#অধিকার #পঞ্চম_প্রহর
হুট করেই মেয়েটা আমাকে চেপে ধরে গালে একটা কিস করবে তাও শপিং মলে এত মানুষের ভিড়ে,, এটা আমি ভাবতেই পারিনি কখনো।
কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু হওয়াতে আমি চমকে উঠি।
এবং এতেও শেষ না,,
আমাকে কিস করে
“আই লাভ ইউ মাই হাব্বি ইউ আর ডা বেস্ট”
বলে জড়িয়ে ধরে রেখেছে রুহি।
পাব্লিক প্লেসে সব মানুষের নজর আমাদের ২জনের দিকেই পরে আছে।
মেয়েটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো?
কি থেকে কি করছে আর কিই বা বলছে এসব?
পরক্ষণেই মনে পড়লো হতে পারে কাউকে দেখানোর জন্য এমন করলো কি না?
তাকে এত গুলো মানুষের সামনে কিছু জিজ্ঞেস না করে,,
আমি নিজেকে তার বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে তাকে দাড় করালাম আমার সামনে,,
পাশ থেকে একটা ছেলে রুহির দিকে তাকিয়ে সামনে এসে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-ওহহ,, ফাইনালি বিয়ে করেই ফেলেছো?
আমার এক হাত পেচিয়ে ধরে রুহি বললো
-হুম, এমন চার্মিং একটা ছেলে দেখে যে কেউ পাগল হয়ে বিয়ে করবে,, আমিও করে ফেললাম।
-তো এই ড্রেসে কেন? জামাই এমন নিরামিষ ভাবে রাখে তোমাকে?
-না, আমরা একটু আগে কোর্ট ম্যারেজ করেছি।
দেখেছো কত গুলো শপিং ব্যাগ আমার উনার হাতে? এগুলো আমার জন্য করেছে মাত্র আরো বাকি আছে। বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিলো মেয়েটা।
তার কথা শুনে কেমন যেন রাগ হয়ে গেলো ছেলেটা মুহুর্তের মধ্যেই,, আর আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছেলেটা যেন স্ক্যান করলো,, তারপর কিছু না বলেই চলে গেলো,,
সে যাওয়া তে যেন রুহি হাফ ছেড়ে বাচলো।
এবার আমার হাত ছেড়ে সে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখি,,
আমার কোম্পানির বর্তমানে সবচেয়ে বড় ইনভেস্টর মিঃ আসাদ সাহেব এগিয়ে আসলো,
পেছনে তার স্ত্রী আর বড় ছেলে শাহিন ও তার স্ত্রী উপস্থিত হাতে অনেক গুলো ব্যাগ।
কিছুমাস আগেই তার ছেলের বিয়ে হয়েছে,, হয়তো পারিবারিক সময় কাটানোর জন্য সবাই একত্রে বেড়িয়েছে। এমন সময় তাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম কিছু শুনে ফেললেন কি না?
তিনি এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন,,
-কংগ্রাচুলেশনস ইরাদ। আই এম সো হ্যাপি ফর ইউ,,
ইরাদ টু বি অনেস্ট তোমার ডিভোর্স নিয়ে আমাদের অনেক মন খারাপ ছিলো,, প
যেই ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো।
তিনি সব শুনে ফেলেছেন।
আমার ডিভোর্স হওয়ার কথা সবাই জানতো, এতে সবার মনই খারাপ হয়েছিলো বেশ করে আমার ম্যানেজারের। তার মাধ্যমেই আসাদ সাহেবের সাথে আমার পরিচয় হয়।
এখন উনি মুরুব্বী মানুষ তাকে এত কাহিনী খুলে বলার মতন ও না। আর একটা মেয়ে একটা ব্যাচেলর ছেলের সাথে থাকে এটা শুনে খারাপ ভাববে যে কেউ। মাহিরা যাওয়ার পরে থেকে বিজনেসের অবস্থা ও তো খারাপ হয়ে গেছে উনি যদি এসব শুনে আমার সাথে ডিল ক্যান্সেল করে দেয় আমার অবস্থা মাটিতে পরে যাবে।
সব মিলিয়ে মনে হলো যেই নাটকটা একটু আগে রুহি করেছে সেটা আমারও কন্টিনিউ করতে হবে।
-থ্যানক্স এ লট আংকেল,
এবার রুহি আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে,,
আন্টি রুহিকে জড়িয়ে ধরে পাশ থেকে বললো, কি সুন্দর একটা বউ মাশাল্লাহ,, আমার মনটাই ভরে গেলো ওকে দেখে,, আজকে মাত্র বিয়ে করেছো বাবা আমাদের তরফ থেকে তো একটা গিফট পাওনা রইলো।
– না, আন্টি আমাদের জন্য দুয়া করবেন প্লিজ তাহলেই হবে।
-না না, তোমার আন্টি একদম ঠিক বলেছেন। তোমাদের হানিমুন ট্রিপটা আমাদের তরফ থেকে গিফট রইলো।
শাহিন সিলেটের ওই রিসোর্টটার নাম যেন কি? তুমি আর বউমা ঘুরে আসলে যে?
-বাবা গ্রেন্ড সুলতান।
-তোমার ভাইয়ার জন্য ১ সপ্তাহের বুকিং দিয়ে দাও পেমেন্ট সহ।
আংকেলের কথা শুনে শাহিন কল দিয়ে দিলো
এদিকে আমি আংকেল কে মানা করাতেও উনি আমার কথা শুনলেন না।
বরং বললেন বিয়ে হয়েছে বিধায় আগামী এক মাস পরে যাতে ব্যাবসার কাজে হাত দেই। এই একমাস উনি কোনো কাজের কথা শুনতে চান না আমার মুখে,,
শাহিন- আব্বু আজকে রাতের বুকিং দিয়ে দিলাম।
মিঃ আসাদ- গ্রেট জব আর আমাদের প্রাইভেট জেটটা আজকে রাতে ইরাদ আর ওর ওয়াইফকে দিয়ে আসুক। কি বলো মিসেস?
রুনিমা বেগম- একদম ঠিক বলেছেন এটাই ভালো হবে।
এখন এই মুশকিল থেকে কোনো ভাবেই বেড় হওয়ার রাস্তা আমার সামনে আর নেই।
রুহির দিকে তাকিয়ে দেখি সে আসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এরপর আন্টি রুহিকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে শাড়ি টুকটাক গহনা কিনতে হেল্প করলো,,
রুহি কিছুই নিতে চাচ্ছিলো না, সেই প্রথম শপিংমল এ আসার পর থেকেই,,
কিন্তু আন্টির সামনে তো এমন করলে তারা বুঝে যাবে,, তাই তাকে ইশারায় রিকুয়েষ্ট করে বললাম যেন মানা না করে,,
সব শেষে গাড়ীতে এসে বসলাম আমি আর রুহি, এতক্ষনে যেন আমরা হাফ ছেড়ে বাচলাম।
কিছু ক্ষন নিরবতার পর দুইজনই একসাথে সরি বলে উঠি, আবার ১ মিনিটের মতো ২ জন চুপ থাকার পর আবার একসাথেই বলি
“আমি আসলে….”
এবার রুহি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কান ধরে, আর আমি বলি “আমাকে মাফ করে দেন আসলে আপনার কথা তারা শুনে ফেলে আর তিনি আমার ইনভেস্টর তাই আমি…
রুহি- আপনার সরি বলতে হবেনা,, আমি বুঝতে পেরেছি।
ইরাদ- আচ্ছা আপনি কি আমার সাথে যাবেন সিলেটে? আমি তাদেরকে মানা করতে পারিনি।
রুহি- হুম যাবো,, এটা কোনো ব্যাপার না। আর আজকে আপনি ওই ছেলেটার সামনে চুপ থেকে আমার অনেক উপকার করেছেন,, আমি আপনার কৃতজ্ঞতা কখনো ভুলবো না। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ইরাদ কিছু বলছেনা, কারণ ওর এখন অনেক টেনশন লাগছে অফিসে সবাই জানাজানি হলে কিরকম হবে? মুলত ইরাদ জানে কিছুদিন পরেই মেয়েটা চলে যাবে,, তখন মানুষের সামনে কি বলবে ইরাদ, তাই বুঝে পাচ্ছেনা।
রুহি ভাবছে ইরাদকে তার সত্যিটা আজ জানিয়ে দিতে হবে। তার জীবনের যে অনেক গুলো লুকানো সত্যি আছে যেগুলো এই মানুষটার জানা দরকার,,
আজকে রুহি জানতে পেরেছে ইরাদের ডিভোর্সই তার ম্লান হওয়ার পেছনে দ্বায়ী।
ইরাদ এখন সিংগেল, তার জীবনে কেউ নেই, রুহির ভালো লাগছে ইরাদকে। কিছুদিন থেকেই ইরাদের প্রতি তার একটা আকর্ষণ কাজ করছে,, সে বুঝতে পারছেনা, এমন কেন হচ্ছে কিন্তু আজকে যখন সবার সামনে নিজেকে ইরাদের স্ত্রী বলেছে এরপর থেকেই মনে একপ্রকার শান্তি অনুভব করছে রুহি।
ইরাদকে স্পর্শ করে তার যেমন অনুভূতি হয়েছে তা যেন স্বর্গীয়। এরকম শিহরিত আগে কখনো রুহি হয়নি। আজ এমন কিছু ও করে বসবে তা নিজেও জানতো না,, কিন্তু আবির?আজ আবিরকে এটা দেখানো অনেক বেশি দরকার ছিলো। তবে ইরাদ কি রাগ হয়েছে ওর ওপরে? রাগ হতেও পারে। রুহি তো ইরকদের কোনো ফিলিংস
.
গাড়ি চলছে এদিকে ২ জনই চুপ করে আছে,, রুহি আজ ভেবে ফেলেছে এই ছেলেটাকে নিজের মনের জমানো সব দুঃখ কষ্ট, মান অভিমান সব কিছু বলে দিবে। ইরাদের বাড়িতে রুহি এসেছে প্রায় ১০ দিনের মত হয়ে গেছে। এই কয়দিনে ইরাদের সাথে তার দরকারী কথা বার্তা হলেও ইরাদ তাকে অনেক সম্মান করে,, তার জ্বর সাড়া পর্যন্ত অনেক বেশি যত্ন করে রেখেছে। তাকে সব কিছু থেকে আগলে রেখেছে।
এতদিন পরে আজ ইরাদের জোরাজোরিতে রুহি শপিং এর উদ্দেশ্য নিয়ে ওর সাথে বের হয়েছে। আর এরই মাঝে এত সব ঘটে গেলো। দুনিয়া অনেক ছোট,, রুহি চায় না বাইরের মানুষের থেকে ইরাদ সব কিছু জেনে নেক। রুহি তার সবটুকু দিয়ে ইরাদকে বিশ্বাস করে।
বাড়িতে আসার পরে ইরাদের ফোনে মেসেজ আসলো আজ রাতে ১১টার দিকে তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।
-রুহি, আপনার রুমে আলমারির ওপরে লাগেজ আছে সেটা নামিয়ে প্যাকিং করে নিবেন
আমারটা আমি করে নিচ্ছি। ১১ টায় হেলিকপ্টার এ উঠবো,, ১২টার মধ্যে আল্লাহ চাইলে পৌঁছে যাবো,,
-ঠিক আছে।
রুহি জামা কাপড় বের করে সব সাজিয়ে রেখেছে বিছানায়,,
ইরাদ ওকে একজন মেয়ে মানুষের দরকারী সব সামগ্রী কিনে দিয়েছে আরও কতদিন আগেই তবে আজকে একদম নতুন বউদের মত সব শপিং হয়েছে তার।
সব কিছু তো ভালোই লাগছে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখনই যখন রুহি তাকিয়ে দেখে এত ওপরে রাখা লাগেজ,,এটা সে নামাবে কিভাবে?
একটা চেয়ার নিয়ে সে চেষ্টায় লেগে গেলো লাগেজ নামানোর,, আর নিজের সাথে নিজেই কথা বলা শুরু করে দিলো….
.
ইরাদের কাপড় প্যাক করা শেষ,,আর সে ভেবে ফেলেছে যার যা ভাবার ভাবুক,, তার জীবনে আগে অনেক মানুষকে মূল্য দিয়েছে, কিন্তু এখন তো রুহি মেয়েটা ছাড়া তার আগে পিছে কেউ নেই, এই আহ্লাদী মেয়েটার জন্য ইরাদের একটা টান কাজ করে মনের অজান্তে,, যেটা ইরাদও জানে না,, তার মায়ের একটা কথা মনে করেই মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো ইরাদের মা সবসময় বলতেন ” কাউকে খুশি রাখতে গিয়ে যদি নিজের একটু সমঝোতা করতে হয় তাহলে পিছপা হবেনা বাবা” আর মানুষের কথার তোয়াক্কা ইরাদ আর করবেনা তাই রুহি যতদিন থাকবে সে থাকুক যাকে যা ইচ্ছে বলুক। ইরাদ এটা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করবেনা। মেয়েটার কোনো সমস্যা আছে দেখেই সে এমন করে।
হঠাৎ মনে হলো রুহির লাগেজ যেই উপরে এটা ও নামাতে পারবেইনা কোনো ভাবে। নিচে গিয়ে রুহির রুমের পাশে দাড়াতেই ইরাদ শুনতে পেলো রুহি একা একা কথা বলছে…
“কেন যে রুহি তুই ছোট বেলায় কমপ্ল্যান খেতি না, আজকে দেখে নে এই তোর পরিনতি ওপর থেকে লাগেজটাও নামাতে পারছিস না। চেষ্টা কর রুহি চেষ্টা কর। এইটুকুর জন্য যদি ইরাদকে ডাক দিতে হয়, তোর কি মান সম্মান থাকবে কিছু?”
খুব করে সে চেষ্টা করছে কিন্তু ডাবল তাকের সেই আলমারীর ওপরে শুধু মাত্র ইরাদের মত লম্বা ছেলেরই হাত যাবে,,
ইরাদ রুহির কান্ডকারখানা দেখে হাসে প্রতিদিন,,
আজকেও মিটিমিটি হাসছে ইরাদ, হঠাৎ করেই রুহির পা পিছলে পরে যেতে নেয় তখনই ইরাদের কোলে এসে পরে। এবার সে ভয়ে কুঁকড়ে ইরাদকে ঝাপটে ধরে রেখেছে। রুহি চোখ না খুলেও বুঝে গেছে এটা নিশ্চয়ই ইরাদ,, ওর লাইফ সেভিয়ার। কলিজার ভিতর একদম ধকধক করছে রুহির,,
যে ওকে সব কষ্ট থেকে আগলে রেখেছে সে এখনো ওকে ব্যাথা পেতে দেয়নি এটা ও জানে আর এই হাতের স্পর্শ প্রতিবার ওকে শিহরিত করে তোলে। ও এই হাতের স্পর্শ চিনে গেছে, ওর অন্তর পর্যন্ত এই স্পর্শ গিয়ে নিজের দাগ কেটে রেখে যায়।
আ
ইরাদ – এখন চোখ খুলতে পারেন। আর আমাকে ডাক দিলে আপনার মান সম্মান চলে যেত না।
রুহি ইরাদের কোলে থেকেই বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলেছে,,
ইরাদ- এখন মন খারাপ করতে হবেনা আমি লাগেজ নামিয়ে দিচ্ছি,, চুপ করে বসুন আপনি।
এই বলে রুহিকে কোল থেকে নামিয়ে খাটের পাশে নিয়ে বসিয়ে দিলো ইরাদ,,
রুহি এই মুহুর্ত গুলো অনেক বেশি ইঞ্জয় করে।
ইরাদের শাসন গুলো ওর অনেক ভালো লাগে।
২জন মিলে রুহির লাগেজ প্যাক করে ফেলেছে।
-রুহি আজকে কিন্তু আসাদ আংকেলের বাসায় ডিনার করতে হবে, তাদের বাসায়ই হেলি প্যাড আছে সেখান থেকেই একবারে সিলেটে চলে যাবো আমরা।
-ঠিক আছে। কিন্তু আপনাকে কিছু কথা বলার আছে আমার অতীত নিয়ে।
আমি আজকে আমার এই ২৩ বছর জীবনের কালো অধ্যায় গুলো আপনার কাছে তুলে ধরতে চাই।
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)