অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ১০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
আইজা ফোন হাতে নিয়ে কেটে দিলো। সাইদ অবাক হয়, “এ কি করলে?”
“আমি ওর সাথে কথা বলতে পারবো না।”
“কেন?”
“কারণ…কারণ নেই। এমনিতেই। তুমি কথা বলো।” আইজাকে ভীষণ অস্থির দেখাল।
সাইদ এবার নিজেই ফোন দিলো ইনারাকে।
“হ্যালো ইনারা। আমি সাইদ বলছি।”
“সাইদ ভাই আপনি হঠাৎ করে এতবছর পর কি করে আমার কথা মনে করলেন? কোনো জরুরি কাজ আছে বুঝি?”
সাইদও ইনারার সাথে কথা বলতে লজ্জিত বোধ করছিল, “না মানে কাজ ছিলো কিন্তু তোমার জন্যও এখানে লাভ আছে।”
“তাই? তাহলে শুনি কি লাভ?”
“আনন্দ রহমানের পরিচালিত নতুন সিনেমা ‘রহস্য ঘর’ এর কথা নিশ্চয়ই শুনেছ।”
“না, শুনি না।”
ইনারার এমন সরাসরি উওরে সাইদ আবারও অস্বস্তিতে পরে গেল। সে বলল, “অনেক বড় প্রজেক্ট। তারা তোমাকে কাস্ট করতে চায়। ভাগ্য আবার তোমাকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসার সুযোগ দিয়েছে।”
ইনারা শব্দ করে হাসে এবার, “তাহলে এতবছর পর আপনি আমাকে এ কাজের জন্য কল করেছেন? অফারটা খারাপ না কিন্তু আপনার পরিবর্তে কি চাই তা বলুন।”
“তুমি…. তুমি…” সাইদের বলতে যেয়ে শব্দগুলো বারবার গলায় আটকে আসছিলো। সে আইজার দিকে একপলক তাকাল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটানা বলল, “পরিবর্তে আমি চাই তুমি আইজার পক্ষ হয়ে মিডিয়াতে জানাও যে আইজার সাথে তোমার কোনো সমস্যা নেই। আইজার সাথে একসময় তোমার ভালো সম্পর্ক থাকলেও এরপর ছুটে যায়। আর রোজাউরের ভিডিওর সাথে আইজার কোনো লেনদেন নেই। আর তোমারও ওর সাথে কোনো সমস্যা নেই।”
“ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! একসাথে এত মিথ্যা কথা? আমি তো মনে সারাজীবনেও এত মিথ্যা বলিনি যতটা আপনি এক নিশ্বাসে বলে ফেললেন।”
“ইনারা তুমি করবে কি-না তা বলো।”
“করতে পারি…আবার না-ও পারি। ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করা যায় যদি আইজা এসে আমার কাছে ভিক্ষা চায়।”
”ইনারা!” আঁতকে উঠল সাইদ, “এসব কোন ধরনের কথা?”
সাইদের এমন উঁচু স্বরে কথা বলা শুনে আইজা ও তার মা একে অপরের দিকে তাকাল। আইজা সাইদকে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে, “কী বলেছে?”
সাইদ তা বলে না। উঠে সোফা থেকে একটু দূরে যায়। আবার বলে, “তুমি এত বেয়াদব হয়ে গেছ কয়েকবছরে!”
“ওহ সাট আপ। আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলার?” ইনারাও একইসুরে উওর দেয়। এবার সাইদ হতভম্ব হয়ে যায়। ইনারা তার সাথে এভাবে কথা বলতে পারে সে কল্পনাও করে নি।
“তুমি আসলেই ইনারা তো।”
“এসব কোন গর্দভ টাইপের প্রশ্ন? তো আপনার কী মনে হয়? আপনি কার সাথে এতক্ষণ ধরে কথা বলছেন?”
“তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ!”
“দেখুন আপনি সুরভির ভাই হয়ে কথা বললে আমি আপনাকে সম্মান দিতাম। কিন্তু আইজার উকিল হয়ে কথা বলতে আসলে যদি নিজেকে সম্মানের যোগ্য মনে করে তাহলে সত্যি আপনার মতো অবুঝ আমি কখনো দেখি নি। আইজা আমার সাথে যা করেছে তা জানার পর আপনি কীভাবে ভাবতে পারেন আপনি আমাকে এত সহজে একটা কাজ করতে বলবেন আর আমি তা করে দিব? ওকে বলেন আমার কাছে এসে যেন ভিক্ষা চায়। তারপর আমি চিন্তা করবো।”
“আচ্ছা তুমি আমার কথা তো….”
ইনারা আর কোন কথাই শোনে না। সে ফোন কেটে দেয়।
আইজা দ্রুত উঠে এসে জিজ্ঞেস করে, “কি বলল ও?”
সাইদ প্রথমে চুপ রইল। তারপর আমতা-আমতা করে বলল, “ও বলছিলো ওর কাছে অনুরোধ করতে হবে তোমার। তারপর ও ভাববে।”
“এটা বলায় তুমি এভাবে আঁতকে উঠলে? তুমি তো সহজে রাগার মানুষ নও।”
“ঠিক তা না। ও…ও বলেছিলো ওর কাছে ভিক্ষা চাইতে।”
কথাটা শুনতেই গা জ্বলে উঠে আইজার। সে রাগে চেঁচিয়ে উঠে, “কী বলেছে ও? ওই সামান্য একটা মেয়ের সামনে ভিক্ষা চাইব সাহায্যের। অসম্ভব।”
আইজার মা দ্রুত তার পাশে এসে দাঁড়ায়, “কীসের অসম্ভব? তোর ভবিষ্যতের জন্য হইলে সমস্যা কী?”
“মা তুমি কী বলছ এসব? আমি ওর কাছে নিজের সম্মান হারিয়ে সাহায্য চাইবো।”
“আহা! সমস্যা কি? কে দেখবে? কেউ না। কিন্তু ওকে সিনেমায় নেওয়ার পর যখন তুই ওর সম্মান সবার কাছে ডুবাবি তখন তো সবাই দেখবে।”
“মানে?”
“মানে ওকে আগে তোর সাংবাদিকদের সামনে তোর পক্ষে কথা বলতে দে। তারপর তো সে কথা ফিরাতে পারবো না ও। ফিরালে ওর নামই বদনাম হইবো। আর সিনেমা শুরু হইলে ওকে সিনেমায় ওর অভিনয় প্রদর্শন এর সুযোগ তো দিবিই না, উল্টো এমন পরিস্থিতি তৈরি করবি যেন সবার সামনে ওর সম্মান নষ্ট হয়। তোর জন্য মনে ভয় ঢোকাবি। তাইলেই শেষ।”
“ঠিক বলছ মা। আচ্ছা আমি রাজি।”
“তুই বস। কিছু খাবার জন্য আনি। গতকাল থেকে কিছু খাস নি তুই।”
আইজা মাথা নাড়ায়। তার মা যাবার পর সাইদ কঠিন গলায় তাকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আসলে তোমার মা’য়ের কথা মতো কাজ করবে? দেখ আইজা, আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে অনেককিছু সহ্য করছি। আমার আদরের ছোট বোনও তোমার জন্য আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।”
“তুমি আমাকে এই চিনো? আমি এসব করতে পারি?”
সাইদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে, “মাঝেমধ্যে তোমার কথা শুনে আসলে কেমন অচেনা লাগে তোমায়। আমি ইনারাকে কল দিচ্ছি দেখা করার জন্য।”
সাইদ বারবার ইনারাকে কল দিলো, সে ধরল না। ধরলেও কথা ঘুরাচ্ছিল বারবার। বহু কষ্টে সে দুইদিন পর দেখা করতে রাজি হয়। একটি রেস্টুরেন্ট কিছু সময়ের জন্য বুক করেছে আইজা। কারও সামনে সে ইনারার সাথে কথা বলতে পারে না। তার কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারে না। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। প্রায় একঘন্টা হয়ে এলো ইনারার খবর নেই। আইজা রাগে কটমট করছে। সে সাইদকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ও? আমি কী চলে যাব না’কি? এত অপেক্ষা আমি জীবনে কারও করি নি।”
“ওকে কল দিয়েছিলাম বলল আসছে। এতক্ষণে তো আসার কথা।”
“আসার কথা তো এক ঘন্টা আগে।”
“উফফ আপু এত ধৈর্য্য হারা হলে হয়? এখনই ধৈর্য্যহারা হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কি করবেন?” ইনারার কন্ঠ শুনতে পেয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় আইজা। তার কনফিডেন্স মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়। তার কেমন ভয় লাগতে শুরু করল। সে দেখল সাইদ তার পিছনের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে উঠে দাঁড়াল। এই দৃশ্য দেখে আইজার দৃষ্টি যেয়ে আটকাল তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বডিগার্ডদের উপর। বডিগার্ডদের চোখদুটো বড় এবং গোল হয়ে আছে। সে অবাক হয়। সাথে সাথে পিছনে ফিরে তাকায়। মুহূর্তে তার ভ্রু কপালে উঠে যায়। বিস্ময়ের সীমা থাকে না তার। সে নিজ অজান্তেই উঠে দাঁড়ায়।
তার সামনে দিয়ে ইনারা হেঁটে আসছে। কিন্তু এই ইনারাকে যেন সে চিনেই না। এই যেন কোন ভিন্ন ইনারা। লাল রঙের পোশাক পরে এসেছে সে। সাথে সোনালী রং এর জুয়েলারি। সাজগোজ করা। তার সৌন্দর্য যেন চরম পর্যায়ে। তার মনে হতো সে তার সাইয়ারা মামীর থেকে সুন্দর কোনো নারী আর দেখে নি। কিন্তু আজ ইনারাকে দেখে তার ভুল মনে হতে শুরু করল। সাথে তার হৃদয়ের ঈর্ষাটাও অন্যরূপ নিলো। তার সৌন্দর্যের প্রশংসা মনে আসায় নিজের উপরই রাগ উঠে তার।
সে সাইদের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় একপলক। তারপর তার বডিগার্ডদের বলে, “এখানে কি আমাদের তাকিয়ে থাকার জন্য এনেছি? রুমের অন্য কোনায় যেয়ে দাঁড়াও। প্রয়োজন হলে ডাকবো।”
বডিগার্ডরা জলদি করে সেখান থেকে সরে যায়। সাইদও এসে দাঁড়ায় আইজার পাশে।
ইনারা সোজা এসে বসে পড়ে সামনের চেয়ারে। পায়ের উপর পা তুলে। এ দৃশ্য দেখে আইজা যেমন হতবাক হয়ে তার থেকেও বেশি রাগ উঠে তার। তার সামনে এভাবে পা’য়ের উপর পা তুলে কীভাবে বসতে পারে ইনারা?
আবার বসেই আদেশের সুরে বলে, “আমার বেশি সময় নেই। যা বলার তাড়াতাড়ি বলবেন। ঘড়ির কাঁটায় দশমিনিট দিলাম।”
আইজা কঠিন গলায় বলে, “এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে আমাদের সময় দিচ্ছো?”
“এখন পাঁচ মিনিট। যার কাজ তারই ঠেকা। জলদি বলুন, আপনারা আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন কিন্তু আমার ঘড়ির কাঁটা আপনাদের জন্য অপেক্ষা করবে না।”
আইজা এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো, “ইনারা আমাকে এটিটিউড দেখাতে আসবি না।”
হাসে ইনারা। পরক্ষণেই আইজার দিকে তাকায় কঠিন দৃষ্টিতে, “চাইলে আমি অনেক কিছুই দেখাতে পারি। কিন্তু নিশ্চয়ই তুমি দেখতে চাইবে না।”
ইনারার দৃষ্টিতে মুহূর্তেই চুপসে যায় আইজা। এক ঢোক গিলে। মুহূর্তে তার সকল রাগ যেন হাওয়া হয়ে গেল। ইনারার দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছিল সে এখনই হৃদয় থেকে প্রাণ টেনে নিয়ে আসবে তার। সে ঘাবড়ে যায়।
“আর চার মিনিট বাকি।” ইনারা মনে করাল। সাইদ তাকে ইশারায় বলল ইনারার সাথে কথা বলতে। আইজা বলে, “আ…আমার তোর কাছে সাহায্য লাগবে।”
ইনারা তার আঙ্গুলে খুলে থাকা আংটিটা মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলে, “উপস ভুলে পরে গেছে।”
সাইদ আংটিটা উঠাতে নিলেই ইনারা বলে উঠে, “আরে সাইদ ভাই কি করছেন আপনি উঠাচ্ছেন কেন? শত হোক আপনি সুরভির ভাই। আপনাকে নিজের পা’য়ের কাছে হাত রাখতে দেই কীভাবে?” সাইদ উঠে দাঁড়াতেই সে বলে, “আর সাহায্য তো আপনার লাগবে না। যার সাহায্য লাগবে তার উঠিয়ে দেওয়া উচিত তাই না?”
আইজা রাগে কটমট করতে থাকলো। কিন্তু কিছু বললো না। যেয়ে ইনারার আংটিটা উঠাতে নিচে ইনারার পায়ের কাছে ঝুঁকতে ইনারা বলে উঠে, “এইত্তো এবার বলো তো কী যেন বলছিলে তুমি?”
আইজা চমকে তাকায় ইনারার দিকে।
ইনারা আবার বলে, “জলদি বলো সময় খুব কম আমার কাছে।”
“অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে ইনু।”
“সাহায্য না লাগলে অকারণে আমার সময় নষ্ট করলে কেন? যা বলছি তা করো নাহয় আমি চললাম।”
ইনারা উঠে যেতে নেওয়ার পূর্বেই আইজা বলে, “ওয়েট।” সে সময় নেয়। চোখ নামিয়ে বলে, “আমার তোর কাছে সাহায্য দরকার। প্লি…প্লিজ।”
ইনারা থেমে যায়। আইজার দিকে তাকাতেই তার মনে পড়ে যায় এভাবেই তিন বছর পূর্বে সে ও প্রিয় তার পা’য়ের কাছে বসে অনুরোধ করছিল। কিন্তু আইজা একবারও তাদের উপর রহম করে নি। ভাবতেই চোখ দুটো ভিজে এলো তার। সে সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিলো। কঠিন গলায় বলল, “এখন আমার কাজের কথা বলা হোক। অবশ্য আপনাদের কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমিই বলছি। প্রথমে আমি ফিল্মের কাহিনী শুনবো। যদি ভালো লাগে তাহলে আপনাদের সৌভাগ্য। না ভালো লাগলে আপনাদের দুর্ভাগ্য। আমার যদি কোন কাজ না হয় তাহলে আমি কোন স্টেটমেন্ট দিতে পারবো না।”
আইজা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পরে, “তাহলে আমাকে দিয়ে কেন এভাবে অনুরোধ করালি?”
ইনারাও উঠে দাঁড়ায়। আইজার চোখে চোখ রেখে বলে, “আপনাকে নিজের জায়গা দেখিয়েছি।”
“তোকে…” আইজা রাগে এগিয়ে যেতেই সাইদ তার হাত ধরে নিলো। ইনারা তার কথায় আরও যোগ করে, “ওহ ভালো কথা, আমার যদি স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয় এবং আমি সিনেমাতে কাজ করতে রাজি হই তাহলে আমি যেভাবে চাইব সেভাবেই কাজ হবে, আমাকে কোনো প্রকার জ্বলাতন করা হলে সাথে সাথে আমি ফিল্ম ছেড়ে দিতে পারবো। সাথে আমাকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর এসবের জন্য আমার লিগেল এগরিমেন্ট চাই। আসলে আমার সময় অনেক মূল্যবান তো তাই।”
আইজা বলে, “মামার বাড়ির আবদার? প্রয়োজন নেই তোমার। চলো সাইদ।”
আইজা সাইদকে নিয়ে সেখান থেকে যেতে নিবে আর এক চেনা কান্নামাখা কন্ঠ শুনলো,
“আমি রোজাউর রহমান স্বীকার করছি আমিই কয়েকবছর আছে ইনারা নামক যুবতীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলাম। আমাকে পাঠানো হয়েছিলো। যারা পাঠিয়েছিল তারা হলেন, পরিচালক মুশতাক এবং অভিনেত্রী আইজা। আমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ ওদের। আমাকে টাকা দিয়েছিল। আমি লোভে পরে এমন করেছি। আমাকে ছেড়ে দিন। ছেড়ে দিন আমায়।”
আইজা স্তব্ধ হয়ে গেল। সে বলল, “মামার বাড়ি তো তুমি যাবে। জেলখানায়।”
আইজা সাথে সাথে ইনারার হাত থেকে মোবাইল নেবার ব্যার্থ চেষ্টা করে। ইনারা সরে যায়। না পেরে আইজা উঁচু স্বরে বডিগার্ডদের বলে, “তোমরা ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছো? ওর হাতের মোবাইল আমার চাই। যে কোনো মূল্যে। এই ভিডিও ডিলিট করো।”
বডিগার্ডরা মাঝপথ পেরানোর আগেই। ইনারা বেখেয়ালিভাবে বলে, “আহা আপু এতটুকু কথা? এ ভিডিও ডিলিট করব তাইতো? আমিই করে দিচ্ছি।”
ইনারা নিজেই আইজাকে দেখিয়ে ভিডিওটা ডিলিট করে। আবার বলে, “এই ভিডিও আরও কত আছে আমার কাছে। এত ছোট বিষয়ে রাগ হলে হয়? সামনে আরও কতকিছু দেখার আছে আপনার। আপনি নিজেকে সামলান, আমি আসি।” ইনারা তার পার্স নিয়ে আইজার পাশ কাটিয়ে যাবার সময় আরও বলে, “আমি যা বলেছি তা সব হওয়া চাই। একটা জিনিস এদিক থেকে ওদিক হলে তোমাকে ধ্বংস করতে এক মুহূর্ত লাগবে না আমার।”
বলে সে চলে যায়।
আইজা তখনও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাক। সাইজ তার পাশে এসে দাঁড়ায়, “আইজা সত্যি তুমি এটা করিয়েছ?”
আইজা উওর দেয় না। সে এখনও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ভয়ে তার জান শুকিয়ে গেছে। সে কাঁপছে। সে দ্রুত টেবিল থেকে একগ্লাস পানি উঠিয়ে তা পান করতে নিবে আর তার হাত থেকে গ্লাসটা ছুটে গেল। মেঝেতে পরে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
.
.
ইনারা বাড়িতে ঢোকার পূর্বেই দেখে একটি ট্রাক বাড়ির দরজা দিয়ে বের হচ্ছে। গাড়ি থেকে নামার পর সে রহমানকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করে, “ট্রাক কিসের ছিলো?”
“ছোট স্যার আনিয়েছে। আপনার জন্য স্যারপ্রাইজ। বাগানে যেয়ে দেখুন।”
ইনারা সোজা বাগানে যায়। সেখানে যেয়ে দেখে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর নিচে একটি দোলনা লাগানো। দৃশ্যটা দেখে সে এক মুহূর্তের জন্য অবাক হয়। পরক্ষণেই ঠোঁটের কোণে হাসি এঁকে উঠে তার। সে এক দৌড়ে যেয়ে বসে দোলনাটার উপর। দোলনায় দোল খায়।কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো ঝরে পড়ে তার উপর। যেন বর্ষণ হচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার। তার মনে হলো সে স্বপ্নের রাজ্যে এসে পরেছে। তার মনে পরে যায় ছোটবেলার কথা। তার মা তাকে দোলনায় দোল খাওয়াতো। তার উপর কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরতো। সে তখন সবসময়ই ডিজনির ছবি দেখতো আর তার মা’কে তার রাজকুমারের কথা জিজ্ঞেস করতো। তখন মা বলতো, “দেখিস একদিন এমনই এক দিনে তোর রাজকুমার ঘোড়ায় চড়ে তোকে নিতে আসবে। আমি সেদিন নিজে আমার রাজকন্যাকে রাজকুমারের হাতে তুলে দিব। আর সেদিন কৃষ্ণচূড়ার বর্ষণ হবে চারদিকে।”
মা’য়ের কথা ভাবতেই ইনারার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি এঁকে উঠে।
“রহমানের পেটে এ কথাও থাকলো না। কোথায় ভাবলাম তোমায় স্যারপ্রাইজ দিব। সে আগেই বলে বসে আছে।” ইনারা চোখ তুলতেই দেখতে পায় সভ্যকে। সভ্য তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে, “এত সুন্দর করে সেজে কাকে হার্ট অ্যাটাক দিতে গিয়েছিলে?”
ইনারা একগাল হেসে তার দিকে তাকায়। খুশির চোটে সে এক দুই না ভেবে ছুটে যেয়ে জাপটে পড়ে তার বুকে। বলে, “থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। আপনি জানেন না এইটা কেবল একটা স্যারপ্রাইজ না। এতটুকু জিনিসের সাথে আমার মা’য়ের কত স্মৃতি জড়িত। মা মরে যাবার পর বাড়ির কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটানো হয়। আমি কত অনুরোধ করি কেউ শুনে না। কেউ বুঝতে চায় না সে গাছের সাথে আমার কত স্মৃতি জড়িত ছিলো। কত অনুভূতি জড়িয়ে ছিলো। আমি আজ অনেক খুশি। অনেক।”
সভ্য স্তব্ধ হয়ে যায়। তার হৃদয়ের স্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়। এতবছর পর তার হৃদয়ে অদ্ভুত এক শান্তি ছড়ায়। আচ্ছা এই মুহূর্তটা কি স্বপ্ন বা বাস্তব? আচ্ছা এই মুহূর্তটা বাস্তব
হলে কি ইনারা তার হৃদয়ের এমন করুণ অবস্থা অনুভব করতে পারছে?
চলবে…
অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ১১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
সভ্য স্তব্ধ হয়ে যায়। তার হৃদয়ের স্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়। এতবছর পর তার হৃদয়ে অদ্ভুত এক শান্তি ছড়ায়। আচ্ছা এই মুহূর্তটা কি স্বপ্ন বা বাস্তব? আচ্ছা এই মুহূর্তটা বাস্তব
হলে কি ইনারা তার হৃদয়ের এমন করুণ অবস্থা অনুভব করতে পারছে?
সভ্যের যেন এই মুহূর্তটা অবিশ্বাস্য লাগছে। সে নিজের হাত ইনারার পিঠে রেখে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলো। নিজের বুকের ভেতর মিশিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এর পূর্বেই ইনারা সরে গেল। তাকে অস্থির দেখালো। সে এদিক ওদিক অশান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “সরি, আসলে একটু আবেগী হয়ে গিয়েছিলাম। তাই অজান্তেই…. কিছু মনে করবেন না।”
“মনে করব না? এত বছরের অশান্ত মনকে মুহূর্তখানিকের জন্য শান্তি দিয়ে আবারও অশান্ত করার অপরাধে তোমাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। শাস্তিটা হওয়া উচিত সারাজীবন আমার হয়ে থাকাটা।” মনে মনে বলল সভ্য। কিন্তু কথাটা মুখে আনলো না। তবে একটি দুষ্ট বুদ্ধি তার মাথায় এসে ভার করল। সে মিটিমিটি হেসে নাটকীয় ভঙ্গিতে ইনারাকে বলল, “তুমি কি করেছ তুমি জানো? তোমার সাথে তো দুই বছর পর আমার ডিভোর্স হয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে কার সাথে বিয়ে করব আমি? কী জবাব দিব ওকে? দেখ ইনারা তোমার জন্য যদি আমার ভবিষ্যতে বিয়ে না হয় তোমার জন্য ভারী সমস্যা হবে দেখে নিও।”
ইনারা হতভম্ব হয়ে গেল। খুশির চোটে সে সভ্যকে ছুটে যেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। কিন্তু পরে যখন তার ধ্যান এলো তখন নিজেকে সামলে নিয়ে মুখ তুলে নিলো। আজ আইজাকে ছোট করে যেমন খুশি হলো সে, তার থেকে বেশি স্যারপ্রাইজটা পেয়ে খুশি হয়। বিশেষ করে সভ্যের উপর তার রাগের কথাটা আর মনেই ছিলো না। কিন্তু সভ্যের শেষ কথা শুনে তার খুশিটাই হাওয়া হয়ে যায়। রাগ উঠে যায় তার। শখ কী লোকটার! সবে বিয়ের একমাস হলো এখনই অন্যকাওকে বিয়ে করার চিন্তায় আছে। এই মুহূর্তে তার মন চাইছে সভ্যের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।
ইনারা আবারও দোলনায় বসে বলে, “আমার কি সমস্যা হবে শুনি।”
সভ্যও তার পিছু পিছু যাচ্ছিল। সে বসতে না বসতেই দেখতে সভ্য তার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তার দিকে ঝুঁকে বলে, “পরে যদি অন্যকেউ আমাকে বিয়ে না করে তাহলে তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে থাকতে হবে।”
সভ্য এতটা কাছে আসায় ইনারা এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। সভ্যের চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি আটকে যায় তার দৃষ্টির মাঝে। তার মনে হলো তার হৃদয়ের অবস্থা করুণ হয়ে যাচ্ছে। তার চক্ষু লজ্জায় ঝুঁকে গেল। সাথে সাথে এক তীব্র হাওয়ায় তার চুল বাতাসে উড়ে গেল। কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে ঝরে তাদের এই মুহূর্তটা আরও মাতোয়ারা করল। বর্ষণ হলো তাদের উপর।
ইনারার থলথলে চুলগুলোর দিকে তাকায় সভ্য। হাত বুলিয়ে দিলো। কিছু কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে তার চুলে লাগিয়ে বলল। আবারও তার চোখের দিকে তাকাল। ইনারার নীল গভীর সাগরের মতো চোখ যেন তার হৃদয়টাকে ছিন্নভিন্ন করতে যথেষ্ট। ইনারার স্বর্ণোজ্জ্বল চুলে যে সারাজীবনের জন্য বন্দী হতে পারে। তার মাঝে বিলিন হতে পারে। হঠাৎ তার চোখ পরে ইনারার লালচে রঙের ঠোঁটে। কী নিঁখুত গড়ন! ইনারা আগে লিপ্সটিক দিতো না। দিলেও হাল্কা রঙের। আজ তাকে লাল রঙের লিপ্সটিক দেওয়ায় ঠোঁটের দিকে আকর্ষণ যাচ্ছে। তার হৃদয়টা লালায়িত হয়ে গেল। সে এক ঢোক গিলে।
ইনারা সভ্যকে এমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে তার কাঁধে মেরে বলে, “এভাবে কি দেখছেন? চোখ সরান।”
সভ্য খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কিন্তু সে আত্নরক্ষার সুরে বলল, “বাহ তুমি এসে জড়িয়ে ধরতে পারো। আমি তাকিয়ে থাকলে সমস্যা?”
“বললাম না ভুলে করেছি। আর করব না, যান।”
“নিজের বেলায় ষোল আনা। কয়েক বছর আগেও এভাবে আমাকে কিস করে কেটে পড়েছিলে। এখন আবার এ ব্যাপারেও? তুমি না বলেছিলে ঋণ রাখতে নেই। তাহলে তুমি আমার কী ফিরিয়ে দিবে শুনি?”
সভ্য দোলনায় বসতে নেয় কিন্তু ইনারা দেয় না, “খবরদার বসবেন না।”
“আহা কি অবস্থা! আমার ঘরে আমি বসতে পারব না?”
“এটা আমার দোলনা। আমি ছাড়া কেউ বসতে পারবে না।”
“একদম টিপিক্যাল বউদের ধমকানো ছাড়া আর কি পারো?”
ইনারা উঠে দাঁড়ায়। রাগান্বিত সুরে বলে, “আমি টিপিক্যাল বউদের মতো ধমকাই? তাহলে আপনি কী করেন? নিজেও তো আসল স্বামীর মতো ব্যাবহার করেন।”
“আমি কি করলাম শুনি?”
“এই’যে কথায় কথায় কাছে এসে পরেন, রাগ দেখান, বেহায়ামি করেন।”
“কথাটা ফেরত নেও। আমি বিনা দোষের আরোপ নেই না। ফেরত না নিলে আসলে করব এবার।”
“নিব না কি করবেন করেন।”
সভ্য হুট করেই ঝুঁকে ইনারার কাঁধে চুমু খেয়ে বসে। চুমুটা খেতেই দৌড়ে পায়লায় সে।
ইনারা স্তব্ধ হয়ে যায়। শিউরে ওঠে সে। সে নিজের কাঁধে হাত রেখে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সভ্যের যাবার দিকে। তার চোখ দুটো এখনো সভ্যের যাবার দিকে আটকানো। হৃদয়ের অবস্থা করুণ। আর হঠাৎ ঠোঁটের কোণে হাসি এসে হাজির।
.
.
“তুমি আমাকে বলেছিলে এসবের পিছনে কেবল তোমার মামা এবং আম্মু ছিলো। তাহলে সে ভিডিওটা কীসের আইজা?” প্রশ্ন করে সাইদ। আইজা মাথায় হাত ধরে বসে ছিলো। ভিডিওটা কীভাবে ইনারা পেল তাই মাথায় ঢুকছে না। এই ভিডিও একবার বাহির হলে তার কেবল ক্যারিয়ার নষ্ট হবে না তার জীবনও নষ্ট হবে। না, এ ভিডিও কারও সামনে আসতে পারে না। তার যে করেই হোক প্রডিউসারের সাথে কথা বলতেই হবে। সে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। মাথা তুলে সাইদকে রাগান্বিত সুরে বলে, “তুমি আমাকে চিনো না? না চিনলে ভালোবাসো বলে দাবি করো কেন? আমি তোমাকে বলেছি ইনারার সাথে এসব হবার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম বলে ওর মনে হচ্ছে আমি এসবে জড়িত। কিন্তু আমার কি করার আছে? সাইদ তুমি ভুলো না আমার কথাতেই মামা সুরভিকে কিছু করে নি। তার পরিবর্তে আমারও অনেক সমস্যা সহ্য করতে হয়েছে।
মামার বিরুদ্ধে গেলে উনি আমাদেরও ছাড়বে না। আমাদেরও শেষ করে ফেলবে। তুমি যেমন তোমার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য চুপ করে আছো, তেমন আমিও। তুমি কেবল নিজেরটা বুঝো।”
“আর সে ভিডিওর কী?”
“মামা আমাকে বলেছিল ইনারাকে সেখানে ডাকার কথা। হয়তো এজন্যই ভিডিওতে আমার নাম নেওয়া হয়েছে। আমি কি জানতাম যে ওকে সেখানে…. বাদ দেও। আমার আর সাফাই দেবার ইচ্ছা নেই। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তোমার প্রশ্নের উওর দিতে দিতে। আমার ইচ্ছা নেই আর তোমার সাথে কথা বলার। আমি গেলাম।”
আইজা আর এক মুহূর্তও সেখানে থাকে না বেরিয়ে পরে। বেরিয়েই দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সাইদ এবার তার কথা মেনে নিলেই হলো। তার কথাগুলো সম্পূর্ণ সত্য না হলেও মিথ্যাও নয়।
সে সোজা বাসায় যায়। রুমে যেয়ে কল দেয় ‘রহস্য ঘর’ এর প্রডিউসার মিঃ আনসারিকে। তাকে ইনারার শর্তের ব্যাপারে সব জানায়। সব শুনে মিঃ আনসারি বলে, “কিন্তু আমি তোমার কথা নিজের এত বড় ক্ষতি কেন করব?”
“ইনারা না আসলে আপনার ইনভেস্ট করা সিনেমাও লোকসানে যাবে।”
“কিন্তু পঞ্চাশ লক্ষ টাকা তো কম না। ইনারা আসলে আমার লাভ হবে ঠিক আছে কিন্তু এতটুকুতেই তো চলবে না।”
“তাহলে কি চাই আপনার?”
“আমার ওয়াইফ কিছু দিনের জন্য বাসায় নেই। তুমি আজ রাতে আসতে পারো।”
কথাটা শুনে আইজা চুপ হয়ে গেল। কিছু বলতে পারলো না। তার উওর না পেয়ে আনসারি সাহেব শব্দ করে হাসেন, “এমন ভাব করছ কেন যেন আগে আমার কাছে আসো নি। এত বড় বড় প্রজেক্ট তো আর এমনিতেই পাও নি। এত টেলেন্ট নেই তোমার। আজ রাতে আসবে না’কি তোমাকেই সিনেমা থেকে বের করে দিব তা বলো।”
“আসবো।”
.
.
ইনারা বসে আছে স্টুডিওতে। ফিল্মের রাইটার ও এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এর সাথে। তারা সিনেমার কাহিনী ছোট করে শুনাচ্ছিল তাকে,
“রহস্য ঘর হলো এমন একটি সিনেমা যা জাদুই ঘর হিসেবে মানা যায়। এখানে প্রধান চরিত্রে রিধি এবং রোহান থাকবে। আপনার চরিত্র হলো রিধির বেস্ট ফ্রেন্ড এর। অর্থাৎ মিস আইজার। আপনার চরিত্রের নাম মিথিলা। আপনি রিধিকে সবসময় সাহায্য করেন। গল্পের শুরুতেই সে ভেঙে পড়ে রুহানের সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায়। তখন আপনি রিধিকে সামলান। রিধি ও রুহানের আবার দেখা হয় দুইবছর পর। রুহানের দাদীর বাড়িতে। কিন্তু ঘরটা অদ্ভুত। সেখানে প্রতিদিন রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকে। সে ঘটনার রহস্য উদ্ভবন করতে শুরু করেন আপনি ও রিধি। কিন্তু দিন দিন ঘটনা বিগড়াতে থাকে। এরই মাঝে রুহানের মনে রিধির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায় আবারও এবং তাদের আলাদা হবার কারণ এবং আলাদা হবার পিছনের কারণও প্রকাশ পায়। কিন্তু তারা আবার এক হতে পারে না কারণ এখন রুহানের সাথে চৈতীর সম্পর্ক আছে। চৈতীর কারণে তারা এক হতে পারছে না। আর তাদের সকলের সে ঘরে আসাটাও কোনো নিয়তি ছিলো না। যারা সেখানে ছিলো সেখানের সবারই বিশেষ এক কারণ ছিলো সেখানে থাকার। যেন এসব এক পরিকল্পনা ছিলো। মিথিলার, রিধির, রুহানের, চৈতীর সাথে আরও তিনজনের।”
“সে পরিকল্পনার পিছনেও চৈতী ছিলো তাইতো?”
লেখক অবাক হয়ে তাকায় ইনারার দিকে, “আপনি কীভাবে বুঝলেন?”
ইনারা তাচ্ছিল্য হাসে, “আপনার বলার ধরণে। আমার চরিত্র বুঝাতে মিথিলার নাম নিচ্ছেন বুঝা যায়। প্রধান চরিত্রের নাম নেওয়াও স্বাভাবিক কিন্তু বারবার চৈতীর নাম নিচ্ছেন এটাই কি স্বাভাবিক নয়? একটা উওর দিন, এইসব রহস্যের পিছনেও চৈতীর হাত আছে?”
“কিছুটা।”
“এটা নেগেটিভ চরিত্র?”
“একদম ঠিক ধরেছেন।”
“আমি ওর চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।”
তখনই সহায়ক পরিচালক বলে উঠে, “কিন্তু এটা তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এর জন্য নিখুঁত অভিনয় প্রয়োজন।”
“প্রধান চরিত্রদেরও ভালো অভিনয় আসা প্রয়োজন। তাদের অভিনয়ও তো এভারেজ। এছাড়া আপনাকে কে বলেছে আমাকে অডিশন ছাড়া নিতে? আমি অডিশন দিব। কারও অভিনয় না দেখে আপনি কীভাবে বলতে পারেন তার অভিনয় নিখুঁত কি-না!”
“আমি…আসলে…”
ইনারার জোর গলায় কথাগুলো শুনে সহায়ক পরিচালক কি বলবেন ভেবে কূল পাচ্ছে না। তাই ইনারা আবার বলল, “পরিচালক আলতাফ আমার অভিনয় দেখে আমাকে তার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে বাছাই করেছিলেন তিনবছর আগে। আপনি নিশ্চয়ই উনার চরিত্র বাছাইয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে সন্দেহ করবেন না। আপনার প্রধান চরিত্ররাও তার চলচ্চিত্রে এক ঝলক আসার সুযোগ পায় নি।”
কথাটা শুনে লোকটাকে একটু অবাক মনে হলো। কিন্তু সে তা প্রকাশ না করে আবার ইনারাকে বলে,
“ম্যাম কথার ধরণটা একটু রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে না?”
“সত্য বলছি। রুক্ষ মনে হলে আমার কি করার?”
“ম্যাম এক কাজ করুন আপনি স্ক্রিপ্টটা নিন। ভালো করে পড়ে সিদ্ধান্ত নিন। ভালো একটা উপদেশ দিচ্ছি। আপনার প্রথম চলচ্চিত্রে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করলে পরবর্তীতেও এমন চরিত্রের অফার পাবেন। তাই আপনার জন্য ভালো…”
“আমার ভালো খারাপ আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। এই চরিত্রের অডিশন কবে তা আমাকে জানিয়েন। আমি এসে অডিশন দিব। বিনা পরিশ্রমে অন্যের কাজ ছিনিয়ে নেবার মতো মানুষ আমি নই। এবার উঠি তাহলে?”
তার সামনে বসা দুটো লোকও উঠে দাঁড়ায় তাকে বিদায় দিতে। ইনারা স্ক্রিপ্ট নিয়ে বিদায় হতেই লেখক বলে উঠে, “আমার তো মনে হয় মিস ইনারাই চৈতী চরিত্রের জন্য পার্ফেক্ট।”
“এমন কেন মনে হলো?”
“তার এটাটিউড দেখেছ? নির্ভয়, এবং সোজাসোজি কথা বলতে পছন্দ করে। তার চোখে তাকাতেই আমার চৈতীর কথা মনে পড়ল। যেন দৃষ্টি দিয়েই শত্রুদের খুন করে দিবে। আমার মনে হয় ওই চৈতীর চরিত্র পাবে।”
“কিন্তু ওর চরিত্রে ভালোই স্ক্রিনটাইম আছে এবং স্যার বলেছে কোনো অপ্রধান চরিত্রই দিবে মিস ইনারাকে। এছাড়া ভাবুন যদি মিস ইনারা আসলেই ভালো অভিনেত্রী হয় তাহলে আসল নায়ক নায়িকাকে দেখবেটা কে? এই ভয়ও তো তাদের আছে।”
লেখক হেসে বললেন, “তা যা বলেছেন।”
.
.
বাহিরে ইনারার জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছিল। গাড়িতে উঠে সে রহমানকে দেখে অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে, “রহমান ভাই আপনি কখন এলেন?”
“একটু আগেই। ড্রাইভারক ফোন দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম সে কোথায়, তারপর এলাম। ছোট স্যার পাঠিয়েছে আপনাকে নিয়ে যেতে।”
“নিয়ে যেতে? কোথায় নিয়ে যেতে?”
“কোম্পানিতে। ছোট স্যার বলল এখন তার সম্পর্কে জানার সময় এসে পড়েছে। আপনার তার সম্পর্কে এবং তার পরিবার সম্পর্কে সবকিছু জানা উচিত।”
চলবে…
[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]