তোমাকেই_ভালোবাসি পর্বঃ_০৭

0
1863

#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_০৭❤
#Writer_Safan_Aara❤

-“হ্যা মা।”

-“আচ্ছা যা এখন। ফ্রেস হয়ে আয়। ঘড়িতে দেখ।সময় বেশি নেই আর।”

-“আচ্ছা যাচ্ছি। কিন্তু মা নিচে যাওয়ার সময় তুমি আমার সাথে যেও কিন্তু।আমার ভয় হচ্ছে!”

-“ওকে যাবো। তুই যা এখন।”

অনন ফ্রেস হতে চলে গেলো।

-“কিরে! এ অবস্থা কেন তোর?”

অদিতির চুল আর শরীরের অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে বললেন মিসেস রোকেয়া।

-“একটা ষাঁড়ের সাথে মারামারি করেছি মা।”

-“কিহ! ষাঁড়!”

-“না না। ষাঁড় না। মহিস!”

-“পাগলের মতো কি বলছিস এসব।”

-“আমার মাথা ঝিরঝির করছে মা! ভার্সিটি যেতে হবে মা। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি আমাকে রিকশায় তুলে দিয়ে তারপর এসো। প্লিজ।”

-“আচ্ছা যাবো!”

-“আচ্ছা।”

বলে অদিতি নিজের রুমে চলে গেলো। ফ্রেস হয়ে বের হলো।

-“মা ষাঁআআআআআআআআড়!”

-“মা পেএএএএএএএত্নীইইইইইইইইইইইইইইইইই!”

ফ্রেস হয়ে মাকে নিয়ে নিচে নেমেছিলো অনন আর অদিতি দুজনেই। একে অপরকে দেখেই চেচিয়ে উঠলো দুজনে।

“কি বলছিস তোরা!” একসাথে বলে উঠলেন মিসেস সালেহা আর মিসেস রোকেয়া।

-“তোরা কি পাগল হলি!”

– “না মা। এই তো সেই পেত্নী।”

-“কিহ! তুই আমাকে আবার পেত্নী বললি! দাড়া!”

বলেই ব্যাগ থেকে একটা কাঠের স্কেল বের করে অননের দিকে এগোতে লাগলো অদিতি।

-“মা!”

বলে চেচিয়ে মায়ের পিছনে গিয়ে লুকালো অনন।

-” এই এই পেত্নী থাম। আসবি না কাছে। মায়ের পিছনে দাড়িয়ে আছি বলে মনে করিস না তোকে ভয় পাই। হুহ!”

ভয়ে ভয়ে বললেও ভাব নিয়ে ঠোট বাকালো অনন।

অদিতি গিয়ে মিসেস সালেহার পাশে দাড়াতেই ফিক করে হেসে ফেললেন মিসেস সালেহা আর মিসেস রোকেয়া। তাদের হাসিতে অবাক হলো দুজনেই। হা করে দাঁড়িয়ে রইলো তারা।

-“এভাবে হাসছো কেন তোমরা?” অবাক হয়ে বললো অনন।

-“তোরা সেই ছোটবেলার মতই করছিস!”

বললেন মিসেস সালেহা।

-“মানে?”

-“মানে হচ্ছে তোরা ছোট বেলায়ও ঠিক এভাবেই লেগে থাকতি একে অপরের সাথে।” বললেন মিসেস রোকেয়া।

অদিতি আর অনন দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজেরাই হেসে দিলো। অদিতি নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকালো।

-“হায় হায় মা! কত্তো লেট হয়ে গেছে। রিকশা নিয়ে গেলেও ফার্স্ট ক্লাস টা মিস হয়ে যাবে আমার মা!”

বলেই গোমড়া মুখ করলো অদিতি।

-“বাবা যে বারবার বলে গাড়িটা নিয়ে যেতে। নিয়ে তো যাস না। এবার বোঝ! চল তোকে রিকশা ডেকে দেই।”

মিসেস রোকেয়াকে থামালেন মিসেস সালেহা।

-“এই রোকেয়া থাম!”

-“বল।”

-“রিকশা নিতে হবে না। অনন আছে না। ওকে সাথে নিয়ে যাবে। একই ভার্সিটি তো!”

“কিহ!” বলে চিৎকার করে উঠলো অদিতি আর অনন।

-“কখনই না মা। এই পেত্নীকে আমার সাথে নিব না মা!”

-“এএএএএএহহহহহহহহ! তার সাথে যাওয়ার জন্য যেন আমি কান্না করে করে মরে যাচ্ছি! মা আমি গেলাম।”

-“থাম অদিতি। অনন তুই আমার কথা শুনবি না?”

-“নিয়ে যাব না।”

বাধ্য ছেলের মতো বললো অনন।

-“আমি উনার সাথে যাবো না আন্টি।”

-“আমার কথা রাখবি না অদি মা?”

-“আন্টি! এভাবে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছো কেন! যাবো আমি।”

বলে অননের পিছনে উঠে বসলো অদিতি। অনন বাইক স্টার্ট দিলো।

-“কাধে হাত দিন।”

-“পারবো না।”

-“ওকে পড়ে যান তাহলে।”

বলেই স্পীড বাড়িয়ে দিলো অনন। অদিতি পড়ে যেতে নিতেই অননের পেটে হাত দিয়ে চেপে ধরলো অননকে।অদিতির স্পর্শ অননকে যেন অন্য এক জগতে নিয়ে গেলো। সারা শরীরে ৪২০ ভোল্টের কারেন্ট দৌড়ে গেলো। অসাড় হয়ে আসা হাত দুটো দিয়ে সে ব্রেক চাপলো। অদিতি পুরোপুরি সামলে উঠতে না পেরে সম্পুর্ন লেগে গেলো অননের সাথে। যখন বুঝতে পরলো কি হচ্ছে এসব তখন নিজেই নেমে দাড়ালো।

-“এই এই! কি করছেন এসব আপনি!”

-“আপনি আমাকে এভাবে টাচ করবেন না প্লিজ।”

-“হোয়াট! আমি আপনাকে কি ইচ্ছা করে ওভাবে টাচ করেছি?”

-“পরের বার থেকে আমার সব কথা শুনবেন। আর দুরত্ব বজায় রাখবেন। উঠে বসুন।”

অদিতির তাড়া ছিলো খুব। তাই আর ঝগড়া না করে চুপচাপ উঠে বসলো আর অননের কাধে হাত রাখলো। অনন অদিতিকে সেফলি ভার্সিটি পৌছে দিলো অনন। ওর ক্লাসের দড়জা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো ওকে। কেন দিলো নিজেও বুঝলো না। হয়তো মায়ের হুকুম প্রপার্লি পালন করার জন্য।

অদিতিকে অনন তার ক্লাসে রেখে নিজের ক্লাসে চলে গেলো।অদিতিও নিজের ক্লাসে মন দিলো।

-“হ্যালো, মা! হ্যা বলো।”

ভার্সিটি ছুটির পর অনন বাইকে উঠতেই ওর মায়ের কল এলো ফোনে।

-“আসার সময়ও অদিকে নিজের সাথে নিয়ে আসিস।”

-“কি বলছো মা!”

-“যা বলছি তাই কর।”

-“কিন্তু মা!”

-“কিন্তু, মিন্তু,অন্তু যাই বলিস এখন থেকে তোকেই ওকে নিতে-আনতে হবে।”

-“এখন থেকে মানে? রোজই?”

-“জ্বি হ্যা। রোজই।”

-“মাআআআআ! জেনে শুনে কেনো প্যারায় পেরিতো করছো আমায়। মেয়েটা আমাকে আস্ত রাখবে না মা।”

-“তুই ওর সাথে ঝগড়া না করলেই তো হয়।”

-“মা!”

-“চুপ! যা বলছি তাই কর। ওকে নিয়ে আয়। রাখলাম।”

বলেই কল কেটে দিলেন মিসেস সালেহা। বেচারা অননকে কিছু বলার সুযোগই দিলেন না। ফোনটা রাখার সাথে সাথেই অনন দেখতে পেল অদিতি আর তার দুজন ফ্রেন্ড আসছে। দূর থেকে দেখলো অদিতি ফোন কানে দিলো। হয়তো ওর ফোনে কল এসেছে। বিএফ এর সাথে কথা বলছে নিশ্চই ভেবে একটা অট্টহাসি হাসলো অনন।

-“হ্যালো।”
ক্লাস থেকে বেড়িয়ে কিছুদূর হাটতেই অদিতির ফোনে কল এলো মিসেস রোকেয়ার।

-“হ্যালো অদিতি?”

-“হ্যা মা বলো।”

-“তুই কিন্তু অননের সাথে চলে আসিস।”

কথাটা শোনার পর হাটা থেমে গেলো অদিতির। হাসবে না কাদবে নাকি রাগ দেখাবে! কি করবে নিজেই বুঝতে পারছে না সে।

-“কি বলছো মা এসব!”

-“যা শুনেছিস!”

-“মা, তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না?”

-“একদমই না।যা বলেছি তাই করবি।”

-“কিন্তু মা…………..!”

-“কোনো কিন্তু না। তুই আজ পর্যন্ত আমার কোনো কথা ফেলিস নি। আশা করি আজও তাই হবে।”

বলে ফোনটা কেটে দিলেন মিসেস রোকেয়া।বেচারি অদিতিও অননের মতই কিছু বলার সুযোগ পেলো না। অদিতি ফোনটা রাখতেই মনিকা আর পুষ্পিতা তাকালো ওর দিকে। ওদের প্রশ্নসূচক চাহনি দেখে ওদের সব বলল অদিতি।

-“ওইযে দেখা যাচ্ছে অনন ভাইয়াকে।”

হাতের ইশারায় পুষ্পিতা অননকে দেখালো।

-“হুম। দেখেছি। যাই আমি। টাটা।”

ওদের থেকে বিদায় নিয়ে অদিতি অননেএ কাছে চলে গেলো। বাইকে উঠে বলল-

-“চলুন ভাইয়া।”

অদিতির এমন কাজে অবাকের সর্বোচ্চ সীমানায় চলে গেলো অনন। খুব অবাক হলেও কিছু না বলেই বাইক স্টার্ট দিলো সে। অননের নিরবতাও অদিতিকে ভাবিয়েছে খুব। “কিছু না বলে সে আমাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আজব তো ব্যাপারটা!”মনে মনে এসব ভাবছে অদিতি। আর অনন ভাবছে ” ভেবেছিলাম মেয়েটাকে বাইকে উঠতে বললেই হয়তো নতুন কোনো কাহিনি শুরু হয়ে যাবে। এখন দেখি সে নিজেই এসে বসেছে।”
পুরো রাস্তা কোনো কথা বলেনি কেউ।

চলবে……..❤।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে