শ্বাশুড়ি পর্বঃ১

0
1319

#শ্বাশুড়ি
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ১
.
.
সামান্য কচু চিংড়ি রান্না করতে পারে না সে আবার আসছে বাড়ির বউ হইতে৷ বলি মায়ে কিছু শিখায় নাই?কি শিখাইছে? হ্যাঁ? সারাদিন কেমনে মোবাইলে পুটুর পুটুর করা যায় তাই?সারাদিন রোজা রাইখা ইফতারে যে শান্তি মতো খাইতে পারমু ওই যু আর নাই। কিছুই যদি না পারোস তাইলে বিয়া বইলি ক্যান?
.
.
রাহেলা বেগমের চিৎকার রান্না ঘর থেকে শুনছে আলো।
আলো রাহেলা বেগমের ছেলের বউ। তিন মাস যাবত বিয়ে হয়েছে। ১৯ বছর বয়সী আলো দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী হলেও রাহেলা বেগমের কাছে সে ভালো না।
কারণ তার চরিত্র ভালো না। ছেলে মানুষকে ফাসায় বিয়ে করছে আর কালাযাদু জানে বলেই দৃঢ় বিশ্বাস রাহেলা বেগমের।
আলোর বাবা যখন জানতে পারলো আলোর সম্পর্কের কথা, তখন সে ছেলের সাথে দেখা করতে চায়। ছেলেরা মধ্যবিত্ত, আলোর পরিবার উচ্চ মধ্যবিত্ত। ছেলে ত্রিশ হাজার টাকার চাকরী করে যেখানে আলোর বিয়ে এসেছিলো ছেলের বেতন আশি হাজার টাকা।
আলোর বাবা সেদিন আলো কে অয়নের সামনেই বলেছিলো
যদি অয়নকে ভালোবেসে থাকে আর যদি একান্তই অয়ন কে চায় তাহলে যেনো এ বাড়ি থেকে এখনি চলে যায়।
.
একদিকে অয়ন অন্য দিকে বাবা। আলোর বিশ্বাস বাবা মেনে নিবে কিন্তু অয়নকে সে ছাড়তে পারলো না। অয়নের ছলছল চোখ দেখে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলো। কাজী অফিসে বিয়ে করে বাড়ি পৌঁছাতেই রাহেলা বেগমের ক্ষোভের স্বীকার আলো। কোন ভাবেই সে আলো কে মেনে নিতে পারেনি। তাই তো তিন মাস হলেও আলো এখনো এ বাড়ির কেউ না।
.
.
বাবার ঘরে আদরের মেয়ে হঠাৎ এমন কিছু সইতে পারছে না।সারাদিন রোজা রেখে ঘরের কাজ করতে করতেই আবার ইফতার৷
ইফতারের আগে, পরে সব কাজ আলোই করে।
কোন দিন সে কচু চিংড়ি রান্না করেনি। আজ আন্দাজে করেছে। রাহেলা বেগম কে জিজ্ঞেস করেছিলো কিভাবে করবে কিন্তু সে বলেনি।
ইফতারি নিজের হাতে বানাতে হয়। শুধু বুট বড়া না। বেগুনি,আলুর চপ, ফল কাটতে হয়, শরবত বানাতে হয়। সব গুছিয়ে সবাই কে দিয়ে আবার ইফতারের পর সব পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখতে হয় একা নিজ হাতে। আলোকে ক্লান্ত হলে চলে না। সারাদিন রোজাও ধরে না। কারণ বাড়ির বউ তো।
.
কচু কাটার জন্য দুহাত লাল হয়ে গেছে। যাচ্ছে তাই। সাদা ধবধবে হাত এখন লাল হয়ে আছে। কখনো কাটেনি । এমন কি খায় না আলো এসব।
গত রোজাও কত সাবধানে রাখতো মা।ইফতারের আগে চুলোর পাড়ে যেতেই দিতো না। কারণ খারাপ লাগবে। ইফতারের পর বাতাস দিতো বাবা। দুই বোন কে অথচ এবার সে একাই সব করছে।
অভিযোগ নেই কারণ সংসার তো তারই।
.
.
চোখ বন্ধ করেছে সবে আলো। ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রীনে লিখা My phone
.
অয়ন কল দিয়েছে। সে এখানে থাকে না। অফিসের জন্য শহরে থাকে। প্রতি সপ্তাহে না হলেও মাসে দুবার আসে।
.
.

.- আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম সালাম পুটির মা।
– ইফতার শেষ?
– হ্যাঁ! আপনার সব কাজ শেষ?
– হুম!
– তাহলে একটু রেস্ট নাও। আজকে যা গরম পড়েছিলো। সাহরীর জন্য রান্না করেছো?
– না! উঠে করবো।
– আগে করে রাখলেই হয়। মানুষ তোমরা চার জন। আগে আগে করবা একটু ঘুমাতে পারবা তো।
– সমস্যা নেই। মা ঠান্ডা ভাত খাইতে পারে না।
– কে বলছে? আগে মা ঘুমানোর আগে ভাত রান্না করতো আর সাহরী তে আমরা সবাই তাই খাইতাম। গত রোজায় তাই করেছে।
.
.
অয়নের কথা শুনে হাসে আলো। অথচ সাহরী তে উঠে গরম গরম ভাত,সদ্য ভাজা মাছ না থাকলে শ্বাশুড়ি রেগে যা ইচ্ছা বলে।
.
– কি হলো পুটির মা? কথা বলো না কেনো?
– হাত চুলকাচ্ছে
– কেনো?
– কচু কেটেছিলাম তাই মনে হয়।
– প্রথমবার তো তাই। আচ্ছা শুনো নারকেল তেল লাগাও৷
– হুম!
– বিয়ের পর তুমি কিপ্টে হইছো
– কেনো?
– আগে কতবার কল দিতা, এখন?
– আহারে! কাল আসবা?
– উঁহু! কাল দিন পর।
– অপেক্ষা করবো।
– মায়ের শরীর কেমন?
– আপাতত ভালো! তুমি আসলে খারাপ করবে।
-মানে?
– কিছুনা। আচ্ছা রাখি। মা ডাকে।
.
.
শেষ? আমার নামে বিচার দেওয়া শেষ? তাড়াতাড়ি হইলো না?.
আরো দে। কাম তো পারিস না কিছুই। এদিকে আয় তো। দেখ আমার মাথা বিড়বিড় করতাছে ডেলা(উকুন) পাস না কি?
.
আলোর ক্লান্তিতে দুচোখ বুজে আসলেও সে এগিয়ে গেলো। কারণ বাড়ির বউদের ক্লান্ত হতে নেই।
.
.
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে