#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ২২
স্নেহা সিটকে দূরে সরে দাড়ালো। এতক্ষণ কি করছিল ভেবেই ওর মাথা কাটা যাচ্ছে। ছিঃ লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারছে না ভয় এতটাই পেয়েছিল যে কি করছিল নিজেই বুঝতে পারে নাই। নিজের ওপরই নিজে রাগ উঠছে।
আমি ওনাকে কিভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলাম।
উনি আমাকে কি ভাবছে নিশ্চয়ই গায়ে পরা মেয়ে ভাবছে। কিন্তু আমি তো সত্যি খুব বেশি ভয় পেয়েছিলাম। ভয়ে কি করেছি বুঝতে পারি নাই।
আড়চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি আদ্র বিরক্ত নিয়ে ফোনে কথা বলছে।
কথা শেষ হতেই আমার দিকে রাগে চোখে তাকালো।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,” সরি আসলে আমার ভূতে খুব ভয়। একটু আগে একটা ভূত আমার পেছনে ছিল খুব ভয় পেয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ আপনাকে দেখি আমি কি করেছি নিজেই বুঝতে পারিনি। আপনি আমাকে খারাপ ভাববেন না প্লিজ।”
“হোয়াট ? ভূত!আর ইউ ম্যাড, ভূত বলতে কিছু আছে নাকি। এসব কেউ বিশ্বাস করে মাথামোটা একটা।”
“দেখুন একদম আমাকে অপমান করবেন না। আমি সত্যি ভূত দেখেছি।আমার জায়গায় আপনি থাকলে বুঝতে পারতেন কতটা ভয়ঙ্কর সে।”
“ভয়ঙ্কর! আচ্ছা কেমন ভয়ঙ্কর তুমি তাকে দেখেছ?”
‘হ্যাঁ দেখেছি সে একদম কুচকুচে কালো দাগগুলো বাষড় বড় সাদা চুল লম্বা তারপর চোখগুলো ইয়া বড় বড় তারপর,,,
“হোয়াট?’
চিৎকার করে কথাটা বলে,
স্নেহার কথা শুনে আদ্র রেগে ওর সামনে এসে দাড়ালো।
আদ্র চিৎকার শুনে স্নেহা ভয় পেয়ে গেল। কথা ও থেমে গেল। আচমকা সামনে আসতেই দুই পা পিছিয়ে গেল।
“কি বললে তুমি?”
“কি বললাম?”
আচমকা প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল স্নেহা।এমন করছে কেন?
“আমি কাজ করছি কাল আমার দাঁত গুলো বড় বড় সাদা আর কী যেন বললে?”
“এমা কি বলছেন আমি আপনাকে এসব কখন বললাম আমি তো ওই ভূত টার কথা বলছি। যে আমার পিছনে আসছিল।”
“স্টপ ইট! তোমার পিছনে আমি ছিলাম। তুমি আমাকে এসব বললা। কোন দিক দিয়ে আমি ওরকম তুমি যে আমার এরকম একটা বর্ণনা দিলে।”
“কি আপনি আমার পিছনে ছিলেন?”
“হ্যাঁ।”
রাগের মাথায় আদ্র সব সত্যি কথা বলে দেয়। সব শুনে তো স্নেহা রাগে ফেটে পরে। সব বলার পরে আদ্র নিজেই বোকা বনে যায়। স্নেহা ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“তারমানে আপনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন। ইচ্ছে করে?”
আদ্র চুপ করে আছে।
“আপনি জানেন আমি কত ভয় পেয়েছিলাম। এইভাবে আপনি আমাকে ভয় দেখালেন কেন?”
“আমার কথা অমান্য করার শাস্তি। ভয়ে তো ভার্সিটিতে যাও নাই কিন্তু আমার হাত থেকে তো বাচতে পারলে না। সে আমার সামনে পরলে। তার আগে বল তুমি যে ভূতের বর্ণনাটা দিচ্ছিলে সেটা কোথায় থেকে দিলে।”
“কোথায় থেকে আবার দেবো আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি।”
“বানিয়ে বানিয়ে বলছ!”
“বানিয়ে ই তো বললো।যখন আমি বুঝতে পারলাম আমার পেছনে কেউ আসছে আর আমি তার ছাড়া দেখলাম তখন আমি বুঝতে পারলাম এটা কোন একটা ভূত হবে। আমি কল্পনা করে নিলাম ভূতটা দেখতে কেমন হবে।”
স্নেহার কথা শুনে আদ্র হতবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো এভাবে চুপ হয়ে গেলেন যে। আর আপনি জানলেন কিভাবে আমি এখানে আছি।”
“ম্যাজিক।”
“কিসের ম্যাজিক?”
ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো স্নেহা।
“তা তোমার জানতে হবে না। আমার কাজটা শেষ আসি আমি কেমন। বাই!”
বলেই আদ্রর এগোতে লাগলো।
আদ্রকে যেতে দেখে স্নেহা ওর সাথে হাঁটতে লাগে।
“প্লিজ আমাকে একা রেখে যাবেন না এখানে।আমার খুব ভয় করছে আমি জানি ভূতটা আপনি ছিলেন কিন্তু তবুও ভয় পাচ্ছি। অন্ধকারে ভয় পায় এমনিতে।”
“সো হোয়াট!”
“আপনি যদি আমার সাথে যেতেন। সামনে আলো দেখা যাচ্ছে ওই পর্যন্ত গেলেই হবে।”
“আমি তোমাকে হেল্প করতে যাব কেন? হোয়াই?”
“প্লিজ আপনি তো আমার বড় ভাইয়ের মত ছোট বোন ভেবে একটু হেল্প করুন।”
বড় ভাইয়ের মত কথাটা শুনে আদ্রর ফুঁসে উঠলো,,
“কি বললে তুমি আমি তোমার বড় ভাইয়ের মতো?”
রেগে চিৎকার করে কথাটা বলল আদ্র।
চিৎকার করে কথা বলা শুনে ভয় পেয়ে গেল স্নেহা। এই লোকটাকেও কখনোই পছন্দ করেনা।প্রথম দিন থেকে সব সময় ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। আজকেও এর জন্য আমি কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম। সেসব নিয়ে এখন ঝগড়া করলে হিতে বিপরীত হবে এমনিতে জায়গাটা ভয়ঙ্কর।প্রথমবার না হয় সে ভূত হয়ে এসেছিল এবার যদি সত্যি সত্যি ভূত আসে তাহলে কি হবে?
ভাবতেই স্নেহার সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠলো ভয়ে।
“কি হলো চিৎকার করছেন কেন? আমি তো খারাপ কিছু বলি নাই। ভালো কথাই তো বললাম।”
“আরেকটা কথা বললে তোমাকে কিন্তু আমি খুন করে ফেলবো। আর কোনদিন আমাকে ভাই বলবে না ক্লিয়ার আমি তোমার ভাই না আর ভাই হতেও চায় না।”
তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে স্নেহা আদ্রর দিকে।আদ্র রাগের কারণটা বুঝতে পারছে না। সামান্য ভাই বলাতে এত রাগের কি আছে ?
“আপনাকে আমার ভাই বলতে বয়েই গেছে।না বললাম ভাই আপনি তো এটা হনুমান আপনি আমার ভাই হতে যাবেন কেন?”
“ইউ,”
“দেখুন প্লিজ আর ঝগড়া করবেন না। কত রাত হয়ে গেল বাসায় ফিরতে হবে।”
আদ্র একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে সোজা হাটা ধরল। আমিও তার সাথে সাথে হাটতে লাগলাম। আলোর কাছে আসতে নিশ্চিন্ত হলাম। কিন্তু দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না আবার যদি সামনে অন্ধকার থাকে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্নেহা হাটতে লাগল।
আদ্রর বাইক সামনে ছিল ওর বাইকের কাছে গেল। একটু পরে আদ্র বাইক নিয়ে আমার সামনে থামল।
আমি ব্রু কুচকে আদ্র দিকে তাকিয়ে আছে।
আদ্র যাচ্ছে না আমি যেতে পারছিনা। আমার সামনে দাড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে।
কিছু বলতে যাব তার আগে আদ্র বিরক্ত মাখা মুখ করে চেয়ে বলল,
“কি হলো উঠছো না কেনো সারাদিন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি বাসায় যাবে না।এই না তোমার বাসায় তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার।”
প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলল তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
“হ্যাঁ কিন্তু
“উঠলেও উঠো না হলে চলে গেলাম। সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না।”
“দরকার নাই আমি যেতে পারবো।”
“সামনে কিন্তু আরও অন্ধকার রাস্তা আছে সব জায়গায় তো তোমার জন্য আলো জ্বালিয়ে রাখে নাই রাস্তায়। তখন সত্যি ভূত আসলেও আসতে পারে আমি তো আর সব সময় তোমার সাথে মজা করতে আসবো না।”
আদ্রর কথা শুনে স্নেহার গলা শুকিয়ে এলো।সাহস করে যে বলবে কিছু তার আগে কুকুরটা ডাক কানে এলো স্নেহা আরো ভয় পেয়ে গেল । সব সাহস শূন্য হয়ে গেল। আর কিছু না বলে আদ্র ওর পেছনে উঠে বসলো।
স্নেহার উপস্থিতি টের পেয়ে আদ্রর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। ও জানতো ও আবার এই কথা বললে স্নেহা ভয় পাওয়া শুরু করবে আর এই কাজটা করবে।
“কি হলো উঠে এলে যে তুমি না বললে দরকার নাই একাই যেতে পারবে।”
“হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু এখন মনে হলো রাতে একা না যাওয়াটাই ভালো আপনি যেহেতু তো আছেন। আপনার সাথেই যাই।”
“প্রথমে ভাব না ধরলে তখন তোমার ভাল লাগেনা । সেই কাজটা করবে কিন্তু গুড়িয়ে পেঁচিয়ে।”
দাঁতে দাঁত চেপে স্নেহা আদ্রর কথা সহ্য করছে।
বাসায় আসতে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল স্নেহা।কত লেট হয়ে গেছে বাসায় এসে রুমে রানি কে পেলাম চাবিটা রুনা আপুর কাছে দিয়ে গেছিলাম দরকার হয় এসে দেখে যায়।
আমার লেট হয়েছে বলে রানিকে পাঠিয়ে দিয়েছে।আপু আছে বলে নিশ্চিন্তে বাইরে থাকা যায় না থাকলে কি হত।
রুমে আসতেই ফোন বেজে উঠল জানি কে ফোন দিয়েছে।বাইক থেকে নামতেই আদ্রর চিৎকার করে বলেছে এখনই ফোন দিবে। ফোন রিসিভ না করলে নাকি রুমে চলে আসবে।
সাহসিকতা দেখাতেই গেলাম না করে খট ফোন রিসিভ করলাম।
সত্যি যদি চলে আসে।
গুড ভেরি গুড। আচ্ছা কি করছো?
এইটা জিজ্ঞেস করার জন্য ফোন দিয়েছেন?
হ্যাঁ এনি প্রবলেম।
অবশ্যই প্রবলেম।এখন আমি কি করতে পারি কেবল রুমে আসলাম দাঁড়াতেও পারি নাই আপনার ফোন চলে এসেছে।বলুন কি বলবেন নিশ্চয়ই কোন দরকারি কথা বলবেন যার জন্য ফোন ধরা নিয়ে এত নাচানাচি করেছেন।
অবশ্যই তো দরকারি কথা জিজ্ঞেস করলাম কি করছো এটা কি তোমার কাছে কম ইম্পর্টেন্ট মনে হচ্ছে।
আপনি আসলে একটা পাগল আপনার মাথায় প্রবলেম হয়েছে বুঝছেন মাথার ডাক্তার দেখান।
আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসো তারপরে কথা বলি কেমন বাই।
অসম্ভব আর কথা বলব না ফোন দিবেন না আর।
তা বললে তো হবে না ফোন অবশ্যই দেবো আরেকটু পরেই দেব রাখি।
এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম আমার সাথে এমন করছে কেন আদ্র।
উফ যন্ত্রণা।
ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার গরম করলাম দুপুরে রান্না করে গেছিলাম।গরম করে বাবাকে খাইয়া ওষুধ খাইয়ে দিলাম। রানী চলে গেছে আমি আসার সাথে সাথে।
রুমে এসে দেখলাম দশটা বেজে গেছে। ফোন হাতে নিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া বিশ মিসকল সবগুলো আদ্র নাম্বার থেকে।
40 মিনিটে কেউ এতবার ফোন দেয়।
সাথে সাথে আবার ফোন বাজলো তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে কানে নিলাম।
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কি হয়েছে এত বার ফোন দিচ্ছেন কেন?”
“কোথায় ছিলে তুমি তুমি জাননা ফোন দিব।”
“তো আমি কি করবো? আপনি ফোন দিবেন বলে কি আমি খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে ফোন নিয়ে বসে থাকবো।”
“দরকার হলে থাকবে আচ্ছা তুমি কি খেতে গিয়েছিলে?”
“ইশ শখ কত কে আপনি আপনার ফোনের জন্য বসে থাকবো। সত্যি করে বলেন তো ফোন দিছেন কেন ক্লিয়ার করে সব বলুন।”
“কেউ না কিন্তু হতে কতক্ষণ! কি বলব আমি তো এমনি ফোন দিছি।”
“হোয়াট এমনি কেউ এতবার ফোন দেয়।”
“কেউ দেয় না আমি দেয়।”
“আপনার কি হয়েছে বলুন তো?”
‘আচ্ছা গুড নাইট। ঘুমা ও তাতাড়ি অনেক রাত হয়েছে।”
“আরে বলোন না তোমার কেন ফোন দিলে আরে শুনেন না।”
“কাজ হলো না ফোন কেটে গেছে।”
ঘুম থেকে আমি এমনিতেই সব সময় সকাল উঠি। কিন্তু আজ কে ফোনের শব্দে উঠলাম।
এই সাত সকালে আবার কে ফোন দিল ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে ভাবলাম হয়ত অন্তরা।
“হ্যাঁ অন্তরা বল তো সকালে ফোন দিছিস কেন?”
“আমি অন্তরায় নয় কথা ঠিকভাবে বল।”
কন্ঠ শুনে আমার ঘুম ছুটে গেল তাড়াতাড়ি নাম্বার দিকে তাকিয়ে দেখে আদ্রর নাম্বার আবার সকাল বেলা ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করা শুরু করেছে।
এ আমারে পাগল করে ছাড়বে।
“আপনার কি মতলব বলুন তো আপনি কি আমারে ফোন দিয়া পাগল করার চিন্তা-ভাবনা করছেন নাকি?”
“করছিলাম না কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেইটাই করতে হবে।”
“হোয়াট?”
“গুড মর্নিং এটা বলার জন্য ফোন দিছিলাম।”
“আপনার গুড মর্নিং এর গুষ্টি কিলায় আপনি আমাকে আর ফোন দিবেন না।”
“সেটা পরে দেখা যাবে। এখন ওঠো তাড়াতাড়ি। আজকে ভার্সিটিতে আগে এস।”
“কেন আগে আসবে কেন আজকে আবার কি?”
‘কিছুই না কালকে আসো নাই এজন্য আগে আসতে বললাম।”
দুরছাই মাথ আমার আইলো গেল কোথায় থেকে কোথায় যান আপনি।
ভার্সিটি এসে আদ্র খুঁজছি। কাল রাত থেকে ফোন দিয়ে আমাকে পাগল করে ছেড়েছে। ভেবেছিলাম ফোনে কিছু জরুরী কথা বলবে। কিন্তু তারা তো কিছু বললিনা উল্টো উল্টাপাল্টা কি সব বলে আর ফোন করে ফোন কেটে দেয়। কিছুই বুঝতে পারি না।
কিন্তু তার পাত্তা পেলে তো যতবারই তার সামনে গিয়েছি সে কোন না কোন ভাবে আমাকে কাটিয়ে চলে গেছে আবার ক্লাসরুমে আরেক শক খেলাম।
পিকনিকে যেতে হবে। পিকনিকে যাওয়ার কথা হচ্ছে
সবারই নাকি যেতে হবে বাধ্যতামূলক এসবে কেউ বাধ্যতামূলক দেয় এ কোন ভার্সিটিতে এসে পড়লাম সব উল্টাপাল্টা কাজে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ঘুরতে যাওয়া আমারও পছন্দ কিন্তু আমার সেই কপাল নেই বাবাকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না তারওপর টাকা বাড়তি টাকা আমার নাই।কিন্তু স্যারের শেষ কথাটা শুনে আমি থমকে গেলাম। না গেলেও টাকা দিতে হবে টাকা দিতেই হবে। যারা যাবে না তাদের টাকা পরে কেটে নেওয়া হবে। আর টাকা না দিলে সামনে যে আমাদের প্রিটেস্ট পরীক্ষা সেখানথেকে নাম্বার কেটে নেওয়া হবে।
আমার উত্তর তো নাই না কিন্তু এত কিছু শোনার পরে আমি টেনশনে পড়ে গেলাম কি করব আমি। যাব কিভাবে আমার তো যাওয়া কোনভাবে সম্ভব না
একেতে টাকা কোথায় পাব তার ওপর বাবাকে কি করে এটা রেখে যাব। টেনশন আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
অন্তরা কে সব বললাম
ও নিজেও টেনশন করছে ও বলছে টাকা না হয় আমি দিয়ে দেবো কিন্তু আঙ্কেলকে কে দেখে রাখবে। ওর ও চিন্তা হচ্ছে।
দুজনেই সারা ক্লাস টেনশন করতে করতে কেটে গেল।
ক্লাস শেষে দুজনেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলাম। অন্তরা হৃদয়ের সাথে কথা বলতে চলে গেল। আমি একাই সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম। হঠাৎ আমার সামনে এসে দাড়ালো আদ্র আমার সামনে এসে একটা শয়তানী হাসি দিল। সেই হাসির মানে বোঝার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালাম না।সকাল থেকে আদ্রর পেছনে যেভাবে ছুটেছি হয়তো মনটা ভালো থাকলেই আমি এখন আদ্র সাথে তুমুল ঝগড়া শুরু করে দিতাম।কিন্তু এত টেনশন এ আমার ঝগড়া আসছে না আমি তাকে এড়িয়ে চলে যেতেন এলে লাগলাম।
আদ্র হয়তো এতে অবাক হয়েছে খুব। ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে আটকায়।
আমি পিছন ঘুরে আগে হাতের দিকে তাকিয়ে আদ্রর মুখের দিকে তাকায়।
সাথে সাথে আদ্র হাত ছেড়ে দাড়ায়।
“কি ব্যাপার এমন লাগছে কেন দেখতে মন খারাপ।সকাল থেকে না আমার সাথে কথা বলার জন্য পেছনে পেছনে ছুটছো। আর এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছি কথা বলছো না কেন?”
“ইচ্ছে করছে না তাই আর তখন ইচ্ছে হয়েছিল তাই পেছনে ছুটে ছিলাম।”
বলে চলে গেলাম। আদ্র আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
ঘুরতে যাবে সাজেক।বুধবার আজকে বৃহস্পতিবার সামনের সপ্তাহে র বুধবারে যাবে দুদিন থাকবে।একদিন যাবে মাঝখানে একদিন থেকে তার পরদিন সকালেই চলে আসবে।
সবকিছু ভুলে বিকেলে প্রাইভেটে গেলাম এক ঘণ্টা আগে। কারণ রাতে আর আসা সম্ভব না একদিনে যা হয়েছিল।এক ঘণ্টা বেশি যেহেতু পড়াতে হবে ঘণ্টা আগে গিয়ে পরাবো এর জন্য টাকা বেশি দেবে বলেছে। সোমবার ওদের পরীক্ষা শেষ হল এখন আমি শান্তি পেলাম। ফোন দিয়ে জানালো নানাবাড়ি বেড়াতে যাবে ওরা তাই শুক্রবার পর্যন্ত টিউশনি বন্ধ দিল।
বিকেলের মন খারাপ করে ছাদে বসে আছি। সামনে রুনা আপু রানী আর রায়া দৌড়াদৌড়ি করছে।
আপু আমার মন খারাপ হলে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে রে স্নেহা এমন মুখটা মলিন করে বসে আছিস কেন?”
আপুকে সবকিছু খুলে বললাম।
“এই জন্য মন খারাপ পাগলী।আমি আছি না তুই কোন চিন্তা করিস না আঙ্কেলের সব দায়িত্ব আমার তুই গিয়ে ঘুরে আয়।
এই জন্য কেউ মন খারাপ করে।”
“তুমি না হয় দিনে গিয়ে দেখে সে রাতে কি হবে?এভাবে আব্বুকে রেখে কোথাও যাওয়া ইম্পসিবল।এমনিতেই শরীর ভালো না তার যেকোনো সময় যা কিছু হতে পারে একা তো রাখা যায়না বল।”
” আমি কি তোকে বলেছি রাত একা রাখবো।তোদে্য বাসায় শিফট করবো রাতে থাকবো নি দুদিন।”
“কি সব বলছ রাতে থাকবে মানে ভাইয়া আসবে না। সে তোমাকে থাকতে দেবে। উল্টো আমার জন্য তোমাদের মধ্যে ঝামেলা হবে।”
“আর তোর ভাইয়া তো কাল বাসায় আসে নাই ফোন দিয়ে বলল দুই দিন আসবে না কি কাজ নাকি পড়েছে।”
“কিন্তু তবুও আব্বুকে রেখে আমি কোথাও যায় না আমার খুব ভয় করে। আমার একমাত্র আব্বু আছে আর কেউ নেই আপন বলতে।”
“তুই কি আমাকে একটু ভরসা করতে পারিস না স্নেহা।”
মুখ কালো করে কথাটা বললো আপু।
“এসব কি বলছ আপু তোমাকে আমি অনেক বিশ্বাস করি।এইখানে আসার পর একমাত্র তোমাকে আমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস ও ভরসা করি।”
“তাহলে এই আপুর কাছে বিশ্বাস করে তোর বাবাকে দেখে যেতে পারবি না।”
“সে পারব কিন্তু আমি তো
আপু অনেক বলে আমাকে রাজি করালো যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। আপু থাকবে ভাইয়া ও নাই জন্য আমিও রাজি হয়ে গেলাম।
রাতে ফোন করে অন্তরাকে খবর টা দিলাম ও তো সেই খুশি। বুধবার সকালে রুনা আপা আমাদের রুমে একদিন আগেই আপুকে বলে এখানে থাকতে বলেছি।
কালো সূতির থ্রি পিস পরলাম ওইটা আগে পড়ি নাই। আরেক সেট জামা ব্যাগে ভরে নিলাম। বাসার জামা তো আর নেওয়া যায় না।যে ড্রেস পড়েছি এটা নতুন কিন্তু আরেকটা নিয়েছি এটা পুরাতন হয়ে গেছে।এটা নিতে হবে বাসার গুলো ছিড়ে গেছে তাছাড়া নেওয়ার মতো কিছু নেই এটা তো প্রতিদিনই প্রায় ভার্সিটিতে পড়ে যাওয়া হয়।
ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ড্রেসটা ব্যাগে ভরলাম। আর নেওয়ার মতো কিছুই নাই ফোনটা ব্যাগে ভরে 200 টাকা নিলাম।
সাজ বলতে চুলটা খোপায় করে আগের মতো মাথায় ওড়না দিয়ে পিন করলাম। স্নো পাউডার বলতে কিছুই আমার কাছে নাই। শেষ কবে ইউজ করেছিলাম তাও মনে নাই। এগুলোর কেনার টাকাও নাই। আর কেনার ইচ্ছা নাই।
সিম্পল ভাবে বের হতে পারলাম না আপু জোর করে ধরে তার পাউডার দিল আমাকে দেওয়ার জন্য।আমি না করলে শুনলোনা জড়াজড়িতে না পেরে একটু নিয়ে পুরো মুখে দিলাম।
পাউডার দেওয়াতে মুখের তেলতেলে ভাবটা মুছে গেল একটু ফর্সা ফর্সা লাগলো। আয়নার সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খুব একটা আয়না দেখা হয়না আর আয়না থাকলে তা দেখা হবে। একটা আয়না ছিলো এখানে আস সময় পড়ে ভেঙে গেছে।
তারপর আর কেনা হয় নাই।
আপু জোর করে চুল বিনুনি করে দিল।এর মাঝে অন্তরা চলে আসলো।রুনা আপুকে বাবার খেয়াল রাখতে বলে বাই বলে চলে আসলাম।
চলবে♥️
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ২৩
সকালে অন্তরা আমাদের বাসায় এসেছে।
ও এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল আমাকে নাকি অনেক সুন্দর লাগছে।সাজলে নাকি আমাকে সুন্দর লাগে। সাজ বলতে পাওডার আর পিন কালারের হালকা একটু লিপস্টিক। আমি দিতে চাইছিলাম না কিন্তু আপুর জন্য দিতে হয়েছে একপ্রকার জোর করেই দিয়ে দিয়েছে।
হঠাৎ অন্তরা বলল কিছু নাকি মিস বলেই ওর ব্যাগ থেকে একটা কাজল বের করে দিতে বলল।
কিন্তু দেব না বললাম। অনেক বলে ও রাজি হলাম না। অনেক দিন পর সাজছি এজন্য লজ্জ্বা লাগছে আমার সাধারণ ই ভালো লাগে না না সাজতে সাজতে সাজার ইচ্ছে নেই।
আমি আর অন্তরা একসাথে ভার্সিটিতে এসে নামলাম। দুজনে একসাথে বাসে উঠলাম। তিনটা বাস যাবে। একটা ফাস্ট আর সেকেন্ড ইয়ার আরেকটা থার্ড ইয়ার আর একটা ফোর্থ ইয়ার। এভাবে সেট করা আমি আর অন্তরা আমাদের টায় ঢুকলাম কিন্তু আমার আর অন্তরার লিস্ট নাই। দুজনেই তো বড় বড় চোখ করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি টাকা দিলাম এখন আমাদের সিটই নাই আমরা যাব কিভাবে?
দুজনে চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ একটা মেয়ে বলল, ওর নাম কনিকা।
“তোমাদের সিট নাই।”
“নাহ।”
দুজনে একসাথে বললাম।
“শুনলাম এই বাসে দুজনের সিট হয় নাই তাদের একজন কে ফাইনাল ইয়ারের বাসে ও একজন কে থার্ড ইয়ারের বাসে দেওয়া হয়েছে। তোমরা গিয়ে দেখো সেখানেই হয়তো তোমাদের সিট আছে।”
কনিকার কথা শুনে দুজনেই বাস থেকে নেমে গেলাম।
দ্বিতীয় বাসে ওঠালাম সেখানের তৃতীয় সিটে অন্তরার সিট পেলাম। তার মানে আমার সিট পরের টাই।
মুখ কালো করে ফেললাম একা একটা বাসে যেতে হবে আমাকে তাই আমি অন্তরাকে বললাম তুই চলে যা আমি যাব না।তোর সাথে সিট পরলে একটা কথা ছিলো এমনিতেই কারো সাথে আমার তেমন সম্পর্ক নাই সবাই একটু বেশিই ইগনোর করে আমাকে অন্তরা আমাকে কিছু তেই যেতে দেবে না।
ওর সাথে পারা গেল না থাকতেই হলো।
অন্তরার সাথে তৃতীয় বাসে উঠলাম প্রথম থেকে সব সিট দেখছি কয়েকজন বসে আছে মেয়েরা। আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে নিজেদের ফোন সাজ করতে লাগলো।
একেকজন আয়না ধরে সাজছে লিপস্টিক দিচ্ছে।
সব সিট ঘুরে একদম লাস্টে চলে এলাম দুজনের মুখটা কালো সিট পাচ্ছি না এজন্য।
অবশেষে সিট পেলাম লাস্টের দুই সিট আগে।
দুজনের মুখে হাসি ফুটলো আর ও পনোরো মিনিট আছে বাস ছাড়তে এজন্য বাস খালি বেশি।আমার সিট জানালার পাশেই তাই খুশি হয়ে ই বসলাম।
কিন্তু পাশের সিটে ফাঁকা এখানে কে বসেছে কে জানে।
অন্তরা কিছু ক্ষন থেকে চলে গেল ও থাকাকালীন ভালোই লাগছিলো কিন্তু ও যাওয়ার পর খারাপ লাগতে শুরু হলো।
ফোনে আজ 30 টাকা ভরেছি।
বাবার খোঁজ নিতৈ হবে এজন্য।
আর দশ মিনিট আছে একে একে বাসে সবাই উঠতে লাগলো। এদের মাঝে আদ্রর সাঙ্গপাঙ্গরা ও আছে।ওনারা আসতেই আদ্রর কথা মনে পরলো ওনিও তো তাহলে এই বাসেই আছে আল্লাহ উনার কথা তো ভুলেই গেছিলাম। কাল রাতে ফোন করেনি আমাকে শান্তি দে ঘুমিয়ে ছিলাম সকালেও ওনার কথা মনে পরেনি মে ওখানে ওনার মুখোমুখি হতে হবে।
ওনার সিট যেন আমার আশে পাশে নি থাকে।
তাহলেই জালিয়ে খাবে।অযথা ফোন করে ডিস্টাব করে।
সামনে তাকিয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ করে মারিয়ার উপর চোখ পরলো খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু ড্রেসটা ভালো লাগলো না শর্ট টপস পরেছে গলাটা বেশিই ভারি। দেখতে ভালো লাগছে না এতো সুন্দর মেয়ে এমন অসভ্য ড্রেস পরেছে কেন?
মন খারাপ করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম সে সামনেই বসেছে সাথে রাইসা মেয়েটা।
তার পেছনের রাহাত ভাইয়া আসলো সে আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে কেমন আছি জিজ্ঞেস করলো।
একটু কথা বললাম উনি আমার এক সিট পেছনে বসেছে।
সব সিটের মানুষ এসে গেছে আমার পাশে সিটটা খালি।
এদিকে আদ্রকেও তো আসতে দেখলাম না।
সময় হয়ে গেছে এখন বাস ছাড়বে সবাই ভেতরে যারা সিটে বসে পড়েছে।
ঘার ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম হঠাৎই মনে হলো আদ্রকে দেখলাম বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল কারো সাথে। আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি আদ্র আমার দিকে এক সাইট করে দাঁড়িয়ে আছে।
আজকে পড়েছে খয়রি টি-শার্ট হাতে জ্যাকেট ফুলহাতা হাতের কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছে। বাহ হাতের আঙ্গুলে সানগ্লাস দুলিয়ে দুলিয়ে কথা বলছে। খয়রি কালারের বেশ মানিয়েছে আদ্রকে।আমি আদ্রকে স্ক্যান করতে লাগলাম হঠাৎ কথা শেষ করে সানগ্লাস চোখে দিয়ে আমার দিকে তাকাল আমি এতটা ভয় পেলাম যে সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে বাসের ভেতরে তাকালাম আল্লা আমার তো মনেই ছিল না উনি আমাকে দেখে ফেলে সর্বনাশ হবে।
হঠাৎ সামনে থেকে দেখি আদ্র বাসের ভেতরে।
আমি শকের উপর শক এখন না জানি দেখে ফেলে। মাথার ওরনাটা দিয়ে ভালো করে মুখটা ঢেকে নিলাম। যাতে আদ্র আমাকে না দেখতে পায়।
আদ্র এদিকে আসছে আমি মাথা নীচু করে বসে আছি। আদ্রর আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই আমি মাথা উঁচু করে বসলাম। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এখন আমার হাত-পা কাঁপছে খুব ভয় পেয়েছি।
মুখ ঢাকা থেকে খুলে ফেললাম।তারপর জানালা দিয়ে তাকাতে লাগলাম বাস চলতে শুরু করেছে।ফোন বের করে রুনা আপুকে কল করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতেই বাবার খোঁজ নিলাম।
ফোন কেটে দিতেই মনে হল কেউ আমার পাশে দড়াম করে বসে পড়ল। নিশ্চয়ই আমার পাশের জন এসে পড়েছে।যে মেয়ে বসবে তার সাথে একটু ভালোভাবে কথা বলবো না হলে সারা রাস্তা বোরিং ভাবে যেতে হবে। মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ই আমার চোখ কপালে উঠে গেল।
আল্লাহ আমি কি ঠিক দেখতেছি নাকি ভুল দেখলাম চোখ ভরে আবার সামনে তাকালাম। এতে সত্যি আমার পাশে বসেছে।
আমি বড় বড় চোখ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি আর ও নিশ্চিত আমার পাশে বসে আছে।
আমি হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না উনি এখানে কেন বসলো।
আমি কিছু বলতে যাব হঠাৎ উনি আমার দিকে ঘুরে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।
তারপর ভ্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল কি?
এবার আমার মুখ দিয়ে কথা বের হল আমি হতভম্ব থেকে হালকা স্বাভাবিক হলাম।
“আপনি এখানে বসেছেন কেন?”
“হোয়াট? এটাকেমন প্রশ্ন আমার স কে আমি বসবো না তো কে বসবে!”
ছোট ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল।
“কি এটা আপনার সীট ?”
কথাটা শুনে আমি চরম অবাক হলাম।উনার সাথে তাহলে আমাকে কেন বসিয়েছে আমাকে তো কোন মেয়ের সাথে বসানো উচিত ছিল।
“অফকোর্স এই যে সিট নাম্বার। কিন্তু তুমি এখানে কেন? এটাতো ফাইনাল ইয়ারে পাস তুমি ফার্স্ট ইয়ার থেকে এখানে বসে আছো কেন?”
“আমার সিট এখানে পড়েছে তাই আমি এখানে বসে আছি।’
“ও তাহলে বসে থাকো আমার মাথা খাচ্ছ কেন?”
“কি বললেন আপনি আমি আপনার মাথা খাচ্ছি?দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না আপনি আমার তো এখন মনে হচ্ছে আপনি এখানে আমার সিট ইচ্ছে করে ফেলেছেন। যাতে আমাকে সারা রাস্তা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার’ করতে পারেন।”
“হোয়াট আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই। তোমার সিট আমার সাথে ফেলতে যাবো।আর তুমি কে হ্যা যে তোমার সিট আমার পাশে রাখতে যাব। আমি নিজেই তো তোমাকে এখান থেকে চরম অবাক হয়েছি।”
“আমার আপনার কথা একদম বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি সত্যি করে বলেন আমি কিভাবে ফার্স্ট ইয়ারে থেকেই এই বাসে চলে এলাম তাও আবার একা।”
“সেটা আমি কি করে জানবো সেটা তো তুমি জানো কারন তুমি আমার আগে এখানে বসে আছো।”
“তারমানে আপনি সত্যিই কিছু জানেন না।”
“অবশ্যই না।”
“ওয়েট আপনি যদি আমাকে দেখে অবাক হয়ে থাকেন
তাহলে প্রথমে আমাকে দেখে কিছু বললেন না কেন।কিছু না বলে কেন শান্তভাবে বসেছিলেন কেন?”
আমি চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে আমার তার একটা কথা ও বিশ্বাস হচ্ছে না নিশ্চয় ইচ্ছে করে কাজটা করেছে।
“তুমি নিজেকে কি মনে করো? আমি তোমার পেছনে ঘুরঘুর করি।দুইদিন তোমাকে ফোন দিয়েছি বলে ভেবোনা যে তোমাকে আমি লাইক করি বা অন্য কিছু।এমনিতেই তোমাকে জালানোর জন্য ফোন দিয়েছি ওকে।আর একটা কথা এখানে তোমার সিটের বিষয়ে আমি সত্যিই জানতাম না আর তুমি যে বললে তোমাকে দেখে প্রথমে কেন অবাক হই নাই। আসলে না আমি তোমাকে আমি চিনতে পারি নাই। আর চিনবো কীভাবে বল তুমি এমন ভাবে ওড়না টেনে মুখ ঢেকে বসে ছিলে। তাতে না তোমার মত হয়ে গেছে আর না অন্য কিছু।।
আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার পাশে কারো গার্জেন যাচ্ছে কারণ এখানে কেউ তো তোমার মত এতো ওড়না টেনে খালাম্মা সেজে বসে রায় নাই।”
আদ্র কথা শেষ করে সামনের দিকে তাকাল স্নেহা হা করে এখনো আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।
এতক্ষণ আদ্রর কথা বিশ্বাস না হলে ও এখন তার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল ভেবেছিলাম।
“কি হল এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?”
আমি যে আদ্রর দিকে হা করে তাকিয়ে ভাবনায় বিভোর হয়ে ছিলাম সেটা মনে ছিল না। আদ্রর কথায় চমকে জানালার দিকে তাকালাম। সিসিসি কিভাবে তাকিয়েছিলাম কি ভাবছ আমাকে নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি একটা নির্লজ্জ মেয়ে।
নিজে নিজেকে বকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলাম।
আদ্র আড়চোখে স্নেহাকে দেখে স্নেহা বিরবিড় করছে।
আদ্র তা দেখে ঠোট নাড়িয়ে হেসে ওঠে আওয়াজ বিহীন। তারপর ফোন টিপতে লাগে আর চোখ একটু পরপর স্নেহা দিকে তাকায়।কিন্তু স্নেহা আর একবারও তাকাচ্ছেনা ও জালানার দিকে তাকিয়ে আছে।
এখানে বসার সমস্ত প্লেয়ার আদ্র নিজেই করেছে এর জন্য ওকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয় নি।
ফাইনালি কাজটা করতে পেরেছে এতে আদ্রর খুশি দেখে কে। অনেক টা সময় ওকে কাছ থেকে দেখতে পারবে এই বা কম কিসের? এইজন্যই তো এত কিছু করা।
আজকে স্নেহাকে একদম অন্যরকম সুন্দর লাগছে সবসময় সাদাসিধে ভাবি দেখেছে।কিন্তু আজকে স্নেহার ঠোঁটে লিপস্টিক আরো বেশি সুন্দর লাগছে কিন্তু চোখে কাজল থাকলে আরো বেশি বেটার লাগতো।
কালো ড্রেস এ ওকে আজ অপরূপ লাগছে
এই ড্রেসটা আগে পরতে দেখিনি একটা হলুদ আর সাদা মধ্যে গোলাপি রঙের দুইটা সবসময় পড়তো।
হলুদ ওর পছন্দ না থাকলে ও স্নেহার গিয়ে কালারটা দেখতে দেখতে পছন্দ হয়ে গেছে।
আদ্র তাকিয়ে থাকতেই স্নেহা হুট করে ওর দিকে তাকাল। আর সাথে সাথে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।স্নেহার আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে ও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে স্নেহার রাগ মাথায় উঠে যায়
একটু তাকিয়ে ছিল বলে কিভাবে বলেছি ওকে আর এখন নিজে তাকিয়ে আছে।
“কি ব্যাপার আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?”
স্নেহার কথায় আদ্র থতমত খেয়ে গেল।
“কই তাকিয়েছিলাম আমি তো”
“একদম মিথ্যা বলবেন না আমি নিজে দেখেছি আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।”
“হোয়াট আর ইউ,আমি তোমার দিকে তাকাতে যাব কেন তুমি কি নিজেকে বিশ্বসুন্দরী ভাব নাকি সুন্দর থাকলে একটা কথা ছিল তাহলে নাহয় তোমার দিকে তাকালো তাকানো যেত। আমি তোমার দিকে না ওই যে চারতলা বিল্ডিং টা দেখছিলাম ওই রংটা আমার পছন্দ হয়েছে।”
স্নেহা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল বাড়িটা। বাড়িটা রং করা হয়েছে লাল টকটকে আর ভালো লাগে হালকা কিন্তু এটা একদম দেখতে বাজে দেখতে খারাপ লাগছে। আমি তাকে নাক মুখ কুঁচকে বললাম,, “ছিঃ কি বাজে চয়েজ।”
কথাটা আদ্রর কানে এলো, “কি বললে তুমি আমার চয়েজ বাজে।”
“হ্যাঁ আপনার চয়েজ জঘন্য।”
“ইউ স্টুপিড তুমি আমার চয়েজ জঘন্য বলতে পারলা আমি সবসময় বেস্ট জিনিস চয়েজ করি ওকে।”
“তাতো দেখতেই পারলাম কেমন বেস্ট চয়েজ।”
দেখো এটা আমার পছন্দ হয়নি আমি তো,,
কথাটা শুনে স্নেহা অবাক হয়ে বললাম…. “মানে তারমানে আপনি মিথ্যা বলছেন?”
“আসলে তুমি একটা বাঁচাল। আরেকটা কথা বলবেনা মাথা ধরিয়ে ফেলেছ।”
“আমার ঠেকা পড়েছে আপনার সাথে কথা বলতে।”
বলে জানলার দিকে ফিরে বসলাম।
আদ্র চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে অর ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে স্নেহা সেগুলো শুনছে। এতক্ষণ আমাকে বাচাল বলল। এখন নিজে কি করছে এখন আমার মাথা ধরিয়ে ফেলবে।
কথা বললে কথা বাড়বে এজন্য আর স্নেহা কথা বললো না চুপ করে বসে রইল।
আরচোখে একবার তাকিয়ে দেখল আদ্রর কানে ইয়ার ফোন দিয়ে ফোন টিপতে।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরে পরিবেশ দেখছি। হালকা ঠান্ডা বাতাস আসছে চোখ বন্ধ করে বাতাস নিচ্ছি। সারা মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বাতাসে আরেক ঝামেলা একটু পরপর মাথার ওড়না পড়ে যাচ্ছে। আমি সাথে সাথে আবার টেনে তুলে দিচ্ছি। এবার হাত দিয়ে ধরে রেখেছি। হঠাৎ মনে হল যে কেউ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার পাশের দিকে তাকাই দেখি আদ্র একদৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস আবার জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
অনেকটা সময় পর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি নয় টা বাজে তারমানে একঘন্টা হলো গাড়ি চলছে। এভাবে সময় কাটতে লাগলো বাইরে ভিতরে দেখতে দেখতে।
চোখ বন্ধ করে কেবল মাথা রেখেছি সাথে সাথে আমার মনে হলো ঠান্ডা কিছু মনে হলো আমার পায়ে ফেলল।
চমকে চোখ খুললাম। তাকিয়ে দেখে আদ্র পানি খাচ্ছে।আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনি দিকে নিজের মত পানি খেয়ে যাচ্ছে একবার আমার দেখাচ্ছেনা কতটা অসভ্য কতটুকু পানি ফেলেছে পাজামার এখানে ভিজে গেছে।
“কি হলো এমন রাক্ষসীর মত তাকিয়ে আছ কেন?”
“এভাবে কেউ পানি খায় দেখুন তো আমার জামা ভিজিয়ে ফেলেছেন।”
“দেখুন আমি ভালো ভাবেই খেয়েছি তুমি নরছিলে তাই তাই পড়ে গেছে। এটা আমার দোষ কোথায়।”
“দেখুন সব দোষ আপনি আমার দিবেন না সব কিছুতেই নিজের দোষ ঢাকা যত্তসব অসভ্য লোক একটা।”
“তুমি আবার আমাকে অসভ্য বললে তোমার সাথে আমি কি অসভতামি করেছি।”
ভেংচি কেটে অন্যদিকে ফিরলাম।
আদ্রর আমাকে অনেক কথা বলে যাচ্ছে আমি উত্তর দিচ্ছি না আর কথা বলব না অসভ্য বেয়াদব ছেলে একটা। আরো দুই ঘন্টা হয়ে গেছে ওই ভাবেই এই দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে থাকতে আমার ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে তাই এদিকে ফিরতি ঠাস করে গাড়িটা থেমে গেল।থামতে ঠাস করে সামনে মাথায় বাড়ি খেতে গেলাম কিন্তু খেতে পারলামনা কেউ আমার সামনে হাত দিয়ে রেখেছে তাই রক্ষা পেলাম তাকিয়ে দেখি আদ্রর হাত।
কিছু বলতে যাব আদ্র উঠে দাঁড়ালো।হঠাৎ চলে যেতে লাগে। দেখি বাসের অনেকে নেমে যাচ্ছে। নামছে কেন এত তাড়াতাড়ি চলে আসলাম নাকি কিন্তু শুনেছিলাম তো 6-7 ঘন্টা লাগবে। কে বলছো তিন ঘন্টা হল।
আদ্র নামছে আচ্ছা গাড়ি কি নষ্ট হয়ে গেল?
জিজ্ঞেস করার মতো কাউকে পেলাম না রাহাত ভাইয়া গাড়িতে নাই তাছাড়া আর কাউকে চিনি না এখানে আদ্রর ছারা আদ্রকেই জিজ্ঞেস করতে হবে।
আমি তাকে থেকে পিছন থেকে ডেক উঠলাম।
“শুনছেন আপনারা সবাই নামছেন কেন আমার কি এসে পড়েছি?”
আদ্র ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো,,
“হোয়াট এখনো ঠিক অর্ধেক রাস্তা ও যেতে পারি নাই আর তুমি বলছো আমরা এসে পড়েছি।”
“তাহলে আপনার নামছেন কেন?”
“এখন ব্রেক দিয়েছে যদি খেতে ইচ্ছে হয় খেতে পারো। বা ওয়াশরুমে যাওয়ার দরকার হয় সেজন্য।”
বলেই চলে গেল। আদ্র যেতেই আমিও নামলাম।নেমে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম কোন দিকে যাব বুঝতাছি না। রেস্টুরেন্ট দেখলাম সেখানে অনেকে আছে আমাদের।হঠাৎ অন্তরাকে দেখেই দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ওকে নিয়ে ওয়াশ রুমে গেলাম আর আদ্রর সাথে যা যা হয়েছে সব বললাম। আমাকে টেনে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল একটা টেবিলে বসলাম। আমাকে যেতে বললে আমি খেলাম না এখন আর টাকা না নষ্ট করবোনা।
জোর করে আমাকে একটুও খাওয়াতে পারলো না আমি শুধু এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম।
বাসে সবাই একে একে গিয়ে বসলো সবার শেষে আদ্রর আসলো।
এসে আমার পাশে বসলো এসে এমন ভাবে বসে একদম সিটটা লাফিয়ে উঠে । আমি রাগী দৃষ্টিতে একবার তার দিকে তাকিয়ে আমার সামনে তাকালাম।
এক নাম্বার হনুমান এভাবে কেউ লাফিয়ে বস।
হঠাৎ খাওয়ার খসখস আওয়াজ পাশে তাকিয়ে দেখি বিস্কুট খাচ্ছে আদ্র। আমি তাকাতে আর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো….
“এভাবে তাকিয়ে আছ কেন খাওনি কিছু খিদে পেয়েছে নাকি আমার দিকে নজর দিও না আমার পেট খারাপ হবে।”
আমি তো কথা শুনে রীতিমতো হতবাক। একটু তাকিয়ে তাও শব্দ পেয়েছি বলে আমি কি একবারও ওভাবে তাকিয়েছিলাম পেট খারাপ হয়ে যাবে। সব সময় আমাকে অপমান করার ধান্দা।
রেগে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে।
“কি হলো তবুও তাকিয়ে আছো এভাবে। খাবে নাকি? তাহলে খাও তবুও আমার খাবারে নজর দিও না।
বলে আমার দিকে বিস্কুটের প্যাকেট বারিয়ে দিলো।”
“আপনি আসলেই একটা শয়তান। আমি আপনার দিকে মোটেও ও ভাবে তাকায় নি যে আপনার খাবারের নজর লাগাবে আমিতো শব্দ পেয়ে তাকিয়েছে।”
“সে সব কিছু আমি জানিনা। তুমি এখান থেকে নিয়ে কিছুটা খাও। না হলে আমার মনে হবে তুমি আমার খাবারে নজর দিয়েছে।”
“আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন। আমি বললাম তো আমি সেভাবে তাকাইনি।”
“”তুমি খাবে নাকি আমি এখন খাওয়া বাদ দিয়ে বসে থাকব আমার এমনিতেই খুব খিদে পেয়েছে তোমার জন্য আমি যেতে পারছিনা।
“আমি কি আপনাকে খাওয়া বাদ দিয়ে বসে থাকতে বলেছি।”
“তোমার নজর ভালো না দেখেই তো খেতে পারছি না তখন আবার পেট খারাপ হয়ে গেলে দেখো একটা জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছি সেখানে গিয়ে আমি একদমই অসুস্থ হতে চাই না।”
“আপনি…
আর কিছু বলতে পারলাম না আদ্র আমার মুখে একটা বিস্কুট ঢুকিয়ে দিয়েছে।আমি হাঁ করে বড় বড় চোখ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। কথা ওবলতে পারছিনা মুখে বিস্কুট।
“কি হলো এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছ কেন? খাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি নাহলে আমি খেতে পারব না।”
অজ্ঞতা আমার খেতে হল।না হলে আমি কিছু বলতে পারব না খাওয়া শেষ হতেই কিছু বলতে যাবার আগেই আর একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে দিল।
আমিতো হতবাক হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি মন চাইছে লোকটার মাথা ফাটিয়ে দেই। এভাবে পরপর পাঁচটা বিস্কুট আমাকে খাইয়ে ছাড়লো।
আরো হয়তো দিতো কিন্তু আমি মুখে হাত দিয়ে খাওয়া শেষ করেছি। তারপর রাগী চোখে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে বলেছি।
“আরেকটা বিস্কুট যদি আমার মুখে দিয়েছেন তাহলে আমি আপনাকে আজকে মেরে ফেলবো। অসভ্য শয়তান বাঁদর হনুমান খাটাশ লোক একটা এভাবে জবরদস্তি করে আমাকে থাইয়ে কি মেরে ফেলতে চান।”
“স্টপ ইট।তোমাকে মেরে আমি জেলের ভাত খেতে চায় না ওকে। আমার খাবারে নজর লাগবে বলে আমি খেয়েছি আর খাওয়াবো না এই দেখো এখন আমি খাবো সবকিছু তোমাকে দিলে আমি কি খাব?”
বলে নিজে খেতে লাগলো।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে তার কথা হজম করলাম।
লোকটা প্রচুর খারাপ প্রচুর। এখন পানি খাওয়া লাগবে এতগুলা বিস্কুট খেয়ে আমার পেট ভরে গেছে। বিস্কুট জবরদস্তি করে খাওয়ালো এখন পানি খাওয়াবে না শয়তান লোক একটা।
“পানি দেন”।
“কি?”
“বলছি পানি খাবো পানি দেন। নাকি পানি না খাইয়ে আরো কষ্ট দিতে চান আমাকে।আপনি তো শুধু শুধু কার কিভাবে ক্ষতি করা যায় সেই প্ল্যান নিয়ে বসে থাকেন।”
“আরেকটা বাজে কথা বললে তোমাকে আজকে আমি পানি দেবো না থাকো তুমি ওইভাবে।”
“প্লিজ পানি দেন।”
‘নো।”
“প্লিজ দেন না সত্যি খুব পানি পিপাসা পেয়েছে।”
” দিতে পারি এক শর্তে।”
“কি শর্ত?”
“সরি বলো তাহলেই পানিতে দেবো।”
“ইম্পসিবল আমি আপনাকে একটু স্যরি বলবো না এখানে দোষ আপনার।”
“ওকে বসে থাকো সরি বলতে হবে না পানি ও পাবে না।”
স্নেহা ব্যর্থ চোখে তাকিয়ে আছে। আমার সত্যি খুব পিপাসা পেয়েছে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।বিস্কুট খেলে এমনিতেই পানি পিপাসা বেশি পায়
একটু পানি না খেয়ে থাকতে পারব না এখন কি করব? এই খারাপ লোকটা তো আমাকে একটু পানি দিবে না সরি না বল্লে।
10 মিনিটের মত ওইভাবেই থেকে সরি বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি পানি খাচ্ছে। আমি নিচু হয়ে সরি বললাম। আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি?
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে শুনেছে তবুও ইচ্ছে করে বলছে।
আবার একটু জোরে বললাম “সরি ,এবার পানি দেন।”
“শুনতে পায় নাই আর ও একটু জোরে বলো।”
“বলেছি ,সরি।”
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললাম।
“আচ্ছা গুড গার্ল এই নাও পানি খাও।”
টেনে পানির বোতল নিয়ে গট গট করে পানি খেতে লাগলাম খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল।
এখন শান্তি লাগছে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বোতল ফিরিয়ে দিলাম।
স্নেহা তাড়াতাড়িতে বোতলের মুখ লাগিয়ে খেয়েছে। আদ্র সেটা দেখে সেখানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে একটু পানি খেয়ে নেয়। কিন্তু সেটা স্নেহা দেখতে পায় না।
স্নেহার প্রচুর ক্লান্ত লাগছে চোখ বন্ধ করে আছে। পুরো রাস্তা এভাবে যাওয়া যাবে না আবার ঘুমানো ও যাবেনা পাশে যে একটা অসভ্য ছেলে বসে আছে।
একে একটুও বিশ্বাস নেই। কিন্তু ক্লান্ত লাগছে খুব চোখ খুলে রাখতে পারছিনা।
ওই ভাবে বসে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা।আদ্র পেছনে ঘুরে রাহাতে সাথে কথা বলছিল হঠাৎপাশে তাকিয়ে দেখে স্নেহা ঘুমিয়ে গেছে আর মাথাটা জানালা কাছে মাথা ঝাকিতে নড়ে ধরে গ্রিলে বাড়ি খাবে। এটা দেখে আদ্র তাড়াতাড়ি করে ওর মাথা ধরে নেয়।
একটুর জন্য বারি খাওয়া থেকে বেঁচে গেল।
আদ্র স্নেহার মাথাটা এনে নিজের কাধের উপর রেখে দিল।
আদ্র স্নেহার ঘুমন্ত মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক ফেলদে না যেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে স্নেহাকে দেখছি স্নেহা গভীর ঘুমে আবদ্ধ। ও জানতে পারল না কেউ একজন ওকে এইভাবে দেখছে। স্নেহা মাথার ওড়না পড়ে গেছে।আজকে স্নেহার চুল বিনুনী করা। মুখের উপর কিছু চুল পড়ে আছে সেগুলো ছোটো চুল দেখে হালকা করে হাত বাড়িয়ে চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়। হঠাৎই স্নেহা নরে আদ্রর হাত খামচে জড়িয়ে ধরে।
আদ্র এটা দেখে বাঁকা হাসে।অজান্তে হলে ওত জরিয়ে ওর কাঁধে মাথা রেখে ওর খুব কাজে আছে স্নেহা।
অদ্রর মনে সুখের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ও ভাবছে এখানেই সময়টা থেমে যাক স্নেহা সবসময় আমার কাছে এভাবেই থাকুক। খুব কাছে।
এদিকে একজন ওদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর রাগে হিস হিস করছে।রাগে ফায়ার হয়ে আছে ও যদি এখন স্নেহাকে তে সামনে পায় তাহলে ওকে খুন করে ফেলবে গলা টিপে।
“আমি ওকে মেরে ফেললো। আমাকে খুন করে ফেলবো
কিভাবে আদ্রর গায়ে লেপ্টে আছে।কিভাবে দেখছিস ওর কি কোন রূপ আছে গাইয়া ক্ষেত একটা ও দেখতে সুন্দর নয় স্মার্ট। আমি আছি সব দিক দিয়ে ফাস্ট কিন্তু আদ্র আমাকে রেখে ওর দিকে নজর দিয়েছে। মেয়েটার আদ্রকে বস করেছে নিশ্চয়ই অন্য কোন কিছু হবে। এসব গাইয়া মেয়েরা কি করতে পারে আমার খুব ভালো করে জানা আছে।”
মাইশা কথাটা বলে রাইসার দিকে তাকায়।
চলবে♥️
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)