ভদ্র স্যার♥রাগী বর-৩

0
5143

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ৩
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললাম।তার পরই হুশ হল এগুলো কি বললাম।কথার কোনো আগামাথা কিছুই নাই।
আস্তে আস্তে মাথা তুলে সামনের দিকে দেখলাম যে স্যার আমার দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তমার দিকে ফিরে দেখলাম ওর মুখ হা হয়ে গেছে।

আমি সেই যে সেখান থেকে এক দৌড় দিয়ে বাসায় আসলাম তারপর চারদিন কলেজ যাই নি।
পাঁচ দিনের দিন সকালে তমার ফোন আসল,
ওঁ হরবর করে বলে যাচ্ছে,”কিরে কলেজ আসছিস না কেনো।তোর হয়েছে কি?সেদিন ওসব কি বললি।আজ কলেজ আসিস।শুভ্র স্যার আজ ক্লাস টেস্ট নেবে।
স্যার বলেছে যে আসবে না তার প্রাকটিক্যালে নাম্বার কাটা যাবে।”

আর কি করার ফোন কেটে কলেজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম।
ক্লাসে গিয়ে দেখি শুভ্র স্যার এসে পরেছে।
আজ স্যার চকলেট কালারের একটি সার্ট পরেছে।আর সবসময়ের মতই মনে হচ্ছে এই রংটাতেই স্যারকে বেশি মানায়।
আমি চুপচাপ  মাথা নিচু করে ভেতরে ঢুকে বেঞ্চে বসলাম।বুঝতে পারছি স্যার আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তো লজ্জায় শেষ।স্যারকে আর কিভাবে মুখ দেখাবো তাই ভাবছি।

পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।ক্লাস টেস্ট আর কি,খাতা থেকে দুটো পৃষ্ঠা ছিড়ে তাতে বোর্ডের প্রশ্নের উত্তর লিখা।মোটামুটি ভালোই পারলাম।

স্যার বলল খাতা দেখে তৃতীয় পিরিয়ডেই দিয়ে দিবে।
তমা সেই কখন থেকে প্রশ্নের ঝুরি খুলে বসেছে।
আমি কোনো কথার জবাব না দিয়ে চুপ করে বসে আছি।

একটু পর স্যার এসে একে একে সবার খাতাই দিলো শুধু আমারটা বাদে।লজ্জায় আমি জিজ্ঞাসাও করতে পারলাম না।
কলেজ শেষে বাসায় যাওয়ার জন্য তমাকে নিয়ে বের হতেই শুভ্র স্যার পেছন থেকে “সুপ্তি শোনো” বলে ডেকে উঠল।

আমি বেশ অবাক হলাম।কারণ স্যার সব মেয়েদের নামের আগে মিস বলে ডাকে আর আপনি করে কথা বলে।এই প্রথম স্যার আমায় শুধু সুপ্তি বলে ডাকল,তাও আবার তুমি করে।আমি পিছনে ফিরে তাকালাম।চেহারায় এখনো লাজুক ভাব স্পষ্ট।স্যার আমার হাতে পরীক্ষার খাতাটি এক ভাঁজ করে দিয়ে চলে গেল।

আমি খাতার ভাঁজ খুলে দেখলাম যে ভেতরে লেখা,”পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত স্যারদেরও ছাত্রীর প্রতি ঐ পছন্দ হয়ে যায়।আর আমিও তাদের মধ্যে একজন”

নিচে তার সিগন্যাচার দেওয়া।আমি হালকা লজ্জা মিশ্রিত অবাক দৃষ্টি নিয়ে স্যারের চলে যাওয়ার দিকে তাকালাম আর সাথে সাথে স্যার হাটতে হাটতেই পিছনে ফিরে মাথা চুলকিয়ে একটি লাজুক হাসি দিয়ে আবার সামনে ফিরে গেল।
তমা আমাকে কাঁধ দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে খ্যাপানো শুরু করল।আর আমি আমার লাজে রাঙা চোখ লুকানোর জন্য হাতের খাতা দিয়ে মুখ ঢাকলাম।

এখন আর আমি ক্লাসে শুধু বইয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকি না।কিন্তু শুভ্র স্যারের বের হওয়ার সময় ঠিকই তাকাই।
ভিন্ন শুধু এতটুকুই যে স্যারও একবার পিছনে তাকিয়ে তারপর যায়।এই ব্যাপারটা আপাত দৃষ্টিতে দেখলে কিছুই না।কিন্তু আমাদের ভেতর এতটুকুতেই যেনো অনেক কিছু হয়ে যায়।

ব্যাপারটা শুধু এতটুকুতেই থেমে থাকে নি,স্যার এখন আমাকে বাসায় অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত পৌছেও দেয়।আমার বাসায় যাওয়ার রাস্তায় অটোর দুটি স্ট্যান্ড পরে।তাই দুইবার অটো বদলাতে হয়।তমার আর আমার বাড়ির রাস্তা পরের স্ট্যান্ড থেকে আলাদা হয়েছে।আগে দুটো অটো পাল্টিয়েই যেতাম।কিন্তু এখন অর্ধেক রাস্তা হেঁটে যাই স্যারের সাথে।সাথে তমাও থাকে।

হাঁটতে হাঁটতে কিছুও কথাও হয়।স্যার তো আমার থেকেও বেশি লাজুক।আমি তো স্পষ্ট কথা বলে ফেলি যা পেটে থাকে।
আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে,যখন স্যার আমার কিছু্ কথা শুনে মাথা চুলকিয়ে একটি লাজুক হাসি দেয়।
আমি কিন্তু এখনো তাকে স্যার বলেই ডাকি আর আপনি করে।কিন্তু স্যার আমায় তুমি করে কথা বলে আর সুপ্তির আগে মিস টা বাদ দিয়ে।

স্যারকে দেখি সবসময় লোকাল বাসে করে কলেজে আসতে।সেদিন দেখলাম একটি ভীড়ে ঠাসা বাস থেকে নামছে।কাঁধে সবসময়ের মতো অফিস ব্যাগ।যার কালো বেল্ট টা বুকের মাঝ বরাবর থাকে।তার গেটআপের সাথে খুব সুন্দর মানায়।ফর্সা মুখটা গরমে লাল হয়ে গিয়েছে।টপটপ করে ঘাম পড়ছে মুখ থেকে।
নিশ্চয়ই সারাটা রাস্তা দাঁড়িয়ে এসেছে।দেখে যে কি মায়া লাগল!

আজ আমাদের ক্লাসের বিদায় অনুষ্ঠান।টেস্ট পরীক্ষা এই কয়দিন আগেই শেষ হয়েছে।
ক্লাসের সব মেয়েরা ঠিক করেছে শাড়ি পরবে তাই আমিও আজ সবুজ রঙের একটি শাড়ি পরে এসেছি।আর হাত ভরে চুড়ি।সবাই বলে আমার চোখে নাকি জন্ম কাজল আছে তাই আর কাজল দেওয়া লাগে না।চুলগুলো মাঝখানে সিঁথি করে খোলা রেখেছি।আমার চুল আবার নিচ দিয়ে হালকা কোঁকড়ানো।ঠোঁটে একদম হালকা গোলাপী লিপস্টিক।ব্যাস এতটুকুই এর থেকে বেশি সাজ আমার ভালো লাগে না।মেকআপ তো একদমই না।

কলেজে যেতেই তমা বলতে লাগল স্যার নাকি আজ আমাকে দেখলে পাগল হয়ে যাবে।
স্যার আমাকে দেখে কি পাগল হবে,আমিই স্যারকে দেখে পাগল হয়ে গেলাম!
শুভ্র স্যার আজ একটি আকাশি রঙের পান্জাবী পরেছে।সাথে হোয়াইট কালারের জিন্স।হাতে একটি হোয়াইট কালারের ঘড়ি।পান্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করা।

স্যার স্টেজের পাশেই দাড়িয়ে ছিল।আমার দিকে চোখ পরতেই এক পলক তাকিয়ে স্টেজে উঠে মাইক হাতে নিলেন।সবাই চেয়ার আপ করে উঠল।স্যার রবীন্দ্র সংগীত গাইছেন।”ভালোবাসি ভালোবাসি”গানটা গাইছেন একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে।স্যার যে এত সুন্দর গান গাইতে পারেন তা আমার ভাবনারও বাইরে।স্যারের তো গায়ক হওয়া প্রয়োজন!আমি যেনো সুরের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছি।

সামনের বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের বিদায় উপলক্ষে সবাইকে একটি করে
পেনসিল বক্স দিচ্ছে।
দেওয়ার দায়িত্বটা শুভ্র স্যারের উপর।প্রিন্সিপাল স্যারের সবকিছুই অদ্ভুত। কলেজের স্টুডেন্টদের কি পেনসিল বক্স দেয়?

একটি ক্লাসের বাইরে আমরা সবাই সারি হয়ে দাড়িয়ে আছি।স্যার এক এক করে সবাইকে দিয়ে যাচ্ছে।স্যারের পাশে কার্টুনে ভরা একেক রঙের পেনসিল বক্স।
আমি আর তমা সবার পিছনে পরে গেছি।একে একে সবাই চলে গেছে।স্যার তমার হাতে একটি বক্স দিয়ে আমায় বলল,সুপ্তি তোমার কোন রং পছন্দ?
আমি একটু তার দিকে ইঙ্গিত দিয়েই জবাব দিলাম,স্কাই ব্লু।

স্যার কার্টুনে বক্সগুলো ঠিক করছিল আমার দিকে না তাকিয়েই একটি মুচকি হাসি দিল।
আমি নিচে তাকিয়ে শাড়ির আঁচলের কোনা আঙুল দিয়ে পেচাচ্ছিলাম।
হঠাৎ স্যার আমার সামনে এসে দাঁড়াল।আমি তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম,আমার বক্স কোথায়?
স্যার বলল,তুমি বক্স পাবে না।
আমি অবাক হয়ে বললাম,কেনো?
স্যার বলল,কারণ আর নেই।
আমি মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নকল অভিমানের সুরে বললাম,এতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে রয়েছি আর আমার বেলায়ই নেই!

স্যার আমার সামনে একটি ছোট অ্যাকুরিয়াম তুলে ধরলেন যার ভেতর একটি খুবই ছোট রঙিন মাছ।দেখেই আমার চোখ খুশিতে ঝিলিক মেরে উঠল।আমি ওটা হাতে নিতেই আবার আরেকটা একই রকমের মাছসহ অ্যাকুরিয়াম তুলে ধরল।
আমি জিগ্যেস করলাম দুটি কেনো?
স্যার বলল,একটি ছেলে মাছ আর একটি মেয়ে মাছ।
আমি আবারো ভুরু কুঁচকে জিগ্যাসা করলাম তাহলে দুটো আলাদা আলাদা রাখার কি দরকার?
একটার ভেতরেই তো থাকতে পারে।
স্যার মুচকি হেসে বলল,এখন আলাদাই থাকুক।

আমরা শুনসান রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।আমরা মানে আমি,তমা আর স্যার।আমার হাতে একটি অ্যাকুরিয়াম আর তমার হাতে একটা।
স্যার নিয়ে হাটতে চেয়েছিল কিন্তু আমি দেই নি।বলে দিয়েছি যে একবার যখন আমাকে দিয়েছেন আর দিচ্ছি না।
আজ তমা আমাদের মাঝখানে হাঁটছে।কেউ কোনো কথা বলছি না।তিনজনই চুপচাপ।
নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম,তমা স্যারকে বলেছিস আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।তমা আমার দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল,কোনটা।
আমিও একটু ভাব নিয়ে বললাম,ঐ যে আমি ঠিক
করেছি বিয়ে করব না।দেখলাম যে স্যার অন্য দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।

তখনি একটি বাচ্চা ছেলে এসে স্যারকে বলল,ভাই দুই দিন ধরে কিছু খাই না কিছু ট্যাকা দেন।
স্যার আমাদের এক মিনিট অপেক্ষা করতে বলে
ছেলেটিকে নিয়ে রাস্তার ওপারের একটি হোটেলে নিয়ে গেল।
হঠাৎ আমার মাথায় একটি ভাবনা এলো,স্যার যে আমায় দুই দুটো অ্যাকুরিয়াম এনে দিল,এগুলোতে নিশ্চয়ই অনেক টাকা খরচ হয়েছে,কারণ এই দুটো শুধু গোল কাচের বোলের মতোই না যেমনটা সচরাচর টিভিতে দেখায়।গোল বোল দুটির বাইরে দিয়ে খুব সুন্দর লতাপাতার ডিজাইন করা।স্বচ্ছ কাচের।দেখতে খুবই সুন্দর এবং দেখলে বোঝাও যায় যে এক্সপেনসিভ।
স্যার এতটাকা কেনো খরচ করতে গেলো।ধুরর ভালো লাগে না।কলেজের গেস্ট টিচারদের বেতন যে খুবই সীমিত তা আমি খুব ভালো করেই জানি।
তারউপর স্যার মেসে থাকে।

আচ্ছা আমি কি স্যারকে ভালোবাসি?
এমন তো নয় যে স্যার শুধু সুন্দর বলেই আমার ভালো লাগছে!
স্যারকে যে আমি খুবই পছন্দ করি সেখানে কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু আমি এটাও জানি যে পছন্দ আর ভালোবাসা এক নয়।
“পছন্দ মানে মানুষটির কাছে থাকতে খুবই ভালো লাগা আর ভালোবাসা মানে হলো সেই মানুষটির কাছে না থাকতে পারলে পাগলের মতো লাগা।”
আর আমি পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলতে চাই না।
স্যার কি আমায় শুধু পছন্দই করে নাকি ভালোবাসে?

আমার এসব ভাবনার ছেদ ঘটালো তমা, একটি খোঁচা দিয়ে বলল,কিরে স্যার তোকে এত সুন্দর ডাবল গিফট দিলো আর তুই কিছু দিবি না।
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,আমি কি দেব?
ও বলল,আরে কি দিবি আবার,যেটাতে ছেলেরা বেশি খুশি হয় সেটাই।একটু হাতটা ধরে হাঁটতে শুরু কর বা একটা ফ্লাইং কিস দে।
আমি অস্থির হয়ে বললাম,না বাবা।হাত ধরলে এক্সপেক্ট করবে গালে কিস দেওয়ার।গালে কিস দিলে আবার……..না না কোনো দরকার নেই!
বিয়ের আগে কোনো ধরণের স্পর্শ আমার ভালো লাগে না।তাছাড়া গুনাহও তো হয়।
তমা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল,তুই কোন যুগে পরে আছিস।
আমি ওকে বললাম,চুপ থাক।মডার্ণ হওয়া মনে উচ্ছৃঙ্খল হওয়া না।

এর ভেতরই স্যার এসে পড়ল।আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম।স্যারকে ডেকে আমি বললাম,স্যার শুধু শুধু এগুলো কেনো কিনেছেন?
স্যার তাকিয়ে বলল,কেনো,তোমার পছন্দ হয় নি?
আমি বললাম,পছন্দ তো অনেক হয়েছে কিন্তু টাকাও তো অনেক খরচ হয়ে গেলো তাই না?
স্যার বলল,সে চিন্তা তোমার করতে হবে না।

তমা আমায় ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করল,তুই আসলেই একটা হাঁদারাম।কই এখন আলাপ করবি,কলেজ তো শেষ এখন কিভাবে যোগাযোগ হবে,তা না!মহারাণী খরচ নিয়ে মরছে।

স্যার সম্ভবত আমাদের কথা শুনতে পেরেছে কারণ স্যার হাসছে।এই তমার মাইকের মতো গলা দিয়ে কি আর ফিসফিস কথা বের হয়।
অটো স্ট্যান্ডের কাছাকাছি চলে এসেছি।স্যার অনেকক্ষণ ধরেই কাচুমাচু করছে।কিছু যেনো বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।
তমা একটি অটোতে উঠে চলে গেছে।আমিও একটিতে উঠলাম তারপর আবার মাথা বের করে স্যারের উদ্দেশ্য বললাম,01×××××××××,
আমার ফোন নাম্বার।

তারপর অটো চলতে শুরু করল।পেছনে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম স্যার আবার মাথা চুলকিয়ে তার লাজুক হাসি দিচ্ছে।
এখন প্রতিদিন রাতে আমরা ফোনে কথা বলি।পাঁচ মিনিটের জন্য।আমি আরও বলতে চাই কিন্তু স্যার মানুষ তো!আমার সামনে পরীক্ষা….হেনতেন এসব বলে পাঁচ মিনিটের বেশি কথা একদিনও বলে না।

দেখা হয় সপ্তাহে তিনদিন।আমি আর তমা কলেজ থেকে খানিক দূরে আরেক স্যারের কাছে ইংলিশ প্রাইভেট পড়তে যাই তখন।আমাদের প্রাইভেট দুপুর তিনটা বাজে পড়া শেষ হয়।
তো স্যার শুনে সেখানে আসা শুরু করল।
আমি অনেকবার বারণ করেছি কারণ কলেজ ছুটি হয় দুইটা বাজে।কলেজের সব কাজ সেরে আসতে আসতে আড়াইটা বেজে যায়।এখন ত্রিশ মিনিটে স্যার নিশ্চয়ই গোসল খাওয়া দাওয়া সব করতে পারে না।
তাই স্যারকে আমি বললাম,স্যার শুধু শুধু এত কষ্ট
করে এখানে আসার কি দরকার?
স্যার মুচকি হেসে জবাব দিল,কষ্ট যাতে না হয় তাই তো আসি।
আমার সেন্স অব হিউমার বেশি ভালো না।তবে এই কথাটার মানে ঠিকই বুঝেছি।
আমি আবার জিগ্যাসা করলাম,খাওয়া দাওয়া করেছেন?
স্যার মাথা নাড়িয়ে না বলল।
আমি চোখ দিয়ে ইশারা করে শাসন করলাম।
স্যার আমাকে স্যরি বলে বলল,আচ্ছা চল ওখানে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে যাই।
কিন্তু আমি স্যারকে জোর করে একটি ফুচকার দোকানে নিয়ে গেলাম।জানি খালি পেটে ফুচকা খাওয়া ঠিক না।কিন্তু কি করার,তিনজন মানুষ যদি ওমন রেস্টুরেন্টে যাই তবে স্যারের অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে।
খেয়াল করলাম স্যার আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি স্যারের চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে ইশারা করলাম কি?
স্যার মুচকি হেসে বলল,কিছু না।

তারপর দিন স্যার আসল।খেয়াল করলাম স্যার আজ ফরমাল শার্ট পরে নি।আজ স্যার ক্যাসুয়াল ড্রেস পরেছে। নেবি ব্লু কালারের জিন্স,হোয়াইট কালারের টি শার্টের উপর লাল কালো চেকের শার্ট পরেছে।শার্টের বোতাম সব খোলা।বাতাসে হালকা হালকা উড়ছে।দেখলাম যে স্যার ঘেমে টেমে অস্থির।ঘাম টপটপ করে পড়ছে মুখ দিয়ে।
আমি কিছু না ভেবেই আমার ওড়না দিয়ে স্যারের মুখ মুছে দিচ্ছিলাম।স্যার যখন আমার দিকে তাকাল আমি বেশ লজ্জা পেলাম।আমি স্যারকে একটি মাঠের মত জায়গা দেখিয়ে বসতে বললাম।

তারপর ব্যাগ থেকে একটি টিফিন বক্স বের করে তার সামনে দিলাম।স্যার চোখ দিয়ে ইশারা করল কি?
আমি বললাম,নুডুলস।আমি বানিয়েছি আপনার জন্য।আমি শুধু নুডুলসই বানাতে পারি।
স্যার খাওয়া শুরু করল আর আমি তাকিয়ে রইলাম।মাঝে মাঝে আমাকেও খাইয়ে দিতে লাগল।আবার আমি তাকে।
এভাবেই চলতে লাগল।আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ টু না বলেও আমাদের ভেতর প্রেম প্রেম ভাবটা জমে গেল।
আমি প্রতিদিন স্যারের জন্য নুডুলস বানিয়ে নিতে লাগলাম।মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে মাঠ ভরে দৌড়াদৌড়িও করতাম।আর সাথে পাঁচ মিনিটের ফোন কল তো আছেই।
ইদানিং খুব বেশিই খুশি থাকি।মন যেন কোন অজানা সুখের শিহরণে ভেসে যাচ্ছে।
দেখতে দেখতে পরীক্ষাও খুব কাছে এসে পড়ল।
লাইব্রেরীর একটি বই আমার কাছে ছিল।তাই সেটা জমা দেওয়ার জন্য কলেজে গেলাম।শুভ্র স্যারকে বলি নি ভেবেছি হঠাৎ করে গিয়ে চমকে দিব।বই জমা দিয়ে খুব এক্সাইটেড হয়ে কেবিনের দরজাটা একটু ফাঁক করতেই যা দেখলাম…….

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে