#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১০_১১
অদ্রিতা রুমে ঢুকে দেখে আরিয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে তাই সে তাকে কয়েক বার ডাক দেয় কিন্তু আরিয়ান তবুও উঠে না।সে তাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে ডাক দিতে চায় কিন্তু পরক্ষনেই তার রাতের কথা মনে পরে যায়। তাই কোন উপায় না পেয়ে সে আরিয়ানের মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে দেয় আর তাতে তার ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম থেকে উঠে অদ্রিতার হাতে পানির জগ দেখতে পায় সে বুঝতে পারে তাকে জাগানোর জন্যই হয়তো তার মুখে পানি দিয়েছে।আরিয়ানের তাকানো দেখেই অদ্রিতা মনে মনে ভয় পেয়ে যায় এইবার জানি ওনী কি করেন? কিছুটা ভয়ে ভয়েই বলে,” মা আমাদের ফ্রেস হয়ে নিচে যেতে বলেছে একসাথে আর আপনাকে অনেকবার ডাকার পরেও উঠেন নি তাই বাধ্য হয়েই মুখে পানি দিয়েছি।”
আরিয়ান উঠে দাঁড়ায় এবং অদ্রিতাকে কিছু না বলেই সে ওয়াশরুমে চলে যায়। আরিয়ানের এই আচরণে অদ্রিতা কিছুটা অবাক হয়ে যায়।তাই সে যেখানে ছিল সেইখানেই ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।
এরই মধ্যে আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে চলে আসে আর অদ্রিতাকে ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়।
আরিয়ান শুধু টয়ালে পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে তা দেখে অদ্রিতা লজ্জায় মাথানিচু করে ফেলে।
আরিয়ান তা বুঝতে পেয়ে একটু রেগে গম্ভীর স্বরে বলে এখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তাকাও আমার দিকে,,,যত্তসব।মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই। জানোই তো ফ্রেস হয়ে আসছি যখন কাপড় চেঞ্জ করবো আর তুমি খাম্বার মতো এখনো দাঁড়িয়ে আছো। এখন কি তোমার সামনে কাপড় চেঞ্জ করবো নাকি!তোমার ভিতরে কি সামান্য কমনসেন্স টুকুও নেই।
আরিয়ানের বকা শুনে সে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসে। তার অনেক খারাপ লাগছে আরিয়ানের কথাগুলো শুনে। তাকে এইভাবে না বললেও পারতো।বিয়ের রাত থেকেই তার সাথে যখন কথা বলেছে সবসময় শুধু অপমান করেছে। তার থেকে বিয়েটা না করলেই তো পারতো। আমিও তো একটা মানুষ আমারও যে কষ্ট হয় তা কেন বুঝতে পারে না?
আরিয়ান বাহিরে এসে দেখে অদ্রিতা গভীর ভাবে কি যেন চিন্তা করছে আর শাড়ীর আঁচল হাতের আঙ্গুলে পেচাচ্ছে, সে চলে যাচ্ছে তবুও তার কোন খেয়াল নেই। তাই সে আবারও তাকে ধমক দিয়ে বলে,” এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন?কি এত ভাবছো যে কোন কিছুর খেয়াল নেই। নিচে যাবে না নাকি।না এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে।”
আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতা অপরাধের স্বরে বলে না মানে।
আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,” না মানে কি? তাড়াতাড়ি চলো।”এই বলে অদ্রিতাকে রেখেই সে নিচে চলে যায় আর অদ্রিতা তার পিছু পিছু নিচে যায়।টেবিলের সামনে এসেই দেখে সব খাবার গুলো টেবিলে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়ে গেছে আর তার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি খাবার টেবিলে তাদের জন্য ওয়েট করছে।তাই এসেই সবার আগে সে তার শ্বশুরকে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম, বাবা।”
ওয়ালাইকুম আসসালামু,কেমন আছো তুমি?
আলহামদুলিল্লাহ বাবা, আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ।আরিয়ান বস আর বউমা তুমিও বসো।আজকে সবাই একসাথে খাবো।
তার শ্বশুরের কথা শুনে সে কিছু না বলে চুপচাপ সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে সে নিজেও টেবিলে বসে পরে।সবাই যার যার মতো খেয়ে যাচ্ছে কোন কথা বলছে না আর এইদিকে অদ্রিতা কোন কিছু খেতে পারছে না ভয়ে।যদি রান্না ভালো না হয় তবে!
খাওয়া শেষ হলে তার শ্বশুর বলে,”আজ সালমাকে কিছু পুরস্কার দিকে হবে। অনেক দিন পরে এমন রান্না খাচ্ছি।একদম আমার মায়ের হাতের রান্নার মতো।আমার মনটা ভরে গেছে। ”
আরিয়ানের মা হেসে বলে, “পুরস্কার দিতে হলে তোমার বউমাকে দাও। আজকে সকাল সকাল উঠে নিজের হাতে সে সব রান্না করেছে। সালমা কিছু করে নি।”
তাই তো বলি আজকে রান্নার স্বাদ অন্য রকম কেন? আমি অদ্রিতাকে প্রথম দেখেই বুঝেছি ও অনেক ভালো ও সাংসারিক তাই তো আমার একমাএ ছেলের বউ করে এনেছি।পরে অদ্রিতাকে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি খুশি তো আমার ছেলের বউ হয়ে?”
অদ্রিতা কিছুক্ষন আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে পরে বলে হ্যাঁ বাবা,আমি অনেক খুশি।
খাওয়া শেষ হলে রুমে যাওয়ার সময় তিনি অদ্রিতাকে বলেন একটু পরে পার্লার থেকে মেয়ে আসবে তোমাকে সাজানোর জন্য আর বৌভাতের অনুষ্ঠানের জন্য বাড়িতে মেহমান আসতে শুরু করবে তাই আর রেস্ট নেওয়ার সময় পাবে না,এখনি গিয়ে রেস্ট নিয়ে নাও।
খাওয়া শেষ হতেই আরিয়ান রুমে চলে যায় আর অদ্রিতা সব কিছু গুছিয়ে পরে রুমে যায়।
.
.
.
চলবে…….
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১১
খাওয়া শেষ হতেই আরিয়ান রুমে চলে যায় আর অদ্রিতা সব কিছু গুছিয়ে পরে রুমে গিয়ে দেখে আরিয়ান খাটে শুয়ে আছে আর শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে,তাই সে গিয়ে শোফার উপর শুয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নেয়। প্রায় আধাঘন্টা রেস্ট নেওয়ার পরে দরজায় করো নক করার শব্দ শুনতে পায়।
অদ্রিতা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারে তারা হয়তো তাকে সাজানোর জন্য এসেছে, তাই সে তাদেরকে নিয়ে রুমে ঢুকে।আরিয়ান মেয়েদেরকে দেখা মাএই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
আরিয়ান রুমে থেকে যাওয়ার পরই তারা আমাকে সাজানো শুরু করলো।বৌভাতে আমি পিংক কালারের লেহেঙ্গা পরবো।লেহেঙ্গাটা দেখেই আমি অবাক হলাম।লেহেঙ্গাটা অনেক সুন্দর পরোটা জনিম সূতা আর পুতির কাজ করা।লেহেঙ্গাটি পরে আসতেই তারা আমাকে সাজানো শুরু করলো। আমাকে সাজানো শেষ হতেই তারা চলে গেল আর আমি আয়নার সামনে বসে আছি।সত্যিই নিজেকে এখন অন্যরকম লাগছে।
ডয়িংরুমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বাড়ির সবাই আর গেস্টরা সবাই ওইখানেই আছে।আমি একাই রুমে বসে আছি। একটু পরে রুমে ওনার এক চাচাতো বোন আসলো।
ভাবি তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে দেখবে ভাইয়া আজ তোমার থেকে চোখই ফিরাতে পারবে না।
তার কথা শুনে লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেছে।
আমি আস্তে করে বললাম কি যে বলো।
যে আমাকে কালো বলে সহ্যই করতে পারে না। আমার দিকে একবারও ভালো করে তাকাইনি পর্যন্ত সে আবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারবে না নিজের মনে মনেই কথা গুলো বললো অদ্রিতা।
সত্যি বলছি ভাবি আর তাড়াতাড়ি নিচে চলো সবাই নিচে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
হুমম…
আরিয়ান তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে এমন সময় হঠাৎ করেই তার সিঁড়ির দিকে চোখ পরে।সিড়ির দিকে চোখ পড়তেই সে অবাক হয়ে যায়।অদ্রিতাকে আজ একদম অন্যরকম লাগছে।পিংক কালারের লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, মুখে হালকা মেকাপ,চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া, ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক, লম্বা হালকা কুঁকড়ানো চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। সত্যিই তাকে এই সাজে অসাধারণ লাগছে। আমি যেন তার থেকে চোখই সরাতে পারছি না।
অদ্রিতা সিড়ি থেকে নিচে নামতেই আরিয়ানের দিকে চোখ পরে।ব্লু শার্টের সাথে ব্লাক কোর্ট সাথে ম্যাচিং করা সুজ আর প্যান্ট।হাতে ব্যান্ডেড ওয়াচ,সিল্কি চুলগুলো বাতাশে উড়ছে।ওনার থেকে চোখই ফেরাতে পারছি না।ওনার মতো স্বামী পেয়ে আমি সত্যিই অনেক লাকী।
সবাই তো আর তার প্রিয় মানুষের ভালোবাসা পায় না। আমিও না হয় নাই পেলাম।তবুও তো ওনী শুধুই আমার। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো ওনাকে নিজের করে নেওয়ার।ওনাকে কখনো কোন কষ্ট পেতে দিবো না। ওনার মনের মতোন হওয়ার চেষ্টা করবো।
আরিয়ানের খেয়াল হতেই সে অদ্রিতার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় আর ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে শুরু করে।
অদ্রিতাও লজ্জায় আরিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নেয় আর নিচে নেমে গ্রেস্টদের সাথে কথা বলতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই অদ্রিতার পরিবারের সবাই চলে আসে।তাদের সবাইকে দেখে সে অনেক খুশি হয়। একটা দিন যে সে তাদের ছাড়া কিভাবে থেকেছে তা সে নিজেই জানে। সে গিয়েই প্রথমে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে আর পরে সবার সাথে কথা বলতে থাকে।
হঠাৎ করে দরজার দিকে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। মনে মনে বললাম নিলদা এখানে। এতদিন পর আমি ওনাকে দেখবো তা ভাবতেই পারি নি।আমার যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।ওনাকে দেখা মাত্রই আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না। সেখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকি।
অন্যদিকে প্রায় দেড় বছরপর আমি এভাবে আমার ব্লাক কুইনকে দেখবো তা ভাবতেই পারিনি। আমার চোখ- মুখ লাল হয়ে গেছে। কোন ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না।বুকের ভিতরে তীব্র এক যন্ত্রণা হচ্ছে। সবকিছু কেমন যেন বিষাক্ত লাগছে।
.
.
.
চলবে…….