শ্বাশুড়ি পর্বঃ৪

0
1027

শ্বাশুড়ি
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৪
.
.
-বাহ্! মা বাহ্! সবার কথা তোমার মনে থাকলো যে আমাদের বাসায় টুকটাক কাজ করে তার কথাও মনে আছে শুধু মনে নেই তো বাড়ির বউয়ের কথা??
.
অয়নেরচিল্লাচিল্লি শুনে আলো এসে রুমের দরজার সামনে দাঁড়ায়। অয়নের এমন রাগের সাথে তো পরিচিত নয়। গা শিউরে উঠলো আলোর। এ কোন অয়ন কে দেখছে? মা ভক্ত অয়ন এমন করতে পারে? তাও আবার মায়ের সাথে?
.
-না মা! না। কোন কথা বলবা না। বিয়ের পর এটা ওর প্রথম ঈদ আমাদের বাড়িতে আর তুমি ভুলে গেলে? কিভাবে সম্ভব? মেয়েটা আমার জন্য পরিবার ছেড়ে এসেছে ভুলে গেছো?
– না ভুলিনি! আমরা আসতে বলছিলাম? একাই আসছে। এত সমস্যা হলে চলে গেলেই পারে। আর ও কি বাচ্চা? যে ঈদে কাপড় নিতেই হবে?
.
– মা বুঝলাম ও বাচ্চা না কিন্তু মানুষ তো। তাহলে কি আমি ধরে নিবো তুমি ইচ্ছে করেই আলোর জন্য কিছুই কিনো নি?
– এত দরদ থাকলে ওর বাপ মায়েই পাঠাইতো। কই তুই তো নতুন জামাই। তোরে তো একটা সুতাও দিলো না৷ তাইলে আমি ক্যান তার মেয়েরে দিমু। বাড়িতে থাকতে দিছি এটাই অনেক। না হলে মেয়ের যে ছলাকলা না? বুঝবা দুইদিন পর কি ঘরে আনছো।
.
.
অয়ন এই কথা পুরো না শুনেই আলোর হাত ধরে রুমে নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়।
রাগে ওর শরীর রিরি করছে। আরে একটা মেয়ে শুধু ভালোবেসে পরের ঘরে এসেছে। আলোর বাবা অনুমতি না দিলে তো আর আসতো না। কিন্তু তাই বলে মেয়েটাই সহ্য করবে? ছেলে ছাড়া তো আর আসে না। তাহলে ছেলেকে কেনো বলে না?
.
-শুনো! আসার পর থেকে অনেক ড্রেস বানিয়ে দিয়েছো। যে কয় বার এসেছো হয় শাড়ি না হয় থ্রিপিস কম তো আনো নি। থাক না এবার।
.
.
অয়ন হাত ঝাড়া দিয়ে আলোকে সরিয়ে দিয়ে ফোন আর মানিব্যাগ হাতে বেরিয়ে যায়৷
আলো পিছন থেকে ডেকে বলে
-আরে ওটা আমার ফোন তো…..
.
.
প্রায় দু ঘন্টা হয়েছে অয়ন এখনো এলো না। এদিকে অয়নের মা তো যাচ্ছে তাই বলেই যাচ্ছে। কালা যাদু করছে, পোলারে বশে আনছে। আলো পাত্তা না দিয়ে রাতের খাবার রেডি করে সবাই কে ডাকলো।
প্রথমে ওর শ্বাশুড়ি না করলেও মেয়ের জামাই আর ভাতিজি মিলে খাইয়ে দিলো।
.
রুমে এসে আলো অয়ন কে কল দিলো। প্রথমে ধরলো না। কিন্তু পরে রিসিভ করলো।
.
– হুম বলো
– কই তুমি?
-বাজারে
-আশেপাশে পিয়ারা ভর্তা পাওয়া যাবে?
-হুম! তুমি খাবা?
– প্লিজ! বেশি ঝাল দিয়া
-হুম!আসছি।
.
.
.
.
অয়ন ফিরে এলে দরজা তানজীন খুলে দিলো। অয়নের মা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ছেলের হাতে কম করে হলেও ছয়টা শপিং ব্যাগ।
.
.
বিছানার এক পাশে ব্যাগ গুলো রেখেই শুয়ে পড়ে অয়ন। জোড়ে ডাকে সে আলো কে। সে যেনো সবাই কে জানাতে চাইছে সে ফিরেছে।
অয়নের ডাক শুনে তানজীন পানির গ্লাস হাতে রুমে আসে৷
অয়ন পানি খেয়ে জিজ্ঞেস করে আলো কোথায়?
.
-ফুপুর মাথা ব্যথা। আলো মালিশ করে দিচ্ছে।
.
অয়ন কিছু না বলে মায়ের রুমে গিয়ে আলোকে বলে আলো চলো ক্ষুধা লাগছে।
.
অয়নের মা বলে ও ব্যস্ত তানজীন দিচ্ছে।
.
-বউ থাকতে অন্য কেউ কেনো খাবার দিবে? আলো তুমি কি আসবা? না আমি না খেয়েই শুবো।
.
আলো চুপাচাপ উঠে আসে। অয়ন বলে খাবার টা রুমে নিয়ে আসো। আর হুম! তোমার টাও।
.
.
বিছানায় এত শপিং ব্যাগ দেখে আলো ভ্রু কুঁচকে তাকায় । অয়ন কথা না বলে হাত ধুয়ে ভাত মেখে আলোর মুখের সামনে ধরে।
.
-কি হলো নাও….
.
আলো মুখে ভাত নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসে। কারণ সে চাইছে না তাদের এমন মুহূর্ত গুলো কারো জন্য নষ্ট হোক।
.
– এত ব্যাগ?
– হু! এর থেকে ভালো কিছু পেলাম না। আগে জানলে শহর থেকে নিয়ে আসতাম। ভুল অবশ্য আমার৷ এর পর থেকে আর হবে না।
.
– খুলবো?
-হুম! সবার যেহেতু তোমার। তাই খুলতেই পারো।
.
আলো পর পর শপিং ব্যাগ থেকে কাপড় বের করলো।
লাইম গ্রিন কালারের শাড়ি দেখে চোখ আটকে গেলো। অন্যগুলো খুললো না। পড়ে দেখে নিবে।
.
-বাহ্! দারুণ তো।
-পছন্দ হয়েছে?
-হু!
.
খাওয়া শেষে অয়ন বাহিরে বারান্দায় দাঁড়ায়। সিগারেটের টান পড়েছে।
রুমে এসে ভূত দেখার মতো চমকে যায়।
.
আলো শাড়িটা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। কলাপাতা রঙের শাড়ির পাড় হালকা সোনালী। আজ প্রথম অয়ন আলোকে শাড়ি পড়া দেখলো। দুই বছরের প্রেমের সম্পর্কে কখনো তো আলোকে এভাবে দেখেনি। তাদের দেখা হয়েছিলো কমন ফ্রেন্ডের বিয়েতে গ্রামে।
অদ্ভুত ভাবে পরিচয় হয়।গ্রামের বিয়েতে রঙ দেওয়া থেকে বাঁচতে আলো চুপচাপ পুকুরপাড়ে বসেছিলো । অয়ন ও তেমনি কোন মতে পালিয়ে আসে।
আলো পুকুরপাড় থেকে উঠে আসতেই অয়নের সাথে সেই ধাক্কা। একটুর জন্য পানিতে পড়লো না। যেই না ঝগড়া শুরু করতে যাবে ঠিক তখনি কোথাও থেকে চাপা স্বরে কিছুর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। শব্দের খোজে ঝাড়ের দিকে যেতেই দেখলো একটা কুকুর প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছে। কুকুর দেখে আলোর সেই ভয়। অয়নের এক হাত ধরে আলো অয়নের পিছনে মাটির ডিভি তে উঠে দাঁড়ায়।
চলে আসতে নিলেই আলো বাধা দেয়।
প্রায় সাত মিনিটের মাথায় কুকুর টা বাচ্চা দেয়, অদ্ভুত হলেও নিজের বাচ্চা নিজেই মুখ দিয়ে টেনে বের করে এবং দাঁত দিয়ে নাড় কাটে৷
পুরো ঘটনার সময় আলো এক হাতে অয়নের হাত অন্য হাতে গলা এমন ভাবে ধরে ছিলো যে অয়ন ধীরে ধীরে বললো
-ম্যাম! আসতে! এভাবে ধরলে তো আমার শরীরে আপনার চিহ্ন রয়ে যাবে৷
.
অনু ছেড়ে দিয়ে দেখে সত্যি দাগ পড়েছে। আলোর সেই ভয়, লজ্জা লজ্জা মুখ দেখেই অয়ন ডুবে গিয়েছিলো তার মাঝে।।
.
এভাবেই শুরু হয়েছিলো তাদের পরিচয় । এসব হঠাৎ মনে পড়লো অয়নের। আলো এসে সামনে দাড়াতে দুহাতে শক্ত করে অয়ন উঁচু করে ধরে বলে
.
.
-বাহ্! মিসেস? আ’ম সারপ্রাইজড।
– থ্যাংক ইউ মিস্টার৷
.
ঠিক সে সময় দরজায় কড়া পড়লো। আলো উত্তর নিতে চাইলে অয়ন ওর মুখে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে
-কে?
.
অপর পাশ থেকে তানজীন উত্তর দেয়।
-অয়ন ভাই আমি। তোমরা কি শুয়ে পড়েছো?
-হ্যাঁ!কোন দরকার?
-না মানে সময় কাটছিলো না। তাই ভাবলাম গল্প করা যাক।
-তাঞ্জু আমি জানতাম তুই যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে। কিন্তু এখন আমার ঘরে এই সময় গল্প করতে আসা টা আদৌ কি উচিৎ?
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে