অনূভুতি পর্ব-০২

0
1872

#গল্পের_নাম_অনূভুতি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২
ভোরের হাওয়া গায়ে লাগতেই কেঁপে উঠে আবরার পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে হালকা হালকা আলো চারপাশে।আকাশটা আজ মেঘলাই বলা চলে তাই তো এতো ঠান্ডা বাতাস আবরার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সে বারান্দায় ঘুমিয়ে পরেছিল।আবরার চুল গুলো ঠিক করে ফ্লোর থেকে উঠে দাড়ালো তারপর রুমে ডুকে মোবাইলটা অন করতেই ওয়ালপেপারে তার প্রেয়সীর ছবিটি ভেসে উঠলো মুচকি হেসে সে ছবিটিতে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।তারপর নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড রাব্বিকে ফোন করলো কিছুক্ষন রিং বাজতেই অপরপাশ থেকে রাব্বি ফোন রিসিভ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বললো,
~শালা এতো ভোর বেলায় কেন ফোন করেছিস?তোর কী কোনে কাজ নেই?
রাব্বির কথা শুনে আবরারের রাগ হলো কিন্তু নিজেকে সামলে বললো,
~রাব্বি মা আজই ওর বাসায় যেতে চায়।
রাব্বির ঘুম এখন উড়ে গেছে সে হকচকিয়ে বললো,
~আন্টি রাজি হয়ে গেছে।
আবরার খুশি মনে বললো,
~হ্যাঁ তাইতো আমার সাথে যেতে রাজি হয়েছে।
রাব্বির মনটা খুশিতে নেচে উঠলো যাক অবশেষে তার এই বন্ধুর জীবনটা রঙ্গীন হতে চলেছে।কেউ একজন তাকে মায়ায় বাঁধতে পারলো সেটাই অনেক বড় কথা নাহলে এই উত্তম পুরুষ সারাজীবন এভাবেই থেকে যেতো।রাব্বির ভাবনার মাঝেই আবরার বলে উঠলো,
~আজ অফিস ছুটি তাই বিকেল বেলা আমরা রওনা দিবো তুইও চলে আসবি।
রাব্বি নিজ ভাবনা থেকে বের হয়ে বললো,
~একবার কী আরফানকে কথাটা জানালে ভালো হতো না?
রাব্বির কথা শুনে আবরার আসলেই চিন্তায় পরে যায় যত যাই হোর আরফান তো তার প্রেয়সীর ভাই যদি রাগ করে ফেলে পরক্ষণেই ভাবলো নাহ মাকে নিয়ে সব কথা বলবে।আবরার বললো,
~নাহ রাব্বি আরফানকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।
রাব্বি বললো,
~যেটা তুই ঠিক ভাবিস।
রাব্বির সাথে কথা বলে আবরার ওয়াশরুমে চলে গেলো।
হ্যাঁ আবরার আরফিকেই পছন্দ করেছে নিজ জীবনসঙ্গিনী হিসেবে আরফানের কিছু ফাইল দিতে আরফি তার অফিসে গিয়েছিল তখনই আবরারের নজর আরফির উপরে পরে।তখন থেকেই আবরার আরফিকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে।যত আরফির ব্যাপারে জেনেছে ততোই সে আরফির প্রতি আসক্ত হয়েছে।আর এসব কাজে সাহায্য করেছে রাব্বি প্রতিটি কাজে রাব্বি তার সাথে ছিল এতোটা পাগলাটে ভাব আবরারের কৈশোরেও ছিল না যতটা এখন যুবক বয়সে করছে। আরফির বারান্দার সামনে দাড়িয়ে কতো না ছবি তুলেছে সে এতোটা কেন ভালোবাসলো এই অবুঝ মেয়েকে তাই আবরার ভেবে পায়না।

আরফির ঘুম ভাঙ্গতেই বৃষ্টির পানির টুপটাপ আওয়াজ কানে আসে।আরফি বুঝতে পারে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে সে বিছানা থেকে উঠে ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে পরে বৃষ্টির পানি গুলো তার শরীর ছুয়ে যাচ্ছে।আরফির এতে বিরক্তি লাগছে না বরং অনেক ভালো লাগছে।মনে হচ্ছে সব গ্লানি এই বৃষ্টির পানির সাথে মুছে যাচ্ছে আরফি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিটাকে উপভোগ করতে থাকে।বৃষ্টির পানি তার পুরো হাতটাকে ভিজিয়ে দিলো সে এভাবেই থাকবে যে পর্যন্ত বৃষ্টি না থামবে আজ।
আরফান নিজ ঘরে বসে আছে তার মাথায় এখন তার মায়ের বলা কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।তার মা যে তাকে ভুল ভাবছে আরফিকে সে কতোটা ভালোবাসে এটার আন্দাজ হয়তো মায়ের নেই।রুকাইয়া ঘরে প্রবেশ করতেই স্বামীর চিন্তিত মুখ দেখতে পায়।মানুষটা কাল রাতের কথাই হয়তো ভাবছে রুকাইয়া ধীর পায়ে আরফানের পিছে দাড়িয়ে তার কাঁধে হাত রাখলো।রুকাইয়ার স্পর্শ পেয়ে আরফান পিছন ফিরে তাকালো তারপর রুকাইয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
~রুকাইয়া,তুমি তো জানো আমি আরফিকে কতোটা ভালোবাসি আমি ওকে কেন দূরদূর করে তাড়িয়ে দিবো?
আরফানের এমন কথার কোনো জবাব নেই রুকাইয়ার কাছে সে তো নিজেও অবাক ছিল। কিন্তু আরফানকে সামলাতে হবে তাই রুকাইয়া আরফানের চুলে হাত ডুবিয়ে বললো,
~মায়ের চিন্তা হয় আরফিকে নিয়ে তাই সে এমন ভাবে বলে দিয়েছে আপনি এতে কষ্ট পাবেন না।
আরফান রুকাইয়ার কোমড় ছেড়ে দিয়ে বললো,
~আমি মায়ের কথায় কষ্ট পাইনি কিন্তু চিন্তাটা বেড়ে গেছে আমার মা হয়তো আরফির জন্য অনেকই ভাবছে ইদানিং।
রুকাইয়া আরফানের পাশে বসে বললো,
~আপনি মায়ের সাথে কথা বলে দেখেন আমার বিশ্বাস সে বুঝবে আপনাকে।
আরফান মুচকি হেসে রুকাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~সেটাই যাতে হয়।
আরফি নাস্তা সেড়ে হলরুমে বই নিয়ে বসেছে ঘরে পড়তে মন চাইছিল না তাই এখানটাই সে আজ বসেছে।মনোযোগ সহকারে সে নিজের পড়া চালিয়ে যাচ্ছে তখনই সায়েদা খানম হাতে তেলের বাটি নিয়ে হাজির হলেন।পরম মমতায় মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
~আরফি তোর চুলে তেল দিয়ে দেই।
আরফি বই রেখে মায়ের দিকে তাকালো তারপর বললো,
~তেল দিয়েই মাথা সেম্পু করে ফেলবো।
সায়েদা খানম বললেন,
~ঠিক আছে।তোর ভাবিকেও ডাক দে একসাথে তোদের তেল দিয়ে দেই।
আরফি রুকাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসলো দুজনই একসাথে সায়েদা খানমের হাত থেকে তেলের জম্পেস মালিশ করে নিলো মাথায়।সায়েদা খানম আরফিকে বললেন,
~আমি যা করছি তোর ভালোর জন্য করছি অনেক চিন্তা তোকে নিয়ে।
আরফি মায়ের হাতে চুমো খেয়ে বললো,
~আমার ভালো তে যদি আমারই মতামত না থাকে তাহলে সেই ভালো টা কী আদৌ ভালো হবে আমার জন্য।
সায়েদা খানম চুপ হয়ে যান মেয়ের কথা শুনে আরফির কথাটা সঠিক কিন্তু তার সিদ্ধান্ত ভুল না।

বিকেলবেলা আবরার,জাবেদা বেগম,অবনি,আর রাব্বি রওনা দেয় আরফির বাড়ির উদ্দেশ্যে। অবনি এখনও অবাক কারণ তার ভাই কোনো মেয়েকে পছন্দ করেছে।আর নিজ থেকে এ কথা মাকে বলেছে সে হা হয়ে বসে আছে গাড়িতে।অবনির অবস্থা দেখে রাব্বি বললো,
~অবনি এভাবে হা হয়ে আছো কেন?
রাব্বির কথায় অবনি হা হওয়া মুখটা ঠিক করে ফেলে।আর রাব্বিকে বললো,
~রাব্বি ভাই, সত্যি কী ভাই মেয়েটা কে পছন্দ করেছে?
রাব্বি বললো,
~অবশ্যই আর ভাই বলবে না আমায়।
অবনি বিরক্তি নিয়ে বললো,
~আপনি আছেন আপনার কথা নিয়ে এতো বড় খেলা হয়ে গেলো আর আমি জানলাম না।
জাবেদা বেগম রাব্বি আর অবনির ফিসফিসানি দেখে বললেন,
~কথা জোরে বলো এখানে ফিসফিসানির কিছু নেই।
অবনি মায়ের কথায় চুপ হয়ে গেলো তা দেখে রাব্বি মুখ টিপে হাসলো।আর যার জন্য এতো কিছু তার কোনো পাত্তা নেই সে তো বিভোর তার প্রেয়সীর মাঝে কখন সে সামনে দাড়াবে প্রেয়সীর।আবরার তো এখনো ভাবছে কীভাবে সে তার প্রেয়সীকে বলবে তার মনের কথা।
রাব্বি আবরারের অবস্থা দেখে হালকা ধাক্কা মেরে বললো,
~ভাবি তোর এমন ভাবুক মুখ দেখলে দৌড়ে চলে যাবে ঘরে এরপর বলবে আমি এমন ছিঁচকে বাদরের সাথে বিয়ে করবো না।
রাব্বির কথা শুনে আবরার তার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
~যখন তোর বিয়ে হবে তখন তোর বউকে বলবো।আপনার জামাই ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে আছিলো ২ মাস।তখন কেমন হবে?
রাব্বি বললো,
~তোর বউ যাতে তোরে বাসর রাইতে ঝাড়ু দিয়া পিটায় ব্যাটা আমার সংসারে আগুন লাগাইতে আহে।ব্যাটা খারাপ।
রাব্বির কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
আরফি সাদা রঙ্গের একটা ড্রেস পরেছে চুল গুলো সে হাত খোপা করা।সবার সাথে বসে সে আড্ডা দিচ্ছে ছুটির দিন তাই সবাই একসাথে সময় কাটাচ্ছে।আরফান বোনের পাশে বসে কথা বলছে বাবার সাথে হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।আরফি সোফা থেকে উঠে দরজা খুলে দিলো আর সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে সে ভ্রুকুচকালো কারণ তার সামনে অচেনা মহিলা দাড়িয়ে আছে তার পাশে একজন মেয়ে দাড়ানো।আরফি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

~আন্টি আমি আপনাকে চিনতে পারছি না।
জাবেদা বেগম বললেন,
~তোমার ভাই আছে সে আমাদের চিনবে নিশ্চই।
আরফি কিছু বলতে যাবে তার আগে আরফান পিছন থেকে বললো,
~কে এসেছে?
বলেই সামনে দিকে তাকিয়ে হতবাক সে আরফানের সিনিয়রের মা যে স্বয়ং তার সামনে দাড়িয়ে আছে
আরফান তড়িঘড়ি করে বললো,
~ভিতরে আসেন ম্যাডাম।
জাবেদা বেগম আর অবনি ভিতরে ডুকে পরলো।আরফি এখনোও অবাক সে দরজা লাগাতে যাবে তখনই কেউ পুরুষালি কন্ঠে বলে উঠলো,
~আমাকে কী আজ বাসায় ডুকতে দিবে না?
আরফি দরজা পুরোটা খুলে দেখলো তার সামনে একজন সুপুরুষ দাড়িয়ে আছে আরফি বললো,
~কে আপনি?
আবরার আরফির কথা শুনে একদম এগিয়ে বললো,
~তোমার আপনজন আমি।
আরফি কিছু বুঝতে পারছে না তার কথা তখনই রাব্বি এসে আবরারের পিঠে চাপড় মেরে বললো,
~কীরে ভিতরে কেন যাস না?
বলেই সামনে তাকালো আরফিকে দেখে হেসে বললো,
~কেমন আছো?আরফি।
আরফি এতে চরম অবাক এই অচেনা মানুষ তার নাম জানে কীভাবে আরফান আরফির পিছে দাড়িয়ে আবরারকে দেখে বললো,
~স্যার বাহিরে কেন দাড়িয়ে আছেন?ভিতরে আসেন
আবরার আরফির দিকে তাকিয়ে বললো,
~ভিতরে আসো একসাথে বসে আড্ডা দেই।
বলেই আবরার আর রাব্বি ভিতরে ডুকে পরলো আর আরফি দরজা লাগিয়ে চলে গেলো ভাবির কাছে। আবরার আরফির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে সোফায় বসে পরলো আর মনে মনে বললো,
~তোমায় নিজের সাথে বাঁধার জন্যই তো এই গন্তব্যে আসা আমার।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে