অনুভবে ২ পর্ব-০২

0
1021

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ২
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

ইনারার ঘোর ভাঙে। তার মনে পড়ে যায় হঠাৎ সভ্যের ছেড়ে যাওয়াটা। সে সভ্যের বুকে হাত রেখে এক ধাক্কায় তাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দেয় এবং উঁচু স্বরে বলে, “খবরদার আমাকে স্পর্শ করা তো দূরের কথা আমার কাছে আসারও চেষ্টা করবেন না। নাহয় অনেক খারাপ হবে আপনার জন্য।”

সভ্য বিছানা থেকে নিচে পড়ে যায়। সে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইনারার দিকে। তার শেষ কথাটি শুনে তার মাথা গরম হয়ে যায়। ব্যাপারটা তার ইগোতে লাগে। সে এভাবে নিজেকে তো ছোট হতে দিতে পারে না। সে উঠে দাঁড়ায়। তার কোট ঠিক করে কঠিন গলায় বলে, “তুমি নিজেকে কি ভাবো যে আমি তোমার কাছে আসার জন্য পাগল হয়ে যাব?”
“পাগল না হলে আপনার তো এখানে কোন কাজ নেই। আপনি আমার পাশে এসে বসে ছিলেন কেন।”
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এটা আমার রুম। তুমি আমার রুমে শুয়ে ছিলে। আমি তোমাকে ঘুম থেকে উঠাতে এসেছিলাম। কিন্তু কি করবো তুমি তো কুম্ভকর্ণের নানীর মত ঘুমাচ্ছিলে। নাক ডেকে।”
ইনারা রাগে আগুনে জ্বলে উঠে। সে বিছানা থেকে নেমে সভ্যের সামনে দাঁড়ায়। চোখ বড় বড় করে বলে, “খবরদার মিথ্যা কথা বলবেন না। আমি নাক ডাকি না।”
“ঘুমের মধ্যে কিভাবে তুমি নিজের নাক ডাকা শুনবে?”
“এত বছর কেটে গেছে আপনি এখনো ভালো হলেন না। অসভ্যের অসভ্যই রয়ে গেলেন। ইনফেক্ট আরও অসভ্য হয়ে গেছেন।”
“ওহ প্লিজ আমার রুমে দাঁড়িয়ে আমাকেই এসব শুনাচ্ছ কীভাবে তুমি?”
“আমার মুখ আছে তাই শুনাচ্ছি।”
“আর আমি ভাবছিলাম তুমি ম্যাচিউরড হয়েছ। আকাশ থেকে টাকা ঝরতে পারে, সমুদ্রে ভলকেনো প্রকট হতে পারে, এলিয়েন পৃথিবীতে আসতে পারে কিন্তু তুমি এসব আজেবাজে কথা ছাড়তে পারো না।”
ইনারা বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়, “দেখেন আমার আপনার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা আপনার চেহারা দেখারও ইচ্ছে নেই। প্লিজ যান এখান থেকে।”
“আমি যেন তোমার চেহারা দেখতেই রুমে এসেছিলাম।”
“তাহলে চলে যান দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
“আগেও বলেছি, আবার বলছি। এটা আমার রুম। তোমার যদি আমার চেহেরা দেখার ইচ্ছা না থাকে তাহলে তুমি বের হও। এই বাড়িতে আরও রুম আছ। আমি তো আমার রুমেই থাকব। যেভাবে ইচ্ছা হয় সেভাবে থাকব।”
বলে সভ্য তার কোর্ট খুলে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় ইনারা। বলে, “ছিঃ নিলজ্জ!” বলেই সে তার সব স্যুটকেস সেখানেই রেখে একটি ব্যাগ প্যাক নিয়ে বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে চল যায়।

সভ্যও চোখ ঘুরিয়ে বিরক্তির সুরে বলে, “যেন আগে কখনো শার্ট ছাড়া দেখে নি। আমাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছিল সাহস কত ওর? আমিও দেখি কীভাবে খারাপ করে? যদি ও নিজে আমার কাছে সাহায্য চাইতে না আসে তাহলে আমার নামও সভ্য না।”
.
.
ইনারার রাতে তেমন ভালো ঘুম আর হয় না। সভ্যের সাথে কথা বলে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এজন্য না যে তাদের ঝগড়া হয়েছে, বরং এ জন্যে যে সে সভ্যের সাথে এমন স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলো। সভ্যের প্রতি তার রাগ, ক্ষোভ ও ঘৃণা থাকা উচিত। যে কারণে তার সাথে কথা বলতেও যেন ইচ্ছা না হয়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তার ইচ্ছা করছিলো সভ্যকে একবার জড়িয়ে ধরতে। তার বুকের ভেতর মুখ লুকিয়ে নিজের হৃদয়ে জমে থাকা যন্ত্রণা তার সামনে রেখে নিজের চোখের জল দিয়ে তার বুক ভিজিয়ে দিতে। এ ভাবনা থেকেই নিজের প্রতি বিরক্ত এসে পড়ল তার। যে মানুষ তাকে এভাবে না বলে ছেড়ে গিয়েছে তার জন্য দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল তার মন? তাহলে এই তিন বছরে নিজেকে শক্ত রাখার প্রয়োজন কী ছিলো? তার ভয় হলো সে সভ্যের মতো অন্য সকলের সামনেও দুর্বল পড়ে যাবে না তো?

ভালো মতো ঘুম না হওয়ায় সকাল সকালই সে বিছানা থেকে উঠে গেল। বাহিরে শীতল আবহাওয়া। সাদা রঙের একটি সেলোয়ার-কামিজ পরেছিল সে। রুম থেকে বের হতেই বাতাসে তার ওড়না থৈথৈ করে উড়তে থাকলো। ইনারা খালি পা’য়েই বের হয়েছিল। বাগানের ঘাসে বিন্দু বিন্দু জল জমেছিলো। যা পা’য়ে লাগতেই ইনারার ভেতর অদ্ভুত এক শিহরণ হয়। তার দেশের মাটিতে এত বছর পর পা রেখেছে সে। কেমন শান্তি লাগছে নিজের কাছে। সে দেখে বাগানটা দুইভাগে ভাগ করা। একভাগে বড় বড় ফল ও সবজি ভরা আর অন্যপাশে ফুল। সে ঘুরে ঘুরে সব গাছ দেখল। একটি সাদা গোলাপ ফুল ছিঁড়ে নিজের চুলেও আটকে নিলো। হাঁটতে হাঁটতে তার চোখ পরে বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছের উপর। একসাথে আট দশটা গাছ লাগানো। প্রতিটা গাছে থলথল করে লাল রঙের ফুল ঝুলে ছিলো নিচে পড়ে ছিলো কতগুলো ফুল। দৃশ্যটা দেখে ঠোঁটের হাসি আটকাতে পারল না । যা দেখতে কোনো এক স্বপ্নের রাজ্যের মতো দেখাল। কৃষ্ণচূড়া ফুল ইনারার সবসময়ই প্রিয়। আর এই দৃশ্যটি দেখে সে নিজের ঠোঁটের হাসিটা আটকাতে পারল না। সে গাছটির সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। তাকিয়ে থাকে গাছটার দিকে। এক সময় তীব্র হাওয়া আসে। ফুলের বর্ষণ হয় ইনারার উপর। দ্রুত তার ঠোঁটের হাসিটা গাঢ় হয়ে আসে। সে দুইহাতে পাখির মতো মেলে মুখ তুলে উপভোগ করে এই মুহূর্তটা।

এই দৃশ্যটা দূর থেকে দেখছিলো সভ্য। তার হাতে কফির মগ। সে একটু সময় আগেও ঘুম থেকে উঠে ইনারাকে দেখতে যাবার পূর্বেও দ্বিধাবোধ করছিলো। তাই কফি বানিয়ে সোজা নিয়ে এলো তার বারান্দায়। যেখানে সে প্রতিদিনই বসে কফি খায়। তার বারান্দার ঠিক উল্টোদিকে এক গুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া গাছের মেলা। সে নিয়মমাফিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে সামনে তাকায়। দেখতে পায় ঠিক অপরদিকেই কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে রক্তিম লাল ফুলের বর্ষণ হচ্ছে একটি শুভ্র পোশাক পরা মেয়ের উপর। মেয়েটাকে অপূর্ব দেখাচ্ছে। তার শুভ্র পোশাকের উপর লালচে ফুল যেন সাজ হয়ে বর্ষে যাচ্ছে। মেয়েটা মুখ তুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তা দেখছে। তার ঠোঁটের কোণে হাসি। তার বাঁধা চুলে একটি সাদা গোলাপ। দু’হাত মেলে আছে সে, পাখির মতো। এক মুহূর্তের জন্য হৃদয় কেঁপে উঠলো সভ্যের। এক নজরে প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা তার কাছে নিতান্তই ছেলেমানুষী কথা মনে হতো। কিন্তু তার মনে হচ্ছে সে আবার প্রেমে পড়ছে। আবারও ডুবছে। দৃশ্যটা তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কল্পনা মনে হচ্ছে। কেবল একটি কমতি রয়েছে। কন্যাটার সোনালী চুলগুলো খুলে দিলে বাতাসের সাথে সে চুলগুলোও থলথল করে উড়তো। তখন এই দৃশ্যটির সৌন্দর্য হাজারোগুণ বেড়ে যেত।

ইনারা কতখানি সময় সে কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো তার মনে নেই। তার ধ্যান ভাঙে রহমানের ডাকে, “ম্যাম সকাল সকাল আপনি এখানে?”
ইনারা চমকে উঠে। পিছনে তাকিয়ে দেখে রহমানকে, “এ কথা তো আমিও আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারি। আপনি এখানেই থাকেন?”
“না না আমার বাসা আধাঘন্টা দূরে। কিন্তু কি করব বলুন সভ্য স্যার সকাল সকাল উঠে। তাকে সব তথ্য আমার দিতে হয়। যদিও ছুটিও জলদি হয়। গতকাল আপনাদের বিয়ের জন্য এতক্ষণ ছিলাম।”
বিয়ের কথা শুনেই ইনারার মেজাজ বিগড়ে যায়। তাকে বিরক্ত দেখায়। রহমান তার মুখ দেখেই ঘাবড়ে বলে, “ম্যাম আমি কী আপনাকে রাগানোর মতো আবার কিছু বলেছি। আপনার রাগ কমানোর উপায়ও আছে আমার কাছে। আপনি যা চেয়েছেন এই’যে সব তথ্য নিয়ে এসেছি। আসুন, ভেতরে আসুন। বসে সব দেখাচ্ছি।”

ইনারা রহমানের পিছনে ভেতরে যেতে নেবার সময় তার চোখ পড়ে সভ্যের বারান্দার উপর। সভ্য তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে কফিতে এক চুমুক দিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। ইনারাও সেখানে দাঁড়ায় না। এড়িয়ে যায় তাকে।

ভেতরে ঢুকে ল্যাপটপে রহমান ইনারাকে সকল তথ্য দিচ্ছিলো। সে সময় কয়েকজন এসেছিলো ঘরের কাজ করা এবং রান্নার জন্য। তবে কেউ আশেপাশে না থাকায় নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারে তারা। ইনারা ভেবেছিল সে অনেক কিছুই জানে সবার জীবনের ব্যাপারে। কিন্তু রহমান তাকে অনেক নতুন তথ্য দেয়।

ইনারা বলে, “অর্থাৎ আমার প্রথম ভিডিও ছাড়া হয়েছে তখন সবার মধ্যে তোলপাড় হয়েছিল অথচ আপনি বলছেন সেদিনের ফুল ফুটেজ লিক হবার পরও এটা বেশি কেউ জানে না?”
“না। আসলে ম্যাম মানুষের নেগেটিভেটি পছন্দ। কাওকে খোঁটা মেরে কথা বলতে পারবে, গালি দিবে এসবে শান্তি পায় তারা। এজন্য নেগেটিভ জিনিস দ্রুত ছড়ায়। এছাড়া আপনাকে নিয়ে তখন সবার আগ্রহ ছিলো তাই তা খুব দ্রুত ছড়িয়েছে। আপনি যাবার তিনমাস পর ফুটেজ পাওয়া গেছে। তখন আর কারও আগ্রহ আগের মতো ছিলো না। আর আপনিও ছিলেন না তাইতো লোকটাকে গ্রেফতার করার পরও আপনার স্বাক্ষর ছাড়া ধরে রাখা যায় নি। এখন সে খুব মজায় আছে তাকে মজা বুঝাচ্ছি। আমরা আবার তাকে ধরার পরিকল্পনা করছি। এবার স্বাক্ষর এবং বিবৃত দেওয়ার জন্য আপনি আছেন।”
“এত জলদি নয়।” ইনারা ফোন বের করে রহমানকে তার ও আইজার একটা ছবি দেখিয়ে এটা কি কোনো নিউজপেপারে দেওয়া যাবে?”
“অবশ্যই যাবে।”
“তাহলে দিন।”
“কিন্তু ম্যাম কেন?”

উওর দেবার পূর্বেই রুমে প্রবেশ করে একটি মহিলা। সে একটা ট্রে তে দুইকাপ চা রেখে বলে, “আপা চা। আর নাস্তা বানালাম। এসে খেয়ে নিন।”
রহমান পরিচয় করায় মহিলাটিকে, “ম্যাম উনার নাম হাসনা। এ ঘরে রান্নাঘরের কাজ উনিই সামলায়। বাকি কাজের জন্য আলাদা লোক আছে। আর হাসনা উনি স্যারের ওয়াইফ। অর্থাৎ তোমার ম্যাডাম।”
ইনারা মৃদু হেসে তাকায় হাসনার দিকে, “ম্যাডাম ডাকার প্রয়োজন নেই। আপাই ডাকতে পারেন।”
“মাশাল্লাহ কী সুন্দর! একদম দেখতে পরীর মতো। স্যারের সাথে একদম যায়। আপা আমার মেয়ের সাথে দেখা করবেন একটু? ও আসার সময় আপনাকে দেখছিলো। তখন থেকে আপনার কথা বলছে।”
“আপনার মেয়ে এসেছে। অবশ্যই দেখা করব।”
মহিলাটি ভেতরে দৌড়ে যায়। কিছু সময় পড়ে একটি মেয়েকে নিয়ে আসে। মেয়েটির বয়স ছয় সাত বছর হবে। ইনারা মেয়েটিকে নিজের কোলে বসিয়ে তার টেনে বলে, “কত কিউট তুমি। তোমার নাম কি?”
মেয়েটা কিছু বলে না। তার মা নিজেই বলে, “ওর নাম জান্নাত। ও আসলে লজ্জা পায় অনেক। আপনাকে চিনে না তো। চিনলে ওর কথা শেষ হবে না।”

এতক্ষণে সভ্য রুম থেকে বের হয়। তার শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত বটছিলো সে। রুমে সবাইকে একত্রিত দেখে এক মুহূর্তের জন্য থেমে অবাক হয়ে তাকায় সবার দিকে। হাসনা তাকে দেখেই উৎসুক গলায় বলে উঠে, “স্যার আপনাকে বিয়ের অনেক অনেক অভিনন্দন। আমি তো জানতামই না। জানলে আজ ঘরের থেকে মিষ্টি কিছু রান্না করে নিয়ে আসতাম। এখন আপনাদের কাছে তো সবই আছে। আর আমার তো দামী উপহারের সামর্থ্য নাই। ওহ আপনি তো মিষ্টি খাবারই খান না।” সে আবার ইনারার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপা আপনি মিষ্টি খাবার খান?”
“অবশ্যই। আমার পছন্দ। একারণেই তো আমার মুখে ও মনে কটু কথা কম আসে।” ইনারা সভ্যের দিকে তাকিয়ে খোঁচানো ধরণে বলে।
হাসনা আবার বলে উঠে, “জানেন আপা জান্নাত দুইদিন আগে একটা ছবি দেখছে। রাজকুমার আর রাজকন্যার সিনেমা আরকি। বলতেছিলো আপনাকে আর স্যারকে নাকি একবারে ওই ছবির রাজপুত্র আর রাজকন্যা লাগে।”
কথাটা শুনে প্রথমে ইনারা সভ্যের দিকে তাকিয়ে মুখ বানায়। তারপর জান্নাতের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি সুরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এটা বলেছিলে?”
জান্নাত মাথা নাড়ায়।
ইনারা আবার বলে, “কোন মুভি দেখেছিলে? বিউটি এন্ড দ্যা বিস্ট তাই না?”
সভ্য বিরক্ত হয়ে তাকায় ইনারার দিকে। সে হাসনাকে বলে, “একটু নাস্তা টেবিলে দিন। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“আপনাদের এই মাত্র বিয়ে হইল। আর আপনি আপারে ছাইড়া যাবেন?” কেমন আশাহত গলায় বলে হাসনা।
“আমার কাজ আছে আর আপনার আপা বিউটি হয়ে বাড়িতে ঘুরে বেড়াক কিছু সময়। এছাড়া আপনি নিজের কাজে ধ্যান দিন। আমার কি করতে হবে তা আপনার দেখতে হবে না।” কাঠ কাঠ গলায় বলে সভ্য। ডাইনিং রুমে রওনা দেয়।
হাসনা ভয়ে ভয়ে বলে, ” স্যার টেবিল নাস্তা দেওয়া আছে।” বলে তার পিছনে যায়। সাথ জান্নাতও উঠে দৌড়ে যায় তার মা’য়ের পিছনে।

ইনারা আবার ধ্যান দেয় তার ও রহমানের কথোপকথনে, “আর আমি জানতে পারি প্রিয়র কেইসের কী হয়েছে?”
“কোনো প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব হয় নি? কীভাবে হবে? প্রিয়র মৃত্যুর পর তার মা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গেছেন এবং তার বোন সাহায্য করতে রাজি না। আমরা যে কিছু করব, কী করব বা প্রিয়র কি হয়ে করব? কোনো প্রমাণ ছাড়া কিছু পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না।”
“আপনাদের দেখার প্রয়োজন নেই। ওর বিষয়ে আমি নিজে দেখব। আইনের শাস্তি পাবার পূর্বে আমি তাদের একটু যন্ত্রণা দিয়ে নেই।”
“আপনার মাথায় কী চলছে?”
“সময় আসলে জেনে যাবেন। আপাতত ছবিটা পেপারে দেবার ব্যবস্থা করুন এবং কি হেডলাইনসহ দিবেন তাও আমি বলে দিব।”
“কিন্তু ম্যাম এটা তো আমি দিতে পারব না।”
“আপনিই বলেছিলেন অবশ্যই দিতে পারবেন।”
“আই মিন পারব কিন্তু আমার কথায় তো হবে না। ক্ষমতাবান কেউ বললেই চলবে।”
“এখন আমি ক্ষমতাবান কাওকে কোথায় পাব?” অনেকটা বিরক্তির সুরে বলে ইনারা।
“সভ্য স্যারের একটা ফোন কলে কিন্তু কাজটা হতে পারে।”
ইনারা আড়চোখে তাকায় রহমানের দিকে, “তাহলে তাকে বলুন।”
“আমি বললে স্যার এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করবে। আপনি বললে কাজ হতে পারে।”
ইনারা বিরক্ত হয়ে তাকায় রহমানের দিকে। মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। তাও সে উঠে যায়। পাশের রুমে যেয়ে দেখে সে নাস্তা করছে। সে সভ্যের পাশে যেয়ে দাঁড়ায়। তবে তার দিকে তাকায় না। অন্যদিকে তাকিয়ে রুক্ষ গলায় বলে, “আমার একটা ছবি ছাপানো লাগবে নিউজপেপারে। আপনি একটা কল করে বলে দিন যেন ছাপিয়ে দেয়।”

সভ্য তাকায় ইনারার দিকে। তারপর রহমানকে বলে, “রহমান তোমার ম্যাম কি আমার সাথে কথা বলছে না ছাদের সাথে?”
রহমান ইনারার পাশে এসে দাঁড়ায়, “স্যারের সাথে ভালোভাবে কথা বলুন। স্যার একবার বললে আপনি বড় কোনো এক ছবিতেই ঢুকে যেতে পারবেন। তখন আর আপনার এত কষ্ট হবে না।”
“না, আমি জানি আমি কি করছি এবং কেন করছি। যে গতবার আমার পাওয়া ফিল্মের রোলের জন্য আমার কাছ থেকে এতকিছু ছিনিয়ে নিয়েছিলো সে নিজে আমার কাছে ফিল্মের অফার পাঠাবে। আমাকে খুঁজে বেড়াবে।”
সভ্য মুখ তুলে ইনারার দিকে তাকায়। বাঁকা হেসে আবার তার খাবারের প্লেটে ধ্যান দেয়।

রহমান ফিসফিস করে বলে, “ম্যাম ছোট স্যারকে সুন্দর করে বলেন। মেয়েদের মিষ্টি গলায় যেকেউ গলে যায়। আর আপনি তো তার বউ হন না গলে যাবে কই?”
ইনারা রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় রহমানের দিকে ‘বউ’ শব্দটা শুনে। তবুও নিজের রাগ গিলে সভ্যের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। আমতা-আমতা করে বলে, “হেল্পটা করে দিন… প্লিজ।”
“শুনতে পারি নি। শেষে কি বললে?”
“বলছি প্লিজ হেল্প করে দিন।” এবার উঁচু স্বরে বলে ইনারা।

সভ্য হাসে। সে ইনারার দিকে তাকিয়ে বলে, “আসলে গতকাল তোমার বলা কথা মনে করে আমার ইচ্ছা করছে না। আর আমি তো রাজকুমার না বিস্ট মানে জন্তু তাই না? তাহলে আমি কেন তোমার সাহায্য করব? রাজকন্যাদের তো রাজকুমাররা সাহায্য করে। বিস্টরা না।”
“কী লাগবে আপনার?”
সভ্য বাঁকা হাসে, “গুড কোয়শ্চন।” সে উঠে দাঁড়ায় ইনারার সামনে। বলে, “আমি যা বলব তা তোমার করতে হবে।”
“মানে? কী করতে হবে?”
“আহা আমার বউটা এত অস্থির হবার কিছু নেই। আস্তে-ধীরে জেনে যাবে।” সভ্য ইনারার গাল টেনে বলে। সাথে সাথে ইনারা বিরক্ত হয়ে সভ্যের হাত সরিয়ে দেয়।

সভ্য নিজের রহমানকে বলে, ” ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলো। আমি নাস্তা করে আসছি।”

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে