স্বপ্নীল ৩৮

0
1220

স্বপ্নীল ৩৮
বিবস্ত্র অবস্থা বিছানায় পড়ে আছে রোদ।সাদা বিছানায় লাল রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।সমুদ্র নামক স্বামী তার পাশে বসে সিগারেট টানছে, আড়চোখে বার বার রোদকে দেখছে।রোদের এই অবস্থা দেখে বিন্দুমাত্র দয়াও হচ্ছে না সমুদ্রের।কিন্তু রোদের এই অবস্থা দেখে তার কামনা ক্রমশ প্রখর হচ্ছে,,,, রোদকে দিয়ে নিজের কামনা মেটানোর পর ও কেন জানি শান্তি নেই সমুদ্র।তার এখন আবার রোদকে চাই।একরাত নয় প্রতিরাতে চাই রোদকে তার।রোদকে তার বিষাক্ত ছোবল খেতেই হবে। এক প্যাকেট সিগারেট খেয়ে শেষ করে রোদকে নিজের কাছে টেনে নিল সমুদ্র।রোদের মিনিমাম কথা বলার শক্তি টুকু নেই। চুপচাপ চোখের জল ফেলছে।সমুদ্র আবার তার কামনা মিটাতে ব্যস্ত। আর বারবার ব্যথায় কুঁকড়িয়ে ওঠছে রোদ। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ দেখাচ্ছে না সমুদ্র। সে নিজের কাজে ব্যস্ত। সমুদ্র প্রত্যেকটা স্পর্শ কেবল রাগ আর ক্ষোপ মিশে রয়েছে। একটু ও ভালোবাসা নেই। অসহ্য যন্ত্রনা মুখ বুঝে সহ্য করছে রোদ।বিয়ের প্রথম রাতে সমুদ্র এই ব্যবহার মানতেই পারছে না।বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

রাতের প্রায় শেষ দিকে সমুদ্র ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।কিন্তু রোদের চোখে ঘুম নেই।বিছানায় ব্যথায় কাতরাতে থাকে। স্বপ্ন ও ভাবেনি সমুদ্র এটা করবে তার সাথে।অপেক্ষা করছিল সে সমুদ্র জন্য।ভেবেছিল সে তার অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইবে।কিন্তু সমুদ্র সেই সুযোগ তাকে দেই নি।সমুদ্র হুট করে রুমে ঢুকে তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।এসব ভাবতেই তার কান্না আসছে।

সকালে পাখির কিচিকিচি তৃণ ঘুম ভাঙ্গে।চোখ খুলে দেখে সে দোলনায়।কেউ দেখার আগে তাড়াহুড়া করে নেমে আসে। রুমে ঢুকে দেখে, প্রাচ্য খাটের হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। দেখে না দেখার ভান করে ওয়াসরুমে ঢুকে দরজা জোরে লাগিয়ে দেয়।দরজা শব্দ প্রাচ্য ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে কান্না করতে করতে কখন এখানে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালই ছিল না তার। এভাবে শোয়াতে শরীরটা ম্যাচম্যাচে করছে। উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার সামনে যায়।এখন সেই বিয়ের সাজেই আছে।চোখের কাজল ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।
গলা,হাতে, কানে সব ভারী ভারী গয়না খুলে রাখে। তখনই তৃণ গোসল সেরে বের হয়।দুজনের চোখাচোখি হয়।প্রাচ্য কিছু না বলে আলমারি থেকে একটা লং থ্রি পিজ নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।তৃণ’র ঘাড় ব্যথা করছে ওভাবে দোলনা শুয়েছিল বলে।হাতের তোয়ালে সোফায় ছুড়ে ফেলে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়ে। প্রাচ্য গোসল করে বের হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে পানি নেওয়ার জন্য চুল নাড়াচাড়া করে।তখনই প্রাচ্য’র চুলের পানি তৃণ মুখে এসে পড়ে।তৃণ বিরক্ত নিয়ে বলল,
-” পানি নেস ভালো কথা।এই জন্য আমায় মুখে চুলের পানি ফালাবি।”
-” আমার রুম। আমি যা ইচ্ছা করমু তোর কি? তোর সমস্যা হলে বাইরে যা।”
তৃণ ‘র খুব রাগ উঠল।তাই সে আর এক মুহূর্ত দেরী না করে বেরিয়ে যায়।প্রাচ্য জাস্ট সহ্য হয় না তার এখন।রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধূসরের সাথে দেখা হয়।ধূসর দুষ্টুমি করে বলল,
-” বাহ! একে বারে গোসল তোসল সেড়ে বেরিয়েছিস।গুড তার মানে রাতে বিড়াল মারতে পেরেছিস।ভাই কি ভাবে বিড়াল মেরেছিস একটু বল না প্লিজ।”
তৃণ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ধূসরে দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-” এদিকে আস! তোকে বুজাচ্ছি কিভাবে বাসর রাতে বিড়াল মারে, কি ভাবে?
ধূসর পালাতে যেতে স্বপ্ন সাথে ধাক্কা খায়।স্বপ্ন বলল,
-” কি ব্যাপার তৃণ তোকে তাড়া করছে কেন? ”
ধূসর নালিশের সুরে বলল,
-” আচ্ছা আমরা সবাই বন্ধু।আমি ওরে বাসর কথা কি জিজ্ঞেস করতে পারিনা?ও বাসর করেছে।তাই জিজ্ঞেস করেছি বিড়াল মারছে কিভাবে? আগে থেকে শিখে রাখলে তো নিজের বাসর রাতে বিড়াল মারতে সুবিধা হবে।”
-” তুই খুকু তো,এসব বিষয় জানিস না।এখন আমায় থেকে এসব শিখতে এসেছি।”
-” থাক তোকে বলতে হবে না।সমুদ্র থেকে জেনে নেব।”
সমুদ্র কথা বলতেই স্বপ্ন মনে পড়ে কালকে সমুদ্র বলেছে পরে যাবে।পরে কি সমুদ্র গেছে। খুব চিন্তায় পড়েছে সে।চিন্তিত কন্ঠে সে বলল,
-” সমুদ্র দেখেছিস।”
ধূসর বলল,
-” সারারাত জেগে জেগে বোধ বিড়াল মেরেছে তাই এখন উঠেনি কেউ সে।”
স্বপ্ন আর কিছু না বলে সে স্থান ত্যাগ করব।
উঠে যেয়ে ফ্রেশ হবে শরীরে সেই শক্তি পর্যন্ত নেই রোদের শরীরে। যন্ত্রনা মরে যাচ্ছে সে। তারপর অনেক কষ্ট উঠে বসে চাদুর মুড়িয়ে দিয়ে।নামার জন্য পা বাড়াবে তখনই সমুদ্র হাত টেনে বিছানা ফেলে চেপে ধরে বলল,
-” কোথায় যাওয়া হচ্ছে।”
সমুদ্র সাথে তার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। নিজের ছাড়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে।সমুদ্র এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখেছিল।এখন চোখ খুলে তাকায়।তাচ্ছিল্য ভাবে বলল,
-” খুব কষ্ট হচ্ছে তোর,,!
কথা বলার শক্তি নেই।তাই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।সমুদ্র একহাতে রোদের মুখ চেপে ধরে গলায় অনেক জোরে কামড় বসায়।
-” কষ্ট যাতে তুই পাস তার জন্য এই ব্যবস্থা।আর হ্যাঁ তুই কেন কষ্ট পাবি।তোর সুখ পাওয়ার কথা।এটার জন্য আমার কাছে নিজেকে বিয়ের আগে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিস।খুব শখ ছিল না আমার আদর সোহাগ পাওয়ার।এখন কান্না করছিস কেন? এত আদর সোহাগ করেছি… তোর কি মন ভরেনি।না ভরলে বল, আমার শরীরে যথেষ্ট এনার্জি আছে এখন তোকে আদর করার। করবে কি? ”
রোদ কেঁদে দেয়।সমুদ্র রক্তচক্ষু হয়ে বলল,
-” তুই নিজে ও জানিস তুই কি ভুল করেছিস।আমার সম্মানে দাগ লাগিয়ে দিয়েছিস তুই।
তার শাস্তি তোকে পেতেই হবে।প্রতিটি রাতে তোকে এই নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।আমি দেখতে চাই তুই কত সহ্য করতে পারিস।ভালোবাসি না আমাকে।ভালোবাসার আগুনে তোকে জ্বলে পড়ে ছাই করে দিব।”
এটা বলে উঠে যায় সে।ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় দরজা অনেক জোরে শব্দ করে লাগায়।সেই শব্দ রোদ কেঁপে উঠে। হাউমাউ করে কান্না করে।সে অনেক বড় ভুল করেছে।সে অনেক বড় অন্যায় করেছে।অন্যায় ভাবে সে সমুদ্রকে পেয়েছে। তার শাস্তি যেয়ে তাকে পেতেই হবে।এত সহজ সমুদ্র তাকে ছাড়বে না।সে খুব ভালো করে চেনে এই বদরাগী সমুদ্রকে।মস্ত বড় ভুল ফেলেছে সে নীলের কথা শুনে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুলের পানি ঝাড়তে থাকে সমুদ্র।বলল,
-” এভাবে বসে থেকে কী প্রমান করতে যাস।”
রোদ ছলছল চোখে তাকায়।সমুদ্র বিদ্রূপ করে হাসতে থাকে।চোখ নামিয়ে ফেলে, সে কান্না করতে থাকে। সমুদ্র রোদের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
-” এভাবে তাকালে এই সমুদ্র আগুনে তুই ভস্ম হয়ে যাবি।”
অনেক কষ্টে রোদ কথা বলল,
-” আগুনকে কিন্তু পানিয়ে ঠান্ডা করতে পারে।”
সমুদ্র রোদের কথা বুঝতে পেরে একটা ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।ওয়াশরুমে যেয়ে রোদ নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।ঠোঁট ফেটে যেয়ে রক্ত জমাট বেধেছে, গলায় অসংখ্য কামড়, দাগ, সব গুলো দাগে সে হাত ছোঁয়ায়।এই দাগ গুলো তার স্বামীর ভালোবাসার চিহ্ন। শরীরে পানি পড়তে পুরো গায়ে জ্বালা শুরু হয়ে যায়।চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছা করছে তার।ছোট থেকে বড় হওয়ার পর্যন্ত তার গায়ে কেউ একটু টোকাও দেয়নি।ব্যথা কি জিনিস সে জানে না? আজকে তার কাছে এসব মরণ যন্ত্রণার সমান মনে হচ্ছিল। কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পড়ে সে।তার সাথে কালো থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ পড়ে যাতে হাতে দাগ গুলো দেখা না যায়।বুকের উপরে শাড়ির আচঁল ভালো করে দিল, যাতে সেই দাগ গুলো দেখা না যায়।লম্বা চুল গুলো পিঠময় ছড়িয়ে, লম্বা ঘোমটা দেয়, কিছু চুল ছ দিয়ে গালের পাশে কামড় দাগ ঢেকে রাখে।আয়নার ভালো ভাবে দেখে নেয়। দাগ গুলো দেখা যাচ্ছে কী না।দেখা যাচ্ছে দেখে একটা স্বস্তি নিশ্বাস ফেলে। নিচে নেমে কিচেনে যায়।তার শ্বাশুড়ি মায়ের পাশে দাঁড়ায়।শায়লা তাকে দেখে কিছু বলল না।এই মেয়ে মিথ্যের কারণে তার ছেলেকে নিজের শ্বশুর অন্যায় ভাবে মেরেছে। রোদ বুঝতে পাচ্ছে না সে কি করবে। কেউ তো তার সাথে কথা বলছে না।সোহাগী বেগম বলল,
-” সমুদ্র কি উঠেছে? ”
-” হুম! সে তো অনেক্ষন আগে নিচে নেমে এসেছে।”
-” কোথায় সে দেখতে পাচ্ছি না যে।”
রোদ কিছু বলল না।শায়লা বলল,
-” সমুদ্র বাগানে আছে।”
রোদ জিজ্ঞেস করে শায়লা কে,
-” আন্টি আমি হেল্প করি! ”
শায়লা কাজ করতে করতে বলল,
-” কোনো দরকার নাই।আমেনা আছে আমাকে হেল্প করার জন্য।”
শ্বাশুড়ি কথা শুনে রোদের মন খারাপ হয়।সে বেরিয়ে এসে নিজের রুমে চলে যায়। স্বপ্ন আর ধূসর কিছুক্ষণ পর তার রুমে যায়।রোদকে দেখে ধূসর বলল,
-” কালকে রাতে সমুদ্র বুঝি বেশি ক্ষুধার্ত ছিল।”
-” মানে! ”
-” মানে তোর এই ছিঁলে যাওয়া ঠোঁটেই বলে দিচ্ছে।”
ধূসর কেন এটা বলছে আর বুঝতে বাকি রইল না।সব দাগ কিছু না কিছু দিয়ে লুকিয়েছে কিন্তু ঠোঁটের এই দাগ লুকাতে ভুলে গেছে সে।কিছু টা নার্ভাস ফিল করে। অন্য সময় হলে ধূসরে বেহাল করে ছাড়ত সে।আজকে কিছু করতে ইচ্ছা করছে না।ধূসর বলল,
-” রাতে কি সমুদ্র শালা তোকে মানা করছে। চুপচাপ থাকার জন্য।কথা বলছিস না কেন? ”
তারপর সে কিছু বলল না।ধূসর পাশ কাটিয়ে রোদের পাশে বসে স্বপ্ন।খাটের উপরে থাকা রোদের হাতের উপরে স্বপ্ন তার একটা হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বলল,
-” কোনো ব্যাপারে কী তোর মন খারাপ? ”
রোদ চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,
-” না! ”
-” তাহলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি।”
রোদের আর বুঝতে বাকি রইল না স্বপ্ন তাকে কি প্রশ্ন করবে। সে বলল,
” আমি জানি তুই কি বলবি।কিন্তু এই মুহূর্ত সেই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না তোকে।কিন্তু অবশ্যই তোদের সেই প্রশ্নের উত্তর দিব। অন্য এক সময়। এখন প্লিজ আমায় একটু একা থাকতে দেয়।”
স্বপ্ন আর কথা বাড়ালো না।সে বুঝতে বাকি রইল না। ওদের মধ্যে কিছু একটা জামেলা হয়েছে।যার জন্য রোদের মন খারাপ। তারপর দুজন চলে যায়।
খাবার টেবিলে রোদকে না দেখে সোলোমান মির্জা সমুদ্রকে বলল,
-” রোদ কোথায়? ”
সমুদ্র কোনো কথা না বলে চুপচাপ খাচ্ছিল।স্বপ্ন সমুদ্র দিকে তাকায়। সমুদ্রকে বুঝতে চেষ্টা করে সে।শায়লা বলল,
-” তার খাবার আমি সোহাকে দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
-” মেজ বউ মা তুমি কি জানো না এই বাড়ির নিয়ম! ”
-” হ্যাঁ বাবা আমি জানি।তাকে এখানে আসার জন্য আমি সোহাকে আর নীল
পাঠিয়েছি।সে নিজে বলেছে তার খাবার উপরে পাঠিয়ে দিতে।সে নিচে যাবে না। ”
সোলোমান মির্জা আর কথা বাড়ালো না।সবাই চুপচাপ খেয়ে যার যার কাজে চলে যায়।
বিকালে দিকে প্রাচ্য আর তৃণ চলে যায় সবার থেকে বিদায় নিয়ে।

চলবে…

অনেক নূপুর গল্পের কথা জিজ্ঞেস করেন।তাদের কে বলছিস।স্বপ্নীল শেষ হলেই সেই গল্পটা দিব আবার।অবশই সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।আপনাদের মন্তবেই আমি লিখতে উৎসাহ পাই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে