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেয় আর আরিয়ান চলে যায়।কিছুক্ষন পরে আরিয়ান সিড়ির দিকে চেয়ে দেখে অদ্রিতা আসছে।সে বুঝতে পারছে না এখন বোরকা পরে আসার কি মানে যাবে তো গাড়ি দিয়ে তবে বোরকা পরার কি দরকার ছিল।তাকে দেখেই কেন যানি এখন তার হাসি পাচ্ছে। তার মা সামনে থাকায় হাসতেও পারছে না। কিন্তু মানুষ তো আর বেশিক্ষন হাসি আটকিয়ে রাখতে পারে না। ঠিক তেমনি আরিয়ান পারছে না।তাই সে হেসে ফেলে।তার মা অনেকক্ষন ধরে আরিয়ানের এই অবস্থা দেখছে।মনে মনে ভাবছে ছেলে পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি এভাবে একা একা বসে বসে হাসছে। তাই তিনি জিজ্ঞেস করেই ফেলে,” এভাবে একা একা হাসছোস্ কেন? কি হয়েছে?”

আরিয়ান হেসে হেসেই বলে এমনি হাসছি কিছু হয় নি।

আরিয়ানের মা অবাক হয়ে বলে,” এমনি আবার কেউ হাসে নাকি। আর মানলাম এমনেতেই হাসছোস্, তবে বউমার দিকে তাকিয়ে হাসার কোন কারণ তো দেখছি না…. বল?”

আরিয়ান তার মায়ের কথা শুনে বিপাকে পরে যায়। সে এখন তার মাকে কি বলবে তা বুঝতে না পেরে বলেই দেয়, “আমরা তো যাব গাড়ি দিয়ে তো বোরকা পরার কোন কারণ তো দেখছি না।তাছাড়া ও এমনিতেই কালো তার উপরে কালো বোরকা পরে মুখে হিজাব পরে এসেছে দেখতে কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে তাই হাসি পাচ্ছে। ”

আরিয়ানের কথাগুলো শুনে অদ্রিতা অনেক কষ্ট পেল।তার চোখে পানি এসে পরেছে তবুও সে কাঁদতে পারছে না।তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার চোখের পানি এখনি বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পরবে। এততা কষ্ট পাওয়া সত্বেও সে মুখে কিছু বলে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

অন্যদিকে আরিয়ানের কথা শুনে তার মার প্রচন্ড রাগ উঠে যায়। তিনি কখনো এইটা আশা করেনি তার ছেলে কোন মেয়েকে এইভাবে অপমান করতে পারে। সে তো তাকে এমন শিক্ষা দেয়নি।সবসময় মেয়েদেরকে সম্মান করার শিক্ষা দিয়েছে। তবে কি করে সে অদ্রিতা এই কথা বলতে পারে।তাই তিনি রাগেই বলেন,
তোর সাহস কি করে হয় আমার সামনে ওকে এইভাবে কথা বলার। আমরা কি তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি।মানছি মেয়েটা একটু কালো তাই বলে তাকে তুই এইভাবে অপমান করবি।আর মেয়েটা পর্দা করে এইটা তো ভালো কথা। তুই কটতা ভাগ্যবান যে এমন একটা স্ত্রী পেয়েছত, যে কিনা নিজের স্বামি ছাড়া অন্য কারো সামনে পর্দা ছাড়া বের হয় না।তোর তো উচিত তাকে নিয়ে গর্ববোধ করা আর উল্টো তুই তার অপমান করিস্।তোর মুখ থেকে যদি কখনো এমন কথা শুনি তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
.
.
.
চলবে…….

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৫

এই প্রথম আরিয়ান তার মাকে এমন ভয়ঙ্কর রুপে দেখলো।সে কখনো কল্পনা করতে পারেনি এই সামান্য কথায় তার মা এততা রাগ করতে পারে। এই কথায় তার মা এইভাবে তার সাথে কথা বলতে পারে।এমনিতে তার মা অনেক শান্ত- শিষ্ট। আরিয়ান তাদের একমাএ সন্তান, তাই সে যাই করুক না কেন কখনো তার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলেনি, এভাবে ধমক দেয়নি। আসলে মা- বাবার একমাত্র সন্তান বলে সবসময় শুধু তাদের ভালোবাসা পেয়েছে। মনে মনে অদ্রিতাকে দোষারুপ করতে থাকে সে।যেই মা তার সাথে কখনো উঁচু স্বরে কথা বলেনি আজ তার জন্য এভাবে এতগুলো কথা শুনালো।

আরিয়ান তার মার দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি এখনো রেগে আছেন।আজ তার মাকে এই রুপে দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। তাই তো সাথে সাথেই বলে,” আচ্ছা আই এম সরি।ভুল হয়ে গেছে আর কখনো হবে না। এখন আমাদের যেতে হবে নইলে দেরি হয়ে যাবে।”

আরিয়ানের মা রেগে বলে সরি আমাকে না বউমাকে বল্।

আরিয়ান তার মায়ের কথায় বাধ্য হয়ে অদ্রিতাকে সরি বলে।

আরিয়ানের মা গম্ভীর স্বরে বলে,”ঠিক আছে.. তোরা সাবধানে যাস্।আর অদ্রিতা তুই ওর কথায় কষ্ট পাস না।ও এমনই কি বলতে যে কি বলে ফেলে তার কোনো খেয়াল থাকে না।”

অদ্রিতা মুচকি হসে বলে, “আমি কষ্ট পাইনি মা। তুমি আর বাবা নিজেদের খেয়াল রেখো আমরা কালকেই চলে আসবো।”

ইম্পসিবল….. কি বলছো এইসব। আমরা রাতেই চলে আসবো।ঐখানে থাকার আবার কি দরকার?

আরিয়ানের মা গম্ভীর্যতা বজায় রেখেই বলে, হ্যাঁ…. এইটা নিয়ম। তোদের আজ রাত সেখানে থাকতে হবে। রাতে সেখানে থেকে সকালে বা বিকালে চলে আসতে পারস্।আর এই নিয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।”

আরিয়ান আর কিছু না বলে কিছুটা বিরক্ত হয়ে গাড়িতে এসে বসে।অদ্রিতাও তার পিছু পিছু গাড়িতে গিয়ে বসে।আরিয়ান অদ্রিতাকে আস্তে করে বলে ভালোই করেছো মুখ ঢেকে হিজাব পড়েছো। নইলে তোমার মতো কালো মেয়েকে আমার পাশে দেখে মানুষ যা নয় তা বলতো।তার থেকে ভালো হয়েছে তুমি মুখ ঢেকে হিজাব পরে আছো।এখন তোমাকে কেউ দেখতে পাবে না আর আমাকেও কোন কথা শুনতে হবে না।বাঁচা গেল,,,

আরিয়ানের এই কথায় সে অনেক কষ্ট পায় তবুও মুখ ফোটে তাকে কিছু বলে না। তার মুখটা আরিয়ান থেকে সরিয়ে গাড়ির গ্রাস দিয়ে বাহিরের দিকে তাকায়।বাহিরে তাকিয়েই নিজের চোখের পানি মুছে। সে আর একবারের জন্যও আরিয়ানের দিকে তাকায় নি। এইপাশে তাকিয়েই নিরবে কান্না করে।

আরিয়ান বুঝতে পারে তার এই কথায় অদ্রিতা অনেক কষ্ট পাচ্ছে হয়তো ঐদিক ফিরে কান্না করছে। এইটাই তো সে চেয়েছে যে অদ্রিতা কষ্ট পাক। তার জন্যই তো ইচ্ছে করে এই কথা গুলো বলেছে।অদ্রিতার জন্যই তো আজ প্রথম তার মা তার সাথে এইভাবে কথা বলেছে।এতগুলো কথা তো তার জন্যই তো শুনতে হয়েছে তার শাস্থি তো তাকে পেতেই হবে।তাছাড়া আমি এত সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও ওর মতো কালো মেয়েকে কি করে মেনে নিব।আমার পক্ষে কখনোই এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। জাস্ট ইম্পসিবল।তোমার সাথে এমন ব্যবহার করবো যে তুমি বাধ্য হবে আমাকে ডিভোর্স দিতে।

একটু পরে হঠাৎ আরিয়ান গাড়ি থামায়। হঠাৎ করে গাড়ি থামাতেই অদ্রিতা আরিয়ানের দিকে তাকায়। তা দেখে আরিয়ান বলে… তুমি গাড়িতে বসো আমি কিছু নিয়ে আসি।

আপনাকে কোথায় যেতে হবে না। কিছু লাগবে না। আমাকে তো আপনার ওয়াইফ হিসেবেই মানেন না। তো এই সব ফর্মালিটির কোনো দরকার নাই।

আরিয়ান ঝারি মেরে বলে তোমাকে বেশি কথা বলতে হবে না। আমি জানি আমার কি করা উচিত সো আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না। বসতে বলেছি যাস্ট চুপ করে বসো।

আরিয়ানের এইকথা শুনে সে সে ভাবতে থাকে কোনটা তার আসলরুপ। কখনো মনে হয় ওনী অনেক ভালো আর আমাকে হয়তো আস্তে আস্তে মেনে নিবেন। আর কখনো মনে হয় ওনী ভালো নয় আর আমাকে মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় ।প্রায় ২০ মিনিট পরে আরিয়ান অনেক গুলো প্যাকেট নিয়ে গাড়িতে এসে বসে। অদ্রিতার দিকে তাকাতেই আরিয়ান বুঝতে পারে সে অনেক অবাক হচ্ছে। তাই বলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তোমার মা- বাবাকে বুঝাতে হবে তো তারা কোন ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছে। তাদের বুঝাতে হবে তো কালো হওয়া সত্ত্বেও তাদের মেয়ে কত ভাগ্যবতী যে এমন সুন্দর আর ভালো ছেলের বউ হয়েছে….. তাই না।

আরিয়ানের কথা শুনে তার সব সংসয় কেটে যায়। বুঝতে পারে তার ধারণা কতো ভুল ছিল।আরিয়ান তো শুধু তার পরিবারকে দেখানোর জন্য এইসব নিয়ে গেছে। এখন কেন জানি তার মনে হচ্ছে আরিয়ান তাকে কোনো দিনও মেনে নিতে পারবে না।হয়তো সারা জীবনই সে এভাবে তাকে অপমান করবে।সে জানে না এই বিয়ের শেষ পরিণতি কি হতে চলেছে। তবুও সে চেষ্টা করবে আরিয়ানের মনের মতোন হওয়ার। কিন্তু আদৌও কি আরিয়ান কখনো অদ্রিতাকে মেনে নিবে? তাকে স্ত্রীর অধিকার দিবে,আদৌও কি কখনো পূর্ণতা পাবে তাদের সম্পর্ক?তার মনে হাজারও প্রশ্ন কিন্তু তার কোনোটির উত্তর তার কাছে নেই,,,,,,,
.
.
.
চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে