শুধু তুই Part-11

0
2152

#শুধু তুই #
#Part_11
Writer_ Raidah Islam Nova

আমি প্রিন্সিপালের রুমে দরজায় দাঁড়িয়ে আছি।সামনের চেয়ারে স্যার পেছনের দিকে ঘুরে বসে আছে।
স্যার পেছনের দিকে কেন ঘুরে আছে তা বুঝতে পারছি না। মুখটাও দেখতে পারছি না কেন?কোনো কথাও বলছে না কেন?হঠাৎ স্যার আমায় কেনো ডেকেছে?এরকম হাজার প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরছে।এসব ভাবতে ভাবতে দরজায় টোকা দিয়ে পারমিশন চাইলাম।

আমিঃ মে আই কাম ইন স্যার?

চেয়ারে থাকা মানুষটা চেয়ারের ওপর দিয়ে হাত তুলে ভেতরে ঢুকতে ইশারা করলো।আমার খটকা লাগছে এটা প্রিন্সিপাল স্যার নাকি অন্য কেউ। আজতো নাহান আসে নি।আসলে বাইরে তার সাদা কালার গাড়ি টা নিশ্চয় থাকতো।কিছুটা ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকলাম।

আমিঃ স্যার আমায় ডেকেছিলেন?
—- হুম। (গম্ভীর কন্ঠে)
আমিঃ কেন? আমি তো কোনো অপরাধ করি নি।হঠাৎ করে আমায় কেন ডাকলেন?

আমরা তিনজন ক্যাম্পাসের ভেতর দিকে বসে ছিলাম।হঠাৎ একজন পিয়ন আমাদের সামনে এসে বললো,আমায় নাকি স্যার ডাকছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম কে? তিনি আমার সাথে কোন কথা না বলে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে এনে বললো,স্যার ভেতরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।কথাটা বলে এক মিনিট ও দেরী না করে সেখান থেকে চলে গেল। আমি হতবাক হয়ে অনেকখন তার যাওয়ার দিকে ঘুরে ছিলাম।চেয়ারের থাকা মানুষটা কখন যে চেয়ার ঘুরিয়ে আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। সেটা আমি খেয়াল করি নি।আমিতো পূর্বের সবকিছু ভাবতে ব্যস্ত।

আমিঃ মি. নাহান।আপনি এখানে? আপনি আমাকে ডেকেছেন?
নাহানঃ হুম। তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন করার?
আমিঃ আমি আবার কি করলাম? ( অবাক হয়ে)
নাহানঃ তুমি কিছু করোনি?
আমিঃ আমি সত্যি কিছু করিনি।?

নাহানঃ মিথ্যে কেন বলছো? কাল আমায় কফি হাউসে একা ফেলে রেখে এসেছো কেন?না বলে চলে গিয়েছিলে কেন? একবার আমায় বলে যাওয়ার প্রয়োজনটা ও মনে করো নি।জানো আমার কত টেনশন হচ্ছিল? যার সাথে কফি শপে গেলে তাকে ফেলেই চলে এলে।ওয়াও,এতো কেয়ারলেস তুমি।তোমার জীবন বাঁচালাম আর তুমি আমাকে অপমানের মুখে ফেলে না বলে চলে এলে।আমাকে কত অপমান হতে হয়েছিল তুমি জানো?

আমি চুপচাপ তার কথা শুনছি।আমার বলার কিছু নেই। তাকে কি করে বলবো, তার কথা বলায় কাল ফারিশের হাতে থাপ্পড় খেয়েছি।এতো কথায় কোন উত্তর দেই নি।বড় মুখে কথা বলার মতো মুখ আমার নেই।সত্যি তো কাল আমি তাকে ফেলে চলে এসেছি। কিন্তু এছারাতো আমার কিছু করার ছিলো না।আমি বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলাম।

ফারিশ দরজার আড়াল থেকে আইভি ও নাহানকে একসাথে দেখে রাগে ফোঁস ফোঁস করে চলে গেল।আইভিকে এই রুমের দিকে আসতে দেখে ছিলো।তাই পিছু পিছু এখানে চলে আসে।এসে দেখে দুই জন কি ব্যাপারে কথা বলছে।যা তার সহ্য হয় নি।

কখন যে নাহান চেয়ার থেকে উঠে আমার সামনে দুই হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আমি খেয়াল করি নি।হঠাৎ করে নাহান আমার মুখের সামনে এগিয়ে একহাতে তুড়ি বাজালো।

নাহানঃ কি ম্যাম? কোথায় হারিয়ে গেলেন? আমি কতগুলো প্রশ্ন করেছি?
আমিঃ আপনি অপমানের কথা বলছিলেন?অপমান কি করে হলেন?

নাহান আমায় কালকের পুরো ঘটনা খুলে বললো।আমি হাসতে হাসতে পেটে হাত দিয়ে বসে পরলাম।বেচারা নাহান কালকে কত হেনেস্তা হয়েছে একজন মেয়ের কাছে।নাহান ধমকে উঠলো।

নাহানঃ সার্ট আপ।চুপ করবে তুমি।
আমিঃ আমি হাসতে চাই নি।কিন্তু না হেসে পারছি না।
( মুখ চেপে ধরে)
নাহানঃ তুমি কাল কোথায় গিয়েছিলে?
আমিঃ আমার বাড়িতে আর্জেন্ট কাজ ছিলো।
(আল্লাহ মাফ করো।আমি আর মিথ্যা বলতে চাই না।)
মনে মনে
নাহানঃ তুমি এখন আসতে পারো।(গম্ভীর কন্ঠে)
আমিঃ আমি এক্সট্রিমলি সরি।
নাহানঃ কেন?
আমিঃ কাল না বলে চলে যাওয়ার জন্য।?
নাহানঃ পরেরবার এমন করার আগে সাথের মানুষের জন্য ভাববে।ক্লাসে যাও।
আমিঃ আচ্ছা।

আমি চুপচাপ বের হয়ে গেলাম।বির বির করে ফারিশের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করছি।

আমিঃ ব্যাটা রাস্কেল,ইঁদুরের বাচ্চা,লম্বু,তালগাছ, ধলাচান মিয়া, তেলাপোকা, সাদা হনুমান, গরিলা কোথাকার।সব ঐ লম্বুর দোষ।ঐ ব্যাটার জন্য আমি এতগুলো কথা শুনলাম।ছোটবেলায় নিশ্চয় সাদা হনুমানটাকে ওর মা অনেক কমপ্লেন খাইয়েছে। এই জন্য এতো লম্বা।হরলিক্সও বোধহয় কম গিলেনি নয়লে এমন হাতির মতো শক্তি পেলো কোথায়?এবার আমি ফারিশের লম্বা ও শক্তির উৎস খুঁজে পেয়েছি। সব কিছু হরলিক্স ও কমপ্লেনের জাদু।আমিও তো বলি ব্যাটা এতো শক্তি পায় কই।বাহ্, আইভি তুই তো হেব্বি জিনিয়াস।তালগাছের রহস্য খুঁজে পেয়ে গেছিস।ইশ,আমি আগে যদি জানতাম হরলিক্স ও কমপ্লেন খেলে এতো শক্তি ও লম্বা হওয়া যায় তাহলে বেশি বেশি করে ঐ দুটোই খেতাম।কি ভুলটা করেছিস তুই আইভি।?মা যখন আমাকে দুধের সাথে হরলিক্স গুলে দিতো সেটা মা রুমের থেকে চলে যেতেই জানালা দিয়ে ফেলে দিতাম।তখনতো মজা লেগেছে ব্যাপারটা।কিছু খেতে হয়নি।এখন ভেবে দেখছি কত বড় ভুল করেছি।ওগুলো খেলেতো এখন আমার অনেক শক্তি থাকতো।আর আমি ঐ ধলাচান মিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে পারতাম।এখন আর ভেবে কি হবে?
এই জন্যই তো বলে-ভাবিয়া করিয়ো কাজ, করিয়া ভাবিও না।( বির বির করে)

এরকম আরো হাজার উদ্ভট চিন্তা করতে করতে আইভি হাটঁতে লাগলো।কত কিছু ভাবতে ভাবতে হাটঁছে।যা কখনো সম্ভব হবে না।আইভি সোজা এশা ও রিনির কাছে গেলো।

???

আইভি চলে যেতেই নাহানের ফোনে একটা কল এলো।ফোনের স্ক্রিনে নামটা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো।

নাহানঃ সূর্য আজ কোনদিকে উঠেছে।আমার তৃণলতা আজ আমাকে নিজে থেকে কল করেছে।
তৃণাঃ তোমার তো খবর নেই। কাল কতগুলো ফোন করেছি। একবার ধরো নি।তোমার সাথে কথা বলবো না।
নাহানঃ সরি মাই কুইন।কাল অনেক টায়ার্ড লেগেছে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
তৃণাঃ ইটস্ ওকে।তা এনগেজমেন্টের দিন- তারিখ কবে দিবে?
নাহানঃ আমার তৃণলতা যেদিন জার্মান থেকে ফিরবে সেদিন।
তৃণাঃ আমাকে কিছুদিন রেস্ট নিতে দিবে না।
নাহানঃ উহু।
তৃণাঃ কেন? কেউ নিয়ে যাবে নাকি আমায় এতো তারাহুরো করবে যে।
নাহানঃ হুম।কাউকে নিতে দিবো না।কলিজার ভেতর ঢুকিয়ে রাখবো।যাতে কারো নজর না লাগে।অনেক অপেক্ষা করেছি আর না।বিকজ আমার #শুধু তুই#

তৃণা ছোট বাচ্চার মতো খিলখিল করে হেসে উঠলো। নাহান মনোযোগ সহকারে ওর হাসি কান পেতে শুনছিলো।

নাহানঃ এমন করে হেসো না তৃণলতা আমি হার্ট অ্যাটাক করবো।
তৃণাঃ তাই বুঝি।
নাহানঃ পরে কথা হবে।আমাকে অফিসে যেতে হবে।আর্জেন্ট মিটিং আছে। বাই।
তৃণাঃ বাই।আর শোনো।
নাহানঃ বলেন আমার তৃণলতা।
তৃণাঃ নিজের খেয়াল রেখো।
নাহানঃ ঠিকমতো খাবার খাবে,বেশি কাজের চাপ নিবে না,মাথা গরম করবে না,সঠিক সময়ে ঘুমাবে।এগুলোইতো বলবে তাই না তৃণলতা।
তৃণাঃ হুম।
নাহানঃ আমি সব মেনে চলবো।রাখছি,তুমি তোমার খেয়াল রেখো।

নাহান ফোন রেখে দিলো।গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।তৃণা কল কেটে মিষ্টি করে হাসি দিলো।তৃণা ও নাহানের বিয়ে প্রায় ঠিক।তৃণা ওর বাবার একমাত্র মেয়ে। পুরো পরিবার জার্মানে থাকে।তৃণার বাবা ও নাহানের বাবার খুব ভালো বন্ধুত্ব।সেই সুবাদে তাদের দুজনের পরিচয়।দুজনের ভালো বন্ধুত্ব থেকে একসময় ভালোবাসা। দুই বছর ধরে সম্পর্ক।ওদের সম্পর্কের কথা দুই পরিবার খুশি মনে মেনে নিয়েছে।তৃণার পড়া- লেখা শেষ হতে কিছু সময় বাকি।পড়ালেখা শেষ হলেই তৃণার পরিবার বাংলাদেশ ফিরবে।তখন কিছুদিনের মধ্যে এনগেজমেন্ট করে পরে বিয়ের পিড়িঁতে বসবে।

???

আমি,রিনি,এশা ক্লাস শেষে বাসায় ফিরবো বলে রওনা দিয়েছি।গেইটের সামনে যেতেই দেখি তিন বাঁদর মানে ফারিশ,জন ও মেহেদী নায়কের স্টাইলে চোখে সানগ্লাস পরে বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেদীকে ওদের সাথে দেখে আমাদের তিন জনের চোখ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।মেহেদী ওদের সাথে!
এটা কি করে সম্ভব? কিছুদিন আগেওতো ওদের তিনজনের দা-কুমড়া সম্পর্ক ছিলো। ওরা তিনজন আমাদের তিনজনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।আমরা তিন বান্ধবী প্রত্যেকে প্রত্যকের চেহারার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।এই তিন বাঁদরের কি মাথা ঠিক আছে ? আমাদের নিয়ে তারা তিনজন নাকি লং ড্রাইভে যাবে।এই ভরদুপুরে ঢং- এর কথা শুনে আমার,এশা ও রিনির পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ওরা তিনজন পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছে।হঠাৎ…….

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে