অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-০৯

0
2609

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৯
#Devjani

শ্রেয়ান হাঁটা শুরু করে।আরাদ্ধা শ্রেয়ানকে ফলো করে সামনের দিকে এগোতেই পেছন থেকে রোদ্দুর চড়া গলায় ডাক দেয়,আরাদ্ধা,,,,,!

আরাদ্ধা পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়। রোদ্দুরের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। লজ্জা লাগছে। চোখের দৃষ্টি নিচে মাটির দিকে স্থির।রোদ্দুরের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে।

রোদ্দুর আরাদ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।সামনে হালকা ঝুঁকে বলে, আম্মু ফোন করেছে। আগামী সপ্তাহে সুমাইয়ার সাথে বিয়ে তোকে কিন্তু অবশ্যই থাকতে হবে।থাকবি তো!

আরাদ্ধা অবাক দৃষ্টিতে তাকায় রোদ্দুরের দিকে। রোদ্দুরের কথাগুলো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। একটু আগেই তো রোদ্দুরের কথা শুনেছে।রোদ্দুর তো বলেছে তাকে,,,,তাহলে এখন এসব কি কেন বলছে?আরাদ্ধার খারাপ লাগছে।তবে এই খারাপ লাগার যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।হয়ত রোদ্দুর তার অপ্রকাশিত ভালোলাগা ছিল।নয়ত অব্যক্ত ভালোবাসা।
আরাদ্ধা মুখে মিথ্যে হাসির রেখা টেনে বলে, অবশ্যই থাকবো,আসি।

☆☆☆

ঘড়ির কাঁটায় সাতটা বাজছে।ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয় আরাদ্ধা।হুট করে ফোনটা বেজে উঠে।আরাদ্ধা বিরক্ত হয়।এই ফোন যেন তার বিশাল বড় শত্রু।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ভেঙ্গে ফেলে দিতে।
আরাদ্ধা ফোন তুলে দেখে রোদ্দুর ফোন করেছে।আরদ্ধা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন তুলে।ওপাশ থেকে রোদ্দুর ভারী গলায় বলে,হাসান মারা গেছে।

আরাদ্ধার মন খারাপ হলো না।মনে হলো যা হয়েছে ঠিক হয়েছে।হয়ত হাসান তার কৃতকর্মের শাস্তি পেয়েছে। রাইয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করার শাস্তি পেয়েছে।তবে রাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে।আরাদ্ধা কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দিতে ইচ্ছে হলো।কথা বলার ইচ্ছে নেই তার। তাছাড়া কি বলবে বুঝতেও পারছে না। কিন্তু ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।তাই ভদ্রভাবে বলে,ওহ্, আচ্ছা।রাখছি!

রোদ্দুরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আরাদ্ধা ফোনটা কেটে দেয়।ফোন অফ করে দেয় যাতে কেউ ফোন দিয়ে বিরক্ত না করতে পারে।

☆☆☆

কফিশপে আধ ঘন্টা ধরে বসে আছে অদ্রি।শ্রেয়ান আর আরাদ্ধার জন্য অপেক্ষা করছে। অদ্রি বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছে আরাদ্ধাকে।এক পর্যায়ে চার্জ শেষ হয়ে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। অদ্রি বিরক্ত হয়।
হঠাৎ পেছন থেকে শ্রেয়ানের ডাক শুনে পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়।শ্রেয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
শ্রেয়ান অদ্রির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।বলে,কি হয়েছে তোমার?

অদ্রি শ্রেয়ানের কথার মানে বুঝলো না। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো এই কথার মানে কি। কিন্তু জিজ্ঞেস না করে চুপ করে থাকে।

শ্রেয়ান আবার প্রশ্ন করে,কি হয়েছে তোমার এমন করছো কেন?

অদ্রি এবার মুখ খুলে।বলে,কি বলতে চাইছেন পরিষ্কার করে বলুন।

শ্রেয়ান আমতা আমতা করে বলে, তুমি আমাকে এভোয়েড করছো কেন?

অদ্রি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, আপনার পিছন পিছন ঘুরার কথা বুঝি?

— তা বলিনি।

— তো কি বলেছেন?

— তুমি আমার সাথে কথা বলো না কেন?

— যে আমাকে পাত্তাই দেয় না তার পিছনে ঘুরে নিজের মান সম্মান নষ্ট করতে আমি রাজি না।আপনি আমাকে এসব কথা কেন বলছেন?আরু কোথায়?ওর তো এতক্ষণে এসে পড়ার কথা।আর আমাকে শুধু শুধু আপনাদের পার্সোনাল ব্যাপারে জড়াচ্ছেন। আপনার আর আরুর মাঝে আমি থেকে কি করবো?

— আরু আসবে না।ও না করে দিয়েছে।

অদ্রি রাগী গলায় বলে,তাহলে আমাকে এতক্ষণ এখনে অপেক্ষা করানোর মানে কি!ও কি পেয়েছে আমাকে?

— সরি সরি।আরাদ্ধা আমাকে নিষেধ করতে বলেছিল আমি করিনি।

— আমাকে এভাবে অপেক্ষা করানোর মানে কি!

শ্রেয়ান অদ্রির একটু কাছে চলে যায়।বলে, পরিষ্কার করে বলো তো তোমার কি হয়েছে?আমার সাথে কথা বলছো না কেন?

অদ্রি চড়া গলায় বলে,আরু মাইন্ড করতে পারে।

শ্রেয়ান হালকা হাসে।বলে, এই তাহলে তোমার সমস্যা?

অদ্রি চুপ করে আছে।শ্রেয়ান আবার বলে,কি করলে আমার সাথে কথা বলবে?

অদ্রি ছোট ছোট চোখ করে শ্রেয়ানের দিকে তাকায়।বলে, হঠাৎ আমার সাথে কথা বলার জন্য এমন উঠে পড়ে লেগেছেন কেন?

— কথা বলতে চাই বলে!

শ্রেয়ানের উত্তর অদ্রির পছন্দ হয় না।বলে,আরুর সাথে আপনি মিশতে পারবেন না।যদি রাজি থাকেন তো আমি আপনার সাথে কথা বলব।

শ্রেয়ান চমকে উঠে বলে, অসম্ভব।আরাদ্ধার সাথে কথা না বলে আমি থাকতেই পারবো না।আরাদ্ধাকে আমি তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি।

অদ্রি ছোট ছোট চোখ করে শ্রেয়ানের দিকে তাকায়। মৃদু গলায় বলে,কি বলতে চান আপনি?আমার থেকেও বেশি মানে?তার মানে আপনি আমাকে একটু হলেও,,,,,,

— হয়ত!

অদ্রি জবাব দেয়, আমার একটুতে চলবে না।

শ্রেয়ান হেসে বলে,তাহলে ধরো পুরোটাই।আরাদ্ধা আর তুমি সমান সমান।

অদ্রি ভেংচি কাটে।বলে,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমি বাসায় চলে যাবো।

শ্রেয়ান অবাক হয়ে বলে,এত তাড়াতাড়ি!

অদ্রি রাগী গলায় বলে, আপনার সাথে পিকনিক করতে আসিনি।দরকারে এসেছি।কাজ নেই চলে যাচ্ছি।

— একটু থাকো।ভালো লাগবে।

অদ্রি খানিকটা ভেবে বলে, আচ্ছা!

☆☆☆

বইয়ের পাতায় মুখ গুজে বসে আছে আরাদ্ধা। রক্তনালী সম্পর্কে পড়ছে। কিন্তু মাথায় ঢুকছে না। পরীক্ষার আর বেশি দেরি নেই। কিন্তু ছোটখাটো বিষয়গুলো কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। মনোযোগ দিয়ে পড়তে গেলেই হাজারটা চিন্তা এসে মাথায় ভর করে।
এভাবে চলতে থাকলে নিশ্চিত পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করবে।লোকে যাই বলুক একবার রোদ্দুরের কাছে যাওয়া উচিত।পড়া বুঝতেই তো যাচ্ছে।
আরাদ্ধা ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। খুব সাবধানে বাসা থেকে বের হয়।দাদি জানলে আবার অশান্তি হবে।

রোদ্দুরের বাসার সামনে এসে কলিংবেল চাপতেই রোদ্দুরের মা দরজা খুলে দেয়।আরাদ্ধাকে দেখে হালকা হেসে বলে,আরু মা!কোনো দরকার?

আরাদ্ধা সংকোচ নিয়ে বলে, রোদ্দুর ভাইয়া বাসায় আছে?

— না। সুমাইয়াকে নিয়ে একটু বাইরে বেরিয়েছে।

আরাদ্ধার মন ছোট হয়ে যায়।সে তো ভুলেই গিয়েছিল রোদ্দুরের জীবনে নতুন একজন আসছে।এখন তো তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময়।
আরাদ্ধা বলে,ওহ্!আমার আসলে একটু পড়া বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল তাই ভাইলাম ভাইয়ার কাছ থেকে বুঝে যাই।

রোদ্দুরের মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,এখন এত বাইরে বেশি এসো না। সামনে না পরীক্ষা।এখন এত বের হলে ক্ষতি হবে।আর ক্লাসেই পড়াগুলো মনোযোগ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করবে। রোদ্দুর আছে বলে তোর সুবিধা হয়।একবার ভেবে দেখ এমন সুযোগ কিন্তু সবার নেই।তারা কিভাবে পড়ে বলতো!

রোদ্দুরের মা কথাগুলো শান্তভাবে বললেও আরাদ্ধার মনে হলো কথাগুলো দিয়ে তিনি ইঙ্গিতে কিছু বুঝাতে চাইছে।আরাদ্ধার অবাক হয়।চেনা চেনা মানুষগুলোকে হুট করেই কেমন অচেনা লাগে। ভদ্রভাবে বলে, আন্টি আমি আসছি।ভালো থাকবেন।

আরাদ্ধা পেছনে ঘুরতেই রোদ্দুরের মা ডাক দেয়।বলে,আরু তুমি আমার কথায় কিছু মনে করনি তো!

আরাদ্ধা হেসে বলে, না।কি মনে করবো?আপনি তো ভালোর জন্যই বলেছেন।
আরাদ্ধা নিচে নামতেই খেয়াল করে টাইগার ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।
তাকে দেখেই ঘেউ ঘেউ শব্দে ডাকা শুরু করে।আরাদ্ধার এই মুহূর্তে ভয় লাগছে না টাইগারকে। বরং মনে হচ্ছে,সবাই পাল্টে গেছে। কিন্তু টাইগার পাল্টে নি।
টাইগার এক পর্যায়ে ডাকা বন্ধ করে তার দিকে এগিয়ে এলো।আরাদ্ধার এবার বেশ ভয় লাগছে।নাহ! টাইগারও পাল্টে গেছে।নাহলে না ডেকে তার দিকে কেন এগিয়ে আসছে?

টাইগার আরাদ্ধার কাছে এসে গায়ে গা ঘেষে দাড়াতেই আরাদ্ধা ভয়ে দৌড়ানো শুরু করে। কিছুদূর যেতেই পাথরের সাথে পা লেগে ধপ করে নিচে পড়ে যায়। টাইগারের দিকে তাকিয়ে দেখে আলসেমি ঝেড়ে আরামে ওই জায়গায় বসে পড়ল।

আরাদ্ধা রাগে চেঁচিয়ে বলে,একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম সেটাও তোর সহ্য হলো না।কেন রে তোর বসার আর কোনো জায়গা নেই, হুম?

নিচে বসে জামা পরিষ্কার করছিল সে। হঠাৎ কেউ একটা হাত তার দিকে বাড়িয়ে দেয়।ধরে উঠার জন্য।আরাদ্ধার তাকিয়ে দেখে রোদ্দুরের হাত।আরাদ্ধা ধরতে গিয়েও ধরে না। নিজে নিজেই উঠে দাঁড়ায়।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে