অতঃপর দুজনে একা পর্ব-০৩

0
1690

#অতঃপর দুজনে একা – [০৩]
লাবিবা ওয়াহিদ

————————–
–“এই শাড়িটা পড়বি?”

আয়ন্তি বিরক্তির সাথে তার মায়ের দিকে তাকালো। আয়েশা আয়ন্তির আলমারি ঘেটে শাড়ি দেখানোতে ব্যস্ত। হবু বরের সাথে বের হবে বলে কথা। শাড়ি ছাড়া ভালো দেখাবে নাকি? আয়ন্তি তার মায়ের হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে আলমারিতে রেখে দিলো৷ এতে আয়েশা চোখ গরম করে তাকালেন মেয়ের পানে। কাঠ কাঠ গলায় বললো,
–“শাড়ি ছাড়া বের হলে তোকে আমি আ’স্ত রাখবো না আয়ন্তি!”

করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আয়ন্তি। মেয়ের মুখশ্রীতে অসহায়ত্ব উপলব্ধি করে কোমল হলেন আয়েশা। নির্নিমেষ তাকিয়ে রয় মেয়ের মুখপানে। শুকনো এবং ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। আয়ন্তির চোখের ভাষাও অন্যরকম। দুইদিন মেহমানদারীতে এতই ব্যস্ত হয়ে ছিলেন যে মেয়ের দিকে খেয়ালই করতে পারেনি। যতোই হোক মা তো। মা যে সন্তানের মন বুঝতে পারে, তাকে উপলব্ধি করতে পারে। আয়েশা মিনমিন স্বরে প্রশ্ন করলো,
–“কী হয়েছে আয়ন্তি? এমন দেখাচ্ছে কেন?”

আয়ন্তি নজর নামিয়ে ফেলে। আমতা আমতা করে বললো,
–“কিছু না আম্মু। আমি শাড়ি পরতে চাই না।”
–“না পরলে কেমন দেখায় তুই-ই বল? প্রবাদে আছে না, শাড়িতেই নারী? তোকে শাড়িতেই বেশি সুন্দর লাগে রে আম্মাজান। মায়ের কথাটা রাখ!”

আয়ন্তি পুণরায় নরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মায়ের পানে৷ আয়েশা আবারও আয়ন্তির চোখজোড়ায় কিছু খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। আয়ন্তি নিজের অবস্থা আড়াল করে আলমারি থেকে নীল শাড়িটা নিলো। অতঃপর ওয়াশরুম যেতে যেতে বললো,
–“বাসায় এসে যেন রসমালাইয়ের বড়ো বাটিটা পাই!”

আয়েশা স্মিত হাসলো। মেয়ের কথা সে বেশ ভালো বুঝেছে। এবং এটাও বুঝেছে দ্রুত মামুন অর্থাৎ বাড়ির কেয়ারটেকারকে দিয়ে রসমালাই আনাতে হবে। আয়েশা ব্যস্ত পায়ে বেরিয়ে গেলো। মেয়ের বিষণ্নতার কারণ নাহয় সময় করে জেনে নিবে।

—-
শাড়ি পরিহিত আয়ন্তিকে দেখে ওয়াসিফের মুখ হা হয়ে যায়। নীল জামদানী শাড়িতে আয়ন্তিকে অনেকটা স্নিগ্ধ লাগছে। তার চেয়েও বড়ো কথা আয়ন্তি তার দীঘল সিল্কি কেশ পিঠে ছেড়ে দিয়েছে। যার ফলে পিঠ পুরোটাই ঘন কেশে আবৃত। আয়ন্তি সিঁড়ি বেয়ে নামতেই দেখলো তার বাবা নুরুল আলম মেয়েকে দেখছে। আয়ন্তির মুখমন্ডলে পুণরায় বিষণ্নতা ছেয়ে যায়। দৃষ্টি নামিয়ে নেয় বাবার দিক থেকে। ওয়াসিফের মা এগিয়ে এসে আয়ন্তির থুঁতনি ধরে বলে,
–“কতটা প্রিটি লাগছে তোমায় আয়ন্তি। সো সুইট!”

বলেই আয়ন্তির কপালে আলতো চুমু খেলো। আয়ন্তি জোরপূর্বক হাসি দিলো। দৃষ্টি তখনো তার নত। ওয়াসিফ এবার তাড়া দিয়ে বললো,
–“তাহলে আমরা যাই? তোমরা পরে এসো!”

ওয়াসিফের মা মুচকি হেসে আয়ন্তির থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। ওয়াসিফ আয়ন্তির কাছে এসে আয়ন্তির কাঁধ জড়িয়ে সকলকে বিদায় জানালো। অতঃপর দু’জন একসাথে বেরিয়ে পরলো। ওয়াসিফের মা ওদের দু’জনের দিকে ক্লান্তহীন তাকিয়ে আপনমনে বলে ওঠে,
–“দে মেড ফর ইচ আদার।”

বাইরে আসতেই আয়ন্তি ছিটকে দূরে সরে এলো। গা ঘিনঘিন করছে আয়ন্তির। ওয়াসিফ বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আয়ন্তির পানে।
–“আবার কী?”
–“নিজের লিমিটের মধ্যে থাকুন। টাচ করেছেন কোন সাহসে?”

ওয়াসিফ রেগে দু’ধাপ এগিয়ে এলো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
–“আমি টাচ করলেই তোমার প্রব্লেম! আর যখন মাহবিন টাচ করে তোমাকে? তখন বুঝি খুব শান্তি লাগে?”

আয়ন্তি চমকে উঠলো ওয়াসিফের কথায়। কীসব যা-তা বলছে এই ছেলে? মাথা ঠিকাছে? আয়ন্তি হতবিহ্বল হয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রইলো ওয়াসিফের পানে! ওয়াসিফ আবার বলে,
–“কী মনে করো তুমি? আমি অন্ধ? চোখ নেই আমার? আমি সবই দেখি। খুব তো বলতা বাঙালি মেয়েরা শালীনতার সাথে চলে। আরও কত ডিসগাস্টিং স্পিচ!”
–“শাট আপ ওয়াসিফ! ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। এছাড়া মাহবিন আমায় যথেষ্ট রেসপেক্ট করে। হি’স নট লাইক ইউ!”

ওয়াসিফ চোখ বুজে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করলো। অতঃপর কুল ডাউন ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
–“গাড়িতে উঠো!”
–“আমি কখনোই তোমার গাড়িতে করে যাবো না! রিকশা করে যাবো!”
–“রিকশা?”

উচ্চারণে কিছুটা সময় লাগলো ওয়াসিফের। আয়ন্তিও বেশ অবাক হয় ওয়াসিফের হঠাৎ প্রসঙ্গ বদলে যাওয়া দেখে। তবে ওয়াসিফকে তার একদমই বিশ্বাস নেই। গাড়ি করে তো কখনোই যাবে না। আয়ন্তি বেশ সময় নিয়ে বলে,
–“হুম!”
–“ওটায় উঠে কীভাবে? যদি পরে যাই? নো, রিস্ক নিতে চাই না! গাড়িতে আসো!”
–“আমি যা বলেছি তাই হবে!”
–“ডোন্ট মেক মি এঙ্গ্রি আয়ন্তি।”

আয়ন্তি শোনার মেয়ে-ই নয়। সে রাগ দেখিয়ে যেতে চাইলে ওয়াসিফ তার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে এবং টেনে-হিঁচড়ে গাড়ির দিকে নিয়ে যায়। আয়ন্তি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
–“ওয়াসিফ! ছাড়ুন আমার হাত!”

ওয়াসিফ কানে নিলো না। আয়ন্তিকে টেনে ফন্ট সিটে বসিয়ে দিলো। ওয়াসিফ তার সিটে যাওয়ার পূর্বেই আয়ন্তি গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। এবং ওয়াসিফের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বললো,
–“আমি আপনার সাথে যাবো না মানে যা-বো না!”

বলেই আয়ন্তি ওয়াসিফকে ফেলে গেটের দিকে চলে যায়। ওয়াসিফ ফুঁসতে ফুঁসতে আয়ন্তির চলে যাওয়া দেখলো। রাগে, ক্ষোভে গাড়ির টায়ারে এক লাথি দিলো। ওদের চিল্লা-পাল্লা শুনে জয়া বেরিয়ে আসলো। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ওয়াসিফের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
–“আয়ন্তি কই?”
–“রিকশা করে মলের দিকে চলে গেছে।”
–“ওহ। তুমি তো মল চিনো না। তাহলে আমি তোমার সঙ্গে যাই?”

ওয়াসিফ জয়ার দিকে তাকালো। জয়াকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বললো,
–“কাম!”

জয়া খুশি-খুশি মনে গাড়িতে উঠে বসলো। ওয়াসিফ গাড়িতে ওঠার পূর্বে মাহবিনকে একটা ভয়েজ মেসেজ সেন্ড করলো।

গেট দিয়ে ওয়াসিফের গাড়ি বের হচ্ছে বুঝতেই আয়ন্তি দ্রুত নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে পরলো। ওয়াসিফ চলে যেতেই আয়ন্তি বেরিয়ে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আয়ন্তি সিদ্ধান্ত নিলো, আজই নুরুল আলমকে সবটা জানাবে। ওয়াসিফের ব্যবহার, মনোভাব সম্পর্কে। অনেক চুপ থেকেছে আর নয়। বাবাকে বলতে না পারলে মাকে বলতে হবে। যে করেই হোক। আয়ন্তি ভাবতে ভাবতে রাস্তায় তাকাতেই দেখলো খালি রিকশা। হাঁক ছাড়লো আয়ন্তি, রিকশাওয়ালার উদ্দেশ্যে। রিকশা আসলে রিকশায় উঠে আয়ন্তি চললো অজানার পথে। গন্তব্য জানা নেই তার। শপিংমল তো কিছুতেই যাবে না। ক্লাস যেমন বাঙ্ক দেয় তেমন আজ সবাইকে বাঙ্ক দিয়ে একা একা ঘুরে বেড়াবে। এই ঘুরাঘুরির সঙ্গী সে নিজেই। শালটা শক্ত করে চেপে আকাশের পানে তাকিয়ে রয় অনিমেষ। আকাশটা কেমন মেঘলা। শীতকালে বৃষ্টি আসাটা একটু বেশি-ই অদ্ভুত দেখায়। একে অসময়ের বৃষ্টিও বলা যায়।

পাঁচ থেকে দশ মিনিট রিকশা চলতেই পেছন থেকে রিকশায় সজোরে ধাক্কা লাগলো। রিকশাওয়ালা নিজেকে সেই ধাক্কায় সামলে উঠতে পারলেও সামলাতে পারেনি আয়ন্তি। রিকশা থেকে রোডে পরলো আয়ন্তি। অসহনীয় ব্যথায় চোখ-মুখ খিঁচে চাপা আর্তনাদ করে উঠলো আয়ন্তি। ভাগ্যিস মাথা বা মুখশ্রী থেঁতলে পরার আগেই হাত গিয়ে নিজের মাথাকে নিরাপদ করেছিলো। হঠাৎ আয়ন্তি নিজের নাম শুনতে পেলো। খুবই পরিচিত পুরুষালি কন্ঠস্বর। আয়ন্তি চোখ মেলে তাকালো। হাতের দিকে চোখ যেতেই দেখলো কনুই এবং হাত বাজে ভাবে ছিলে গেছে। পাতেও কেমন জ্বালা অনুভব হচ্ছে তার। হঠাৎ আয়ন্তিকে কেউ উঠে বসালো। পরিচিত পারফিউমের স্মেল নাকে বিঁধছে। সন্দেহ বাস্তবে রূপান্তর করতে আয়ন্তি মাথা উঁচু করে তার পাশে থাকা মানুষটিকে দেখলো। মাহবিন? নির্নিমেষ তাকিয়ে রয় মাহবিনের পানে। চোখে-মুখে একরাশ বিষ্ময়। মাহবিন বেশ ব্যস্ত হয়ে বলে,
–“আর ইউ ওকে?”

ধ্যান নেই আয়ন্তির। সে এখনো পিটপিট করে মাহবিনকে দেখছে। মাহবিন আয়ন্তির কনুইয়ের কাছাকাছি হাত দিতেই আয়ন্তি চোখ মুখ খিঁচে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো। মাহবিন সঙ্গে সঙ্গে আয়ন্তিকে ছেড়ে দিলো। পুণরায় উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
–“কী হয়েছে? ঠিক আছো তুমি?”

আয়ন্তি নিজেকে সামনে ইতিবাচক মাথা নাড়ে। মাহবিন লক্ষ্য করলো আয়ন্তির ছিলে যাওয়া হাত এবং কনুই! মাহবিন চাপা স্বরে রাগমিশ্রিত কন্ঠে আওড়ালো,
–“শিট!”

বলেই মাহবিন ড্রাইভারের দিকে গরম চোখে তাকালো। ড্রাইভার ভয়ে শুকনো ঢোঁক গিলে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে রয়। মাহবিন পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে। অতঃপর সেখান হতে একশো টাকার নোট বের করে রিকশাওয়ালার হাতে গুঁজে বলে,
–“ভাড়াটা দিয়ে দিলাম। আর আপনার রিকশার কোনো ক্ষতি হলে আমি দুঃখিত। আশা করছি এই টাকাতে আপনার ভাড়াটা মিটে যাবে!”

অতঃপর আয়ন্তির দিকে তাকিয়ে বলে,
–“পাশের ফার্মেসীতে চলো। ছিলে যাওয়া জায়গাগুলো ক্লিন এবং মলম লাগিয়ে দিবে!”

আয়ন্তি বিনা-বাক্যে মাহবিনের সাথে পাশের ফার্মেসীতে চলে গেলো। ড্রাইভার গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে রয়। ফার্মেসী থেকে হাত এবং পায়ে মলম এবং ব্যান্ডেজ করা হলো। পায়ের গোড়ালি কেটেছে এবং হাটুও ছিলেছে। তবে হাটুর কথা বলে না আয়ন্তি। হাটু দেখানোটা লজ্জাজনক ব্যাপার। সেখানে নাহয় নিজেই বাসাতে মলম লাগিয়ে নিবে।

মাহবিন এবং আয়ন্তি গাড়িতে পাশাপাশি বসে। ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভার ড্রাইভ করছে। আয়ন্তি চুপ করে বসে রয়। নিরবতা ভেঙ্গে আয়ন্তি হুট করেই বলে ওঠে,
–“ধন্যবাদ!”

মাহবিন তড়িৎ ঘাড় বাঁকিয়ে আয়ন্তির পানে তাকায়। ভ্রু কুচকে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
–“কেন?”
–“এইযে সাহায্য করলেন!”
মাহবিন একপলক আয়ন্তিকে দেখে নজর ঘুরিয়ে নিলো। অতঃপর বেশ গম্ভীর গলায় বললো,
–“থ্যাংকস কেন বলবে তুমি? আমার জন্যেই তো তোমার এমন হাল হলো। ড্রাইভার ব্রেক কষতে পারেনি সময়মতো। তাইতো এই এক্সিডেন্ট হলো। আমার তো উল্টো গিল্টি ফিল হচ্ছে!”

আয়ন্তি মুগ্ধ নয়নে মাহবিনের দিকে তাকিয়ে রয়। মাহবিন ফর্মাল সুটে আছে। চোখে তার সানগ্লাস, বাতাসের ধাক্কায় মাহবিনের সামনের একগাছা চুল অসমান্তরাল ভাবে উড়ছে। আয়ন্তি আনমনে বললো,
–“আপনার সাথে হুট করে দেখা হওয়াটা কী কোনো ইন্সিডেন্ট? ওয়াসিফ তো বললো আপনি অফিসে!”
–“আমি এই রোড দিয়েই যাচ্ছিলাম, কনফারেন্স সেরে। ওয়াসিফ বললো মলে যেতে। যাওয়ার পথেই তো এসব হলো। আমি জানতাম নাকি যে রিকশার মেয়েটা তুমি ছিলে! বাই দ্য ওয়ে!”

মাহবিন সানগ্লাস খুলে আয়ন্তির দিকে ফিরলো। আয়ন্তি বেশ চমকে মাহবিনের দিকে তাকালো।
–“তুমি রিকশায় কী করছিলে? তোমার তো ওয়াসিফের সাথে যাওয়ার কথা!”

মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আয়ন্তির। আবার সেই ওয়াসিফ। ওয়াসিফ ছাড়া কী এই লোকটার ডিকশিনারিতে আর কোনো ভাষা নেই? নাম নেই? কথা নেই? শব্দ নেই? আয়ন্তি ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
–“ওয়াসিফ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই আপনার ডিকশনারিতে?”

মাহবিনের ভ্রু-দ্বয় কিছুটা কুচকে গেলো। চিন্তিত কন্ঠে শুধালো,
–“আছে তো। কিন্তু তুমি তো ওর ফিয়ন্সে!”
–“উফফ!”
–“উফফ কী?”
–“আমায় বাসায় দিয়ে আসেন!”
–“কিন্তু মল..”
–“আমার শরীর ভালো লাগছে না। তাই বাসায় যেতে চাই!”

মাহবিন আর কিছু বললো না। ড্রাইভারকে আদেশ করলো বাড়ির দিকে গাড়ি ঘুরাতে। আয়ন্তি নিরাশ হয়ে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। সবকিছুই তার নিকট ভিষণ বিরক্তিকর লাগছে। এরপর পথে আর কোনো কথা হলো না। অতঃপর দুজনে একা নিরবে-ই কাটিয়ে দিলো।

বাড়িতে আসতেই আয়ন্তি জানতে পারে সকলে শপিং এর জন্যে বেরিয়ে গেছে। আয়ন্তি ভেতরে ঢুকতে গিয়ে খেয়াল করলো মাহবিনও তার পেছনে আসছে। আয়ন্তি থেমে পিছে ফিরে তাকালো। মাহবিন ভ্রু কুচকে বললো,
–“কী? দাঁড়ালে যে?”
–“আপনি শপিংমলে যাবেন না?”
–“নাহ। মিটিং শেষে আমি ক্লান্ত। এছাড়া বাড়িতে কেউ নেই, তুমিও সিক। একা বাড়িতে তোমার প্রব্লেম হতে পারে!”
–“আচ্ছা৷ আপনি রুমে গিয়ে রেস্ট করুন!”

বলেই আয়ন্তি সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগলো। তার এই ভেবে ভিষণ ভালো লাগছে যে মাহবিন তার জন্যে চিন্তিত। এক আলাদা প্রশান্তি অনুভব করছে বক্ষঃস্থলে। আয়ন্তি রুমে গিয়ে দরজা লক করে বিছানায় গিয়ে বসলো। মাহবিনের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আপনমনে হেসে ফেললো আয়ন্তি। কাঁধের ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই মনে পরলো ফোন তার বন্ধ। বন্ধ ফোন আয়ন্তি আর অন করলো না। কারণ, আয়ন্তি জানে ফোন অন করলেই তার মা এবং বাবার একশো কল আসবে। এবং আয়ন্তিকে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে শপিংমলে নিয়ে যাবে। আয়ন্তি এটা একদমই চায় না। লম্বা শাওয়ারের প্রয়োজন তার।

মাহবিন বেলকনিতে বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। হঠাৎ তার আয়ন্তির রুমের দিকে নজর যেতেই দেখলো আয়ন্তি তোয়ালে চুল মুছতে মুছতে রুমে হাঁটাহাঁটি করছে। কিছুটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে অবশ্য। মাহবিন কিছুক্ষণ তাকিয়ে রুমে চলে আসলো। সে চায় না আয়ন্তি বেলকনিতে মাহবিনকে দেখুক। দেখলে হয়তো গতকাল রাতের মতোই অস্বাভাবিক আচরণ করবে। কিছুক্ষণ বাদে মাহবিনের ফোনে টুংটাং শব্দ হলো। মাহবিন ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফোন হাতে নিলো। ওয়াসিফেত মেসেজ। মাহবিন সেটা অন করে কিছু ছবি এবং টেক্সট দেখলো। সেগুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রয় মাহবিন। অতঃপর ল্যাপটপ বন্ধ করে মাহবিন বেলকনিতে চলে গেলো। বেলকনি থেকে আয়ন্তিকে কয়েকবার ডাকলো। মিনিট পাঁচেকের মাঝে মাথায় ঘোমটা দিয়ে আয়ন্তি বেলকনিতে আসলো। অতঃপর মাহবিনের উদ্দেশ্যে বললো,
–“ডেকেছেন?”
–“হ্যাঁ। আগামীকাল সন্ধ্যায় তো তোমার এঙ্গেজমেন্ট তাই না?”
–“হুম। কেন?”
–“বিয়েটা ভেঙ্গে দাও!”

—————————-
~চলবে, ইন শা আল্লাহ!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে