অনুভূতি পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
1879

#গল্পের_নাম_অনুভূতি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৪ শেষ পর্ব
লাল বেনারসি,মাথায় লাল ওড়নার ঘোমটা,হাতে চুড়ি, খোঁপায় বেলীফুলের মালা,সোনার অলংকার গলায়,হাতে সোভা পাচ্ছে।বউ সাজে আরফিকে একদম নতুন একজন মানুষ লাগছে।তার চেহারার আদলটাও একদম অন্যরকম লাগছে বউ বউ ভাব আর নাকফুলটা জ্বলজ্বল করছে।রুকাইয়া আরফির দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে রুকাইয়ার চাহনি দেখে আরফি বিরক্ত হয়ে বললো,
~কী দেখছো ভাবি?আমাকে কোনোদিন দেখোনি মনে হচ্ছে?
রুকাইয়া বললো,
~তোমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে বউ সাজে তোমাকে অপরুপ লাগছে।
আরফি লজ্জাবতী গাছের মতো নুইয়ে পরলো রুকাইয়া মোবাইলটা বের করে কতো গুলো ছবি তুলে ফেললো আরফির।আরফি তা দেখে বললো,
~ভাবি,আবরার সাহেবকে ছবি পাঠাবেনা একদম
রুকাইয়া বললো,
~কেন?
আরফি বললো,
~একটু জ্বালাতন করলে কী আসে যায়?
রুকাইয়া বললো,
~ওরে দুষ্ট ননদীনি কী বলে।
রুকাইয়া হো হো করে আসতে লাগলো।আরফিও মুখ টিপে হাসতে লাগলো
আবরারের বাসায় সবাই ব্যস্ত বরযাত্রা নিয়ে বের হবে। আবরার রুমে পায়চারী করছে রাতুল বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে আছে।আবরারের ছটফটানি দেখে রাতুলের ইচ্ছা হচ্ছে তার মাথা ফাটিয়ে দিতে কিন্তু বিয়ের দিন বরের মাথা ফাটা অবস্থায় বেশ ভালো দেখাবেনা তাই রাতুল নিজেকে ঠান্ডা রাখছে।আবরার পায়চারি বন্ধ করে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
~শোন দোস্ত একটা ছবির ব্যবস্থা করতে পারবিনা?
রাতুল বললো,
~ওই খচ্চর ব্যাটা ভাবি অহন পার্লারে আমি কী মহিলা পার্লারে ডুইকা মাইর খামু।
আবরার বললো,
~বোরখা পরে ডুকবি।
রাতুল বললো,
~আমি তোর বিয়া খাইতাম মায়েরা নিয়া গেলাম বাইত।
আবরার বললো,
~রাগ করিস না রুকাইয়া ভাবিও কোনো ছবি পাঠালোনা আরফির।
রাতুল বললো,
~ওই তুই কী বিয়া করবার যাবিনা সবাই তোরে রাইখা দৌড় দিবো।দেহিস
রাতুলের কথা শুনে আবরার রেডি হতে শুরু করলো রাতুল তার সাহায্য করতে লাগলো আর বললো,
~শোন দোস্ত একটা কথা বলি?
আবরার শেরওয়ানির কর্লার ঠিক করতে করতে বললো,
~বলে ফেল।
রাতুল ঢোক গিলে বললো,
~আমার মা যদি আমার বিয়ের প্রস্তাব রাখে তাহলে তুই আবার আমারে মারিস না।
আবরার ভ্রুকুচকে বললো,
~তোর বিয়ের প্রস্তাব কার জন্য দিবে?
রাতুলের কথা বুঝতে আবরারের একটু সময় লাগলো কিন্তু বুঝে নিলো আবরার রাতুলের দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো রাতুল বললো,
~আমি কিছু জানিনা।মা খালি উল্টাপাল্টা ভাবে।
আবরার নাকফুলিয়ে বললো,
~উল্টাপাল্টা ভাবার বিষয় নিশ্চই তুই দিয়েছিস।
রাতুে বললো,
~ছি ছি তুই এসব কী বলিস?
আবরার বললো,
~পরেরটা পরে এখন এসব কথা বলিস না।
রাতুল আর কিছু বললো না আবরার রাতুলের অগোচরে মুখ টিপে হাসলো।
জাবেদা বেগম আর রাতুলের মা সব কাজের তদারকি করছেন।অবনি রেডি হচ্ছে তাই তাকে ডিস্টার্ব করতে চায়না কেউ।রাতুলের মা বললেন,
~আপা,আপনারা নতুন বউমা নিয়ে আমাদের বাসায় আসবেন।
জাবেদা বেগম বললেন,
~অবশ্যই।
রাতুলের মা বললেন,
~আমার একটা ইচ্ছা আছে যা আমি বলতে চাই।
জাবেদা বেগম বললেন,
~অবশ্যই বলেন।
রাতুলের মা জাবেদা বেগমের হাত ধরে বললেন,
~আপনার ঘরটা যেমন নতুন মেয়ের আগমনে উচ্ছাসে ভরা আমিও চাই আমার ঘরটাও এমনই হয়ে উঠুক।
জাবেদা বেগম বললেন,
~বুঝলাম না।
রাতুলের মা বললেন,
~রাতুলের জন্য অবনিকে পছন্দ করেছি।
জাবেদা বেগম কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলেন।সে ভাবছে কী জবাব দিবে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বললেন,
~আপা আবরারের সাথে কথা বলে জানাবো। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
রাতুলের মা কিছু না বলে মুচকি হেসে কাজে মনোযোগ দিলেন।
সেন্টারে মেহমান আসা শুরু করে দিয়েছে আরফি রেস্টরুমে আসে আছে।রুকাইয়াও তার সাথেই আছে আরফির মামী কিছুক্ষণ পর পর এসে আরফিকে দেখে যাচ্ছে।আরফির অনেক ক্ষুধা পেয়েছে কিন্তু বলতে পারছেনা হঠাৎ সায়েদা খানম হাতে প্লেট নিয়ে হাজির আরফি তা দেখে খুশি হলো।সায়েদা খানম নিজ হাতে আরফি আর রুকাইয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে।সায়েদা খানমের চোখে পানি হয়তো মেয়েকে আজ শেষবারের মতো একান্তভাবে পাচ্ছে কিছুক্ষণ পর মেয়ে যে তার বড্ড দূরে চলে যাবে।নিজ জীবনে সে ব্যস্ত হয়ে যাবে আরফি মায়ের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বললো,
~আমি চলে যাচ্ছি তো কী হয়েছে?রুকাইয়া ভাবি তো আছে
সায়েদা খানম মুচকি হেসে আরফির কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
~সুখী হও মা জীবনে।

_____________

বরযাত্রা এসে পরেছে সবাই ব্যস্ত তাদের খাতিরদারি করতে।রুকাইয়া এসে আরফিকে বললো,
~এই যে নতুন বউ তোমার বর কিন্তু এসে পরেছে।
রুকাইয়ার কথা শুনে আরফির হার্টবিট অনেকটাই বেড়ে গেছে একটুপর তার বিয়ে হয়ে যাবে আবরারের সাথে।সে কারো জীবনসঙ্গীনি হবে। হবে নতুন বউ এটা ভাবতেই আরফির গালদুটো লাল হয়ে আসলো।রুকাইয়া আরফির মাথার ঘোমটা ঠিক করে বললো,
~লজ্জা সব কুড়িয়ে রাখো রাতের জন্য তোমার বরকে তুমি অনেক জ্বালিয়েছো রেডি থাকো তার দহনে পুরতে।
রুকাইয়ার কথায় আরফি এখন ছুটে পালিয়ে যেতে মন চাইছে।
আরফানরা সবাই কাজে ব্যস্ত কোনো মেহমানের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে।আবরার আরফানকে নিজের কাছে ডেকে বললো,
~আরফান,এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই আমরা সবাই এখানে তোমাদের আপনজন।
আবরারের কথায় আরফান অনেকটাই সন্তুষ্ট হলো আরফান আবরারের হাত ধরে বললো,
~আমার একমাত্র বোনের বিয়েতে আমি কোনো কমতি রাখতে চাই না।
আবরার মুচকি হেসে বললো,
~তুমি সেরা ভাই তোমার বোনের জন্য।
আরফান বললো,
~আর আপনি সেরা জীবনসঙ্গিনী আমার বোনের জন্য। আমি জানি বলার প্রয়োজন নেই আপনি আরফিকে আগলিয়ে রাখবেন তবুও ভাই হিসেবে বলছি খেয়াল রাখবেন আমার ছোট্ট পরীটার।
কথাটা বলতে গিয়ে আরফানে গলা ধরে আসছিলো ছোট থেকেই আরফির প্রতি সে দুর্বল আজ যেন চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে কিন্তু সে তো ছেলে তার চোখে পানি সোভা পায় না।বোনকে আজ হাসিসিমুখে বিদায় দিবে সে
বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসলো কাজী সাহেব প্রথমে আরফির কাছে গেলেন।আরফিকে কাজী সাহেব বললেন,
~বলুন মা কবুল।
আরফি মায়ের হাত আর ভাইয়ার হাতটা শক্ত করে ধরলো দুজনই তার হাতেহাত রেখে বসে আছে।আরফি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একসঙ্গে বললো,
~কবুল কবুল কবুল।
কাজী সাহেব বললেন,
~আলহামদুল্লিলাহ
কাজী সাহেব আবরারের কাছে গেলে সে কিছু বলার আগেই ফরফর করে কবুল বলে দিলো যা শুনে রাতুল ফিসফিস করে বললো,
~মগেরমুল্লুক একটা বিয়ার করার লেইগা পাগল হয়া রইসে।
অবশেষে দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেলো আবরার আর আরফির #অনুভূতি গুলো আজ একটা বন্ধনের নাম পেলো।আবরারের ভালোবাসা আজ সফল হলো আবরারের চেষ্টা যে বিফলে যায়নি সে আরফির মনে জায়গা করে নিয়েছে।আরফিও আবরারকে ভীষন ভালোবেসে ফেলেছে মুখে না বললেও সে তার চোখের ভাষায় সব বুঝিয়ে দিয়েছে।
বিয়ের পর আরফিকে নিয়ে আসা হলো আবরারের সামনে।আরফিকে দেখে আবরার হা হয়ে আছে রাতুল আর অবনি তার দুপাশে বসে আছে অবনি আবরারকে বললো,
~ভাই মানসম্মান রাখো আমার এভাবে হা হয়ে থেকো না।
রাতুল বললো,
~এই তো হবু বউ বুঝতে পেরেছে।
রাতুলের কথা অবনি না শুনতে পেলেও আবরার ঠিক শুনেছে সে ভ্রুকুচকে রাতুলের দিকে তাকালো।রাতুল ঢোক গিলে বললো,
~আরফি ভাবি কেমন আছেন?
আবরার সামনে তাকিয়ে দেখে আরফি তার সামনে দাড়িয়ে আছে।আবরার বসা থেকে দাড়িয়ে আরফির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো আরফি আবরারের হাতে-হাত রেখে উপরে উঠলো সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরফি বসে পরলো সোফায় আবরার তার পাশেই বসলো।সবাই তাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত আবরার আরফির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
~ওগো বধু সুন্দরী তোমাকে দেখে যে আমার মনে ঝড় বইছে তা তুমি কীভাবে দূর করবে?
আবরার কথাটা বলে সামনের দিকে তাকালো আরফি মাথানিচু করে মনে মনে বললো,
~লোকটা শুধু তাকে লজ্জায় ফেলতে চায়।
বিয়ের সব নিয়ম-কানুন শেষে এখন আসলো বিদায়ের পালা।আরফি সায়েদা খানমের বুকে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আরফান দূরে দাড়িয়ে আছে রুকাইয়া শাশুড়ির পাশে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।আবরারের এখন খারাপ লাগছে তার মনে হচ্ছে সে আরফিকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছে।রাতুল আবরারকে বললো,
~বড্ড খারাপ লোক তুই দেখছিস ভাবি তোর জন্য সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছে কীভাবে কাঁদছে?
আবরার বললো,
~তাহলে একটা কাজ করি আরফিকে এখানে রেখে যাই আর অবনির সাথে যখন তোর বিয়ে হবে তখন তুই অবনিকে আমাদের কাছেই রেখে যাবি।বুঝেছিস?
আবরারের কথায় রাতুল মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাড়িয়ে থাকে।আরফান আরফিকে গাড়িতে বসিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো আবরার আরফির পাশে বসে পরলো।আরফি এখনো কাঁদছে গাড়ি চলতে শুরু করলো গাড়িতে আবরার আর আরফি ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে।আরফি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আবরার আরফির বাহুডরে হাত রেখে বললো,
~আর কেঁদো না এভাবে তো শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে।
তাও আরফি শুনছেনা আবরার আরফির মাথা বুকে চেপে ধরলো।আরফি আবরারের বুকে মাথা রেখে আরামসে কাঁদছে।
বাসায় পৌছে গাড়ি থেকে আবরার নেমে পরলো আরফির সাইডের গাড়ির গেইট খুলে দিলো।আরফি ধীরপায়ে বের হয়ে আসলো চোখ তুলে বাসাটার দিকে তাকালো আশেপাশে মানুষ দাড়িয়ে আছে।নতুন বউ এসেছে তাই হয়তো আবরার আরফির হাত ধরে বললো,
~ভিতরে চলো।মা অপেক্ষা করছে
অবনি এসে আরফির পাশে দাড়ালো আরফি পা বাড়ালো বাসার ভিতর প্রবেশ করার জন্য।

________________

জাবেদা বেগম বরণডালা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।আরফি আর আবরার তার সামনে দাড়িয়ে আছে আরফি অনেকটাই ভয় পাচ্ছে।জাবেদা বেগম আরফিকে বরণ করে ঘরে প্রবেশ করতে বললেন।আরফি আর আবরার একসাথে বাসায় প্রবেশ করলো জাবেদা বেগম অবনিকে বললেন,
~অবনি,আরফিকে রুমে নিয়ে যা।
অবনি আরফিকে রুমে নিয়ে আসলো আরফি রুমে ডুকে দেখতে পেলো রুমটা সুন্দর করে সাজানো। অবনি আরফিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
~তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও আমি শাড়ি নিয়ে আসছি।
আরফি শুধু মাথা দুলালো অবনি হালকা গোলাপি রঙ্গের শাড়ি নিয়ে আসলো।আরফি অবনির সাহায্যে সব গহনা খুলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়ি ঠিক করে চুল ঠিক করতে থাকলো তখনই দরজা ঠেলে ঘরে ডুকলো আবরার।আরফি পিছন ফিরে আবরারকে দেখে আবার আয়নার দিকে ফিরে তাকালো আবরার দরজা লাগিয়ে টিশার্ট আর টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আরফি রুমটা দেখতে লাগলো আরফি বারান্দায় দাড়ালো ঠান্ডা বাতাস চারদিকে ছড়িয়ে আছে।শরীরে এক আলাদা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে
আবরার ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে আশেপাশে আরফিকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই। দরজায় টোকা পরলো আবরার দরজা খুলে দেখলো অবনি দাড়িয়ে আছে হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে।অবনি বললো,
~ভাবি আর তোমার জন্য।
আবরার খাবারের প্লেট গুলো নিয়ে বললো,
~ধন্যবাদ।
অবনি বললো,
~আমি যাই ভাই।
অবনি চলে গেলো আবরার দরজা বন্ধ করে বারান্দায় চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো আরফি আকাশপাণে তাকিয়ে আছে।আবরার আরফির পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।কারো স্পর্শ পেয়ে আরফি কেঁপে উঠলো আর বললো,
~কী করছেন?ছাড়ুন
আবরার আরো শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~বউ আমার আমি কেন ছাড়বো?
আরফি আর কিছুই বললো না।আবরার বললো,
~মা খাবার পাঠিয়েছে খাবে আসো।
আবরার আরফিকে রুমে নিয়ে এসে নিও হাতে খাইয়ে দিলো।খাওয়া শেষে আবরার হঠাৎ আরফিকে কোলে তুলে নিলো আরফি আকস্মিক ঘটনায় অনেকটাই অবাক।আবরার আরফিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আরফি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো আবরার তা দেখে মুচকি হেসে আরফির উপর থেকে সরে আসলো আরফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
~ঘুমিয়ে পরো।তোমার রেস্টের প্রয়োজন
আবরারের এহেন কথায় আরফি চোখ খুলে তাকালো আবরারের দিকে।আবরার মুচকি হাসলো আরফি আবরারকে জড়িয়ে ধরলো আবরার আরফিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো
আজ ঘুমটা হয়তো খুবই ভালো হবে ভালোবাসার মানুষ যদি নিজ বাহুডরে থাকে তাহলে ঘুমতো নিশ্চিন্তে দেওয়াই যায়।
আরফান বারান্দায় দাড়িয়ে আছে রুকাইয়া তার পাশে দাড়িয়ে আছে।রুকাইয়া বললো,
~আরফির কথা মনে পরছে?
আরফান বললো,
~হওয়াটাই তো স্বাভাবিক
রুকাইয়া বললো,
~আরফি অনেক সুখী হবে
আরফান রুকাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আবরার স্যার অবশ্যই আরফিকে আগলে রাখবে কিন্তু ভাইতো বোনের জন্য চিন্তা করবেই।
রুকাইয়া বললো,
~বাবুও তার ফুপির জন্য অনেক চিন্তা করছে তাই তার ক্ষুধা লেগেছে।
আরফান ফিক করে হেসে রুকাইয়ার গাল টেনে বললো,
~বাবুর জন্য এখনই খাবার নিয়ে আসছি।
আরফান চলে যেতেই রুকাইয়া বললো,
~আপনি চিন্তা করবেন না আরফান দেখবেন আবরার সাহেব আরফিকে রাণী করে রাখবে।

__________________৩ বছর পর____________________

~অর্পি একদম দৌড়াদৌড়ি করবেনা ব্যাথা পেয়ে যাবে।আজ তোমার ফুপিরাও আসবে।সোনা মা
রুকাইয়া কথা গুলো বলছে আর তার তিনবছরের মেয়ে বাচ্চার পিছে দৌড়াচ্ছে।অর্পি মায়ের কোনো কথাই শুনছে না এবার রুকাইয়া সোফায় বসে পরলো তখনই কলিংবেলের আওয়াজ আসলো রুকাইয়া দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।সামনে আরফি আর আবরার দাড়িয়ে আছে আরফিকে অতিসাবধানে ঘরে প্রবেশ করালো আবরার।
আরফিকে দেখে অর্পি দৌড়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো রুকাইয়া অর্পিকে কোলে নিয়ে বললো,
~ফুপি কোলে নিতে পারবেনা।ফুপির পেটে ছোট্ট একটা বাবু আছে ব্যাথা পাবে।
আরফি ৯মাসের অন্তঃসত্ত্বা যেকোনো সময় বাবুর আগমন হবে আরফি সোফায় বসে বললো,
~অর্পি মা ফুপি এখন তোমাকে কোলে নিতে পারবে।ভাবি দেও
আবরারও বললো,
~ভাবি নিতে পারবে আরফি অর্পিকে।
রুকাইয়া অর্পিকে আরফির কোলে তুলে দিলো আরফি অর্পি সাথে কথা বলতে শুরু করলে।রুকাইয়া বললো,
~অবনিরা কবে আসছে?
আবরার বললো,
~আজই আসবে রাতুলের কিছু কাজ আছে তা সেড়ে আসবে।
রাতুল আর অবনির বিয়ের আজ ১বছর হবে তাই সবাই আজ বাহিরে যাবে ঘুরতে যাবে।আবরার বললো,
~আরফি আমরা না যাই তোমার অবস্থা তো বেশ ভালোনা।
আরফি বললো,
~বেশি কথা বলবেন না আমরা যাবো
আবরার আর কিছু বললো না।একটুপর সবাই এসে পরলো আরফি,আবরার,আরফান,রুকাইয়া,অর্পি,অবনি আর রাতুল রওনা দিলে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে সব ঠিক চলছিল।তখনই আরফি পেটে হাত দিয়ে বললো,
~আমার অনেক ব্যাথা করছে।
আবরার এটা শুনে অনেকটাই রেগে গেলো আর বললো,
~আমি আগেই বলেছিলাম আমরা আজ যাবোনা কিন্তু আমার কথা শুনলোনা।
আরফান বললো,
~হাসপাতালের দিকে গাড়ি ঘুরাতে হবে।
রাতুল তাই করলো আরফির ব্যাথা বাড়ছেই আবরার তাকে সামলাচ্ছে অবনি আর রুকাইয়াও আছে।
আরফান অর্পিকে সামলিয়ে রাখছে কিছুক্ষণ পর তারা হাসপাতালে পৌছালে। রাতুল জাবেদা বেগম আর সায়েদা খানমকে ফোন করে সব বলে দিয়েছে তারা রওনা দিয়েছে।আবরার আরফির হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ডক্টর এসে আরফিকে ভিতরে নিয়ে গেলো।আরফি আবরারের দিকে তাকিয়ে রইলো আবরার চেয়ারে ধপ করে বসে পরলো।তার অনেক কষ্ট হচ্ছে সব কিছু অগোছালো লাগছে এতোটা খারাপ লাগছে বুঝতে পারছেনা।রাতুল আর আরফান আবরারকে সামলাতে ব্যস্ত হলো জাবেদা বেগম আর সায়েদা খানমও এসে পরেছে।আবরার বারবার শুধু ওটির দিকে তাকাচ্ছে কী হচ্ছে ভিতরে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।
হঠাৎ বাচ্চার কান্নার আওয়াজে সবাই থমকে গেলো আবরারের মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠলো।ডক্টর বের হয়ে আসলো তার সাথে নার্স একটা ছোট বাচ্চাকে
চাদরে মুড়িয়ে নিয়ে আসলো।নার্সের কোল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে নিলো জাবেদা বেগম ডক্টর বললো,
~অভিনন্দন মেয়ে হয়েছে আর মাও ঠিক আছে।
আবরার স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে কাঁপা কাঁপা হাতে তার মেয়েকে কোলে নিলো।আবরার বললো,
~ছোট্ট পরী এসেছে আমার জীবনে তাই তোর নাম পরী।
আরফি জ্ঞান ফিরলো ১ঘন্টা পর সে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো তার পাশে সবাই দাড়িয়ে আছে।আবরার তার মাথার কাছে বসে আছে আরফি বললো,
~আমার বাবু?
আরফির কথায় সায়েদা খানম বাবুকে কোলে নিয়ে আরফির পাশে শুইয়ে দিয়ে বললো,
~তোর মেয়ে
আরফি বাবুর দিকে তাকালো একদম ছোট্ট পরী আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো,
~পরী এসেছে দেখেছেন।
আবরার মাথানেড়ে হাসলো আরফি পরীর মাথায় চুমো দিলো।সবাই আরফির সাথে দেখা করে চলে গেলো আবরার আরফির হাত ধরে বললো,
~ধন্যবাদ আমার পরীটাকে এনে দেওয়ার জন্য।
আরফিরা পরেরদিন বিকেল বেলায় বাসায় পৌছে গেলো আরফি সবারর সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ঘরে এসে শুয়ে পরলো।পরীকে সায়েদা খানম নিয়ে গেছে তাই আরফি একটু রেস্ট নিচ্ছে আবরার আরফির পাশে শুয়ে তার গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।আরফি চোখ বন্ধ করে বললো,
~সুযোগ নেওয়া হচ্ছে আমার ঘুমের।
আবরার বললো,
~নিজের বউয়ের সুযোগ নিবো কেন?অধিকার আছে আমার।
আরফি আবরারের দিকে ফিরে তার বুকে মাথা রেখে বললো,
~আপনি ভয় পেয়েছিলেন?
আবরার বললো,
~ওসময়ের অনুভূতি তুমি বুঝবেনা।
আরফি বললো,
~ভালোবাসি আবরার সাহেব।
আবরারও মুচকি হেসে বললো,
~ভালোবাসি প্রিয়াঙ্গিনী।
তখনই পরীর কান্নার আওয়াজ আসলো আরফি হেসে বললো,
~ভালোবাসার সময় নেই মেয়ে সামলান।
আবরারও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~হায়রে কিসমত।
বলেই নিচে চলে গেলো আর আরফি হাসতে লাগলো।এভাবেই ভালো থাকুক প্রতিটি ভালোবাসা আরফি আর আবরারের পরিবার এখন স্বয়ংসম্পূর্ন ভালোবাসায় ভরপুর।
#অনুভুতির মেলা এখন তাদের ঘর জুড়ে ভালো থাকুক তারা তাদের ভালোবাসাময় জগতে।

সমাপ্ত।

(জানিনা গল্পটা কতোটা ভালো হয়েছে কিন্তু নিজের মতো করে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।এখানে ইতি টানা হলো নতুন গল্প নিয়ে আবার হাজির হবো ততদিন পর্যন্ত আল্লাহ হাফেজ।
পরিশেষে কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে