বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১৩+১৪

0
2115

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৩

আজ রাতের চরিত্রে সত্যি হতভাগ বৃষ্টি। রাতের মতো ছেলে যে এতোটা নিচে নেমে যাবে তা ভাবতেও পারেনি সে।
ওই বাড়িতে আর ফিরবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিলো বৃষ্টি। বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় বৃষ্টির মা। বৃষ্টিকে জড়িয়ে একটা হাসি দেয় সে। কাধে হাত রেখে ঘরে নিয়ে যায় তাকে।
– আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো তোর?
– না মা।
– আর তুই একা কেনো? জামাই আসেনি?
– মা প্লিজ এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগেনা। এক গ্লাস সরবত দাও তো মা। খুব গরম লাগছে।
বৃষ্টির মা একটা দির্ঘশ্বাস ফেললো। হয়তো বুঝে গেছে মেয়ের এমন কথা ফিরানোর কারণটা। এমজন মায়ের কাছে যে সন্তানের কিছু লুকানোটা কস্টের তার একটা প্রমান হয়তো বৃষ্টির মা ই।
– তুই বস আমি এক্ষুনি আসছি।
সোফায় ধপাস করে বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। সামনে আসা চুল গুলো কানের পেছনে পার করে সোফায় হেলান দিয়ে মুখটা উপর করে আছে বৃষ্টি। এক অদৃশ্য আগুনের শিখায় ভিতরটায় সব পুড়ে যাচ্ছে তার। সব যেনো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে অন্তরে। অন্তর্দহনে শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ।

কিছুক্ষন পর মায়ের ডাকে ঠিক হয়ে বসে বৃষ্টি। সরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে গ্লাসে চুমুক দেয় সে। সামনে থাকা অন্য কোনো খাবারেই হাত দেয়নি সে। সরবত টুকু খেয়ে আর কিছু না বলেই রুমে চলে যায় বৃষ্টি। ব্যাগটা রেখে ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে খাটে লম্বা হয়ে সুয়ে থাকে বৃষ্টি।
আজ চোখে একটুও পানি নেই বৃষ্টির। হয়তো আজ চোখের জলও বন্ধী হয়ে গেছে মনে কোনো এক বন্ধি দরজার ঘরে।
এই সন্ধার পর সময়টায় বৃষ্টির সব চেয়ে ফেভারিট একটা খাবার ছিলো চিপ্স ভাজা। এক প্লেট চিপ্স ভেজে পড়তে পড়তেও খেতো সে।
চিপ্স ভেজে বৃষ্টির পাশে এসে বসে তার মা।
– কিরে মা শরির খারাপ?
– না মা, এমনি সুয়ে আছি। কিছু বলবে?
– এই নে সিপ্স খাঁ।
– না মা, ইচ্ছে করছেনা এখন।
– আরে খেয়ে দেখ, এক সময় এটা তোর এই সন্ধায় পছন্দের খাবার ছিলো।
– পছন্দের তো অনেক কিছুই ছিলো মা। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে গেছে। বাবা কখন আসবে মা?
– চলে আসবে একটু পর। আর তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– হুম মা বলো।
– বিয়ের আগের আমার সেই বৃষ্টি আর এখন কার বৃষ্টির মাঝে যেনো আকাশ পাতাল তফাৎ খুজে পাই আমি। সত্যিই তুই সম্পূর্নই পরিবর্তন হয়ে গেছিস মা। তুই ওই বাড়িতে ঠিক আছিস তো? এতো কম বয়সে আমরা তোর মাথায় গোটা একটা সংসারের ভার চাপিয়ে দিয়েছি। আমরা মা বাবা হিসেবে সত্যিই অনেক সার্থপর। সমস্যা হলে বল। আজই তোর বাবার সাথে কথা বলে ফাইনাল সিদ্ধান্তে পৌছাবো আমরা। তোকে আর ওই বাড়িতে যেতে হবে না। আবার আগের মতো জিবন যাপন করতে পারবি তুই। সব আগের মতো হয়ে যাবে আবার।
– চাইলেই কি আবসর আগের জীবনে ফিরে যাওয়া যাবে কি, মা? এই দুই চোখ যা দেখলো, এই হৃদয় যা অনুভব করলো তা তো আর চাইলেও মুছে ফেলতে পারিনা মা। ভুলতে পারবো কি, জীবনে ঘটে যাওয়া মুহুর্তগুলো? সব সৃতির দেয়াল হয়ে বার বার আমার চলতি পথে বাধা হয়ে দাড়াবে।
– এখন তুই কি চাস মা? তুই যা চাইবি তাই করবো আমরা। মানসম্মান বাচাতে তোর সাথে অনেক সার্থপরতার পরিচয় দিয়ে ফেলেছি আমরা। আমরা চাইলেও তোকে আর আগের জীবনে ফিরিয়ে দিতে পারবোনা। এখন তোর মনের অবস্থাটাও বুঝা মুশকিল। তুই কি সত্যিই ঠিক আছিস রে মা?
এবার মা’কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেদে দিলো বৃষ্টি।
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে রাতের অনেক গুলো মিসড কল। ফোনটা হাতে নিয়ে অফ করে ফেললো বৃষ্টি। হয়তো এর পর রাত আরো ফোন দিবে। আর রাতের সাথে কথা বলারও ইচ্ছে আমার নেই।
চা য়ের কাপে পুনরায় চুমুক দিতেই টেবিলে থাকা মায়ের ফোনটা বেজে উঠলো। বৃষ্টি সিউর যে এখন নিশ্চই রাতই ফোন দিয়েছে। বাবা একটু আগে নাস্তা শেষ করে চলে গিয়েছে আর সে এখনো টেবিলে বসা। মা ও রান্না ঘরে সব ঘোচাচ্ছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা আন নোন নাম্বার। মা কে কয়েকবার ডাক দিয়ে রিসিভ করে নিলো সে।
– হ্যালো কে বলছেন। আর যেই বলে থাকুন, দেখছেন না ফোন ধরছিনা, আর বন্ধও করে রেখেছি। এখন মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে কেনো বিরক্ত করছেন? সুনুন আপনার সাথে সংসার করার সব ইচ্ছে মরে গেছে আমার। থাকেন আপনি ওই তৃষ্নাকে নিয়ে। আর আমি আর ওই বাড়িতে যাচ্ছিনা। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি, ওকে?
এটুকু বলেই থেমে গেলো বৃষ্টি। অপেক্ষা করতে থাকে রিপ্লাইয়ের জন্য। কিন্তু ওপাস থেকে ভেষে আসলো একটা মেয়েলি কন্ঠ,
– বৃষ্টি…..
– সরি, এক জনের উপর রাগ করে হয়তো ভুল করে আপনাকে ঝেরেছি। কে বলছেন?
– বৃষ্টি আমায় চিনতে পারছিস না?
– চেনা চেনা মনে হচ্ছে বাট চিনতে পারছিনা। পরিচয়টা দিলে খুশি হতাম।
– বৃষ্টি আমি বর্ষা।
এবার থমকে গেলো বৃষ্টির কন্ঠস্বর। বাগ রুদ্ধ হয়ে গেছে সে। সব কিছু এভাবে গোলমাল করে দিয়ে আজ এতোদিন পর হটাৎ পরিবারের কথা মনে হোলো তার।
বৃষ্টির নিরবতা ভাংলো বর্ষার ডাকে।
– কিছু বলছিস না যে? এখনো রাত করে আছিস আমার উপর?
– এমন কেনো করলি আপু? ছোট বেলা থেকে তোর সব কিছু আমিই সামাল দিতাম। তোকে কতো ভালোবাসতাম আর সেই তুই ই আমাকে এই প্রতিদান দিলি?
– বৃষ্টি আমি মামছি আমি ভুল করেছি। আর আমি চাই সেই ভুলটা শুধরে নিতে। আমি জানি রাত তোকে এখনো স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেনি। দেখ চাইলেই সব আবার আগের মতো হওয়া সম্ভব।
– আপু তুই কি আর কিছু বলবি? নাহলে আমি ফোন রাখতাম।
– জানি তুই আমার উপর এখনো রেগে আছিস। বাবা মা কেমন আছে?
– আছে যেমন রেখে গিয়েছিলি তার চেয়ে ভালো আছে।
– আব্বু আম্মু কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছে?
– না, তারা এখন তোকে চুমু দিয়ে বরণ করার জন্য লসল গালিচা বিছিয়ে ফুলের ভান্ডার নিয়ে বসে আছে।
আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো বৃষ্টি। বর্ষার সাথে যতই কথা বলছে ততোই রাগটা চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বৃষ্টির। আরেকটু হলে হয়তো মায়ের ফোনটা এখনি আছড়ে টুকরু টুকরু করে ফেলতো।
,
,
সন্ধায় কলিং বেলের আওয়াজে। দরজা খোলে বৃষ্টির মা। দরজা খুলে রাতকে দেখেই অবাকের চরম সীমানায় সে। রাত যে এই বাড়িতে এলো তা বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার। কারণ রাত সবার মুখের উপরই বলে দিয়েছিলো। তার পা কখনো এই ঘরের দরজার সামনে পড়বে না।
কিন্তু আজ রাত এখানে? তাই একটু অবাক সে।
– আসসালামুআলাইকুম মা।
– ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছে বাবা?
– জ্বি মা, আলহাম্দুলিল্লাহ্।
– আসো ভেতরে আসো।
ভেতরে এসে সোফায় গিয়ে বসলো রাত। বৃষ্টি রাতকে দেখে পুরুপুরিই অবাক। রাতের সামনে আসলো না সে নিজের রুমে গিয়ে বসে আছে সে। কিছুক্ষন পর রুমে আসলো রাত। দেখে বৃষ্টি বিছানায় বসে বসে কাদছে। রাত গিয়ে তার কাছে বসতেই ছিটকে দুরে সরে যায় সে। বৃষ্টি রাতের এক হাত ধরে টেনে খাট থেকে নামিয়ে নিচে দাড় করায়।
– শুনো আজ আমি এখানে তোমার কোনো কথাই শুনতে আসিনি। আর না তোমাকে কোনো কথা শুনাতে। আমি জানি, আমি কিছু বলতে চাইলেও তুমি এখন শুনবেনা। তাই তোমাকে কিছু বলবোনা আমি শুধু দেখাবো। কাপর চোপর সব চেন্জ করে নাও, আর চলো আমার সাথে।
– কি ভেবেছেন টা কি আপনি? আমায় খেলার পুতুলের মতো নাচাবেন আর আমি নাচবো? আমি এতোটাও বোকা নই। আমি কোথাও যাচ্ছিনা এখন।
– দেখো বৃষ্টি তোমাকে প্রথমেই বলেছি আমি কিছু শুনতে চাই না আর আমি এতো কথাও পছন্দ করিনা। তুমি শুধু আমার ভালো রুপটাই দেখেছো। আমি চাইনা এখানে আমার খারাপ রুপটা তোমার সামনে প্রকাশ পাক। সো কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নাও।

নিচে গিয়ে দেখে বৃষ্টির মা আর কাজের মেয়েটা রান্না করছে। চলে যেতে চাইলেও বৃষ্টির বাবা ও মা খাওয়ার আগে যেতে দেয়নি তাদের। রাত আাসার কিছুক্ষন পরই বৃষ্টির বাবা এসেছে।
সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বৃষ্টির হাতটা ধরে বেড়িয়ে গেলো রাত। বৃষ্টি আজ আর কিছু বলছেনা। শুধু রোবটের মতো সোজা হয়ে রাতের সাথে হাটছে।

রাত তখন গভির, প্রায় ১২ টা বেজে গেছে। বৃষ্টিকে হাত ধরে হেচকা টানে কোলে বসিয়ে নেয় রাত। সামনে লেপটপটা ওপেন করে বৃষ্টিকে বলে উঠে,
– চুপচাপ দেখতে থাকো। আমায় সন্দেহ করো তাই না? দেখো ওই দিনের সি,সি,টিভি ফুটেজ।
ভিডিও ওপেন করে সামনে রেখে দিলো রাত। আর এক হাত দিয়ে বৃষ্টির কোমরটা শক্ত করে জড়িয়ে নিলো যাতে উঠে যেতে না পারে। ভিডিও চলছে, দেখে রাত বসে বসে লেপটপে কি যানো করছে। তখনি রুমে কেও একজন ঢুকে পড়লো। হ্যা তৃষ্না। কথার এক ফাকে রাত উঠে তৃষ্নার সামনে গিয়ে কি যেনো বুঝাচ্ছে তাকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে, হয়তো রাত খুব রেগে আছে। এর মাঝেই দরজা ঠেলে বৃষ্টি ভিতরে
প্রবেশ করতেই তৃষ্না হুট করে কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরে রাতকে।
তাদের এমন অবস্থা দেখে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো বৃষ্টি। তখনি তৃষ্নাকে ধাক্কা দিয়ে দাত মুখ খিচকে তৃষ্নার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় রাত। তারপর সেও ছুটে চলে বৃষ্টির পিছন পিছন। থাপ্পর খেয়ে ফ্লোড়ে ছিটকে পরে তৃষ্না কিছুক্ষন ওভাবে থেকেই হুট করে উঠেই নিজের জামাটা খুলে নেয় সে। তৃষ্না ছোট জামাটা খুলতেই বৃষ্টি ঘুরে রাতের চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরে। রাত মুচকি হেসে বলে উঠে,
– আমায় না হয় কিছুক্ষনের জন্য অন্ধ বানিয়ে দিলে। কিন্তু তুমি দেখো আমার দোষটা কোথায় ছিলো। এখন হয়তো তোমার সন্দেহটা দুর হবে। বৃষ্টি আড় চোখে লেপটপের দিকে তাকাতেই দেখে। তৃষ্না ছোট কাপর টা রাতের ব্যাগে ঢুলিয়ে দিলো। তার পর জামা পড়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো। এবার রাতের চোখ ছারলো বৃষ্টি। রাত আবার বলে উঠে,
– এবার কি আমার চরিত্র নিয়ে তোমার কোনো সন্দেহ হচ্ছে।
বৃষ্টি একবার লুকুচুরি দৃষ্টিতে রাতের দিকে পিট পিট করে তাকিয়ে আবার লজ্জা ভঙ্গিতে চোখ নামিয়ে ফেললো।

To be continue……..

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৪

– আপনি এর আগে এই খারাপ ভিডিওটি দেখেছেন? রাতের দিকে বরাবর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কথাটা বলে উঠে বৃষ্টি।
প্রতি উত্তরে কিছু বললো না রাত। শুধু মুখে একটা হাসির রেখা টানলো।
মুখটা যেনো আবারও নিমেশেই মলিন হয়ে গেলো বৃষ্টির। সেখান থেকে উঠে চলে যেতেই রাত পুনরায় হাত ধরে টেনে কোলে বসিয়ে নেয় তাকে। বৃষ্টির মুখটা শুধু মলিন নয় অনেকটা অভিমানও ভর করেছে তার মাঝে। কিন্তু কেনো? তাদের মাঝে তো কোনো ভালোবাসাই নেই। তাহলে রাগ, অভিমান, অভিমান ভাঙানোর ব্যাস্ততা এগুলো কোন সম্পর্কের অংশ? এই সম্পর্কের কি কখনো একটা নাম হবে না? এটা কি চিরকালই থেকে যাবে একটা নাম হিন সম্পর্ক?
আচ্ছা রাতও কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে? নাকি এটা শুধু মাত্র তার দায়িত্ব ভেবেই পালন করছে রাত?
রাতের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে বারান্দায় চলে যায় বৃষ্টি।
ফুটফুটে চাদের আলোয় মেতে উঠেছে চার পাশ। তবুও যেন প্রাকৃতির সব অংশ ই স্তব্দ হয়ে আছে। বাতাস হিনা নিঝুম হয়ে আছে প্রকৃতি।
রাত গিয়ে দাড়ায় বৃষ্টির পাশে।
– কাল এই সময়টায় প্রকৃতি ছিলো একেবারে অন্ধকার। আকাশে মস্তবড় চাঁদের দেখা মিলেনি গত কাল। কেনো যানো?
বৃষ্টি আগ্রহ দৃষ্টিতে বলে উঠে,
– কেনো?
রাত এবার বরাবর বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– হয়তো তুমি ছিলে না বলে প্রকৃতিতে ও নেমে এসেছে আধার। আর সেই কিরণ শুন্যতার অবসন ঘটলো আজ তুমি ফিরে এসেছো বলে, সব অভিমান ভুলে গিয়ে প্রকৃতিতে ছরিয়ে দিচ্ছে সুন্দর্যতার এক অপূর্ব বাহার।
– আপনি কি জানেন, যে এক খন্ড কালোমেঘ এসেও এই কিরণ ঢেকে ফেলতে পারে। তখন কি প্রকৃতি সুন্দর্য শুন্যতায় ভুগবে না?
রাত কিছুটা ভেবে বলে,
– না, প্রকৃতি সেটা দুই হাতে সরিয়ে দিয়ে সকল আধারের মাঝে পুনরায় আলো ফিরিয়ে আনবে। আর ওই চাঁদটা হলে তুমি, আমি না হয় প্রকৃতি হয়েই তোমার এই চাঁদপরীর ছড়ানো আলো উপভোগ করে যাবো।
– তাহলে কি আপনি চান আমাদের মাঝে দুরুত্ব বেরে যাক?
– এমন মনে হওয়ার কারন?
– এইযে আমাদের সম্পর্কটা চাঁদ আর প্রকৃতির সাথে তুলনা করলেন। চাঁদ কিন্তু প্রকৃতির মাঝে সারা বছর আলো ছরায় না, মাঝে মাঝে হারিয়ে গিয়ে দিয়ে যায় আমাবস্যা।
– দুরুত্বই তো গুরুত্ব বাড়ায়। থেকে যায় মনে একটা অদৃশ্য টান। খা খা করে মনের মাঝে জ্বলে উঠা এক উত্তেজিত শুন্যতা।
– তাহলে আমি ভেবে নিবো কি, যে গত কালও চাঁদ হিনা এই মানব প্রকৃতি শুন্যতায় খাঁ খাঁ করছিলো।
রাত কোনো সংকোচ ছারাই উত্তর দেয়,
– হয় তো।
– তাহলে প্রকৃতি আর চাদের মাঝে এতো দুরুত্ব কেনো তারা কি সত্যি কারের চাঁদ আর প্রকৃতির মতো এক হবেনা কখনো?
রাত এবার বৃষ্টির চোখে চোখ রেখে বরাবর দৃষ্টি স্থির করে বলে উঠে,
– আজ এই চাঁদের মতো করে এই ব্যর্থ প্রকৃতিকে কি আপন করে নিবে তুমি? ছরিয়ে দিবে কি তার মাঝে ভালোবাসার আলো?
বৃষ্টি ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। রাত মুখের কোনে একটা হাসি ফুটিয়ে কোলে তুলে নেয় বৃষ্টিকে। মুহুর্তেই যেনো বৃষ্টির সমস্ত শরির জুরে একটা শিতল শিহরণ বয়ে গেলো।
কিছুক্ষন ওভাবে স্থির থেকে সেও জড়িয়ে ধরলো রাতের গলাটা। চেয়ে আছে একে অপরের মুখের দিকে। সুচনা হলো একটি নতুন ভালোবাসার রাত।
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে যায় আরশি। জেদ করেছে আজ সকলের জন্য নাস্তটা সে নিজেই তৈরি করবে। নামাজ শেষ করে কিচেনে চলে গেলো সে। মা কেও পাঠিয়ে দিয়েছে এখান থেকে। আরশি সব কিছু করছে আর চৈতি হাই তুলতে তুলতে আরশিকে সাহায্য করছে। কিছুক্ষন পর কলিং ব্যাল এর শব্দ কানে এলো।
এতো ভোরে আবার কে এসেছে? আরশি বলে উঠে, — চৈতি দেখো তো মনে হয় দুধ ওয়ালা এসেছে।
– আচ্ছা আপা দেখতাছি।

দরজা খুলতেই রিদ হন হন করে ঢুকে পরে ঘরে।
– আরে রিদ ভাই আপনে? আর এতো সকালে?
– কেনো আসতে মানা নাকি? কি করছিলে?
– ওই তো ভাইয়া, নাস্তা বানাচ্ছিলাম আমি ও আরশি আপা মিলে।
– কিহ্, আরশি? তাহলে তো আগে তাকেই দেখতে হচ্ছে। ঠিকঠাক মতো বানাতে পারে কিনা? নাকি আবার সবাইকে ডায়রিয়া রুগি বানিয়ে ছারবে?
বৃষ্টির পেছনে গিয়ে ডান কানের পাশে ফু দেয় রিদ। বৃষ্টি ডান দিকে ফিরতেই বাম কানের পাশে ফু দেয় সে। বৃষ্টি বাম দিকে ফিরে আবার ডান কানে ফু। বৃষ্টি এবার হাতে বেলুনিটা নিয়ে পেছন ফিরে তাকায়। দেখে রিদ তার দিকে চেয়ে দাত কেলিয়ে হাসছে।
– রিদ ভাই তুমি এতো সকালে এখানে কি করো?
– কেনো আমার ফুফির বাড়ি আমি আসবো না কি তুই আসবি?
– তো কি এমন দরকার পরলো যে এতো সকাল সকাল আসতে হলো?
– সত্যি বলবো।
– মিথ্যে বললে, বেলুনি দিয়ে মাথায় মারবো।
– তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই চলে এলাম।
পাশ থেকে খিক খিক করে হেসে উঠে চৈতি। চৈতির হাসিতে যেনো অপ্রস্তুত হয়ে গেলো বৃষ্টি। কিছু বলতে চেয়েও বলার মতো কিছু খুজে পেলোনা সে। হাপ ছেরে বলে উঠে,
– চৈতি এখান থেকে যাও তো।
– জ্বি আপা মনি আপনি আপনি না কইলেও আমি চলে যািতাম। বলে আবারও হেসে উঠে চৈতি। সেখান থেকে চলে গেলো সে।
রিদ বুকে হাত গুজে বলে উঠে,
– কার সাথে ঝগড়া হয়েছে আজ?
– ঝগড়া হবে কেনো। আর তুমি এমন ভাবে বলছো যাতে আমি ঝগড়াটে?
– তুই করো সাথে ঝগড়া না করলে এভাবে সবার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছিস কেনো?
– আমি আবার কি করলাম?
– তোর টই খাবার খেয়ে নিশ্চই আজ সবাই জগিংয়ে নেমে যাবে। আর রাস্তা হবে রুম টু ওয়াশরুম। তো এটা কি নিরিহ মানুষদের উপর একটা অত্যচার নয়?
এবার যেনো এক রাশ রাগ এসে বাসা বাধলো বৃষ্টির মনে। ইচ্ছে করছে বেলুনিটা দিয়ে এক বারি দিয়ে মাথা টা দু,ভাগ করে ফেলতে।
– দেখি সর, আমিই করছি, দেখা যাবে তুই আবার হাতে তেল ফেলে পুড়ে ফেলেছিস। পরে আবার আমাকে লোকের কাছে শুনতে হবে, বৌয়ের হাত পোড়া।
এবার যেনো রাগটা আরো বেড়ে গেলো আরশির। অনেক কিছু বলতে চেয়েও কিছুই মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা না। হাফ ছেরে বলে উঠে,
– বাবা তুই এখান থেকে সর। তোর সাথে কথা বললে আমার মাথা জিম ঝিম করবে। ড্রাংনিং রুমে গিয়ে বস। আমি আজ একটু স্পেশাল করেই তোর জন্য খাবার বানাবো। তবুও এখান থেকে যা বাবা যা।
রিদ তখন পরটা ভাজছে। ভাজতে ভাজতে বে উঠে, শেয়ারিং মানেই এক্সট্রা কেয়ার। জানিস না তুই? আর আমি আমার শশুরের মেয়ের কেয়ার করবো না তো কার কেয়ার করবো বল?
বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টির মা প্রবেশ করলো সেখানে।
– আরে রিদ কখন আসলি তুই?
– এইতো ফুফি একটু আগে। আর বলোনা ফুফি। সকাল বেলায় তোমাদের বাড়িতে এসেছি বলে এভাবে অপমান হবো ভাবতেও পারিনি। আগে জানলে কখনোই তোমাদের না জানিয়ে আসতাম না। আসলে এই বাড়িতে আমার কোনো মুল্যই নেই।
– কেনো কে অপমান করলো তোকে। কার এতো বড় সাহস যে আমার একটা মাত্র ভাইপোকে অপমান করবে? আর এই বাড়িতে সকাল ভোর এগুলো কি? যখন খুশি তখন আসবি। তোকে কে কি বলেছে? তার নামটা বল একবার।
– আর কে বলবে ফুফি? ঘরে ঢুকতেই আরশি মেডাম বলে উঠে, এতো সকালে এই বাড়িতে কি? আর আমার নাকি সভাব খারাপ হয়ে যাচ্ছে যখন তখন এসে পড়ি। ফুফির বাড়িতে আসতে হলেও নাকি আগে অনুমতি নিয়ে তার পর আসতে হবে। এখন তুমিই বলো ফুফি এতো অপমানের পর এই বাড়িয়ে থাকা যায়? এতটুকুতে শেষ নয় ফুফি, আমাকে এখানে ডেকে এনে বলে, সবার জন্য নাস্তা বানাতে। কোনো কাজ না করে নাকি অন্য ধংস করা আমার সভাব। আরো কতো কি বললো। আর তুমিই ভাবো, যেই আমি কখনো রান্না ঘরে আসিনা। সেই আমি আজ রান্না করছি। তাহলে ভেবেই দেখো কতখানি অপমান সহ্য করতে হয়েছে আমাকে।
আরশি যেনো বাকরুদ্ধ, চোখ দু,টি মারবেলের মতো বড় করে আছে, গালটা বানিয়ে রেখেছে এক মস্ত বড় গুহা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে সে। আরশির মা পাশ থেকে বলে উঠে,
– তুই যেমন আমার মেয়ে তেমনি সেও আমার ছেলে। আর এই তোর নিজ হাতে রান্না করে সকলকে খাওয়ানোর নমুনা?
– মা বিশ্বাস করো, এই খাচ্চর টা সব বানিয়ে বানিয়ে বলছে। এই খাচ্চরকে আমি এসব কিচ্ছু বলিনি।
– দেখলে ফুফি, তোমার সামনে আমাকে খাচ্চর বলে অপমান। এগুলো ভাবা যায়, তুমিই বলো।
আরশির মা রিদের হাত ধরে বলে উঠে,
– চলতো এখান থেকে। আজ থেকে তুই কয়েকদিন এখানে জমিয়ে খাবি শুধু আর সব রান্না করবে আরশি নিজের হাতে। আর এটাই ওর শাস্তি।
এবার নিজের চুল নিজে ছিরে ফেলতে ইচ্ছে করছে আরশির। কি সুন্দরে শুকনো মাথায় একটা গেম খেলে দিলো খচ্চরটা। এখন আমাকে ওর কাজের বেটি হতে হবে। ছুটাচ্ছি তোর ভোজন দাড়া।
,
,
নাস্তা শেষে বৃষ্টিকে নিয়ে অফিসে চলে গেলো রাত। তৃষ্নাকে আগেই ফোন দিয়ে অফিসে আসতে বলেছে রাত। যদিও সেদিনই চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলো তৃষ্নাকে। তবুও আজ ডাকলো বৃষ্টির সাথে সত্যিটা দেখাতে।

গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে তৃষ্না। রাত অনেক গুলো কথা শুনিয়েছে এতোক্ষন। বৃষ্টির ইচ্ছে করছিলো সেও তৃষ্নার ডান গালো আরেকটা বসিয়ে দিতে।
রাত এক হাতে বৃষ্টিকে কাছে টেনে নিলো। বৃষ্টির কাধে এক হাত রেখে শক্ত করে মিশিয়ে রেখেছে তার সাথে। আজ আর রাতের স্পর্শে অবাক হয়নি বৃষ্টি। এর চাইতেও গভির স্পর্শের শিহরণে শিহরিত হয়েছে সে রাতের ভালোবাসায়।

সকালে নাস্তা করার পর শুধু রুমে আর ওয়াশ রুমে দৌড়া দৌড়ি করছে রিদ। কেনো এমন করছে?
সবার জন্য চা বানানোর সময় মায়ের দৃষ্টির আড়ালে রিদের চা টা একটু স্পেশাল ভাবেই বানায় আরশি। আর সেই স্পেশাল চা খেয়ে রিদের এই অবস্থা।
রিদ সকাল থেকে রুম থেকে বের হয়নি। রুম আর বাতরুমটাই তার এখন সব। বাইরে গেলেও আবার লোক লজ্জার ভয়। আসলে ফাদে পরলে বাঘও বিড়াল। রিদ ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে টেটে হাত দিয়ে দিয়ে রুমে পায়চারি করছে। আবার চাপতেই দৌড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায় সে। কিছুক্ষন পর বেড় হতেই খেয়াল করে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই আরশি বলে উঠে,
– ওখানেই থাকো তুমি। বের হওয়ার কি দরকার? বের হয়েতো আবার ওখানেই দোড় দিবে। এক কাজ করো ওখানেই থেকে যাও তুমি। খাবার দাবার লাগলে আমাকে বলবে কিন্তু। আমার তো আবার তোমাকে নিজ হাতে রান্না করে দিতে হবে।
– দরজা খোল আরশি। আমার মাথাটা কিন্তু চরম খারাপ হচ্ছে।
– এই খবরদার একধম আমার সাথে সাউড করবে না তাহলে আজ সারাদিন এখানেই থাকতে হবে।
– প্লিজ দরজাটা খোল। সোনা বোন আমার, লক্ষি বোন থুক্কু বউ আমার দরজাটা খোল। সেলাইন খেয়ে সুয়ে পরবো আমি। শরিরটা ক্লান্ত হযে গেছে আমার। একটু বিশ্রামের দরকার। প্লিজ দরজাটা খোল আরশি।
– ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ো। মায়ের আদেশ অনুযায়ি না হয় আমি বরং তোমার জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করি। পেরা নিও না ভাইয়া চিল।

To be continue………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে