#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ২৭
সকাল সকাল সবাই বেরিয়ে পরলো ঘুরতে যাওয়ার জন্য। ব্রেকফাস্ট করে।
চাদর গায়ে আছে তবুও ঠান্ডা লাগছে অনেক।
তার মূল কারণটা হলো সকালে বের হওয়া কিন্তু কিছু করার নেই।আজকেই বিকেলে রওনা হতে ঢাকা। এজন্য আগেই বের হতে হলো না হলে বেরানো হবে না।
উদ্দেশ্য রিসাং ঝর্ণা।
চারপাশে সাদা কুয়াশায় ঘেরা। ওই ভাবে আমরা এখানে আসতে আসতে কুয়াশা চলে গেছে। একটু বেলা হয়েছে সূর্যের তাপ গায়ে লাগছে এখন ভালো লাগছে।
শীতের রেশ কমে এসেছে। সবাই ঝর্ণার কাছে এসে পানি দেখতে লাগলাম।
হাত দিয়ে ছুয়ে দিলাম সাথে সাথে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো আমার। প্রচন্ড ঠান্ডা পানি। শীতল হাওয়া সারা শরীর বেয়ে গেল। সাথে সাথে পানি থেকে হাত উঠিয়ে সরে দাঁড়ালাম। পানি পরার ঝনঝন শব্দ কানে এসে বাজছে এই শব্দ টা শুনতে কি যে ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না। হঠাৎ অন্তরা এসে টেনে আমাকে চেপে ধরলো, ছবি তোলার জন্য।
ও ফোন নিয়ে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে অন্যদিকে গেল আর ও ছবি তুলবে বলে।
কয়েকটা ছেলের দীকে নজর গেল তার ড্রেস খুলছে আর অন্য সিম্পুল ড্রেস পরে পানি তে নেমে গেল। দেখেই আঁতকে উঠলাম আমি। আমি হাত দিতে পারলাম না আর এরা এভাবে নেমে পরলো ভাবা যায়।
সবাই ঠান্ডায় জমে গেছে মুখই বলে দিয়েছে কিন্তু আনন্দ ও করেছে। হঠাৎ আদ্র কে চোখে পরলো সাথে ওনার ফ্রেন্ড রাও আছে তারা ও নেমে পরলো। কিন্তু রাহাত ভাইয়া নামলো না। আদ্র নামার সময় আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
“হে স্নেহা কেমন কাটছে দিনকাল?”
আচমকা কন্ঠ পাশ ফিরে রাহাত কে দেখে চমকে উঠি,
রাহাত দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে,
“জি ভাইয়া ভালো, আপনার?”
“ভালো। চলো ওইদিকে যাই।”
না করতে চেয়ে ও পারলো না স্নেহা রাহাতের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো,
“আপনি নামলেন না যে?”
স্নেহার প্রশ্নের ঘার কাত করে তাকিয়ে বলে,,
‘আমি কি ভাবে নামবো। বাপরে যে ঠান্ডা পানি তার উপর আমার আবার ঠান্ডা প্রবলেম আছে।”
“ও আচ্ছা।”
“এখানে এসে কেমন লাগছে।”
উজ্জ্বল মুখ করে বলল,, “খুব ভাল।”
রাহাত সেটা দেখে হেসে ফেললো।
রাহাতের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে একটু ঘুরলো। রাহাতের ফোন আসতেই স্নেহাকে ছেরে চলে গেল।
স্নেহা একাই ঘুরতে লাগলো। নিজে ও ফোন বের করে রুনাকে আপুকে কল করলাম। আব্বুর খোঁজ নিলাম আর আজকে চলে আসবো সেটা ও বলে দিলাম। হঠাৎ ঠান্ডা কিছু মুখে পরতেই চমকে মাথা উঁচু করলাম,
আদ্রকে দেখে ভীষণ অবাক হলাম।ভিজা শরীর নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ওনি মাথায় চুল ঝেড়ে আমার মুখে পানি দিয়েছে এখনো দিচ্ছে। রেগে গেলাম আমি।
“এসব কি হচ্ছে? আপনি আমাকে ভিজাচ্ছেন কেন? আর এখানে কেন আপনি না পানিতে ছিলেন।”
আদ্র কথা বলছেনা নিজের মত পানি ছিটিয়ে যাচ্ছে। স্নেহা ওর কাছে হতদম্ব হয়ে গেছে এমন করছে কেন? তার উপর আবার উওর ও দিচ্ছে না। লোকটার প্রতিটি কাজ খারাপ। রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে।
“কি হলো এমন অসভ্যতামী না করলে কি হচ্ছে না এখন ও আমাকে জ্বালাবেন সরুন আমার সামনে থেকে।”
আদ্র পানি ঝারা ওফ করে। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে দেখলো স্নেহাকে অত্যন্ত রেগে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
“আপনি এলেন কেন এভাবে।”
“তোমাকে ভেজাতে।”
“মানে আপনি আমাকে ভেজাতে এসেছে। আপনি তো খুব খারাপ একদম ভেজাবেন না আমাকে কি ঠান্ডা পানি।”
আদ্র শুনেও যেন শুনলো না আবার পানি দিতে লাগলো। স্নেহা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর সহ্য করতে না পেরে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে আসে।
রাগে গজগজ করতে করতে সামনে এগিয়ে আসে।
হঠাৎ সামনে এসে দাড়িয়ে মাইশা।
কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে ওর দিকে।মাইশা কে দেখে স্নেহা থেমে যায়।
“এই তুই আদ্রর সাথে কি কথা বলছিলি।”
এমন কথা শুনে স্নেহা অবাক হয়ে তাকায় মাইশার দিকে।
“কি হলো কথা বলছিস না কেন? দেখ একদম আদ্রর আশে পাশে থাকবি না আর কথা ও বলবি না। কি দেখে আদ্র তোর…
কথাটা বলতেই রাইসা পাশ থেকে ওর হাত চেপে ধরে।সাথে সাথে থেমে যায়। আদ্র যে ওকে ভালোবেসে সেটা বলা যাবে না তার আগেই ওর মন থেকে আদ্রকে গেট আউট করবো আর ওকে বুঝাব আদ্র আমাকে ভালোবাসে।
আর আদ্রর এতো সহজে মনের কথা বলবে না আমি জানি এটাই আমার সুযোগ।
কথার মাঝে থেমে যেতে দেখে স্নেহা সন্দেহ চোখে তাকিয়ে থাকে।
“শুন আদ্রর থেকে দূরে থাকবি।”
বলেই মাইশা চলে গেল রাইসা কে নিয়ে। স্নেহা ওদের যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল ওদের কথা কিছু বুঝতে পারলো না।
.
“এখনি তো বলে দিচ্ছিলি আদ্র স্নেহার উপর দূর্বল। ভালোবাসে ওকে।”
“একদমি মনে ছিল না ওকে আদ্রর পাশে দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেছিলো।”
“মাথা ঠান্ডা রাখ আর সাবধান এসব কিছু আদ্র জানতে পারলে তোকে যে কী করবে ভেবেই ভয় হচ্ছে।”
“জানবে কি করে তুই ছারা আর তো জানে না তুই কি বলে দিবি নাকি।”
“দূর আমি বলবো কেন?”
“তাহলে চিন্তা করিস না কেউ জানবে না। তুই আমার পাশে থাকবি তো।”
“অবশ্যই আমি তো জানি তুই আদ্র কে কতো ভালোবাসি কিন্তু আদ্র তোকে কেন যে বুঝলো না।”
“আদ্রর দোষ নেই সব ওই মেয়ের কি দিয়ে জাদু করেছে।”
মাইশা আর রাইশা কথা বলছিলো রাহাতকে দেখে দুজনে থেমে যায়।
.
রিসোর্টের রুমে বসে আছে স্নেহা। সামনে অন্তরা রেডি হচ্ছে। একটু পরেই আমরা রওনা হবো ঢাকার উদ্দেশ্যে।
স্নেহা উঠে বারান্দায় গেল দুদিনের বেলকনি টা আপন হয়ে গেছে। খুব পছন্দের ছিলো এটা ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আব্বু র কথা মনে হতেই আনন্দ হতে লাগলো দুদিন পর আব্বু কে দেখবো খুশি লাগছে একা আগে কখনো থাকা হয়নি।
রুমে এসে ব্যাগ প্যাক করতে লাগলাম।
আধা ঘন্টা পর সবাই রেডি হয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম।সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে আছি।
গাড়ি আসতেই সবাই উঠে গেলাম।
এবার আর আদ্রর সাথে বসি নাই।
রাত বারোটায় ভাসির্টির সামনে এসে গাড়ি থামলো।সবাই একে একে নেমে গেল।
সব মেয়ের ফ্যামিলির কেউনা কেউ এসেছে।আর ছেলেরা ও। অন্তরা এসে আমাকে ওর সাথে যেতে বলল কিন্তু আমি না করে দিলাম। হেঁটে ই চলে যাব গাড়ি না পেলে কিন্তু বাসায় যাবই।
অন্তরা চলে গেল একে একে সবাই চলে গেল। ফাঁকা হয়ে গেল চারপাশ। স্নেহা আশেপাশে তাকিয়ে এক ঢোক গিলে চলে যেতে নেয় হঠাৎ আদ্র সামনে এসে দাঁড়ায় বাইকে করে।
চমকে আদ্রর দিকে তাকালাম।উনি কোথা থেকে এলো,
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।
“তারাতাড়ি উঠে বসলো।”
“আপনি যাননি এখন ও।”
“নাহ। গেলে কি এখানে থাকতাম নাকি।কথা না বলে উঠো।”
“উঠবো কেন?”
“বাসায় যাবে না। দেখো বারোটা পনেরো বাদে তাই এখন তুমি কোন গাড়ি পাবে না।তাই আমার সাথে চলো।”
“গাড়ি আমার দরকার নেই। আমি হেঁটে চলে যাব।”
“হেঁটে যাবে? এই এতো রাতে।”
“হ্যা।”
“তোমার মাথা খারাপ হয়েছে।এই সময় যে কোন বিপদে পরতে পারো জেদ না করে উঠো।”
“নাহ আপনার সাথে আমি যাব না।”
আদ্র কি একটা ভেবে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলে।
“তুমি হয়তো ভুলে গেছ ভূতের ব্যাপারটা।”
“না ভুলি নাই।আর এটা ও ভুলি নাই ভূতটা আপনি ছিলেন।”
“সেদিন আমি ছিলাম কিন্তু সব সময় তো আমি থাকবো না।আজকে তো সত্যি কারে আসতে পারে তার উপর বারোটা এই সময় শুনেছি ভূত প্তেত বেশি থাকে।”
আদ্র ওর দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে।স্নেহা এসব শুনে ভয় পেয়ে গেল। তবুও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
“ওকে তাহলে থাকো তুমি আমি যাই প্রচুর রাত হয়েছে।”
বলেই বাইক স্টাট দেয়।স্নেহার কি হলো কে জানে ও আদ্রকে ডেকে উঠলো,
“যাবেন না প্লিজ।”
আদ্র পেছনে ঘুরে জিজ্ঞেস করে, “যাবো না মানে।”
“মানে আমাকে রেখে যাবেন না প্লিজ।”
“তুমি না বললে আমার সাথে যাবে না।”
“হ্যা কিন্তু আজকে একটু পৌঁছে দিন।”
“পারবো না এতোক্ষণ বলছিলাম খুব ঢং দেখিয়েছো।”
আদ্রর পারবো না শুনে স্নেহার গলা শুকিয়ে আসে। এখন কি হবে সত্যি যদি ভূত আসে ইশ প্রথমে যে কেন না করলাম কিন্তু এই লোকটা সব সময় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে এই জন্য ই তো। কিন্তু এখন কি করবো উনি তো আমাকে নিতে রাজি হচ্ছে না।
“সরি প্লিজ এমন করবেন না ।”
“আচ্ছা করবো না একটা শর্তে।”
আবার শর্ত।
“এই লোকটা সব সময় শর্ত শর্ত করে কেন? আল্লাহ আবার কি যে শর্ত দেবে আল্লাহ জানে।”
“হ্যা রাজি থাকলে বলো।”
“জি বলেন।”
“আমি ফোন দিলো সব সময় রিসিভ করতে হবে।”
“আপনি আবার ও আমাকে কল করবেন।”
“সেটা পরে জানতে পারবে ধরবে কিনা বলো।হ্যা ওর না।”
চারপাশের ঘুটঘুটে অন্ধকারে দিকে তাকিয়ে আবার আদ্রর দিকে তাকালাম।সব দোষ আমার কেন যে নিজে প্রথমে না করতে গেলাম।তাহলে এই যন্তনা সহ্য করতে হতো না।
অগ্যতা রাজি হলাম আর বাইকের পেছনে উঠে বসলাম।
“ভালো করে ধুরে বসো।নাহলে কখন পরে যাবে বুঝা যাবেনা।”
“পরবো না সেদিন পরি নাই মনে আছে।”
“হ্যা না ধরলে পরতে। আজকে স্পিড বাড়বে তাই আগেই বললাম।”
“বাড়বে কেন?”
“বাসায় তারাতাড়ি ফিরবো তাই।”
.
কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
খুলছে না আর ও দুবার পর খুলে দিলো আপু।আমাকে দেখেই হেসে জরিয়ে ধরলো। ভেতরে ঢুকে আব্বু কে উঁকি দিয়ে দেখে আসলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে আসতেই আপু খাবার দিলো এনে।
“খাবার আনলেন কেন?”
“কতো রাস্তা জার্নি করে এসেছিস তাই আরকি তোর তো খিদে পেয়েছে নাকি।তাই গরম করে নিয়ে এলাম।”
“এখন আবার কষ্ট করতে গেলে কেন?”
“চুপচাপ খা।”
খিদে পেয়েছিল তাই কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করলাম।
.
সকালে আপু নিজের বাসায় সিফট করলো। তার থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া আসে নি এর মাঝে আর ফোন ও নাকি করে নি সেটা নিয়ে আপু কিছু টা চিন্তিত।
পরদিন অফ ভাসির্টি অফ।তাই বাসায় ই কাটলো।রাতে টিউশনি থেকে কল এলো আর বলল পরদিন যেতে।
রাতে আদ্রর নাম্বার থেকে কল এলো।ধরবো না ভেবে ফোন রেখে দিতেই কালকের করি মনে পড়ে গেল।না চাইতে ও ফোন রিসিভ করলাম।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?”
বিরক্ত হয়ে ফোন কানে ধরে আছি।
“কি হলো কথা বলছো না কেন?”
“ফোন কেন দিচ্ছেন?”
“কথা বলতে! কি করছো?”
‘ঘাস কাটছি কাটবেন।”
“হোয়াট ?’
“ডিস্টার্ব করা শুরু করে দিয়েছেন। ফোন রাখেন আমি ঘুমাবো।”
“খাইছো?”
“বলবো না। বাই।”
ফোন কেটে দিলাম।এতো আদিক্ষেতা করে কথা বলছিলো যে দূর আবার কি সব ভাবছি।
.
দুই দিন পর
মন খারাপ করে আপু আমার সামনে বসে আছে। আপুর থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া এখন ও আসে নাই। চিন্তিত আপুর মন খারাপ।
“আপু মন খারাপ করো না।”
“চিন্তা হচ্ছে আমার।”
“বুঝতে পারছি বাসায় কাউকে জানাও অন্য কেউ তো জানতে পারে।”
“শুনেছি ।”
“কি বলেছে?’
“বললো কাল নাকি কথা হয়েছে। কিন্তু আজ হয়নাই।”
“ওহ তাহলে তোমার মাঝে কি ঝামেলা চলছে।”
“থাক এসব বাদ দে।”
আপু বলতে চাইনা আর তাই চুপ হয়ে গেলাম।
.
সেদিন রাতে রুনা হাজবেন্ড কৌশিক বাসায় এলো।
রুনা কৌশিক কে দেখেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠলো।
ওকে দেখেই জরিয়ে ধরলো। ভালোবেসে বিয়ে হয়েছিলো ওদের বিয়ের পাঁচ বছর পার হয়েছে। প্রথম ভালোই কাটছিল সংসার জীবন ভালোবাসায় ভরপুর ছিলো কিন্তু। মাঝে কি হয়ে গেল কে জানে ? আস্তে আস্তে চেঞ্জ আসতে লাগলো।
ইদানিং বেশি হচ্ছে।
চোখ বন্ধ করে কৌশিকের বুকে মাথা রেখে জরিয়ে আছে দু হাতে কিন্তু বেশি সময় থাকতে পারলাম না।
কৌশিক ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিল ওকে।
ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কৌশিক বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে ।
চলবে♥️
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:—তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–২৮
শর্ত দেওয়ার পর থেকে আদ্রর কল দেওয়া বেরেছে।আগে শুধু রাতে কল করতো আর এখন দিনের ও করে। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে হয়। কারণ আমি শিকার করেছিলাম রিসিভ করবো।
রাগে দুঃখে বারান্দায় বসে আছি। এখন রাত এগারোটা বাজে।
এখন পর্যন্ত কল আসে নাই আদ্রর তাই জেগে ফোন হাতে নিয়ে কলের অপেক্ষা করছি। ফোন রিসিভ না করে ঘুমিয়ে পড়লে আবার ভার্সিটিতে গেলে চেপে ধরবে তাই চরম বিরক্ত নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি।
এতো লেট করছে কেন আজ কেন আজ কল করতে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে আর ইনি আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে।
জিম মেরে বসে অপেক্ষা করছি কলের কিন্তু আসছে না। বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।ওই ভাবেই আমার চোখ লেগে যায়।
ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই আমার ঘুম ছুটে যায় আর আমার মাথা কাত হয়ে ছিলো ঘারৈর ব্যাথা অনুভব করলাম।ওইভাবে ঘারে হাত দিয়ে মাথা সোজা করলাম।
ফোন বেজে বেজে কেটে গেছে। ফোন টিপ দিয়ে দেখলাম সারে এগারোটা বাজে।
আবার ফোন বাজলো সাথে সাথে রিসিভ করলাম তীব্র রাগ নিয়ে।এতো রাত করে ফোন দিয়ে উনি আমাকে ডিস্টাব করছেন কতো খারাপ একটা হতে পারে ওনাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।
“এইটা কোন ফোন দেওয়ার টাইম হলো ঘড়ি দেখেছেন আপনি প্রায় বারোটা বাজে এতো রাতে কেন করলেন বলুন।আপনি জানতেন আমি বসে লিখবো তাই ইচ্ছে করে এমন করে কষ্ট দিচ্ছেন তাই কি লাভ আমাকে কষ্ট দিয়ে বলুন তো। আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার এমন করছেন কেন? ফোন নি ধরলে হুমকি ধামকী দিবেন আবার নিজেও লেট করে কল করবেন কেন? আমার কী ঘুম পায় না?এতো রাত অবধি….
“স্টপপপ।”
আদ্রর চিৎকার শুনে ভয়ে কেঁপে উঠলো স্নেহা সাথে কথা ও অফ হয়ে গেল। স্নেহার বাঁচাল মার্কা কথা শুনে আদ্রর ফুঁসে উঠেছে।একে এতে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অনেক কিছু করতে হয়েছে তার উপর আবার এসব কথা তাই রেগে স্নেহাকে থামায়।
বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলে,
“পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিচে আসো।
আমি অপেক্ষা করছি।”
স্নেহা আদ্রর রাগী কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে চুপ করে আছে। কিছু বলতে পারছে না তার উপর নিচে যাওয়া শুনে চমকে উঠে, তাও কথা বলছে না।
“কী হলো কথা কানে যায় না।”
“নিচে আসবো মানে কি ? এতো রাতে আমি নিচে কেন আসবো!”
“আমি বলেছি তাই আসবা।”
“আপনি বললেই আমাকে যেতে হবে। আমি যাব না দেখুন ফোন রিসিভ করবো বলেছিলাম কিন্তু আপনার সব কথা শুনবো বলি নাই।”
“জানি। তুমি আসবে নাকি সেটা বলো।”
“আসবো না।”
“‘রিয়েলি।”
“হ্যা।”
“ওকে তাহলে আমি উপরে আসি।”
“হোয়াট আপনি উপরে আসবেন মানে?”
“তোমার রুমে আসবো।”
“আপনি কি পাগল হলেন নাকি কী যাতা বলছেন। মাথা ঠিক আছে আপনার।”
“সেই তুমি যাই ভাব না কেন ?আমি ডোন্ট কেয়ার!তুমি নিচে না আসলে আমি উপরে চলে আসবো। এখন তুমি তুমি ডিসাইড করো কি করবে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিচে না আসলে আমি আসতে বাধ্য হবো। বাই।”
নিজের কথা শেষ করে ফোন কেটে দিল আদ্র।হা করে তাকিয়ে আছি ফোনের দিকে।আদ্র কি সত্যি আসবে নাকি আমাকে ভয় দেখাচ্ছে।
চিন্তা ভাবনা করতে লাগলাম।সব সময় এভাবে ধমক দিয়ে রাজি করার।সেদিন ভূত ভয় দেখিয়ে ফোন রিসিভ করালো আজ আবার আরেক কথা না আজ কিছুতেই নিচে যাবনা। তাহলছ নেক্সট ও আর ও অনেক কিছু বলবে। আর আদ্র এগিয়ে আসতে পারবে না আমি সিউর। মুখে বলা আর করা তো এক না। মুখে অনেক বড় বড় কথা বলা যায় কিন্তু করা সহজ না।
আজকে ভয় পাবো না একদম।
নিজেকে শান্ত করে উঠে দাঁড়ালাম তারপর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম সাথে সাথে কল এলো। আদ্রর কল রিসিভ করে কড়ি কিছু কথা শুনাতে হবে তাই রিসিভ করলাম।
“দেখুন আমি নিচে নামবো না। আর আপনার হুমকি ও শুনবো না। সব সময় ভয় দেখাবেন আমাকে ভয় দেখিয়ে এখন আমাকে নিচে নামাতে পারবেন না।আপনি উপরে আসতে পারবেন না। শুধু শুধু ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে।আজকে আমি আপনাকে ভয় পাব না।”
এক দুম এ কথা শেষ করলাম আমি।
“ওকে আসতে হবে না তোমাকে।”
সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিল আদ্র। স্নেহা হতদম্ব হয়ে যায় আদ্রর কথা শুনে এতো সহজে মেনে নিলো। একা স্নেহা আসা করে নি।
সব ভাবনা বাদ দিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আজকে আমাকে ভয় দেখিয়ে কিছু করতে পারবে না এজন্য হয়তো মেনে নিয়েছে।
ওফ কি যে শান্তি লাগছে বলে বুঝাতে পারব না।
আজকে আদ্রর কথায় ভয় নি পেয়ে সাহস দেখিয়ে ছিল ভেবে।
হঠাৎ বারান্দায় লাফিয়ে কারো নামার শব্দ হতেই স্নেহা চমকে উঠে বসে।
বিছানায় থেকে দেখার চেষ্টা করছে বারান্দায় কে আছে এমন শব্দ হলো কেন?
বারান্দায় অন্ধকার।রুম ও হালকা আলো তে বুঝা যাচ্ছে না। স্নেহা হঠাৎ দেখে কারো ছায়া বারান্দায় সে রুমে আসছে এটা দেখেই স্নেহা একটা শুকনো ঢোক গিলে।
আল্লাহ ভূত নয়তো। হাত পা কাঁপছে স্নেহার। গলা দিয়ে আওয়াজ ও বের হচ্ছে না। জোর একটা চিৎকার দিতে যাব হঠাৎ কেউ কানে কাছে করি বলে উঠলো,
“কি ম্যাডাম ভয় পেলেন নাকি।”
কন্ঠ শুনে ই বুঝতে পারলাম এটা আদ্র। সত্যি রুমে চলে এলো। অন্ধকারে আবসা দেখি যাচ্ছে আদ্রর মুখ। আদ্র একদম ওর কানের কাছে গিয়ে কথা বলছে।
ভয়ে স্নেহার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
অবশেষে উনি এসে পরলো কি ডেন্জারাস ব্যাপার?
পাঁচিল টপকে আসলো ভয়ার্ত চোখে অন্ধকারে আবসা আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
সমস্ত কথা আমার গলায় আটকে আছে।
কি শান্তি মতোই না ঘুমাতে গেছিলাম সব শান্তি কেড়ে নিয়ে এখানে এসে হাজির।
অনেক কষ্টে তোতলাতে তোতলাতে বললাম…
“আপনি এখানে কিভাবে এলেন?”
“এটা কোন কঠিন ব্যাপার না আর কঠিন হলেও আসতামই।আদ্রর যা ইচ্ছা তাই করে।”
“তাই সত্যি চলে আসলেন।”
“ইয়েস।কি যেন বলছিলে আমি আসতে পারবো না।এই দেখো আমি চলে এসেছি।”
“কিন্তু কেন আসছেন।”
“তুমি কি ভয় পাচ্ছ।”
“হুম।”
“লাইট জ্বালাও।”
স্নেহা সাথে সাথে উঠে লাইট জ্বালিয়ে দিলো।
আল্লাহ আল্লাহ করে পেছনে তাকালাম আদ্র যেন না থাকে সব যেন আমার মনের ভুল থাকে কিন্তু না কিছু মনে ভুল না সব সত্য।আদ্র আমার খাটে বসে আছে মুখে বাঁকা হাসি।
লোকটা স্মৃতি চলে এসেছে।
কি সাংঘাতিক এমন হবে একটু ভাবিনী।
“কি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?”
‘আপনি এখানে কেন এলেন।”
“তুমি যাও নি দেখে।”
“আমি কেন যাব? আপনি আসলে পাগল হয়ছেন। যান এখানে থেকে চলে যান।”
“চলো তাহলে।”
“আমি আবার কোথায় যাব।”
“সেটা গেলেই দেখতে পাবে চলো। বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে কিন্তু ওরনা ছাড়া খুব হট লাগছে।”
কথা শুনে স্নেহা বড় বড় চোখ করে তাকালাম আদ্রর দিকে। তারপর নিজের দিকে দৌড়ে ওরনা গাঁয়ে জরিয়ে রেগে তাকালাম ওনার দিকে।
“না আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না আপনি একটা ফাজিল লোক এভাবে একটা মেয়ের রুমে ঢুকতে লজ্জ্বা করলো না আপনার।”
আদ্র বিছানায় থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল,
আর বলল….
“না লাগে না।”
“আপনি এদিকে আসছেন কেন।”
“যাবে নাকি।”
“নাকি কি করবেন আপনি।”
“তুমি যদি না যাও আমার সাথে এখন তোমার সাথে কি করবো কল্পনাও করতে পারবেনা।”
বলতে বলতে একদম স্নেহার কাছে এসে দাঁড়ালো।
“সরুন।”
“আগে বলো যাবে।”
“আচ্ছা যাবো।”
আদ্র যাবো শুনে স্নেহার গাল টেনে দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে সরে দাঁড়াল।
আদ্রর ছোঁয়া পেয়ে স্নেহা স্তব্ধ হয়ে আছে।
“এখন ও দাঁড়িয়ে আছো কেন আসো।”
আদ্রর সাথে যেতে লাগলাম।
.
বাসায় নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি আর আদ্র। আমি শুধু ওর দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছি। মন চাইছে খুন করে ফেলতে।
আদ্র আমার হাত ধরে গেটের কাছে এলো তারপর বের হতে লাগলো সাবধানে আমি ভাবছি দারোয়ান কই হঠাৎ ভালো করে তাকিয়ে দেখি দারোয়ান চেয়ার হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
গেটের বাইরে এসে আমার হাত ছেড়ে দিলো। সামনে বাইকে থামানো আছে আদ্রর বসে আমাকে ও বসতো বললো কি আর করার বসলাম বললে ও শুনবে না তাই কথা বাড়ালাম না।
“বাবা কিন্তু বাসায় একা আছে।”
“তারাতাড়ি ফিরবো একঘন্টার ব্যাপার।”
“কোথায় যাচ্ছি।”
কিছু বলল না। আমি প্রশ্ন করে উওরের অপেক্ষা করলাম না বলবে না বুঝলাম। মনে মনে হাজার খানা বাকি দিলাম আদ্রকে।সামনে কিছু বললাম না।
বাইকের স্পিড অনেক মনে হচ্ছে পরে যাবো না চাইতে ও আদ্রর কাঁধে হাত রাখতে হলো।
হঠাৎ বাইকের আয়নায় চোখ পরলো আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রকে ধরে যাচ্ছি এতেই কেমন অসস্থি লাগছে আবার আদ্রর তাকানো দেখে সেটা বেড়ে গেল।
মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। কোথায় যাচ্ছি কিছু জানি না জিজ্ঞেস করলাম বললো ও না। রাগে আমার গা জ্বলছে মন। শেষমেষ ওর সাথে আসতেই হলো। আদ্রকে নিজের রুমে দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছিলাম।
আমার সমস্ত আশা বেস্তে দিয়ে ওনি রুমে চলে গেল। কতো সাহস এনার অত্যাধিক সাহস আগে থেকেই জানতাম কিন্তু তাই মে রুমে চলে যাবে ভাবিনি।
হঠাৎ বাইক থামাতে আমার সমস্ত ভাবনার অবশান হলো আর আদ্রর দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালাম।
“কি নামছো না কেন?”
“এখানে নামবো কেন?”
“নামো।”
অগ্যতা নামতে হলো। হঠাৎ সামনে একটা ছোট দোকান চোখে পরলো লাইট জ্বলছে আমি ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
আদ্র বাইক পার্ক করে আমার হাত ধরে সেই ছোট্ট দোকান টায় নিয়ে গেল আমাকে।
দোকান একটা বয়ষ্ক লোক বসে আছে।
এটা চায়ের দোকান বুঝলাম উনি আমাদের দেখেই হেসে আদ্রকে কেমন আছে জিজ্ঞেস করলো ।
আদ্র উওর দিয়ে নিজে ও জিজ্ঞেস করলো মনে হচ্ছে এরা পূর্ব পরিচিত। আমার সেসবে থেকে ভাবছি এখানে কেন আনলো।
“সাথে ক্যাডা?”
“আমার ফ্রেন্ড চাচা।”
আদ্রর মুখে নিজেকে ফ্রেন্ড পরিচয় করাতে চমকে তাকালাম ওনার দিকে এতে ওনার কোন ভাবান্তর হলো না। বিষ্ময় সাথে হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে।
আদ্র তাকে দুকাপ চা দিতে বলল…
তারপর আমার হাত টেনে নিয়ে পাশের বেঞ্চে বসে পরলো। এখন ও আমি অবাক চাহনীতে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে।
“কি হলো এভাবে ডাইনীর মতো তাকিয়ে আছো কেন?”
সাথে সাথে অবাক চাহনী রাগে পরিনত হলো, দাঁতে দাঁত চেপে বললাম…
“কি বললেন আপনি আমি ডাইনী?”
“যে ভাবে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিলে আমার তো তাই মনে হয়েছিল।”
“তো তাকাবোনা আপনি ওনাকে কি বললেন আমি আপনার ফ্রেন্ড এতো বড় মিথ্যা কথা বললেন কেন?”
‘তো কি বলতাম তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড।”
“আমি সেটা কখন বললাম কিন্তু আমি তো আপনার ফ্রেন্ড না। তাহলে ফ্রেন্ড কেন বললেন।”
“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই বলেছি।”
“আপনার এমন ইচ্ছে কেন হলো কী চান বলুন তো ক্লিয়ার করে।”
“তোমাকে।”
আনমনে কথাটি বলেই আদ্র চমকে উঠলো সাথে স্নেহা ও থমকে গেল।
“কি বললেন?”
“কিছু না।”
“কিন্তু আমি তো শুনলাম…
এর মাঝে চাচা চা নিয়ে এলো আর আমাকে আর আদ্রকে চা দিয়ে গেল। আদ্রকে আর কি জিজ্ঞেস করতে পারলাম না।
ঠান্ডার মধ্যে এই গরম চা পেয়ে সব ভুলে স্নেহা চা তে চুমুক দিলো ।
আড়চোখে সেটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে আদ্র। একটুর জন্য ধরা পরে যাচ্ছিলাম কি বলতে কি বলে ফেলি।
কন্ট্রোল আদ্র কন্ট্রোল।
হঠাৎ স্নেহি থাকাতেই ওদের চোখাচোখি হয়ে যায়।
স্নেহা আদ্রকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
অবাক হয়ে আদ্রর তাকিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইছে।
আদ্র সাথে সাথে ফোন এ মনোযোগ দেয়।
স্নেহা কিছু ক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের খাওয়ায় মন দেয়।
আদ্রর উপর তীব্র রাগ হলেও ভাল লাগছে এই খানে এসে। শীতের মধ্যে গরম চা এমন পরিবেশ সত্যি মন ভাল করার জন্য যথেষ্ট।
আদ্র আমার চরম শত্রু না হলে ওকে বড় একটা ধন্যবাদ দিতাম।
.
আচমকা ঘুম ভেঙে যায় রুনার।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বিছানায় কৌশিক নাই।
উঠে বসে বিছানায় উপর।
কৌশিক কোথায় গেল ভাবছে রুনা বাথরুমের গেল কি।
মেয়ে ঘুমিয়ে আছে তার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে বাথরুমের সামনে যায় লাইট নাই। দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে নাই।
তাহলো হঠাৎ বারান্দায় থেকে মৃদু আওয়াজ কানে ভেসে আসে সেই আওয়াজ শুনে রুনা সেদিকে যায়।
কৌশিক ফোন কানে ধরে কারো সাথে রেগে কথা বলছে। মুখে রাগ স্পস্ট ফুটে উঠেছে।
এমন ভাবে কার সাথে কথা বলছে কে জানে?
ফসা মুখ লাল হয়ে আছে।
কিন্তু একটা ব্যাপার কৌশিক মুখ সাফিয়ে কথা বলছে মানে লুকিয়ে।
ফোনে কথা শেষ করে একটা বকা দিয়ে পেছনে ফিরতে যাবে তার আগেই আমি তারাতাড়ি রুমে চলে এলাম।আর বিছানায় শুয়ে পরলাম। মনে ভেতর সন্দেহের দানা বেঁধে গেল। কার সাথে এভাবে কথা বলছিলো রেগে আবার লুকিয়ে।
কিসের এতো লুকোচুরি।
কৌশিক কে রুমে এসে শুয়ে পরতে দেখলাম আমি চোখ হালকা খুলে রেখেছিলাম।
🍁
সকালে বাবুর কান্নায় ঘুম ভেঙে গেল।
উঠে রায়াকে করে নেওয়ার আগেই কৌশিক ওকে কোলে নিলো।
কতো দিন পর মেয়েকে কোলে নিলো কৌশিক রায়ার কান্না থামাতে চেষ্টা করেছে পারছেনা।
তাই বাধ্য হয়ে আমি নিজে কোলে নিলাম সাথে সাথে থেমে গেল।
কৌশিক তীক্ষ্ণ চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আয়নার গিয়ে রেডি হতে লাগল।
রায়াকে কৌশিক একদম ই সময় দেয় না এজন্য এখন কৌশিকের কোলে ও কম যায়।
রানী ও উঠে গেছে ওর কাছে রায়াকে দিয়ে হালকা ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গেলাম।
তারাতাড়ি করে রুটি বেলতে লাগলাম।রুটি ভাজছি।
আধা ঘন্টায় রান্না শেষ করে রুমে এসে দেখলাম কৌশিক দেখি হয়ে সব ফাইল নিয়ে চলে যাচ্ছে।
“খাবে না।”
কৌশিক একবার আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেল।
চলবে♥️
® তানজিনা আক্তার মিষ্টি
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ২৯
কৌশিক নিজের ড্রেক্সে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
এমন সময় ম্যানেজার হাসিব এলো ওর কাছে। আর এসে একবার কৌশিক কে ভালো করে দেখে বলল..
“কৌশিক তোমাকে ম্যাডাম ডেকেছে।”
ম্যাডাম ডেকেছে শুনেই চমকে উঠে কৌশিক। ঘামতে থাকে এসি রুমে ও।
“কি হলো কৌশিক তুমি ঠিক আছো তো?”
নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথা নেড়ে সায় জানায়।
হাসিব কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
কৌশিক পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে উঠে দাঁড়ায়।
“মে আই কাম ইন?”
হাতের ইশারায় যেতে বলে।
কৌশিক ধীর পায়ে রুমে ঢুকে সামনে একটা অতি সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। তার পরনে প্যান্ট ও শার্ট চুল জুটি করা ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক। এই অফিসটা তার বাবার ছয়মাস যাবত সে অফিসে বসেছে। আর তার পর থেকেই কৌশিক কে জ্বালিয়ে খাচ্ছে।
🍁
মেয়েটার নাম ঐশী। বাবার মায়ের একমাত্র মেয়ে। যে প্রথম দেখায় কৌশিক কের প্রেমে পরেছে।
তারপর থেকে আঠার মত লেগে থাকে। কৌশিক কে বারবার নিজের মনে কথা বুঝাতে চায়। কিন্তু কৌশিকের থেকে কোনো রেসপন্স পায় না। আর
তারপর একদিন প্রপোজ করে বসে।এমন করতে হবে ঐশী কখনো ভাবে নি। ও যথেষ্ট সুন্দরী স্মার্ট টাকা আছে। কিন্তু কৌশিকের প্রেমে পাগল হয়ে মনের কথা জানিয়ে দেয়। সেদিন কৌশিক থেকে বড় আঘাত পায় থাপ্পর সাথে কৌশিক বিবাহিত।
বড় একটা ধাক্কা খায় কৌশিক বিবাহিত শুনে। কৌশিকের থেকে সরে আসতে চায়। এজন্য অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বিজনেসের ক্ষতি হবে ভেবে এক সপ্তাহ পর আবার অফিসে যাওয়ার শুরু করে।
কৌশিকের থেকে দূরে থাকতে থাকে কিন্তু পারেনা।আবার ওর প্রতি টান অনুভব করে।আর মনে জেদ চাপে কৌশিক ওকে চল মেরেছিল সেটা ভেবে। আর একটা ব্যাপার ওকে আঘাত করে বিন্দুমাত্র অনুসোচনা দেখে না কৌশিকের মাঝে সে দিব্যি নিজের হেসে খেলে আছে এসব দেখে ও গা জ্বলে ওঠে।
আমি কিনা কষ্ট ধুঁকে ধুঁকে মরছি আর এনি আনন্দ আছে তখন আবার কৌশিক কে পাওয়ার জেদ মাথায় চাপে।
আবার পেছনে লাগে কিন্তু কৌশিক ওর দিকে ফিরে ও তাকায় না এসব সহ্য করতে না পেরে কৌশিক কে ট্রাপে ফেলে বিয়ে করার জন্য বাধ্য করে। কিছু আপত্তিকর ছবি দেখিয়ে যাতে বুঝা যায় কৌশিকের সাথে ঐশীর গভীর সম্পর্ক আছে। কিন্তু কৌশিক সঙ্গানে কিছু করে নি একদিন কফির একটা পার্টিতে ও কলিগদের সাথে ড্রিংক করে ফেলেছিল ঐশী বলছে সেদিনই নাকি আমি।
এসব বলে আর ছবি দেখিয়ে ঐশী কৌশিক কে ওকে বিয়ে করতে বলেছে নি হলে এই ছবি গুলো রুনাকে দেখাবে আর ওকে জেলের ভাত খাওয়াবে বলেছে। এজন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে এর মাঝে তিনদিন চলে ও গেছে।
🍁
কৌশিকের দিকে তাকিয়ে ঐশী শয়তানী হাসি দেয়। কৌশিক সেদিন রেগে তাকিয়ে থাকে।
“তা কি ড্রিসিশন নিলে। সময় তো ফুরিয়ে এলো।”
কৌশিক কিছু বলছে না।ওর এই মেয়েটাকে দেখলে খুন করতে ইচ্ছে হয়।
কৌশিক কিছু বলছে না দেখে ঐশী উঠে কৌশিকের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর ওকে জরিয়ে ধরে।
সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় নিজের থেকে।
“আমার থেকে দূরে থাকুন।”
“উফ সুইটহার্ট এভাবে বলতে নেই। কয় দিন পর থেকে তো এভাবেই সারাদিন জরিয়ে থাকতে হবে।”
“প্রতি উওরে কিছু বলল না কৌশিক ওর কিছু বলার নেই। কিছু বললে ই ওই ছবি গুলো রুনার কাছে যাবে না কিছু ভাবতে পারছি না।”
“চলো।”
বলেই এগুতে লাগলো ঐশী।
এবার কৌশিক বলে,,
“কোথায় যাবো।”
ঐশী পেছনে ঘুরে বলে…” শপিং এ।”
” কিসের শপিং।”
“বিয়ের।”
“মানে।”
“তিনদিন পর তোমার আর আমার বিয়ে সেটাকি ভুলে গেছ। সেজন্য শপিং করতে হবে তো এজন্য ভেবেছি এখন যাব।”
বলেই কৌশিক কে রেখে চলে গেল। কৌশিক সেদিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
এই মেয়ে টাকে ও কিছু তেই বিয়ে করবে না। কিন্তু আটকাবো কিভাবে?
এখন না গেলে আর ও সিন্কিয়েট করবে তার থেকে যাই।
ওই ক্লাবে গিয়ে দেখতে হবে সত্যি কি ঐশীর সাথে কিছু ঘটেছিল।
গাড়িতে বসে আছে কৌশিক ওর পাশে ড্রাইভিং সিটে ঐশী ড্রাইভ করছে। বিরক্ত আর অসস্থি নিয়ে পাশে বসে আছে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠল তাকিয়ে দেখী রুনার নাম্বার। কলের শব্দে ঐশী ও তাকিয়েছে ফোনের দিকে।
“উফ দুজনে একটু একা আছি এখনই এই সতীন জন্জালটার কল করতে হলো।”
রেগে তাকালো ঐশীর দিকে কৌশিক।
“ভয় পেয়েছি এভাবে তাকাও কেন?”
ভয় পাওয়ার ভঙ্গি করে বললো ঐশী।
“হা হাহা এটাই বলল ভেবেছো তাই তো কিন্তু সুইটহার্ট এইটা তো আমি বলবো না। তোমার ওই মিডেলক্লাস বউকে তোমার ডির্বোস দিতেই হবে।”
কৌশিক সেদিন কান না দিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো।
ওপাশ থেকে,,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
“কি করছো?”
“কিছু না।”
“বাসায় আসতে কয়টা বাজবে।”
“জানিনা।”
“আগে আসতে পারলে চিনি নিয়ে এসো শেষ হয়ে গেছে।”
“আচ্ছা। বাবু কাঁদছে কেন?”
“খিদে পেয়েছে নিচে থেকে চিনি নিয়ে এলাম শেষ হয়েছে খেয়াল ছিলো না।”
আর কিছু বলল না কৌশিক ফোন কেটে রেখে দিলো।
ঐশী তীক্ষ্ণ নজরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কৌশিক সেদিন খেয়াল দিলো না।
❤️
আদ্রর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করেছে বসে বসে স্নেহা। রাগে ওর আদ্রর মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে।
কাল রাতে তীব্র রাগ নিয়ে আদ্রর সাথে গেল ও পরিবেশ টা আমার পছন্দ হয়েছিল কিন্তু কি হলো আদ্রকে সেই জ্বালালো।
এমন কিছু হবে আমি খুব ভাল করেই জানতাম তবুও ওই বেয়াদব টাকে একটু জন্য ভালো লেগেছিল আর সাথে সাথে কিনা আমার সমস্ত আনন্দ মাটি করে দিলো।
কাল রাতে
আমি আরামছে কফি খাচ্ছি আর চারপাশের নিস্তব্ধতা অপভোগ করছি হঠাৎ আমার আদ্রর দিকে চোখ যায়। ও কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি তাকাতেই ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠল তারপরে কিছু বোঝার আগেই আমার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলো কফি শেষ হয়েছিলো না হলে আমার শরীরে পরতো।
আচমকা ঘটনায় আমি হতদম্ব হয়ে গেছি কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। হঠাৎ ঠাস ঠাস শব্দ তাকিয়ে দেখি আদ্র ফটাফট কয়েকটি ছবি তুলে নিয়েছে ।
তারপর আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি হাঁ করে কিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলাম,,
” কি করলেন এটা?”
“পিকচার নিলাম।”
“তা তো বুঝলাম কিন্তু কেন?”
“আমার একটা অভ্যাস আছে।”
“কি?”
ভ্রু নাচিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“বন্ধু শত্রু হোক আর সব পরিস্থিতি তে পিকচার নেওয়া।”
“এটা আবার কেমন অভ্যাস। আর যেমনই হোক আমার সাথে নিলেন কেন? আমি আপনার কি বন্ধু না…
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে…
“বন্ধু না তুমি আমার বন্ধু কখনো হতে পারবে না।”
“তাহলে শত্রু এটাই ঠিক আছে আর আপনার মতো হনুমান কে আমি আমার বন্ধু কখনো বানাবো না।”
“আমি হব ও না।’
“আমি হতে দিলে তো হবেন।”
“আমি তো হতেই চাইনা তুমি দিলেই কি?”
বিরবির করে বলে … “আমি তো অন্য কিছু হতে চাই।”
বিরতির কথা ও আমার কানে কিছু টা আসে।
“কি বললেন?”
“কিছু না। চলো।”
তারপর দুজনে বাইকে উঠে বসি।
বাইকে থেকে নেমে গেট দিয়ে ঢুকতে যাব পেছনে থেকে আদ্র আটকে ধরে।
“কি হলো? আবার আমার সাথে ঘেসেছেন কেন?ছারুন হাত আর কতো জ্বালাবেন?”
“চুপ।”
“আবার চুপ করতে বলছেন আপনি খারাপ কিছু করতে চাইছেন না তো?”
সন্দেহ চোখে তাকিয়ে।
“চুপপপ স্টপিট গার্ল। ওই দেখ ।”
বলেই দারোয়ানকে ইশারায় দেখায়।
আমি দেখেই ভয়ে কাঁপতে থাকি আল্লাহ দারোয়ান জেগে গেছে এখন কি হবে। ভিতরে ঢুকবো কি করে।
ফিসফিসিয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করি,,
“এখন ভেতরে যাবো কেমনে?”
“সেটা তোমার ভাবতে হবে না উনি এখনি চলে যাবে।”
“আপনি জানলেন কি করে?”
অবাক হয়ে।
আদ্র কিছু টা থতমত খেয়ে যায় কথাটা শুনে।
“কি হলো বলেন?”
“এটা না বুঝার কি আছে আমি কি তোমার মতো গাধা নাকি। এখন ওনার টয়লেট এও তো যেতে হতে পারে।”
কথাটা বিশ্বাস করলাম।
“তা ঠিক আছে এর জন্য আপনি আমাকে গাধা কেন বললেন।”
“ওই চলে গেছে যাবে নাকি আমার সাথে ঝগড়া করবে।”
কটমট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে চলে আসতে নিলাম।
সত্যি চলে গেল সুযোগ বুঝে আমি ও চলে এলাম।
সকালেই ওনার ফোন কলের জেগে গেলাম। রাগ মিশ্রিত চোখ ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোন কেটে দিলাম।পরপর কল চার এলো আমি চার বারই কেটে দিলাম।
এর ফোন আর রিসিভ করুম না যা খুশি পারুক করুক।
সাথে সাথে মেসেজ হলো।
“তারাতাড়ি কল রিসিভ করো না হলে আমি বাসায় চলে আসবো।”
সাথে ভয় পেলাম কাল যে ঘটনা ঘটলো আসা টা অস্বাভাবিক না। তাই ফোন রিসিভ করলাম।
” নয়টা মাঝে গেটের বাইরে আসো আমি আসছি।”
“মানে আসছেন মানে কি? কোথায় আসছেন?”
“তোমার বাসায়।”
“কিন্তু কেন ফোন তো রিসিভ করছি।”
“হ্যা করেছো কিন্তু লেট করে।”
“প্লিজ আসবেন না। আমার বিপদ হবে।”
“আমি তো আসবোই যদি তুমি নিচে না আসো ঠিক মতো।”
“নিচে আসবো মানে ভার্সিটিতে যাব না।”
“না আমার সাথে যাবে।”
“কোথায়? আর কেন দেখুন এমন করছেন কেন?”
“রাখছি ঠিক নয়টায় নিচে থাকবা।”
বলেই কেটে দিলো। পাগল করে দিবে উফ।
উঠে হালকা ফ্রেশ হয়ে। রান্নাঘরে গেলাম।
এর মাঝে কলিং বেল বাজলো খুলে দেখি রানী আর রায়া।
“কিরে এতো সকালে।
কোন দরকার।”
“হ”
“কি?”
বলেই রায়াকে কোলে নিয়ে ভেতরে এলাম।রানী বলল চিনি লাগবে কৌটা খুঁটে একটু পেলাম পুরোটাই দিয়ে দিলাম। হবে কিনা জানি না এখানে এসে আধা কেজি চিনি কিনেছিলাম। একটু আধটু চা খাওয়ার জন্য।
ভয়ে ভয়ে নয়টায়ই নিচে নামলাম।আর এসে দেখি শয়তান আদ্রটা গেটের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে বাইক নিয়ে। হাতে সিগারেট আমাকে দেখেই সিগারেট ফেলে একটা হাসি দিলো তারপর বাইকে উঠে বসে আমাকে ও উঠতে বলল।
“কি হলো?”
“উঠবো না।”
“কেন?”
“উঠবো কেন সেটা বলেন।”
“প্রেম করতে যাবার জন্য।”
“কিহহ?”
“এমনটাই তো তুমি ভাব কিন্তু এমন কিছু না। তোমাকে দিয়ে একটা কাজ করাবো।”
“কি আমি কিছু করতে পারবো না।”
“করতে হবে । ”
“করবো না।”
“করবে।”
“না বলছি।”
“তুমি কি চাও এখানে সিন্কিয়েট করি।”
“নাহ।”
“তাহলে চলো।”
“অসহ্য।”
গাল ফুলিয়ে উঠে বসলো।
আদ্র স্নেহাকে শপিং মলে নিয়ে এলো।
“এখানে কেন?”
“এখানেই তো সব কাজ।”
“কি কাজ বলুন তো।”
“আমাকে একটা শাড়ি চয়েজ করে দিতে হবে তোমায়।”
“অসম্ভব আমি পারবো না।”
“প্লিজ। আমি মেয়েলি জিনিস কখনো কিনিনি। এজন্য একটু হেল্প করো।”
“আমি কেন আপনি আপনার ফ্রেন্ড দের নিয়ে আসতেন। আপনি আমার সব সময় ভয়ে রাখছে আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনাকে হেল্প করবো।”
“দেখো কাল আমার আম্মুর জন্মদিন। আম্মু গিফট করতে চাই আর তুমি আমাকে পছন্দ করো নি কিন্তু এটা তো আমার না তাই হেল্প তো করতেই পারো তাই না।”
মায়ের কথা শুনে স্নেহা রাজি হলো। কিন্তু ভাবছে ওনার তো মেয়ে ফ্রেন্ড আছে তাহলে তাদের রেখে আমাকে কেন?
“আচ্ছা আপনার মেয়ে ফ্রেন্ড দের রেখে আমাকে কেন আনলেন।”
আদ্রর স্নেহার দিকে তাকিয়ে রহশ্যময়ী হাসি দেয়।
“কি হলো হাসছেন কেন?”
“তোমাকে জ্বালাতে।”
“আপনি আসলেই খুব খারাপ।”
মার্কেটের বুকে শাড়ির দোকানে যায় ওরা। আদ্রর থেকে জেনে নেয় সে কেমন শাড়ি পরে তারপর একটা বেগুনির কালারের শাড়ি চয়েজ করে।
আদ্র বিল দিতে চলে যায় স্নেহা চারদিকে তাকিয়ে দেখছে হঠাৎ একটা রানী গোলাপি রঙের শাড়ির উপর চোখ যায়।
ও এগিয়ে শাড়ি টা হাত দিয়ে দেখে ওর খুব পছন্দ হয় শাড়িটা। শাড়িটা নিয়ে নিজের গায়ে দিয়ে দেখতে যাবে হঠাৎ একটা প্যান্ট শার্ট পরিহিত মেয়ে টেনে নিয়ে নেয়।
তারপর বলতে লাগে
“ওয়াও সো সুইট।”
বলছি নিজের গায়ে নিয়ে দেখতে লাগে আর পাশে দাঁড়ানো একটা ফর্সা লম্বা ছেলে কে বলে।
“কৌশিক দেখো শাড়িটা আমাকে ভালো লাগছে তাইনা।”
এভাবে কথা বলতে থাকে। কিন্তু ছেলেটাকে নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।
আমি সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে চলে যাই।এই শাড়ি নেওয়ার সামর্থ্য ও আমার নাই। কিন্তু তবুও কষ্ট এভাবে কেরে নেওয়াতে।
মনে হলো আমার সামর্থ্য নেই সেটাই বুঝিয়ে দিলো এইভাবে,,,
~স্নেহা এসব ধরো না তোমার টাকা নেই এইসব ওই মেয়েদের জন্য। যার টাকা আছে তাদের জন্য।
তুমি ধরে খুব ভুল করেছো খুব।~
না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি পরলো এক ফোঁটা।
এদিকে আদ্র বিল প্রে করে এসে দেখে স্নেহা একটা শাড়ি গায়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ওকে অপূর্ব সুন্দর লাগছে দেখতে।ও হাঁ করে তাকিয়ে আছে আর ওর ভালোবাসার মানুষ টাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। আর হাজারো কল্পনা বুনছে। এই শাড়ি পরে খুব সুন্দর করে সেজে ওকে দেখিযচ্ছে এসব। হঠাৎ একটা অসভ্য মেয়ে এসে ওর সব কল্পনা জল্পনা ভেঙে শাড়ি টা কেড়ে নেয় তা দেখে ওর চোখ দুটো লাল হয়ে উঠে।
স্নেহা কে মন খারাপ করে চলে যেতে দেখে ও তাদের কাছে আসে আর একই ভাবে শাড়িটা ছিনিয়ে নেয়।
ঐশী তীক্ষ্ণ চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,
“হো আর ইউ? এভাবে শাড়িটা আমার কাছ থেকে নিলে কেন?”
“এইটা আমি নেব আপনি অন্যটা নেন।”
“অসম্ভব আমি এইটা পছন্দ করেছি আপনার আগে তাই এটা আমি নেব।”
“নো আপনি আগে করেনি নি। অন্য জন করেছে। তার কাছ থেকে অভদ্রের মতো কেড়ে নিয়েছিলেন। সো এটা আপনার আমার আগে পছন্দ করেছো সেই তাই শাড়িটা সেই নেবে।”
“কই সে সে তো চলে গেছে তাহলে তুমি ঝামেলা করছো কেন?”
“কারন শাড়িটা আমি নেব তার জন্য।”
“হোয়াট, সে আপনার কি তার জন্য ঝগড়া করছে কেন?”
“হে আমার আত্মা। আমার ভালোবাসা আপনি তাকে কষ্ট দিয়েছেন। তবুও কিছু বলছি না যান অন্যটা নেন এটা আপনি পাবেন না।”
বলেই শাড়িটা নিয়ে চলে গেল আদ্র।
রাগে ফুস ফুস করছে পেছনে থেকে ঐশী।
“ছেলেটা আমাকে অপমান করে শাড়ি টা নিয়ে গেল কিছু বললেনা কেন? ছেলেটা মেয়েটার জন্য এতো কিছু বলল আমাকে আর তুমি কিছু বলতে পারলে না।”
বলেই রেগে তাকালো কৌশিকের দিকে।
“কি হলো বোবা হলে নাকি এক কথায় উত্তর দেওয়া যায় না।”
“ছেলেটা মেয়েটাকে ভালোবাসে তাই এতসব করলো। আর আমি আপনাকে ভালোবাসা তো দূরে ঘৃণা করি।
জাস্ট আই হেট ইউ।”
কথাটা শুনে আগুন চোখে তাকালো যেন চোখ দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলবে কৌশিক কে।
কৌশিকের সেদিকে খেয়াল নেই ও ওর মতো নিরব হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে♥️
® তানজিনা আক্তার মিষ্টি
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)