#অতঃপর দুজনে একা – [১১]
লাবিবা ওয়াহিদ
—————————–
–“মিস্টার রিয়ন? আর ইউ ওকে?”
মাহবিনের উক্তিতে রিয়নের ধ্যানে ছেদ ঘটে। একবার পলক ফেলে মাহবিনের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
–“তুমি?”
–“হুম। আমার অফিসে, আমি-ই থাকবো। কেন? কাকে আশা করছিলেন?”
রিয়ন ম্যানেজারের দিকে তাকায়। ম্যানেজার একপলক মাহবিনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত প্রস্থান করে।
–“তোমার অফিসে আমি কখনোই কাজ করবো না।”
মাহবিন আঙুলে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,
–“এটা আমার অফিস, আপনার শ্বশুরবাড়ি নয়। ডিসিপ্লিন মেনে কথা বলুন, পার্সোনাল লাইফে কী হলো না হলো সেটা অফিসের বাইরে আলোচনা হবে। আমি বর্তমানে আপনার বস। ভুলে যাবেন না।”
–“ভুলছি না এবং স্বীকারও করছি না। আমি এক মিনিটও তোমার অফিসে থাকবো না।”
–“আপনাকে থাকতে তো কেউ বলেনি। আপনি অলরেডি অফিসে জয়েন হয়ে গিয়েছেন আর প্রথমদিন-ই আমার সাথে মিসবিহেভ করছেন। এটা নিশ্চয়ই আপনার মা আপনায় শিক্ষা দেয়নি।”
রিয়ন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। মেজাজ বিঁগড়ে আছে তার। পরে গেছে দোটানায়। এগ্রিমেন্টের রুলসগুলোর জন্যে না পারছে চাকরি ছাড়তে আর না পারছে মাহবিনকে সহ্য করতে। মাহবিন আবারও বললো,
–“আমি চুপ থাকি মানে এই নয় যে এটা আমার দুর্বলতা। তাই আগে যা হয়েছে তার জন্যে আমি কোনদিনও আপনাকে মাফ করবো না মিস্টার রিয়ন।”
রিয়ন কোমল হয়ে এলো। পরবর্তীতে তার বলতে ইচ্ছে করছিলো “আপনার মাফ নিয়ে আমার থোরাই কিছু হবে।”
কিন্তু রিয়ন বাক্যহীন। এগ্রিমেন্টে সাইন করেই সে মাহবিনের জন্যে নিযুক্ত হয়ে গিয়েছে। এছাড়া তার মায়ের মনেই বা কী ইফেক্ট পরবে? রিয়ন কি না চাকরি পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে? নাহ, মা-বাবাকে চালাতে হলেও তো এই চাকরিটা প্রয়োজন। বাবা আর কতদিন করবে? মায়ের চিকিৎসার জন্যে যেই খরচ হচ্ছে। সবদিক ভেবে-চিন্তে রিয়ন চুপ করতে বাধ্য হলো। আড়ালে ফেললো চাপা দীর্ঘশ্বাস। মাহবিনের দিকে কোমল নজরে তাকিয়ে থমথমে গলায় বললো,
–“সরি স্যার।”
–“এক ভুল যেন দ্বিতীয়বার না হয়। এখন আসতে পারেন। আপনার জয়েন কবে থেকে সেটা ম্যানেজার ডিটেইলে জানিয়ে দিবে।”
রিয়ন ইতিবাচক মাথা নাড়ায়। তার অবস্থা এরকম, সে কোনো এক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গেলো। রিয়ন চলে আসতে নিলে কী যেন মাথায় এলো। পিছে ফিরে মাহবিনের উদ্দেশ্যে বললো,
–“জয়া কেমন আছে?”
মাহবিন ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে রিয়নের দিকে তাকালো। ভ্রু কুচকে বললো,
–“যার হাত ধরে চলে গিয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করুন না। আমি কী তাদের নিউজ নিয়ে বসে আছি?”
রিয়ন থতমত খেয়ে বলে,
–“ওয়াসিফ, আপনার বন্ধু না?”
–“নো, আর কিছু?”
–“জ্বী না স্যার। থ্যাঙ্কিউ।”
মাহবিন উত্তর দিলো না আর। বিষয়টি রিয়নের নিকট ভীষণ অপমানজনক লাগলো। রিয়ন ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে গেলো। রিয়ন বেরিয়ে যেতেই মাহবিন দরজার দিকে তাকালো। বাঁকা হেসে আপনমনে আওড়ায়,
–“এইটুকুতেই টায়ার্ড? মুভি তো এখনো শুরুই হয়নি মিস্টার রিয়ন।”
রাতে মাহবিন বাসায় ফিরতেই দেখলো তার রুমে অলরেডি চারটি ওয়াইনের বোতল রাখা। মাহবিন সেগুলোর দিকে তাকিয়ে গায়ের কটির বোতাম খুলতে খুলতে বলে,
–“শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে লাভ কী? আজব তোহ।”
মাহবিন ফ্রেশ হয়ে এসে একটি ওয়াইনের বোতল হাতে নিতেই তার দরজায় কড়াঘাত পরলো। মাহবিন ঘাড় বাঁকিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে ওয়াইনের বোতলটি জায়গা মতো রেখে দরজা খুলতে অগ্রসর হয়। দরজা খুলতেই দেখলো সোনিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে মাহবিনের বাবা শাকিল। মাহবিন চোখ ছোট ছোট করে দু’জনকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে,
–“হোয়াট? এখানে এসেছেন কেন?”
–“সকালে কী বললাম মনে নেই? তোমার ডেড তোমার সাথে ইম্পর্টেন্ট কথা বলতে চায়। হি নিড ইউ।”
মাহবিন নিচের ঠোঁট কাঁমড়ে ভ্রু কুচকায়। দু’পকেটে তার হাত। আলতো ভাবে ঠোঁট কামড়ে কী যেন ভেবে দরজা পুরোপুরি মেলে দেয়। তারপর শাকিলের উদ্দেশ্যে বলে,
–“কাম।”
শাকিল খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। সোনিয়া শাকিলকে ভেতরে যেতে বলে নিজের রুমে চলে যায়। মাহবিন এবং শাকিল মুখোমুখি বসে আছে সিঙ্গেল সোফায়৷ শাকিল ছোট গ্লাসে ওয়াইন ঢালছে। সে আবার এসবে ভীষণ অভ্যস্ত। মাহবিন তার খোঁচা খোঁচা চাপদাড়িতে আলতো হাত বুলিয়ে বলে,
–“নিজে যেহেতু এতই খান তাহলে আমাকে এসব পাঠানোর মানে কী? আপনার ওয়াইফকে বললেই তো এই ব্র্যান্ডের ম’দ গুলো আপনার জন্যে রেখে দিবে।”
শাকিল তখল ওয়াইনে সবে চুমুক দিয়েছে। মাহবিনের কথায় শাকিল ওয়াইন গিলতে গিয়ে গলায় আটকে মাথায় উঠে যায়। মুহূর্তে-ই খুঁক খুঁক শব্দে কাশতে লাগলেন তিনি। মাহবিন তার কাছে গেলোও না, কিছু বললোও না। মাহবিন বিরক্তের সাথে এদিক সেদিক নজর ঘোরাতে লাগলো। শাকিলের কাশি থামে মিনিট পাঁচেক পর। মাহবিন সময় বিলম্ব না করে বলে ওঠে,
–“যা বলতে এসেছেন দ্রুত বলুন। আমার টাইম ওয়েস্ট করলে যা সম্মান দিচ্ছি তাও পাবেন না।”
শাকিল এবার চুপসে গেলো। হাত জোড়া এলোমেলো ভাবে নাড়াতে নাড়াতে বললো,
–“বিজনেসে একটু লস খেয়েছি, তাই কিছু টাকার দরকার। তবে হ্যাঁ, ধার নিচ্ছি। বিজনেসে উন্নতি করার পরে ফিরিয়ে দিব। আই প্রমিস।”
হাসলো মাহবিন। হাসিতে তার তাচ্ছিল্য স্পষ্ট। নৈঃশব্দে হাসি দিয়ে মাহবিন বললো,
–“আপনাকে আমি দিব ধার? কেন? এত বছর কী কামালেন তাহলে? আমার বাবাটাকেও তো কেড়ে নিলেন। শুধু পারেননি তার বিজনেস হাতাতে। তাও তো কম টাকা ছিলো না আপনার। হঠাৎ ফুরিয়ে গেলো কী করে? আবার কোথায় কী দুই নম্বরী করেছেন?”
–“মুখ সামলে কথা বলো। আমি তোমার বাবাকে কেড়ে নিতে যাবো কেন? আমিও তো তোমার বাবার-ই মতোন।”
–“এই কথা একবার বলে দিয়েছেন তো দিয়েছন, ফারদার যেন আপনার মুখে এই বাক্য না শুনি। মাহবিনের সাইলেন্ট রূপ ভাইলেন্ট রূপ নিতে সময় নেবে না।”
–“আচ্ছা বললাম না। আই বেডলি নিড মানি। প্লিজ, হেল্প মি।”
মাহবিন চট করে উঠে দাঁড়ায়। রাগে তার মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। কপালের রগ ফুলিয়ে তেঁজী কন্ঠে বলে ওঠে,
–“আমার বাবাও একদিন আপনার কাছে বলেছিলো যেন আমার মা থেকে আপনি দূরে সরে যান। আমার মায়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধও করতে বলেছিলো। কিন্তু আপনি শুনেননি, আমার বাবার অনুরোধ রাখেননি। এখন আপনি কোন মুখে সেই বাবার ছেলের কাছে টাকা চাইছেন? মিনিমাম লজ্জা-শরমও আপনার মধ্যে নেই?”
শাকিল চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
–“ভুলে যেও না তোমার মা-ই আমার কাছে বারবার ছুটে এসেছে। এছাড়াও তুমি আমার বাড়িতে থাকছো।”
–“আমি কবে বললাম আমার মা ইনোসেন্ট? সে তো আরেক ধাপ এগিয়ে। আর আপনার বাড়ি? হাহ্! এই বাড়ি আমার বাবা এবং আমার। আপনাদের থাকতে বলেছি বলে এই না যে আপনি বাড়ির মালিক হয়ে গেছেন।”
–“তোমার কী মনে হয় তুমি দয়া করে আমাদের জায়গা দিয়েছো?”
–“সেটা আপনার মিসেসকে জিজ্ঞেস করুন। সে নিশ্চয়ই এতদিন নিজের বাড়ি বলে চাপা মে’রে গেছে। সত্যি-ই তারিফ করতে হয় ওনার।”
–“একটাও বা’জে কথা বলবে না?”
–“বা’জে কথা আমি বলছি? নাও গেট লস্ট। আমার রুমে যদি আপনাকে এক সেকেন্ডও দেখি, তাহলে আমার চাইতে খা”রা”প আর কেউ হবে না।”
শাকিল ফুঁসতে ফুঁসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শাকিল বের হতেই মাহবিন রুমে পায়চারি করতে লাগলো চুলে হাত বুলিয়ে। মূলত রাগ সংবরণ করার চেষ্টায় আছে সে। বেশ কিছুক্ষণ পায়চারি করে তার চোখ যায় ওয়াইনের দিকে। এক বোতল হাতে নিয়ে সে ওয়াশরুমে ছুটলো। ওয়াশরুমের বেসিনে সব ওয়াইন ফেলে দেয়। মূলত প্রতি রাতে মাহবিন এরকমই করে। যতগুলো বোতল পাঠানো হয় সব বোতলের ওয়াইন একে একে এখানে থেকে ঢালে এবং বোতল খালি করে। এভাবে মূলত সোনিয়াকে এবং শাকিলকে গোল খাওয়ায় মাহবিন৷ তবে আজ এতেও তার মন ভরছে না। দুই বোতল বেসিনে ফেলে মাহবিন ভেতরে চলে আসে। বাকি দুই বোতল ওয়াইন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে। ঠিক সোনিয়া এবং শাকিলের রুমের দরজার সামনে সেগুলা আছাড় মারে। নিস্তব্ধ বাড়িটায় ভাঙ্গচূড়ের বিকট শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো। মাহবিন এসবকে তোয়াক্কা না করে উচ্চস্বরে গর্জন ছাড়লো৷ যেন ঘুমন্ত সিংহের ঘুম কেউ ভেঙ্গে দিয়েছে।
–“আপনাদের টাকার যেহেতু এতই কমতি তাহলে এগুলা আমার রুমে কেন পাঠান? টাকা না থাকলে এসব রাবিশ ওয়াইন কেনার টাকা কে দেয়? তামাশা লাগে আমাকে? দুর্নীতি করে আবার আসেন টাকা চাইতে। লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি আপনাদের, স্টে এওয়ে ফ্রম মি মিস্টার এন্ড মিসেস শেখর।”
সোনিয়াদের রুমের দরজা খোলার শব্দ শোনালো। মাহবিন একমুহূর্তও দাঁড়ায় না, পা ফেলে চলে আসার সময় পেছনে সোনিয়ার আর্তনাদ শুনতে পায়। তড়িঘড়ি করে ঘটনা দেখতে সোনিয়া বের হতে নিতেই পা পিছলে কাঁচগুলোর উপরেই হুঁমড়ি খেয়ে পরে সে। যার ফলে পা এবং হাতে কাঁচ ঢুকেছে তার। মাহবিন একবারও পিছে ফিরে তাকায় না। সে তার মা নয়, হতেই পারে না। তার বাবার সাথে সে তার পুরাতন মাকেও কবর দিয়ে দিয়েছে। বাবাকে দিয়েছে মাটিতে আর মাকে কবর দিয়েছে নিজ হৃদয়ে।
—————–
–“কী হলো ভাইয়া? বললে তো গতকাল আজ চাকরি পাবে, খবর জানালে না যে?”
–“আ.. আসলে এমনি, মাকে নিয়ে বিজি ছিলাম আর কী। তাইতো জানাতে ভুলে গেছিলাম।”
–“আচ্ছা, এখন বলো। জবের কী খবর? পেয়েছো?”
–“হ্যাঁ পেয়েছি।”
–“ওয়াও, অভিনন্দন। মিষ্টি খাওয়ালে না যে?”
মিষ্টির কথা শুনে রিয়নের স্বাভাবিক চেহারা গোমড়ামুখো হয়ে গেলো। মুখ ভার করে আয়ন্তির উদ্দেশ্যে বলে,
–“কাল ভার্সিটিতে তোর সাথে দেখা করব নে। তখন মিষ্টি খেয়ে নিশ।”
–“এইতো রিয়ন ভাইয়ের মতো কথা। আচ্ছা, শুনো। আমার পড়ার চাপ আছে৷ রাখছি।”
–“আচ্ছা। বাই।”
আয়ন্তি কল কাটতেই নীলা ফোন টিপতে টিপতে বলে ওঠে,
–“আজকাল মনে হচ্ছে রিয়ন ভাইয়াকে ইগনোর করছিস?”
থতমত খেয়ে যায় আয়ন্তি। ভ্রু-দ্বয় কুচকে নীলার উদ্দেশ্যে বলে,
–“তোর মনে হচ্ছে না ইদানীং বেশি বুঝছিস?”
নীলা ফট করে ফোন পাশে রেখে আয়ন্তির আরও কিছুটা কাছাকাছি বসে বলে,
–“এক্সেটলি। সেই রোমান্টিক সিন তো চোখের সামনে থেকে যাচ্ছেই না।”
আয়ন্তি নীলার পিঠে এক ঘা বসিয়ে দিয়ে বলে,
–“বে’দ্দ’প! বারবার আমাকে এসব বলে জ্বালাচ্ছিস কেন? আর ওগুলো কখনোই রোমান্টিক সিন হতে পারে না। ওগুলাকে সোজা ভাষায় নোংরা’মি বলা হয়।”
–“হ্যাঁ তাও ঠিক। তাহলে এগুলা রিয়ন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলব?”
–“খবরদার!”
–“আরে দেখাই না, মজা হবে।”
–“একজন ভাইয়ের জন্যে নিজের বোনের কুকর্ম দেখা সত্যি লজ্জাজনক। তাই আমার আস্থা আছে, তুই এই নিচ কাজ কোনদিন করবি না।”
নীলা দমে গেলো। চুপসে গেলো। আয়ন্তি তপ্তশ্বাস ফেলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। রাতটা কেন যেন তার ভীষণ রঙিন লাগছে। শুধু রাত নয়, আজকের দিনটাই রঙিন কাগজে মোড়ানো যেন। কতদিন পর সুখের সন্ধান পেলো সে। এতদিনের বিষণ্ণতা যেন এক পলকেই হারিয়ে গেলো। আজকের স্মৃতি নিয়ে আয়ন্তি অন্তত আরও এক মাস কাটাতে পারবে। বারংবার তার অনুভব হচ্ছে মুহূর্তটি, যেই মুহূর্তে আবেগাপ্লুত হয়ে মাহবিনকে জড়িয়ে ধরেছিলো। নিবিড়ভাবে মাহবিনের হৃদস্পন্দন অনুভব করেছিলো। কী সুখময়, ভালোলাগায় পূর্ণ সেই মুহূর্ত। আবেশে চোখ বুজে এলো আয়ন্তির। অধর জুড়ে ফুটে আছে এক বিশাল বেদনাহীন মিষ্টি হাসি। তবে আফসোস একটি আছেই। সেই মুহূর্তটি যদি থমকে যেত।
বেশ কিছু সময় অতিক্রম হতেই ফোনের রিংটোনের শব্দ আয়ন্তির কানে আসে। আয়ন্তি চোখ মেলে তাকায় এবং পিছে ঘুরে রুম থেকে ফোন নিয়ে আবারও বারান্দায় আসে। বারান্দায় এসে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই হাসি মুখটা ভার হয়ে এলো যেন। চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কল রিসিভ করে কানে ফোন ধরলো। অতঃপর থমথমে গলায় সালাম জানালো নুরুল আলমকে। নুরুল আলম সালামের উত্তর নিয়ে বলে,
–“এই আব্বুর খবর নিলে কী খুবই সমস্যা হয় মা?”
অনেকদিন পর বাবার মুখে “মা” ডাক শুনে আয়ন্তির অভ্যন্তরে শীতল হাওয়া খেলে গেলো। রাগ, অভিমানও যেন মিশে গিয়েছে অদৃশ্য বাতাসে। কেন যেন মানুষটার সাথে অভিমান করে থাকতে পারে না। যতই হোক, বাবা তো। বাবার প্রতি মেয়েরা কীভাবে পা’ষা’ণ হতে পারে? আয়ন্তি নিজের কন্ঠস্বর অত্যন্ত কোমল করে বললো,
–“মায়ের কাছে খবর নিয়েছি।”
–“কেন? আমার ফোন নাম্বার জানা ছিলো না? মাকে তো দিনে পাঁচবার কল করছো।”
আয়ন্তি মুখটা ভার করে বলে,
–“আমি তোমায় ছেলে-মেয়ের শূণ্যতা অনুভব করাতে চাইছিলাম আব্বু। আজকাল মানুষজন তো সামনাসামনি প্রমাণ ছাড়া শোধরায় না।”
–“ফিরবি না আমার কাছে? বুকটা যে হাহাকারে নেমেছে মা।”
–“ভাইয়া দুই বছর দূরে আছে আর আমার বেলায় দশদিন সহ্য করতে পারলে না? এটা কেমন হয়ে গেলো না আব্বু?”
ফোনের অপরপাশ থেকে শুধু নিরবতাই অনুভব হলো। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বলে,
–“তাহলে তুই আমার কাছে ফিরবি না?”
–“ফিরবো না, একবারও বলিনি তো। ভাইয়া এবং ভাবীকে সম্মানের সাথে বাড়িতে উঠাও, তবেই আমি ফিরবো।”
–“এমন জেদ ধরিস না মা।”
–“জেদ নয় আব্বু, নিয়্যত করেছি।”
————————–
চলবে, ইনশাল্লাহ।