“বখাটে বউ”(পর্ব-৫)

0
1861

“বখাটে বউ”(পর্ব-৫)

বিগত এক সপ্তাহ ধরে রোজ আমি দুই হাতে দুই বাটি নিয়ে ওদের দরজায় গিয়ে দাড়াই। বাসায় আলু ভাজি করলেও তাদের বাড়িতে দিয়ে আসতে হয়। মহা জ্বালায় পড়েছি আমি! নিজের জালে নিজেই জড়িয়ে গেছি মাবুদ! আম্মুকে পটিয়ে আমার জীবনটা ত্যানা হয়ে গেছে। ঐ হ্যান্ডসাম বান্দরটা দরজা খুলতে আর আসে না। হয় আন্টি, নয় বুঁয়া দরজা খুলে দেয়। আমি আন্টির সাথে বসে থেকে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে আসি। ভুলেও বান্দরটা রুমের বাইরে আসে না। আন্টির সাথে অনেকটাই ফ্রি হয়ে গেছি। কিন্তু এখনো তার ছেলের নামটা জানা হয়নি। আন্টি ছেলেকে বাবু বলে ডাকেন। কি করে এখন জিজ্ঞেস করি যে, আপনার বুইড়া বাবুর নাম কি? আন্টি বেশ মিশুক প্রকৃতির। এর মধ্যে উনি দুই দিন আমাদের বাড়িতে এসে ছিলেন। আম্মুর সাথে তার বন্ধুসুলভ সম্পর্ক হয়ে গেছে। এখন আমি অনায়াসেই তাদের বাড়িতে যেতে পারি। কিন্তু যখন তখন গিয়েই বা কি হবে? কোনো ফলাফল নেই আমার। প্রবলেম হলো ঐ বাবুটা আমার আওয়াজ পেলেই তার রুমের দরজা বন্ধ করে থাকে। আমি তার দরজার সামনে ঘুরঘুর করে চলে আসি। এক মাত্র গান গাওয়া আর ঢিল ছুড়া ছাড়া বাবুকে জ্বালানোর আর কোনো পথ খুঁজে পাই না।

মনের দুঃখে বিকেলে হারমোনিয়াম নিয়ে বসলাম। চিল্লিয়ে গান ধরলাম- “বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না বন্ধু তিন দিন….”
এই টুকু গাইতেই হুড়মুড় করে আব্বু এসে বললেন-
__”দাড়া আগে তবলা নিয়ে রেডি হই।”
আমি হা করে আব্বুর দিকে চেয়ে থাকলাম। আব্বু তবলা নিয়ে আমার পাশে বসে বললেন-
__”তিন দিন গিয়ে হবে না রে বর্ণ, ধৈর্য্য রাখ। যাওয়া যেনো বাদ দিস না। মাসে ত্রিশ দিনই যেতে হবে। ও ছেলেকে আমরা জব্দ করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ!”
আমি মুখটা করুণ করে বললাম-
__”আব্বু তিন দিন নয়, বিগত এক সপ্তাহ ধরে আমি রোজ যাচ্ছি তাও দেখা পাই নাই।”
আব্বু সমবেদনার ভঙ্গিতে বললেন-
__”ও ছেলে আসলে এক ধরনের বখাটে। একটা মেয়েকে সে পাত্তাই দিচ্ছে না! এটা ঢের অন্যায়।”
আমি রেগে গিয়ে বললাম-
__”শোনো আব্বু, এখানে পাত্তা দেয়ার কি আছে? আমি কি প্রেম করার জন্য ঘুরঘুর করছি নাকি ঐ বাবুর পেছনে?”
আব্বু অবাক হয়ে বিস্ময়ের স্বরে বললেন-
__”তাহলে কেনো ঘুরঘুর করছিস?”
__”জ্বালিয়ে ভষ্ম করতে চাই ঐ বাবুকে। না হলে আমার শান্তি নাই।”
__”ঐ ছেলের নাম তাহলে বাবু?”
__”নামটা তো জানিনা। আন্টির মুখে বাবুটাই শুনেছি।”
__”ওহ তাহলে বোধ হয় ওর নাম বাবু-ই হবে।”
__”তার নাম খোকা বাবু হোক, না বুড়ো হোক তাতে আমার কি? যা ইচ্ছে হোক গা। আই ডোন্ট কেয়ার।”
__”আসলে বাবু নামটা যেনো কেমন কেমন!”
__”কেমন কেমন?”
__”বাচ্চা বাচ্চা নাম।”
__”হ্যাঁ সে তো ৩২ দাঁত ওয়ালা বাচ্চাই।”
__”চল ওর একটা নাম রাখি।”
__”রেখেছি তো, বুইড়া খোকাবাবু।”
__”এসব না, আকর্ষণীয় নাম রাখতে হবে।”
আমি রেগে গিয়ে বললাম-
__”তোমার এত মাথা ব্যাথা কেনো? ঐ ধেড়ে বাবুকে নিয়ে পড়েছো কেনো? আমাদের কাজ হলো ইফটিজিং করা, কারো আকর্ষণীয় নাম রাখা না।”
আমার রাগ দেখে আব্বু ভড়কে গিয়ে বললেন-
__”হ্যাঁ সেটাই তো। আমার কিসের এত মাথা ব্যাথা রে? অন্যের ছেলের নাম আমিই বা কেনো রাখতে যাবো? ঠিক আছে চল গান শুরু করি।”
__”আচ্ছা।”
বন্ধু তিন দিন তোর……..”
আধা ঘন্টা ধরে গান গেয়ে গেয়ে আমার গলা ব্যাথা হয়ে গেলো তবুও বাবুর দেখা মিললো না। ফাজিল পাজি হবতকুড়া বুইড়া বাবু একটা। তোমার জীবনেও ভালো হবে না বাবু। তোমার এমন কারোর সাথে বিয়ে হবে যার অত্যাচারে তুমি অতিষ্ঠ হয়ে পাগল হয়ে যাবে, এটা বর্ণর করা তোমার ভবিষ্যৎ বাণী।

প্রতিবেশী পাতিয়ে আমার তো জ্বালানোটাই বন্ধ হয়ে গেছে। বিগত এক মাসে দুই পরিবারের মধ্যে দারুণ একটা সম্পর্ক তৈরী হয়েছে যেটা ভেদ করে তাকে জ্বালাতে কেমন কেমন যেনো লাগে। তাই গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। আর অকারণে তাদের বাড়িতেও যাই না। তরকারী যুথীকে দিয়েই বেশির ভাগ পাঠাই। আমি মাঝে মাঝে গেলেও ব্যস্ততা দেখিয়ে দেরি করি না। আন্টি আসেন, আম্মুও যায়। সব মিলেই তারা বেশ আছেন।
ইদানিং দেখি আব্বু ছাদে গিয়ে ঐ ধেড়ে বাবুটার সাথে গল্প করেন। আমি দূর থেকে দেখে সরে আসি। বুঝতে পারি আব্বু তাকে পছন্দ করে।
একদিন সন্ধ্যায় টিভি দেখছিলাম আব্বু পাশে এসে বসতে বসতে বললেন-
__”জানিস বর্ণ ঐ হ্যান্ডসাম বাবুটার নাম জেনেছি।”
আমি টিভির দিকে তাকিয়ে থেকেই বললাম-
__”তার নাম জেনে দুনিয়া উদ্ধার করেছো।”
আব্বু ভীষণ আগ্রহ নিয়ে বললেন-
__”আরে নামটা তো শোন।”
ডোন্ট কেয়ার মুখ করে বললাম-
__”ওর নাম শুনে আমি কি করবো?”
আব্বু বিস্ময়ের স্বরে বললেন-
__”কি করবো মানে? ওর নাম জানার জন্যই তো হারমোনিয়াম আর তবলা কেনা হলো।”

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললাম-
__”তাকে জ্বালানোর জন্য কিনেছি এসব, নাম জানার জন্য নয় বুঝেছো?”
আব্বু অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন-
__”তাহলে রোজ তার নাম কেনো জিজ্ঞেস করতি?”
আমি আবার টিভির দিকে তাকিয়ে বললাম-
__”তার নাম জিজ্ঞেস করেছি জ্বালানোর জন্যই।”
__”এটা আবার কেমন জ্বালানো রে বাবাহ!”
__”এখন তো ওরা পড়শী হয়ে গেছে। আর আন্টি খুব ভালো মানুষ তাই তার মুখের দিকে তাকিয়ে মাফ করে দিয়েছি ঐ হবতকুড়া বাবুকে। আর তাকে জ্বালাবো না ভেবেছি।”
_”সেকি রে, কত কাঠখড় পুড়িয়ে ওদের বাড়িতে যখন তখন যাবার বন্দোবস্ত করলি আর এখন এত সহজেই মাফ করে দিলি? এটা কিন্তু ঠিক না বর্ণ।”
আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম-
__”শোনো আব্বু পৃথিবীর সব মহান মানুষেরাই খুব সহজেই মাফ করে দেয়।”
আব্বু ম্লান হেসে বললেন-
__” তা অবশ্য তুই ঠিকই বলেছিস। নামটা তো শুনবি! নামটা কিন্তু দারুণ।”
আমি ডোন্ট কেয়ার মুখ করে বললাম-
__”তার নাম যেমনই হোক, আমি শুনবো না। এখন যেহেতু জ্বালানো আর হবে না তাই এসব নিয়ে আমার আর কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
আব্বু হঠাৎ সিরিয়াস মুখ করে বললেন-
__”একটা কথা বলবি?”
__”বলবো, বলো কি জানতে চাও?”
__”তুই কি ছেলেটাকে পছন্দ করিস না?”
__”কোন্ ছেলেটাকে?”
__”ওহ গড! পাশের বাসার বাবুর কথা বলছি।”
__”তাকে পছন্দ কেনো করবো?”
__”আমি তো ভেবে ছিলাম তুই তাকে পছন্দ করিস তাই গান গেয়ে বখাটেমি করে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলতে চাস।”
__”ধুর আব্বু তুমি যে কি সব বলো না! এসব প্রেম টেম যে আমার আসে না তা তো তোমার অজানা নয়।”
আব্বু দার্শনিকের মতো বললেন-
__” জানি তোর প্রেম আসে না। তাই বলে যে কখনোই আসবে না এমনটাও নয়। আসলে প্রেম তো বলে কয়ে আসে না।”
আব্বুর কথা শুনে আমি হতবাক হলাম। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম-
__”এই সব কথা বাদ দাও তো। ঐ ছেলেকে আমি কখনোই ওসব চোখে দেখিনি।”
__”ছেলেটা কিন্তু অসাধারণ।”
__”অসাধারণ না ছাই।”
__”কম কথা বলে সে, তবে খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে।”
__”গুছিয়ে কথা বললেই মানুষ অসাধারণ হয় নাকি? আমার তো তাকে মুডি মনে হয়। ফাজিল ছেলে একটা। পাজিও খুব।”
__”মোটেও ফাজিল আর পাজি না। সে খুব ভদ্র ছেলে।”
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম-
__”আব্বু! তুমি নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্যের ছেলের পক্ষ নিচ্ছো কেনো?”
আমার চোখ পাকানো দেখে আব্বু থমকে গিয়ে বললেন-
__”কই না তো! আসলে তুই সব ঠিকই বলেছিস। ও ছেলে ফাজিল একটা। আর বহুত পাজি। আমি যাই একটু ঘুমাবো।”

আব্বু বিষয়টা এড়িয়ে চলে গেলেন। আমি কিছু বললাম না। আব্বুর হাব ভাব ভালো মনে হলো না। ধ্যত্তেরি যা ইচ্ছে করুক।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল….
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-৪
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=911039512660102

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে