“বখাটে বউ”(পর্ব-১৩)

0
1910

“বখাটে বউ”(পর্ব-১৩)

আমার চেচামেচি শুনে আম্মু ডায়নিংএ এসে আমার সামনে দাড়িয়ে ঝগড়ার মুড নিয়ে বললো-
__”দু দিন ধরে বিয়ে হতে না হতেই খুঁত ধরতে শুরু করেছিস? আর এই বাড়িটা এখন আমাদের বাড়ি হয়ে গেছে?”
আমিও কম ঝগড়া জানি না। মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__”কেনো ধরবো না? আধা ঘন্টা ধরে বসে আছি, খবর নিয়েছো যে আমি কেমন আছি? একটা বান্দরের গলায় তো আমার মতো একটা ঝকঝকে মুক্তা ঝুলিয়ে দিয়ে মুক্তি নিয়েছো।”
আমার কথা শুনে আম্মুর ঝগড়ার মুড ঠুস হয়ে গেলো। সে চোখ কপালে তুলে বললো-
__”সীমান্ত বান্দর আর তুই মুক্তা?”
আমি ভাব নিয়ে বললাম-
__”তা নয় তো কি?”
__”যা আমাকে বলেছিস, বলেছিস, এ কথা আর অন্য কাউকে বলিস না। সবাই তোকে পাগল ভাববে। আর মুক্তি দিলি কোথায়? এসেই তো প্যানপ্যান শুরু করেছিস।”
__”আমার কথা তো তোমার প্যানপ্যান লাগবেই। তোমার চেয়ে মা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। লাগবে না তোমাদের ভালোবাসা।”
আম্মু বিস্ময়ের স্বরে বললো-
__”মায়ের চেয়ে শাশুড়ি বেশি ভালোবাসে তা এই প্রথম শুনলাম। আমার কান তো ধন্য হয়ে গেলো।”
আমি অভিমানী মুখভঙ্গি করে বললাম-
__”সত্যি কথা শুনলে কান তো ধন্য হবেই। একটাই সন্তান আমি তোমাদের অথচ তুমি তো আমাকে দেখতেই পারো না।”
__”কবে তোকে দেখতে পারলাম না?”
__”দেখতেই যদি পারতে তবে আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে না।”
__”সবারই বিয়ে করতে হয়। সন্তানকে বিয়ে দেয়া বাবা মায়ের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাই বিয়ে দিয়েছি। আর তোকে তো কোনো রিকশা ওয়ালার সাথে বিয়ে দিইনি। ছেলেটা যথেষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন, নম্র ভদ্র। তাহলে তোর এত আপত্তি কেনো?”
__”ব্যাপারটা যোগ্যতা নিয়ে নয়, ব্যাপারটা হলো আমি বিয়ে নামক শেকলটা পরতে চাইনি আর তোমরা জোর করে আমার পায়ে শেকল পরিয়েছো। তোমরা সবাই খুব খারাপ। তোমরা অপরাধী।”
__”কিহ আমি অপরাধী? ঐ অপরাধী গানের অপরাধী নাকি আমি?”
এই তো শুরু হয়ে গেলো। বললাম সবাইকে আর উনি একা নিজের কাঁধে টেনে নিলেন। এখন এই কাঁসুন্দি ঘেটে ঘেটে আমাকে শেষ করবে। বললাম-
__”হ্যাঁ তুমিই সেই অপরাধী আর আব্বু সেই গানের গায়ক।”
আমার কথা শুনে আব্বুর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো। মনে হয় মনে মনে খুশি হয়েছেন। হাজার হোক সাধনার গান বলে কথা। আব্বু গায়ক এটা শুনে আম্মু রেগে উঠে বললো-
__”তোর আব্বুর গানের কথা আমার সামনে বলবি না বলে দিচ্ছি বর্ণ। আমি ওর গলার গান হতে চাই না।”
আম্মুর কথা শুনে আব্বুর মুখটা ফাটা বেলুনের মতো ঠুস হয়ে গেলো। বললাম-
__”আব্বুর গলার গান তোমাকে হতে হবে না। কত বড় বড় গায়ক তোমাকে নিয়ে গান গাইছে এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে।”
__”কি বললি?”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


বুঝলাম এখন আমার উপর দিয়ে ঝড়সহ শিলা বৃষ্টি হবে। তাই আম্মুর কথার জবাব না দিয়ে দ্রুত আমার রুমে চলে গেলাম।
রুম থেকে হারমোনিয়ামটা নিয়ে বের হতেই আম্মু বললো-
__”এবার ঘরে বসে কা কা করে ছেলেটার কানের পর্দা ফাটা। যেনো সে তোর প্যানপ্যানানি আর এজন্মে শুনতে না পায়। এতে ছেলেটা বেঁচে যাবে।”
আম্মুর কথা শুনে মেজাজ খুব গরম হয়ে গেলো। আজ আর কোনো কথা ভেতরে রাখবো না, সব বলবো। যা হয় হবে। কোমরে আঁচল গুজে বললাম-
__”তোমার প্যানপ্যানানি যে আব্বুর কানের পর্দা ফাটায় সে খেয়াল আছে তোমার?”
আম্মু চেচিয়ে উঠে বললো-
__”কি বললি?”
__”যেটা শুনেছো সেটাই বলেছি।”
__”আমি তোর মতো কা কা করি?”
__”তুমি তো সারা দিন কুহু কুহু করো আর সেটাতেই আব্বুর কানের পর্দা পাতলা হয়ে গেছে। কখন যেনো বেলুনের মতো ঠুস হয়।”
আম্মু রেগে উঠে বললো-
__”আমার স্বামীর কানের পর্দা ফাটাচ্ছি তাতে কার কি?”
__”আব্বু তোমার স্বামী আর সীমান্ত তো পাড়া পড়শীর স্বামী তাই না?”
__”ও ভুলেই তো গেছি যে সীমান্ত তোর স্বামী।”
__”এখন থেকে মনে রেখো যে সে আমার স্বামী। আর আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একদম নাক গলাতে আসবা না।”
__”যাক বাবাহ স্বামী বলে যে স্বীকার করেছিস তাতেই আমি খুশি।”
__”কিহ?”
__”কিছু না তো।”
আমি তো দেখছি মফিজা হয়ে গেছি। কি সব বলছি মাবুদ! হঠাৎ হুড়মুড় করে যুথী চা হাতে আমার সামনে এসে বললো-
__”বন্ন আফা চা খান।”
মনে মনে বললাম, এতক্ষণ পরে চা আনা হয়েছে। চাই না এমন চা। আর মনে হচ্ছে আমি এবাড়ির গেস্ট। আসলেই সবাই খুব খারাপ। এদের সবাইকেই পুলিশে ধরিয়ে দেয়া উচিত। সব কথা মনেই চেপে রেখে রেগে উঠে বললাম-
__”তুই খা তোর চা।”
যুথী চোখ কপালে তুলে বললো-
__”এমা এতক্ষণ ধইরা তো চায়ের লাইগাই উয়ার করতাছিলেন।”
আমি অবাক হয়ে বললাম-
__”উয়ার মানে?”
__”উয়ার মানে যুদ্ধু।”
আমি বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম-
__”দোহাই লাগে ইংরেজী আর বলিস না যুথী। তোর ইংরেজী শুনলে আমার পাহাড় থেকে সাগরে ঝাপ দিতে মন চায়।”
__”হুই বন্ন আফা?”
__”হুই মানে?”
__”হুই মানে ক্যা?”
__”হুই না হোয়াই। এই মেয়ে তুই থামবি?”
সে বেশ ভাব নিয়ে বললো-
__”আফা ভুল ইনলিশই কয় জন পারে কন? ধরেন, আপ্নেই পারেন না।”
__”আমার পারতেও হবে না। এবার তুই এসব রেখে হারমোনিয়ামটা ওবাড়িতে দিয়ে আয়।”
__”উকি।”
__”উকি মানে? উকি দিতে কখন বললাম?”
__”উকি মানে আইচ্ছ্যা।”
আমি রাগে চোখ বড় বড় করে বললাম-
__”যুথী তোর মরণ ঘনিয়ে এসেছে বলে দিলাম।”
সে মাথা নিচু করে করুণ মুখে বললো-
__”আর কমু না বন্ন আফা। তওবা তওবা।”

শ্বশুরবাড়ি ফিরে দেখি লাট সাহেব ওয়াশরুমে যাচ্ছে আর আসছে। বুঝলাম মরিচ থেরাপি খুব কাজে দিয়েছে। এবার তাকে রিয়্যালী কাঁচকলার তরকারী খাওয়াতে হবে। তবে এবার কাঁচকলার সব আইটেম রান্না করবে সম্মানীয় দয়ালু বর্ণিতা; যে লবণ তেলের মায়ায় ওসব তরকারীতে দেয় না। কিচেনে যাই, এখনই লাট সাহেবকে কাঁচকলার স্যুপ খাওয়াবো। অসুস্থ স্বামী বলে কথা, উফ্ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।

কিচেনে যাবার আগে ইউটিউবে ঢুকলাম কাঁচকলার স্যুপের রেসিপি দেখার জন্য। কিন্তু রেসপি পেলাম না। এসব বোধ হয় মানুষ খায় না। কি যে করি! আচ্ছা বর্ণিতাই রেসিপি বানাবে। কিচেনে গিয়ে নিজের রেসিপিতে কাঁচকলার স্যুপ বানালাম। ঝাল দিলে তো মুখে দিয়েই ফেলে দেবে। তাই ঝাল দিলাম না। এটা না হয় একটু টেস্টি করেই বানাই। কারণ কাঁচকলা এমনিতেই স্বাদহীন। দারুণ করে স্যুপ বানালাম কিন্তু চেকে দেখার সাহস পেলাম না। কাকে দিয়ে ধেড়ে খোকাকে খাওয়াবো সেটাও একটা ফ্যাক্ট। আসলে মাকে তো বার বার বলা যায় না। হাজার হলেও বাবু তার নিজের ছেলে, কুখাদ্য ছেলেকে খাওয়াতে পরাণ পুড়বে এটাই স্বাভাবিক। তাই নিজেই রুমে নিয়ে গেলাম। মাবুদ জানে সে খাবে কি না। ওর সামনে স্যুপের বাটি ধরে বললাম-
__”এই যে আপনার খাবার।”
__”কি এগুলো?”
__”স্যুপ।”
__”স্যুপ কেনো?”
__”আপনি অসুস্থ তাই।”
__”সব হয়েছে আপনার জন্য।”
__”আমি কি করেছি।”
__”কুখাদ্য রান্না করে খাইয়েছেন।”
এই টুকু বলেই সে ওয়াশরুমে দৌড় দিলো। আহারে বেচারা বাবুতা।
ওয়াশরুম থেকে সে ফিরতেই বললাম-
__”এটা খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। খেয়ে নিন।”
__”আপনার হাতের খাবার আমি খাবো না। মরে গেলেও না।”
আমি ইনোসেন্ট মুখ করে বললাম-
__”বিশ্বাস করেন এটা খুব ভালো।”
__”কিসের স্যুপ এটা?”
কি বলি এখন? যদি বলি কাঁচকলার স্যুপ তাহলে তো খাবে না। ফিক করে হেসে বললাম-
__”এটা ঔষধি স্যুপ।”
সে হতবাক হয়ে বললো-
__”এমন স্যুপের নাম এর আগে জীবনেও শুনিনি।”
এই রে এখন কি বলে ম্যানেজ করবো? সত্যিই তো এমন নামের কোনো স্যুপ নেই। আর থাকতেও তো পারে। সে আর আমি পৃথিবীর সব কিছুই জানি নাকি? ইন্ডিয়ানরা আয়ুর্বেদিক স্যুপ আবিষ্কার করতেই পারে। আর যদি কেউ এমন স্যুপ না আবিষ্কার করে তবে বর্ণিতা এই বান্দরের জন্য এটা আবিষ্কার করেছে। বললাম-
__”আসলে এখন তো সব কিছুই আয়ুর্বেদিক হয়েছে তাই স্যুপও আয়ুর্বেদিক হয়েছে। মানুষ কি কি সব আবিষ্কার করছে আল্লাহ! আমিও তো ঔষধি স্যুপ দেখে অবাক হয়েছি। নিন খেয়ে নিন।”
সে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। তার নয়ন যেনো বলছে, ‘এই বখাইট্টা মাইয়া ক কি অকামের ফন্দি আটছস?’ সে বললো-
__”কি মতলব আপনার ঠিক করে বলুন তো?”
আমি অবলা নারীর মতো তাকিয়ে বললাম-
__”মতলব নেই তো। কোনোই মতলব নেই।”
__”আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। ওসব আয়ুর্বেদিক স্যুপ আপনি খান। সুন্দরী হয়ে যাবেন।”
__”আমি কি অসুন্দরী নাকি?”
__”হ্যাঁ।”
__”কিহ?”
কত বড় সাহস আমাকে অসুন্দরী বলে! ডায়রিয়া হয়েছে ঠিক হয়েছে। খাওয়াবো না আয়ুর্বেদিক স্যুপ। সে ওয়াশরুমেই রাত কাটাকগে হুহ। সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো-
__”আমার পেটের ভেতরে ভালো লাগছে না। প্লিজ একটু খ্যান্ত দিন।”
কাঁচকলার স্যুপ খাওয়াতে না পেরে আমার মনটাই ভেঙে গেলো। এত কষ্ট সব জলে গেলো। ফাজিল বান্দর একটা।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল….
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-১২
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=919551001808953

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে