তৈমাত্রিক পর্ব-১৭+১৮+১৯

0
1012

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৭

💜
.
.
.
.

সোহেল হস্পিটালেই রয়েছে। আগে যতটুকু কথা বলতে পারতো এখন তাও পারে না। তবুও তাকে দেখে বোঝা যায় যে মেহরামের সাথে তার কথা বলার কতো আকুতি-ইচ্ছে। তবে মেহরাম তো জানে যে সোহেল তেমন কথা বলতে পারে না তার বডি তে বুকের দিকে অনেক ইঞ্জেকশন পুশ করা। গলাতে বেশকিছু যন্ত্রপাতি লাগানো। তাই মেহরাম নিজেই তার সাথে কথা বলে। সকাল থেকে সারাদিন সোহেলের পাশেই ছিলো মেহরাম। এভাবেই প্রতিটি দিন যাচ্ছে। এখন বিকেল সময়। এর মধ্যে আয়ুশ এসে দুবার দেখে গেছে সোহেলকে। মেহরামের বসে থাকতে থাকতে এখন খারাপ দশা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না সে। তাই সারাঘরে একটু পায়চারি করছিলো। তখন নার্স আসে সোহেলের কেবিনে। এসে সোহেলের গলাতে যে যন্ত্র টা লাগানো ছিলো তা ধীরে খুলে দিলো। এবার যেন সোহেল তার ঘাড়ে আর গলাতে কিছুটা শান্তি পাচ্ছে। নার্স তা খুলে কিছু কথা বলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ এভাবেই শুয়ে থেকে সোহেল আধো আধো গলায় মেহরাম কে ডাকতে থাকে…

সোহেল;; মেমমেহ মেহ…

মেহরাম;; জ্বি আছি আমি এইতো।

সোহেল তার বাম হাতের আঙুল গুলো খানিক তুলে। মেহরাম বুঝতে পারলো যে সোহেল তাকে তার কাছে ডাকছে। মেহরাম সেখানে গেলো। গিয়ে সোহেলের পাশে বসে পরে। সোহেল কিছুটা মুচকি হেসে ওঠে। মেহরাম তার দিকে তাকিয়ে থাকলে হঠাৎ সোহেল খুব আস্তে আস্তে তার বাম হাত টা ওপরে তোলে। আস্তে ধীরে হাত টা তুলে মেহরামের পেটের ওপর হাত রাখে। মেহরাম প্রথমে তার হাতের দিকে তাকায় তারপর সোহেলের দিকে। তার মুখের কোণে হাসির রেখা ফুটে ওঠেছে। সে তার হাত মেহরামের পেটে আলতো করে ছুইয়ে দিতে থাকে। মেহরামও হেসে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। সোহেল এবার বড়ো বড়ো কিছু শ্বাস নিয়ে বলে ওঠে…

সোহেল;; আম..আমাদের, আমাদের মে মেয়েহ। ও..ওকে ওকে বলো যযে ওর ববাবা ওকে অননেক বেবেশি ভাভালোববাসে।

মেহরাম;; হুম।

সোহেল;; ককি হলো আম আমি ওর সাসাথে নেই কিকিন্তু আমি ওকে খখুব বেশি ভালোবাসি,,।

মেহরাম;; এমন করে বলবেন না কিছুই হবে না আপনার। আর হয়েছে অনেক কথা বলেছেন। এবার চুপ করুন।

সোহেল এবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে, আর বেশি একটা কথা বলে না। মাঝে মাঝে চোখ গুলো খুলে মেহরামকে দেখে। মেহরাম এবার বসছে আরেকবার হাটছে। ইদানীং পানি অনেক বেশি খায় সে। রাত নেমে এলো। সোহেল তাকিয়ে আছে মেহরাম তার পাশে হাত ভাজ করে বসে আছে। তখনই রুমে তনু আসে।

তনু;; মেহরু..!

মেহরাম;; এসেছিস।

তনু;; হ্যাঁ, ভাইয়া কেমন আছে এখন?

মেহরাম;; হ্যাঁ আছে ভালোই। কণা তারপর খালামনি তারা কোথায়?

তনু;; ওরা বাড়িতেই।

মেহরাম;; চাচি কোথায় রে কাল থেকে দেখছি না যে?

তনু;; আম্মু তো খালামনির কাছে মানে তোর বাড়ি। বড়ো মা একটু পরেই আসবে।

মেহরাম;; না প্লিজ আম্মুকে আসতে বারণ কর। আমি আছি এখানে আর কাউকে লাগবে না। অযথা এতো গুলো মানুষ কষ্ট করছে। আমি আছি তো।

তনু;; আচ্ছা পরের টা পরে দেখা যাবে। খেয়েছিস কিছু?

মেহরাম;; হ্যাঁ রুটি, খেতেই ভালো লাগছে না পানি খাচ্ছি শুধু।

তনু;; কেন, তুই না খেলি তুই যা ইচ্ছে কর কিন্তু আমি আমার সোনামনি টার জন্য তোকে এমন খাওয়ার জোর দেয়। তোর জন্য আমার ময়না পাখি টা কষ্ট করবে নাকি। খা কিছু। (মেহরামের পেটে হাত দিয়ে)

মেহরাম;; পানি।

তনু;; আচ্ছা নে।

এভাবেই সময় যায়। রাত বেজে চলেছে ৪;৪৫ মনিট। হস্পিটালে এখন আয়ুশ মেহরাম আর মেহরামের চাচি রয়েছে। উনি কুসুম বেগমের কাছ থেকে চলে এসেছেন। সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ডক্টর ভেতরে চেকাপ করছে। প্রায় আধা ঘন্টা পর কেবিন থেকে ডক্টর বের হয়। মেহরাম চলে যায় কেবিনের ভেতরে। গিয়েই দেখে সোহেল ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহরাম পাশে বসে তাকে জিজ্ঞেস করে…

মেহরাম;; এখন কেমন লাগছে?

সোহেল শুধু তার চোখ দুটো বন্ধ করে আবার খুলে। অর্থাৎ কিছুটা ভালো। মেহরাম মলিন হাসে। এর মধ্যে আয়ুশ আর মেহরামের চাচি গিয়ে সোহেলের সাথে দেখা করে এসেছে। এখনো মেহরাম সোহেলের কেবিনেই। রাত বাজছে ১২;৩৩ মিনিট,, মেহরামের চাচি মেহরামকে তাড়া দিচ্ছে বাড়ি যাওয়ার জন্য এখানে উনি আছেন। মেহরাম প্রথমে যেতে না চাইলে অবশেষে আয়ুশ আর তার চাচির জোরাজোরি তেই যেতে হয়। যাওয়ার আগে মেহরাম সোহেলের কেবিনে আরেকবার ঢুকে…

মেহরাম;; চাচি আমাকে বাড়ি যেতে বলছেন বারেবার।

সোহেল তার হাত টা আলতো করে মেহরামের হাতের ওপর রাখে। সোহেলও যেতে বলছে তাকে বাড়ি।

মেহরাম;; আচ্ছা আমি যাই আপনি বেশি কথা বলবেন না। চাচি এখানেই এসে বসে থাকবে কখন কি লাগে না লাগে সব দেখবে। আর আমি বাকি সবাইকে বলে দিয়েছি। থাকুন।

সোহেল হাসে। তবে এবার সে অন্যান্য দিনের থেকে বেশিই হাসে। ঠিক আগে যেমন টা হাসতো। মেহরাম হেসে সেখান থেকে উঠে চলে আসতে নিলে সোহেল মেহরামের ওরনা টেনে ধরে। মেহরাম ঘুড়ে পেছনে তাকায়। আবার খানিক বসে তার পাশে।

মেহরাম;; কিছু বলবেন?

সোহেল;; অনেক ভালোবাসি।

সোহেল মেহরামের চোখে তার চোখ রেখে কথা টা বলে ওঠে। কথা টা এমন ভাবে বললো যেন সোহেলের কিছুই হয় নি। একদম আগের কন্ঠস্বরের মতো। মেহরাম বিদায় নিয়ে এসে পরে। সে তো এতো রাতে আর একা বাড়ি যেতে পারবে না তাই আয়ুশ তাকে বাড়ি পৌছে দেয়। তবে এই সময়ে আয়ুশ আর মেহরামের মাঝে একটা কথাও হয় না। সোজা বাড়ির সামনে নেমে মেহরাম চলে যায়। গিয়েই দেখে কুসুম বেগম খাবার টেবিলে একা একা বসে আছেন। মেহরামকে দেখেই একদম বাচ্চাদের মতো কুসুম বেগম কেদে দেন। মেহরাম সামলে নেয়। তারপর নিজেও কিছুটা খেয়ে তার মা কেও খাইয়ে দেয়। ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তার শাশুড়ী মাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে মেহরাম নিজের রুমে চলে যায়। এইটা নিশ্চিত যে মেহরামের চোখে এক ফোটা ঘুমও আসবে না। রুমের প্রায় সবদিকেই সোহেলের জিনিস পত্র রয়েছে। মেহরাম সেগুলো এক নজর দেখে নিলো। হঠাৎ সে এগিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরে। মেহরামের হাত টা আপনা আপনিই তার পেটের ওপর চলে যায়। দিন দিন ফুলছে। পেটের দিকে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে। মূহুর্তেই ফিক করে হেসে দেয় সে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে সেও মা হবে। হাটতে হাটতে করিডরে চলে যায়। রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পরে। বাইরে থেকে ল্যাম্পপোস্টের কিছুটা আলো এসে সম্পূর্ণ জুড়ে আলো করে রেখেছে। তার সাথে মৃদু বাতাস। সাথে রাতে ফোটা ফুল “হাসনাহেনা”। তার সুমিষ্ট গন্ধে চারিদিক কেমন মৌ মৌ করছে। একে রাতের রাণিও বলা হয়। অনেক ভালো লাগছে। পরিবেশ টাই ভালোলাগার মতো। মেহরাম তার পেটের ওপর হাত দিয়ে চেয়ারে দুলতে দুলতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে সে নিজেও জানে না। বাকি রাত টুকু এভাবেই কেটে গেলো।


পরেরদিন সকালে উঠে মেহরাম দ্রুত নিচে নেমে গেলো। এক হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো বাধছে আর নিচে নামছে। সকাল বেলাই তাকে তার চাচি ফোন দিয়েছিলো মেহরাম কে হস্পিটালে আসতে বললো তার একটু বাসায় যেতে হবে। মেহরাম সকালের ঔষধ তার মাকে খাইয়ে আর নিলা কে সবকিছু বলে বুঝিয়ে এসে পরে। হস্পিটালে সামনে এসে গাড়ি থেকে নামতেই আয়ুশের সাথে মেহরামের দেখা হয়ে যায়।।

মেহরাম;; তুমি..!

আয়ুশ;; আব..আমি চলে যাচ্ছি।

মেহরাম;; ওহহ,,

আয়ুশ;; ব্রেকফাস্ট করেছিলে?

মেহরাম;; মানে আসলে..

আয়ুশ;; তোমাকে বলে লাভ নেই। আচ্ছা মা ভেতরেই আছেন তুমি যাও।

মেহরাম;; আচ্ছা।

এই বলেই আয়ুশ গাড়িতে ওঠে চলে যায় অফিসে। সকাল সকাল তাকে অফিসে যেতে হয়। তাই এখান থেকে আর বাড়িতে না গিয়ে সোজা অফিসে চলে যায় কেননা সেও সারারাত হস্পিটালেই ছিলো। মেহরাম হস্পিটালের ভেতরে চলে যায়। গেতেই তার চাচির সাথে দেখা হয়।

আতিয়া;; এসেছিস মা?

মেহরাম;; হ্যাঁ চাচি আসলাম। কি করো?

আতিয়া;; কিছু না, এমনিই বসে আছি।

মেহরাম;; ওহহ..

আতিয়া;; আচ্ছা শোন আমি না এখনো সোহেলের কেবিনে যাই নি বুঝলি। মানে সকাল হয়েছে তো, এই সকাল বেলা আর যাই নি। তুই ওর কাছে যা। একটু ওর সাথে থাক।

মেহরাম;; শোন এক কাজ করো তুমি এখন বাড়ি যাও।

আতিয়া;; কিন্তু..

মেহরাম;; চাচি যাও আমার পরে দরকার হলে আমি ডাকবো। প্লিজ এবার একটু বাড়ি যাও আর বাড়িতে মা একা তুমি যাও।

আতিয়া;; আচ্ছা তাহলে আমি যাই আর তুই সোহেল বাবার কাছে যা। সমস্যা হলে ফোন দিস কিন্তু।

মেহরাম;; হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি সাবধানে যাও।

মেহরামের চাচি চলে যায়। তার খানিক পরেই মেহরাম সোহেলের কেবিনে ঢুকে পরে। মেহরাম গিয়েই দেখে সোহেল গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। তবে মেহরামের কেমন একটু অদ্ভুত লাগে যে সোহেল তো এভাবে ঘুমায় না। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে কতো টা গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। তবে সোহেলের ঘুম অনেক বেশি পাতলা, ঘুমিয়ে থাকলে কিছুটা একটার হাল্কা শব্দ হলেও তার ঘুম ভেংে যায়। যাই হোক মেহরাম কেবিনের ডেস্কের ওপর নিজের ব্যাগ টা রেখে দেয়। টুকটাক কাজ করছে আর সোহেলের সাথে কথা বলছে।

মেহরাম;; এতো ঘুম আজ বেপার কি। মেডিসিনের ডোজ বেশি পরেছে নাকি।

মেহরাম এক নজর সোহেলের দিকে তাকায়। দেখে নাহ, এখনো সোহেল আগের মতোই ঘুম। মেহরাম কপাল খানিক কুচকায় কিন্তু আবারও নিজের কাজে মন দেয়।

মেহরাম;; কি হলো আজ এতো ঘুম পেয়েছে আপনার। উঠুন, স্যালাইনও তো শেষ প্রায় ওটা চেঞ্জ করতে হবে। জানেন মা আপনার বেপারে কতো কথা যে বলে। এখন শুধু আপনার জলদি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পালা। সবাই সেখানে আপনার জন্য চিন্তায় শেষ আর আপনি এখানে আরাম করে ঘুমাচ্ছেন। উঠুন।

মেহরাম এবার সোহেলের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। এতো কথা বলছে তাও তার উঠার নাম নেই। কেমন যেন লাগে মেহরামের। অজান্তেই মেহরামের বুকের ভেতরে হাতুড়ি পেটাতে শুরু করে দিয়েছে। গলা ভয়ে শুকিয়ে গেছে তার। মেহরাম ধীর পায়ে সোহেলের দিকে এগিয়ে যায়। গিয়ে সবসময়ের মতো সোহেলের পাশে বসে পরে। আস্তে করে সোহেলকে ডাকতে থাকে…

মেহরাম;; সোহেল, সোহেল। এই যে দেখুন আমি এসেছি। উঠুন। উঠছেন না কেন। কথা বলুন। আমি এসেছি তো।

মেহরাম সোহেলের হাত টা কিছুটা ওপরে তুলে কিন্তু তার হাতে কোন শক্তি নেই, আবার হাত টা নিচে পরে যায়। মেহরাম যেন বড়োসড়ো একটা ঝটকা খেলো। মাথায় বাজ ভেংে পড়েছে তার। শ্বাস গুলো ভারী হয়ে এসেছে। মেহরাম সোহেলের পার্লস গুলো চেক করে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। তাহলে কি…

মেহরাম;; সোহেল প্লিজ দেখুন আমার ভয়, আমার ভয় হচ্ছে অনেক। এমন করবেন না। কথা বলুন আমি, আমি এসেছি তো। সোহেল দেখুন আপনি জানেন আমার অবস্থা ভালো না। অযথা ভয় দেখিয়েন না তো আমায়। কথা বলুন। কিছু হয় নি তো। (কেদে)

মেহরাম এই যে ডাকে সোহেল কে কিন্তু তার ওঠার নাম নেই। মেহরাম জেনে গেছে যে সোহেল আর নেই।সোহেল মারা গেছে। চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছে সে। কিন্তু কেন যেন মেহরাম সত্য টা মেনে নিতে পারছে না। সোহেল আর নেই এর জন্যই সে এতো চুপ আজ, এতো ডাকার পরও উঠছে না। “সোহেল আর নেই” এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না তার। মেহরাম কেদে কেদে হিচকি তুলে ফেলেছে তখনই একজন নার্স সোহেলের কেবিনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো মেহরামের কান্নার শব্দ শুনে নার্স টা কেবিনের দরজা টা হাল্কা ভাবে খুলে দেখে মেহরাম অঝোরে কাদছে। আর মেহরামকে সেই নার্স টা ভালোভাবেই চিনে। সে দ্রুত ডাক্তার কে ডেকে আনতে যায়। পেসেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না শুনে ডাক্তার দ্রুত ছুটে আসে। নার্স এসে মেহরামকে ধরে উঠায়। কোন রকমে শান্ত করায়। মেহরামও কিছুটা চুপ হয়ে যায়। মেহরাম জলদি সবাইকে ফোন দিয়ে হস্পিটালে ডাকে। তার প্রায় দশ মিনিট পরেই ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। মেহরাম তড়িঘড়ি করে ডাক্তারের সামনে যায়।

মেহরাম;; ডক্টর, কি হয়েছে, কককি হয়েছে উনার। ঠিক আছেন তো?

ডাক্তার;; মিসেস মেহরাম আমি জানি যে আপনার এই অবস্থায় এই সত্য টা মেনে নিয়ে বেশ কষ্ট হবে কিন্তু কি আর করার। মিস্টার সোহেল ইস নো মোর। মারা গেছেন উনি, আমি দুঃখিত।

মেহরামের মাথায় যেন বাজ ভেংে পরে। কি থেকে এ কি হয়ে গেলো। তখনই বাড়ির সবাই এসে পরে। ডাক্তার তাদেরও এই একই কথা বলে। আসলে কেউই এই কথা টা এখন বিশ্বাস করতে পারছে না। কুসুম বেগম ইতোমধ্যেই জ্ঞান হারিয়েছেন। মেহরাম ধপ করে বসে পরে। তনু তাকে সামলিয়ে নেয়। অতি শোকে সবাই পাথর হয়ে গিয়েছে। একটা নবজাতক বাচ্চা জন্মানোর আগেই তার বাবাকে হারালো। এটা মেনে নেবার মতো কথা না। পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে পরেছে। মেহরামের তো এই অবস্থা যে কাদতে কাদতে পানি গুলোও শুকিয়ে গেছে। সে শুধু মূর্তির ন্যায় বসে আছে। সোহেলের লাশটা হস্পিটাল থেকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আনা হয়েছে। সোহেলের মামা & মামাতো বোন এসেছে। সবার আহাজারি আর কান্নায় যেন বাড়ি ফেটে পরছে। ঘুমের মাঝেই সোহেল মারা গিয়েছিলো। তার ক্যান্সার একদম ফুটে ওঠেছে। এমনও হয়েছে যে শরীরের মাংস গুলো খয়ে খয়ে পরেছে। তবুও তাকে শেষ গোসল করিয়ে কাফনের কাপড় পরিয়ে স্টীলের বিছানাতে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। সোহেলের সাথে যারা আর্মিতে কাজ করতো তারা সকলেই এসেছে। সবারই চোখে আজ অশ্রুবিন্দু। আর মেহরাম সব সময়ের মতো সোহেলের মাথার পাশে বসে আছে। একদম টাস্কি খেয়ে বসে আছে। চারিদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছে মেহরামের। আয়ুশ একপাশে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। সোহেলের সেদিনের বলা কথা গুলো কানে বাজছে তার।

সবার জীবনের চিরন্তন সত্য হচ্ছে “মৃত্যু”। জীবনের ইতি ঘটানোর নাম হচ্ছে “মৃত্যু”। এই ক্ষুদ্র দুনিয়ায় সবকিছুই খনিকের সব। অবশেষে যা থাকে তা হচ্ছে এই “মৃত্যু”। আর এটাই সত্য। হাজার নামি দামি অট্টালিকা তে থাকলেও অবশেষে সবার স্থান হয় সেই তিন ফুট মাটির নিচে। কবরের বাশ পচার আগে মানুষ হাড়-মাংস পচন ধরে। বেপার টা কষ্ট দায়ক কিন্তু এটাই সত্য। আজ হোক কাল হোক, দুইদিন আগে আর পরে হোক সবারই এই একই স্থানে যেতে হবে ”কবর”। যেখানে আজ সোহেলকেও যেতে হলো সবাইকে কাদিয়ে।

সোহেল সকাল বেলা মৃত্যুবরণ করে। আর সন্ধ্যার দিকে তার জানাযা। কুসুম বেগম তো মা, আর একজন মায়ের মন কি বলে যখন নিজের চোখের সামনে নিজের সন্তানের লাশ থাকে। উনার কান্নায় বাড়ির দেওয়াল গুলো যেন ফেটে পরছে। তনু, সোহেলের মামাতো বোন আর মেহরামের আম্মু কুসুম বেগম কে সামলাচ্ছে। সোহেলের লাশ নিয়ে যাওয়ার পালা এবার। মেহরাম পাথরের মতো সেখানে ঠাই বসে আছে। তার সামনে থেকে সোহেলের লাশ টা নিয়ে যাওয়া হয়। আয়ুশ সবার আগে সোহেলের লাশ টা তার কাধে নেয়। বাড়ির সব ছেলে মানুষ আর মসজিদের বেশ কিছু মুন্সী মিলে সোহেলের লাশ টা নিয়ে যায় জানাযা পড়ানোর জন্য। কুসুম বেগমের শরীর অতিমাত্রায় খারাপ হয়ে গেছে। মেহরাম খালি চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সে দেখছে যে সোহেল কে তারা তার সামনে থেকে নিয়ে গেলো। তাদের বাড়ির বাইরে গেতেই মেহরাম উঠে এক দৌড় দিয়ে বাড়ির গেটের কাছে চলে যায়। চোখ নাক মুখ তার সব ফুলে লাল হয়ে গেছে। মাথা থেকে ঘোমটা টা নিচে নেমে পরেছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। শ্বাস যেন আটকে গেছে তার। মেহরাম আর পারে না নিজের গলা ছেড়ে জোর চিল্লিয়ে দেয় এক ডাক….

মেহরাম;; সোহেএএএএএএএএএএএএএএএএএএল।





💕চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৮

🌺. . .

সোহেলের জানাযা শেষে সবাই এসে পরেছে। বাড়িতে এখনো অনেক মানুষ আছে। তারা কেউই কারো বাড়ি যাই নি আজ। সবাই এখানেই থাকবে। কুসুম বেগমকে সামলানো এক প্রকার দায় হয়ে পরেছে। এদিকে বাড়িতে কোথাও মেহরামকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সেদিকে কারো খেয়াল নেই। হঠাৎ করেই আয়ুশের খেয়াল আসে যে সবাই এখানে আছে কিন্তু মেহরাম নেই। আয়ুশ তাকিয়ে দেখলো কাউকে যে কিছু জিজ্ঞেস করবে সেই পরিস্থিতি টুকু নেই। সবাই এখানে তাহলে তো মেহরামেরও এখানেই থাকার কথা। আয়ুশ তাকে পায় না তাই সে নিজেই সেখান থেকে উঠে এসে মেহরামকে খুঁজতে থাকে। হলরুমে, বারান্দায়, ছাদে সব জায়গায় খুঁজে নেই। কিন্তু মনে পরে যে মেইন জায়গা তেই তো খোজা হয় নি। সে মেহরামের রুমের কাছে চলে যায়। তবে এতোক্ষণে বাইরে একদম কালো মেঘ করে এসেছে। আকাশে ভারি বিদুৎ চমকাচ্ছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তীব্র বেগে একটা বৃষ্টি নামবে।
আয়ুশ মেহরামকে খুজছে আর এরই মধ্যে বৃষ্টি নেমেও গেছে। আয়ুশ মেহরামের রুম অতিক্রম করে গেলে কি যেন একটা লক্ষ্য করে। সে ধীর পায়ে আবার পিছিয়ে আসে। দেখে মেহরাম ফ্লোরে খাটের সাথে হেলান দিয়ে দুহাত-পা ভাজ করে বসে রয়েছে। রুমের বড়ো বড়ো জানালা গুলো কিছুই লাগানো হয়নি। বড়ো বড়ো পর্দা গুলো বাতাসে উড়ছে। সব একদম খোলা। সেদিক দিয়ে সাই সাই করে বাতাস আসছে। কিন্তু মেহরামের হুশ নেই সে তার মতো করে বসে আছে। আয়ুশ মেহরামের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলবে কি বলবে না দোটানার মধ্যে পরে গেছে। তবে আয়ুশ বুঝলো যে এখন এই মূহুর্তে মেহরামকে একা থাকতে দেওয়া টাই ভালো হবে। কারণ এখন কারো মনের অবস্থাই ভালো না। তাই আয়ুশ মাথা নামিয়ে সেখান থেকে চুপচাপ এসে পরে। কিন্তু মেহরাম খেয়াল করেছিলো যে সেখানে আয়ুশ দাঁড়িয়ে আছে। আয়ুশের চলে গেতেই সে চোখ তুলে তাকায়। মেহরাম উঠে গিয়ে তার ঘরের দরজা টা লাগিয়ে দেয়। তারপর চলে যায় করিডরে। প্রচুর পরমাণে বাতাস এখানে। বাতাসে মেহরামের ওরনা টা উড়ছে। তবুও মেহরামের সরার নাম নেই। হয়তো তার মনের ভেতরে যে ঝড় বইছে তার কাছে এই ঝড় নিতান্তই তুচ্ছ। এখনো বাইরে থেকে সবার কান্নার আওয়াজ কানে আসছে। মেহরাম ঘাড় টা ঘুরিয়ে একটু তার পেছনে তাকায়। আবারও সামনে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি নেমে গেছে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই থেকে মেহরাম এসে পরে। রুমের দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে পরে। বাইরে যেন সবার এক আহাজারি শুরু করে গেছে। সোহেলের বোন টাও পাগলের মতো কান্না করছে। মেহরাম সোজা বের হয়ে পরে রুম থেকে। আপন মনে সামনে হেটে যেতে থাকে। সবার অগোচরে বাড়ির বাইরেও এসে পরে। তবে মেহরাম বাড়ির বাইরে বের হলে আয়ুশের তা চোখে বাধে। সে মেহরামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেহরাম কাউকে কিচ্ছু না বলে সোজা নিজের মতো করে বাইরে বের হয়ে পরে। আয়ুশ কুসুম বেগমের পাশে বসে ছিলো। মেহরাম যে চলে গেলো তা সে দেখেছে। এতো বৃষ্টির মাঝে সে গেলো কোথায়? আয়ুশ এখন এদের এভাবে রেখে কোথাও যেতেও পারছে না। আয়ুশ সেখানেই কিছুক্ষন বসে থাকে। এদিকে মেহরাম এই ঝড়ের মাঝেই বাইরে বের হয়ে পরেছে। বাড়ির গেট পেরিয়ে বাইরে বের হতেই আরেক দমকা বাতাস এসে যেন মুখের ওপর আছড়ে পরলো। যেখানে সবাই এই ঝড়ের হাত থেকে বাচার জন্য ছুটছে সেখানে মেহরাম একাই হেটে চলেছে হেটেই চলেছে । বেশ সময় পার হয়ে গেলো তবুও মেহরামের আসার নাম গন্ধ নেই। এবার যেন আয়ুশের টনক নড়ে। সে উঠে গিয়ে বাইরে চলে যায়। আয়ুশকে তনু জিজ্ঞেস করলে সে কোন উত্তর না দিয়েই চলে যায়। সেও মেহরামের খোঁজে বাইরে বের হয়ে পরে। আশে পাশে সব জায়গায় মেহরাম কে খুজে চলেছে আয়ুশ কিন্তু সে নেই। প্রায় পনেরো মিনিটের ওপরে হয়ে গেলো মেহরামকে আয়ুশ খুজছে কিন্তু সে নেই। এদিকে মেহরাম হাটতে হাটতে এক নির্জন জায়গায় এসে পরে। চারিদিকে কেমন এক শুনশান নীরবতা। চারিদিকের কোথাও মানুষ নেই। মেহরাম আরেকটু হেটে সামনে গেতেই দেখে এক কবরস্থান। এখানেই সোহেলকে কবর দেওয়া হয়েছে। আসলে মেহরাম সোহেলের কবরের কাছে এসেছে। মেহরাম হেটে গিয়ে কবরস্থানের ভেতরে চলে যায়। ওইতো সামনেই সোহেলের কবর। ওপরে ছোট্ট একটা দেওয়াল তার সাথে লিখা “সোহেল শেখ”। মেহরাম খানিক দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কবরের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে। এর মধ্যেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নেমে পরে। আকাশে কয়েকবার ভারি মেঘ ডেকে আবার চুপ হয়ে যায়। এখানে বেশ কিছু কবর রয়েছে। তাদের মধ্যে সোহেলের একটা। বৃষ্টিতে সব কবর গুলো ভিজে যাচ্ছে। মেহরামও প্রায় ভিজে একাকার করে গেছে। মেহরাম এক চুল পরিমাণ ও নড়ছে না। সোহেলের কবরের দিকেই স্থীর ভাবে তাকিয়ে আছে। তার গাল চোখ বেয়ে ঝরে যাচ্ছে অজস্র অশ্রু। মেহরামের এখন একটা কথা বারবার মনে পরছে~~

~“`একদিন চিরনিদ্রায় শায়িত থাকবো আমি কবরের শায়নে,, একা কোন এক বৃষ্টি ভেজা দিনে“`~

খুব খুব কষ্ট বুকে নিয়ে কেউ একজন এই কথা টা বলেছিলো। এই নিষ্ঠুর দুনিয়া তাকে তার কষ্ট গুলোকে সুখে পরিণত-ই হতে দেয় নি। বেচারার কষ্ট গুলো তার বুকে চাপা দিয়েই পরকালে পারি জমাতে হয়েছে। মেহরাম সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। আর ওদিকে আয়ুশের হঠাৎ মাথায় আসে যে মেহরাম সোহেলের কাছে তো যায় নি। আয়ুশ কোন কিছু না ভেবে দ্রুত সেদিকেই যায়। আর যা ভেবেছিলো তাই হয়। মেহরাম ভিজে একাকার হয়ে সোহেলের কবরের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ুশ কি বলবে কি করবে ভেবে পায় না কারণ সিচুয়েশন টাই এমন। এভাবে ঠিক কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো মেহরাম জানে না। মেহরাম এবার তার হাত টা তার পেটের ওপরে রাখে। শেষ একবার সোহেলের দিকে তাকিয়ে সে এসে পরে। মেহরাম সারা টা রাস্তা এসেছে পেটের ওপর হাত রেখে, মেহরামকে যেতে দেখে আয়ুশও তার পিছু যায়। আয়ুশ তাকে আটকায় নি, না ই ভিজতে বারণ করেছে। কি বলবে সে, কোন ভাষাই নেই তার কাছে। তবে পেছন ঘুড়ে যাবার সময় মেহরাম আয়ুশকে দেখে। সে কিছু না বলেই এসে পরে। হাটতে হাটতে এক সময় মেহরাম বাসায় এসে পরে। বাড়ির ভেতরে যেতেই সবাই অবাক হয়ে মেহরামের দিকে তাকায়। অতি মাত্রায় ভিজে গেছে সে। আর বাড়ি থেকে কখন কিভাবে বের হলো তার কেউ বলতেই পারবে না। টুপ টুপ করে পানি পরছে। মেহরাম চুপ করে তাকিয়ে আছে। তনু কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ মেহরামের মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠে। নিজের চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলে হুট করেই অজ্ঞান হয়ে পরে মেহরাম। অজ্ঞান হয়ে নিচে পরে যাবার আগেই পেছন থেকে আয়ুশ এসে তাকে ধরে ফেলে। আর তনু, মেহরামের আম্মু, চাচি সবাই ”’মেহরাম”’ বল চিল্লিয়ে ওঠে দ্রুত তাকে ধরে। তনু আর মেহরামের আম্মু তাকে ধরে ধরে রুমে নিয়ে যায়।

তনু;; এইসব কি হচ্ছে, মেহরাম গিয়েছিলো কোথায়?

কনিকা;; তাই তো জানি না, আর গেলোই বা কখন তাও তো বুঝতে পারলাম না।

আয়ুশ;; সোহেলের কবরের পাশে গিয়েছিলো। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আর বৃষ্টি তে ভিজছিলো।

তনু;; কিহহ এই কড়া বৃষ্টি তে ভিজছিলো আর আয়ুশ তুমি আটকাও নি?!

আয়ুশ;; কি বলবো আমি, কি বলবো যে মেহরাম এসে পরো। আরে অবস্থা টাই এমন। কান্ডজ্ঞান কারোর ই এখন ঠিক নেই। ওর মনের মাঝে কি চলছে আল্লাহ আর ও ছাড়া কেউ জানে না। মেয়ে টা শেষ হয়ে গেলো একদম। প্লিজ ওকে দেখো।

আয়ুশ এই বলেই মেহরামের রুম থেকে এসে পরে। তনু আর মেহরামের মা মিলে মেহরামের ভেজা কাপড় পালটে দিলো। চুল মাথা এগুলো মুছে একদম ঠিক করে দিলো। কিন্তু এখনো মেহরাম অজ্ঞান। ডাক্তার কেউ ডাকতে পারছে না। কারণ এখন বাইরে যে পরিমাণ বৃষ্টি তাতে কেউই আসবে না। বাইরের অবস্থা খারাপ। মেহরাম এখনো অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে। মেহরামের মা মেহরামের পাশে বসে পরে। মেহরামের একটা হাত তার দুহাতের মাঝে নিয়ে ফুপিয়ে কেদে ওঠে। তনু তার বড়ো মা কে কি বলে বুঝ দিবে জানা নেই তার। সবাই এভাবেই থাকতে থাকে। ঘন্টা খানিক পর বৃষ্টির বেগ কমে গেল। আয়ুশ দ্রুত একজন ডাক্তার কে ফোন দেয়। তারপর উনি এসে মেহরামের চেকাপ করতে থাকেন…

ডাক্তার;; দেখুন উনি ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট, কিছুদিন পর ৬ মাস হবে। একজন মেয়ের জন্য প্রেগন্যান্সির ৬ মাস থেকে শুরু করে বাকি সময় টুকু খুব বেশি স্যান্সিটিভ হয়। প্রোপার কেয়ার করতে হবে। আর আমি জানি উনার হাজবেন্ড ইতোমধ্যেই মারা গিয়েছেন। তো উনার ওপর এর প্রভাব টা পরবেই। তবুও বেশ কিছু মেডিসিন দিচ্ছি টাইম মতো খাওয়াবেন।

তনু;; জ্বি একদম।

ডাক্তার;; উনাকে বেশি একা থাকতে দিবেন না। কারণ উনি অনেক বেশি টেনশন করেন। আর এটার এফ্যাক্ট বেবির ওপর কেমন পরে তা বলে বুজানো দায়। বেশি মানুষের মাঝে রাখবেন। কারণ একা থাকতে দিলেই শতো চিন্তা ভাবনা এসে মাথায় জড়ো হবে। আর খাবারের কথা তো রইলোই। যতো বেশি সম্ভব উনাকে খাওয়াবেন। আসলে কি এখানে মেডিসিন না উনার ঠিকঠাক মতো খেয়াল রাখলেই হয়ে যাবে।

তনু;; হুমমম।

ডাক্তার সব কিছু বলে বুঝিয়ে সেখান থেকে এসে পরে। তনু মেহরামের পাশে বসে পরে। এখনো মেহরাম চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তবে চোখ বন্ধ থাকা অবস্থা তেও তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। তনুর এবার বেশ কান্না পাচ্ছে। নিজের চোখের সামনে নিজের বোনের এই অবস্থা যেন সে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তনুর চোখের পানি গুলো টুপ টাপ করে মেহরামের মুখের ওপর পরে। মেহরাম আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়। তাকিয়েই তনুর মুখ টা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মেহরাম দেখে তনু হাউমাউ করে কাদছে। মেহরাম মুচকি হেসে তনুর চোখের পানি গুলো মুছে দেয়। মেহরাম উঠে বসে, তনু হেল্প করে। তনু খাবার এনে মেহরামের মুখের সামনে ধরে। মেহরাম প্রথমে খেতে না চাইলেও তনুর জোর করে খাইয়ে দেয়। খাইয়ে চলে যায় তনু। মেহরাম এখন রুমে একা। এবার যেন মেহরামের বাধ ভেংে গেলো। নিজের পাশে তাকিয়েই দেখে সোহেলের ছবি। মেহরাম সেটা হাতে নিয়ে কেদে দেয়। মেহরাম এবার কেদে দেয়, একদম সবকিছু ভুলে কাদছে।

মেহরাম;; আপনি কেন চলে গেগেলেন,, নিনিজের মমায়ের কথা এএএকবার ভাভাবলেন ননা। এএভাবে একা ফেলে কেন গেলেন। ফিরে আসুন না প্লিজ। মানলাম আমি আমি আপনাকে আমার, আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে পারিনি কিন্তু আপনি, আপনি এভাবে চলে যাবেন। অনেক মিস করছি আপনাকে প্লিজ ফিরে আয়ায়াসুন না। আপনার যেযে মেয়ে, মেয়ে হবে আমি ওকে কি বলবো, বলবো যে তোর বাবা তোতোকে একা রেরেখে চলচলে গেছে। সবার, সবার বাবা যখন তাতাদের মেয়েকে আদর করবে আমার মেময়ে কি তাতাকিয়ে তাকিয়ে দেখবববে নাকি। আপনি খুব বেশি খাখারপ। সোহেএএএএল। (অঝোরে কেদে)


এভাবেই দিন যেতে থাকে। কুসুম বেগম আগে থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছেন। তবুও কোথাও না কোথাও ছেলে হারানোর আর্তনাদ রয়েই গেছে। তনু প্রতিদিন নিজের বোনের কাছে আসে। মেহরামের বাবা মা চাচি চাচ্চু সবাই আসে। মেহরামও মাঝে মাঝে নিজের বাবার বাড়িতে যায়। কুসুম বেগম মেহরামকে আগের মতোই ভালোবাসে। তবে ইদানীং উনি নিজের ভাইয়ের কাছে যাতায়াত করেন বেশি। আয়ুশের সাথে মেহরাম আগে থেকে একটু ভালোভাবেই কথা বলে। মেহরামের ছয় মাস চলছে। বাড়ির সবাই মেহরামের সাথে সবসময় থাকে। তনু আর তার মা মানে মেহরামের চাচি মেহরামকে খাইয়ে খাইয়ে শেষ করে। আগে থেকে সবকিছুই রিকভার হয়েছে একটু। সবই ঠিক আছে কিন্তু মাঝে মাঝে সোহেলের কথা সবারই মনে পরে। মেহরাম আগে থেকে হাল্কা মোটা হয়েছে। মেহরামও নিজের বাচ্চার কথা ভেবে হাসি খুশিই থাকে। ডাক্তারের কাছে যেতে হয় তাকে মাঝে মাঝে। মেহরাম যখন তার বাবার বাড়িতে যায় তখন যেন কারো খুশি আর ধরে না। সবাই মেহরামের সামনে অনেক নরমাল থাকে। আর মেহরামের মায়ের যেন এটা প্রতিদিন কার কাজ হয়ে গেছে। মেয়ে বাড়ি এলে তাকে নিজ হাতে আচার বানিয়ে খাওয়ানো। তবে যখন তনু আর তার শশুড় বাড়ির লোকজন আর মেহরাম সবাই মিলে মেহরামের বাবার বাড়িতে এক হয় তখন মেহরামের খানিক হলেও কষ্ট লাগে। তনু আর আয়ুশ একসাথে যে। মেহরাম সেখান থেকে উঠে দূরে সরে আসে। হয়তো তখন তার কিছুটা হলেও সোহেলের কথা মনে পরে। মেহরাম এখন ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। তখন আকাশ আসে হাতে তার এক বয়াম আচার নিয়ে। কারণ সে জানে যে তার মেহরাপু আচার খেতে ভালোবাসে। মেহরাম তার পাশে তাকিয়ে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। আচারের বয়াম মুখের সামনে নিয়ে যার ফলে তার মুখই ঢেকে গেছে। মেহরাম খিলখিল করে হেসে দেয়। সাথে আকাশও। মেহরাম আকাশ কে নিয়ে একসাথে বসে আচার খেতে থাকে। আর আকাশের সব বোকা বোকা কথায় হাসছে। আর আয়ুশ ছাদের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। সে ছাদে এসেছিলো এসেই দেখে এখানে দুই ভাই বোন মিলে বসে আছে। সময়ের চাকা যেতে যেতে আরো কেটে যায় দুমাস।





🌹চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৯

🌺. . . .

সময়ের চাকা যেতে যেতে আরো কেটে যায় দুমাস। মেহরামের ৮ মাস চলছে। পেট অনেক বেশি ফুলে গেছে। মেহরামের হাতে গালে বেশ মাংস বেড়েছে। চুলগুলো ঘন কালো লম্বা। হাটার সময় পেটে হাত দিয়ে হাটতে হয় তাকে। অনেক বেশি সুন্দর লাগে তাকে। আচ্ছা মা হবার আগে সব মেয়ে দেরই কি এমন সুন্দর লাগে বা তারা এমন সৌন্দর্যের অধিকারীনি আপনা আপনিই হয়ে যায়!? একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে বেশি মূল্যবান একটা সময় এটা। মেহরাম এখন তার বাবার বাড়িতেই তনুও সেখানেই রয়েছে। তনু মাঝে মাঝে মেহরামের পেটের ওপর কান পেতে শুনে। মেহরাম হাসে। বেবি হলে এই করবে সেই করবে কতো কিছু। মেহরামের চাচি যেন আজ সকাল থেকে পণ করে রেখেছেন যে মেহরামের মুখ এক মিনিটের জন্যও ফাকা রাখবে না। কেননা বেশ কিছু দিন আগে ডাক্তার দেখানো হয়েছিলো মেহরামকে, ডাক্তার বলেছে বেবি হ্যালদি হলে আপনার কেও ওইসব হ্যালদি খাবার খেতে হবে। ব্যাস এই বললো আর শুরু হলো সবার তাকে খাওয়ানোর পালা। কুসুম বেগম এখনো আগের মতোই রয়েছে। মেহরামকে নিজের মেয়েই ভাবেন। তিনি তার বাড়িতেই আছেন। মেহরামকে বলেছে তার বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে। সকাল বেলা তার সাথে সবার কথাও হয়েছে। আয়ুশ অফিসে। তনু তাকে সেখানেই ভিডিও কল দিয়েছিলো। সবার সাথেই তার কথা হয়। এখন মেহরামকে দুইজন দুইদিক থেকে ধরেছে। তনু আর মেহরামের চাচি। তনুর কাছে মেহরামের চুল গুলো নাকি হেব্বি লাগে। তাই আচড়ে দিচ্ছে আর তার চাচির খাবার মিশন।

চাচি;; এটা, এটা খা তারপর আমি আরো আনছি।

মেহরাম;; কি শুরু করলা টা কি তোমরা। আমারে কি মানুষ মনে হয় না। গরু লাগে আমারে। গতো দুই ঘন্টা যাবত এইটা ওইটা খেতেই আছি। চাচি আমি আর পারবো না গো।

চাচি;; তুই না খেলি আমার ছোট মেহরাম খাবে।

মেহরাম;; না না ছোট টার ও পেট একদম ভরে গেছে আর খাবে না।

চাচি;; আচ্ছা এখন রাখলাম পরে আবার খাস।

মেহরাম;; ইশশশশ!

তনু এদের কান্ড দেখে হেসে দেয়। মেহরামের মাথা বাধা শেষ হলে তনু আর মেহরাম মিলে গল্প করতে থাকে। তখনই মেহরামের বাবা আর সাথে বাড়ির মালি বাইরে থেকে বাজার করে নিয়ে আসে। মেহরামের বাবা বাড়ি এসেই কনিকা বলে চিল্লিয়ে ওঠে। বাইরে তাকিয়ে দেখে মেহরামের বাবা পুরো বাজার তুলে এনেছে। তড়িঘড়ি করে সেগুলো নিয়ে আসে। তারপর মেহরামের চাচি আর মা মিলে সেগুলো গোছগাছ শুরু করে দেয়। মেহরামের দাদি বসে বসে সুপারি কাটছেন। এভাবেই সবাই হেসে খেলে চলছিলো। তবে এরই মধ্যে মেহরামের শ্বাস কেমন ছোট হয়ে এলো। তলপেটের সাইডে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হলো। তনু তাকে সোফাতে বসিয়ে রেখে একটু রান্নাঘরে গিয়েছিলো। কিন্তু এদিকে তো মেহরামের অবস্থা খারাপ। নিজের হাত টা একাএকাই পেটে চলে গেলো। চোখ মুখ কেমন কুচকে ফেললো মেহরাম। হঠাৎ মেহরামের পেটে ব্যাথা শুরু হলো….

মেহরাম;; আ আ আহহ.. মায়ায়া।

তনু পেছন ফিরে দেখে মেহরাম পেটে হাত রেখে চোখ মুখ সব ছোট করে ফেলেছে।

তনু;; মেহরু… বড়ো মা মেহরাম কে দেখো। (চিল্লিয়ে)

তনু ছুটে গেলো মেহরামের কাছে সাথে সবাইকে ডাক দিলো। সবাই দ্রুত এসে মেহরামকে ধরে। তার অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেছে।

তনু;; কি হয়েছে তোর মেহরু বেশি ব্যাথা করছে?

মেহরাম;; জাজানি নননা হু হুট করেই ব্যাথা করছে অনেক।

তনু;; কিন্তু এখন তো ডেলিভারির টাইম না এখন এমন ব্যাথা। বাবা গাড়ি বের করো।

বিল্লাল;; হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি, মেহরামকে একটু ধরে বাইরে নিয়ে আয়।

তনু;; হ্যাঁ আনছি।

মেহরামের মা কেদে দিয়েছে। কেননা তার মেয়ের ওপর দিয়ে এমনিতেই অনেক বেশি ঝড় গিয়েছে। এখন যদি কিছু হয় পুরো পরিবার ঝড়ে যাবে। আর নিজের চোখের সামনে নিজের সন্তানের এমন দশা কোন মা-ই সহ্য করতে পারবে না। মেহরামের ব্যাথা বেড়ে গেলো। তাকে সবাই ধরে কোন রকমে গাড়িতে তুলে দিলো। কিন্তু মেহরাম এই যে তার মায়ের শাড়ির আচল ধরেছে আর ছাড়ে না। এগুলো যেন মেহরামের মায়ের মন কে আরো ক্ষত-বিক্ষত করে তুলছে। উপায় না পেয়ে ড্রাইভিং সিটে মেহরামের চাচা বসলো পাশে মেহরামের চাচি, আর পেছন মেহরাম তার মা আর তনু। মেহরামকে দুপাশ থেকে ধরে রেখেছে। বেশ সময় পর হস্পিটালে পৌঁছে গেলো। যে ডাক্তারের আন্ডারে মেহরাম ছিলো সেই ডাক্তারের কাছেই গেলো। ডাক্তার আর দুইজন নার্স মেহরাম কে ধরে খুব সাবধানে ভেতরে নিয়ে গেলো। রক্ত পরছে মেহরামের। লাল জামা পরে থাকার কারণে রক্তে যেন তা খয়েরী রঙের হয়ে গেছে। কুসুম বেগমকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উনি ছুটে আসেন মেহরামের খবর জেনে। মেহরামকে কেবিনের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। আর বাইরে সবাই বসে আছে। চিন্তায় এক একজনের ঘাম ঝড়ে যাচ্ছে। তনু জলদি আয়ুশকে ফোন দেয়। হাত-পা যেন তার কাপছে। তড়িঘড়ি করে আয়ুশকে ফোন দেয়। আয়ুশ তখন মিটিং-এ ছিলো। কিন্তু এই অসময়ে ফোন বাজাতে কছুটা বিরক্তি-ই হয় আয়ুশ। ফোন তুলে দেখে তনুর ফোন। আয়ুশ প্রথমে কেটে দেয়। কিন্তু পরের বার আবার ফোন বাজে আয়ুশের মনে হয় যদি কল টা দরকারি হয় তাহলে তাই সে সবার কাছ থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ফোন টা পিক করে…

আয়ুশ;; তনু তুমি জানো যে এখন আমি মিটিং-এ!

তনু;; রাখো তোমার মিটিং, আয়ুশ জলদি এসো মেহরামের ব্লিডিং হচ্ছে, এখন হস্পিটালে আমি।

আয়ুশ;; কিহহ, ব্লিডিং মানে। ৮ মাস না এখনই কিসের ব্লিডিং। কি বলছো তনু?

তনু;; আয়ুশ আমি জানি না প্লিজ তুমি আসো।

আয়ুশ;; না না মেহরামের কিছুই হবে না। ও ঠিক থাকবে, তুমি চিন্তা করো না। আর আমি, আমি এখনই আসছ।

তনু;; হুম।

আয়ুশ ফোন কেটে দ্রুত আবার মিটিং রুমে যায়। আয়ুশ এক প্রকার দৌড়াচ্ছে।

আয়ুশ;; অল মিটিংস্ আর ক্যান্সেল।

মেনেজার;; কিন্তু স্যার..

আয়ুশ;; কোন কথা না বলছি ক্যান্সেল মানে ক্যান্সেল। আরে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তুমি সব সামলে নিও আমি গেলাম।

মেনেজার;; জ্বি স্যার।

সবাই প্রায় আয়ুশের দিকে তাকিয়ে আছে কারণ তাকে এর আগে এমন করতে কখনোই কেউ দেখে নি। ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো হস্পিটালে।
ওদিকে মেহরামকে নিয়ে যে হস্পিটালের কেবিনে ডাক্তার ঢুকেছে আর কোন শব্দ নেই। বাইরে সবাই চিন্তায় নাজেহাল। তনুর মা মেহরামের মায়ের পাশে বসে আছে। তনু পায়চারি করছিলো তখনই আয়ুশ দ্রুত হস্পিটালে আসে।

তনু;; আয়ুশ..!

আয়ুশ;; মেহরাম কোথায়?

তনু;; ভেতরে।

আয়ুশ;; ডাক্তার কিছু বলে নি এখনো? (কেবিনের দিকে তাকাতাকি করে)

তনু;; না।

সাথে সাথেই ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়। ডাক্তার কে দেখেই আয়ুশ এগিয়ে যায়। তারপর তনুও যায়। সবাই ডাক্তারের কাছে যায়।

ডাক্তার;; দেখুন চিন্তার কোন কারণ নেই। মা & বেবি দুইজনই আল্লাহ রহমতে সুস্থ আছে। আসলে ব্যাপার টা হলো সবার শারীরিক গঠন এক নয়। তো সেই অনুযায়ী সবার প্রেগ্ন্যাসি ও এক নয় ভিন্ন ভিন্ন। অনেকের বডি তে হিমোগ্লোবিন বেশি তো আবার অনেকের বডিতে কম থাকে। আর আমরা জানি যে প্রেগন্যান্ট থাকার সময় টুকু পিরিয়ড জিনিস টা বন্ধ থাকে। এভাবে রক্ত পড়ে যাওয়া টা ওই তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক ছিলো। এতে ভয় পাবার কিছুই নেই। আর সামান্য হাত কাটলেও তো ব্যাথা পাই তাই না তো মেহরামের এই ব্যাথা টা নরমাল ছিলো। আর ওইযে বললাম সবার প্রেগ্ন্যাসি এক রকম হয় না। ডেলিভারি টাইম মতোই হবে। এখন মেহরাম আর বাচ্চা একদম ঠিক আছে, ভয় পাবেন না। মেহরাম ভেতরেই আছে দেখা করতে পারেন। আর আজ বিকেলের দিকে তাকে নিয়ে যেতে পারেন।

ডাক্তারের এমন সুস্পষ্ট কথায় সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। তনু, তার বড়ো মা, মা সবাই মেহরামের কেবিনে গেলো। গিয়ে দেখে সে শুয়ে আছে। মেহরামের মা তার পাশে বসে পরে।

কনিকা;; মারে ঠিক আছিস? জানিস আত্মা উড়ে গিয়েছিলো। এখন শান্তি লাগছে তুই ঠিক আছিস দেখে।

মেহরাম;; মা কিছুই হয় নি আমার, অযথা ভয় পাচ্ছো। আমি ঠিক আছি।

তনু তার মা সবাই মিলে কথা বলছিলো তখন কেবিনে আয়ুশ আসে। মেহরাম আর আয়ুশ দুইজনকে দেখে। মলিন হাসে তারা। তখন একজন নার্স কেবিনে আসে।

নার্স;; আপনারা উনার মা-বোন?

তনু;; হ্যাঁ।

নার্স;; আসলে উনাকে এখানে কিছুক্ষণ থাকতে হবে তো তাই উনার প্রয়োজনীয় সব জিনিস দরকার ছিলো। আর ব্লাড লেগেছিলো তার কাপড় গুলো তে সেগুলো এখনো পড়িয়ে রাখলে ব্যাপার টা আনহাইজেনিক হতো তাই ড্রেস চেঞ্জ করে হস্পিটালের ডেস পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তো উনার যাবতীয় যা যা লাগে সব লাগতো।

আতিয়া;; হ্যাঁ ওইসব তো লাগবেই কিন্তু মেহরু তুই তো কিছুই আনিস নি বাসায়।

মেহরাম;; চাচি আমি ভেবেছি আজই বাসায় চলে যাবো তাই আর আনা হয় নি। সেগুলো তো আমার বাড়িতে।

তনু;; আব.. সমস্যা কি আমি গিয়ে আনছি তো। মেহরাম তোর জিনিস তো সব তোর রুমেই তাই না। আমি গিয়ে নিয়ে আসি।

কনিকা;; পারবি তো?

তনু;; আলবাদ পারবো। মেহরু চাবি দে!

মেহরাম;; মার কাছ থেকে নিয়ে নিস।

তনু কুসুম বেগমের কাছ থেকে চাবি নিয়ে দ্রুত চলে যায়। মেহরামের পাশে সবাই বসে আছে। আয়ুশও সেখানেই এক চেয়ারে বসে পরলো।
ওদিকে তনু রিকশা করে দ্রুত মেহরামের বাড়িতে চলে গেলো। রুম খুলে ভেতরে গেলো। তারপর এক এক করে মেহরামের কি লাগে না লাগে সব কিছু একটা ব্যাগে নিতে লাগলো। হঠাৎ কাজ করতে করতে তনু একটা ড্রয়ার দেখতে পেলো। তার জানা আছে যে মেহরাম তার বেশি প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো এই ড্রয়ারেই রাখে। তাই তনু সেটা নিতে লাগলো। কিন্তু সেটা অনেক উচু কোন ভাবেই থা পাচ্ছিলো না। তাই সে নিজের পায়ের নিচে একটা মোড়া নিলো তারপর তাতে দাঁড়িয়ে হাত উচু করে নিতে লাগলো। হাতিয়ে হাতিয়ে তা তো পেয়ে গেলো কিন্তু নিচে নামানোর সময় একদম সব হুমড়ি খেয়ে প্রায় তনুর ওপরে পরে। তনু কিছু একটা ধরে পরে যাওয়া থেকে বেচে গেলো। কিন্তু মাথায় হালকা ব্যাথা পেয়েছে। সব কাগজ বা ফাইল যা কিছু ছিলো সব নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে গেছে। তনু মাথার পেছনে হাত দিয়ে নিচে তাকায়। দেখে সব ছড়িয়ে গেছে ফ্লোরে।

তনু;; আসলেই তাড়াহুড়ো তে কাজ করতে গেলেই বিপত্তি। আমিও না দিলাম তো সব আউলে ঝাউলে।

তনু সেগুলো গোছানোর জন্য পা বাড়ালে হঠাৎ তার পায়ে একটা মোটা কিছু বাধে। তনু নিচু হয়ে ঝুকে পরে। ওপরে সব সাদা সাদা ফাইল। সেগুলো সড়াতেই চোখে বাধে একটা গাঢ় কালো মোটা ফ্রেমের ডায়েরি। তনু কপাল কুচকে সেদিকে তাকায়। তার মনে পরে যে এটাই মেহরামের সেই ডায়েরি টা যা সে কাউকেই দেখতে দিতো না। ডায়েরি টা হাতে নিয়ে আসতে চাইলে আবার সেটা নিচে পরে যায়। তনু আবার নিচু হয় সেটা তোলার জন্য কিন্তু এবার ডায়েরির ভেতরে কিছু পাতা উলটে গেছে। আর তাতে মেহরামের হাতের লেখা স্পষ্ট। তনু মেহরামের লেখা দেখে খানিক কপাল কুচকে সেটা হাতে তুলে নেয়। সেখানে যে লেখা টা ছিলো তা দেখে তনুর দুনিয়া ঘুড়ে যায় “” আমি আয়ুশকে ভালোবাসি””। তনুর মাথায় যেন ভাজ ভেংে পড়েছে এটা দেখে। মানে কি মেহরামের ডায়েরি তে এটা লেখা কেন। আর মেহরাম এটাই বা কেন লিখবে? এগুলো সব চিন্তা যেন এখন তনুর মাথায় ভর করে বসেছে। তনুর ভেতরে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে। সে কোন রকমে বিছানার এক কোণায় বসে পরে হাতে ডায়েরিটা নিয়ে। কেন যেন তনুর মনে হচ্ছে এমন অনেক কিছুই আছে যার ব্যাপারে তনু কিছুই জানে না, কিচ্ছু না। আর এখন সে যদি এই ডায়েরি টা না পড়ে তাহলে বড়ো অন্যায় হয়ে যাবে। যদিও সে জানে যে মেহরামের এই ডায়েরি টা পরলে সে খুব রেগে যাবে তবুও সে পড়বে। তনু একবার তার চোখ বন্ধ করে আবার খোলে। ডায়েরিটা একদম প্রথম পৃষ্ঠা থেকে পড়া শুরু করে দেয় সে……


১.. আমার একটা বোন আছে ‘তনু’। কে বলেছে যে আমার কোন ভাই বোন নেই। আমার সব আছে, আমার তনু আমার বোন। জীবনে দুইজনকে খুব বেশি ভালোবাসি আমার মা আর আমার বোন। এই দুইজন না থাকলে হয়তো আমার নিজের কোন অস্তিত্ব-ই থাকতো না। আমার কলিজার টুকরা দুইটা।

.

২.. আচ্ছা আমার বাবা আমার সাথে কথা বলে না কেন। আমি কি মেয়ে হিসেবে খুব বেশি খারাপ। মানুষ কে কতো দেখি তার বাবা দের সাথে ঘুড়তে যায়, ছবি তোলে, খাইয়ে দেয় আরো কতো কি। কিন্তু কই আমার বাবা তো আমার সাথে কথাই বলে না। কেন বলে না? সবাইকে ভালোবেসে তাদের বাবা নিকন্যাম দেয়। আর আমাকে, যেখানে বাবা আমার সাথে কথাই বলে না সেখানে নিকন্যাম দেওয়া টা হাস্যকর। বাবার সাথে আমি কখনো আমার স্কুলেই যাই নি আর ঘুড়তে যাওয়া হাহ্। বাবার সাথে আমার একটা ছবি আছে তবুও মাঝে অনেক দূরত্ব, আমার বাবা আমাকে কখনোই খাইয়ে দেয় নি। শুনেছি মেয়েরা বাবার জন্য পাগল হয়, কিন্তু আমি মায়ের জন্য। আমি মনে হয় আম্মুর মেয়ে শুধু 😅।

.

৩.. আমার খুশির আজ সীমা নেই। মানে আমি কি করবো কি বলবো বুঝি না। আমার আর তনুর একই ভার্সিটিতে চান্স হয়েছে। মানে আমরা এট লাস্ট আমাদের জীবন লিড করতে পারবো আমাদের মন মতো। ওয়াও ভাবতেই খুশি লাগে। যা ইচ্ছে করবো, ঘুড়বো কত্তো কি। শুধু তনু আর আমি। দুই জনই তো পাজির হাড্ডি। ইচ্ছে মতো ক্লাস ফাকি দিবো কেউ আটকাবে না। হায়য়য় কি খুশি আমি।

.

৪.. খুব কষ্টে আজ বাড়ির সবাইকে মেনেজ করেছি। আল্লাহ কি যে প্যারা রে ভাই। তবুও কষ্ট করলে তেষ্ট মিলে। সবাই রাজি হয়েছে বাইরে পাঠানোর জন্য আমাদের, খুব খুশি লাগছে। যেতে তো পারবো বাইরে। ইইয়ায়ায়াহুউউউউ 🥳।

.

৫.. আজ বাড়ির সবাইকে বিদায় জানিয়ে এলাম। বাইরে আসতে পেরেছি বলে হ্যাপি কিন্তু কিছুটা খারাপ লাগছে। আমার মা কে আমি মিস করবো। তার গাল গুলো আর টানা হবে না। Hay mamma i miss you yaar 🥺❤️।

.

৬.. আজ ভার্সিটির প্রথম দিন ছিলো আমার। প্রথম দিন গেতেই দুইজন শয়তান কে ফ্রেন্ড হিসেবে পেয়েছি। উর্মি আর বাবলি অনেক ভালো মাইয়া গুলা। কিন্তু আমি কি জন্য আছি শয়তান বানাই দিমু 😁। তবে একটা কথা বুঝলাম না আজ ভার্সিটিতে একটা ছেলে ছিলো। ফালতু ছেলে একটা। কিভাবে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। মনে হয় জীবনে মেয়ে দেখে নি। আবার বাদর কোথাকার ক্লাসে এসে আমায় বলে যে সিনিয়র দের সম্মান করতে জানি না। বেয়াদ্দপ পোলা। ভাব কি হাহ সে নাকি আবার ক্রাশবয় না ছাই। নাম আয়ুশ ব্লা ব্লা ব্লা।

.

৭.. এটা কি ছিলো এভাবে আমার ক্লাসে এসে এভাবে আমাকে তুলে নিয়ে কেন গেলো আয়ুশ। মানে কি আমি তার ব্যাপারে কিছু জানি না তাকে চিনিও না ঠিকঠাক। আর এভাবে আমাকে নিয়ে গেলো কেন। আর ক্লাসে স্যার পর্যন্ত কিছুই বললো না। এমনকি ক্লাসে কোন ছাত্র-ছাত্রী পর্যন্ত মাথা তুলে তাকাচ্ছিলো না। শালা গুন্ডা না তো, ভয় করে। আর নিয়ে গেলো কোথায় নদীর কিণারে। মানে আজব। আমাকে ক্লাস থেকে নিয়ে নদীর কিণারে গিয়ে একসাথে বসে থাকলো। এগুলোর কোন মানে হয়। জিজ্ঞেস করলে বলে ”’ গল্প করার জন্য নিয়ে এসেছি, মনের মধ্যে আর পেটের মধ্যে অনেক কথা জমে আছে”’। পাগল নাকি, আমি তো উঠে এসে পরেছি।

.

৮.. আজ ভালো লাগছে কারণ আজ আয়ুশকে আমি দেখেছি রাস্তায় প্রায় অনেক অসহায় মানুষ কে খাবার দিতে। না ছিলো তাদের জন্য কোন ঘৃণা, অহংকার কিছুই না। শুধু ছিলো ভালোবাসা, মায়া আর মুখের সেই বিরাট হাসি। সেখানে কিছু বয়স্ক মহিলাও ছিলো তারা আয়ুশকে মাথায় ছুইয়ে ছুইয়ে দোয়া করছিলো। আর সে তার মাথায় নামিয়ে তা নিচ্ছিলো। সত্যি ব্যাপার টা খুব ভালো লেগেছে। ছেলে টাকে যতো টা খারাপ ভেবেছিলাম আসলে ততো টাও খারাপ না। সে ভালো🍂।

.

৯.. মানে কি থেকে কি হলো। আয়ুশ, আয়ুশ আমাকে প্রোপজ করেছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ভার্সিটির সব মেয়ে তার ওপর মরে কিন্তু সে এতো মেয়ে রেখে আমার ওপরই কেন। এগুলো দুইদিনের টাইম পাস না তো আবার। কে জানে। না বাবা আমি এই সব ভালোবাসা টালোবাসা তে নেই।

.

১০.. এই নিজেও মরবে সাথে আমাকেও মারবে। পাগলামো এতো করে কেউ। বাসার নিচে হুট হাট এসে পরা। ভার্সিটির কেউ আমার থেকে টাকা নেয় না। স্যার দের এক্সট্রা কেয়ার আমার ওপর। মানে কি কোন ছেলেও কথা বলে না। হায়রে। আচ্ছা আয়ুশ কি সত্যি ভালোবাসে আমাকে?

.

১১.. আমি ভালোবাসি আয়ুশকে, ভালোবেসে ফেলেছি। কখন, কিভাবে, কেন ভাসলাম জানি না। কিন্তু আমি ভালোবেসে ফেলেছি।

.

১২.. আজ বলে দেবো। আসলেই কি বলে দিবো?

.

১৩.. ‘ভালোবাসি’ বলে দিয়েছি আয়ুশকে। আয়ুশ পাগল হয়ে গিয়েছিলো তাকে ভালোবাসি কথাটা শোনার পর। মানে সে কি থেকে কি করবে দিশা পাচ্ছিলো না। ভাবতেই অবাক লাগে আমিও এভাবে কারো মায়ায় পড়ে গেছি। আমি ভালোবাসি আয়ুশকে হয়তো আমার থেকে আয়ুশ আরো হাজার গুণে বেশি ভালোবাসে আমাকে।

.

১৪.. না, এটা হতে পারে না। তনু আয়ুশকে ভালোবাসে। কি হচ্ছে এটা। আমি বেশ কিছুদিন যাবত দেখছিলাম তনুর মন খারাপ। কিন্তু সে যে তার ভেতরে এগুলো লুকিয়ে রেখেছে কে জানে। আর আজ হয়তো ভার্সিটি গিয়ে কারো কাছ থেকে শুনেছে যে আয়ুশ অন্য কাউকে ভালোবাসে। তাই মন খারাপ। এটা নরমাল যে তুমি যাকে ভালোবাসো পরে যদি শুনো যে সে অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে খারাপ লাগবেই। আর আজ কিনা আমার বোন নিজেকে শেষ করে দিতে গিয়েছিলো। এতো বেশি হয়তো আমিও ভালোবাসি না আয়ুশকে। আচ্ছা তনু, তনু যখন জানবে যে আয়ুশ আমাকে ভালোবাসে তাহলে কি হবে। তনু যখন জানবে যে সে যাকে ভালোবাসে সেই তার বোনকে ভালোবাসে। না না সব শেষ হয়ে যাবে। আয়ুশ হয়তো পরে আমাকে ভুলে যাবে। হ্যাঁ তনু আমার থেকে হাজার গুণে বেশি ভালো। আয়ুশ এক সময় তনু কে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবে, আর তনুকে মেনে নিবে। আর আমি কখনো তাদের সামনেই যাবো না। আর তনুও হ্যাপি থাকবে। আমার বোন সুখে থাকবে। জানি এতে আমি আয়ুশের চোখে হয়তো বা নিচে নেমে যাবো। কিন্তু আমি পারবো না। আমার কষ্ট আমারই থাক। যদিও পাগলের মতো আয়ুশকে ভালোবাসি কিন্তু আমার কাছে না আমার বোন কম আর না ই আয়ুশ। সবার আগে আমি একজন বোন ছিলাম। হ্যাঁ আমিই সরে যাবো। আয়ুশ এক সময় তনুকে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবে। হুম এটাই ভালো।

.

১৫.. আজ আয়ুশকে বলে দিবো সব আমি। কথা হয়েছে তার সাথে আমার সে বাসার নিচে আসতে চেয়েছিলো। আগের মতোই পাগলামি করছিলো। কিন্তু এখন আমার নিজেকে শক্ত করতে হবে। কালই আয়ুশকে সব বলে দেবো। বলবো যে আমার মন উঠে গেছে তার থেকে, তাকে আমার আর ভালো লাগে না, আমি টাইম পাস করেছি শেষ। আমাকে ভুল বুঝেও বলেও তো দূরে সরবে। হ্যাঁ এটাই করবো।

.

১৬.. সব বলে দিয়েছি আমি আয়ুশ কে। বিনিময়ে অনেক কথা শুনেছি যা আমার প্রাপ্তি ছিলো। আমি জানতাম। কলিজা ভেতর থেকে কেউ টেনে ছিড়ে নিচ্ছিলো যখন কথা গুলো আমি বলছিলাম। প্রথমে আয়ুশ কে ভুল বুঝাচ্ছিলাম কিন্তু সে বুঝে নি। আমায় বিশ্বাস করে নি। এক সময় বাধ্য হয়ে তাকে আমার সত্য টা বলে দিতে হয়েছে। থাপ্পড় খেয়েছি দুটো। আয়ুশ আমাকে অনেক কথা বলেছে। আমি শুনেছি। যখন বলছিলাম আমার মন উঠে গেছে কতো কি তখন একদম বিশ্বাস করছিলো না। অবশেষে বলে দিলাম। আমি এর আগে কখনো আয়ুশকে এতো টা রেগে যেতে দেখি নি। এতো বেশি জেদ করতে দেখি নি। যাই হোক আয়ুশ আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। লিখার অবস্থায় নেই আমি। হাত কাপছে।

.

১৭.. আজ তনু কে সবার সামনে আয়ুশ প্রোপজ করেছে। জানি না কিভাবে কিন্তু করেছে। তনুর খুশি কে দেখে। আমার বোন খুশি তাতেই আমিও খুশি। হ্যাঁ সত্যি বলতে আমার খারাপ লাগছিলো। খুব বেশি 😅। কিন্তু তারা হ্যাপি থাক। আমি সেখান থেকে সরে আসি।

.

১৮.. অনেক হ্যাপি হ্যাপি লাগছে। কেননা আয়ুশ আজ তনুকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে। আমি ভাবি নি যে আয়ুশ এতো এগিয়ে যাবে। যাই হোক বিয়ে ঠিক তনু আয়ুশের। বাড়িতে বিয়ের সাজ। চারিদিকে বিয়ে বিয়ে গন্ধ। আমার বোনের বিয়ে, তনুর বিয়ে। আমি তো পাগল হয়ে যাবো। কতো প্লেন আছে আমার তনুর বিয়েকে নিয়ে সব পূরণ করবো সব। মানে আমার তো খুশি সইছে না। সাড়া বাড়ি ঢাক পিটিয়ে দিবো 🥰🥰।

.

১৯.. আর পারছি না। সারাদিন অনেক হাসি তামাশা করেছি। জানি না আসল ছিলো নাকি নকল। দম খাটো হচ্ছে আমার। মরেই না যাই। আমার পাগলি বোন টা আয়ুশের ছবি নিজের ফোনের ওয়ালপেপার বানিয়ে রেখেছে। তনুর বিদায় হয়ে গেছে। অনেক কাদছিলো। কিন্তু আমি কাদি নি। হেসেছি আর হাসিয়েছি। আয়ুশকে অনেক সুন্দর লাগছিলো। নির্লজ্জের মতো একটু দেখেছি। সারা বাড়ি আমার বোনের জিনিস দিয়ে ভরা। এগুলো কি করবো আমি। কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমাকে সব। মরণ যন্ত্রণা কি একেই বলে।

.

২০.. আমি আমার মতো জীবন চালাচ্ছি। ঢাকাতে আছি, এখন ভার্সিটি একাই যাই। ঢাকায় যে বাসায় থাকি সেখানেও একাই থাকি। তনুকে অতি মাত্রায় মিস করি। আর আয়ু………। যাজ্জে আমি আমার মতো। তনু আসে ভার্সিটিতে,, আয়ুশ তাকে দিয়ে যায় আবার নিয়ে যায়। আমার ওপর আয়ুশের অনেক রাগ জমে আছে। আমার ওপর তার অনেক জেদ। হয়তো জেদের বসেই এগুলো করছে। যাই হোক তনু হ্যাপি। আর আয়ুশকেও দেখে মনে হয় সে খুশি। আমিও খুশি 😊।

.

২১.. বলির পাঠা লাগে নিজেকে। বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে এতো চাপ। মানে একজনের বিয়ে কি হলো আরেক জনেরও বিয়ে দিতে হবে।

.

২২.. ‘সোহেল শেখ’ ছেলের নাম। দেখতে এসেছিলো। ভালোই আছে। আর্মি সে। তার মা আছে বাবা নেই। সত্যি ছেলে হিসেবে সে অনেক ভালো।

.

২৩.. আজ বিয়ে হলো আমার সেই সোহেলের সাথেই। আমি ভাই নি আমার শাশুড়ি মা এতো ভালো হবে। সবাই অনেক ভালো।

.

২৪.. তনু মা হতে পারবে না, ইয়া আল্লাহ 😭। কেন এমন করলে। আমার বোন মা হতে পারবে না, কেন। কি দোষ করেছিলো ও।

.

২৫.. আমি প্রেগন্যান্ট। মানে আমি। আমাকে কেউ মা মা বলে ডাকবে। ছোট ছোট পায়ে আমার দিকে আসবে। এত্তো বেশি খুশি কখনোই হয় নি। আমার জীবনের পাওয়া সব থেকে বড়ো প্রাপ্তি। আমি মা হবো, আমি প্রেগন্যান্ট। খুশিতে কেদে দিয়েছি। বাড়ির সবাই তো আমাকে মাথায় করে রাখছে। তাদের কি খুশি।
আমার থেকে দ্বিগুণ।

.

২৬.. অতীত হয়তো একেই বলে। বারবার হাজার বার না চাইতেও সামনে এসে পরে। পিছুই ছাড়তে চায় না। তাই হয়তো এর নাম “অতীত”।

.

২৭.. সোহেলের ক্যান্সার, লাস্ট স্টেজ।

.

২৮.. কেন আমার সাথে এমন হলো। যাকে ধরে বাচতে চাইলাম তাকে বেধে দিলাম অন্যের সাথে। ইচ্ছে করেই। না পারছি এগিয়ে যেতে না পারছি পিছাতে। এক নদীতে পরে গেছি আমি। যেখানে কোন ঢাল নেই, নেই কোন কুল কিণারা।

.

২৯.. সোহেল মারা গেছে। আর সে নেই। আজ সকালে হস্পিটালে গিয়ে এই যে ডাকি সে আর সাড়া দেয় না। সোহেল নেই, মারা গেছে। আমার বাচ্চা তার বাবাকে হারালো। একজন মা তার ছেলে কে। আর আমি তো সেই কবে থেকে হারিয়েই আসছি। হায়রে জীবন। আমার ভাগ্য।

.

৩০.. জীবন কেন এতো নিষ্ঠুর। এখন আমার বেচে থাকার একমাত্র সম্বল আমার এই অনাগত বাচ্চা।

এরপরে ওই ডায়েরি তে আর কিছুই লিখা ছিলো না। তনুর পড়া শেষ হতেই হাত থেকে ডায়েরিটা ঠাস করে নিচে পরে গেলো। এদিকে তনুর চোখ থেকে পানি পরে সাগর হয়ে গেছে। হাত – পা ক্রমাগত কাপছে। সবকিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে গেলো। তনু প্রায় এভাবেই মূর্তির মতো ২০ মিনিট বসে ছিলো। কিন্তু পরে রুমে নিলা এসে তনু কে ডাক দেয় তখন তনুর হুস আসে। পরে কোন রকমে সেই কাগজ গুলো গুছিয়ে ডায়েরিটা আগের জায়গায় রেখে তনু এসে পরে। হাতে একটা ব্যাগ সেখানে মেহরামের সবকিছুই আছে। সিড়ি দিয়ে নেমে আসার সময় তনু বেশ কয়েকবার পরে যেতে ধরেছিলো। তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই এখন। অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করছে। তনু এক বড়ো ধরনের শক খেয়েছে সব কিছু জানার পর। যা তার জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে মূহুর্তেই।





🦋চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#{বোনাস পার্ট 🦋}

🤎🍂. . . .

এক বড়ো ধরণের শক খেয়েছে তনু সবকিছু জানার পর। যা তার জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে মূহুর্তেই। মেহরামের সবকিছু নিয়ে বাড়ি তালা দিয়ে তনু বের হয়ে পরে। তবে তার মন সব & মস্তিষ্ক সব অন্যদিকে। তনু বাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। চোখের পলক গুলো মিটমিট করে ফেলে। গাল বেয়ে পানি পরে যাওয়ার আগেই তনু সেটা মুছে ফেলে। সে যাচ্ছে,, যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কোন দিকে কোন খেয়াল নেই। এভাবেই যেতে যেতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু না ই তনুর হুস আছে আর না ই কোন কথা তার কান দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ তনু থেমে যায়। তার পা গুলো যেন আর চলছে না। কিভাবে পারলো তার বোন তার কাছ থেকে এগুলো লুকাতে। এতো কিছু মেহরাম এতো টা দিন ধরে সহ্য করে আসছে আর কেউ কিছুই টের পর্যন্ত পায় নি। মেহরামের হাসি দেখে বুঝাই যায় না যে মেয়েটার মাঝে এতো কিছু লুকিয়ে আছে। তনুর মাথায় বারবার শুধু মেহরামের বলা একই কথা গুলো বারি খাচ্ছে “আমি আয়ুশকে ভালোবাসি, “এক্কেবারেই পাগলের মতো ভালোবাসি”, ” আয়ুশ আর আমি”, “আয়ুশ আজ আমাকে প্রোপজ করেছে”, ” তনু আমার বোন আমার সব”, “আমার থেকে আরো অনেক বেশি আয়ুশ আমাকে ভালোবাসে”, ” তনু আয়ুশ কে ভালোবাসে”, “আমি তাদের মাঝ থেকে সরে যাবো”। কানে এসে বাজছে এই কথা গুলো তনুর। হঠাৎ কারো জোরে চিল্লানোর আওয়াজ কাছে আসে তার। এবার যেন তনুর হুস ফিরে। তনু নিজের আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সে একদম রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। আর চারিপাশে অনেক গুলো গাড়ি আটকে রয়েছে। অনেকে গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে তনু কে মাঝ রাস্তা থেকে সরে যেতে বলছে। আর অনেক গাড়ির হর্ণ বাজাচ্ছে। অনেক শোরগোল সবদিকে। তনু ঘেমে গেছে, হাত দিয়ে কোন রকমে নিজের মুখ মুছে দ্রুত সেখান থেকে সরে আসে। এভাবেই হাটতে হাটতে তনু এক সময় হস্পিটালে এসে পরে। এখনো তার তেমন হিতাহিত জ্ঞান নেই। যেন একটা ঘোড়ের মধ্যে রয়েছে সে। হস্পিটালে গেতেই আয়ুশের সাথে তনুর দেখা হয়। আয়ুশ ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিলো। আয়ুশ তনু কে দেখে ফোন কেটে দিয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। তনু এক দৃষ্টিতে আয়ুশের দিকে তাকিয়ে আছে। এখন তনুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আয়ুশের কথা। মাহরাম যেমন তেমন, আয়ুশ ও কি পারে নি তনু কে সবকিছু একটা বার বলতে। নাকি কোন এক অজানা বাধায় আয়ুশ নিজেও আটকে ছিলো। আয়ুশ তনুর সামনে যায়….

আয়ুশ;; তনু এসেছো। দেরি করলে যে এতো?

তনু;;________________

আয়ুশ;; কি হলো কিছু তো বলো।

তনু;; আমার সাথে কথা বলো না প্লিজ।

আয়ুশ;; কিন্তু তনু..

তনু;; ________________

তনু কিছু না বলেই আয়ুশের সামনে থেকে সরে আসে। মেহরামের কেবিনের ভেতরে চলে যায়। আয়ুশ কিছুক্ষণ তনুর দিকে তাকিয়ে থেকে আবার ফোন ব্যাস্ত হয়ে পরে। তনু ভেতরে গিয়ে দেখে মেহরাম হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। তার পাশেই সবাই আছে।

আতিয়া;; কিরে দেরি করলি যে পেয়েছিস সবকিছু?

তনু;; হুম।

মেহরাম;; আমি তো ভেবেছি যে কিছুই হয়তো পাবি না।

তনু;; না পেয়েছি তো, অনেক কিছুই পেয়েছি। যেগুলো আমার পাওয়া অনেক আগেই দরকার ছিলো।

কনিকা;; আচ্ছা দে দেখি সবকিছু গুছিয়ে নেই।

তনুর হাত থেকে তার বড়োমা ব্যাগ টা নিয়ে নেয়। তারা উঠে যায়। তনু এসে মেহরামের পাশে বসে। তনুর মুখ টা একদম মলিন দেখে মেহরাম বলে ওঠে…

মেহরাম;; কি রে কি হয়েছে তোর? মুখ টা এমন শুকনো লাগছে কেন?

তনু;; কিছু না।

আতিয়া;; মেহরাম মা একটু ওঠ দেখি কাপড় টা পালটে দেই।

মেহরামের চাচি সব কিছু গুছিয়ে দেয়। তারপর তাকে খাইয়ে দেয়। দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে এলো। আয়ুশ মেহরামের ঔষধ গুলো অনেক আগেই এনে দিয়েছে। বিকেল হয়ে এলে মেহরামকে হস্পিটাল থেকে নিয়ে আসা হয়। এখন সবাই বাড়িতে। একদিক দিয়ে তনু আরেক দিক দিয়ে মেহরামের মা ধরেছে তকে। অনেক ব্লাড গিয়েছে তো তাই হাটলে পেটে ব্যাথা পায় সে। একটু ধরতে হয়। ধরে ধরে তাকে সোফায় বসিয়ে দেওয়া হয়।

তনু;; এখন কেমন লাগছে?

মেহরাম;; আগে থেকে ভালো, ব্যাথা নেই।

কনিকা;; আকাশ, জলদি করে তোর আপুর জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়।

সবাই মেহরামের পাশে বসে তার সাথে কথা বলতে লাগলো।

আয়ুশ;; বড়োমা (মেহরামের আম্মু)

কনিকা;; হ্যাঁ বাবা বলো।

আয়ুশ;; এগুলো মেডিসিন, কখন কিভাবে খেতে হবে সব লিখাই আছে। একটা বেলার মেডিসিনও যেন মিস না যায়। একদম টাইম মতো খাওয়াবেন।

কনিকা;; হ্যাঁ।

আয়ুশ;; তনু..!

তনু;; হুম।

আয়ুশ;; আজকে কি এখানেই থাকবে নাকি বাড়ি যাবে?

তনু;; এখানেই থাকবো আমি।

আতিয়া;; কিন্তু আয়ুশ বাবা আজ তুমি এখানেই থেকে যাও না। সবাই তো এখানেই আছে তুমিও….

আয়ুশ;; না মা আজ আমি যাই, এছাড়াও বাড়িতে কণা আর মা একা। মেহরামকে দেখে রাখবেন আমি যাই।

তনু এক নয়নে আয়ুশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তনু খেয়াল করলো যে আয়ুশ যাওয়ার আগেও মেহরামের কথাই জিজ্ঞেস করলো আর তাকেই দেখে গেলো। ধীরে ধীরে রাত হয়ে আসে। কুসুম বেগমও চলে গেছেন তার বাড়িতে। মেহরাম তার সাথে যেতে চাইলে মেহরাম কে সে মানা করে দেই। এখানেই সবাই আছে, মেহরাম এখানেই থাকলে প্রোপার কেয়ার টুকু সে পাবে। তাই সে এখানেই থেকে যায়।

কনিকা;; মেহরাম মা রাতে কি খাবি?

মেহরাম;; পানি..!

আকাশ;; রাতে কেউ পানি খায়?

মেহরাম;; হ্যাঁ হ্যাঁ আমি খাই তো।

আতিয়া;; চুপ কর পাজি, মেহরাম কি খাবি বল। আর এতো পানি খাস। মানলাম ডাক্তার পানি বেশি খেতে বলেছে কিন্তু এতো!

মেহরাম;; বারবার গলা শুকিয়ে যায়, আর খাবার পেটে যাবে না একদম ভরাপেট। আমি তো খালি পানিই খাবো।

কনিকা;; আচ্ছা খা, তনু!

তনু;; ______________

কনিকা;; তনু কিছু বলছিস না কেন, অন্যমনস্ক হয়ে আছিস কেন?

তনু;; আব.. নননা বড়োমা আমি ঠিক আছি। আর আমি কিছু খাবো না পেট ভরা আমার।

কনিকা;; কিন্তু ত…

তনু খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে যায়। মেহরাম অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।

মেহরাম;; হলো কি ওর?

আতিয়া;; আমিও বুঝলাম না।

কনিকা;; আচ্ছা যাই হোক মেহরাম মা রাত জাগিস না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িস।

মেহরাম;; কিন্তু মা ঘুমই আসতে চায় না। আর তনু আমার সাথেই আমার রুম থাক।

আতিয়া;; হ্যাঁ দুইবোন এক সাথে থাক তাই ভালো হবে। এছাড়াও কেউ তো কাউকে ছাড়া কিছুই বুঝিসই না।

মেহরাম;; আচ্ছা থাকো তোমরা তাহলে আমি রুমে যাই।

আতিয়া;; আচ্ছা।

কনিকা;; এই হাটতে পারবি না দিয়ে আসবো?

মেহরাম;; আরে না না যেতে পারবো।

মেহরাম হেটে রুমে এসে পরে। রুমে গিয়েই দেখে তনু দুহাত ভাজ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহরাম খানিক কপাল কুচকায়। দরজার শব্দে তনু পেছনে ফিরে তাকায়।

তনু;; এসেছিস?

মেহরাম;; এলাম, আচ্ছা তোর কি হয়েছে বল তো এতো মন মরা কেন?

তনু;; সত্যি সবসময় তেতো হয়। মাঝে মাঝে আমরা সত্যের থেকে লুকিয়ে বেড়াই কিন্তু এটা যেন একটা কালো ছায়ার মতো যতোক্ষণ না আমাদের সামনে এসে আমাদের মনকে ভেংে চুড়ে চুরমান করে দিচ্ছে ততোক্ষণ স্বস্তি নেই।

মেহরাম;; উপন্যাস নাকি সাহিত্য?

তনু;; কি?

মেহরাম;; না মানে কথা গুলো ভালোই গুছিয়ে বললি। কোন বই-এর? (হেসে)

তনু;;মেহরু আমি ফাজলামো করছি না আর না ই আমি ফাজলামো করার মুডে আছি।

তনুর কথায় মেহরাম তার হাসি থামিয়ে দেয়। তার কাছে মনে হচ্ছে যে তনু অনেক বেশি সরিয়াস। কারণ তার চোখ মুখ সব ফুলে গেছে। এবার মেহরাম তার গলা ঝেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তনুর কাছে গিয়ে তনুকে বসিয়ে দেয়। সাথে নিজেও বসে পরে জানালার পাশে। জানালা খোলা সেদিক দিয়ে সাই সাই করে ঠান্ডা বাতাস আসছে। মেহরাম তার হাত টা তনুর গালে আলতো করে রেখে দেয়। তনুর মেহরামের হাত টা শক্ত করে ধরে।

মেহরাম;; তনু আমার দিকে তাকা। আচ্ছা কি হয়েছে আমায় বল।

তনু এবার মেহরামকে জড়িয়ে ধরে। মেহরাম এতে অবাক হয়ে যায়, সে বুঝে যে ব্যাপার অনেক বেশি সিরিয়াস। মেহরাম নিজের কাধে ভেজা কিছু অনুভব করলে বুঝে যে তনু কাদছে। এবার মেহরাম কপাল ভাজ করে ফেলে।

মেহরাম;; আচ্ছা তনু বল আমার হয়েছে কি? তোকে কেউ কি কিছু বলেছে আমায় বল না?

তনু;;_______________

মেহরাম;; আচ্ছা এভাবে কাদছিস কেন আরে আমকে ছাড় তো আগে।

তনু; না।

মেহরাম কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারে না। কোন রকমে তনুকে বুঝাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ তনু বলে ওঠে…

তনু;; মেহরাম কেন এমন করলি?

মেহরাম;; মানে কি করেছি?

তনু;; আমাকে কেন একটা বার বলিস নি।

মেহরাম;; তনু আমি কিছু বুঝতে পারছি না তুই কি বলছিস?

তনু;; আয়ুশ আর তোর ব্যাপারে মেহরাম। তোর আর আয়ুশের সম্পর্কের ব্যাপারে। কেন বলিস নি আমায়।

মেহরামের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেছে তনুর কথা শুনে। মানে কি তনু কি করে জানলো এই সব কিছু। মেহরামের গলা দিয়ে যেন আর কোন কথা বের হচ্ছে না।

মেহরাম;; ততন তনু…

তনু;; চুপ কর চুপ, প্লিজ আর একটা কথাও বলিস না। তুই আমার জন্য সব করে আমাকেই অপরাধী বানিয়ে দিয়েছিস জানিস। আমার জন্য এতো কিছু করলি কিন্তু তোর, তোর কি হবে একটা বারও ভাবলি না। (অঝোরে কেদে)

মেহরাম;; কিকিন্তু ততনু ততুই, তুই কি করে এইসব…?

তনু;; আজ যখন আমি তোর বাসায় যাই তখন কোন ভাবে তোর ডায়েরি টা আমি পেয়ে গেছিলাম। যেখানে তুই লিখে রেখেছিলি যে “আমি আয়ুশকে ভালোবাসি”। ঠিক সেই পেজ টাই প্রথমে চোখে পরে আমার।

মেহরামের আত্মা ধক করে উঠে তনুর কথা শুনে। তনু কাদতে কাদতে হেচকি তুলে ফেলেছে তবুও না মেহরাম কিছু বলতে দিচ্ছে আর না ই নিজে থামছে। তনু কেদে কেদে আবার বলতে শুরু করে।





🥀চলবে~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে