পবিত্র_সম্পর্ক পর্ব-০২

2
1491

#পবিত্র_সম্পর্ক
#পর্ব_২
#Nishat_Tasnim_Nishi

উত্তর-দক্ষিন মুখ করে বসে আছে রোহান আর রুহি।দুজনেই কান্না করতেছে,একজন ফুফিয়ে তো আরেকজন নিঃশব্দে। একটু আগেই তুমুল কান্ড গটিয়েছে দুজনেই।

একটু আগে,,

রুহির কথা শুনে রোহান হা হয়ে গিয়েছিলো। ও তো রেগে মেগে আগুন। কী করবে ভেবে পাচ্ছিলো না, তখন বুদ্ধি খাটিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে রুহির গালে কিসি দিয়ে দিলো।কারন ও একটু আগে দেখেছে কিসি দেওয়ার কারনে রুহি কেমন বিহেভ করেছে।

এবার রুহি হতবাক হয়ে রোহানের দিকে তাকালো। ও রেগে গিয়ে মোবাইল টা এক আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললো। তবুও ওর রাগ কমলো না ও রোহানের হাত ধরে জোরে কামড় দিয়ে বসলো।

রোহান চোখ বড়বড় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলো।এর ফাকে রুহি ওর হাতে কামড় দিয়ে বসলো,রোহান আআ করে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। রুহি ছাড়ছে না দেখে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।সাথে সাথে রুহি পড়ে গেলো,পায়ে হাই হিল থাকায় মুহূর্তেই পা মচকে গেলো। রুহি পা ধরে জোরে জোরে কেঁদে দিলো। আর রোহান ওকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে মোবাইলের কাছে গেলো,ভাঙ্গা মোবাইল হাতে নিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো।

সেই থেকে এতক্ষন পর্যন্ত দুজন দুইদিকে ফিরে কান্না করছে।

রোহান ভাঙ্গা ফোন আর ভাঙ্গা মন নিয়ে বিলাপের সুরে বললো,,,

–“অভিশাপ দিলাম,,যে আমার ফোন ভেঙ্গেছে তার হাত ও যেনো ভেঙ্গে যায়।”

রাহিও নাক টেনে টেনে বললো,,,

–“আমিও অভিশাপ দিলাম,, যে আমার পা মচকে দিয়েছে তার পা ও যেনো মচকে যায়।”

আবার দুজনে তর্কাতর্কি লেগে যায়। কথা কাটাকটির মাঝখানে রুহি পা ধরে আউ বলে উঠে।রোহান কপাল কুচকে ওর কাছে এসে পায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,

—“এমন ভং ধরেছেন কেনো?পায়ে কী হয়েছে?”

রোহানের কথা শুনে রুহি চোখ কটমট করে ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,

–“আপনার কপাল হয়েছে।দেখতেছেন না পা মচকে গিয়েছে।”

রোহান ভাবলেশহীন হয়ে বললো,,

–“ওহ,আচ্ছা এই ব্যাপার।”

কথাটা বলে রুহির পা ধরে জোরে এক টান মারলো সাথে সাথে রুহি আম্মু গো বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। ওর মনে হলো ওর পা ভেঙ্গে গিয়েছে।রুহি “ওমা,ওমা’ করে ওর পা ধরে দেখলো ব্যাথা একদম গায়েব। ও রোহানকে কিছু বলতে নিচ্ছিলো তখনই বুঝলো যে ওর পা ঠিক করার জন্য এমন করেছে।ও আর এ কথা না বলে, রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,

—“আচ্ছা,যান।মাফ করে দিলাম..!!”

রোহান অবাক হয়ে বললো,,

—“মানে?”

রুহি দাত বের করে হেসে বললো,,

–“পা ধরে মাফ চাচ্ছেন তাই মাফ করে দিলাম।”

রুহির কথা শুনে রোহান নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি ও রুহির পা ধরে আছে,কিন্তুু সেটা তো ও পা ঠিক করার জন্য ধরেছে অথচ বেয়াদব মেয়েটা কি বললো!ও রেগে গিয়ে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে বললো,,

—“শুনুন, আমি কোনো মাফ চাওয়ার জন্য পা ধরি নি। আপনার পা ঠিক করার জন্য ধরেছি।একেই বলে উপকারের নাম জুতার বারী।”

রুহি হেসে হেসে বললো,,

–“যাই হোক ধরেছেন তো।”

রোহানের মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।কত বড় বেয়াদব মেয়ে। ও রেগে গিয়ে ওর পায়ে জোরে একটা চিমটি দিয়ে দ্রুত উঠে গিয়ে বিছানায় উল্টে শুয়ে পড়লো।

এদিকে রুহি চিৎকার দিয়ে ওর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো। নিচে বসে বসে ইন্টারন্যাশনাল গালি দিতে লাগলো। রোহান না শুনার ভান করে শুয়ে রইলো। রুহিও রেগে মেগে উঠে গিয়ে ঠাস করে রোহানের উপর শুতে লাগলো তখনই রোহান গড়িয়ে ওপর পাশে চলে গেলো আর রুহি বিছানার উপর পড়লো। আর ব্যাথা পেয়ে আহ করে চিল্লিয়ে উঠলো আর রোহান খিলখিল করে হেসে উঠলো। আবার দুজনে শুরু করে দিলো মারামারি। দুজনের মারামারির মাঝে নিরীহ বালিশটার প্রান চলে গেলো।পুরো বিছানায় তুলো আর তুলোর ছড়াছড়ি। এবার বালিশ নিয়ে একজন আরেকজনের দোষ দিতে লাগলো। অবশেষে রোহান দোষ শিকার করলো,কারন রুহি বলেছে রোহান পুরুষ ওর শক্তি বেশি তাই ছিড়ে গিয়েছে। রোহান চুপচাপ দোষ মেনে নিয়ে পুরো বিছানা ঠিক করলো।

রোহান বিছানায় শুতে নিতেই রুহি হাত পা মেলে পুরো বিছানা দখল করে নিলো। রোহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,,

–“এমন ভাবে শুয়েছেন কেনো?আমি বিছানা ঠিক করেছি তাই আমি ঘুমাবো।সরুন..!!”

রুহি ওর কথা কানেও তুললো না,বরং হাত পা আরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে শুয়ে পড়লো। রোহান কয়োকবার বলার পরেও কোনো পরিবর্তন না দেখে ও ঠাস করে রুহির পাশে শুয়ে পড়লো। রুহি নাক মুখ ফুলিয়ে ফোসফোস করতে লাগলো। দুজনেই মাঝখানের দিকে চাপতে লাগলো, উদ্দেশ্য একজন আরেকজনকে বিছানায় শুতে দিবে না।পুরো বিছানার চারপাশে জায়গার অভাব নেই তবুও দুজন একজন আরেকজনের সাথে লেগে বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছে। পুরো রাত ঝগড়া করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল নয়টা বাজে, দুজনেই ঘুমে বিভর।প্রায় অনেক রাতে দুজনে ঘুমিয়েছে। একজন আরেকজনকে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে শুয়ে আছে।এদিকে গত বিশ মিনিট থেকে রুমের দরজা ধাক্কিয়ে চলছে কেউ। শব্দরে কারনে দুজনের ঘুম ভেঙ্গে যায়,রুহি ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে ওর পাশে রোহান শুয়ে আছে,ও এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,,”কে এসেছে দরজা খুলে দেন।”

রোহান ঘুমের ভান ধরে উল্টো ফিরে শুয়ে পড়লো। রুহি বারবার বলেও ওর কোনো সাড়া-শব্দ না দেখে জিদ করে নিজে উঠলো। উঠে রোহানকে এক লাথি মেরে দ্রুত দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আর রোহান লাথি খেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। কারন রুহি বেশ জোরেই শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে মেরেছে। ওদিকে দরজা খুলার সাথে সাথে দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো রোহানের বোন ইশিকা।

ইশিকা অবাক হয়ে বললো,,

–“কী হয়েছে ভাইয়া,তুমি এমন চিৎকার দিলে কেনো?”

রুহিও ইনোসেন্ট ফেস করে ওর সাথে তাল মিলিয়ে বললো,,

—“হ্যা,বলুন।কেনো চিৎকার দিয়েছেন?”

রোহান দাত কিড়মিড় করে বললো,,,

—“না,কিছু না। ”

ইশিকার কেনো যেনো কথাটা বিশ্বাস হলো না। ও অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো।পরে কি যেনো ভেবে কথাটা আর বাড়ালো না।ও রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,,

–“ভাবি,আম্মু পাঠিয়েছেন আপনাকে সাজিয়ে নিচে নেওয়ার জন্য,আসলে নিচে অনেক আত্নীয় এসেছেন আপনাকে দেখার জন্য।”

কথাটা শুনে রুহি রেগে গেলো। কারন ওর দশটা বাজে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস,অথচ এখানে নয়টা না বাজতে উঠতে হয়েছে,তারউপর চিনে না জানে না ওকে কোথায় না কোথায় বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।মনে মনে নিজের পরিবারকে হাজার খানা গালি দিলো। তারপর জোরপূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,,

–“আচ্ছা,আপনি একটু বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

–“ওকে ভাবী তাড়াতাড়ি আসেন। আর আমি আমরা সেইম এইজ,আপনি আপনি কেনো বলছেন।আমাকে নাম ধরে বলবেন,আমার নাম ইশিকা রাহমান।তুমি ইশি বইলো।”

রুহি মিষ্টি হেসে বললো,,

–“আচ্ছা,তুমিও আমাকে রুহি বলে ডাকবা। ভাবি বলবা না ঠিক আছে,ভাবি কেমন ওড লাগে।”

ইশিকাকে কিছু বলার আগে রোহান বিছানা থেকে মুখ ভেটকিয়ে বললো,,

–“এ্যাহ,ওডডড লাগে।আর কিছু..!!”

ইশিকা রেগে ভাইয়াআ বলে ন্যাকামি করলো😒।

রুহি হেসে হেসে ইশিকাকে বললো,,

–“ইশি এসবে কান দিও না।কিছু মানুষ আছে যাদের অন্য মানুষদের ভালো দেখলে গা জ্বলে।তখন আর কি করবে তখন ওদের পিছনে পড়ে থাকে।”

ইশিকা , রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,

—“ঠিক বলেছো ভাবি।”

রুহি চুটকি বাজিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো,,

–“আমি সবসময় ঠিকই বলি।”

♣♣

প্রায় ঘন্টাখানেক থেকে পুতুলের মতো সেজে রুহি মেহমানের সামনে বসে আছে। একের পর এক এসে ওকে দেখে যাচ্ছে। অনেকে নানান রকম উপহার দিচ্ছে, সবাই ওকে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করতে লাগলো,ও দাত চেপে সবকিছুর জবাব দিতে লাগলো। ওর মনে হচ্ছে ও বিষ খেয়ে বিষ হজম করছে। ইশিকা রুহির অবস্থা দেখে ইশারায় ওর মাকে বললো,যে এখন এসব বাদ দিতে। ইশিকার মা ও সবাইকে বললো,,

–“আচ্ছা,আচ্ছা,, দেখাশুনা পরে হবে। ওদের হয়তো খিদা পেয়েছে, খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শুরু করা যাক।”

এ কথা বলে উনি রুহির হাত ধরে নিয়ে এসে টেবিলে বসিয়ে দিলেন। এদিকে রুহির আগেই রোহান খাওয়ার টেবিলে বসে আছে,ইতোমধ্যে রোহানের একটা রুটির হাফ অংশ খাওয়া শেষ। এটা দেখে রুহি নাক চিটকিয়ে বললো,,

—“রাক্ষস,,বোধ হয় জীবনেও খায় নি।বাড়ীভর্তি মেহমানের সামনে এমনভাবে খাচ্ছে মনে হচ্ছে কত বছর ধরে খায় নি।”

রোহান খেতে খেতে নির্লিপ্ত গলায় বললো,,

–“আমার বাড়ী,আমার ঘর,আমার খাবার।আমি যেভাবে ইচ্ছা খাই তোমার কী?এটা বলো,আমাকে খেতে দেখে তোমার হিংসা হচ্ছে।কেউ তোমাকে খেতে দিচ্ছে না আর এদিকে আমি প্রায় খাওয়া শেষ করে ফেলেছি।এটা ভেবে তোমার হিংসা হচ্ছে,তাই না?”

রুহি রেগে নাক মুখ ফুলিয়ে বললো,,

–“মোটেও না। আমি আপনার মতো পেটুক না।”

রোহান কিছু বলার আগেই রোহানের মা বললো,,

–“কিরে কি বিরবির করছিস।বউমাকে নাস্তা দে তো।”

রোহান রুহির দিকে এক পলক তাকিয়ে আস্তে উঠে গিয়ে বললো,,

–“মা আমার খাওয়া শেষ। তুমি দিয়ে দেও।”

বলেই ও রুমের দিকে হাটা দিলো। আর রুহি অপমানে মুখ নামিয়ে নিলো। মনে মনে রোহানকে হাজারটা গালি দিতে লাগলো,কত বড় বেয়াদব,, সবার সামনে আমাকে অপমান করে।ও কোনোরকম খাবার খেয়ে উঠে গেলো।

.

অনেক্ষন রুমে বসে থাকতে থাকতে রুহি বোর হয়ে গেলো। একটুপর ইশিকা রুমে আসতেই রুহি বললো,,

–“ইশি,আমার বোরিং লাগছে। আর কতক্ষন বসে থাকবো।আমার ভালো লাগছে না,আমার ফ্যামিলির কেউ এসেছে?”

—-“না,তো।আচ্ছা এক কাজ করো,চলো আমি তোমাকে আমাদের পুরো বাড়ি দেখাই।”

রুহি কিছুক্ষন ভেবে দেখলো, এখানে বসে থাকার চেয়ে ঘর দেখে আসাটা আরো ভালো। ও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বললো আচ্ছা চলো।

ইশিকা পুরো ঘর রুহিকে দেখিয়ে নানান কথা বলতে লাগলো। এক এক করে সব কিছু দেখালো। পুরো ঘর ঘুরতে ঘুরতে ওরা বাড়ির বাহিরে বাগানের দিকে চলে আসলো। কথা বলার মাজখানে রুহির চোখ যায় ওদের বিপরীত দিকে ও দেখে রোহান দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে। সাথে সাথে ওর একটু আগের ঘটা ঘটনার কথা মনে পড়লো। ও মুখ ফুলিয়ে ইশির দিকে ফিরে কথা বলতে লাগলো। কিছুক্ষন পর রুহি বললো,,

–“ভাবি তুমি একটু দাড়াও আমি ঘর থেকে আসছি।একটু দরকার আছে।”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,”আচ্ছা,যাও।”

ইশি চলে যেতেই আমি রোহানের দিকে তাকালাম। হঠাৎ ই গেইট দিয়ে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বেবী বলে রোহানকে জড়িয়ে ধরলো। আচমকা এমন হওয়ায় রোহান পড়ে যাচ্ছিলো,ও কোনোরকম নিজেকে সামলিয়ে দাড়ালো। রুহি ওদের জড়াজড়ি দেখে কপালে হাত দিয়ে কিছু ভাবলো।এরপর মেবাইল বের করে ফটফট করে ওদের কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।

ফটো তোলার আওয়াজ পেয়ে রোহান এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলো রুহি মোবাইল হাতে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। রুহিকে ফটো তুলতে দেখে ওর কলিজা শুকিয়ে এলো। রোহান ভয়ে চুপসে যেয়ে ইশারায় বললো,,”না না।”

রুহি পিক টা রোহানের দিকে দেখিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,,”কী?”

রোহান ওর বুক থেকে ওর গার্লফ্রেন্ডকে সরিয়ে হাত জোড় করে বললো,,” না,প্লিজ না।”

রুহি শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,,

–“সুন্দর হয়েছে না?আমার ফোনের ক্যামেরা ও সরি ইশির ফোনের ক্যামেরা তো একদম জোস। দাড়ান শাশুড়ি আম্মুকে জিজ্ঞেসস করি সুন্দর হয়েছে কী না?”

.

চলবে?

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে