নিমাইদা পর্ব : ৬

0
1224
নিমাইদা পর্ব : ৬ গল্পবিলাসী – নিশি সীমান্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঋতুর দিকে। চুলগুলোতে হাত দিয়ে আলতো স্পর্শ করে দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে স্পর্শ উপভোগ ঋতু। -‘ঋতু?’ -‘ হুম।’ -‘ ঘুম পেয়েছে?’ -‘ নাহ। মাথা ব্যাথা করছে। ‘ ঋতুকে শুইয়ে দিয়ে -‘ ঘুমানোর চেষ্টা করো দেখো সব ঠিক হয়ে গেছে।’ ঋতুর কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে ঋতুকে। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরে ঋতু।খুব সাবধানে ঋতুকে ছেড়ে মোবাইলটা হাতে বেলকনিতে যায়।ইচ্ছে করছে মায়াকে মেরে মেরে ঋতুর কষ্টটা ওকে উপভোগ করাই। কিন্তু সম্ভব নয়। সীমান্ত অবাক হচ্ছে এই এতোটুকু একটা মেয়ে যে কিনা সংসার জিনিসটা সম্পর্কে এখনো ভালোভাবে বুঝতে শেখেনি সেও তার সোনার সংসার আগলে রেখেছে। চোখে ভাসছে ঋতুকে আপন করে পাওয়ার মূহুর্তটা।কতোটা পাওয়া ছিলো তার।লজ্জাবতী বউ তার। যেদিন ঋতুকে প্রথম দেখি সেদিন থেকেই ওকে ফলো করি।ওর বাসা কোথায়? কোথায় কি করছে সব। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন দুপুরবেলা -‘শোনো ছেলে বড় হয়েছে। অফিসেও জয়েন করেছে। আমি আর একা কতোদিক সামলাবো বলো? তারচেয়ে ভালো সীমান্তকে একটা বিয়ে করিয়ে দাও। সঙী হবে আমার। ‘
-‘হুম। আমিও তাই ভাবছি। কিন্তু এখনকার মেয়েরা যে আপডেট ভাবছি কেমন মেয়ে না এসে কপালে জুটে আমাদের।’ -‘ আরে এতো টেনশন করার কি আছে? আমাদের হামিদ ভাইয়ের মেয়ে আছেনা? মায়া? দেখতে তো মাশাল্লাহ। আর আচার আচরণ ও কি অমায়িক। আমাদের সীমান্তের সাথেও মানাবে বেশ।’ আয়শা রেহমানের কথা শুনে, -‘ আত্নীয়তার ভিতরে আত্নীয়তাটা খুব একটা ভালো নয় বুঝলে? পুরোনো সম্পর্ক ছুটে যায়।’ -‘আরে সেটাতো আমাদের উপর নির্ভরশীল।আমরা ঠিক তো সব ঠিক।’ -‘ তারপরও। সীমান্তের নিজের ওতো একটা মতামত আছে।ওর পছন্দ কিনা সেটাওতো জানতে হবে। ওর পছন্দের কেউ আছে কিনা সেটাওতো জানতে হবে। শুধু তারাতাড়ি করলে তো হবেনা।’ -‘ আমার ছেলেরটা আমি জানিনা? কই আমাকেতো কখনো বলেনি সীমান্ত।’ -‘ সব কথাই যে বলবে সেটাতো কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নাই। সীমান্তের ব্যক্তিগত বলতে কিছু থাকতে পারে।’ -‘ আচ্ছা আমি আজকে জিজ্ঞাসা করবো। সীমান্ত ঘুম থেকে উঠলেই আমি জিজ্ঞাসা করবো।’ বাবা মায়ের পুরোকথাই সোফায় শুয়ে শুনছিলো সীমান্ত। বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কটা নিয়ে ভাবতে চাইলেই ঋতুর লজ্জামাখা মুখটা ভেসে উঠলো। ঘুমিয়ে থাকলেও মায়ের কথার শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিলো। আর তখনি শুনতে পেলো তাদের কথা বার্তা। তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো। নিজ থেকে টপিকটা উঠায়নি সীমান্ত। রুমে বসে লেপটপে অফিসের ইমেইল চেক করছিলাম। -‘ কিরে কি করছিস? এই ছুটির দিনেও অফিসের কাজ নিয়ে পরে আছিস? ‘ -‘না। মা ঐ ইমেইল গুলো চেক করছিলাম। বসোনা।’ মা বসতে বসতে -‘এখন কি বের হবি?’ -‘ না। এখন আর বের হবোনা। কেনো কিছু লাগবে? ‘ -‘নাহ লাগবেনা। একটু কথা ছিলো।’ -‘ ও কিছু বলবে? বলো।’ -‘ মায়াকে তোর কেমন লাগে?’ -‘ ভালো। হঠাৎ?’ -‘ না বলছিলাম যে আর কতো এভাবে একা থাকবি বিয়ে করার সময়তো চলছে।’ -‘ মা আমি মায়াকে শুধুমাত্র বোন হিসেবেই দেখেছি এর উপর কিছু ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আত্নীয়তার মধ্যে তো না ই।’ -‘ তো অন্যকোথাও দেখি। নাকি তোর কোনো পছন্দের কেউ আছে?’ -‘ হ্যা। আছে। আমি শুধু পছন্দ না ওকেই বিয়ে করবো।’ ছেলের কথা শুনে অবাক হয়ে -কই কখনো বললি না তো।’
-‘ একসপ্তাহ হলো ওকে আমি দেখেছি। ওর সম্পর্কে জানাও শেষ। ওর বাবা আর চাচারা মিলে একটা ব্যবসা করছেন। সবাই একই বিল্ডিংয়ে থাকেন। বেশ তো তাহলে আমরা যাই গিয়ে দেখে আসি। না। কোনো দেখে আসা নাই। দেখতে গিয়েই বিয়ে হবে। ওরা যেভাবে চাইবে সব সেভাবে। ওকে আমার চাই ই চাই। কারন ঋতুকে আমি কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইনা। মোহাম্মদপুর বাসা। আট নং গলি। এগারো নাম্বার বাসার তিনতলার ডি ইউনিটে থাকে। ও একা। ওর কোনো ভাইবোন নাই।’ ছেলের বলা সব কথা যখন রফিক রেহমানকে বললেন সব শুনে তিনি বলে উঠলেন -‘ দেখলে বলেছিলাম না তোমাকে। আগে জিজ্ঞাসা করো। তাহলে আমরা যাই গিয়ে বিয়েটা সম্পন্ন করে দিয়ে আসি কি বলো। শুভ কাজে দেরি করতে নাই।’ -‘ তুমিও কি ছেলের কথায় তাল মিলাচ্ছো? ‘ -‘আরে মিলাবো না? আমরা আজ আছি কাল নেই। ছেলের সংসার তো ছেলের পছন্দেই সাজাবে। ‘ বাবার কথানুযায়ী পরেরদিন ঋতুদের বাড়ির উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পরলাম। ঋতুদের বাসায় যখন পৌঁছালাম ঋতু তখন ভার্সিটিতে। তখনো ফিরেনি। কিছুক্ষন অপেক্ষার পরই ঋতু এলো। ততোক্ষনে বাবা আর মা ঋতুর বাবা মা আর চাচাদের সাথে কথা বলে নিয়েছেন। ওনাদের ও এক কথা। মেয়ের পছন্দ হলে তারপরই কথা হবে। ক্লাস শেষ করে মাত্রই বাসায় এলো ঋতু।ড্রইংরুমে সিঙ্গেল সোফায় সীমান্তকে বসে থাকা দেখে চমকে উঠলো। সীমান্ত তাকাতেই পর্দার আড়ালে চলে গেলো। মাকে ডেকে এনে -‘ আরে মা এরা এখানে কেনো?’ -‘ তুই কি চিনিস ওনাদের?’ -‘ ঐ ভদ্রলোককে নির্মলদা ভেবে নিয়েছিলাম।’ -‘ আচ্ছা তুই রুমে যা আমি আসছি।’ ঋতু পা বাড়িয়ে মায়ের কথানুযায়ী রুমে চলে এলো।কিছুক্ষন পরেই মেয়ের পছন্দের কফি হাতে নিয়ে রুমে এলেন ফাতেমা। কফি হাতে নিয়ে, -‘ মা বললে নাতো ওনারা কি বাবার কাছে এসেছেন?’ -‘ হ্যা। তোকে দেখতে এসেছে।’ কফিটা মাত্রই মুখে দিচ্ছিলো ঋতু।মায়ের কথা শুনে নাকেমুখে উঠে গেলো। -‘ কি বলছো এসব? ‘ -‘হ্যা ঠিকই বলছি। ওনাদের ছেলের নাকি তোকে পছন্দ হয়েছে। তাই বাসায় এসেছে। ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ও ভালো। আর ছেলেটাও ভালোই। বাবার ব্যবস্থ দেখাশোনা করছে। তোর কি কাউকে পছন্দ আছে?’ লজ্জা পেয়ে -কি যে বলোনা মা।’ -‘ আচ্ছা তাহলে এই শাড়িটা পরে রেডি হয়ে নে। আমি তোর ছোট চাচ্চিকে পাঠাচ্ছি।’ -‘ আচ্ছা পাঠাও।’ ছোট চাচী এসে সুন্দর ভাবেদ শাড়িটা পরিয়ে দিলেন। জীবনের প্রথম কারো সামনে নিজেকে এভাবে তুলে ধরা। ভয়ে বুক দুরুদুরু করছিলো। হাত পা কাঁপছে। রফিক রেহমান কিছু প্রশ্ন করলেন ঋতুও যথার্থ উত্তর দিয়েছে। রফিক রেহমানের পছন্দ হলেও আয়শা রেহমানের পছন্দ হয়নি তার মুখ দেখেই আন্দাজ করেছিলো সীমান্ত। কারন ঋতু দেখতে শ্যামলা বর্ণের ছিলো। তার ইচ্ছে ছিলো সুন্দর একটা টুকটুকে বউ এনে তার ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন। কিন্তু সীমান্ত কি পছন্দ করেছে এটা? কি দেখে এতো পছন্দ হলো তার আল্লাহই ভালো জানে। কোথায় মায়া আর কোথায় এই মেয়ে। মায়ার শরীরে টোকা দিলেও তো রক্তজমে আকার দেখা যাবে কিন্ত এই মেয়ে? ছেলেকে আড়ালে ডেকে নিতে যাওয়ার আগেই সীমান্ত তাকে ডেকে পাঠালো। -‘তুই কি এই মেয়েকেই পছন্দ করেছিলি? নাকি ভূল কাউকে?’ -‘ নাহ মা আমি ওকেই পছন্দ করেছি। আমার ওকেই ভালোলাগে।ওকে দেখলে মনের মধ্যে একধরনের শান্তি বয়ে যায়। আমি ঋতুকেই বিয়ে করবো। তোমরা আক্দ এর ব্যবস্থা করো।’ ছেলের এতো আগ্রহ দেখে আর কিছু বললেন না আয়শা। ঋতুর বড় চাচ্চি ওদেরকে আলাদা ভাবে কথা বলতে পাশের রুমে পাঠালেন। ঋতুতো লজ্জায় মাথা তুলতেই পারছিলো না। একেতো ওনাকে নিমাইদা ভেবে কতোকিছু বলেছিলো আর আজ? -‘ ষড়ঋতু! প্রতিটা ঋতুতে এসে যেমন কোনো না কোনো পরিবেশকে দোলা দিয়ে যায়। যেমন গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ, বর্ষার অঝোর পানি। শরৎের কাশফুল তেমনকি তোমার মনেও কেউ দোলা দিয়েছে? নাকি এখনো সেই বসন্তের অপেক্ষায়? ‘ঋতু নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিলো শুধু। সীমান্তের কেনো জানি মনে হচ্ছিলো ঋতুর সেই প্রথম দিনের মতোই লজ্জায় গাল দুটো ফুলে আছে। মেয়েটা কিছুতেই মাথা তুলে তাকাচ্ছেনা। আচ্ছা এই মানুষটাকে দেখলে এতো লজ্জা কেনো হয় তার? কই অন্যদের সময়তো হয়না? মনেমনে ভেবে চলছে ঋতু। ঋতুর কোনো জবাব না পেয়ে দুহাতে কাধঁ চেপে ধরে সীমান্ত। সীমান্তের স্পর্শে কেঁপে উঠে ঋতু। চোখ বন্ধ করে আছে ঋতু। ঋতু তাকাও আমার দিকে। কাপাঁ কাপাঁ চোখে যখন তাকালো কেউকি আছে? মাথা নাড়িয়ে শুধু না জানিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো। সীমান্ত হেসে ফেলে। সবার মতামতে সন্ধ্যায় তাদের আক্দ হয়ে গেলো। নতুন আত্নীয়তা। আনন্দও বেশ। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে যাওয়ার আগে সীমান্ত ঋতুর রুমে গিয়ে ঋতুর জন্য অপেক্ষা করছিলো। চলবে


( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/nishe.ratri.9809

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে