অন্যরকম অনুভূতি পর্ব -০৬

0
1642

#অন্যরকম অনুভূতি
#লেখিকা_Amaya Nafshiyat
#পর্ব_০৬

পরদিন দুপুরের দিকে বাসায় এসেছে মাহা।বাসায় এসে দেখলো আনিশা তার রুমে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।মাহাকে দেখে ফোন হাত থেকে রেখে শোয়া থেকে ওঠে বসলো সে।মাহা ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো;

মাহা:-কখন এসেছিস?

আনিশা আড়মোড়া ভেঙে জবাব দিলো;

আনিশা:-প্রায় একঘন্টা আগে।

মাহা:-ওহ।বস তুই আমি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আসি।

আনিশা:-আচ্ছা তাহলে যা।

মাহা কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলছে সে।শাওয়ারের পানি ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার চোখের জমানো জলগুলো।সাথে নিয়ে যাচ্ছে তার মনের শব্দহীন বুকফাটা আর্তনাদ।কাউকে নিজের চোখের জল দেখাতে পছন্দ করে না মাহা,তা সে যতই কষ্টে থাকুক না কেন!নিজের কষ্ট নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

বেশ কিছুক্ষণ পর গোসল সেড়ে বেরোলো মাহা।আনিশা গালে হাত রেখে মাহার দিকে তাকিয়ে আছে।অনেকক্ষন কান্না করার ফলে মাহার চোখ জোড়া টকটকে লাল হয়ে গেছে,এবং সেটাই আনিশা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।মাহা আনিশার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না,পাছে যদি বুঝে ফেলে যে সে কান্না করেছে!

আনিশা:-তুই যতোই চেষ্টা করিস না কেন,আমার কাছ থেকে নিজের কষ্ট কখনোই আড়াল করতে পারবি না।ঠিকই সব ধরে ফেলবো আমি।ল্যাংটাকালের ফ্রেন্ড বলে কথা,তোর মনের কথাই যদি না বুঝতে পারি তাহলে তো আমাদের এত বছরের ফ্রেন্ডশিপটাই বৃথা।

মাহা অপরাধীর মতো চেহারা করে আনিশার পাশে এসে বিছানায় বসলো।আনিশা মাহার গালে হাত বুলাতেই মাহা কেঁদে ফেলে।নিজেকে আর কন্ট্রোল করা সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে।বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।এত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না।আনিশাকে ঝাপটে ধরে নিরবে চোখের জল ফেলতে লাগে সে।আনিশা এভাবে কখনো কাঁদতে দেখে নি মাহাকে।আজই প্রথম।সে জানে মাহা যে আরাফাতকে ভালোবাসে,কিন্তু আরাফাত তার ফিলিংসকে পাত্তা না দিলেও কখনো সে এভাবে কান্না করে নি।আজ যেভাবে মন উজাড় করে কাঁদছে পাগলের মতো।

আনিশা তাকে কীভাবে সান্ত্বনা দিবে ভেবে পাচ্ছে না।বোনের মতো বান্ধবীর চোখের জল দেখে নিজেরই এখন কান্না পাচ্ছে তার।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো;

আনিশা:-বনু,এভাবে কাঁদিস না প্লিজ।তোর কান্না দেখে এখন আমারও ভীষণ কান্না পাচ্ছে।আরাফাত ভাইয়ার কিচ্ছু হবে না,কান্না করিস না প্লিজ।

মাহা প্রতুত্তরে কিছু না বলে চুপচাপ আনিশাকে ছেড়ে দিলো।ওড়না দিয়ে চোখের জল মুছে নিরবে বসে রইলো সে।আনিশা মাহার এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে নরম কন্ঠে বললো;

আনিশা:-এবার তো ওই লামিয়া শয়তান্নীটার পতন হয়েছে।দেখবি আরাফাত ভাইয়া একমাত্র তোরই হবে।এত এত ভালোবাসা সে পায়ে ঠেলে দিতে পারবে না।জানিস তো আল্লাহ যা করেন তা সবার ভালোর জন্যই করেন।দেখিস তুই ঠকবি না।তোর এত ভালোবাসা কখনোই বিফলে যাবে না।

মাহা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো;

মাহা:-এত এত ভালোবাসার পরেও সে আমায় কখনোই বুঝে নি রে আনু।এতবার বোঝানোর ট্রাই করেছি,বুঝেও আমার ফিলিংসকে সে পাত্তা দেয় নি।আমি তার সুখের কথা চিন্তা করে,ওদের রিলেশনে কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ করি নি।ভালোবাসা মানেই যে পেতে হবে এমনটা আমি কখনোই ভাবতাম না।নিজের আবেগ অনুভূতি সব দমিয়ে রেখে হাসিমুখে চলাফেরা করতাম।তাও চাইতাম সে সুখে থাকুক।যার সাথেই থাকুক,এটলিস্ট ভালো থাকুক।কিন্তু তার আজকের এমন পরিণতি যে আমি মেনে নিতে পারছি না আনু।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।চাইলেও মন খুলে কাঁদতে পারছি না।ওর কথা ভাবতেই আমার বুকে চিনচিনে ব্যথা করছে রে দোস্ত।মনে হচ্ছে ওর কিছু হলে আমিও বাঁচবো না,মরে যাবো।

এই বলে আবারও কেঁদে দিলো সে।কতটা ভালোবাসলে এতটা কষ্ট অনুভূত হয় তা বোধ করি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।মাহার কষ্ট দেখে আনিশার নিজেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।আনিশা মাহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

আনিশা:-প্লিজ হানি,কাঁদিস না।কিছু হবে না আরাফাত ভাইয়ার।সে সুস্থ হয়ে যাবে তো।দেখ ভাইয়ার তো সেন্স ফিরে এসেছে।ইনশাআল্লাহ আস্তে আস্তে ওনি রিকোভার করতে শুরু করবে।তুই একটুও টেনশন নিস না।ভালো হয়ে যাবেন ওনি।

মাহা:-ওর আজ এমনটা না হলেও তো পারতো।সে ওই সামান্য একটা মেয়ের জন্য নিজেকে কেন এত কষ্ট দিতে গেল আনু?ওই মেয়েই কী তার জন্য সব?আমরা কেউ তার কিছু হই না?দুনিয়াতে কী সে একা এমন প্রতারিত হয়েছে?আর কেউ হয়নি?ইচ্ছা করছে থাবড়িয়ে একদম টুরু লাভ গিরি ছুটিয়ে দেই কুত্তাটাকে।যে সাজানো ডালা হাতে তার জন্য বসে আছে তাকে রেখে ভাঙা কাঁচের ডালার পিছনে ছুটেছে এতদিন বলদের মতো।এখন বুঝুক মজা।

মাহা একপর্যায়ে রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলো।এত পরিমাণ রাগ উঠছে যে,তার ইচ্ছা করছে এক্ষুনি ওই দুটোকে ধরে ভালো করে কেলিয়ে দিতে।মাহার এত রাগ দেখে আনিশা ফিক করে হেসে ফেললো।মাহা চোখ রাঙানি দিয়ে বললো;

মাহা:-একদম হাসবি না।নইলে দাঁত ভেঙে গুঁড়ো করে ফেলবো।

আনিশা:-ওরে বাপরে!থাক আমার এত সুন্দর দাঁত গুলোকে ভাঙার দরকার নেই।নয়তো পরে আমার বিয়েই হবে না দাঁত না থাকার কারণে।যাকগে,এখন কান্নাকাটি অফ কর,বি স্ট্রং বেব!তুই যদি এখন দূর্বল হয়ে যাস তাহলে তীরে এসে তরী ডুববে।নিজেকে আরও শক্ত কর।আরাফাত ভাইয়া একবার সুস্থ হয়ে বাসায় আসুক,তাকে নিজের করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাবি তুই।এবার যেন টার্গেট মিস না হয়।নয়তো দেখা যাবে সে অন্য কারও হয়ে গেছে।

মাহা রক্তিম চোখে ক্রোধান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো;

মাহা:-উহুম,মোটেই না।আমি ছাড়া আরাফাত আর কারও হবে না।আরাফাত শুধুই আমার হবে।যেকোনো মূল্যে।এট এনি কস্ট।

আনিশা এবার দ্বিধান্বিত হয়ে বললো;

আনিশা:-তা নাহয় বুঝলাম,কিন্তু তোদের পরিবার কী মানবে?আঙ্কেলকে নিয়ে চিন্তা নেই,ভয় শুধু রাহাত ভাইয়াকে নিয়ে।তিনি কী রাজী হবেন?আমার কেন জানি মনে হয় না!

মাহা:-সময় এলেই সেটা দেখা যাবে।তাদেরকে রাজি হতেই হবে।ভাইয়াও রাজি হতে বাধ্য।আমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছি।নিজের সিদ্ধান্ত নিজে গ্রহণ করার মতো ক্ষমতা আমার আছে।

আনিশা:-আর আরাফাত ভাইয়ার পরিবার?

মাহা:-ওনাদের নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই।কারণ ও বাসার সকলেই আমাকে পছন্দ করে,এককথায় মাথায় তুলে রাখে।আমি যদি একবার মামণির কাছে ওনার ছেলেকে চাই,আমি নিশ্চিত তিনি দুবার না ভেবেই রাজি হয়ে যাবেন।

আনিশা:-যাক তাহলে তো ভালোই।দোয়া করি সব যেন ঠিকঠাক মতো হয়ে যায়।

মাহা অন্যমনষ্ক হয়ে জবাব দিলো;

মাহা:-একবার সে সুস্থ হয়ে যাক,ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।নিজের বিয়ের ব্যবস্থা নিজেই করবো।

আনিশা তাকিয়ে থাকলো মাহার চোখের ওই মনির দিকে।যেখানে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে সর্বদা।সে নিশ্চিত,আরাফাতকে নিজের করেই তবে ক্ষান্ত দিবে মাহা।তার আগে নয়।

☁️

এভাবে প্রায় ৮ দিন কেটে গেল,সময় যেন যেতেই চায় না।সবার কাছে এই ৮ দিনকে আটশত বছরের ন্যায় মনে হয়েছে।এই ৮ দিন আরাফাত পুরোপুরি অবজারভেশনে ছিলো।পরিবারের কেউ এই ক’টা দিন তার সাথে মোটেও দেখা করতে পারে নি।ওর অবস্থা এখন আগের থেকে মাত্র ৯% উন্নত হয়েছে।সারাশরীর মমির মতো ব্যান্ডেজে আবৃত।ডক্টরদের ডাকে কোনো রেসপন্স করে না সে,যতক্ষণ সজাগ থাকে ততক্ষণ রুমের সিলিং এর দিকে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থাকে শুধু।মানসিক ভাবে স্টেবল নয় ও।মাথায় আঘাত পাওয়ায় মস্তিষ্কে কিছুটা গোলমাল দেখা দিয়েছে,যদিও তা সাময়িক বলে ধারণা করছে রাহাত।

আজ ৮ দিন পর মাহার দুচোখের তৃষ্ণা মিটলো আরাফাতকে দেখে।রাহাত সামনে আছে বিধায় বহুত কষ্টে নিজের চোখের জল আটকে রেখেছে সে।মিসেস মুমতাহিনাকে ধরে ধরে কেবিনে নিয়ে এসেছিলো সে আরাফাতকে দেখাতে।মিসেস মুমতাহিনা তো ছেলের অবস্থা দেখে মুখ চেপে কান্না করছেন অনবরত।সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে সে একধ্যানে,কি যে দেখছে তা সে নিজেও বোধ হয় জানে না।তার মা যে তাকে দেখে হাহাকার করে কান্না করছেন তা তার নজরে আসছে না একটুও।

এই ৮ দিন মাহার বাসা টু হসপিটাল,হসপিটাল টু বাসা করে করেই কেটেছে।ভার্সিটিতে যাওয়া হয়ে ওঠে নি আর।পড়াশোনার ধারেকাছেও যায় নি সে এ ক’দিন।রাহাত আরাফাতের ট্রিটমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত বিধায় মাহার পড়াশোনার দিকে তেমন একটা নজর দিতে পারছে না।আরাফাতের পরিবারের সবাইকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছে মাহার পরিবারের সদস্যরা।প্রতিদিন মিসেস মিনারা রান্না বান্না করে হসপিটালে সবার জন্য খাবার নিয়ে আসেন।

মাহা আছে মিসেস মুমতাহিনা ও লিসার দেখাশোনাতে।মি.আতিক তো মি.এরশাদ ও সাইফের সাথেই আছেন সর্বক্ষণ।রিয়াজ অফিস করে বাসায় না গিয়ে সোজা হসপিটালে চলে আসে।রাফি তো নিজের বিজনেস গোল্লায় ফেলে হসপিটালে পড়ে আছে।ওদের এত কেয়ারেই বোঝা যায়,আরাফাতকে সবাই ঠিক কতোটা ভালোবাসে!

আজ আরাফাতকে আইসিইউ থেকে সোজা কেবিনে শিফট করা হয়েছে।উন্নতি প্রায় এতটুকুই বলা যায়।তবে হসপিটালে অনেকদিন থাকতে হবে আরাফাতকে।কারণ ওর অবস্থা এখনো আশংকাজনক।মাহার ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে আরাফাতকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু সে অদৃশ্য এক বন্ধনে আটকে আছে।চাইলেও পারবে না আরাফাতের কাছে গিয়ে নিজের নয়ন ভরে তাকে দেখতে।কেউ যে তার মনের খবর জানে না।যদি জানতো তাহলে বুঝতে পারতো তার মনে ঠিক কি হারে ঝড় তুফান বয়ে চলেছে!

কয়েক মিনিট পর রাহাতের কথায় মাহা মিসেস মুমতাহিনাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।রোগীর রুমে বেশিক্ষণ কাউকে এলাও করা হয়না তাই।আরাফাতের কলিগরা এসেছিলো তাকে দেখতে।সাথে তার বিজনেস পার্টনাররাও এসেছেন।ওনারা এসে আরাফাতকে দেখে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে তাকে নিয়ে কিছুক্ষণ আফসোস করে অতঃপর চলে গেলেন।

মাহা মিসেস মুমতাহিনাকে নিয়ে আজকে সোজা আরাফাতদের বাসায় চলে এসেছে।সাথে আছে লিসা এবং মিসেস মিনারা।ওই বাসায় যেতেই মাহাকে জড়িয়ে ধরে সে কী কান্না নিসার!মাহা হতভম্ব নিসার এত কান্না দেখে।কী বলে যে তাকে সান্ত্বনা দিবে সেটা খুঁজেই হয়রান হয়ে গেছে সে।মিসেস মুমতাহিনা মেয়ের কান্না দেখে আরেকদফা কান্না করছেন বসে বসে।

বহুত কষ্টে নিসার কান্না থামিয়ে তাকে শান্ত করলো মাহা।তারপর গেস্টরুমে গিয়ে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিলো।রাতে ঘুম না হওয়ায় সারাদিন ধরে মাথা ভার ভার লাগছে তার।তাই ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নিলো সে।না ঘুমালে আর কোনো কাজ করতে পারবে না আজকে।

সন্ধ্যার সময় আবারও মিসেস মুমতাহিনাকে সাথে নিয়ে রওনা দেয় সে হসপিটালে।তাঁর এক কথা,তিনি তার ছেলেকে এমন অবস্থায় রেখে জীবনেও বাসায় থাকবেন না।অগত্যা কী আর করা,যেতে তো হবেই।

☁️

দিনের পর দিন যেতে লাগে,আরাফাত শামুকের গতিতে একটু একটু করে রিকোভার করছে।যদিও সে কারও কথায় কোনো রেসপন্স করে না এখনো।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুদূর।কারও দিকে তাকায় না,কথা শুনে না।এখনো ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি।ও বেঁচে যে আছে রাহাতের কাছে এটাই অনেক বেশি,কারণ সে তো আশাই করে নি যে আরাফাত বাঁচবে!

মাহার দিন শুরু হয় আরাফাতের কথা মনে করে,রাত শেষ হয় আরাফাতের কথা ভেবে ভেবে।আল্লাহর কাছে তার একটাই চাওয়া,আরাফাত যেন সুস্থ হয়ে যায়।

রাহাতের আদেশে মাহা এখন আর হসপিটালে না থাকলেও প্রতিদিন আনিশাকে সাথে নিয়ে এখানে আসতে মোটেও ভুলে না সে।নিয়ম হয়ে গেছে যেন এটা।সময়গুলো এভাবেই পেরিয়ে গেলো।

প্রায় বিশটা দিন হসপিটালে থাকতে হয়েছে আরাফাতের।এরপর আজ সকালের দিকে তাকে ডিসচার্জ করে দেয়া হয়।মি.এরশাদ ছেলেকে বাসায় ট্রিটমেন্ট দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন মূলত।কারণ হসপিটালে কতদিন আর এভাবে তাকে রাখা যায়,এভাবে তো কোনো উন্নতিই হবে না ওর।রাহাত নিজেই তাদেরকে এই সিদ্ধান্তে নিতে বলেছে।এটা সবথেকে বেস্ট হবে আরাফাতের জন্য।বাসায় সবাই থাকবে তাকে দেখাশোনা করার জন্য।আর নিজের বাসায় পরিবারের সান্নিধ্যে থাকলে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

আরাফাতকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।হাতে ব্যান্ডেজ,পায়ে ব্যান্ডেজ,মাথায়ও ব্যান্ডেজ।শরীরে কাটাছেঁড়াও অসংখ্য।সেগুলোতে মলম লাগানো।মাহা আরাফাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে পাশাপাশি।আরাফাতের এসবে কোনো হেলদোল নেই।সে তার একধ্যানে অন্য কোথাও তাকিয়ে আছে।মাহার কলিজা মোচড় দিয়ে ওঠছে অনবরত।আরাফাতের চোখ মুখ শুকিয়ে একদম আমসি হয়ে গেছে।চোখ জোড়া কোটরের ভেতর ঢুকে গেছে।চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল গাঢ় হয়ে বসেছে।মাথায় চুল নেই।ঠোঁটের সেই সবসময় ঝুলিয়ে রাখা প্রাণবন্ত হাসিটাও গায়েব।

এই আরাফাতকে যে মাহা মোটেই চেনে না।আরাফাত ভীষণ হাসিখুশি একটা ছেলে।অকারণে হাসারও রেকর্ড আছে তার।কারও যদি মনখারাপ থাকে,তার সাথে কথা বললে সেই মনখারাপও দূর হয়ে যেতে বাধ্য।এতটাই হাসিখুশি ছেলে।আর আজ সেই ছেলেটার মুখকে একরাশ মলিনতা ঘিরে রেখেছে।যেখানে হাসির কোনো ছিটেফোঁটাও নেই।কী ছিলো!আর কী থেকে কী হয়ে গেলো?ভাবা যায়?

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে