বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১৫+১৬

0
1936

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৫

বাতরুমে অনেক্ষন ধরে আটকে আছে রিদ। বার বার দরজা থাপড়াচ্ছে সে। বাইরে বুকে দু হাত গুজে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে আরশি। আরশি আজ কঠোর হয়ে আছে। বেটা সারা দিন আমার পেছনে পড়ে থাকিস। জ্বালিয়ে শেষ করিস আমায়। আজ ভালোভাবেই জব্দ করেছি তোকে। বাহ্ সকালে কি সুন্দরে আমাকে তার চাকরানী বানিয়ে ফেলেছিলো। এবার বুঝ আরশির পেছনে লাগার ফল কেমন।
আজ বেটাকে ভালোভাবে শিক্ষা দিতে হবে। যাতে সব শেষে বলে উঠে। আরশি আর তোর সাথে কোনো ফাজলামি করবোনা। ছেরে দে মা কেদে বাচি।

রিদ বিছানায় সুয়ে আছে। আজ বেচারার অবস্থা ছিলো নাজেহাল। রাত্রি চৌধুরি আরশিকে ডেকে বলে উঠে,
– এই আরশি, রিদের জন্য এক গ্লাস সেলাইন বানিয়ে আনতো।
কথাটা শুনা মাত্রই রিদ বলে উঠে,
– এই ফুফি না না না, আমি এখন পুরাপুরি সুস্থ আছি। তাকে দিয়ে আমার খেদমত করালে পরে দেখা যাবে এর চাইতেও করুন অবস্থা করে ছারবে।
– এর চাইতেও করুন অবস্থা করে ছারবে মানে? আরশি কি তোর সাথে কিছু করেছে?
কথাটা একটু রাগি ভাব নিয়ে বলে উঠে রাত্রি চৌধুরি।
আরশির দিকে তাকিয়ে একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলে উঠে,
– না না ফুফি সে কিছু করেনি। এমনিই সে যে পরিমান বাদর। তাই কথার কথা বললাম আরকি। আর সে তো সারাজীবনই খেদমত করবে এখন বিয়ের আগে এতো কষ্ট করিও না ওকে দিয়ে।
রাত্রি চৌধুরি একটু ভ্রু যুগল কুচকে বলে উঠে,
– সারা জীবন খেদমদ করবে মানে?
মুহুর্তেই বিষম উঠে গেলো রিদের। আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– না না ফুফি আমি এভাবে বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি যে, আরশিতো বিয়ের পর তার শশুর বাড়ির মানুষের খেদমত করতে করতে পেরেশান হয়ে যাবে। তাই বিয়ের আগে তাকে দিয়ে কোনো কাজ করিও না এটাই বলছি আমি।
– ও তাই বল।
পাশ থেকে আরশি বলে উঠে,
– বাদ দাও মা, রিদ ভাইয়ের এমনিতেই মাথার তার দু,একটা ছিরে গেছে। আর এখন এই অবস্থা। তাই মনে হয় আবোল তাবোল বকছে।
রিদ দাত মুখ খিচে বলে উঠে,
– দেখলে ফুফি। বাদরের বাদর তোমার সামনে আমায় কিভাবে অপমান করছে।
– হ্যা আমি সত্যিটা বলতেই তা অপমানিত হয়ে গেলে। আর জানো মা, রাত ভাইয়া তো রিদ ভাইয়ের অবস্থার কথা সুনে হাসতে হাসতে শেষ। ভাবিও একই ভাবে লুতুপুতু খাচ্ছে। ভাইয়া ভাবিকে কলেজ থেকে নিয়ে বাড়ি চলে আসছে এখন। ভাগ্যিস আমি কলেজে জাইনি আজ নাহলে কত সুন্দর একটা মুহুর্ত মিস করে ফেলতাম।
রিদ দাত খিটখিটে বির বির করে বলে উঠে, তুমি যে আজ কেনো কলেজে যাওনি তা তো আমিই ভালো জানি।

রাতে লুডু খেলতে বসলো তারা চার জন। রাত ও রিদ একটু আগে বাইরে থেকে এসেছে। আর আসতেই টেনে নিয়ে লুডু খেলার আসর জমায় বৃষ্টি ও আরশি। একটা মাঝারি সাইজের বোর্ডেই খেলতে বসছে তারা। আরশিই বললো বোর্ডে খেলবে। ফোনে খেললে তো আর ধাপ্পা মারা যাবেনা। আরশি ও বৃষ্টি মিলে এক টিম। রাত ও রিদ মিলে এক টিম।
খেলা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় রাত খেয়াল করলো আরশি ও বৃষ্টির গুটি পাকা ঘরে। রাত খটমটিয়ে বলে উঠে,
– এই জন্যই তোদের মতো চোরের সাথে খেলতে চাই না। তোদের গুটি পাকা ঘরে গেলো কিভাবে?
আরশি সহজ ভাবেই বলে উঠে,
– আরে আজব, সব ঘর ঘুরেই তো ঢুকলো।
– তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তোদের ছয় উঠলো তিন টা নাকি চারটা। তাহলে তোদের দুজনের সাতটা গুটি মাঠে দৌড়া দৌড়ি করছে কিভাবে।
রিদও পাশ থেকে তাল মিলিয়ে বলে উঠে,
– হুম তাই তো।
আরশি রিদের দিকে চেয়ে চোখ রাঙিয়ে একটা মুচকি হাসি দিতেই, রিদ একটা ঢোগ গিলে বলে উঠে,
– না রাত ঠিকই তো আছে। ওদের উঠেছে তাই উঠিয়েছে। এতো কথা না বলে খেলনা।
– ঠিক আছে মানে। আমি নিশ্চিত ওরা চুরি করে খেলছে। আর তুই কি আমার টিমের প্লেয়ার নাকি ওদের দলের? হটাৎ ওদের হয়ে দালালি করছিস কেনো?
পাশে বসে তাদের ঝগড়া দেখে পিট পিট করে হাসছে বৃষ্টি।

রাতের খাবার খেতে আসলো সবাই। রিদের প্লেটে খাবার তুলে দিতেই সে বলে উঠে,
– খাবার কে রেধেছে ফুফি?
,
,
কেটে গেলো একদিন।
কলেজ ছুটিতে রাতের জন্য অপেক্ষা করছে বৃষ্টি। ইদানিং ছিটুর পর বৃষ্টিকে বাসায় নিয়ে আসে রাতই। আরশিকে কিছুটা দুর থেকে তুলতে হয়, দুজনের কলেজ আলাদা।
ওখানে দাড়িয়ে থাকতেই দেখা হয় রাতের বন্ধু রাফির সাথে।
– আরে ভাবি কেমন আছেন?
বৃষ্টি আশ পাশে তাকিয়ে বলে উঠে,
– ভাবি কাকে বলছেন ভাইয়া?
– কেনো আপনাকে? রাতের বৌ তো আমার ভাবিই হবে তাইনা?
– কিন্তু আমি তো ওর কাজিন হই। সেদিন বললো না আপনাকে?
– রাত আমাকে আপনাদের সম্পর্কে সব বলেছে। এবং আপনি যে তার স্ত্রী সেটাও বলেছে। যদিও আমি বাইরে থাকতে তেমন একটা যোগাযোগ হতোনা তার সাথে। কিন্তু রাতের মুখে যা শুনলাম তাতে আমারো খুব খারাপ লেগেছে। এতো বছরের প্রেমও এভাবে ধোকা দিলো তাকে। রাত হয়তো এখনো ভুলতে পারেনি তাকে। কারণ বর্ষার কথা উঠতেই তার চোখে মুখে দেখেছি আমি কান্নার ছাপ। এতো বছর ধরে গড়ে তোলা ভালোবাসার পাত্রটা হুট করে খালি হয়ে যাওয়াতে হয়তো একটু বেশিই আঘাত পেয়েছে সে। তো যাই হোক। আপনিই এখন তার সব, খেয়াল রাখবেন তার। দোয়া করি অনেক সুখি হোন আপনারা। আর হ্যা, আমি কয়েকদিন পর আবার চলে যাচ্ছি। দুই মাসের ছুটিতে এসেছিলাম মাত্র। দোয়া করবেন আমার জন্য।

রাতকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি বৃষ্টি। কিন্তু মনে তার চিন্তার ভাজ। রাত কি এখনো আপুকে সত্যিই ভুলতে পারেনি? তাহলে রাফি ভাইয়া যে বললো, আপুর কথা মনে উঠতেই তার চোখে এখনো পানি দেখতে পায়। তাহলে আপুকে কি এখনো ভালোবাসে বাত? আপু যদি ওই লোকটার কাছে পতারনার শিকার হয়ে আবার ফিরে আসে তাহলে কি আমায় দুরে ঠেলে দিবে রাত?

বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার খেলা চলছে। সন্ধার পর সবাই দল বেধে বসলো টিভি দেখতে। রুদ্র চৌধুরি এদিকটায় একটু অদ্ভুত মানুষ। যখন বাংলাদেশের খেলা চলবে তখন তার সাথে দল বেধে সবাইকে দেখতে হবে। কারণ তার কথা হলো দল বেধে খেলা দেখতে আলাদা একটা মজা।
অনেক্ষন টিভির সামনে বসে খেলা দেখাটা একটা আজাইরা কাজ ছারা কিছুই না, বানি তে আরশি চৌধুরি। তাই সে বার বার হাই তুলে সোফায় ঢলে পড়ছে। তার ভাবনা হয়তো এমন ঘুমের ভান ধরলে রুদ্র চৌধুরি তাকে রুমে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু না এমনটা কিছুই হলো না। রুদ্র চৌধুরি বলে উঠে,
– ঘুম আসলে চোখে পানি ছিটিয়ে আয়। দল বেধে খেলা দেখায় কতো মজা তা জানিস?
তোদের একটা গল্প বলি। আমার ছোট বেলার গল্প। আমি তখন থাকতাম গ্রামে। এবং ওটাই ছিলো আমার জন্মস্থান ও বাসস্থান। তখন আমরা বন্ধু বান্ধবরা এমন খেলা চললে দল বেধে চলে যেতাম খেলা দেখতে। গ্রামে কয়েকটা দোকান ছিলো। ওখানে মাত্র একটা দোকানেই টিভি ছিলো। সব বন্ধুরা গিয়ে উঠতাম ওই দোকানেই। এই জন্য তোর দাদার হাতে কতো মার খেয়েছি তার হিসেব নেই। এক দিন তো রাস্তার পাশের একট বাশের বেত কেটে। দোকান থেকে পিটাতে পিটাতে বাড়ি গিয়ে নিয়েছিলো সন্ধা বেলায়। পড়তে না বসে খেলা দেখতে চলে গিয়েছিলাম তাই। ওইদিন খুব বেশিই মেরেছিলো। তার পর থেকে এসব আড্ডবাজি বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দেই। গ্রামে আমাদের অনেক ভিটে ছিলো। যেগুলো পরিত্যাক্ত হয়ে পরে থাকতো বেশির ভাগ। বড় হয়ে পড়া লেখা শেষ করে ওসব জমি গুলো বেচে, শহরে এসে ব্যাবসায় জড়িয়ে পরি। আর আজ এই পর্যন্ত। এই খেলা দেখার জন্য কম মার খাইনি। বাবার প্রতি তখন খুব রাগ হতো। এক দু,বার বাড়ি থিকে পালিয়ে গিয়ে কোথাও জায়গা না পেয়ে আবার ফিরে এসেছি। কিন্তু হারিয়ে ফেলার পর এখন বুঝি বাবা কি জিনিস। যে বাবা মারের পরও আমায় ভালোবেসেবুকে জড়িয়ে বলতেন, আড্ডাবাজি করা ভালো না বাবা। কথায় আছে না, লেখাপড়া করে যে গাড়ি গোড়ায় চড়ে সে। কিন্তু আজ বাড়ি গাড়ি সবই আছে নেই শুধু সেই বাবা-মা। এতটুকু বলেই চোখের কোনে জমে থাকা জল গুলো মুছে নেয় রুদ্র চৌধিরি। রাত গিয়ে তার পাশে বসে,
– ধুর বাবা, কে বলেছে তোমার বাবা নেই, এই যে আমি আছি।
রুদ্র চৌধুরি হেসে বলে উঠে,
– হুম আমার এখন বাবা তুই থাকলেও মা কিন্তু দুইটা। এই যে, আরশি ও বৃষ্টি এখন এরাই আমার মা আর তুই বাবা।
পাশ থেকে রিদ বলে উঠে,
– তার মানে আমি তোমাদের কেও না?
– ধুর পাগল কেও না কিরে, তুই তো আমার এক মাত্র আঙ্কেল। সবাই জদি বাবা হয় তাহলে আঙ্কেল হবে কে তুই বল।

– আরশির জন্য একটা ভালো সম্বোন্ধ এসেছে। আমার বন্ধুর ছেলে। নিজেদের বিজনেস আছে আর ছেলে বাইরে সেটেল।
এতো হাসি ঠাট্টার মাঝে রুদ্র চৌধুরির মুখে এমন কথা শুনে বুকটা ধুক করে উঠে রিদের। আরশিও যেনো অবাকের চরম সীমানায়।
রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– মেয়েটার আগে পড়া লোখা শেষ হোক তার পর এসব নিয়ে ভাবি আমরা।
– পড়া লেখা তারা বিয়ের পর করাবে। আর ওর তো এখন আইন অনুযায়ি বিয়ের বয়সও হয়ে গেছে। আর আমাদের দাদি/নানি এদের বিয়ে হয়েছিলো ১২-১৩ বছরের মধ্যে। দু,দিন পর দেশে আসছে ছেলে।

রাতের বেলায় সকলে ঘুমের ঘরে বিভোর। ছাদে হাটাহাটি করছে রিদ। মনে রয়েছে চরম উত্তেজনা। সন্ধায় রুদ্র চৌধুরির বলা কথা গুলো দু, কান জুরে বাজছে তার। আরশির বিয়ে তাও আবার অন্য ছেলের সাথে, ইম্পসিবল। যার জন্য এতো কিছু করলাম। বাবা মাকে ছেরে দেশে পরে আছি যার জন্য, তাকেই কিনা চোখের সামনে অন্য কারো হয়ে যাতে দেখবো, এটা মোটেও আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। কিভাবে বলবো সবাইকে আমার মনের কথা? কিভাবে বলবো যে আরশিকে আমি চাই তাকে ছারা আমি শুন্য। না কিচ্ছু মাথায় আসছেনা আমার, সুধু এতটুকু মাথায় আসছে, তাকে ছারা আমি কিছুতেই ভালো থাকতে পারবোনা। কারন তার খুনসুটি, পাগলামি, জ্বালাতন এগুলোতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এসব ভুলে আমি অন্য কাওকেই নিজের জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবোনা। কিছুতেই না।

সকালে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নাস্তা বানাতে চলে গেলো বৃষ্টি। রাতকে ডেকে দিতে আসলো সে। কারণ তার অফিসে যেতে হবে। রাতের পাশে বসে মিষ্টি শুরে ডাক দিলো বৃষ্টি। রাতের কোনো হুস নেই সেদিকে। বৃষ্টি এবার দু হাত দিয়ে নেরে নেরে বলে উঠে,
– উঠবেন নাকি পানি ঢেলে দিবো?
– রাত ঘুমু ঘুমু চোখে বলে উঠে, পানি কেনো ঢালবে? আদর করতে যানোনা?
রাতের কথায় হা হয়ে গেলো বৃষ্টির গাল। রাত আঙুল দিয়ে গালে দেখিয়ে দেয়, এখানে আদর করো।
বৃষ্টি লাজুক ভঙ্গিতে বলে উঠে,
– আমি পারবো না।
– তাহলে আমিও উঠবো না।
– তাহলে ঘুমান আপনি আমি গেলাম।
– আচ্ছা যাও, আমায় একটু ঘুমাতে দাও।
সাত পাঁচ ভেবে বৃষ্টি নিচু হয়ে রাতের গালে একটু গভির ভাবে চুমু দিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। রাত হা হয়ে রইলো। কারন সে হয়তো ভাবেনি বৃষ্টির মতো লাজুক মেয়ে নিজে তার গালে এভাবে চুমু একে দিবে।

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে রাত। টাওয়াল দিয়ে মুখটা মুখে নিলো সে। তখনি চোখ পরে বিছানায় থাকা বৃষ্টির ফোনটা বাজছে। রাত কয়েক বার বৃষ্টিকে ডাক দিলেও শুনতে পায়নি বৃষ্টি। রাত ফোনটা হাতে তুলে দেখে বাংলাদেশি নাম্বার। রিসিভ করে কানে তুলে নিলো রাত।
ওপাস থেকে ভেষে আসে একটা মেয়েলি কন্ঠ। রাত চিনতে না পেরে বলে উঠে,
– কে বলছেন?
রাতের কন্ঠ বেজে উঠতেই নিশ্চুপ হয়ে গেলো ওপাস। একটু একটু কান্নার শব্দ আসছে ওপাশ থেকে। বুঝাই যাচ্ছে যে মেয়েটা ফোন দিয়েছে সে কাদছে। কিন্তু কে এই মেয়ে?
– হ্যালো কে বলছেন?
ওপাশ থেকে মেয়েটা একটু কেদে বলে উঠে,
– রাত……..
– হুম, আপনার পরিচয়টা দিবেন প্লিজ?
-রাত……
ওপাশ থেকে কান্নার গতি আরো বারছে।
– আরে বলুন না আপনি কে? নাহলে ফোন রাখছি আমি।
– রাত, রাত, রাত……..
এবার নিস্তব্দ হয়ে গেলো রাতও। এবার আর কন্ঠটা চিনতে অসুবিধা হলোনা তার। তার চোখের কোনেও ধিরে ধিরে জমে যাচ্ছে জল।

To be continue……….

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৬

ফোনে তীব্র গতিতে বেড়ে চলছে মেয়েটার কান্নার গতি। স্তব্ধ হয়ে আছে রাত। সেই চেনা কন্ঠস্বর অচেনা পরিচয়ে রাতের কানে বেজে উঠতেই চোখের কোনে পানি জমে গেলো তার। কিছু বলছেনা সে, শুধু বর্ষার কান্নার শব্দ গুলো কানে আসছে তার।
বর্ষা চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
– কেমন আছো রাত।
রাত গম্ভির গলায় উত্তর দেয়,
– বেচে আছি।
– এভাবে কেনো বলছো তুমি?
– হ্যা আছি ভালোই আছি। তোমার কি খবর? আশা করি হাসবেন্ট নিয়ে সুখেই আছো। দোয়া করি চলতি পথে বেঈমান গুলোও সুখে থাকুক।
আবারও কন্নায় ভেঙে পড়ে বর্ষা। মাঝে মাঝে হিচকি তুলে কাদছে সে।
রাত আবারও ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– অজথা কান্নার অভিনয় করে লাভ নেই। ইনজয় করো, আমার থেকেও বেটার কাওকে পেয়েছো ইনজয় করো সময়টা।
বৃষ্টি এবার কাদতে কাদতে বলে উঠে,
– সেদিন বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর, তিহানদের বাসায় উঠেছিলাম। কেও ছিলোনা তাদের বাসায়। শুধু আমি আর তিহান। একা একটা একটা ছেলে ও একটা মেয়ে তাও আবার এই রাতে, নিজেকে আমি সেইভ ভাবিনি তখন। কিন্তু তিহানের চরিত্রে আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য দেখিনি। সেদিন মনে হয়েছিলো এই তিহানকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। তার পরদিব তিহানের সাথে চলে গেলাম ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে। ভালোই কাটছিলো দিন। খুব শিগ্রই বিয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। তিহানের ওখানকার এক বান্ধবির জম্মদিন পার্টতে গিয়েছিলাম। পার্টি শেষে সবাই চলে যাচ্ছে।আমি তখন তিহানকে বাইরে দাড় করিয়ে একটু ওয়াশ রুমে যাই। বের হয়ে দেখি তিহান সেখানে নেই। একটু হেটে উপরে যেতেই দেখি একটা রুম থেকে অদ্ভুদ শব্দ কানে আসছে। অতি ব্যাস্ততায় হয়তো দরজাটা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলো। দরজা খুলে ভেতরে যেতেই দেখি তিহান ও তার বান্ধবি টা। এতটুকু বলেই হু হু করে কেদে দিলো বর্ষা। তার পর ওখানে এক বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয় আমার। তার হেল্পে আমি তিহানের থেকে মুক্তি পাই। কারন তিহান আমায় ভালোবাসেনি। চিট করেছে আমার সাথে।
রাত গম্ভির গলায় বলে উঠে,
– এসব কথা আমায় বলছো কেনো? আমি কি শুনতে চেয়েছি তোমার কাছে?
বর্ষা এখনো কাদছে,
রাত বলে উঠে,
– ওকে রাখলাম আমি, তোমার সাথে কথা বলে সময়টুকু নষ্ট করতে চাইনা আমি।
– রাত আমি আবার তোমার জীবনে………..
বাকিটা বলার আগেই ফোন কেটে দেয় রাত। হয়তো কথাটা শুনতে পায়নি সে।
রাত ফোনটা রেখে বিছানায় গিয়ে বসে দু,পা প্লোড়ে ছড়ানো। একটা অস্থিকর ভাব নিয়ে দু, হাত দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো পেছনের দিকে নিয়ে আবার ছেরে দিলো সে। ছোট চুল গুলো পুনরায় আবার সামনে চলে আসে। রাতের চোখে পানি। যেই বর্ষাকে সে সব সময় চাইতো কষ্ট থেকে আগলে রাখতে আর সেই বর্ষাই আজ এতোটা কষ্টে আছে। যাই হোক সবই তার নিজের ভুলের প্রশ্চিত্ব।
বৃষ্টি রুমে আসতেই ঝটপট চোখের পানি মুছে ওয়াশ রুমে চলে যায় রাত। চোখে পানি ছিটিয়ে আবার বেড়িয়ে আসে সে। বৃষ্ট তখন ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে বিছানায়? রাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলেউঠে,
– আপনি কাদছিলেন?
– ক কই না তো।
– আপনার মনটাকে মাঝে মাঝে এমন বিষন্ন দেখতে একধম ভালো লাগেনা। একটু হাসি খুশু থাকেন না প্লিজ।
কথাটা রাতের খুব কাছাকাছি গিয়ে বলে উঠে বৃষ্টি।
রাত এবার তারাহুরা করে নিচে চলে যেতেই বৃষ্টি পেছন থেকে হাতটা ধরে বলে উঠে,
– আপুর সাথে কথা হয়েছে তাই না? কল লপস্টে দেখলাম একটু আগে আপুর নাম্বারটা থেকে কল এসেছে আর তা রিসিভও হয়েছে। কি বলেছে আপু?
– না এমনি কেমন আছে এসব আর কি।
– একটা প্রশ্ন করবো?
রাত এবার ঘুরেবৃষ্টির দু গালেহাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বলে উঠে,
– কি?
– আপু জদি কখনো ফিরে আশে তাহলে কি আমায় দুড়ে ঠেলে দিবেন?
,
,
,
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে আরশি ও তার বাবার পছন্দের ছেলেটা। গতকাল দেশে এসেছে সে। আরশির সাথে আজ দেখা করতে এসেছে এই রেস্টুরেন্টে। রিদও আরশিকে ফলো করতে করতে এসেছে এখানে। রেষ্টুরেন্টের অপর মাথায় মাস্ক পড়ে মাথায় একটা কেপ দিয়ে বসে আছে রিদ।
আরি ও লোকটা খুব হেসে হেসেই কথা বলছে। তা কেনো জানি সহ্য হচ্ছেনা রিদের। ইচ্ছে করছে এখনি উঠে আরশিকে ভুবন কাপানো দু,টা চর দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ছেলেটাকে বলতে,
– আরশি ইজ মাই লাইফ।
কিন্তু তা করলোনা সে। উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।

রাতের বেলায় ছাদে দাড়িয়ে আছে রিদ। আরশি রিদের পাশে এসে দাড়ায়।
– ভাইয়া ডেকেছিলে?
– হুম, আজ ছেলেটাকে কেমন লাগলো?
– ভালোই তো ছিলো। খারাপ না।
– আমার থেকেও ভালো? দেখতে শুনতে ভালো হলে প্যামিলি ব্যাগ রাউন্ড, ছেলের ভালো পজিশন থাকলেই কি সে ফার্পেক্ট হয়ে যায়?
– মানে?
– তার মাঝে এমন কি আছে যা আমার মাঝে নেই? কিন্তু আমার মাঝে যা আছে তা ওই ছেলেটার মাঝে নেই। আর তা হলো কাওকে এক তরফা ভালোবাসা। হয়তো তার মাঝেও সেটা আছে। কিন্তু আমর থেকে কেও তোকে কখনোই বেশি ভালোবাসতে পারবেনা। একটা ছেলে কাওকে কতোটা ভালোবাসলে ফ্যামিলি ছেরে হাজার মাইল দুরে বছরের পর বছর একা পরে থাকে? কখনো ভেবে দেখেছিস একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতোটা ভালো বাসলে তার জীবনের বাজি ধরতেও দিধা বোধ করেনা। যেমনটা আমি করেছিলাম তুই যখন ক্লাস নাইনে ছিলি। চাইলে সেদিন তোকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে আমি সরে যেতে পারতাম। কিন্তু সেদিন আমি নিজের মরনকে যতটা ভয় করিনি তার চেয়ে বেশি ভয় ছিলো তোকে হারিয়ে ফেলার। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে সেদিন তোকে বাচিয়ে দির্ঘ এক মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছি ওই হসপিটালে। আমি সত্যিই ব্যর্থ। ভুল কাওকে এতোটা বেশি ভালোবেসেছি বলে। আমি আজ তোর কাছ থেকে জাস্ট একটা কথাই শুনতে চাই। তুই কি আমায় ভালোবাসিস নাকি আমি আমার ধারনাটাই ভুল ছিলো?
– রিদ ভাই আমি কখনোই তোমার এসব কথায় সিরিয়াস ছিলাম না। আমি ভাবতায় হয়তো তুমি আমায় নিয়ে মজা করতে। আর তোমাকে আমি যাষ্ট ভাইয়ের মতোই দেখতাম। কখনো ওসব কোনো অনুভুতি তোমার জন্য সৃষ্টি হয়নি আমার। তুমি আমার সাথে মজা করতে আমিও তোমার সাথে মজা করতাম, যাস্ট এতটুকুই। আর তুমি আমাকে সব সময় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিতে তাই আমিও তোমায় মাঝে মাঝে সারপ্রাইজ দিতাম। কিন্তু কেনো তুমি এটাকে এতো এগিয়ে নিতে চাইছো? কেনো আমার তোমাকে ভালোই বাসতে হবে? কেনো তোমাকে আমার বয়ফ্রেন্ডই হতে হবে? হোয়াই? আর তুমি আমার জন্য অনেক করেছো এটা আমি শিকার করছি তাই বলে এভাবে বেহায়ার মতো ওসবের বিনিময় ভালোবাসা চাইছো।
– ভালোবাসাকে কোনো কিছু দিয়ে বিনিময় করা যায় না আরশি।আর আমি বেহায়া, তোকে হারানোর ভয়ে আমি বেহায়া হয়ে গেছি আজ। প্লিজ আরশি এমন করিস না আমার সাথে। প্রতিদিনের মতো বলনা যে এটাও কোনো মজা ছিলো।
– দেখো রিদ ভাই, অন্য কোনো ছেলে হলে এখন থাপ্পর দিয়ে সব দাত ফেলে দিতাম। তুমি দেখে এখনো সম্মান দিয়েই কথা বলছি আমি। নেক্সট টাইম এসব নিয়ে বাড়ির কারো সাথে কোনো কথাই বলবে না তুমি। তাহলে কিন্তু আমিও ভুলে যাবো যে তুমি আমার কাজিন হও এবং আমার থেকে বড়।

পরদিন সকালে বাড়ি চলে যায় রিদ। এই বাড়িতে আর এক মুহুর্তও থাকতে ইচ্ছে করছে না তার। যতক্ষন এ বাড়িতে থাকছে ততোক্ষনই বুকের ভেতরটা শুধু খাঁ খাঁ করে উঠছে।
এভাবেই কেটে গেলো আরো দুদিন। মনে তীব্র কষ্ট রাত ভর চাপা কান্নায় দুইটা দিন পার হয়ে গেছে রিদের।
রাতে বৃষ্টির বাবাকে ফোন দেয় রিদ। জানায় পরদিন বিকেলে তার ফ্লাইট। বাবা মায়ের কাছে চলে যাচ্ছে অস্ট্রিলিয়া।
– কি অদ্ভুদ কথাবার্তা। আগামি মাসে আরশির বিয়ে আর তুই কাল চলে যাচ্ছিস এটা কোনো কথা?
– বাবা মাকে ছেরে অনেক বছরই তো এখানে পড়ে আছি। এবার আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা তাদের ছারা। আমার বিদায় বেলায় আশা করি তোমরা সকলেই থাকবে।

এই নিয়ে রাতের সাথেও কথা হয় রিদের। পরদিন রিদের সাথে চলে গেলো সবাই এয়ার্পোর্টে। রাত, রুদ্র চৌধুরি, রাত্রি চৌধুরি, আরশি, বৃষ্টি সবাই আসছে।
এয়ার্পোর্টে দাড়িয়ে আছে সবাই। রিদ যেনো আজ কিছুতেই ভিতরে জেতে চাইছেনা আজ। আর একটু আর একটু বলতে বলতে অনেক্ষন কাটিয়ে দিলো তাদের সাথে। এতোটা বছর যেখানে ছিলো, যাদের কাছে বার বার ছুটে আসতো, যাকে এক তরফা ভালো বেসে গিয়েছিলো তাদের সবাই এখানে উপস্থিত। এক মাত্র আপন বলতে এরা ছারা আর কেও ছিলোনা এখানে। আজ সেই আপন লোকদের ফেলেই চলে যাচ্ছে অনেক দুরে।
একটু পর ইমিগ্রেশন ক্রস করে ভেতরে চলে যাবে সে। চোখের জল টপ টপ করে গড়িয়ে পরছে রিদের গাল বেয়ে। রুদ্র চৌধুরিকে জড়িয়ে ধরে সে,
– অনেক দিন তো আপনাদের সাথে ছিলাম আঙ্কেল। আপনারাই ছিলেন আমার আপন বলতে সব। এখানে বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছি আপনাদের সাথে। জদি কখনো আমার ব্যাবহারে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে প্লিজ। নিজের ছেলে ভেবে মাপ করে দিবেন।
রুদ্র চৌধুরিও কিছু বলছেনা শুধু রিদকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি মুছে নিচ্ছে। রাত্রি চৌধুরিও গিয়ে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো রিদকে। রুদ্র চৌধুরি ও রাত্রি চৌধুরির মাঝখানে রিদ। চোখের পানি গড়িয়ে পরছে অঝরে।
রাতকে জড়িয়েই হুহু করে কেদে দিলো রিদ। কারন রাত শুধু রাত ভাই ছিলোনা এক জন ভালো বন্ধুও। প্রায় পাচ মিনিট ধরে রাতকে জড়িয়ে ধরে কাদছে রিদ। ছারার আগে ফিস ফিস করে শুধু একটাই কথা বলেছে।
“বর্ষাকে হারানোটা তোর আফসোস নয়। বৃষ্টির মতো মেয়েকে হারিয়ে ফেললে এটাই হবে তোর জীবনের সব চেয়ে বড় আফসোস। ওর মতো একটা মেয়ের সাথেই তুই সুখি হবি জীবনে। দুজন দুজনের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখিস চির কাল। স্বামী স্ত্রির বন্ধন একটা পবিত্র বন্ধন। এর মাঝে কখনো অন্য কোনো অপবিত্রটতাকে স্থান দিসনা।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চোখের জন মুছে ইমিগ্রশন ক্রশ করে ভিতরে চলে গেলো রিদ। তবুও বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে সবাইকে আবার দেখার জন্য। সবাইকে ছেরে যাওয়ার কষ্ট যেনো বুকের মাঝে খাঁ খাঁ করছে আজ। আরশির দিকে তাকাতেই চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে তার। তবুও নিজেকে সমলে আরশির দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা মুখে একটা হাসির রেখা টানে রিদ। যেনো ইশারায় বলে উঠে,
“” ভালো থাকিস।

To be continue…….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে